তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (১০)
মুনশি আব্দুর রহমান
মুনশি আব্দুর রহমান
চতুর্থ অধ্যায়:
তালিবান আল-কায়েদাকে কীভাবে দেখে? তাদের পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতার বাস্তবতা।
তালেবানের প্রধান নেতৃবৃন্দ এবং শীর্ষস্থানীয় নেতারা সবসময়ই আল-কায়েদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, তাদেরকে মূল্যায়ন করেছেন, বাইয়াত এবং সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছেন।
তালিবান-আল-কায়েদা সম্পর্ক প্রসঙ্গে শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী এক বয়ানে বলেন—
“আর শেষ করার আগে তালিবান সম্পর্কে আপনাদের ভ্রান্ত ধারণার ব্যাপারে আমি তালিবান বাহিনীর কমান্ডার মোল্লা দাদুল্লাহ (হাফি.)’র কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
আল জাজিরার সাংবাদিক আহমাদ জাইদান তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, যা তিনি তার বই “The returns of Black Flags” উল্লেখ করেছেনঃ
আপনাদের মাঝে এবং আল-কায়েদার মাঝে কি রকম সম্পর্ক?এবং বর্তমানে আল-কায়েদার সাথে আপনাদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা?
মোল্লা দাদুল্লাহ (হাফি.) উত্তরে বলেছিলেনঃ সমগ্র দুনিয়া জানে যে, আমরা আল-কায়েদার জন্য আমাদের শাসন ক্ষমতা ত্যাগ করেছি। এটা ছিল আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব, সুতরাং কিভাবে আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করি? আমরা এবং তারা একই ময়দানের সৈনিক, আমাদের যুদ্ধ ক্ষেত্র এক, আমাদের শত্রুও এক।
আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এরকমই থাকবো, যতক্ষণ না বিজয় কিংবা শাহাদাত আসে বি ইজনিল্লাহ...
আমাদের লক্ষ্য জিহাদ জারি রাখা। আমাদের দ্বীন এক, আমাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, আমাদের শত্রুও এক ও অভিন্ন; এবং ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের আল-কায়েদার ভাইদের সাথেই থাকবো, যতক্ষণ না আমরা আমাদের ক্রুসেড শত্রুকে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করাতে পারি।
এরপর উস্তাজ জাইদান জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আল-কায়েদাকে সাহায্য করার জন্য আপনাদের কি কোন অনুতাপ হয়?
মোল্লা দাদুল্লাহ (হাফি.) উত্তরে বলেছিলেনঃ আমাদের কথা হচ্ছে শহীদদের কথা, যখন তাকে কবরে রাখা হয় তখন সে জিহাদ ও শাহাদাতের উচ্চ মর্যাদা দেখে বলেঃ হায়! আমি যদি আবার জীবিত হয়ে আবার শহীদ হতে পারতাম!
এমনিভাবে আমরাও বলিঃ হায়! আমরা যদি আমাদের শাসন ক্ষমতা হাজারবার ফিরে পেতাম আর হাজারবার আল-কায়েদার মুজাহিদিন ভাইদের জন্য উৎসর্গ করতে পারতাম!” [১]
আর মোল্লা আখতার মানসুর রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক বাইআত গ্রহণের প্রমাণ আমরা আগেই উল্লেখ করে এসেছি।
অতএব, যারা আল-কায়েদাকে ‘কট্টরপন্থী’ ও তালিবানকে ‘নরমপন্থী’ আখ্যা দিয়ে জিহাদের ময়দান নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করতে চান, তাদের জানা উচিত — আল-কায়েদা আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যানকারী শাসকদের প্রকাশ্যে মুরতাদ ঘোষণা করার পরও তালিবান তাদের মানহাজ নিয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি। আল-কায়েদাকে কখনোই আহলুস সুন্নাহর মানহাজ থেকে বিচ্যুত বলে ঘোষণা করেনি। বরং আল-কায়েদা কর্তৃক আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যানকারী শাসকদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে সারা দুনিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতালের জন্য দেওয়া বাইআত তালিবানদের আমীরুল মুমিনীন প্রকাশ্যে গ্রহণ করেছেন। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, আল-কায়েদা যে আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যানকারী শাসকদেরকে তাগুত আখ্যা দেয়, তাদেরকে উৎখাত করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে, তালিবান সে বিষয়ে অবহিত।
দুই একটা মাসআলায় মতের পার্থক্য সত্ত্বেও তালিবান আল-কায়েদার বাইআত গ্রহণ করে তাদের বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। দুই চার মাসআলায় মতভেদ তো একই জামায়াতের সদস্যদের মাঝেও থাকে। এমন কোনো ফিকহী মাজহাবও দুনিয়াতে নেই, যে মাজহাবের প্রধান ইমামের সঙ্গে তাঁর শাগরেদদের দুই চারটি শাখাগত মাসআলায় ইখতিলাফ নেই।
উপরোক্ত প্রমাণ ছাড়াও সময় সময় তালিবান ও আল-কায়েদা নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন অফিসিয়াল বার্তায় উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক, সহযোগিতা ও ঐক্যের অসংখ্য সাক্ষ্য পাওয়া যায়। এসব বার্তার মাধ্যমেই নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, আল-কায়েদার কার্যক্রম সামগ্রিকভাবে তালিবানদের অনুমোদিত ও স্বীকৃত।
*****
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[1] তালেবান ও আল কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক- http://gazwah.net/?p=1109
Comment