তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (১১)
[শেষ পর্ব]
মুনশি আব্দুর রহমান
পঞ্চম অধ্যায়
আল-কায়েদা কি তালিবানদের আদেশ ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে?
ভূমিকা
আল-কায়েদা (AQ) ও তালেবান আন্দোলনের সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বিশেষত আল-কায়েদার বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম কতটুকু স্বাধীন এবং কতটুকু তালেবান নেতৃত্বের অনুমোদনসাপেক্ষ—এ নিয়ে বহু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ঐতিহাসিক দলীল ও আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বিষয়টির একটি সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।
১. একটি বার্তায় এই ব্যাপারে শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন-
“আমীরুল মুমিনীনের সাথে আরও একটি সাক্ষাতের কথা আমার মনে পড়ছে, আমি শাইখ উসামার সাথে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। শাইখ উসামা মসজিদে আকসা ও ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ইহুদীদের অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, তখন আমীরুল মুমিনীন তাঁকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার আদেশ দেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আফগানিস্তানের অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে গেলে ফিলিস্তিনের সীমান্ত এলাকায় জিহাদী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করবেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমীরুল মুমিনীনের সৈনিকেরা এখন বাইতুল মুকাদ্দাসের দ্বারপ্রান্তে।
অসাধুরা তাঁর বাইআত ভঙ্গ করলেও মুসলিম উম্মাহ এই মহামানবকে প্রাণভরে আপনজনের মতো ভালবাসেন।” [1]
২. শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী রহিমাহুল্লাহ (আল-কায়েদার সাবেক প্রধান মুফতী) মোল্লা মুহাম্মাদ উমর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআত প্রদানের ব্যাপারে বলেন-
“আমরা তানযীমু ক্বা’য়িদাতুল জিহাদ একটি বিশ্বব্যাপী ইসলামী জিহাদী সংগঠন। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা জাতিতে সীমাবদ্ধ নয়। আর নিশ্চয়ই আমরা আফগানিস্তানে ইমারাতে ইসলামী আফগানিস্তানের আমীরুল মুমিনীন হিসেবে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ এর কাছে বাই’আতবদ্ধ। আর আমীরুল মুমিনীনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে সর্বত্র কাজ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।” [2]
৩. তানযীম আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপ শাখা AQAP এর একজন সিনিয়র দায়িত্বশীল শাইখ নাসির আল-আনসী রহিমাহুল্লাহ বলেন-
“ক্রুসেডার ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ক্ষেত্রে আমরা সর্বদাই মোল্লা মুহাম্মাদ উমারকে প্রদান করা অঙ্গীকারের উপর অটল আছি। তিনি আমাদেরকে এর ক্ষমতা প্রদান করেছেন এবং তা সম্পাদনের ভার অর্পন করেছেন।” [3]
উপসংহার
উপস্থাপিত দলীলসমূহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল-কায়েদা কেবল একটি স্বাধীন জিহাদী সংগঠন নয়, বরং তালেবানের হাতে বাইআতবদ্ধ। তাদের বৈশ্বিক কার্যক্রম তালেবানের অনুমোদনক্রমেই পরিচালিত হয়। তবে তথ্য-প্রমাণ থেকে এটাও বোঝা যায় যে, তালেবানের নির্দেশনা ও অনুমোদন সাপেক্ষে আল-কায়েদা আফগানিস্তানের বাইরেও অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
অতএব, আল-কায়েদার কার্যক্রম মূলত তালেবানের আদেশ ও অনুমোদনের অধীনেই পরিচালিত—যদিও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য লক্ষ্য করা যায়।
*****
শেষ...আলহামদুলিল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[1] আলআমিরুল ওয়াফিয়্যু, সিলসিলাতু ইহমিল সিলাহাশ শাহীদ, আলহালাকাতুল উলা, ভিডিও সংস্করণ- আস সাহাব মিডিয়া, শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি, মাকতাবা বাইতুল মাকদিস কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-৩২, ২০১৯ ইং- ১৪৪১ হিজরি
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/20211006_20211006_2357
মাকতাবা বাইতুল মাকদিস লিংক- https://archive.org/details/Ihmilsilahshahid
আলবুশরিয়্যাত লিংক- https://archive.org/details/ihmil-silah
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/Pxp8D
[2] আল-আমালুল কামিলাহ লিশ-শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী, পৃষ্ঠা-১৮২২
[3] আল লিকাউস সালিস মাআশ-শাইখ নাসর বিন আলী আনসি -
ভিডিও লিংক-
প্রথম পার্ট- https://archive.org/details/Kjnhsd821
দ্বিতীয় পার্ট- https://archive.org/details/Jhgs62j12
টেক্সট- https://archive.org/details/leqa3
Comment