তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (৩)
মুনশি আব্দুর রহমান
তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (৩)
প্রথম অধ্যায় | প্রথম পরিচ্ছেদ (২)
চতুর্থ দলিল: শায়খ যাওয়াহিরীর অন্য এক বার্তায় স্পষ্ট স্বীকৃতি
শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআতের স্বীকারোক্তি দিয়ে শায়খ যাওয়াহিরী আরেকটি বার্তায় বলেন-
“শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ জানতেন যে, মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ করা এবং খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ হচ্ছে বাইআত। তাই তিনি মোল্লা উমরকে বাইআত দিয়েছিলেন। তিনি সব সময় ঐক্যের চেষ্টা করতেন এবং বিভক্তি না রাখার চেষ্টা করতেন, অধিকার পূর্ণ করতেন, ভঙ্গ করতেন না এবং শুরাভিত্তিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতেন। তাই তিনি মুসলিম উম্মাহকে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের বাইআতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন।”[4]
পঞ্চম দলিল: বাইআতের হক আদায় ও আলেমদের আহ্বান
শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ বাইআত দিয়ে থেমে যাননি, বরং এর হক আদায় করেছেন। নিজের জীবন, সম্পদ এবং সংগঠনকে এর সুরক্ষায় নিয়োজিত রেখেছেন। একে সমর্থন করতে উলামায়ে কেরামের কাছে আবেদন করেছেন।
৫ই মুহাররম, ১৪২২ হিজরীতে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত উলামায়ে দেওবন্দের সমাবেশে তিনি এক ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন, যা কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল আলজাজিরা’য় প্রচার করা হয়। তিনি তাতে উলামায়ে দেওবন্দকে ইমারতে ইসলামী’র বৈধতা এবং একে সাহায্য করা ওয়জিব হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া প্রদানের আহ্বান জানান। উক্ত বার্তায়ে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন-
“প্রিয় উলামায়ে কেরাম! আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে সত্যকে প্রকাশ করা, বিভ্রান্ত মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া এবং আপনাদের সিদ্ধান্তের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকা সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করা। তাদেরকে জানিয়ে দিন, জিহাদ ছাড়া না মর্যাদা পাওয়া সম্ভব আর না বিজয়লাভ করা সম্ভব। পূর্বসূরীদের বিজয় এসেছে জিহাদের মাধ্যমে। তাদেরকে বলে দিন, জিহাদের পূর্ণতা কেবল এমন একটি জামাআহ’র মাধ্যমে আসতে পারে, যারা হবে একজন মাত্র আমীরের অনুগত। এদের মাধ্যমে আল্লাহ মুসলমানদের ঐক্য এবং তাঁদের রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখবেন।”[5]
ষষ্ঠ দলিল: মুজাহিদ নেতাদের বাইআতের তালিকা
উপরোক্ত বার্তায় শায়খ যাওয়াহিরী আইএসের বাইআত ভঙ্গের আলোচনা করতে গিয়ে আরও বলেন-
“হে মুসলিম জাতি! জেনে রাখুন, বর্তমান সময়ের মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে যারা মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআত দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজন হলেন- শায়খ উসামা, আবু মুহাম্মদ তুর্কিস্তানী, বাইতুল্লাহ মেহসুদ, আবু মুসআব জারকাভী, আবু হামজা মুহাজির, মুখতার আবু জুবায়ের ও আবু বাসীর নাসের আল ওহাইশী প্রমূখ। তাঁরা ছাড়াও অগ্রগামী সত্যবাদী আরও অনেকেই।
বলাই বাহুল্য, শায়খ উসামার হাতে বাইআত প্রদানকারীগণ আমীরুল মুমিনীনকে বাইআত প্রদানকারী বলে গণ্য হবে। সুতরাং জামাআতুল জিহাদ উক্ত বাইআতের আওতাধীন। শায়খ আবু হামজা মুহাজির ‘জামাআতুল জিহাদ’র সাথেই সম্পৃক্ত। আল-কায়দার সকল শাখা-প্রশাখাও উক্ত বাইআতের অন্তর্ভুক্ত। তেমনি দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া আল-কায়দার শাখা। মোটকথা, শায়খ উসামাকে বাইআত দানকারী প্রত্যেকর জন্য মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে আমীরে আজম হিসেবে মান্য করা আবশ্যক। এখন উক্ত বাইআতকে যারা অস্বীকার করবে, তারা অপরাধী বলে গণ্য হবে। যেমন বাগদাদীর দল। তারা আমৃত্যু আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছে। আমরা তাদেরকে তাওবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। শায়খ আবু হামজা মুহাজির আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের বাইআতকে খিলাফতের বাইআত বিবেচনা করতেন। তাঁর বিবেচনায় উক্ত বাইআত অস্বীকারকারী ব্যাভিচারী ও মদ্যপানকারীর চেয়েও বড় গুনাহগার।”[6]
সপ্তম দলিল: আন-নাফির সাময়িকীর ঘোষণা
আল-কায়েদার অফিসিয়াল সাময়িকী আন-নাফির এর ১ম সংখ্যার শুরুতেই ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান তথা তালিবানদের আমীরের প্রতি আল-কায়েদার বাইআত নবায়নের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
“আল-কায়েদার সকল শাখা এবং প্রত্যেক মুজাহিদ তালিবানদের আমীর মোল্লা মুহাম্মদ উমরের সৈনিক হিসেবে আল্লাহর সাহায্য ও তাউফীক্ব এর মাধ্যমে তার বিজয়ী পতাকা তলে কাজ করে যাচ্ছে যতক্ষণ না আল্লাহর দ্বীন সুউচ্চে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যতক্ষণ না ইসলামী শরীয়ত অন্য কারো বিচারের অধীনস্থ না হয়ে বরং খোদ বিচারকের আসনে আসীন হয়, এবং অন্য কারো আদেশের অধীন না হয়ে নিজে আদেশ দানকারী হয়, এবং যতক্ষণ না ইসলামের প্রত্যেক ভূমি মুক্ত করতে পারে।”[7]
অষ্টম দলিল: অফিসিয়াল অডিও বার্তায় শায়খ যাওয়াহিরীর বক্তব্য:
২০০৯ সালে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ এবং মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ জীবিত থাকাকালীন আল-কায়েদার তৎকালীন নায়েবে আমীর শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী কর্তৃক “আল-লিক্বাউল মাফতুহ” শিরোনামে যে প্রশ্নোত্তর পর্ব অফিসিয়ালি অডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন, তার ২য় অংশে মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ’র সাথে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র সম্পর্কের ব্যাপারে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-
“মোল্লা মুহাম্মাদ উমর হাফিযাহুল্লাহ ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান এবং মুজাহিদদের মধ্যে যারা এর সাথে মিলিত হবে তাদের আমীর। আর শায়খ উসামা হাফিযাহুল্লাহ তাঁর একজন সৈনিক।”[8]
নবম দলিল: স্মৃতিচারণমূলক ভিডিওতে শায়খ যাওয়াহিরীর ঘোষণা
মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ-কে নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক ভিডিওতে শায়খ আইমান বলেন-
“এই নীতি মেনে নিয়ে ইমারতে ইসলামী’কে কেন্দ্র করে মুসলমানগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা মোল্লা উমরকে বাইআত দিয়েছি।”[9]
এই সকল দলিল-প্রমাণ দ্বারা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তালিবানদের প্রথম আমীর মোল্লা মুহাম্মদ উমর রহিমাহুল্লাহ-কে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ শুধু আনুগত্যের বাইআতই দেননি, বরং এটি ছিল বাইআতে উজমা—ইসলামী খেলাফতের স্বীকৃতি। তিনি তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই বাইআতের হক আদায়ে সচেষ্ট থেকেছেন। এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই আল-কায়েদা ও তালিবান একে অপরের শরঈ ও আদর্শিক মিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
*****
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[4] আমিরুল ওয়াফা, সিলসিলাতু 'ইহমিল সিলাহাশ শাহীদ', আলহালাকাতুল উলা, ভিডিও সংস্করণ- আস সাহাব মিডিয়া, শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি, আলবুশরয়াত কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-১০, ২০১৮ ইং- ১৪৩৯ হিজরি, মাকতাবা বাইতুল মাকদিস কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-২০, ২০১৯ ইং- ১৪৪১ হিজরি
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/20211006_20211006_2357
বাইতুল মাকদিস লিংক- https://archive.org/details/Ihmilsilahshahid
আলবুশরিয়্যাত লিংক- https://archive.org/details/ihmil-silah
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/Pxp8D
[5] ১- আমিরুল ওয়াফা, সিলসিলাতু 'ইহমিল সিলাহাশ শাহীদ', আলহালাকাতুল উলা, ভিডিও সংস্করণ- আস সাহাব মিডিয়া, শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি, আলবুশরয়াত কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-১০, ২০১৮ ইং- ১৪৩৯ হিজরি, মাকতাবা বাইতুল মাকদিস কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-২০, ২০১৯ ইং- ১৪৪১ হিজরি
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/20211006_20211006_2357
বাইতুল মাকদিস লিংক- https://archive.org/details/Ihmilsilahshahid
আলবুশরয়াত লিংক- https://archive.org/details/ihmil-silah
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/Pxp8D
২- মাজমু’ রাসায়িল ওয়া তাওজিহাত, রিসালাতুন ইলা মু’তামারি উলামা-ই দিওবান্দ ফি বিশাওয়ার, (৯এপ্রিল ২০০১, ১৫ মুহাররম ১৪২২ হিজরি) পৃষ্ঠা-৪১৬, নুখবাতুল ই’লাম আলজিহাদি, ২০১৫ ইংরেজি, ১৪৩৬ হিজরি
লিংক- লিংক- https://archive.org/details/al_nokbah9_o_20151212
[6] আমিরুল ওয়াফা, সিলসিলাতু 'ইহমিল সিলাহাশ শাহীদ', আলহালাকাতুল উলা, ভিডিও সংস্করণ- আস সাহাব মিডিয়া, শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি, আলবুশরয়াত কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-৭, ২০১৮ ইং- ১৪৩৯ হিজরি, মাকতাবা বাইতুল মাকদিস কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-১৪, ২০১৯ ইং- ১৪৪১ হিজরি
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/20211006_20211006_2357
বাইতুল মাকদিস লিংক- https://archive.org/details/Ihmilsilahshahid
আলবুশরয়াত লিংক- https://archive.org/details/ihmil-silah
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/Pxp8D
[7] নাশরাতুন নাফীর- আল আদাদুল আউয়াল (ইয়া উম্মাতান নাসর! ইনফিরি ওয়া জাহিদি ওয়াসতাবশিরি), আস সাহাব মিডিয়া, রজব ১৪৩৫ হিজরি, জুলাই ২০১৪ ইংরেজি
লিংক- (আরবী) https://archive.org/details/Alnafir1
বাংলা অনুবাদ- https://archive.ph/9R85e
বাংলা অনুবাদ-২ https://archive.ph/VpmI9
[8] আললিকাউল মাফতুহ, আলজুযউস সানী, আস সাহাব মিডিয়া, ২২ এপ্রিল ২০০৮ ইংরেজি,
অডিও লিংক- http://www.archive.org/download/AboOsaama_056/2_1.MP3
টেক্সট লিংক- https://archive.ph/jZ17O
[9] আমিরুল ওয়াফা, সিলসিলাতু ইহমিল সিলাহাশ শাহীদ, আলহালাকাতুল উলা, ভিডিও সংস্করণ- আস সাহাব মিডিয়া, শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি, আলবুশরয়াত কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-১৮, ২০১৮ ইং- ১৪৩৯ হিজরি, মাকতাবা বাইতুল মাকদিস কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-৩৬, ২০১৯ ইং- ১৪৪১ হিজরি
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/20211006_20211006_2357
বাইতুল মাকদিস লিংক- https://archive.org/details/Ihmilsilahshahid
আলবুশরয়াত লিংক- https://archive.org/details/ihmil-silah
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/Pxp8D
Comment