গাজার মাইলস্টোনগুলোর জন্য কি আমরা কাঁদবো না?
মাইলস্টোনের হৃদয়-বিদারক দৃশ্যগুলো। চোখে পানি চলে আসে। ফুটফুটে শিশুগুলো এক নিমিষে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল। মায়ের সামনে মেয়ে, মেয়ের সামনে মা। পুড়লো সবাই। চোখের সামনে কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটে গেল অবিশ্বাস্য ঘটনা। হাসপাতালে এখনও জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে অনেকে। ঝলসে গেছে। দেখলেও ভয় লাগে। এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা যা কেউ ভাবতেও পারেনি। কত মায়ের বুক খালি করে দিল। কত জনকে কাঁদালো। এই স্মৃতি কাঁদিয়েই যাবে। ভুলবার নয়।এই একটি মাত্র মাইলস্টোনের বেদনা আমরা সইতে পারি না। কিন্তু গাজা! প্রতিদিনই যেখানে মাইলস্টোন। গাজার মাইলস্টোনগুলো কি আমাদের কাঁদাবে না? আর কত মাইলস্টোন ঘটলে গাজার জন্য আমরা কাঁদবো?
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল মুসলমান মিলে একটি দেহ। মুসলিম উম্মাহ একটি দেহ। প্রতিটি মুসলিম এই দেহের চোখ, কান, নাক, মুখ, হাত, পা …..।
আমার হাতের একটি মাত্র আঙুল যদি পাথরের আঘাতে থেঁতলে যায়, আমার গোটা দেহই প্রভাবিত হয়। নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের এমনই একটি দেহ হতে বলেছেন। আমার মুসলিম ভাই-বোনেরা হবেন যে দেহের চোখ, কান, নাক, মুখ, হাত, পা …..। তাদের কেউ আক্রান্ত হলে আমিই আক্রান্ত হবো। তাদের ব্যথা আমারই ব্যথা। তাদের দুঃখ আমারই দুঃখ। মুসলিম উম্মাহ: এক দেহ এক প্রাণ।
আমরা যদি এক দেহ এক প্রাণ হতে পারি তাহলেই আমরা হবো সীসাঢালা দুর্ভেদ্য প্রাচীর। তখনই আমরা পাবো প্রকৃত সম্মান, প্রকৃত ইজ্জত। অন্যথায় আমরা হয়ে যাবো যেমনটা নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: স্রোতে ভেসে চলা পচা কদু, যার কোনো মূল্য নেই।
আপনি চিন্তা করুন, কপাটে চাপা পড়ে আপনার একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, কিন্তু আপনি কোনো ব্যথা পেলেন না। বলুন: আপনি কি সুস্থ, না অসুস্থ? আপনি অসুস্থ। আপনার আঙুলে হয়তো প্রাণ ছিল না। একটি মরা আঙুল, যা কোনো কাজের নয়, বরং আপনার জন্য লজ্জার। কিংবা আপনি এমন ভয়ানক রোগে আক্রান্ত, যা আপনার অনুভূতি লোপ পাইয়ে দিয়েছে।
প্রিয় মুসলিম ভাই! গাজার মাইলস্টোনগুলো যদি আপনাকে না কাঁদায় তাহলে আপনি অসুস্থ। ভয়ানক অসুস্থ। আপনার নিজের দেহ পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু আপনি টের পাচ্ছেন না। আপনি অনুভূতিহীন। আপনি ভয়ানক নেশাগ্রস্ত। আপনি বেহুঁশ। আপনার চিকিৎসা জরুরী। উম্মাহর দুঃখে আপনি যত বেশি পেরেশান হতে থাকবেন, আপনি ততই সুস্থ হতে থাকবেন। এটাই আপনার সুস্থ হয়ে উঠার আলামত। নিজের গায়ে আগুন লাগলে আপনি যেভাবে নিজেকে বাঁচাতে চান, গাজার শিশুগুলোর জন্যও আপনি এমনই পেরেশান, তাদের জন্য তাই করতে চান, নিজের গায়ে আগুন লাগলে যা করতেন। এটা হবে আপনার সুস্থ হয়ে উঠার আলামত। এই অনুভূতি আপনার মধ্যে যত জাগ্রত হবে, আপনি ততই সুস্থ হতে থাকবেন। অন্যথায় আপনি অসুস্থ। আপনার কলব, আপনার আত্মা, আপনার হৃদয় অসুস্থ। এই কলব নিয়ে আপনি যদি রাব্বুল আলামীনের সামনে হাজির হোন, রাব্বুল আলামীন নাখোশ হয়ে বলবেন, যেমনটা হাদিসে এসেছে:
إنَّ اللَّهَ عزَّ وجلَّ يقولُ يَومَ القِيامَةِ: يا ابْنَ آدَمَ، مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي، قالَ: يا رَبِّ، كيفَ أعُودُكَ وأَنْتَ رَبُّ العالَمِينَ؟! قالَ: أَمَا عَلِمْتَ أنَّ عَبْدِي فُلانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ؟ أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لو عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ؟ يا ابْنَ آدَمَ، اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي، قالَ: يا رَبِّ، وكيفَ أُطْعِمُكَ وأَنْتَ رَبُّ العالَمِينَ؟! قالَ: أَمَا عَلِمْتَ أنَّه اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلانٌ، فَلَمْ تُطْعِمْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لوْ أطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذلكَ عِندِي، يا ابْنَ آدَمَ، اسْتَسْقَيْتُكَ، فَلَمْ تَسْقِنِي، قالَ: يا رَبِّ، كيفَ أسْقِيكَ وأَنْتَ رَبُّ العالَمِينَ؟! قالَ: اسْتَسْقاكَ عَبْدِي فُلانٌ فَلَمْ تَسْقِهِ، أمَا إنَّكَ لو سَقَيْتَهُ وجَدْتَ ذلكَ عِندِي. –صحيح مسلم: رقم الحديث: 2569
“আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবাশুশ্রূষা করোনি। বান্দা বলবে হে রব! আপনার সেবা শুশ্রূষা কিভাবে করব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন!? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা শুশ্রূষা করোনি? তুমি কি জান না, তার সেবা শুশ্রূষা করলে তার কাছেই আমাকে পেয়ে যেতে? হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাওয়াওনি। বান্দা বলবে, আপনাকে কিভাবে খাওয়াব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ বলবেন, কেন তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাওয়াওনি? তুমি কি জান না, তাকে খাওয়ালে তার কাছে আমাকে পেয়ে যেতে? হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা বলবে আপনাকে কিভাবে পানি পান করাব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ বলবেন: কেন তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি? তুমি কি জান না, তাকে পানি পান করালে তার কাছে আমাকে পেয়ে যেতে?” –সহীহ মুসলিম: ২৫৬৯
***
Comment