Announcement

Collapse
No announcement yet.

যে আবশ্যকীয় বিষয়টি আমরা সবাই এড়িয়ে যাচ্ছি

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যে আবশ্যকীয় বিষয়টি আমরা সবাই এড়িয়ে যাচ্ছি

    যারা ইক্বামতে দ্বীনের মেহনত করে তারা হলো জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ। একজন ব্যক্তি যে দ্বীনের খেদমতের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে সে সাধারণত অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। একজন মুমিনের সিফাত হলো নিয়মিত জ্ঞানচর্চা। একজন চৌকস মানুষ জ্ঞানচর্চা ব্যাতিত থাকতে পারে না। সে যদি সত্যিকার অর্থেই দ্বীনের জন্য দরদী হয়ে থাকে এবং সত্যিকার অর্থেই যদি ইসলাম ও মুসলমানের খেদমত করতে চায় তাহলে সে অবশ্যই প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে চাইবে, নিজেকে আর বেশি উন্নত করতে চাইবে যেন দ্বীনের পথে আরো বেশি খেদমত করা যায়, যেন আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করা আর সহজ হয়। যে দ্বীনের কাজে অগ্রগতি চায় সে আগে নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। সেটা যদি না হয় তাহলে সে কোন জিনিসটিকে পুঁজি করে দ্বীনের খেদমত করতে চাচ্ছে। তাই একজন প্রকৃত মুমিন সব সময়ই শেখার মধ্যে থাকে।
    কিন্তু আমাদের দেশের একটা দুঃখজনক বাস্তবতা হলো আমাদের অনেক ভাই আছে এমন যারা পুঁথিগত বা ব্যবহারিক কোন ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে চান না। অনেকেই আছে এমন যারা জীবিকার জন্য কোন একটা কাজ করে (চাকরি, ব্যাবসা, পড়ালেখা) আর বাকিটা সময় মোবাইলে কাটিয়ে দেয়।

    মোবাইলে সারাদিন নানা রকম মানুষের পোস্ট দেখে, তাদের সাথে সহমত জানিয়ে, তাদের এক্টিভিটিতে সাড়া দিয়ে আমরা অনেকেই দিন পার করে দেই। তবে এটাও দেখতে হবে যে আমরা নতুন কি শিখতে পারছি। আপনারা যদি অনলাইনের দ্বীনি কমিউনিটির দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন এক সময়ের লক্ষ লক্ষ মেম্বার ওয়ালা গ্রুপগুলোও বর্তমানে বিরান হয়ে আছে। আগে এসব গ্রুপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতো, বিভিন্ন রকম মাসআলা মাসায়েলও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে যেত। কিন্তু এসব শিক্ষণীয় গ্রুপগুলোও বর্তমানে বিরান অবস্থায় আছে। এর অর্থ তাহলে কি হলো? আমাদের কি তাহলে বিভিন্ন দ্বীনি বিষয় সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে? আমরা কি তাহলে বর্তমানে সবই জেনে ফেলেছি? যদিও আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্বীন শেখার চেয়ে সরাসরি ওলামায়ে রামদের নিকট থেকে দ্বীন শেখাকে বেশি গুরত্ব দেই। কিন্তু তারপরও এসব শিক্ষণীয় গ্রুপগুলো নিস্তেজ হয়ে পরা আমাদেরকে একটা বার্তা দেয় তাহলে মানুষ সাধারণ দ্বীনি বিষয়গুলো সম্পর্কে এখন আর আগ্রহী না।
    আরেকটা বড় প্রমাণ হলো বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। করোনা লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকেই আমরা দ্বীনি বই পড়ার ব্যাপারে সবার একটা আগ্রহ লক্ষ করতাম। যেসব বই আমরা অতীতে মানুষকে পড়তে দিয়ে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ আগ্রহ দেখতে পেতাম না সেগুলোই মানুষ নতুন করে এক্সপ্লোর করা শুরু করলো। এমনকি মার্কেট আউট হয়ে যাওয়া বইগুলোও নতুন করে প্রিন্ট হতে শুরু করলো। আমরা তখন একটা ব্যাপক বই বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। দেশের ম্যাস পপুলেশনের কাছে ইসলামকে তখন ব্যাপকভাবে পুশ দেওয়া সম্ভব হয়েছিলো।

    বিভিন্ন ভ্যারাইটিজ বই ও লেখকের প্রতি মানুষের এত বেশি চাহিদা সৃষ্টি হয়েছিলো যে সরকার পর্যন্ত ঘাবড়ে যায়। তারা এই গণজোয়ার সামাল দিতে এক পর্যায়ে কাগজ ও কালির দাম বাড়িয়ে দেয়। ২০২২ সালে আচমকা কাগজ-কালির দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দামও দুই তিনগুণ বেড়ে যায়। ব্যাবসায়ীরাও লোকসানের সম্মুখীন হতে থাকে। পাশাপাশি পাঠকদেরও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। যে নীরব বিপ্লব শুরু হয়েছিলো তা আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে পরে। সর্বশেষ গত বছর জুলাই আন্দোলনের পর বইয়ের জগতে চূড়ান্ত ধ্বস নামে। মানুষ বই পরা ছেড়ে দেয়। তার পরিবর্তে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক কার্যক্রমকেই তারা একমাত্র আপন বানিয়ে নেয়। আমরা মনে করি এটা আমাদের জন্য একটা অশনি সংকেত। মানুষ বই পড়ছে না। কেউ কোন বিষয় শিখতে চাচ্ছে না, কিন্তু সবাই দ্বীনের খেদমত করতে চাচ্ছে। এটা কি আসলে যৌক্তিক? আগের ইসলামী লেখকরাও এমনকি আগের মত বই বের করছেন না। তাছাড়া ইসলামী লেখকরাও বইচর্চার সংস্কৃতি না থাকার কারণে নিজেদের সংখ্যা কমতে কমতে গুটিকয়েকের একটা সার্কেলে এসে পরিণত হয়েছে। অনেক নবীন লেখক হারিয়ে গেছে বইয়ের অঙ্গন সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে। অনেক সম্ভাবনাময় লেখকও এখন লেখালেখির ময়দান থেকে হারিয়ে গেছে। আমরা চাই একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। আমরা চাই একটি অধ্যয়ন মুখর যুবসমাজ, যারা বর্তমান আধুনিক আধুনিক বিশ্বে অন্য দেশের বা অন্য জাতির মোকাবেলা করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে গড়ে তুলবে। আমরা চাই আমাদের জেনারেশন জ্ঞান গরিমায় অন্য দেশের যুবসমাজের চেয়ে এগিয়ে থাকুক। এখন এক্টিভিজম যদি জ্ঞান চর্চার পথে বাধা হয় তাহলে তো সেটা কখনোই মঙ্গলজনক নয়।

    ধরে নিলাম, নামাজ একটা ভালো কাজ। তাই বলে যদি কেউ অন্যান্য ইবাদত বাদ দিয়ে শুধু নামাজই পড়ে সেটা কি ঠিক হবে? কেউ যদি সারাদিন নামাজ পড়তে পড়তে অন্যান্য ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতকে ভুলে যায় সেটা কি যৌক্তিক? ধরে নিলাম কুরআন তিলাওয়াত একটা ভালো কাজ। এখন কেউ একজন কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে নামাজ কাজা করে ফেললো। এটা কি কোন সুস্থ মানুষের চিন্তা হতে পারে?

    তাহলে দ্বীনের খাতিরে এক্টিভিজম করা যদি স্বয়ং দ্বীন শেখার পথেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সেটা কিভাবে যৌক্তিক হতে পারে? এটা কিসের এক্টিভিজম করছি আমি তাহলে? দ্বীন শেখার কোন শেষ নেই। এটা একটা নিরবিচ্ছিন্ন প্রসেস। দ্বীন নিয়মিত শিখে যেতে হয়, শেখা জিনিসও নিয়মিত চর্চায় রেখে যেতে হয়। তাহলে কেউ যদি একবার ঈমান-আক্বীদা, তাফসীর, সীরাত, তারিখ, মাসয়ালা মাসায়েল, তাসাউফ ইত্যাদি সম্পর্কে একটি দুটি করে বই পড়ে ফেলে এটাই কি তার সারা জীবনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে? এগুলো একবার করে পড়ে নিলেই কি সে আজীবন দ্বীন শেখা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে? নাকি প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে তার নিয়মিত চর্চা করে যেতে হবে?

    তাছাড়া একটা শক্তিশালী জাতি গড়ে তুলতে নিরেট দ্বীনি বিষয়ের পাশাপাশি সেই সকল দুনিয়াবি নলেজ যা দ্বীনের ক্ষেত্রেও কাজে লাগে (যেমন- ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, আইটি, ইকোনমিকস, পলিটিক্যাল সাইন্স ইত্যাদি) সেগুলোও অর্জন করা চাই। বিশেষভাবে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে আইটি বিষয়ক নলেজ অর্জন করা খুবই অপরিহার্য। অনেক সময় দেখি আমাদের অনেক ভাইয়েরা এসকল জিনিস শেখার ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করে। যদি মোবাইল আমাদের মাথা খেয়ে থাকে তাহলে আমাদের জেনে নিতে হবে যে আমাদের এই দ্বীনি খেদমতের পেছনে নিয়তটা সহীহ নয়। আমরা অনলাইনে যে সকল দ্বীনি মেহনত করে থাকি এগুলোই যদি আমাদের ধ্যান জ্ঞান হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আমরা আসলে ইন্টারনেটে আসক্ত। তাই আমরা এই সকল খেদমত করি। এসকল কাজ আমরা সহীহ দ্বীনি চেতনা থেকে নয়, বরং ইন্টারনেট আসক্তির কারণে করে যাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে দ্বীনের খেদমত তো তখনই হবে যখন আমাদের কাজের ক্ষেত্র ডাইনামিক হবে, যখন আমাদের কার্যক্রম ফাংশনাল হবে। এছাড়া দ্বীনের খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। বরং সেটা আমাদের একটা ভ্রম মাত্র।

    যদি আমরা জ্ঞানে গুণে অপরাপর জাতিসমূহ থেকে এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে দ্বীনের বিজয়ের আশা করা বোকামি। এটা কেবল আমাদের নফসকেই অস
    ন্তুষ্ট করবে, বাস্তব ময়দানে কোন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে না।


  • #2
    মাশাআল্লাহ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।

    যদি আমরা জ্ঞানে গুণে অপরাপর জাতিসমূহ থেকে এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে দ্বীনের বিজয়ের আশা করা বোকামি। এটা কেবল আমাদের নফসকেই অস​ন্তুষ্ট করবে, বাস্তব ময়দানে কোন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে না।
    এখানে মনে হয় সন্তুষ্ট হবে ভাই।

    Comment


    • #3
      বর্তমানে এডিট অপশন না থাকায় কারেকশন করতে সমস্যা হচ্ছে।

      Comment

      Working...
      X