Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৪০ || ‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব।। ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী || সপ্তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৪০ || ‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব।। ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী || সপ্তম পর্ব

    আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
    “‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব
    ।।ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী||
    এর থেকে– সপ্তম পর্ব


    ৯. ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহের সাথে আল-কায়েদার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি?


    উত্তর : প্রশ্নটি নিতান্তই হাস্যকর। তবে এ ধরনের অপপ্রচারকে সত্য বলে বিশ্বাসকারী কিছু লোকও আছে, তাই আমাকে এমন একটি অন্তঃসারশূন্য প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হবে। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে দিবালোকের ন্যয় সুস্পষ্ট বিষয়কেও ব্যাখ্যা করে বুঝাতে হয়। যদি বিবেকবানরা একটু বিবেক খাটাত তাহলে বিষয়টি বুঝতে মোটেও বেগ পেতে হতো না।

    এ প্রশ্নের উত্তরে কাকতালীয়ভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলব। আশাকরি এর মাধ্যমে প্রশ্নটির বাতুলতা প্রকাশ পাবে।

    সালেহের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার আগের কথা। আমি কথা বলছিলাম এক ভার্সিটির ছাত্রের সাথে। তার অধ্যয়নের বিষয় ছিল উলুমে শরিয়াহ। উক্ত ভাই সালেহের ভক্ত ছিল। তিনি সালেহের পক্ষে বলছিলেন। আমি জিহাদি চেতনায় উজ্জীবিত বিধায় তাকে সালেহের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে উৎসাহিত করছিলাম। এক পর্যায়ে আমি বললাম, ‘সালেহের জুলুম ও পাপাচারের কারণে আমি তাকে ঘৃণা করি’। তখন সে আবেগতাড়িত হয়ে বলল, أحبه فى الله আমি সালেহকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি। অতঃপর সে তার এক শাইখের কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করে। শাইখ তাকে বললেন, ‘সালেহকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি’ বলা সঠিক হয়নি। এর কিছুদিন পর সালেহ সরকার আমাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জেলের এক সেলে আমাকে থাকতে হয়েছে কয়েক বছর। বিদ্রোহের পর আমি জেল থেকে বেরিয়ে আসি। ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকে। সালেহ রাফেজীদের সাথে জোট বাধে এবং রাফেজী-শিয়ারা ইয়েমেনে কর্তৃত্ব বিস্তার করে। মানুষ দলে দলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে। আমি এবং আমার সেই ইউনিভার্সিটির ভাইও লড়াইকারীদের মাঝে ছিলাম।

    পরবর্তী সময়ে হঠাৎ একদিন এই ভাইয়ের সাথে আমার সাক্ষাত হয়। তাকে দেখতে পেলাম সে এই বলে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, আল-কায়েদা তলে তলে সালেহের মিত্র!

    সুবহানাল্লাহ! যারা কিছুদিন পূর্বে সালেহের মিত্র ছিল তাদেরকে তিনি শত্রুতে পরিণত করলেন। আর আমরা কিনা হয়ে গেলাম সালেহের মিত্র!

    যারা কিছুদিন পূর্বে সালেহের সেবায় নিয়োজিত ছিল, যারা নিপুণভাবে তার নির্দেশাবলী বাস্তবায়ন করেছে এবং বিনিময়ে পেয়েছে অঢেল ধন-সম্পদ, সেই তারাই আজ আমাদেরকে বলছে সালেহের মিত্র। অথচ তারা যখন সালেহ সরকারের পয়সায় বিলাসিতায় মত্ত, তখন আমাদেরকে থাকতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে, পাহাড়ে, জঙ্গলে।

    সালেহ এর আল-কায়েদা বলতে তারা যা বুঝায়, আসলে এর কোনও অস্তিত্ব নেই। যারা এমন প্রচারণা চালাচ্ছে তারা মিথ্যাচার করছে।

    অবশ্য এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তারা তো মাকিয়াভেল্লি কূটরাজনীতিতে বিশ্বাসী। যার বক্তব্য হলো The End Justifies the means. অর্থাৎ কোনও কাজ নৈতিক না অনৈতিক তা নির্ভর করে ফলাফলের উপর। সুতরাং তাদের মতে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চুরি করতেও বাধা নেই। যাইহোক এই কূটরাজনীতিই সালেহকে দায়মুক্তি ও রাজনৈতিক নিরাপত্তার দিয়েছে এবং বিচার ও শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সালেহ অত্যন্ত ধুরন্ধর ও কূটবুদ্ধিতে পটু। এই অতিবুদ্ধি তাকে হুথিদের পদতলে নিক্ষেপ করেছে, হুথিদের অনুগ্রহে সে এখন চরম লাঞ্চনাকর অবস্থায় বেঁচে আছে।

    বাস্তবেই যদি ‘কায়েদাতু আফফাশ’ তথা সালেহের মিত্র বলে কোনও আল-কায়েদা থাকত আর তারা আল-কায়েদার নামে সালেহের সাথে মিত্রতার মতো ঘৃণ্য কাজ করত এবং আল কায়েদার ব্যানারে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতো তাহলে কি আল কায়েদা নীরব থাকত? আল-কায়েদা কি এদের অনুসরণ না করার ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট বার্তা প্রকাশ করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করত না!?

    আইএস যখন সানার মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তখন আল-কায়েদা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আল-কায়েদার নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন যে, আল-কায়েদা মসজিদকে যুদ্ধক্ষেত্র বানায় না। আইএসের সাথে আল-কায়েদার কোনোরূপ সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সংশয় নিরসন করতে আল-কায়েদার নামে যদি কোনও গ্রুপ এমনটি করত, তবে কি আল-কায়েদা নিজের অবস্থান ব্যক্ত করত না?

    কেউ বলতে পারে যে, সালেহ আফ্ফাশের ‘কায়েদাতু আফফাশ’ বলতে ভিন্ন কোনও আল-কায়েদা উদ্দেশ্য নয়। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল-কায়েদার প্রথম সারির কিছু নেতা সালেহের মিত্র। সালেহ তাদেরকে হয়তো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রমাণ হিসেবে হয়তো নিম্নোক্ত ঘটনাবলী দেখানো হতে পারে-
    • পলিটিকাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের কারাগার থেকে আল-কায়েদা সদস্যদের পালাতে সক্ষম হওয়া।
    • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরিয়ার উরজি হাসপাতালে হামলা চালানো।
    • সানার সাবয়ীন প্রাঙ্গণে সেনাদের উপর হামলা।

    প্রশ্নকারীর আরও অভিযোগ হলো, বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে সালেহ সরকার নাকি আবিয়ানের নিয়ন্ত্রণ স্বেচ্ছায় আল-কায়েদার হাতে ছেড়ে দিয়েছে। প্রমাণ হিসেবে আল জাজিরা চ্যানেলকে হাজির করা হতে পারে।

    মুখরিবুল কায়েদা তথা আল-কায়েদার সংবাদদাতা শিরোনামে প্রচারিত তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে যে, আল-কায়েদার সিংহভাগ নেতা সালেহের অনুগত। সেখানে আরও দাবি করা হয় যে, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের প্রধান আম্মার মুহাম্মদ আল জাজিরাকে বলেছেন, তিনি এখন যে চেয়ারে বসেছেন পূর্বে সেখানে আল-কায়েদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসতেন!!

    বর্ণিত অভিযোগসমূহ একটি একটি করে খণ্ডন করা হবে ইনশাআল্লাহ।


    আল-কায়েদার সিংহভাগ নেতা সালেহের অনুগত বলে আল জাজিরা যে সংবাদ প্রচার করেছে তা একেবারে ভিত্তিহীন। কারণ হিসেবে বলা যায় যে, তানজিম আল-কায়েদার জাজিরাতুল আরব শাখার প্রধান শাইখ আবু নাসের উহাইশীসহ অধিকাংশ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আমেরিকা ও তার অনুগতদের (সালেহ নিজেও অন্তর্ভুক্ত) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছেন। বাস্তবেই যদি আল-কায়েদার নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে সালেহের অনুগত কেউ থাকত তাহলে কিছুতেই তা গোপন থাকত না।

    তাছাড়া এটা কি যৌক্তিক যে, চলা-ফেরা ও উঠা-বসায় যে লোকটি দীর্ঘদিন আল-কায়েদার সাথে থাকবে তার সন্দেহজনক গতিবিধি কারোরই নজরে পড়বে না? অথচ আল-কায়েদার অনুগত গোয়েন্দাবাহিনী শত্রু-গোয়েন্দাদের বহু রহস্য উদঘাটন করেছে এবং অনেককে নজরদারীর আওতায় এনেছে। আর যেসব শত্রু-গোয়েন্দা কিছুটা সফল হয়েছে, তারা যা কিছু করতে পেরেছে তা হলো, আমেরিকার বিমানবাহিনীকে আমাদের অবস্থান জানানো, ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনার রহস্য উদঘাটন অথবা কোনও গোপন তথ্য প্রেরণ। তবে পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, একসময় শত্রু-গোয়েন্দা ধরা পড়ে যায়।

    সে যাইহোক, শুধু আল-কায়েদা কেন, বিশ্বের কোনও শক্তিশালী রাষ্ট্রই এ দাবী করতে পারবে না যে, তাদের মাঝে শত্রুদের কোনও গোয়েন্দা নেই। তবে এতটুকু জেনে রাখা উচিৎ যে, কোনও শত্রু-গোয়েন্দা আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ঢুকতে পারে না। কারণ জিহাদ এবং জিহাদের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষাসহ সামগ্রিক বিষয়াবলীর খুঁটিনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পূর্বে কেউ আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পৌঁছাতে পারে না। যেহেতু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সকল গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান টার্গেট আল-কায়েদা, তাই দায়িত্বশীল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এতটা সতর্কতা অবলম্বন না করা হলে আল-কায়েদা অনেক আগেই তার আদর্শ ও গতিপথ থেকে বিচ্যুত হতো। এর অতিসাম্প্রতিক নজির হলো আইএস। তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এমন কিছু লোক পৌঁছাতে পেরেছে, যারা প্রান্তিক চেতনাধারী। তাদের মাঝে কতিপয় অজ্ঞ ব্যক্তিও রয়েছে। এমনকি নেতাদের মাঝে কতক রয়েছে শত্রুদের নিয়োগকৃত এজেন্ট। এখন আইএসের সার্বিক অবস্থা কোন পর্যায়ে নেমেছে তা কারও অজানা নয়।

    পক্ষান্তরে আল-কায়েদা প্রায় দুই যুগ ধরে জিহাদের ময়দানে রয়েছে। তারা এখনো তাদের মূলনীতির উপর পূর্বের মতোই অবিচল। কোনও কিছু তাদেরকে কেন্দ্রবিন্দু থেকে চুল পরিমাণ এদিক-সেদিক করতে পারেনি। এর মাধ্যমে কি প্রমাণিত হয় না যে, এই দীর্ঘ সময়ে আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অযাচিত অনুপ্রবেশের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি? যদি এমনটি হয়ে থাকত তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব পড়ত আল-কায়েদার নীতি-আদর্শে ও কৌশলে।
    শাইখ আবু হুরায়রা কাসিম আর-রিমীর বিরুদ্ধে সালেহের পক্ষে কাজ করার অপবাদ


    অনেককে বলতে শোনা যায় যে, আলী আব্দুল্লাহ সালেহ ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের প্রধান আম্মারের সাথে শাইখ কাসিমের গোপন সম্পর্ক রয়েছে এবং তারাই তাকে সুকৌশলে আল-কায়েদার নেতৃত্বে বসিয়েছে। এ ধরনের প্রচারণায় আমি মোটেও বিস্মিত নই। কারণ এটি সিক্রেট এজেন্সির প্রচারণা এবং এ থেকে এরা ফায়দা লুটছে। এটি তাদের পুরনো কৌশল।

    জেলখানায় থাকাকালে এসব নিজ কানে শুনেছি এবং নিজ চোখে দেখেছি। এসব প্রচারণার মাধ্যমে বহুবার তারা ভাইদের মাঝে বিভেদের বীজ বপনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। তাই এসব প্রচারণায় আমি মোটেও বিস্মিত নই। তবে বিস্মিত হই সেইসব লোকের প্রতি যারা এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা নির্বোধের মতো বিশ্বাস করে।

    শাইখ কাসিম আল-কায়েদার নেতৃত্বে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তিনি পূর্ব থেকেই মুজাহিদগণের মাঝে পরিচিত। শাইখ কাসিম সালাফি ভাবধারায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ইবনুস সানআনী থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান আফগানিস্তানে। সেখানে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেখানে আল-কায়েদার প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। শাইখ উসামা ও শাইখ যাওয়াহিরী সহ আল-কায়েদার অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে তার ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। আর ইয়েমেনে ছোট বড় সকল মুজাহিদের কাছে তিনি পরিচিত।

    কতিপয় সিক্রেট এজেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পিকচার পোস্ট করেছে। তাতে দেখা যায় যে, সালেহের পাশে এক ব্যক্তি উপবিষ্ট। যারা ছবিটি পোস্ট করেছে, তাদের দাবি পাশের লোকটি শাইখ কাসিম রিমি। অথচ বাস্তবে শাইখের ছবির সাথে উক্ত ছবির সামান্যতম সাদৃশ্যও নেই। আর প্রকৃতই যদি সালেহের সাথে শাইখের সম্পর্ক থাকত তাহলে কি তিনি সালেহকে নিয়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতেন? হায়রে বিবেক!



    সানার পলিটিকাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের জেল থেকে মুজাহিদ ভাইদের পলায়ন


    সালেহের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক আছে বলে যারা প্রমাণ করতে চায় তারা বলে যে, সালেহই তাদের পলায়নের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। নয়তো তারা সেখান থেকে পালাতে পারত না। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, জেল থেকে পালানোকে তারা অসম্ভব মনে করেন। তারা যদি ইনসাফের সাথে একটু খোঁজ নিতেন তাহলে দেখতে পেতেন যে, পলিটিকাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের চেয়ে হাজার গুন বেশি নিরাপদ জেল থেকেও পালানোর ঘটনা ঘটেছে।

    শাইখ আবুল লাইস আল লীবি সৌদির রুয়াইস জেল থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছেন, এর সিকিউরিটি ব্যবস্থা পলিটিকাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন জেল থেকে শত গুনে উন্নত। তেমনি মার্কিন সেনাদের নিয়ন্ত্রিত বাগরাম জেল থেকে শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লীবি কতিপয় সঙ্গীসহ পালাতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ বাগরাম জেল মার্কিন সেনাদের ঘাটির মাঝে অবস্থিত।

    পলিটিকাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের (পি.এস.এ) যেই সেলে মুজাহিদ ভাইয়েরা ছিলেন, সেখান থেকে জেলখানার প্রাচীর ছিল সামান্য দূরত্বে। আমি নিজেও একসময় সেই জেলে ছিলাম বলে নিজ চোখে তা দেখেছি। ভাইদের পালানোর পর মার্কিন কর্তৃপক্ষ তদন্তের স্বার্থে সেই সেল সিলগালা করে দেয়। ইয়েমেনে সরকার বিরোধী বিদ্রোহের পর তা পুনরায় খোলা হয়। যদি মার্কিনীদের কাছে সালেহের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হতো তাহলে সে তাদের হাত থেকে রেহাই পেতো না। আমেরিকা এসব ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেয় না। জেলখানায় থাকা কতিপয় মুজাহিদ ভাইকে ঘটনাস্থলে এনে মার্কিনীরা বহুবার তদন্ত করেছে।

    ভাইদের পালানোর পর পি.এস.এ-এর সাবেক চীফ গালিব আল-কামশ ঘোষণা দিয়েছেন যে, পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অনেক ভাই আত্মসমর্পণ করেছেন। গালিব প্রতিশ্রুতি মাফিক তাদেরকে ছেড়ে দেয়। তবে জামাল বাদাইর ব্যাপারে সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। সে তাকে বন্দি করে ফেলে। উল্লেখ্য, শাইখ আবু বাসীর উহাইশী, কাসিম রিমীসহ আরও অনেকে তাকে আত্মসমর্পণ করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। ফলে গালিব তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। তিনি এখন পর্যন্ত পি.এস.এ’র জেলে বন্দি আছেন।

    আত্মসমর্পণকারী কতিপয় ভাইকে ছেড়ে দেওয়া ছিল গালিবের কৌশল। এর মাধ্যমে সে শাইখ আবু বাসীর, আবু হুরাইরা জামাল বাদাভী, গরীব তাইজী ও হামজা কুআইতীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে আটক করতে চেয়েছিল। কারণ জেল থেকে পালানোর পর তারা গালিবদের জন্য নরকের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। গালিবরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। আর জামাল বাদাইতো মার্কিন ডেস্ট্রয়ার ইউএস কোলের অপারেশনে সরাসরি জড়িত ছিলেন।



    প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও উরজী হাসপাতালে হামলা


    উক্ত হামলার মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হেডকোয়ার্টার। এখান থেকেই ড্রোনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উক্ত হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ ও পরিকল্পনার সময় ভাইয়েরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন, যেন কোনও নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি না ঘটে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেইট জনবসতির সন্নিকটে হওয়ায় বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে তুলনামূলক কম। শুধু তাই নয়, একটি জানাজার কারণে সেখানে লোক সমাগম বেশি হওয়ায় হামলাকে একদিন পেছানো হয়েছে।

    এক পর্যায়ে আমাদের নয় ভাই পরিকল্পনা মাফিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু এক ভাই চলে যায় উরজী হাসপাতালে। হাসপাতালটি মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই অবস্থিত। হাসপাতালের ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা তার হামলার চিত্র প্রকাশ করেছে। ইয়েমেনের বিপথগামী মিডিয়া তাদের স্বভাব অনুযায়ী কেবল সেই বিচ্ছিন্ন ভাইয়ের কর্মকাণ্ড প্রচার করেছে। আর হেডকোয়ার্টারে হামলাকারী অবশিষ্ট আট ভাইয়ের অপারেশনের বিষয়টি বেমালুম ভুলে গেছে।

    উক্ত বিচ্ছিন্ন ভাই পরিকল্পনার বাহিরে গিয়ে হাসপাতাল ভবনে হামলা করার কারণে আল-কায়েদার সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তবুও আল-কায়েদা উক্ত হামলার দায়ভার স্বীকার করেছে। অথচ এ বিষয়ে নীরব থাকা তাদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতা এবং ইসলামি শরিয়াহমাফিক উক্ত হামলার যতটুকু দায়ভার বর্তায় তা বহন করার তাড়না থেকেই মূলত এই হামলার স্বীকারোক্তি।

    ১৪৩৫ হিজরির সফর মাসে আল-কায়েদার বিবৃতিতে বলা হয়েছে-

    “ইয়েমেনী মিডিয়া যা প্রচার করেছে তা আমরা দেখেছি। এক সশস্ত্র ব্যক্তি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাসপাতালে হামলা করেছে। খালিদ বিন ওয়ালিদ যখন ভুলক্রমে সত্তর জনকে হত্যা করেছিলেন তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছিলেন আমরাও তাই বলছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে তার সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই’। আমরাও বলছি, ‘হে আল্লাহ! আমাদের এক ভাই যা করেছে তার সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই’।

    আমরা তাকে এমনটি করতে আদেশ করিনি। আমরা তার কাজে সন্তুষ্ট নই, বরং এ ঘটনায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। আমরা এভাবে লড়াই করি না। এভাবে হামলা করতে কাউকে উৎসাহিত করি না। এটা আমাদের মানহাজ নয়। আমরা তো ভাইদেরকে সতর্ক করেছিলাম যে, হাসপাতাল ও মসজিদে কিছুতেই হামলা চালানো যাবে না। অতঃপর আমাদের আট ভাই সতর্ক হলো এবং এক ভাই সতর্ক হলো না। আল্লাহ তার উপর রহম করুন এবং তাকে ক্ষমা করুন।

    আমরা অপরাধ ও ভুল স্বীকার করছি এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আপনাদের পরিবারের যারা হতাহত হয়েছে তাদেরকে আঘাত করার ইচ্ছা আমাদের আদৌ ছিল না। একে আমাদের দ্বীন সমর্থন করে না। তাছাড়া এমন হামলা আমাদের নীতিতেও নেই। হাসপাতালে হামলার ঘটনায় দিয়্যাত, ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহের ব্যয়ভার আমরা বহন করব। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী আরও যা যা করণীয় তার সবই আমরা করব। কারণ আমরা শরিয়তের প্রতি আহ্বানকারী; শরিয়তের ধ্বংসকারী নই”।


    আমি নিজে সাক্ষী, উক্ত হামলার ব্যাপারে ভাইয়েরা আমার সাথে এবং আমার এক সঙ্গীর সাথে সাক্ষাত করত এবং পরিবারের সাথে দিয়্যাত সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে তাগাদা দিত।

    যদি তারা দ্বীনের প্রকৃত অনুসারী না হতো তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য খুঁজে বেড়াত না। কারণ কেউই নিজ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে নি।



    আল সাবিন স্কোয়ারে হামলা


    যারা সালেহের সাথে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততা প্রমাণ করার চেষ্টা করে তারা বলে, সালেহ সুযোগ না দিলে আল-কায়েদা সাবয়ীন প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারত না।

    আল-কায়েদার সক্ষমতা নিয়ে যারা চরম অজ্ঞতার শিকার কেবল তারাই এমন কথা বলতে পারে। আল-কায়েদা এর চেয়ে বহুগুণে সুরক্ষিত স্থানে হামলা চালাতে সক্ষম। এমনকি যে সকল তানজিম জিহাদি চেতনায় উদ্বুদ্ধ নয় তাদের দ্বারাও অনুরূপ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

    মিসরের আল জামাআতুল ইসলামিয়ার কতিপয় সদস্য আনোয়ার সাদাতের স্টেজের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। সাদাত, হুসনে মোবারক ও অন্যান্য অফিসারদের সাথে সেই মঞ্চে বসা ছিল। তারা তাকে এদের মাঝেই হত্যা করেছিলেন।


    বহুবার আল-কায়েদা নিরাপত্তা সংস্থা ও শত্রু সেনাদের মধ্য থেকে নিজেদের সদস্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। যে ভাই সাবয়ীনে ইসতেশহাদী হামলা চালিয়েছেন তিনিও সেনাসদস্য ছিলেন। পরিকল্পনা ছিল স্টেজে অর্থাৎ সেনা অফিসারদের উপর হামলা চালানোর। সম্ভবত এই ভাই স্টেজে পৌঁছাতে পারেননি, ফলে সেনাদের মাঝেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।

    কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল; সাবয়ীনে নিহত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সেনাদের জন্য কিছু লোক মায়াকান্না করছে! এই সেনারা যখন আন্দোলনকারীদেরকে হত্যা করছিল, যখন জেলখানায় আমাদেরকে অমানুষিক শাস্তি দিচ্ছিল তখন তাদের মায়াকান্না কোথায় ছিল? আজও তারা আহলুস সুন্নাহকে হত্যা করছে। তারা এখন হুথিদের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে।

    তাদের মায়াকান্না কেবল সেনাদের জন্যই সংরক্ষিত। এই সেনাদের হাতে নিহত সাধারণ মানুষ ও মুজাহিদদের জন্য কখনোই তাদের কান্না আসে না।

    আবিয়ানের নিয়ন্ত্রণভার আল-কায়েদার হাতে কি সালেহ দিয়েছিল? ঈমানের বলে বলীয়ান মুজাহিদদের সামনে এ সকল সৈনিকরা যে কতটা দুর্বল তা অনেকেরই জানা নেই। মুজাহিদদের হাতে যখন শীতকালের পাতার মতো একের পর এক সেনাঘাটিগুলোর পতন ঘটে তখন অনেকে ভাবতে থাকে যে এটি কোনও চক্রান্ত। আবিয়ানে সালেহের সেনানিবাসের পতনেও এমনটি বলা হচ্ছে। অথচ আবিয়ান ও অন্যান্য অঞ্চলে আল-কায়েদার হাতে যে সকল সেনাঘাটির পতন ঘটেছে সেগুলোর কোনোটিতে হামলাকারী মুজাহিদের সংখ্যা একশ’র বেশি ছিল না। ৩৫নং ব্রিগেডের সেনাদেরকে মাত্র ত্রিশজন মুজাহিদ দীর্ঘদিন অবরোধ করে রেখেছিল। সালেহ এবং হাদীর আমলে মুজাহিদদের ছোট ছোট দলের হাতে বহু সেনাঘাটির পতন ঘটেছে। এগুলো কেউই অস্বীকার করে না।

    ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদী (বর্তমানে সৌদিতে নির্বাসিত) মনে করে যে, সে আল-কায়েদার হাত থেকে আবিয়ানকে মুক্ত করেছে। বস্তুত আল-কায়েদা নিজ থেকেই আবিয়ান ছেড়ে চলে গেছে। যেমনটি পূর্বে মুকাল্লায় দেখা গেছে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় আল-কায়েদা ছোটখাটো কিছু সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসবের উদ্দেশ্য ছিল বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিরাপদ রাখা। অন্যথায় আল-কায়েদা তো এখনো বিদ্যমান। আল-কায়েদাকে তারা শেষ করে দিচ্ছে না কেন?

    অধিকৃত অঞ্চল থেকে আল-কায়েদা সুশৃঙ্খলভাবে সরে পড়েছে। কারণ সেখানে দীর্ঘ সময় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা আল-কায়েদার উদ্দেশ্য ছিল না। তারা মূলত মানুষের কাছে তাদের দাওয়াহ পৌঁছাতে চেয়েছিল এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থার একটি চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিল। যাতে মানুষ ইসলামের ন্যায়-নিষ্ঠতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং বুঝতে পারে যে, শরিয়াহ থেকে দূরে থাকাই জুলুম, অত্যাচার ও পাপাচারের মূল কারণ।



    আল-কায়েদার নামে আল জাজিরার মিথ্যাচার


    আল জাজিরা চ্যানেলে আল-কায়েদা নিয়ে যে পরিমাণ মিথ্যাচার করা হয়েছে তার সবগুলোর আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। আল জাজিরা প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, সালেহের সাথে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইতঃপূর্বে বিষয়টি খণ্ডন করা হয়েছে। তবে এখানে আরও কিছু কথা যোগ করা হলো-

    আমেরিকার কাছে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু। এনিয়ে কোনও সরকারের লুকোচুরি তারা বরদাশত করে না। কোনওভাবে কারো সাথে এর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তা তারা শক্ত হাতে দমন করে। জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে আমেরিকা বহু সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করেছে। আল হারামাইন ফাউন্ডেশনের মতো চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলো এর জ্বলন্ত প্রমাণ। আল-কায়েদার কোনো সদস্যের সাথে সামান্য যোগাযোগের উপর ভিত্তি করে অনেক শাইখের নাম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং আল-কায়েদার সাথে সালেহের কোনও সম্পৃক্ততা যদি থাকত তাহলে সালেহ কিছুতেই আমেরিকার হাত থেকে রেহাই পেত না।






    ​আরও পড়ুন

  • #2
    The End Justifies the means.
    মুহতারাম tahsin muhammad ভাই, ফন্ট চেঞ্জ করে দিলে এমনটা ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্‌।
    কোন ভাইয়ের এই লিখা বুঝতে অসুবিধা হলে- কমেন্ট বক্সে কপি পেস্ট করে, সিলেক্ট করে ফন্ট চেঞ্জ করে দেখতে পারেন ইনশাআল্লাহ্‌।
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X