Announcement

Collapse
No announcement yet.

গভীর রাষ্ট্রের (Deep State) ছায়াতলে: কৌশলগত চাপ এবং অপরিহার্যতার বিভ্রম (খন্ড চার)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গভীর রাষ্ট্রের (Deep State) ছায়াতলে: কৌশলগত চাপ এবং অপরিহার্যতার বিভ্রম (খন্ড চার)

    বর্তমান সময়ে আমরা যে তাজদীদ বা বিপ্লব-সংক্রান্ত আলোচনাগুলো দেখতে পাচ্ছি, সেখানে একটি মৌলিক ধারণা ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে—তা হলো, জনগণের হৃদয়ে ঈমান ও তাকওয়া প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের চিন্তার ভেতর যে কুফরি ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, বিশেষ করে সেকুলারিজমের মতবাদ, তা স্পষ্টভাবে তাদের সামনে তুলে ধরা।

    এই দৃষ্টিভঙ্গির ধারণা হলো, যখন মানুষ তাদের চারপাশে চলমান শোষণমূলক ও আল্লাহবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত হবে, এবং বুঝবে যে এই অবস্থা পরিবর্তন করা কেবল একটি রাজনৈতিক কর্তব্য নয় বরং একটি ঈমানী দায়িত্ব—তখন সমাজে সত্যিকার পরিবর্তনের পথ তৈরি হবে। এই প্রক্রিয়ায় মানুষকে কেবল ক্ষুব্ধ করে তুললেই হবে না, বরং তাদের ঈমানী চেতনার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, যেন তারা কুফরি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সংগঠিত ও মবিলাইজ হতে পারে। এই অবস্থায় বিপ্লব আর কেবল একটি বাহ্যিক রাজনৈতিক ঘটনা থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে এক ধরনের আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্জাগরণ—যা সমাজের মেরুদণ্ডে আঘাত হানে এবং তাজদীদকে বাস্তবতা হিসেবে সামনে নিয়ে আসে।

    অতএব, প্রশ্নটা এখানে: আমরা কি শুধুই সামাজিক ক্ষোভকে উস্কে দিচ্ছি, না কি ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে একটি সুসংবদ্ধ, সচেতন এবং আল্লাহমুখী জনমত গঠনে কাজ করছি?

    ডিপ স্টেট বা ছায়া রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের চলমান আলোচনার একটি মৌলিক ও বাস্তবিক দিক হলো—বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেসব শক্তি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত, তারা সহজে নিজেদের জায়গা নতুন কোনো শক্তিকে ছেড়ে দেবে না। এটি তাদের স্বার্থ, ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ রক্ষার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।

    ফলে কোনো ধরনের সামাজিক চাপ, জনমত বা সংকট তৈরি হলেও—সর্বোচ্চ যা অর্জন করা সম্ভব, তা হলো কিছু আংশিক সংস্কার বা সীমিত রূপে কাঠামোগত পরিবর্তন। কিন্তু মূল যে শাসনব্যবস্থা, যার ভিত্তিতে এই রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে এবং যার মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে, সেই মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা গভীরভাবে জটিল এবং প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

    আমরা পূর্ববর্তী আলোচনায় উল্লেখ করেছি যে, ঈমান, নৈতিকতা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে জনসাধারণকে বিশেষভাবে মবিলাইজ করা যায়, তবে একটি অর্থপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী সমাজ-পরিবর্তনের পথ তৈরি হতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো, এই রকম যে কোনো বিপ্লবী উদ্যোগকে ডিপ স্টেটের অস্তিত্বশীল ক্ষমতা ও কাঠামো নানাভাবে বাধা দিতে চেষ্টা করবে। তারা এই ধরনের সচেতনতা ও জনমত তৈরির প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ, দুর্বল কিংবা বিভ্রান্ত করতে যে পন্থাগুলো গ্রহণ করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৌশল নিম্নরূপ:

    Strategic Pressure and the Illusion of Necessity: ডিপ স্টেট-এর প্রধান কৌশলগুলোর একটি হলো—প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের মাধ্যমে বিপ্লবী চেতনার বাহকদের এমন এক মানসিক ও সাংগঠনিক পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া, যেখানে তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তাদের আদর্শে সামান্যতম পরিবর্তন না আনলে তাদের সমস্ত আন্দোলন, কার্যক্রম ও উদ্যোগ স্থবির হয়ে পড়বে। এই চাপ প্রকাশ্য নয়; বরং এটি একটি প্রায় অদৃশ্য ও নীতিগত প্রতিক্রিয়াশীল কাঠামোর মাধ্যমে ধাপে ধাপে গঠিত হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে ‘বাস্তবতা’রূপে প্রতীয়মান হয়।

    ডিপ স্টেট কখনোই সামনাসামনি বিরোধিতার পথ বেছে নেয় না, কারণ সরাসরি দমন প্রায়ই বিপ্লবী শক্তিকে আরও দৃঢ় করে তোলে। বরং, তারা অতীতের অভিজ্ঞতা, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, মিডিয়া ফ্রেমিং এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে এমন এক পরিসর তৈরি করে, যেখানে বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলো মনে করতে থাকে যে আদর্শিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা মানেই নিজেদের আত্মনাশ ডেকে আনা।

    এখানে লক্ষ্যযোগ্য বিষয় হলো—চাপটি ‘বস্তুনিষ্ঠ’ হতে পারে, আবার একটি ধ্রুপদী “manufactured consent”-এর কাঠামোর মধ্য দিয়ে তৈরি হয়, যেমনটি নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড হারম্যান তাদের গবেষণায় বিশ্লেষণ করেছেন। বিপ্লবীরা এই চাপকে বাহ্যিক দমন নয়, বরং বাস্তবতা হিসেবে দেখতে শুরু করে। ফলে, তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, রাজনৈতিক সঙ্গতি বজায় রাখতে কিংবা সাধারণ জনসমর্থন ধরে রাখার তাগিদে তাদের মূল আদর্শ ও চেতনার কিছু দিককে ‘সাময়িক’ বা ‘কৌশলগত’ বিবেচনায় আপোষ করে ফেলেন।

    এই আপোষপ্রবণতা ধীরে ধীরে তাদের চিন্তার কাঠামোতে গৃহীত হয়ে ওঠে। শুরুতে এটি হয়তো একটি কৌশলগত অবস্থান—“আমরা এখনই সবকিছু বলছি না”—এই যুক্তিতে স্বরকম্পনের সূচনা ঘটে। কিন্তু ক্রমেই এই অবস্থান স্থায়ী রূপ নিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আদর্শিক ত্যাগ অনিবার্য বলেই মনে হতে থাকে। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে "cognitive dissonance reduction strategy" বলা যায়, যেখানে ব্যক্তি নিজের বিশ্বাস ও বাস্তবতার মধ্যে সংঘর্ষ কমাতে নিজেই বিশ্বাসকে নমনীয় করে ফেলে।

    এই অবস্থার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, বিপ্লবী চিন্তাগুলো আর নিজেদের আদর্শের উপর ভর করে সামনে এগোতে পারে না। বরং তারা ক্রমে প্রতিকূলতাকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়ে—নিজেদের অবস্থান, ভাষা ও কর্মসূচি এমনভাবে ঢেলে সাজায় যা ডিপ স্টেট কর্তৃক নির্ধারিত ‘সহনযোগ্যতার পরিসীমা’র মধ্যে থাকে। এর ফলে, বিপ্লব আর বিপ্লব থাকে না—তা পরিণত হয় 'নিয়ন্ত্রিত প্রতিবাদ'-এ।

    সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি—যেখানে রাখাল রাহা নামের এক ধৃষ্ট এবং অধম কুলাঙ্গার আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রকাশ্য অবমাননা করেছে। এ ঘটনা স্বভাবতই মুসলিম জনসাধারণের ঈমানি অনুভূতিতে প্রবল আঘাত হানে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ইসলামপন্থী দল এই ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল, মানববন্ধন, বিবৃতি ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেছে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি—এই প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট ছিল না, বরং এতে ঈমানদীপ্ত প্রতিরোধের গভীর অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

    কিন্তু যা আমাকে বিশেষভাবে আহত করেছে, তা হলো—যে ভাইয়েরা প্রতিনিয়ত সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে সোচ্চার, যারা রাষ্ট্রচিন্তার কুফরী প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন, তারাই এই সংকটময় মুহূর্তে কটুক্তিকারীর শরিয়াহ সম্মত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির (কিতালের) পরিবর্তে “ব্লাসফেমি আইন” প্রণয়নের আহ্বানে বেশি জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে, তারা এই ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে যেন একপ্রকার ‘কাফের কাঠামোর’ কাছেই ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন, যাদের বিরুদ্ধে তারা এতকাল ইসলামি আইনের দাবি তুলে এসেছেন।

    সবচেয়ে কষ্টদায়ক বাস্তবতা হলো—যেসব ইসলামিক দল কটুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, তারা অন্তত এটুকুই বলেছে যে, “এটা ঠিক হয়নি, কিন্তু আমাদের আর করার কিছু নেই।” অথচ যাদের মুখে প্রতিনিয়ত ‘সেকুলারিজম বিরোধী জেহাদী কণ্ঠ’ আমরা শুনি, তারাই যেন আজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবমাননাকারীর শাস্তির ব্যাপারে একটি সেকুলার আইন—‘ব্লাসফেমি অ্যাক্ট’—প্রণয়নকে শেষ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

    এ প্রশ্ন তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—সেকুলার কাঠামোকে যাঁরা আদর্শগতভাবে বাতিল ঘোষণা করে আসছেন, তারা কীভাবে তার মাধ্যমেই রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সম্মান রক্ষার চেষ্টায় আত্মসমর্পণ করছেন? নাকি আদর্শের জায়গায় তারা নিজেরাই দ্বিধান্বিত, বিভ্রান্ত এবং co-option-এর ফাঁদে পড়েছেন?

    আমি আমার ভাইদের ব্যাপারে এতটুকু জামিনদার হতে পারি যে, তাঁরা "সাতিমে রাসূল"—নবীজী ﷺ-কে গালি দেওয়া মুরতাদদের বিষয়ে উদাসীন নন, কিংবা শরিয়তের যেসব হুকুম এদের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে স্পষ্ট, সেগুলো অস্বীকার করছেন না। তাঁদের অবস্থান হলো: বর্তমান বাস্তবতায় এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা দাওয়াতি কাজের গতিকে ব্যাহত করবে, জনসচেতনতা গঠনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে রাষ্ট্র আবারও অমানবিকভাবে উপস্থাপন করে দমন-পীড়নের বৈধতা খুঁজে নেবে। তাই তারা আপাতত এই জাতীয় পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকাকে একটি কৌশল বা 'মাসলাহত'-সঞ্জাত অবস্থান হিসেবে দেখছেন— যেমনটা আমরা গ্লোবাল জিহাদের নেতৃস্থানীয় শাইখদের কাছ থেকেও দেখতে পাই, যারা ফসলগত কারণ বিবেচনায় বাংলাদেশে সরাসরি অপারেশনাল কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন।

    তবে আমার যে জায়গাটায় গভীর কষ্ট জন্মেছে, তা হলো— এই ভাইয়েরাই নবী অবমাননাকারীর শাস্তি ও বিচারের দাবিতে সেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর শরণাপন্ন হচ্ছেন, যে কাঠামোকে তারা নিজেরাই ‘কুফরি সিস্টেম’ বলে স্বীকার করেন এবং প্রত্যাখ্যান করেন।

    আপনি হয়ত বর্তমান পরিস্থিতিতে অপারেশন চালানোকে যথোপযুক্ত মনে না-ও করতে পারেন। কিন্তু বিপরীতে আপনি যদি সেই ব্যবস্থার কাছেই ইনসাফ প্রত্যাশা করেন, যাকে আপনি সত্য ও বাতিলের লড়াইয়ে শত্রু বলে গণ্য করেন—তাহলে সেটি মানুষের মনে মারাত্মক বিভ্রান্তি ছড়ায়। এটা এমন এক বার্তা পাঠায় যেন আমরা কুফরি সিস্টেমের ন্যায়ের প্রতি আস্থাশীল, যদিও আমাদের আকিদা ও অবস্থান সেই সিস্টেমের মৌলিক বিরোধী।
    কারো ব্যক্তিগত আমল বা নিয়তের উপর সরাসরি মন্তব্য করা ইসলামী আদব ও শরয়ি সীমারেখার বাইরে পড়ে—এ কথা আমরা সকলেই মানি। কিন্তু যখন কারো কাজ ও বক্তব্যের মধ্যে সুস্পষ্ট অমিল দেখা যায়, কিংবা কোনো ঘোষিত আদর্শ বাস্তবে পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় না—তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, বিশ্লেষণ হবে, সমালোচনাও হবে। এটি ব্যক্তি আক্রমণ নয়, বরং আদর্শিক ও বাস্তব মূল্যায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

    তদুপরি, চিন্তাধারার প্রচার, রক্ষা বা জনগণকে সচেতনতার নামে "go with the flow"—এই প্রবাহে ভেসে যাওয়ার নীতিতে যদি একজন তাজদীদপন্থী কাজ শুরু করে, তবে অধিকাংশ মৌলিক দায়িত্বই হাতছাড়া হয়ে যাবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারা আল-ক্বাইম আলা আমরিল্লাহ (আল্লাহর পথে দাঁড়ানো) হয়, তারা কখনো সময়ের স্রোতে ভেসে যাননি; বরং তারা সময়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন, আদর্শকে প্রেরণা বানিয়ে কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

    আজকের প্রেক্ষাপটে যারা তাজদীদ, ইসলামী বিপ্লব বা আদর্শিক রাজনীতির কথা বলবেন, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চিন্তার ঐক্য, কাজের আন্তরিকতা এবং আদর্শিক সোজাসাপ্টা অবস্থান। শুধুমাত্র এ শর্তগুলো পূরণ হলে পরিবর্তন বাস্তব রূপ লাভ করবে এবং তাজদীদ অর্থহীন স্লোগান হিসেবে না থেকে একটি সত্যিকারের রূপরেখা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে, কোনো ধরনের চাপ হোক তা রাজনৈতিক বা সামরিক আমাদের এই আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না, এবং আমাদের চিন্তা ও আদর্শ কোনোভাবেই ভিতর থেকে হাইজ্যাক বা কো-অপ্টেড হয়ে যাবে না।


    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ
Working...
X