আত তিবয়ান পাবলিকেশন্স মিডিয়া পরিবেশিত
“‘তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি।।
এর থেকে– প্রথম পর্ব
“‘তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি।।
এর থেকে– প্রথম পর্ব
তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলার। আমরা তাঁরই কাছে সাহায্য চাই। আমরা তাঁরই কাছে ক্ষমা চাই। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আমাদের নফসের সমস্ত অনিষ্ট থেকে এবং আমরা আরও আশ্রয় চাই আমাদের আমলের সমস্ত খারাপ দিক থেকে। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না এবং আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারে না। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নাই। এবং আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।
“হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা প্রকৃত ভীতি সহকারে আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান হওয়া ব্যতীত মৃত্যুবরণ কর না।” (সূরা আলি ‘ইমরান ৩: ১২)
“হেমানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতেসৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তদীয় সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতেবহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং সেই আল্লাহকে ভয় কর যার নামের দোহাই দিয়েতোমরা একে অপরকে তাগাদা কর এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের সম্পর্কে সতর্ক থাক, নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী।” (সূরা নিসা ৪:১)
“হেঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমলসংশোধন করে দিবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আর যে কেউ আল্লাহ ওতাঁর রাসূলেরﷺএর আনুগত্য করবে, সে অবশ্যই সাফল্য অর্জন করবে।” (সূরা আহযাব ৩৩: ৭০-৭১)
হে আমার দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! যারা ইসলাম ও তাওহীদে প্রতিষ্ঠিত, যারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, কোন ইলাহ নাই (ইবাদত/ আনুগত্যের যোগ্য যাকে মানা হয়) একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা জাহিলিয়াতের অন্ধকার জীবন থেকে ইসলাম ও ঈমানের আলোতে এনে সম্মানিত করেছেন। যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা সম্মানিত করেছেন এবং যাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যারা তাদের জাতির মধ্যে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে।
সত্যিই আল্লাহ তা’আলা তাঁর অশেষ দয়া এবং তাঁর মহান রহমতের গুণে সমস্ত সৃষ্টির মাঝ থেকে আমাদের বেছে নিয়েছেন এক গুরুদায়িত্বের জন্য। এটা এমন এক দায়িত্ব যার বোঝা বহন করতে আসমান-যমীনও ছিল ভীত। যে কথা আল্লাহ ﷻ কোরআনে বলেছেনঃ
“আমি তো আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত অর্পণ করেছিলাম, তারা ইহা বহন করতে অস্বীকার করল এবং ভয় পেল, কিন্তু মানুষ ইহা বহন করল; সে তো অতিশয় যালেম, অতিশয় অজ্ঞ।” (সূরা আহযাব ৩৩: ৭২)
আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য তাওহীদকে একটি আমানত স্বরূপ দান করেছেন এবং আমাদের জন্য দায়িত্ব ঠিক করে দিয়েছেন যেন আমরা সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করি যে আমরা ‘আল্লাহর বান্দা’-এই উপলব্ধি শুধু মুখের কথা বা এর প্রতি ভালবাসার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে আমাদের কাজ বাস্তবায়নে, চেষ্টায় এবং আত্মত্যাগে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনও এই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মতের মাঝে এমন অনেক মানুষ আছে যারা এখন পর্যন্ত ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর ব্যাপকতা এবং এর দাবী সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। এই কালিমার মাঝে যে গুরুদায়িত্ব ও আমানত আছে তার মর্ম বুঝতে হলে একটি হাদিসই যথেষ্টঃ
মুসা (আঃ) বলেন, ‘হে আমার রব আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন যা দ্বারা আমি আপনাকে ডাকতে পারি এবং আপনার যিকর করতে পারি।’ আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, হে মুসা! বল- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। মুসা (আঃ) বললেন, ‘হে আমার রব আপনার সমস্ত বান্দারা তো ইহা বলে।’ আল্লাহ্ আহকামুল হাকিমীন, রাব্বুল আলামীন যিনি সব জানেন যেখানে আমরা কিছুই জানিনা, তিনি নাযিল করলেন,
‘হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আকাশ এবং উহার মধ্যে যাহা কিছু আছে এবং সাত যমীন যদি পাল্লার এক দিকে স্থাপন করা হয় এবং অপর দিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে স্থাপন করা হয় তবে দ্বিতীয় অংশটি ভারী হয়ে যাবে।’ (ইবনে হিব্বান ২৩২৩, আল হাকিম ১/৫২৮)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ ‘আমাকে পাঠানো হয়েছে সবচেয়ে ছোট বক্তব্য নিয়ে যার অর্থ সবচেয়ে ব্যাপক। এবং আমাকে শুধু ভয় (যা আল্লাহ্ কাফেরদের মনে গেঁথে দেন) দ্বারা বিজয় দান করা হয়েছে। এবং যখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তখন এই দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের চাবি আমার কাছে আনা হয়েছিল এবং আমার হাতে দেয়া হয়েছিল।’ (বুখারী, কিতাবুল জিহাদ)
আল্লাহু আকবার!
পরীক্ষা
ভাইয়েরা এবং বোনেরা! এই কালেমা শুধুমাত্র কয়েকটি সুন্দর সুন্দর শব্দই নয় এবং শুধু এর প্রতি ভালবাসার দাবী করলেই এই কালিমার হক আদায় হয়ে যাবে না। বরং এর হক আদায় করতে হলে আমাদেরকে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুও ত্যাগ করতে হবে যাতে এই পৃথিবীর বুকে এই কালেমা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তাই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একের পর এক পরীক্ষার মাধ্যমে খারাপের থেকে ছেকে আলাদা করে নেন কিছু খাঁটি মানুষকে যাদের যোগ্যতা আছে এই কালেমার জন্য সর্বোচ্চ সংগ্রাম করার ও একে নিজের জীবনে এবং সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ স্থান দেয়ার। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার এই পরীক্ষা ক্রমাগতই কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকে, যাতে মু’মিন ও সত্যনিষ্ঠদের দলটি ক্রমাগতই পরিশুদ্ধ হতে থাকে। যারা প্রথম পরীক্ষাতেই ব্যর্থ হয় – সবচেয়ে সহজ পরীক্ষাতে, তাদের আল্লাহ্ ছেড়ে দেন, তাদের আর পরবর্তী পরীক্ষাগুলো দেয়ার যোগ্যতা নেই, আর এই কালেমার আমানত বহন করার যোগ্যতা তো একেবারেই নেই।
আমরা এখন এক পরীক্ষার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটা এমন এক সময় যখন আমাদের প্রতিমুহূর্তে শয়তান এবং তাগুতের পথ এবং তাদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে – যাতে আমরা কখনো সঠিক পথ থেকে সরে গিয়ে বিফলকাম লোকদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। এটা এমন এক সময় যখন আমাদের এই কালিমার প্রতিটি দাবীর ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে কারণ আমাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে এই সব দাবী পূরণ করার জন্য। এবং একই সাথে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে আরো পরীক্ষার জন্য এবং এজন্য আমাদের প্রয়োজন আল্লাহ্ তা’আলার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল যাতে আমরা এসব পরীক্ষা সফলভাবে পার হয়ে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। আর মনে রাখতে হবে আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ তা’আলা জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য-
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদের পরীক্ষা করবার জন্য – কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (সূরা মুলক ৬৭:২)
এবং আল্লাহ দ্যর্থহীন ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে শুধু ঈমান আনার দাবী করলেই তিনি আমাদের ছেড়ে দিবেন না; আল্লাহ তা’আলা পরীক্ষার মাধ্যমে পার্থক্য করে দিবেন যে কারা এই দাবীর উপর অবিচল এবং কারা শুধু নিজেদেরই প্রতারিত করছে; এই পরীক্ষা সবসময়ই হয়ে আসছে এবং সর্বোচ্চ পরীক্ষা হবে জিহাদ/ক্বিতালের মাধ্যমে।
“তারা কি এই ধারণা করে নিয়েছে যে “আমরা ঈমান এনেছি” এই কথা বলে তারা অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম যারা তাদের পূর্বে অতীত হয়ে গিয়েছে,
সুতরাং আল্লাহ সেই লোকদেরকে জেনে নিবেন যারা সত্যবাদী ছিল এবং মিথ্যাবাদীদেরকেও জেনে নিবেন।” (সূরা ‘আনকাবুত ২৯:২-৩)
“তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ একথা জেনে নিবেন না যে কে তোমাদের মধ্যে জিহাদ করেছে আর কে, ধৈর্য ধারণ করেছে?” (সূরা আলি ’ইমরান ৩:১৪২)
যাকেই আল্লাহ্ তা’আলা পরীক্ষা করবেন, তার সামনে দুইটি পথ খোলা থাকবে – একটি পথ এই দুনিয়ার সমস্ত আমোদ-প্রমোদ, বিলাসী জীবন, যার দ্বারা আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেনঃ
“ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, তা আমি তাদের জন্য সৌন্দর্যের উপকরণ করে দিয়েছি, যেন আমি মানুষকে পরীক্ষা করে নিই যে, তাদের মধ্যে কে অধিকতর ভাল কাজ করে।” (সূরা কাহাফ ১৮:৭)
দুনিয়ার জীবনে ভোগের এই পথ যে গ্রহণ করলো সে ধ্বংস হয়ে গেলো। আর দ্বিতীয় পথটিতে ছড়ানো আছে ভয়ংকর সব কষ্ট, ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র, ব্যবসায়িক ক্ষয়ক্ষতি, বাড়ি-ঘরের ক্ষয়ক্ষতি থেকে শুরু করে মৃত্যুর আশংকা পর্যন্ত সবই এই পথের জন্য স্বাভাবিক। তবে আল্লাহর কসম! এটাই সাফল্যের রাস্তা:
“আর আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয় দ্বারা, ক্ষুধা দ্বারা, সম্পদ, জান ও ফল-শস্যের বিনষ্টের দ্বারা; আর সুসংবাদ শুনিয়ে দিন এমন ধৈর্যশীলদেরকে।” (সূরা বাকারা ২:১৫৫)
আমাদের সামনেও এখন এই দুইটি পথ খোলা আছে, যেমনটি ছিল পূর্বের সব জাতিদের সামনে এবং যেমনটি থাকবে ভবিষ্যতেও কিয়ামতের আগে দাজ্জালের আবির্ভাব পর্যন্ত এবং আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে মানুষের মধ্যে থেকে বেছে নিয়েছেন নবী, শহীদ ও সত্যনিষ্ঠদের এবং অন্যদিকে বেছে নিয়েছেন তাগুত, কাফের ও মুনাফিকদের। আর এই দুই শ্রেণীর লোক পছন্দ করে নিয়েছে এই দুই পথের যে কোন একটি – এক শ্রেণী পেয়েছে চিরন্তন পুরষ্কার আর অন্য শ্রেণী অনন্তকালের আযাব।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং যারা তাদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে বাস্তবে প্রমাণ করেছে।
“মু’মিনদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে, তারা আল্লাহর সাথে যে অঙ্গিকার করেছে তা সত্যে পরিণত করেছে, অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু নিজেদের (শাহাদাত) মান্নত পূর্ণ করেছে….।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩)
“তাকে বলা হলঃ ‘জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সে বলে উঠলোঃ ‘হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারতো কি কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:২৬–২৭)
যদি আমরা জান্নাতের পথ বেছে নেই, পরীক্ষার পথকে বেছে নেই, তাহলে এখনই সময়।
Comment