শাইখ ওসামা ইবন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ যখন আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে তাঁর জিহাদী কার্যক্রম শুরু করেন, তখন তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন: আমাদের লড়াই কেবলমাত্র আমেরিকার বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—পৃথিবীর প্রতিটি কোণে ইসলামী শরীআহ প্রতিষ্ঠা এবং আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা।
আমেরিকা বা তার পশ্চিমা মিত্ররা আমাদের একমাত্র শত্রু নয়—তবে তারা আগ্রাসনের অগ্রভাগে থাকার কারণে, তারা মুসলিম ভূমিতে কুফরী ও তাগূত শাসকদের রক্ষা ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের যুদ্ধের তীর আপাতদৃষ্টিতে আমেরিকার দিকেই বেশি ঘুরেছে।
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ কখনোই কেবল আমেরিকাকে সামরিকভাবে পরাজিত করার কথাই বলেননি। কারণ বাস্তবে আমরা আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে যুদ্ধ করতে যাইনি, আর আমেরিকাও আমাদের বিজিত কোনো ভূখণ্ডে এককভাবে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসেনি। বরং তারা মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসন চালাতে এসেছে—আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, পাকিস্তানসহ বহু দেশে তারা রক্তপাত চালিয়েছে, দখল করেছে, এবং ইসলামী প্রতিরোধ দমন করতে চেয়েছে। এই আগ্রাসনের জবাবেই শাইখ রাহিমাহুল্লাহ তাদের প্রতিহত করেন, এবং তাতে তিনি কেবল তাদের সৈন্যদের পিছু হঠাননি—বরং তাদের সামরিক অহঙ্কারকে ভেঙে দেন, আর্থিকভাবে কাঁপিয়ে দেন, এবং তাদের ভেতরের কৃত্রিম ঐক্যকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন।
সাংগঠনিক রূপ বা মানহাজগত পার্থক্য যাই থাকুক না কেন, অধিকাংশ তানযীমই এই বিষয়ে একমত যে, শায়খ ওসামা ইবন লাদেন (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক নির্ধারিত প্রাথমিক কৌশলগত লক্ষ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাববলয় স্পষ্টভাবে সংকুচিত হচ্ছে। সামরিক ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এর বহিঃপ্রকাশ।
এই প্রেক্ষাপটে জিহাদি আন্দোলনের বিস্তৃতি অভিন্নভাবে সর্বত্র বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অঞ্চলভেদে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায়, কৌশলগত কর্মপরিকল্পনাও হবে বিচিত্র ও বাস্তবনির্ভর। কিছু অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা যৌক্তিক ও ন্যায্য, কারণ সেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ নিপীড়নের শিকার এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ইসলামবিরোধী দমননীতির অংশীদার। এসব অঞ্চলে সামরিক জিহাদ একটি অনিবার্য প্রতিক্রিয়া ও আত্মরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, কিছু ভূখণ্ডকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে নয়, বরং সহায়ক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে। এসব অঞ্চল থেকে অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক এবং মানবসম্পদ সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। একইসাথে সেসব অঞ্চলে আদর্শিক প্রস্তুতি, তাওহীদভিত্তিক আকীদার জাগরণ, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
এই পর্যায়ে এসে কিছু ভাইয়ের পক্ষ থেকে এমন মত প্রকাশ পাচ্ছে যে, আল-কায়েদার প্রকৃত লক্ষ্য কখনোই কেবল “আমেরিকা” নামক একটি রাষ্ট্র ছিল না। বরং তাদের মূল লক্ষ্য ছিল তাগুতি ও সেকুলার শাসনব্যবস্থার ভিত্তিকে ধ্বসিয়ে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দীনকে বিজয়ী করা এবং তা রাজনৈতিক বাস্তবতায় কায়েম করা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা মনে করছেন, আমাদের মানহাজ বা কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে আর কেবল বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা লক্ষ্যবস্তুর দিকে না রেখে এখন একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকেন্দ্রিক প্রকল্পের দিকে কেন্দ্রীভূত করা উচিত।
তাঁদের মতে, বাংলাদেশের বাস্তবতা এই উদ্দেশ্যের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কারণ, এ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম, এবং বহু মানুষ আজও অন্তর থেকে খোলাফায়ে রাশেদিনের আদলে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কামনা করেন—even if they lack the ideological articulation or political organization. এই জনবলের মধ্যে ইসলামী চেতনা প্রবল; শুধুমাত্র উপযুক্ত নেতৃত্ব ও সুসংগঠিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের জাগিয়ে তোলা এবং ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।
এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা মনে করছেন, সকল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতির চূড়ান্ত কেন্দ্র হওয়া উচিত বাংলাদেশ। মানে, অন্যান্য সাময়িক লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশকে একটি স্থায়ী ভিত্তি বা ভূমি (land base) হিসেবে কল্পনা করে দীন কায়েমের প্রকল্পকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্যই তারা এই ভূখণ্ডকে কৌশলগতভাবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
(চলবে)
আমেরিকা বা তার পশ্চিমা মিত্ররা আমাদের একমাত্র শত্রু নয়—তবে তারা আগ্রাসনের অগ্রভাগে থাকার কারণে, তারা মুসলিম ভূমিতে কুফরী ও তাগূত শাসকদের রক্ষা ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের যুদ্ধের তীর আপাতদৃষ্টিতে আমেরিকার দিকেই বেশি ঘুরেছে।
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ কখনোই কেবল আমেরিকাকে সামরিকভাবে পরাজিত করার কথাই বলেননি। কারণ বাস্তবে আমরা আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে যুদ্ধ করতে যাইনি, আর আমেরিকাও আমাদের বিজিত কোনো ভূখণ্ডে এককভাবে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসেনি। বরং তারা মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসন চালাতে এসেছে—আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, পাকিস্তানসহ বহু দেশে তারা রক্তপাত চালিয়েছে, দখল করেছে, এবং ইসলামী প্রতিরোধ দমন করতে চেয়েছে। এই আগ্রাসনের জবাবেই শাইখ রাহিমাহুল্লাহ তাদের প্রতিহত করেন, এবং তাতে তিনি কেবল তাদের সৈন্যদের পিছু হঠাননি—বরং তাদের সামরিক অহঙ্কারকে ভেঙে দেন, আর্থিকভাবে কাঁপিয়ে দেন, এবং তাদের ভেতরের কৃত্রিম ঐক্যকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন।
সাংগঠনিক রূপ বা মানহাজগত পার্থক্য যাই থাকুক না কেন, অধিকাংশ তানযীমই এই বিষয়ে একমত যে, শায়খ ওসামা ইবন লাদেন (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক নির্ধারিত প্রাথমিক কৌশলগত লক্ষ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাববলয় স্পষ্টভাবে সংকুচিত হচ্ছে। সামরিক ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এর বহিঃপ্রকাশ।
এই প্রেক্ষাপটে জিহাদি আন্দোলনের বিস্তৃতি অভিন্নভাবে সর্বত্র বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অঞ্চলভেদে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায়, কৌশলগত কর্মপরিকল্পনাও হবে বিচিত্র ও বাস্তবনির্ভর। কিছু অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা যৌক্তিক ও ন্যায্য, কারণ সেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ নিপীড়নের শিকার এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ইসলামবিরোধী দমননীতির অংশীদার। এসব অঞ্চলে সামরিক জিহাদ একটি অনিবার্য প্রতিক্রিয়া ও আত্মরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, কিছু ভূখণ্ডকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে নয়, বরং সহায়ক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে। এসব অঞ্চল থেকে অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক এবং মানবসম্পদ সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। একইসাথে সেসব অঞ্চলে আদর্শিক প্রস্তুতি, তাওহীদভিত্তিক আকীদার জাগরণ, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
এই পর্যায়ে এসে কিছু ভাইয়ের পক্ষ থেকে এমন মত প্রকাশ পাচ্ছে যে, আল-কায়েদার প্রকৃত লক্ষ্য কখনোই কেবল “আমেরিকা” নামক একটি রাষ্ট্র ছিল না। বরং তাদের মূল লক্ষ্য ছিল তাগুতি ও সেকুলার শাসনব্যবস্থার ভিত্তিকে ধ্বসিয়ে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দীনকে বিজয়ী করা এবং তা রাজনৈতিক বাস্তবতায় কায়েম করা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা মনে করছেন, আমাদের মানহাজ বা কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে আর কেবল বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা লক্ষ্যবস্তুর দিকে না রেখে এখন একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকেন্দ্রিক প্রকল্পের দিকে কেন্দ্রীভূত করা উচিত।
তাঁদের মতে, বাংলাদেশের বাস্তবতা এই উদ্দেশ্যের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কারণ, এ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম, এবং বহু মানুষ আজও অন্তর থেকে খোলাফায়ে রাশেদিনের আদলে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কামনা করেন—even if they lack the ideological articulation or political organization. এই জনবলের মধ্যে ইসলামী চেতনা প্রবল; শুধুমাত্র উপযুক্ত নেতৃত্ব ও সুসংগঠিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের জাগিয়ে তোলা এবং ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।
এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা মনে করছেন, সকল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতির চূড়ান্ত কেন্দ্র হওয়া উচিত বাংলাদেশ। মানে, অন্যান্য সাময়িক লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশকে একটি স্থায়ী ভিত্তি বা ভূমি (land base) হিসেবে কল্পনা করে দীন কায়েমের প্রকল্পকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্যই তারা এই ভূখণ্ডকে কৌশলগতভাবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
(চলবে)
Comment