ধর্ম নয়, ক্ষমতা হলো দাঙ্গার অদৃশ্য ইঞ্জিন, “পরিকল্পিত দাঙ্গা” বনাম বাংলাদেশের সেক্যুলার-এলিটদের ইসলামবিরোধিতা
পর্ব - ২
পর্ব - ২
বিশেষ করে ভ|রতে বিজেপি-আরএসএস-এর কাছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় আবেগ “রাজনৈতিক কৌশলের” বলি হয়
ভ|রতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ে সরল কথা না বলে, গবেষণা-ভিত্তিকভাবে একটা কথাই বলা যায়, নির্বাচনী প্রতিযোগিতা আর রাষ্ট্রযন্ত্রের আচরণ এই দুইয়ের স্বার্থ/লাভের হিসাব বদলালে সহিংসতার ঝুঁকিও বদলায়। স্টিভেন আই. উইলকিনসনের বিশ্লেষণে দেখানো হয়, কোথায়, কখন, আর কেন রাষ্ট্র (যার হাতে পুলিশ-প্রশাসন) সংখ্যালঘু-বিরোধী সহিংসতা থামাতে আগ্রহী হয় বা হয় না। আর এই সিদ্ধান্তে “ভোটের রাজনীতি” অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যান্টি-মুসলিম হেট-স্পিচের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, আর ঘটনাগুলোর ভৌগোলিক–রাজনৈতিক প্যাটার্ন নিয়ে রিপোর্টিং হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ভ|রতে ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে অ্যান্টি-মুসলিম হেট-স্পিচ ৬২% বেড়েছে, রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমন তথ্য আসে। এ ধরনের স্পাইকগুলোকে “ধর্মীয় আবেগ” বলে এক লাইনে নামিয়ে দিলে রাজনৈতিক লাভ–ক্ষতির সম্ভাব্য মেকানিজম আলোচনার বাইরে থেকে যায়। আর রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা পাওয়ার কারণে সে/ক্যু/লাররা এসব নিয়ে আলাপ না করে সহজে বলে দেয়, ধর্ম মানেই খারাপ।
যেমন বাংলাদেশেও হাসিনার পতনের পরে দেখা গেছে ধর্ম “লেবেল”, কিন্তু মাঠের বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বারবার এসেছে যে, ৫ আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর হিন্দুরা হামলার শিকার হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা “শুধু ধর্মীয় পরিচয়”-এর কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিশোধমূলক সহিংসতা, সুযোগসন্ধানী লুটপাট, আর “হিন্দুরা আওয়ামী লীগের সমর্থক/ঘনিষ্ঠ” এই সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে জড়িত বলে আলোচনা হয়েছে। রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হয়, হাসিনা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের বড় অংশ তাকে তুলনামূলক নিরাপত্তাদাতা মনে করায়, তারা রাজনৈতিকভাবে “প্রো-হাসিনা/প্রো-আওয়ামী লীগ” হিসেবে পরিচিত ছিল এবং তাদের অনেকেই হাসিনার ঘনিষ্ঠ ছিল। সরকার পতনের পর পুলিশ-প্রশাসন বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকায় এ ধরনের হামলা মূলত প্রতিশোধ থেকে হয়েছে। আল জাজিরাও একই প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের হিন্দুরা দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী, এবং “অনেকে হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সমর্থক”। এই বাস্তবতার কারণেই উত্তেজনার সময় তাদেরকে লক্ষ্য বানানো হয়েছে, এমন আলাপ তখন বহু জায়গায় হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখিতেও দেখা যায়, ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয় মিশে গিয়ে “কমিউনিটিকে রাজনৈতিক প্রতীক” বানানোর প্রবণতা অস্থিরতার সময়ে হামলার ঝুঁকি বাড়ায়। আর সেটিই ২০২৪ জুলাই পরবর্তী পরিস্থিতি বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।