তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (৭)
মুনশি আব্দুর রহমান

২য় অধ্যায় | ২য় পরিচ্ছেদ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ কি এই বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন?
এই প্রশ্নের জবাবে আমরা ইতিহাসের এক নিশ্চিত অধ্যায়ের মুখোমুখি হই— হ্যাঁ, তিনি করেছিলেন। এটি শুধু অনুমান কিংবা অপ্রমাণিত কোনো দাবী নয়; বরং প্রমাণভিত্তিক, দলিলসমর্থিত এবং তালিবানদের নিজস্ব মাধ্যমেই প্রকাশিত বাস্তবতা।
প্রথম দলিল:
তালিবানদের তৎকালীন আমীর, আমীরুল মুমিনিন মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ সরাসরি ও আনুষ্ঠানিকভাবে আল-কায়েদার এই বাইআত গ্রহণ করেছিলেন। তালিবানদের অফিসিয়াল আরবি মুখপত্র আস-সমূদ ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিশেষ বাণীতে তিনি নিজের কণ্ঠেই এ সত্য ঘোষণা করেন:
"এই বার্তার মাধ্যমে আমি অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই সেই সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের, যারা এই কঠিন ও সংবেদনশীল সময়ে আমাদের শোক ভাগ করে নিয়েছেন, আমাদের প্রতি সমবেদনা ও সান্ত্বনা বার্তা পাঠিয়েছেন এবং ইমারতে ইসলামিয়্যাহ’র নতুন আমীর ও মুসলিম উম্মাহর সেবকরূপে আমাকে বাইআত প্রদান করেছেন।
এই সব সম্মানিত ভাইদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন কায়েদাতুল জিহাদের আমীর ডা. আইমান আয-যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ)। তিনি শুধু শোক ও সমবেদনা জানাননি, বরং তাঁর অধীনস্থ সমস্ত মুজাহিদদের পক্ষ থেকেও আমাদের প্রতি বাইআতের বার্তা পাঠিয়েছেন। আমি তাঁর এই আনুগত্য ও সৌজন্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তদ্রূপ, আমি সকল সীমান্ত প্রহরারত মুজাহিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আলেম-শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার অধ্যাপক, জিহাদি ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব, এবং বিভিন্ন প্রান্তের জিহাদি রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিও কৃতজ্ঞ, যারা আমাদের শোকে শরীক হয়েছেন কিংবা আমাকে জিহাদের আমীর হিসেবে বাইআত প্রদান করেছেন।
আমি আল্লাহর কাছে আমাদের সকলের জন্য দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের ইসলামের এবং মুসলমানদের খেদমতে কবুল করেন। [2]
.
দ্বিতীয় দলিল:
এই বাইআতের বিষয়টি শুধু মুখের কথা কিংবা লোকমুখে প্রচলিত কোনো দাবী নয়; বরং তা দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ এবং তালিবানদের অফিসিয়াল পত্রিকা ‘আস-সমূদ’-এর ১১৩তম সংখ্যার ৬ নম্বর পাতায় ছাপাও হয়েছিল।
এই সংখ্যাটি ছিল বিশেষভাবে স্মরণীয়—বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মুজাহিদ, আলেম ও প্রভাবশালী ইসলামী ব্যক্তিত্বদের শোকবার্তা ও আনুগত্যের বার্তায় পরিপূর্ণ। এর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শাইখ জালালুদ্দিন হাক্কানী রহিমাহুল্লাহ-এর মতো বর্ষীয়ান মুজাহিদ নেতার অংশগ্রহণ।
এই সংখ্যায় এমনকি আস-সমূদ ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটেও আলাদাভাবে শায়খ আইমানের বাইআতের অডিও বার্তা সম্পর্কে পোস্ট করা হয়, যেখানে তিনি মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ-এর প্রতি তাঁর পূর্ববর্তী বাইআতের কথা স্মরণ করে নতুন আমীর, মোল্লা আখতার মানসুর (হাফিযাহুল্লাহ)-এর প্রতি বাইআতের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। [3]
তালেবানের ওই ওয়েবসাইটের পোস্টে বলা হয়-
“গতকাল একটি অডিও বার্তায় কায়েদাতুল জিহাদের সম্মানিত আমীর, মর্যাদাপূর্ণ আলেম ও চিকিৎসাবিদ শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) গভীর শোক ও বেদনাভরা হৃদয়ে ইমারতে ইসলামিয়্যাহ’র প্রিয় নেতা, আমীরুল মুমিনিন মাওলানা মোহাম্মদ উমর মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর ইন্তিকালে শোক প্রকাশ করেন।
নিজের বক্তব্যে তিনি এই মহান রাহবারের (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) জীবন ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন, তাঁর সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার প্রশংসা করেন, এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির পথে তাঁর বলিষ্ঠ অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) পূর্বে যিনি মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ উমর মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর প্রতি বাইআত প্রদান করেছিলেন, এবার তিনি তাঁর উত্তরসূরি ও আফগানিস্তানের ইমারতে ইসলামিয়্যাহ’র নতুন ন্যায়সংগত নেতা, আমীরুল মুমিনিন মাওলানা আখতার মোহাম্মদ মনসুর (হাফিজাহুল্লাহ)-এর প্রতি নতুন করে আনুগত্যের অঙ্গীকার ঘোষণা করেন।
এই পদক্ষেপ কেবল তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সংশ্লিষ্ট জিহাদি সংগঠনের অটল সংকল্প, শায়খের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা, তাঁর নেতৃত্বাধীন মুজাহিদদের অবিচল প্রতিজ্ঞা এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও সুরক্ষার প্রতি তাঁদের দৃঢ় অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।” [4]
এই বাইআতকে শুধু ব্যক্তিগত অঙ্গীকার হিসেবে নয়, বরং এক আন্তর্জাতিক জিহাদি তানযীমের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, উম্মাহর ঐক্যের প্রতি অঙ্গীকার, এবং বৈশ্বিক জিহাদের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
উপরে উল্লিখিত দলিলপত্র, অফিসিয়াল বার্তা, ম্যাগাজিন প্রকাশনা এবং ওয়েবপোস্টসমূহের আলোকে স্পষ্টভাবে বলা যায়—
আল-কায়েদার আমীর শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী কর্তৃক তালিবানদের আমীর মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআত প্রদান শুধু মৌখিক কিংবা পার্শ্বচিত্র নয়—বরং এটি তালিবানদের নিজস্ব অফিসিয়াল মাধ্যমে স্বীকৃত, প্রকাশিত এবং নিশ্চিতকৃত এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
উভয় পক্ষের স্বীকৃতি, আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এটি একটি বাস্তব, প্রাতিষ্ঠানিক, বৈশ্বিক জিহাদি সম্পর্কের স্বীকৃতি হয়ে উঠেছে।
সুতরাং, এটা বলাই যায়—
- আল-কায়েদা কেবল তালিবানদের আমীরকে বাইআত দেয়নি, বরং সেই বাইআত তালিবানের পক্ষ থেকেও গ্রহণ, সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেছে।
- আল-কায়েদা একটি গ্লোবাল জিহাদি তানযীম হিসেবে তালিবানদের আমীরের নেতৃত্বাধীন কাফেলার অংশ—এবং এটি কোনো অনুমান নয়, বরং লিখিত, প্রচারিত, ও ইতিহাসবদ্ধ সত্য।
*****
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[2] রিসালাতু কাবুলি ওয়া তাকদীর লি বাইআতি জামিইল মুবায়িয়ীনা মিন আমীরিল ইমারাতিল ইসলামিয়্যাহ আল-জাদীদ (رسالة قبول وتقدير لبيعة جميع المبايعين من أمير الإمارة الإسلامية الجديد)
লিংক- https://archive.ph/wYA96
পুরো বার্তাটির বাংলা অনুবাদ পড়ুন- https://archive.ph/o1XXR
New Amir of Islamic Emirate thanks and accepts all who pledged allegiance- https://archive.ph/1SLy7
লং ওয়ার জার্নাল থেকেই বার্তাটির একটি ইংরেজি অনুবাদ পড়ুন- https://archive.ph/VMFXA
এছাড়াও তাদের New Taliban emir accepts al Qaeda’s oath of allegiance নামের একটি গবেষণা প্রতিবেদন দেখতে পারেন- https://archive.ph/E4kjo
[3] আল-সমুদ,১১৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিংক- https://archive.org/download/SomooodsIssues/113.pdf
[4] রিসালাতু (رسالة المواساة والبيعة من أمير تنظيم قاعدة الجهاد) , লিংক- https://archive.ph/jmtyt
Comment