তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (৬)
মুনশি আব্দুর রহমান

২য় অধ্যায় | ১ম পরিচ্ছেদ
দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রথম পরিচ্ছেদঃ তালিবানদের দ্বিতীয় আমীর মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ-কে আল-কায়েদার তৎকালীন আমীর কর্তৃক বাইআত প্রদান
আল-কায়েদার পক্ষ থেকে তালিবানের দ্বিতীয় আমীর, আমীরুল মুমিনিন মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ-এর প্রতি আনুগত্যের বাইআত প্রদান ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী (হাফিযাহুল্লাহ)—তৎকালীন ক্বাইদাতুল জিহাদের আমীর—একটি সুস্পষ্ট বাইআতনামা জারি করেন, যেখানে বিস্তারিতভাবে বাইআতের ভিত্তি ও শর্তসমূহ উল্লেখ করা হয়।
এই বাইআত শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এতে ছিল লক্ষ্য, মিশন, আকীদা ও উম্মাহর ভবিষ্যতের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতার সুস্পষ্ট ঘোষণা। যেহেতু আলোচনাটি একটু বড়, তাই আমি সেই শর্তগুলোসহ-ই উল্লেখ করছি। শায়খ বাইআতনামায় বলেন-
"জিহাদের পথে অবিচল থাকার নিমিত্তে, মুজাহিদীনের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, এবং আমাদের শহীদ হয়ে যাওয়া পূণ্যবান নেতৃবৃন্দ তথা আমাদের আমীর শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ, আমাদের ভাই আবু মুসআব আজ-জারকাবী, মুস্তফা আবুল ইয়াজিদ, আবুল লাইস আল-লিবী, আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী, আতিয়্যাতুল্লাহ আল-লিবী প্রমুখের পদাঙ্ক অনুসরণ করে
আমি আল-কায়েদার আমীর হিসেবে আপনাকে বাইআত প্রদান করছি...
আমার এ বাইআত মূলত শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ এবং তাঁর পূণ্যবান সঙ্গীদের কর্তৃক আমীরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর রহিমাহুল্লাহ-কে প্রদত্ত বাইআতেরই নবায়ন।
আমরা আপনাকে আল্লাহর কিতাব, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের উপর বাইআত প্রদান করছি...
আপনাকে বাইআত প্রদান করছি শরীয়াহ কায়েমের উপর, যেন সমস্ত মুসলিম ভূমিতে একমাত্র শরীয়াহর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, শরীয়াহ যেন অন্য কোনো তন্ত্র-মন্ত্রের অধীন না থেকে বরং নিজে সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়, শরীয়াহর উপর অন্য কোনো আইনের কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব না থাকে এবং শরীয়াহর সাথে অন্য কোনো সংবিধানের অংশীদারত্ব না থাকে।
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক সমস্ত নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন, শাসন ও সরকারব্যবস্থা, অঙ্গীকার, চুক্তি কিংবা সনদপত্র থেকে সম্পর্ক ছিন্ন রাখার ব্যাপারে...চাই সেই শরীয়াহবিরোধী কাঠামো মুসলিম ভূমির ভেতরেই হোক অথবা মুসলিম ভূমির বাইরের কোনো সংস্থা, সংগঠন, কিংবা প্রতিষ্ঠান হোক-যেমন জাতিসংঘ ও এ জাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান.....
কাশগর থেকে আন্দালুসিয়া পর্যন্ত, ককেশাস থেকে মধ্য আফ্রিকা এবং সোমালিয়া পর্যন্ত, কাশ্মীর থেকে বাইতুল মাকদিস পর্যন্ত, ফিলিপাইন থেকে কাবুল, বুখারা এবং সমরকন্দ পর্যন্ত মুসলমানদের প্রতিটি (শত্রু কবলিত) ভূমি আজাদ করার উপর আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি...
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি শরীয়াহর বিধান পরিবর্তনকারী ওই সকল শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ব্যাপারে, যারা মুসলিম ভূমিগুলোর শাসন ক্ষমতা দখল করে শরীয়াহ আইন অকার্যকর করে রেখেছে, মুসলমানদের উপর কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য বিধানাবলী চাপিয়ে দিয়েছে, ফাসাদ এবং নষ্টামির প্রসার ঘটিয়েছে, মুসলমানদের উপর কুফরী এবং দালালীর এমন সরকারব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে; যে ব্যবস্থা শরীয়াহকে অবজ্ঞা করে, কাফেরদের বিশ্বাস ও দর্শনকে মহিমান্বিত করে এবং মুসলমানদের ভূমি ও সম্পদ কাফেরদের হাতে তুলে দেয়।
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি পৃথিবীর যেখানে যত নিপীড়িত নির্যাতিত আছেন, তাদের নুসরত ও সাহায্য করার উপর...
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি আমাদের সাধ্যমত সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধের উপর..
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি যতদিন পর্যন্ত ইমারতে ইসলামিয়্যাহ আমাদেরকে আল্লাহর কিতাব এবং রসূলের সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালনা করে ততদিন পর্যন্ত ইমারতে ইসলামিয়্যাহ'র প্রতিরক্ষা করার উপর...
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি ইসলামী খেলাফত কায়েমের উপর, যা প্রতিষ্ঠিত হবে মুসলমানদের সন্তুষ্টি ও শুরার ভিত্তিতে,
যার মধ্য দিয়ে ইনসাফ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যায়-অনাচার ও জুলুম দূরীভূত হবে, প্রত্যেকের প্রাপ্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, এবং জিহাদের পতাকা সমুন্নত হবে.....
উপরোক্ত এই সকল বিষয়ের উপর এবং পছন্দে-অপছন্দে, সহজ সময়ে ও কঠিন সময়ে; সর্বাবস্থায় শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি আমাদেরকে উত্তমভাবে এ অঙ্গীকার পূরণ করতে এবং আপনাদেরকে এই সকল গুরুদায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করেন...!" [1]
এই ঐতিহাসিক বাইআতের মাধ্যমে একদিকে যেমন তালিবান ও আল-কায়েদার সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ পায়, তেমনি এক বৈশ্বিক ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের আত্মিক সংহতির দিকটিও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—
তালিবানের দ্বিতীয় আমীর মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ কি এই বাইআত গ্রহণ করেছিলেন?
এর জবাব হলো— হ্যাঁ, তিনি গ্রহণ করেছিলেন। এবং তা শুধু মৌখিক বা গোপনীয় নয়, বরং একেবারে স্পষ্ট ভাষায় আল-কায়েদার নাম উল্লেখ করে বাইআত গ্রহণের ঘোষণা প্রদান করেছিলেন।
এই ঘোষণা ও তার বিবরণ আমরা পরবর্তী আলোচনায় প্রামাণ্য সূত্রসহ তুলে ধরবো, ইনশা আল্লাহ।
*****
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[1] আল-বাইআতু তানযীমুল কায়েদাহ মা'আ আমীরিল মু’মিনীন আল-মুল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসূর হাফিযাহুল্লাহ ( البيعة تنظيم القاعدة مع أمير المؤمنين/ الملا أختر محمد منصور حفظه الله ) ।
বার্তাটির ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/longwar11_gmail
আরবি লিখিত সংস্করণ পড়ুন- https://archive.ph/db8Q8
বাংলা অনুবাদ পড়ুন- https://archive.ph/m1iPm
ইংরেজি অনুবাদ পড়ুন- https://archive.ph/nJtiB
এছাড়াও বাইআতের বার্তাটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এটি নিয়ে নিউজ করে এবং টেররিজম সংক্রান্ত অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন প্রকাশ করে-
আল জাজিরা ইংরেজি বিভাগ- https://www.aljazeera.com/news/2015/...o-taliban-head
বিবিসি নিউজ- https://www.bbc.com/news/world-asia-33907666
মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক কমবেটিং টেররিজম সেন্টারের গবেষণা প্রতিবেদন- https://ctc.westpoint.edu/al-zawahir...tiful-harvest/
ইসরাইলপন্থী থিংকট্যাঙ্ক লং ওয়ার জার্নালের প্রতিবেদন- https://www.longwarjournal.org/archi...s-new-emir.php
Comment