Tweet
তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (৮)
মুনশি আব্দুর রহমান
৩য় অধ্যায় | ১ম পরিচ্ছেদ
তৃতীয় অধ্যায়
প্রথম পরিচ্ছেদঃ তালিবানদের তৃতীয় আমীর, আমীরুল মুমিনীন মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ)-কে বাইআত
তালিবানদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল ২০১৬ সালের মে মাসে, যখন তালিবানদের দ্বিতীয় আমীর মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মানসুর রহিমাহুল্লাহ এক ড্রোন হামলায় শাহাদাত বরণ করেন। এই শাহাদাত গোটা জিহাদী দুনিয়ায় এক গভীর শোকের ঢেউ তোলে, কিন্তু সেই শোকের মাঝেই উঠে আসে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষার এক ঐতিহাসিক ঘোষণা—নতুন আমীর হিসেবে মনোনীত হন শাইখুল হাদীস ওয়াত-তাফসীর, মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ)।
এমন এক সময়েই আল-কায়েদার আমীর, শায়খ ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বিশ্ববাসীর সামনে একটি অফিসিয়াল অডিও বাণী প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি নতুন আমীরকে আনুগত্যের বাইআত নবায়ন করেন এবং সেই বাইআতকে ঘোষিত করেন এমন এক মজবুত জিহাদী অঙ্গীকার হিসেবে, যার শিকড় মাটির অনেক গভীরে, এবং যার শাখা বিস্তৃত গোটা দুনিয়াজুড়ে জাল বিস্তার করে থাকা তাগুতি, ক্রুসেডার, মুরতাদ এবং দুনিয়াব্যাপী দখলদার কাফির শাসকদের বিরুদ্ধে।
বার্তায় শায়খ বলেন-
“আমীরুল মুমিনিন মৌলবী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা'র প্রতি....
(আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন, আপনাকে হক্বের দ্বারা শক্তিশালী করুন, এবং আপনার মাধ্যমে হক্বকে শক্তিশালী করুন)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
বাদ সালাম আরজ এই যে,
আমরা, আমাদের উম্মাহ, সকল মুজাহিদ, মুহাজির এবং মুরাবিত – অত্যন্ত বেদনার সাথে আমাদের আমীর, আমীরুল মুমিনিন মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসুরের শাহাদাতের সংবাদ পেয়েছি। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন এবং আমাদেরকে তাঁর সাথে জান্নাতে মিলিত করে দিন কোনরকম পথচ্যুতি ও পরিবর্তন ব্যতীত।
তবে, এ বিষয়টি আমাদের জন্য সান্ত্বনার কারণ হয়েছে যে, ক্রুসেডারদের বিমান হামলায় শহীদ হয়ে রবের সাথে সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত সর্বদাই তিনি একজন মুজাহিদ, মুরাবিত এবং আমীরুল মুমিনিন হিসেবে সত্যের উপর অটল ছিলেন।
আল্লাহর পথে শাহাদাত, যা কিনা একজন মুজাহিদের আকাঙ্খিত সর্বোচ্চ মাকাম- তা তিনি অর্জন করেছেন।”
অতঃপর তিনি সরাসরি বাইআত দিয়ে বলেন-
"আল-কায়েদার আমীর হিসেবে আমি আপনার কাছে আমাদের বাইআত পুনঃব্যক্ত করছি যা কিনা শায়খ উসামার (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন) প্রদর্শিত পথ।
মুসলিম উম্মাহকে তিনি আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারতকে সহযোগিতার এবং আনুগত্যের আহবান করতেন। আমিও সেই আহবান পুনঃব্যক্ত করছি।
আমরা আপনাকে আল্লাহর কিতাব, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের উপর বাইআত প্রদান করছি...
আপনাকে বাইআত প্রদান করছি শরীয়াহ কায়েমের উপর, যেন সকল মুসলিম ভূমিতে একমাত্র শরীয়াহ’র কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, শরীয়াহ’র উপর অন্য কোনো আইনের কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব না থাকে এবং শরীয়াহ’র সাথে অন্য কোনো সংবিধান বা অথরিটির অংশীদারত্ব না থাকে।
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি শরীয়াহ’র সাথে সাংঘর্ষিক সমস্ত নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন, শাসন ও সরকারব্যবস্থা, অঙ্গীকার, চুক্তি কিংবা সনদপত্র থেকে সম্পর্ক ছিন্ন রাখার উপর...চাই সেই শরীয়াহবিরোধী কাঠামো মুসলিম ভূমির ভেতরেই হোক অথবা মুসলিম ভূমির বাইরের কোনো সংস্থা, সংগঠন, কিংবা প্রতিষ্ঠান হোক-যেমন জাতিসংঘ ও এ জাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান.....
কাশগর থেকে আন্দালুসিয়া পর্যন্ত, ককেশাস থেকে মধ্য আফ্রিকা এবং সোমালিয়া পর্যন্ত, কাশ্মীর থেকে বাইতুল মাকদিস পর্যন্ত, ফিলিপাইন থেকে কাবুল, বুখারা এবং সমরকন্দ পর্যন্ত মুসলমানদের প্রতিটি শত্রু কবলিত হৃত ভূমির প্রতিটি কণা আজাদ করার উপর আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি...
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি শরীয়াহ’র বিধান পরিবর্তনকারী ওই সকল শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার উপর, যারা মুসলিম ভূমিগুলোর শাসন ক্ষমতা দখল করে শরীয়াহ আইন অকার্যকর করে রেখেছে, মুসলমানদের উপর কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য বিধানাবলী চাপিয়ে দিয়েছে, ফাসাদ এবং নষ্টামির প্রসার ঘটিয়েছে, মুসলমানদের উপর কুফরী এবং দালালীর এমন সরকারব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে; যে ব্যবস্থা শরীয়াহকে অবজ্ঞা করে, কাফেরদের বিশ্বাস ও দর্শনকে মহিমান্বিত করে এবং মুসলমানদের ভূমি ও সম্পদ কাফেরদের হাতে তুলে দেয়।
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি পৃথিবীর যেখানে যত নিপীড়িত নির্যাতিত আছেন, তাদের নুসরত ও সাহায্য করার উপর...
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি আমাদের সাধ্যমত সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধের উপর..
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি যতদিন পর্যন্ত ইমারতে ইসলামিয়্যাহ আমাদেরকে আল্লাহর কিতাব এবং রসুলের সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালনা করে ততদিন পর্যন্ত ইমারতে ইসলামিয়্যাহ'র প্রতিরক্ষা করার উপর...
আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি ইসলামী খেলাফত কায়েমের উপর, যা প্রতিষ্ঠিত হবে মুসলমানদের সন্তুষ্টি ও শুরার ভিত্তিতে,
যার মধ্য দিয়ে ইনসাফ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যায়-অনাচার ও জুলুম দূরীভূত হবে, প্রত্যেকের প্রাপ্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, এবং জিহাদের পতাকা সমুন্নত হবে.....
উপরোক্ত এই সকল বিষয়ের উপর এবং পছন্দে-অপছন্দে, সহজ সময়ে ও কঠিন সময়ে; সর্বাবস্থায় শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর আমরা আপনাকে বাইআত দিচ্ছি।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি আমাদেরকে উত্তমভাবে এ অঙ্গীকার পূরণ করতে এবং আপনাদেরকে এই সকল গুরুদায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করেন..."
হে আমাদের অভিভাবক আমীরুল মুমিনিন মৌলভী হিবাতুল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন ও পথপ্রদর্শন করুন। আল্লাহ আযযা ওয়া যাল্ল আপনাকে ও আপনার দুই পূর্বসূরী আমীরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর ও মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসুর (আল্লাহ তাদের উভয়কে দয়া করেন)-কে মর্যাদা দান করেছেন। আপনাদের হাতে আল্লাহ রাশিয়া ও কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদে বিজয় দান করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামিক ইমারত। আল্লাহ আপনাদের হাতেই ওসমানী খেলাফত পতনের পর প্রথম ইসলামিক ইমারত দান করেন, আজও যেটি ছাড়া কোন পৃথিবীতে আর কোনো ইসলামিক ইমারত নেই।
এই ইমারত জিহাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে, সৎ কাজের প্রসার ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে এবং ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। মুজাহিদ ও মুহাজিরগণ সকলেই এর বৈধতা সম্বন্ধে অবগত এবং তাদের আন্তরিকতার কারণে তারা এর প্রতি আনুগত্যের বাইআত করেছেন।
আমাদের ইমাম শায়খ উসামা বিন লাদেন (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন) ও এ রাষ্ট্রকে বাইআত দিয়েছেন এবং সকল মুসলিমকেই তা করতে আহবান করেছেন।
তিনি তাঁর এ বাইআত আনুগত্যের চূড়ান্ত বাইআত হিসেবে ঘোষণা করেন এবং যেই মুসলিম মাত্ররই উসামা বিন লাদেনের নিকট অথবা আল-কায়েদার নিকট আনুগত্যের বাইআত রয়েছে তারা সবাই এর আওতাধীন হয়ে যায়। [1]
*****
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[1]
- স্বীয় ওয়াদাতেই আমরা প্রতিষ্ঠিত আছি- https://archive.ph/zLo2B
- এই বায়াহ সম্পর্কে লং ওয়ার জার্নালের এই প্রতিবেদনটিও পড়তে পারেন- https://archive.ph/vJeNs
- এই লিংক থেকে বার্তাটির মূল অডিও, আরবি ও পশতু অনুবাদের পিডিএফ ও ডকুমেন্ট ফরম্যাট দেখা যাবে- https://archive.org/details/3ahed-DR
Comment