কাবুল সরকার কেন ইসলামী সরকার নয়?
উস্তাদ আহমাদ ফারসি হাফিযাহুল্লাহ
উস্তাদ আহমাদ ফারসি হাফিযাহুল্লাহ
কিছু কথা
আমাদের সমাজে ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তান তথা তালিবান মুজাহিদদের ব্যাপারে বিভিন্ন সংশয় ছড়ানো হয়েছে ও হচ্ছে। খাওয়ারিজ, মুনাফিক ও কুফফার গোষ্ঠী তাদের অপপ্রচারের সবগুলো তীর যেন মুজাহিদিনের দিকে নিক্ষেপ করেছে। ফলে অনেক সাধারণ মুসলিম বিভ্রান্তির সম্মুখীন হয়েছেন ও হচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে শত্রুদের এই সকল অপপ্রচারের জবাব দেওয়া আমরা অত্যান্ত জরুরী মনে করছি, যার ধারাবাহিকতায় আমরা এই প্রবন্ধটির অনুবাদ আপনাদের কাছে পেশ করছি।
এই প্রবন্ধটি তালিবান মুজাহিদদের অফিসিয়াল ফার্সি (আফগানিস্তানে ফার্সি ভাষার এই ধারাটি ‘দারি’ নামে পরিচিত ও কথিত) ম্যাগাজিন ‘মাজাল্লাহ হাকিকত’ (8ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, মুহাররাম ও সফর ১৪৪২ হিজরি, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর ২০২০ ইংরেজি) এর ৪৩ নাম্বার সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এটির সম্পাদক হলেন মৌলবি নাঈমুল হক হক্কানি হাফিযাহুল্লাহ, যিনি ‘আহমাদ তানভির’ নামে ম্যাগাজিনের পাঠকদের কাছে সুপরিচিত।
মুহতারাম উস্তাদ আহমাদ ফারসি হাফিযাহুল্লাহ’র লিখিত ادارهء کابل اسلامی نیست প্রবন্ধটির বাংলা শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘কাবুল সরকার কেন ইসলামী সরকার নয়?’।
এই প্রবন্ধে অত্যান্ত বলিষ্ঠভাবে মুরতাদ কাবুল সরকারের ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। আশা করছি আফগানিস্তানের এই কথিত মুসলিম সরকার ও তাদের রক্ষাকারী সেনাবাহিনীর ব্যাপারে ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তানের অবস্থানের নিয়ে যাদের সংশয় ছিল, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা তা দূরীভূত করতে পেরেছি। আল্লাহ আপনাদেরকে, আমাদেরকে ও আমাদের এই ছোট্ট কাজকে কবুল ও মকবুল করে নিন। আমিন।
সম্পাদক
২৬ যিলহাজ্জ ১৪৪২ হিজরি
০৬ আগস্ট ২০২১ ইংরেজি
অনেকেই দাবি করেন যে, কাবুলের বর্তমান সরকার একটি ইসলামী সরকার। এর প্রমাণ হিসেবে তারা বলেন; আফগান সরকারের সংবিধানে ইসলাম পরিপন্থী কোন আইন নেই। তাছাড়া পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা মুখে কালিমা উচ্চারণ করে, নামাজ পড়ে এবং রাষ্ট্রের সকল দন্ডবিধি হানাফি ফিকহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাই কাবুল সরকার একটি ইসলামী সরকার। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জায়েজ নেই এবং ‘ইমারাতে ইসলামীর’ নতুন করে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি তোলারও অধিকার নেই।
এই দাবি দাওয়াগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যারা এ জাতীয় দাবি করে, ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও ঈমান ভঙ্গকারী বিষয়ে তারা পুরোপুরি মুর্খতায় নিমজ্জিত রয়েছে। জেনে রাখা উচিত যে, কোন ব্যক্তি কাফির হওয়ার জন্য ঈমান ভঙ্গের সকল কারণ একসাথে পাওয়া যাওয়া জরুরী নয়। বরং ঈমান ভঙ্গের যে কোন একটি কারণ পাওয়া গেলেও যে কেউ কাফির হয়ে যেতে পারে। যেমন; কেউ ইসলামের সকল বিধানের উপর বিশ্বাস করে, কিন্তু হজ্জকে বিশ্বাস করে না। এখন এ ব্যক্তি কালিমা, নামায, রোজা, যাকাত সবগুলো বিষয় পালন করার পরও হজ্জকে অস্বীকার করার কারণে কাফির।
এই মূলনীতির আলোকে বলা যায়, কাবুল সরকার একটি পুতুল সরকার। যাদেরকে সরাসরি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কারচুপিযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং এদের নিয়োগ করা হয়েছে তাদের দখলদারিত্বের স্বার্থেই। কাবুল সরকারের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীবর্গ সকলেই যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দখলদার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত।
এই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার আকাশ ও স্থলপথ তাদের দখলে নেই, বরং সবই দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া এ সরকারের প্রেসিডেন্টের এই অধিকার নেই যে, সে আমেরিকা এবং অন্যান্য দখলদারদের ঘাঁটিতে প্রবেশ করবে। অথচ দখলদাররা কোন প্রকার অনুমতি এবং তথ্য আদান প্রদান ছাড়াই, যে কোন সময় এ দেশে প্রবেশ করার এবং চলে যাওয়ার অধিকার রাখে। দখলদাররা চায় এই সরকার যেন তাদের ঘাঁটিগুলো রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। এই সরকারের পুলিশ, সেনাবাহিনী, ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীরা আফগান জাতির বিরুদ্ধে দখলদারদের পক্ষে লড়াই করছে এবং তাদের জন্য নিজের তাজা রক্ত ঢেলে দিচ্ছে তাছাড়া দলখদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুজাহিদদের কাউকে শহীদ করছে, কাউকে আহত করছে এবং অনেককে করছে কারারুদ্ধ।
অতএব, শরিয়তের হুকুম এবং পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট আয়াত অনুসারে, কোন মুসলমান, যদিও সে মুখে কালিমা উচ্চারণ করে, যখন সে একজন মুসলিমের বিরুদ্ধে কাফেরের পক্ষে লড়াই করে তখন সে কাফের হয়ে যায় এবং তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ।
তাছাড়া তারা (নিজেদের মন মতো) সংবিধান প্রণয়ন করেছে। একটা কথা আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত যে, যদি এটি ইসলামী সরকার হতো; তাহলে এখানে নিজেদের বানানো কোন সংবিধানের প্রয়োজন হতো না। কারণ সংবিধানকে মনে করা হয় আইনের উৎস। অথচ ইসলামি সরকারের আইনের উৎস হচ্ছে একমাত্র কুরআন ও হাদীস।
দ্বিতীয়ত, যদি বলা হয় যে, সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে আফগানিস্তানের কোন আইন ইসলামের বিশ্বাস ও নিয়মের পরিপন্থী হতে পারবে না। তাহলে খেয়াল করা উচিত এই কথাটিই একটি ইসলাম বিরোধী কথা। কেননা ইসলামী আইন তো গ্রহণ করা হয় সরাসরি কুরআন সুন্নাহ থেকে, মানুষের তৈরী সংবিধান থেকে নয়।
তাহলে সংবিধানের এ কথার অর্থ কি?। হ্যাঁ এর অর্থ হচ্ছে; সংবিধানে যদি এই অনুচ্ছেদ না থাকে, তাহলে জনগণ যে কোন সময় প্রশ্ন তুলতে পারে যে, কাবুল সরকার ইসলামী শরীয়াহ বিরোধী আইন প্রণয়ন করতে পারে। (তাই এটি রাখা হয়েছে জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য) যাইহোক, এই সংবিধানের শুধুমাত্র একটি অনুচ্ছেদই ইসলামের কথা আছে, এছাড়া অন্যান্য সকল অনুচ্ছেদই শরিয়তের বিধি-বিধানের সাথে সুস্পষ্ট বিপরীত ও সাংঘর্ষিক।
উদাহরণস্বরূপ সংবিধানের –
৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব হবে আফগান জনগণের।
৬ নং অনুচ্ছেদে প্রচলিত মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বাস্তবায়ন ও এর প্রতি শ্রদ্ধার কথা উল্লেখ রয়েছে।
৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সরকার জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক চুক্তি (আফগানিস্তান যার সদস্য) এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র মেনে চলবে।
৮ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে; এই সরকার মুক্ত বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং উদ্যোগকে সর্ব প্রকার সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিবে।
২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে; আইন প্রণয়ন এবং আইনগত আদেশের পূর্বে কোন অপরাধ সংগঠিত হলে তাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।
বর্তমানের সংবিধানে এসব কথার উল্লেখ রয়েছে।
জেনে রাখা ভালো; প্রথমত ইসলামে সার্বভৌমত্ব (আইন প্রণয়ন ও তা বলবৎ রাখার ক্ষমতা) একমাত্র আল্লাহ তায়ালার, জনগণের নয়।
দ্বিতীয়ত; মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে ‘বিশ্বাসঘাতক জাতিসংঘের’ বিশ্ব মানবাধিকারের নামে প্রচলিত সকল চুক্তি বর্জন করা উচিত। কারণ এখানে এমন কিছু অধিকারের কথা রয়েছে যা ইসলামের সাথে সরাসরি সংঘর্ষিক। যেমন নারীর অধিকার (এর নামে ইসলামী অনুনোমদিত অধিকার) সমকামিতার অধিকার, সীমাহিন স্বাধীনতার অধিকার, যা সম্পূর্ণই শরীয়ত পরিপন্থী। তাই একজন মুসলিম কখনোই তা গ্রহণ করতে পারে না। উপরন্তু, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা বিশ্বাস প্রকাশ করা শরীয়ত বিরোধী এবং স্বতন্ত্র কুফরি কাজ।
প্রচলিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোতে শরীয়ত বিরোধী অনেক চুক্তি রয়েছে যা সুস্পষ্ট শরীয়াহ বিরোধী। তাই অনেক মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রও এসব চুক্তিতে আবদ্ধ হয়নি। মুক্ত বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার অর্থ হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আশ্রয় দেয়া। যা গড়ে উঠে সম্পূর্ণ সুদ ভিত্তিক। শরীয়তের দিক থেকে যার কোন বৈধতা নেই। এবং সংবিধানের আইন প্রণয়ন ব্যতিরেকে সংগঠিত অপরাধকে অপরাধ না বলা, যার উপর কাবুল সরকার স্বাক্ষর করেছে। এই আইন অনুযায়ী কুরআন সুন্নাহ বর্ণিত অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না যতক্ষণ আশরাফ গনি একে অপরাধ মনে না করে।
যদি আমরা কিছু সময়ের জন্য মেনে নেই যে; এই সরকারের আইনগুলো শরিয়াহ অনুসারে এবং হানাফী ফিকহের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাহলে আমাদের জানা উচিত যে শুধু আইনের প্রথম পৃষ্ঠায় এটি উল্লেখ করাই যথেষ্ট নয়। বরং এর সাথে বাস্তবতার সামঞ্জস্যতা কতটুকু তাও আমাদের দেখতে হবে। বিগত ১৯ বছর ধরে আমরা একবারও শরীয়াতের ফায়সালা অনুযায়ী বিচারের প্রমাণ পাইনি। বরং বিগত বছরগুলোতে, এই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে ব্যভিচার, ধর্ষন, ডাকাতি, হত্যা, অপহরণসহ এমন অনেক অপরাধের শাস্তি প্রয়োগ না করে বরং তা স্থগিত করা হয়েছে। খুনিকে কেসাস, ব্যভিচারীকে দোররা, চোরকে হাত কাটা এবং মুরতাদকে হত্যার পরিবর্তে তারা কেন বিভিন্ন মেয়াদে তাদের কারাদণ্ড দিয়েছে? কুরআন সুন্নাহর বিরোধী এই আইনগুলো কি স্পষ্ট কুফর নয়?
তারা দাবি করে যে, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা মুখে কালিমা উচ্চারণ করে, এবং নামায আদায় করে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এদের হত্যা করার জন্য এবং এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য এটা জরুরী নয় যে, এরা একদম সুস্পষ্ট কুফর করবে এবং কালিমা ও নামাজ রোজা বর্জন করবে। বরং কাফিরদের সারিতে শামিল হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতাকামী মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই এদের হত্যা বৈধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং নিরাপত্তাকর্মীরা যখন কাফিরদের সাথে মিলে মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন, কারাবন্দি করছে, তখন এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ।
আবু বকর রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু এবং তাঁর সঙ্গীরা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন, যারা বাহ্যত মুসলিম ছিলো। তারাও কালিমা পড়তো, রোজা রাখতো এমনকি হজ্জও করতো। তারা শরীয়াহর সকল বিধি-বিধানই গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু তারা মুসলিম খলিফার হাতে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিলো। শুধুমাত্র এই একটি কারণে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হয়েছে এবং তাদেরকে মুরতাদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।
এই সরকারে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা; যেমনটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে শরয়ী আইনের পরিপন্থী এবং এই ব্যবস্থায় হালাল ও হারামের বিষয়টি আলোচনা হয় না। প্রতারণা এবং এ জাতীয় যে কোন কাজ যা ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হবে; এ ব্যবস্থায় তাই বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এমনকি যদি তা শরিয়াহ পরিপন্থী এবং পবিত্র কুরআনের সরাসরি বিরোধীও হয়।
উপরন্তু, ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি, মদ্যপান, নৈতিক অবক্ষয় ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, সরকারি সম্পত্তি দখল, আদালত ও সরকারি অফিসে ঘুষ, গির্জার ভিতর থেকে খ্রিস্টধর্মের বিস্তারের পাশাপাশি ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে বিগত ১৯ বছর ধরে প্রকাশ্যে ইসলাম বিরোধী কাজ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় সরকারী সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলো প্রচার করছে। অন্য দিকে নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের প্রকাশ্যে বাজারে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমসহ অনেক অফিস বন্ধ করে সেখানে নারীদের নানাভাবে যৌন হয়রানী করা হয়েছে। এবং বিভিন্ন সরকারী অফিসে ব্যভিচার করা হয়েছে, যে বিষয়ে তারা তারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রমাণও পেশ করেছে। কাজেই এমন সরকারকে কি করে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা বলা যায়? এমন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান করে একে উৎখাত করা কি মুসলমানদের উপর ফরজ নয়?।
সারকথা হলো; বর্তমান কাবুল সরকার ইসলামী সরকার নয়। কারণ এই ব্যবস্থার শাসকগণ মিথ্যা গণতন্ত্র এবং দখলদারদের গ্রহণ করা জালিয়াতিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে এবং এদের অধিকাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দুর্নীতিবাজ। আমরা আবারো বলছি এটি ইসলামী সরকার নয়, কারণ এটি দখলদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সরকার।
আমরা এই ব্যবস্থার বেশ কিছু বিষয়, বিশেষ করে এর গঠন প্রকৃতি থেকে শুরু করে এর শাসক নিয়োগ পর্যন্ত সবগুলো বিষয়ে আলোকপাত করেছি। আমরা ইসলামের নিক্তিতে মেপে দেখেছি যে, এটি ইসলামী সরকার নয়। কারণ এটি শরীয়াহ আইন অনুসারে পরিচালিত সরকার নয়। কুরআনের অসংখ্যা আয়াত প্রমাণ করে, যেসব সরকার শরীয়াহ আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে না তা ইসলামী রাষ্ট্র নয় এবং তা কখনো ইসলামী রাষ্ট্র হতে পারে না।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন;
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে”। (সুরা নিসা-৬৪)
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
“যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের”। (সুরা মায়েদা-৪)
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
لا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ.
“মুমিনগন যেন মুমিনকে ব্যতিত কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না”। (সুরা আলে ইমরান-২৮)
لا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ
“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়”। (সুরা মুজাদালাহ-২২)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না”। (সুরায়ে মায়েদাহ-৫১)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ
“মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা, যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিস্কার করে এই অপরাধে যে, তোম
সর্বোপরি কথা হলো; বর্তমান কাবুল সরকার ইসলামী সরকার ব্যবস্থা নয় । উল্লেখিত কারণে এদের সংবিধানও ইসলামী নয়। এটি ইসলামী সরকার ব্যবস্থা নয় কারণ পতিতাবৃত্তির অনুমোদন, দুর্নীতি, দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থা, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলো ইসলামী সরকারের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এবং এই সরকার শুধু এ সবই গ্রহণ করে না বরং উৎসাহিত করে, প্রচার এবং এর বিস্তারে নানা কর্মসূচী গ্রহন করে তা বাস্তবায়নও করে। এটি ইসলামী সরকার ব্যবস্থা নয় কারণ এর মধ্যে ফিকহের কিতাবে বর্ণিত ইসলামী সরকারের কোন বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান নেই।
- সংগৃহীত
Comment