Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল-কায়েদা কী অপারেশন ম্যানহাটন রেইডে (৯/১১) সিভিলিয়ান হত্যা করেছে? —মুনশি আব্দুর রহমান

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল-কায়েদা কী অপারেশন ম্যানহাটন রেইডে (৯/১১) সিভিলিয়ান হত্যা করেছে? —মুনশি আব্দুর রহমান

    আল-কায়েদা কী অপারেশন ম্যানহাটন রেইডে (৯/১১) সিভিলিয়ান হত্যা করেছে?
    মুনশি আব্দুর রহমান

    সম্প্রতি আমার প্রিয় একজন ভাই ৯/১১ হামলা ও বেসামরিক নাগরিক হত্যা প্রসঙ্গে একটি পোস্ট করেছেন। প্রথমেই ভাইয়ের পোস্টটি এখানে উদ্ধৃত করছি-

    ৯/১১ সিভিলিয়ান ক্যাজুয়াল্টির নিন্দা জানানোর কারণে যারা আমাকে গালাগালি করেছেন কিন্তু একই স্টেটমেন্ট জুলানি দেবার পরেও তাকে নিয়ে গালাগালি নেই কেন? এটা কি ডাবলস্ট্যান্ড নয়?
    আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা যেকোন সিভিলিয়ান টার্গেট করে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাই। একইভাবে বাংলাদেশে হোলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলারও নিন্দা জানাই। এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিকটিম শুধুমাত্র সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও আলেমরাই হয়েছে।
    এদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদেরই অবস্থান নিতে হবে।”[1]

    ভাইয়ের অভিযোগের মূলকথা হলো, ৯/১১-এর বেসামরিক হতাহতের ঘটনাসহ যেকোনো বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্য করে চালানো সন্ত্রাসী হামলাই একটি নিন্দাযোগ্য অপরাধ।
    এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি—

    ১. কোনো কাফের রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ কি সত্যিই “বেসামরিক নাগরিক”?

    ভাইকে বলছি—প্রথমেই আমাদের বুঝে নিতে হবে, কাফেরদের মধ্যে সেনাবাহিনীর বাইরে থাকা “সাধারণ মানুষ” মানেই “বেসামরিক নাগরিক” নয়। ইসলামে ‘বেসামরিক’ বা যুদ্ধের বাইরে থাকা ব্যক্তির বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই আগে এই ধারণাটিই পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
    বেসামরিক ব্যক্তি”—এই পরিভাষাটি মূলত সৈনিকের বিপরীতে ব্যবহৃত একটি আধুনিক শব্দ। পরবর্তীতে এটিকে শরিয়াহর আলোচনায় এনে ইসলামি বিধান প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছে, অথচ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা বা কিয়াস—এর কোনোটিতেই এর ভিত্তি নেই।
    এই শব্দ এবং এর পার্থক্যগুলো এসেছে আন্তর্জাতিক আইন থেকে, বিশেষত জাতিসংঘের মতো কুফরি সংগঠনের প্রণীত আইনব্যবস্থা থেকে, যা শরিয়াহর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ইসলামি দৃষ্টিতে আমাদের এসব বিধানকে বিশ্বাস করতে বলা হয়নি; বরং এগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিচার করাও নিষিদ্ধ।
    বেসামরিক ব্যক্তি’ নামক এই ধারণাটি মূলত আধুনিক যুগে আন্তর্জাতিক আইনি পরিসরেই জন্ম নিয়েছে। তাই আমাদের উচিত, এই পরিভাষাটিকে শরিয়াহর আলোকে—কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের জিহাদবিষয়ক লেখায়—এর কোনো সমর্থন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। কারণ, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো শরিয়াহ-নির্ধারিত ও প্রতিষ্ঠিত পরিভাষা ও বিধানের দিকেই ফিরে যাওয়া।
    অর্থাৎ, কোনো অঞ্চলের মানুষ কেবল যুদ্ধ করছে না বলেই তাদের আক্রমণ করা যাবে না—এমন ধারণা শরিয়াহ-প্রদত্ত নয়। ইসলামের বিধান জাতিসংঘ প্রবর্তিত আন্তর্জাতিক আইনের মতো নয়; বরং এটি নিজস্ব নীতিমালা ও পরিভাষায় প্রতিষ্ঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন।

    ২. ৯/১১ হামলা—আল-কায়েদা কেন চালালো?

    এবার আমরা বোঝার চেষ্টা করবো—আল-কায়েদা কেন এই অপারেশনটি পরিচালনা করেছিল। এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব খোদ ওসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’র কাছ থেকেই শোনা যাক। তাঁর নিজ জবান থেকে প্রকাশিত বক্তব্যের ভাষ্য নিচে তুলে ধরা হলো—
    আমি এখানে এই হামলার পিছনের কারণগুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। প্রকৃতপক্ষে, কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেটি আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরবো।
    আমরা কখনও ভাবিনি যে আমরা একদিন টুইন টাওয়ারে আঘাত করব। আমেরিকা–ইসরাইল জোটের চালানো অত্যাচার ও নিপীড়ন যখন সকল সীমা অতিক্রম করে তখন এই বিষয়টি সর্বপ্রথম আমার মনে আসে। আমরা ফিলিস্তিন এবং লেবাননে আমাদের জনগণের উপর আমেরিকা– ইসরাইল জোটের অকথ্য নিপীড়ন দেখেছি। সেই সময়টাতে আমি তীব্র মনঃকষ্টে ছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। যাইহোক, এই ঘটনা আমার মধ্যে প্রতিরোধের মানসিকতা গড়ে তুলে এবং অত্যাচারীদের শাস্তি দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প তৈরি করে।
    লেবাননের বিধ্বস্ত টাওয়ারগুলো দেখার পর আমার মাথায় আসলো যে, লেবাননে তোমাদের প্রয়োগ করা পদ্ধতি ব্যবহার করে তোমাদেরকে এর তিক্ততার স্বাদ আস্বাদন করাতে হবে। এজন্য আমেরিকার টাওয়ারগুলি ধ্বংস করা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়, যাতে করে তোমরাও আমাদের মতো ধ্বংসের তিক্ততার স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হও। সম্ভবত, এটি তোমাদেরকে আমাদের নির্দোষ মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা থেকে বিরত রাখবে। সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমেরিকা নিজেদের স্বার্থে নির্দোষ মহিলা এবং শিশুদের হত্যা করাকে ন্যায়সংগত মনে করে।
    আমেরিকার সেইসকল জঘন্য অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা চালানো হয়েছিল। এখন আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, নিজ জন্মভূমি রক্ষার চেষ্টা করলে তাকে কি অপরাধী বলা যাবে? আত্মরক্ষা এবং অত্যাচারীর অত্যাচারের প্রতিক্রিয়াকে কি সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলা যাবে? যদি এটাকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলা হয়, তবে আমাদের কাছে এর আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”[2]

    ৩. বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণের ইতিহাস—দলিলসমূহ

    এখানে আমরা হাদিস, সাহাবাদের আমল ও ইসলামের ইতিহাস থেকে কিছু দলিল ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করছি। পাঠকগণ এগুলো পড়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন; প্রচলিত পরিভাষায় যারা বেসামরিক নাগরিক তাদের ওপর হামলার বিধান কেবল অনুভূতি বা প্রতিশোধের ফল নয়—বরং তা এসেছে শরীয়তের স্পষ্ট নির্দেশ থেকে। আসুন, সেই দলীলগুলো একে একে দেখি, যেগুলো থেকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমতি ও নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে-

    দলিল–১

    ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনু আল-মুসতালিক গোত্রের বিরুদ্ধে এমন সময় অভিযান চালান, যখন তারা অপ্রস্তুত ছিল এবং তাদের পশুগুলো পানি পান করছিল। নবীজি () তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করেন এবং সেই জনপদের নারী ও শিশুদের বন্দী করেন।[3]

    দলিল–২

    আমরা জানি যে, বনু কুরাইযা যখন তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে, তখন তারা যুদ্ধরত কাফির হিসেবে গণ্য হয়। ইমাম বুখারি ও মুসলিম এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন: বনু কুরাইযা আত্মসমর্পণ করে এবং হযরত সাদ ইবনে মু’আযের রায়ে মীমাংসার জন্য অপেক্ষা করছিল। রাসূল () সাদ’কে পাঠান—তিনি এক গাধার পিঠে চড়ে আসেন এবং মসজিদের দরজার কাছে লাগাম টানেন। নবীজি () তখন বললেন, “তোমাদের প্রধানের জন্য দাঁড়াও”—অথবা সমমানের এক অভিবাদন জানালেন—এবং অবগত করালেন, “এই লোকেরা আত্মসমর্পণ করেছে এবং তোমার রায়ের অপেক্ষায় আছে।” সাদ তাঁর রায় ঘোষণা করলেন: “তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করো এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করো।” নবীজি () সাদ’কে বলেন যে, “তুমি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার করেছ।”[4]

    দলিল–৩

    আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন রাসূল () খায়বারের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেন, শহরে প্রবেশের সময় তিনি ঘোষণা করলেন, “আল্লাহু আকবার! খায়বার ধ্বংস হয়েছে!” আমরা যখন কোনো কওমের এলাকায় (যুদ্ধের জন্য) নেমে আসি, তখন পূর্ব থেকেই সতর্কবার্তা প্রাপ্ত লোকদের জন্য তা হয় বড়ই অশুভ সকাল। স্থানীয়রা বেরিয়ে এসে চিৎকার করে বলল, “মুহাম্মদ! আর তাঁর সৈন্যরা!”
    নবীজি () সামরিক শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে খায়বার অধিকার করেন; এরপর সেখানকার ইহুদী গোত্রের যোদ্ধাদের হত্যা করা হয় এবং নারী-শিশুকে বন্দী করা হয়। পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেদিন ও মুসলিম ঐতিহ্যে এ ধরনের আরও বহু উদাহরণ এসেছে।[5]

    এসব ঘটনার সূত্র ও বিশদ বিবরণ আমরা ঐতিহাসিক ও ফিকহি গ্রন্থসমূহে খুঁজে পাই—যেখানে বর্ণনা আছে যে, কোনো দুর্গ বা অঞ্চল জয় করলে মুসলিমরা কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করত, যোদ্ধাদের কী রকম দণ্ড প্রদান করা হতো, নারী ও শিশুদের বন্দী করা হতো এবং যুদ্ধের গনিমত হিসেবে কীভাবে অর্থ-সম্পদ বণ্টিত হতো। উদাহরণস্বরূপ, ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) সালামা বিন কায়িসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি বাহিনী প্রেরণ করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল—আল্লাহর নামে উক্ত জনপদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং তাঁদেরকে দুটি বিকল্পের—ইসলাম গ্রহণ অথবা যুদ্ধ—মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার আহ্বান জানানো। কাফিররা যদি তা প্রত্যাখ্যান করত, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসর হয়ে যোদ্ধাদের হত্যা, নারী-শিশুদের বন্দী করা এবং অর্থ-সম্পদ গনিমত হিসেবে গ্রহণ—এমনই রীতির বর্ণনা ওই গ্রন্থে রয়েছে।

    উপরোল্লেখিত সবগুলো ক্ষেত্রেই যুদ্ধসক্ষম সকল পুরুষকে যোদ্ধার হুকুমে গণ্য করা হয়েছে। কেবল সক্রিয়ভাবে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের হত্যা করে, পরোক্ষ সমর্থকদের সিভিলিয়ান হিসেবে ক্ষমা করা হয়নি। এই দলিলগুলো থেকেই ইসলামের ফুকাহায়ে কেরাম হারবী কাফেরদেরকে মুকাতিলাহ এবং জুররিয়্যাহ এই দুইভাগে ভাগ করেছেন। যুদ্ধে সক্ষম সকল পুরুষ মুকাতিলাহ, যোদ্ধার হুকুমে, যদিও তারা প্রত্যক্ষভাবে ময়দানে যুদ্ধ না করে। আর নারী, শিশুরা জুররিয়্যাহ গণ্য হবে, যাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা যাবে না।

    আসলে পৃথিবীর কোনো সেনাবাহিনীই শুধু সৈনিক দিয়ে যুদ্ধ করে না। তাদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে অংশ নেয় বুদ্ধিজীবী, লেখক, এ্যাক্টিভিস্ট, অস্ত্র নির্মাতা, অস্ত্র বিক্রেতা এবং তাদের সমর্থক সাধারণ জনগণ। সাধারণ জনগণের সমর্থন যে কোনো যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর একটি। কাফেরদের এসব পরোক্ষ যোদ্ধাকে আমরা যদি সিভিলিয়ান আখ্যা দিয়ে হত্যা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করি, এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবে ক্যাজুয়াল্টি হলেও সেটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলি- তাহলে পবিত্র সীরাত এবং ইসলামি ফিকহের উপরেই আপত্তি তোলার পথ তৈরি হবে। কাফেররা আমাদের এ ধরনের জিহাদ সমর্থককে নিরাপদ রাখে? তালিবানের পক্ষে কেউ সক্রিয় যুদ্ধ না করে শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে গেলে কি আমেরিকা তাকে অক্ষত রাখতো?
    কাফেরদের মধ্য থেকে কেউ যদি তাদের যুদ্ধের প্রতি সুস্পষ্ট অসমর্থন ঘোষণা করে, নিজেকে এই যুদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে, উপাসনালয় কিংবা এমন কোথাও নিজেকে গুটিয়ে রাখে, তখন তার উপর মুকাতিলাহদের হুকুম বর্তায় না।

    ৪. অপারেশন তুফানুল আকসা : বেসামরিক নাগরিক হত্যার বৈধতার সাম্প্রতিক প্রমাণ

    ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর—গাজার আকাশে যেন সহসা বজ্রপাত হলো। দীর্ঘ অবরোধ, নিপীড়ন আর অপমানের ভারে দগ্ধ ফিলিস্তিনিরা সেদিন ভেঙে দিল নীরবতার প্রাচীর। হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠন একসঙ্গে শুরু করল এক অভূতপূর্ব অভিযান—”অপারেশন তুফানুল আকসা” মুহূর্তেই হাজারো রকেট আকাশ চিরে দক্ষিণ ইসরায়েলের দিকে ছুটে গেল, আর সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে প্রবেশ করল শত শত সশস্ত্র যোদ্ধা। তাদের লক্ষ্য—দখলদার বাহিনীর সামরিক ঘাঁটি, অবরোধের প্রাচীর, আর সেইসব বসতি, যা সাত দশকের নিপীড়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
    প্রথম আঘাতেই ইসরায়েল যেন দিশাহারা হয়ে পড়ল। তাদের গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ ব্যর্থতা সেদিন প্রকাশিত হয়ে গেল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওই দিন ও পরবর্তী সংঘর্ষে প্রায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়—যাদের মধ্যে ছিল সেনা, নিরাপত্তাকর্মী ও বেসামরিক নাগরিক। হামাস ও এর মিত্র সংগঠনগুলো প্রায় ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যায়, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও সৈনিক—সব শ্রেণির মানুষই ছিল।
    খেয়াল করে দেখুন- উম্মাহর উলামায়ে কেরাম কিন্তু ইহুদী সিভিলিয়ান হত্যার কারণে এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলেননি। পোস্টদাতা ভাইয়ের উসুল সঠিক হলে তুফানুল আকসাকেও সন্ত্রাসী হামলাই বলতে হবে।

    সারসংক্ষেপ

    প্রিয় পাঠক! এবার আসুন, উপরে প্রদত্ত দলিল ও আলোচনার আলোকে আমরা দেখি যে-
    যুদ্ধরত অমুসলিমকারা এবং কে যোদ্ধাহিসেবে গণ্য?

    ইসলামি আইনশাস্ত্রে, ‘যুদ্ধরত কাফিরবা হারবি কাফিরএকটি নির্দিষ্ট পরিভাষা। সহজ কথায়, এরা হলেন এমন অমুসলিম, যাদের সাথে মুসলিমদের কোনো ধরনের শান্তি-চুক্তি বা নিরাপত্তা-চুক্তি বলবৎ নেই।
    তারা জিম্মি’ (মুসলিম রাষ্ট্রে সুরক্ষিত অমুসলিম নাগরিক) বা অন্য কোনো চুক্তির অধীনেও নন। অর্থাৎ, মুসলিমদের সাথে তারা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আছেন বলে ধরে নেওয়া হয়।

    মুকাতিলাহ’ বা যোদ্ধাবলতে কাদের বোঝানো হয়?
    এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসে: যুদ্ধরত অমুসলিমদের মধ্যে ঠিক কাদের যোদ্ধাহিসেবে গণ্য করা হবে?
    অনেকে মনে করেন, ‘যোদ্ধাকেবল তারাই, যারা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করেন। তবে, ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ (ফকিহ) এই সংজ্ঞাটিকে আরও ব্যাপক অর্থে দেখেছেন। তাদের মতে, ‘যোদ্ধাবলতে কেবল অস্ত্রধারী সৈনিককেই বোঝায় না; বরং শত্রুপক্ষের প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের এবং যুদ্ধ করতে সক্ষম পুরুষকেই যোদ্ধাহিসেবে গণ্য করা হয়।
    এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি সরাসরি যুদ্ধ না-ও করেন, তবুও তিনি যদি শত্রুপক্ষের প্রতি অনুগত হন এবং যুদ্ধ করার সক্ষমতা রাখেন, তবে তিনিও যোদ্ধা’-এর অন্তর্ভুক্ত।
    প্রিয় পাঠক! এবার আপনারাই বলুন, ৯/১১ হামলা কি সন্ত্রাসী হামলা, নাকি শরিয়াহ অনুমোদিত বৈধ কোন হামলা? ইসলামপন্থীরা কি হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন নাকি পক্ষ নিবেন? শরিয়াহ কি বলে এই ব্যাপারে?
    *****


    সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স ও লিংক-
    [1] https://facebook.com/share/p/16vxooHmec/
    [2] আমেরিকার জনগণের প্রতি বার্তা- শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহিমাহুল্লাহ) - https://archive.ph/jFLLf
    [3] সহীহ আল-বুখারি, কিতাবুল মাগাযী, হাদীস নং: ৪১৩৮ (কিছু সংস্করণে ৪১৪১ / ৭৪৪১) এবং সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওস্-সিয়ার, হাদীস নং: ১৭৩১–১৭৩২
    [4] সহীহ আল-বুখারি, কিতাবুল মাগাযী, হাদীস নং: ৩০৪৩, ৪১২১, ৪১২২, ৩০৪২ এবং সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওস্-সিয়ার, হাদীস নং: ১৭৬৮
    [5] সহীহ আল-বুখারি, কিতাবুল মাগাযী, হাদীস নং: ৩৭১৯, ২৯৪৫, ৪২১০ এবং সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওস্-সিয়ার, হাদীস নং: ১৮০১–১৮০৩, এবং সীরাত ইবন হিশাম, খণ্ড ৩, এবং আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ইবনে কাসীর, খণ্ড ৪

    “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
    -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

  • #2
    অল্প কথার মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ ফিকহী মাসআলা ও আধুনিক বিদআতি আকিদা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান!

    আমাদের আসলে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করতে হবে, মানতে হবে; "আমার বুঝই দুনিয়ার সব বুঝ নয়"

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহু আহসানাল জাযা মুহতারাম প্রিয় ভাই! অত্যন্ত চমৎকার ভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরপরও কাহারো বুঝে না আসে, তাহলে সে হলো কপাল পোড়া। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাঁর দ্বীনে হানীফের উপর অটল-অবিচল রাখুন, আমীন।

      Comment

      Working...
      X