গণতান্ত্রিক ইসলামি রাজনীতির অস্পষ্টতা: সেকুলার রাষ্ট্রে ইসলামী দলগুলোর চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে গণতান্ত্রিক ইসলামি দলগুলো, বিশেষ করে জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলো, দীর্ঘদিন ধরে তারা ইসলামি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। তারা দাবি করেন যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটা ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু যখন কথা আসে ক্ষমতায় গেলে ইসলামকে কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, তখন একটা গভীর অস্পষ্টতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটা সাধারণ আলোচনায় যেমন দেখা যায়, যেখানে একজন গণতান্ত্রিক ইসলামি নেতাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে ক্ষমতায় গেলে মদের লাইসেন্সের মতো সেকুলার আইনের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের কনফ্লিক্ট কীভাবে মোকাবিলা করবেন? তখন উত্তর প্রায়শই ব্যক্তিগত সলিউশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু দলীয় স্তরে কোনো স্পষ্ট নীতি বা প্ল্যান দেখা যায় না। এই অস্পষ্টতা শুধু ব্যক্তিগত সংঘর্ষ নয়, বরং গণতান্ত্রিক ইসলামি রাজনীতির মূল ফিলোসফিকাল সমস্যা।
প্রথমত, গণতান্ত্রিক ইসলামি দলগুলো যারা গণতান্ত্রকে রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ করে, তারা ক্ষমতায় গেলে ইসলামকে কীভাবে প্রয়োগ করবে সেটা কখনো পরিষ্কার করে বলে না। বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামী, যারা নিজেদের ইসলামিক ডেমোক্র্যাট এবং ওয়েলফেয়ারিস্ট বলে দাবি করে, তারা ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সমাজ গড়ার কথা বলে। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে সেকুলার সংবিধানের সাথে কোনো কনফ্লিক্টিং আইন, যেমন নারীর পর্দা বা এলজিবিটিকিউ এর বিষয়গুলো কীভাবে হ্যান্ডেল করবে সেটা নিয়ে কোনো বিস্তারিত প্ল্যান প্রকাশ করে না। তারা শুধু সাধারণভাবে বলে যে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, কিন্তু কীভাবে সেকুলার রাষ্ট্রের ফ্রেমওয়ার্কে ইসলামকে অ্যাপ্লাই করা যাবে সেটা অস্পষ্ট রাখে। এখন তো দেখলাম একজন নায়েবে আমীর বলতেছেন উনাদের শারীয়াহ কায়েমের কোন ইচ্ছাই নেই! এসব অস্পষ্টতা দলের নেতাদের ব্যক্তিগত সংঘর্ষকে আরও জটিল করে তোলে। কারণ ক্ষমতায় গেলে তারা ধর্মের প্রতি অনুগত থাকতে চাইবেন, কিন্তু রাষ্ট্রের আইনগুলোকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। ফলে, এই দলগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য মনে হয়, কিন্তু বাস্তব প্রয়োগের কোনো রোডম্যাপ নেই।
দ্বিতীয়ত, এই দলগুলো গণতন্ত্রকে ইসলামিক বলে দাবি করে, কিন্তু এই দাবির পিছনে কোনো দলীলের ভিত্তিতে আলোচনা করে না, শুধু মুখে বলে দেয়। জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের মতো সংগঠনগুলো দাবি করে যে তারা ডেমোক্রেসিকে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে। কিন্তু সালাফ স্কলারদের থেকে কোনো স্পেসিফিক দলীল, যেমন কুরআন, হাদিস বা প্রথম যুগের আলেমদের ফতোয়া প্রদান করে না। ইসলামি অনেক বড় বড় স্কলাররা অনেক সময় ডেমোক্রেসিকে শিরক বা হারাম বলে মনে করে, কারণ এটা শরিয়াহকে ওভাররুল করতে পারে। কিন্তু জামাতের মতো দলগুলো এই বিষয়ে কোনো গভীর আলোচনা বা দলীল উপস্থাপন করে না। শুধু বলে যে তারা ডেমোক্রেসিকে ইসলামি হিসেবে রিকগনাইজ করে। এটা দেখায় যে তাদের দাবি শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধার জন্য, কিন্তু ধর্মীয় ভিত্তি দুর্বল। ফলে, যখন কোনো নেতাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে গণতন্ত্রের সেকুলার প্রিন্সিপলগুলো ইসলামের সাথে কীভাবে মিলবে, তখন উত্তর অস্পষ্ট থাকে।
তৃতীয়ত, এই দলগুলো ইসলামের মৌলিক ভিত্তির সাথে বাংলাদেশের সেকুলার আইনগুলোর কনফ্লিক্ট নিয়ে, যেমন পতিতালয়ের বৈধ ব্যবসা নিয়ে কখনো ওপেনলি কথা বলে না। এসব যায়গায় যে নারীদের বিক্রি করা হয় এটার ব্যাপার নিয়ে কোন গণতান্ত্রিক ইসলামি দল কোন কথাই বলে না, কেন বলেনা এর কারণ কেউ জানে না। বাংলাদেশে অ্যালকোহলের বিক্রি এবং লাইসেন্স রেগুলেটেড, যেখানে এর জন্য পারমিট আছে এবং বৈধ ব্যবসা চলে। ঠিক এরকম পতিতালয়ের ব্যবসাও। ইসলামে এসব বিষয় কঠোরভাবে হারাম, কিন্তু জামাতের মতো দলগুলো ক্ষমতায় গেলে এই আইনগুলোকে কীভাবে পরিবর্তন করবে বা মোকাবিলা করবে সেটা নিয়ে কোনো পাবলিক স্টেটমেন্ট দেয় না। এই নীরবতার কারণ হতে পারে রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি। কিন্তু এটা অজানা থেকে যায়, যা দলের স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে। ফলে, ধর্মীয় প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত থাকে।
এক কথায়, সেকুলার রাষ্ট্রে ধর্মীয় দলগুলোর এই অস্পষ্টতা শুধু ফিলোসফিকাল সমস্যা নয়, বরং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নও উঠায়। যতক্ষণ না তারা স্পষ্ট দলীল প্রদান করবে। ততক্ষণ এই কনফ্লিক্ট অব্যাহত থাকবে।
Comment