যেকোনো বিপ্লব বা আন্দোলনের পথচলা মূলত একটি ধারাবাহিক ও কৌশলগত রূপান্তর প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে চারটি বৃহৎ স্তরে বা ধাপে ভাগ করা যায়: লক্ষ্য নির্ধারণ (Goal), নীতিগত রূপরেখা বা কৌশল নির্ধারণ (Policy), বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ পর্ব (Implementation), এবং ক্ষমতার হস্তান্তর ও প্রতিষ্ঠা (Transaction of Power)। যদিও বাস্তবে এই ধাপগুলো পরস্পরের ভেতরে প্রবাহমান, তবুও বিশ্লেষণের সুবিধার্থে এগুলো আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
প্রথমত, লক্ষ্য নির্ধারণ ছাড়া কোনো বিপ্লবই বিপ্লব নয়। লক্ষ্য না থাকলে আন্দোলন শুধুই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, স্থায়ী পরিবর্তনের কোনো সুনির্দিষ্ট দিক থাকে না। জিহাদি আন্দোলনগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য একটিই—আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করা, যেমনটি আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে: "لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ" (তাকে অন্য সকল ধর্মব্যবস্থার উপর বিজয়ী করার জন্যই তিনি এই দ্বীন প্রেরণ করেছেন)। কিন্তু লক্ষ্য কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকলে তা কর্মপরিকল্পনায় পরিণত হয় না। শায়খ আবু মুসআব আস-সুরি রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন, "أولُ علامةٍ للحركة هي وضوحُ هدفِها وواقعيّتُه، فالأهدافُ الغامضةُ والعاطفيةُ لا تُنتجُ إلاّ الاضطرابَ، لا النصر." - “একটি আন্দোলনের প্রথম চিহ্ন তার উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা ও বাস্তবতা। ধোঁয়াটে ও আবেগতাড়িত উদ্দেশ্য শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করে, বিজয় নয়।”
(কিতাব: دعوة المقاومة الإسلامية العالمية)
সাধারণত যখন আমাদের প্রশ্ন করা হয়—“আপনাদের এই সংগঠন বা আন্দোলনের লক্ষ্য কী?”—তখন আমাদের অধিকাংশের উত্তর হয়: “ইসলাম বা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা।” এই উত্তরটি যদিও শুনতে একান্তভাবে শুদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত, কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্য সংক্রান্ত আমাদের বোধ এবং বক্তব্যে কিছু অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থতা থেকে যায়। আমি 'অস্পষ্টতা' ও 'তিক্ততা' বলছি, কারণ বাস্তবে দেখা যায়—অনেক ভাইয়ের কাছেই এই কথাটি (ইসলাম প্রতিষ্ঠা) খুব সাধারণ এবং বিমূর্ত (abstract) একটি বিবৃতি হিসেবে ধরা পড়ে।
তাদের কথা হলো: “ইসলাম প্রতিষ্ঠা”—এটি একটি ‘বড় কথা’, কিন্তু সেটি কীভাবে, কোথায়, কোন কাঠামোর মধ্যে, কোন পরিক্রমায় বাস্তবায়িত হবে—তা স্পষ্ট নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাইদের এই বক্তব্যের সাথে একাংশে একমত। কারণ আমরা যদি জানিই না যে কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করছি, তাহলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গ্লোবাল মানহাজ বা চিন্তাধারার সাথে যারা জড়িত, তাদের অনেকেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রায় একই ধরনের উত্তর দেন। এ পর্যায়ে আমি ভাইদের প্রতি একটি বিনীত অনুরোধ রাখতে চাই—আপনাদের সবার আগে বোঝা জরুরি যে গ্লোবাল মানহাজ কোন "ভূমিকে" কেন্দ্র করে কি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্মাণ করেছে?
হ্যাঁ, সর্বত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে—আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার দ্বীন ও শরিয়াহের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্থানভিত্তিক তাদের কৌশল, অগ্রাধিকার ও পরিকল্পনা কী—এটা আমাদের স্পষ্টভাবে জানা থাকা উচিত। আমরা যখন অন্য মানহাজের চিন্তাবিদ ভাইদের সাথে আলোচনায় যাই, তখন অনেক সময় দেখা যায়—এই মৌলিক প্রশ্নগুলোর জবাবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সুসংহত ও পর্যালোচনামূলক বিশ্লেষণ থাকে না। ফলে, আমরা নিজেদের গ্রাউন্ড হারিয়ে ফেলি।
(চলবে)
প্রথমত, লক্ষ্য নির্ধারণ ছাড়া কোনো বিপ্লবই বিপ্লব নয়। লক্ষ্য না থাকলে আন্দোলন শুধুই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, স্থায়ী পরিবর্তনের কোনো সুনির্দিষ্ট দিক থাকে না। জিহাদি আন্দোলনগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য একটিই—আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করা, যেমনটি আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে: "لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ" (তাকে অন্য সকল ধর্মব্যবস্থার উপর বিজয়ী করার জন্যই তিনি এই দ্বীন প্রেরণ করেছেন)। কিন্তু লক্ষ্য কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকলে তা কর্মপরিকল্পনায় পরিণত হয় না। শায়খ আবু মুসআব আস-সুরি রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন, "أولُ علامةٍ للحركة هي وضوحُ هدفِها وواقعيّتُه، فالأهدافُ الغامضةُ والعاطفيةُ لا تُنتجُ إلاّ الاضطرابَ، لا النصر." - “একটি আন্দোলনের প্রথম চিহ্ন তার উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা ও বাস্তবতা। ধোঁয়াটে ও আবেগতাড়িত উদ্দেশ্য শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করে, বিজয় নয়।”
(কিতাব: دعوة المقاومة الإسلامية العالمية)
সাধারণত যখন আমাদের প্রশ্ন করা হয়—“আপনাদের এই সংগঠন বা আন্দোলনের লক্ষ্য কী?”—তখন আমাদের অধিকাংশের উত্তর হয়: “ইসলাম বা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা।” এই উত্তরটি যদিও শুনতে একান্তভাবে শুদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত, কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্য সংক্রান্ত আমাদের বোধ এবং বক্তব্যে কিছু অস্পষ্টতা ও দ্ব্যর্থতা থেকে যায়। আমি 'অস্পষ্টতা' ও 'তিক্ততা' বলছি, কারণ বাস্তবে দেখা যায়—অনেক ভাইয়ের কাছেই এই কথাটি (ইসলাম প্রতিষ্ঠা) খুব সাধারণ এবং বিমূর্ত (abstract) একটি বিবৃতি হিসেবে ধরা পড়ে।
তাদের কথা হলো: “ইসলাম প্রতিষ্ঠা”—এটি একটি ‘বড় কথা’, কিন্তু সেটি কীভাবে, কোথায়, কোন কাঠামোর মধ্যে, কোন পরিক্রমায় বাস্তবায়িত হবে—তা স্পষ্ট নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাইদের এই বক্তব্যের সাথে একাংশে একমত। কারণ আমরা যদি জানিই না যে কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করছি, তাহলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গ্লোবাল মানহাজ বা চিন্তাধারার সাথে যারা জড়িত, তাদের অনেকেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রায় একই ধরনের উত্তর দেন। এ পর্যায়ে আমি ভাইদের প্রতি একটি বিনীত অনুরোধ রাখতে চাই—আপনাদের সবার আগে বোঝা জরুরি যে গ্লোবাল মানহাজ কোন "ভূমিকে" কেন্দ্র করে কি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্মাণ করেছে?
হ্যাঁ, সর্বত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে—আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার দ্বীন ও শরিয়াহের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্থানভিত্তিক তাদের কৌশল, অগ্রাধিকার ও পরিকল্পনা কী—এটা আমাদের স্পষ্টভাবে জানা থাকা উচিত। আমরা যখন অন্য মানহাজের চিন্তাবিদ ভাইদের সাথে আলোচনায় যাই, তখন অনেক সময় দেখা যায়—এই মৌলিক প্রশ্নগুলোর জবাবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সুসংহত ও পর্যালোচনামূলক বিশ্লেষণ থাকে না। ফলে, আমরা নিজেদের গ্রাউন্ড হারিয়ে ফেলি।
(চলবে)
Comment