আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
“‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব
।। ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী ||
এর থেকে – শেষ পর্ব
“‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব
।। ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী ||
এর থেকে – শেষ পর্ব
জিহাদের সাধারণ দিক-নির্দেশনা
আল-কায়েদার সকল শাখার প্রতি ডক্টর আইমান আজ যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ এর দেওয়া দিকনির্দেশনার মাধ্যমে আলোচনা শেষ করব।
১. সর্বসাধারণকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নবীন মুজাহিদগণকে বিশুদ্ধ আকিদায় বিশ্বাসী, সুশৃঙ্খল, একাগ্র ও ঐক্যবদ্ধশক্তি রূপে গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা। তাদেরকে হতে হবে ইসলামি আকিদা ও ইসলামি শরিয়ার অনুসারী। মুমিনদের সামনে তারা হবে দয়াশীল ও নম্র। কাফেরদের সামনে তারা হবে ইস্পাত কঠিন। জিহাদি দলসমূহ থেকে ইলমী ও দাওয়াতী কার্যক্রমের জন্য মেধাবীদেরকে খুঁজে বের করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২. কুফরিবিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও জনবলের দিক থেকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করতে সামরিক কার্যক্রমের উপর জোড় দেওয়া। ইনশাআল্লাহ অচিরেই তারা পিছু হটতে বাধ্য হবে। প্রত্যেক মুজাহিদের জানা থাকা উচিৎ যে, বিশ্বের যে কোনও স্থানে ইহুদি-খৃস্টান জোটের স্বার্থে আঘাত হানা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। তারা যেন এজন্য সাধ্যমত চেষ্টা চালায়। এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরও একটি বিষয় হচ্ছে, মুসলিম বন্দীদেরকে উদ্ধার করতে চেষ্টা চালানো। যেমন, জেলখানায় হামলা করা। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্য থেকে পনবন্দী করার চেষ্টা করা। যাতে বন্দী-বিনিময় সম্ভব হয়।
কুফরি বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রের বিষয়ে গুরুত্বারোপের অর্থ এই নয় যে, জালিমদের বিরুদ্ধে নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠীগুলো যুদ্ধ করতে পারবে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার কাউকাজের রয়েছে; হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার কাশ্মীরী ভাইদের রয়েছে; চায়নাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার পূর্ব তুর্কিস্তানের রয়েছে। তেমনি বার্মা, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের নির্যাতিত প্রত্যেক মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকার রয়েছে জুলুমকারীর বিরুদ্ধে জিহাদ করার।
৩. পারতপক্ষে স্থানীয় শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে না জড়ানো। তবে বাধ্য করা হলে ভিন্ন কথা। ব্যতিক্রম হবে সেসকল ক্ষেত্রে - যেখানে স্থানীয় সরকার মার্কিন শক্তির অংশবিশেষে পরিণত হয়, যেমনটি ঘটেছে আফগান সরকারের বেলায়। অথবা যদি স্থানীয় সরকার আমেরিকার হয়ে মুজাহিদগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, যেমনটি ঘটেছে সোমালিয়া ও জাজিরাতুল আরবে। অথবা যদি স্থানীয় সরকার কোনোভাবেই মুজাহিদগণকে বরদাশত না করে অর্থাৎ জিরো-টলারেন্স হয় যেমনটি দেখা যায় শাম, ইরাক ও মরক্কোয়।
মূলত স্থানীয় শত্রুর সাথে লড়াইয়ে না জড়ানোই আমাদের নীতি। তবে লড়াই ছাড়া যদি কোনও উপায় না থাকে তাহলে জনগণকে অবগত করতে হবে যে, আমাদের এই লড়াই প্রকৃত বিচারে খৃস্টানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েরই অংশ।
অতঃপর যখনই এই সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ হবে তখন সেই সুযোগকে লুফে নিতে হবে এবং মানুষের মাঝে দাওয়াহর প্রসার ঘটাতে হবে। জিহাদের জন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যোদ্ধা ও সাদাকাত সংগ্রহ করতে হবে, কারণ আমাদের জিহাদ দীর্ঘ মেয়াদী। জনবল, অর্থবল ও সক্ষমতা অর্জন ছাড়া তা দীর্ঘ সময় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
খৃস্টানদের পক্ষ হয়ে যে সকল স্থানীয় সরকার মুজাহিদদের উপর হামলার ধৃষ্টতা দেখায় তাদেরকে এতটুকু শায়েস্তা করা দোষের কিছু নেয়, যতটুকুতে তারা টের পাবে যে, আমাদেরকে টার্গেট করার ফল শুভ নয়। প্রতিটি ক্রিয়ারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং অবশ্যই রয়েছে উপযুক্ত সময়। মুজাহিদগণের প্রতিটি ফ্রন্টের জন্যই এ নীতি প্রযোজ্য। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা আবশ্যক।
৪. রাফেজী, ইসমাইলী, কাদিয়ানী, ভণ্ড পীর-ফকিরসহ বাতিল ফিরকাগুলোর সাথে লড়াইয়ে প্রবৃত্ত না হওয়া, তবে তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে তবে ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে যারা আমাদের উপর হামলা করবে আমরা কেবল তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করব। তাদের পরিবার-পরিজনের উপর, তাদের বাসগৃহে হামলা করা থেকে বিরত থাকা। তাদের উপাসনালয়, উৎসবস্থল এবং তাদের ধর্মীয় জামায়েতের উপর হামলা করা যাবে না। তবে তাদের বিকৃত ও ভ্রান্ত আকিদাসমূহের অসারতা প্রমাণের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
মুজাহিদগণের অধিকৃত অঞ্চলে বাতিল ফিরকাগুলোর সাথে হিকমতপূর্ণ আচরণ করা। দাওয়াহ, সংশয় নিরসন ও সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালু রাখা। আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যেন ছোট মুনকারের প্রতিরোধ বড় মুনকারের কারণ না হয়। যেমন, মুজাহিদগণ অধিকৃত অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া, গণ- অসন্তোষ দেখা দেওয়া, অথবা এমন কোনও ফিতনা ছড়িয়ে পড়া, যাকে শত্রুরা উক্ত অঞ্চলের উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
৫. ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসরত খৃস্টান, শিখ ও হিন্দুদের পেছনে লেগে না থাকা। তবে তারা যদি কোনও বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাদেরকে জবাব দেওয়া এবং জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি না করা। আর মানুষকে জানিয়ে দেওয়া যে, সংঘাতের সূচনা আমরা করিনি। আমরা তাদেরকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আমরা তো কেবল কুফরি শক্তির নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত।
৬. আমাদের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র ধারণ করেনি আমরা তাদের সাথে লড়াই থেকে বিরত থাকব। মৌলিকভাবে আমরা লড়াই করব খ্রিষ্টান-জোটের সাথে এবং তাদের পক্ষ থেকে নিযুক্ত স্থানীয়দের সাথে।
৭. যে সকল গোত্র আমাদের বিরুদ্ধ যুদ্ধ করবে যদি সেই গোত্রে এমন কেউ থাকে যে যুদ্ধ করে না, তাহলে আমরা তাকে টার্গেট করব না।
৮. বিস্ফোরণ, হত্যা, অপহরণ, সম্পদের ক্ষতিসাধন ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
৯. মসজিদে, বাজারে বা গণজমায়েতে মিশে থাকা শত্রুর উপর হামলা করব না। তেমনি যেসব লোক আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না, যদি শত্রু তাদের মাঝে থাকে তাহলে তার উপর হামলা করব না।
১০. উলামায়ে কেরামকে সম্মান করব, তাদেরকে আগলে রাখব। তারা নবীগণের ওয়ারিশ ও উম্মাহর পথপ্রদর্শক। আলেমদের মধ্য থেকে যারা প্রকাশ্যে হক কথা বলছেন এবং এজন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন তাদের ক্ষেত্রে একথা আরও জোরালোভাবে প্রযোজ্য। আর উলামায়ে সু’র বিরুদ্ধে আমাদের তৎপরতা তাদের ছড়ানো সংশয় নিরসনের মাঝে সীমাবদ্ধ করবো। তবে যদি তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধ লড়াইয়ে নামে তাহলে ভিন্ন কথা।
১১. ইসলামি দলসমূহের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান-
• যেসব বিষয়ে আমরা একমত সেসব বিষয়ে সহযোগিতা বিনিময় করব। মতবিরোধের ক্ষেত্রে সদুপদেশ দিবো।
• ইসলামের শত্রুদের সাথে লড়াইকে অগ্রাধিকার দিবো। তাই কোনও ইসলামি দলের সাথে মতবিরোধের ফলে শত্রুদেরকে সামরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক ও দাওয়াতী কার্যক্রমের মাধ্যমে পরাজিত করার নীতি থেকে সরে আসব না।
• তারা যখন সঠিক বলবেন তখন তাদেরকে আমরা সমর্থন করব এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আর তারা ভুলের শিকার হলে সদুপদেশ দেব; গোপন ভুলের ক্ষেত্রে গোপনে এবং প্রকাশ্য ভুলের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে। এক্ষেত্রে পূর্ণ ভাবগাম্ভির্যতা রক্ষা করব এবং ইলমী ভাষায় উপদেশ দেব। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে হেয় করা থেকে বিরত থাকব।
• ইসলাম নামধারী কোনও দল যদি শত্রুদের ফাঁদে পা দেয় এবং তাদের পক্ষে লড়াই করে তাহলে তাদেরকে ততটুকুই জবাব দেব যতটুকু না দিলেই নয়। এর মাধ্যমে ফিতনার দরজা বন্ধ হবে এবং যারা এখনো শত্রুদের সাথে হাত মেলায়নি তারা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
১২. জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের বিদ্রোহের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান-
• মাজলুমদের বিদ্রোহকে সমর্থন করা, কারণ মাজলুমকে সাহায্য করা শরিয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব।
• অংশগ্রহণ, কারণ মজলুমের বিদ্রোহ সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার শরিয়তের দৃষ্টিতে ফরজ।
• দিকনির্দেশনা দান, বিদ্রোহীদেরকে এই কথা জানানো যে, কাজের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ শরিয়াহর অনুশাসন মেনে তাওহিদ প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামি নেযাম ও ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
১৩. যে কেউ অধিকার বঞ্চিত মুসলিমদের পক্ষাবলম্বন করবে এবং কথা বা কাজের মাধ্যমে জালেমদের বিরোধিতা করবে তাকে সমর্থন করা এবং সাহস যোগানো। যতদিন তাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে ততদিন আমরা তাদের উপর আক্রমণ করবো না এবং তাদের সমালোচনা করবো না।
১৪. মুসলিমদের হক সংরক্ষণ করা। তাদের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা করা।
১৫. মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রত্যেক নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করা। যারা মাজলুমের পাশে দাঁড়ায় তারা অমুসলিম হলেও তাদের সমর্থন করা এবং সাহায্য করা।
১৬. মুজাহিদগণের উপর কোনও অপবাদ আরোপ বা মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা হলে গুরুত্বের সাথে তা খণ্ডন করা। যদি জানা যায় যে, মুজাহিদগণের কারো মাধ্যমে অন্যায় কিছু সংঘটিত হয়েছে, তাহলে ইসতিগফার করা এবং অপরাধীর অপরাধ থেকে বারাআত (সম্পর্কহীনতা) ঘোষণা করা।
১৭. আল-কায়েদার নেতৃবৃন্দ, আল-কায়েদার হিতাকাঙ্ক্ষী ও সমমনা প্রতিটি দলের আমীরগণের কাছে অনুরোধ করব, যেন তারা উক্ত দিকনির্দেশনাসমূহ নিজেদের দায়িত্বশীল ও সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। জিহাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে শরিয়ার আলোকে ইজতিহাদের মাধ্যমে এসব কর্মনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। আশাকরি, আল্লাহর মেহেরবানীতে এগুলো কল্যাণকর হবে এবং অকল্যাণ ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
والحمد لله رب العلمين وصلى الله على نبينا محمد و اله وصحبه وسلم
****
আরও পড়ুন
অষ্টম পর্ব
Comment