Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৪৩ || তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি ।। দ্বিতীয় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৪৩ || তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি ।। দ্বিতীয় পর্ব

    আত তিবয়ান পাবলিকেশন্স মিডিয়া পরিবেশিত

    তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি।।
    এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব


    নবীদের দেখানো পথে দাওয়াহ দেওয়া এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর মিল্লাতের অনুসারী হওয়া যা হলো – দাওয়াহকে প্রকাশ্য এবং সুপরিচিত করে তোলা এবং ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে আপোষহীন শত্রুতা।


    এটাই হচ্ছে এই দ্বীনের ভিত্তি এবং প্রত্যেক নবীরই কর্মপন্থা।

    আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করি নাই তাহার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। সুতরাং আমারই ইবাদাত কর। (সূরা আম্বিয়া ২১:২৫)

    আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুতকে বর্জন করবে….। (সূরা নাহল ১৬:৩৬)

    আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য সেই দ্বীন নির্ধারিত করেছেন, যা তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এবং যা আমি আপনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছি, আর আমি ইব্রাহীম, মূসা এবং ঈসাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, এই দ্বীনকে কায়েম কর এবং এতে কোন বিভেদ সৃষ্টি করো না; মুশরেকদের নিকট সেই (তাওহীদ) বিষয়টি বড়ই কষ্টকর মনে হয় যার প্রতি আপনি তাদেরকে আহবান করেন, আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা নিজের দিকে আকৃষ্ট করে নেন এবং যে আল্লাহর দিকে রুজু হয়, তাকে তিনি তাঁর দিকে চলার সামর্থ্য দান করেন। (সূরা শূরা ৪২:১৩)

    আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘এই পৃথিবীতে এবং আখিরাতে দুই স্থানেই আমি সব মানুষের মাঝে মরিয়ম ইবনে ঈসা (আঃ)-এর সবচেয়ে নিকটবর্তী। নবীরা সবাই পৈত্রিক সম্পর্কে ভাই; তাদের মা ভিন্ন, কিন্তু তাদের দ্বীন একটাই।’ (বুখারী)

    উপরে উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস এবং এরকম আরও যেসব দলিল আছে তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, যদিও বিভিন্ন নবীর শরীয়াহ শাখা প্রশাখার মাঝে পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ভিত্তি তাওহীদ ও দ্বীন সর্বক্ষেত্রেই অভিন্ন ছিল।

    তাছাড়া আমাদেরকে অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদী-কে এবং রাসূলুল্লাহ -কে আদেশ করেছেন, এই ভিত্তির (তাওহীদ, কুফর বিত তাগুত, মিথ্যা উপাস্য এবং তাদের অনুসারীদের প্রতি শত্রুতা, ইত্যাদি) ক্ষেত্রে মিল্লাতে ইব্রাহীমের অনুসরণ করতে এবং তার উদাহরণ অনুকরণ করতে এবং এই একই ভিত্তি দেয়া হয়েছিল সমস্ত নবীদেরকে।

    এখন আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের (আঃ) দ্বীনের অনুসরণ কর; এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। (সূরা নাহল ১৬:১২৩)

    “….তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই; এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর মিল্লাত; তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেনমুসলিমএবং এই কিতাবেও, যাতে রাসূলতোমাদের জন্যে সাক্ষী স্বরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষী স্বরূপ হও মানব জাতির জন্যে….। (সূরা হাজ্জ ২২:৭৮)

    এসব আয়াত থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইব্রাহীম (আঃ)-এর পদ্ধতি ছিল তাওহীদের প্রকাশ্য ঘোষণা এবং সেই সাথে কুফর বিত্ তাগুত ও মুশরিকদের প্রতি ‘বারাআ’ (আভ্যন্তরীণ ঘৃণা ও বাহ্যিক শত্রুতা)। এমনকি দুর্বল অবস্থাতেও তিনি এই একই নীতিতে চলেছেন। আসলে, তারাই দুর্বল যারা নিজেদের দুর্বল মনে করে, আর যারা সবর করে এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তাদের জন্য আল্লাহই সাহায্যকারী। যেমনটি ইব্রাহীম (আঃ) বলেছেনঃ ‘হাসবুনাল্লাহি ওয়া নি’মাল ওয়াক্বীল’। এবং আল্লাহও বলেছেন যে তিনি মু’মিনদের ওয়ালী। তাহলে তার চেয়ে বেশী শক্তিশালী কে হতে পারে যার ওয়ালী স্বয়ং আল্লাহ? আর সে কি কখনো দুর্বল হতে পারে? অবশ্যই না!


    অথচ তারপরও অনেককেই দেখা যায় ইব্রাহীম (আঃ)-এর এই পথ থেকে দূরে সরে যেতে। তারা অজুহাত হিসেবে ‘দাওয়ার সুবিধা’ বা ‘মুসলিমদের ক্ষতি থেকে বাঁচানো’ ইত্যাদি কথা বলে। অথচ এই মিল্লাত থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদেরকে আল্লাহ বলছেনঃ

    এবং যে নিজেকে নির্বোধ করে তুলেছে সে ব্যতীত কে ইব্রাহীমের (আঃ)-এর দ্বীন হতে বিমুখ হবে? এবং নিশ্চয়ই আমি তাকে এই পৃথিবীতে মনোনীত করেছিলাম, নিশ্চয়ই সে পরকালে সৎ কর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা বাকারা ২:১৩০)

    যারা এরকম সস্তা অজুহাত দিয়ে সঠিক পথ থেকে সরে যায়, তারা আসলে আল্লাহর প্রেরিত ওহীর চেয়ে নিজের নফসকেই বেশী গুরুত্ব দেয়। আর শয়তান তাদের কাছে তাদের কাজকে সুন্দর এবং যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরে যাতে তারা এর খারাপ দিকগুলো বুঝতে না পারে। এসব লোকেরা কি মনে করে যে দাওয়াহ দেয়ার পদ্ধতির ব্যাপারে তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখে? অথচ আল্লাহই তো এদেরকে ডেকেছেনঅজ্ঞ’ আর ইব্রাহীম (আঃ)-কে ঘোষণা করেছেন ‘শ্রেষ্ঠ উদাহরণ’ হিসেবে। এবং আল্লাহ তা’আলা ইব্রাহীম (আঃ)-এর ব্যাপারে আরো বলেছেনঃ

    আমি তো এর পূর্বে ইব্রাহীমকে (আঃ) সৎ পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে সম্যক অবগত। (সূরা আম্বিয়া ২১:৫১)

    তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরইবাদত কর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও ঘৃণা চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।(সূরা মুমতাহিনা ৬০:৪)

    সুতরাং ইব্রাহীম (আঃ)-এর মিল্লাত হলো তাগুতকে প্রকাশ্য এবং নির্ভয়ে প্রত্যাখ্যান করা, মুশরিকদের এবং তারা যাদের ইবাদত করে তাদের সবার সাথে ’বারাআ’ ঘোষণা করা, এবং আল্লাহর শত্রুদের প্রতি অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা এবং তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা প্রদর্শন করা এগুলোই হলো দ্বীনের ভিত্তি এবং প্রত্যেক নবীর কাছে এই একই বার্তাই পাওয়া যায়।

    আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুতকে বর্জন করবে….। (সূরা নাহল ১৬:৩৬)

    এবং আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ এই ঘোষণাকে সে স্থায়ী বাণীরূপে রেখে গেছে তার পরবর্তীদের জন্যে যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা যুখরুফ ৪৩:২৮)

    তাহলে দেখা যাচ্ছে যে তাওহীদের এই ঘোষণা ইব্রাহীম (আঃ)-এর পরবর্তী নবীদের জন্যও স্থায়ী করা হয়েছে।

    অন্যান্য নবীরা যে তাদের দুর্বল অবস্থাতেও এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তার অনেক উদাহরণ আছে। সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রুদের মুখোমুখি হয়েও তাঁরা মুশরিক এবং তাদের উপাস্যদের বিরুদ্ধে ’বারা’ ঘোষণা করেছেন।

    আর তুমি তাদেরকে নূহের ইতিবৃত্ত পড়ে শুনাও, যখন সে নিজের কওমকে বললো হে আমার কওম! যদি তোমাদের কাছে দুর্বহ মনে হয় আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আদেশাবলী নসিহত করা, তবে আমার তো আল্লাহর উপর ভরসা, সুতরাং তোমরা তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের তদবির মজবুত করে নাও, অতঃপর তোমাদের সেই তদবির (গোপন ষড়যন্ত্র) যেন তোমাদের দুঃচিন্তার কারণ না হয়, তারপর আমার সাথে (যা করতে চাও) করে ফেলো, আর আমাকে মোটেই অবকাশ দিও না। (সূরা ইউনুস ১০:৭১)

    আমাদের কথা তো এই যে, আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্য হতে কেউ তোমাকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে; সে বললোঃ আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষ্য থেকো, আমি ঐসব বস্তুর প্রতি অসন্তুষ্ট যাদেরকে তোমরা শরীক সাব্যস্ত করছো তাকে ছাড়া, অনন্তর তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাও, অতঃপর আমাকে সামান্য অবকাশও দিও না। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করেছি, যিনি আমারও প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক, ভূ-পৃষ্ঠে যত বিচরণকারী রয়েছে সবারই ঝুঁটি তাঁর মুষ্টিতে আবদ্ধ; নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সরল পথে অবস্থিত। (সূরা হুদ ১১:৫৪-৫৬)

    এভাবে কোরআনের অনেক আয়াত থেকে আমরা দেখতে পাই যে, হিজরতের আগেও মহানবী -কে আল্লাহ তা’আলা এই একই পথের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর এই নির্দেশ মেনে সেই পথেই চলেছেন যদিও মুসলিমরা তখন ছিল খুবই কম সংখ্যক।

    “[হে মুহাম্মাদ] আপনি বলুন, হে কাফেরগণ! তোমরা যার ইবাদত করছো, আমি তার ইবাদত করি না এবং আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তার ইবাদত করো না এবং তোমরা যার ইবাদত করছো, আমি তার ইবাদতকারী নই, এবং আমি যাঁর ইবাদত করছি, তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও। তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন এবং আমার জন্য আমারই দ্বীন।(সূরা কাফিরূন ১০৯:১-৬)

    আবূ লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হোক এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক। (সূরা লাহাব ১১১:১)

    তোমরা কি ভেবে দেখেছোলাতউয্যাসম্বন্ধে এবং তৃতীয় আরেকটিমানাতসম্বন্ধে? তবে কি পুত্র সন্তান তোমাদের জন্যে এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে? এই প্রকার বণ্টন তো অসঙ্গত। এগুলো কতক নাম মাত্র যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখেছো, যার সমর্থনে আল্লাহর কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পথ-নির্দেশ এসেছে। (সূরা নাজম ৫৩:১৯-২৩)

    তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা উপাস্য হতো তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করতো না; তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে। (সূরা আম্বিয়া ২১:৯৮-৯৯)

    কাফিররা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে শুধু বিদ্রূপেই গ্রহণ করে; তারা বলেঃ এই কি সেই, যে তোমাদের দেবতাগুলির সমালোচনা করে? অথচ তারাই তোরহমানএর উল্লেখের বিরোধিতা করে। (সূরা আম্বিয়া ২১:৩৬)

    তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে কুরাইশের কাফিরদের ধারণা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ এমন এক মানুষ যে কিনা তাদের ইলাহদের ব্যাপারে খারাপ কথা বলে। সত্যিকার অর্থে, রাসূলুল্লাহ এই সব ইলাহদের স্বরূপ সবার সামনে তুলে ধরতেন, এদের উপাসনার বিরুদ্ধে কথা বলতেন এবং এদেরকে আলিহা হিসেবে গ্রহণ করা যে কত বড় বোকামি ও অজ্ঞতা তা সবার কাছে স্পষ্ট করে দিতেন। এভাবেই রাসূল সেই একই পথের অনুসরণ করেছেন যে পথে এক সময় ইব্রাহীম (আঃ) চলেছেন- যদিও মক্কায় তিনি ছিলেন দুর্বল। নবীদের দাওয়াহ ছিল এমন যে সবসময়ই কাফিররা এর বিরোধিতা করতো-এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন কুরাইশরা রাসূল -কে অত্যাচার করতো, তাকে বিতাড়িত করতে চাইতো এবং এমনকি হত্যার চেষ্টাও করতো। সঠিক দাওয়াহর প্রকৃতিই এমন।

    মুশরিক এবং মু’মিনের এই দ্বন্দ্ব চিরকালই হয়ে আসছে, কারণ আল্লাহ্ তাঁর স্বীয় ইচ্ছায় হক্ব (ও এর অনুসারী) এবং বাতিল (ও এর অনুসারী) আলাদা করে দিয়েছেন। এবং এই দুইয়ের মাঝে সব সময়ই যুদ্ধ চলে আসছে। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদের জড়ো করেন এবং মু’মিনদের মাঝে থেকে বেছে নেন শহীদদের।

    আর এমনিভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জ্বিনদের হতে হয়ে থাকে, এরা একে অন্যকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে, তোমার প্রতিপালকের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারতো না, সুতরাং তুমি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলবে। (সূরা আন’আম ৬:১১২)

    আর এইভাবেই আমি সৃষ্টি করেছি প্রত্যেক নবীর জন্যই অপরাধপরায়ণ লোকদের মধ্যে থেকে শত্রু; এবং পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারীরূপে আপনার রবই যথেষ্ট। (সূরা ফুরকান ২৫:৩১)

    কাফিররা সবসময়ই নবীদের নিয়ে ঠাট্টা করতো-

    আফসোস বান্দাদের উপর! তাদের নিকট কখনও এমন কোন রাসূলই আসেননি, যাকে তারা বিদ্রূপ না করেছে। (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩০)

    আর সেই কাফেররা নিজেদের রাসূলগণকে বললো, আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বের করে দেবো, নতুবা তোমরা আমাদের দ্বীনে ফিরে আসো; তখন সেই রাসূলগণের প্রতি তাহাদের রব ওহী প্রেরণ করলেন যে, আমি সেই যালিমদেরকে অবশ্যই ধ্বংস করব। (সূরা ইবরাহীম ১৪:১৩)

    যারা ঈমান এনেছে, দ্বীনের জন্যে হিজরত করেছে, নিজেদের জানমাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, এবং যারা আশ্রয় দান ও সাহায্য করেছে, তারা পরস্পরের বন্ধু, আর যারা ঈমান এনেছে, কিন্তু হিজরত করেনি তারা হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকত্বের কোন দায়িত্ব তোমাদের নেই, আর তারা যদি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের নিকট সাহায্যপ্রার্থী হয়, তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য, কিন্তু তোমাদের ও যে জাতির মধ্যে চুক্তি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নয়, তোমরা যা করছো আল্লাহ তা খুব ভাল রূপেই প্রত্যক্ষ করেন। (সূরা আনফাল ৬:৭২)

    আর তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক ও অহংকারী প্রধানরা বলেছিল – হে শোআইব (আঃ)! আমরা অবশ্যই তোমাকে ও তোমার সঙ্গী সাথী মুমিনদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার করব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসবে, তখন সে বললো – আমরা যদি তাতে রাযী না হই (তবুও কি জোর করে ফিরিয়ে নিবে)?” (সূরা আরাফ ৭:৮৮)

    কাফেররা যে নবী ও মু’মিনদের উপর অত্যাচার চালায়, তাদের হত্যা করে, এবং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে – এটা আসলে নতুন কিছু নয়।

    “….এটা এই কারণে যে এরা ক্রমাগত আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করতে থাকলো এবং আল্লাহর নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতে শুরু করলো, …. (সূরা বাকারা ২:৬১)

    “….কিন্তু পরে যখন তোমাদের নিকট কোন রাসূল-তোমাদের প্রবৃত্তি যা ইচ্ছে করতো না, তা নিয়ে উপস্থিত হলো তখন তোমরা অহংকার করলে; অবশেষে একদলকে মিথ্যাবাদী বললে এবং একদলকে হত্যা করলে। (সূরা বাকারা ২:৮৭)

    তারা বললোঃ হে শুআইব (আঃ)! তোমার বর্ণিত অনেক কথা আমাদের বুঝে আসে না, এবং আমরা নিজেদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল দেখছি, আর যদি তোমার স্বজনবর্গের লক্ষ্য না হতো, তবে আমরা তোমাকে প্রস্তারাঘাতে চূর্ণ করে ফেলতাম, আর আমাদের নিকট তোমার কোনই মর্যাদা নেই। (সূরা হুদ ১১:৯১)

    তারা বললোঃ তোমরা সকলে পরস্পর শপথ করো যে, আমরা রাত্রিকালে ছালেহ্ (আঃ)-কে এবং তাঁর অনুসারীদেরকে হত্যা করে ফেলবো, অতঃপর আমরা তাঁর উত্তরাধিকারীদেরকে বলবো, আমরা তাদের হত্যাকান্ডে উপস্থিত ছিলাম না এবং আমরা সম্পূর্ণ সত্যবাদী। (সূরা নামল ২৭:৪৯)

    যদি তারা কোনরূপে তোমাদের সন্ধান জেনে ফেলে, তবে হয় তোমাদেরকে প্রস্তারাঘাতে মেরে ফেলবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে এবং এরূপ ঘটলে কখনোই তোমরা সাফল্য লাভ করবে না। (সূরা কাহাফ ১৮:২০)

    জনপদবাসীরা বললো, আমরা তো তোমাদেরকে অশুভ মনে করি, যদি তোমরা নিবৃত্ত না হও, তবে আমরা তোমাদেরকে প্রস্তারাঘাত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবো এবং আমাদের পক্ষ থেকে কঠিন উৎপীড়ন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। (সূরা ইয়াসিন ৩৬:১৮)

    এগুলো (শত্রুতা, বিদ্রূপ, হুমকি, অত্যাচার, হত্যা, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি) কোন কিছুই হতো না, যদি না নবীরা এবং তাদের অনুসারী মু’মিনরা তাগুতকে উন্মোচিত না করতেন, যদি না তারা শিরক এবং মুশরিকদের থেকে ‘বারা’ ঘোষণা না করতেন। সুতরাং প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এটা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত যে, এই পথে চললে আমাদেরও এ সবের মুখোমুখি হতে হবে। আর এই পথই নবীদের পথ, এই পথই মিল্লাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর দেখানো পথ। এই সেই পথ যেই পথে তাওহীদের ডাক সবদিকে ছড়িয়ে যায়। যেমন হয়েছিল সূরা বুরুজে বর্ণিত মু’মিনদের ক্ষেত্রে।





    আরও পড়ুন​

  • #2
    মাশাআল্লাহ ভাই! হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন এই দন্দ্বের বিষয়টি খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

    আমাদের কিছু ভাইয়েরা তো তাওহীদ ও শিরককে এক তাঁবুর নিচে বেঁধে দুনিয়ার জীবনকে তাদের কল্পিত শান্তিময় স্বর্গীয় জীবন বানানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
    আর এতে জাহান্নামীরা আরও দ্রুত জাহান্নামের পথেই ধাবমান চলছে, সুপথে আসার প্রয়োজন তাঁরা বুঝতে পারছে না!
    আর পরিবেশ না থাকায় মুমীনদেরও ইমান দূর্বল হয়ে জাতি আজ তাদের রব্বের কাছে থেকে দূরে সরে যাওয়ার এক অদৃশ্য প্রতিযোগীতায় জড়িয়ে গেছে।

    অথচ প্রকৃত শান্তি তো আল্লাহর হুকুম মানার মধ্যেই !

    ইবরাহীমি পতাকাবাহী লোকদের আজ খুবই দরকার!
    যে নিজের সব ত্যাগ করবে শুধু এই উম্মাহ'র কল্যাণের জন্য
    আর মনে রাখবেন! আপনি আমি কল্যাণময় যত কাজই করবো সব আমাদের মহান রব্ব লিখে রাখবেন, আর ছোট্ট থেকে ছোট কাজের জন্যেও অকল্পনীয়, বে-শুমার বদলা দিবেন।
    কিন্তু যে সময় আমরা অবহেলায় কাটিয়ে দিব, ওই সময়ের থেকে কোন ফায়দা আমরা পাব না!

    Comment

    Working...
    X