ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত হওয়ার অপমানজনক চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই কুফফার আমেরিকা, ব্রিটেন, জাতিসংঘ, পশ্চিমা মিডিয়া এবং পশ্চিমাদের দালালে পরিণত হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার সেক্যুলার সুশীল সমাজ এবং তাদের হলুদ মিডিয়া আফগান তথা ইসলামের বিজয়কে বিতর্কিত করতে বদ্ধপরিকর।
আগ্রাসী আমেরিকানরা আশা করেছিল তাদের সৈন্য প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু হলে, তালেবান মুজাহিদরাও গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ দখলের কার্যক্রম শুরু করবেন। এতে প্রচণ্ড যুদ্ধ ও ব্যাপক রক্তপাত হবে যা, আফগান মুজাহিদদেরকে বিতর্কিত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিশ্বের সেরা সেরা জেনারেল, বড় বড় যুদ্ধ বিশ্লেষকদের অবাক করে দিয়ে অতি দ্রুততার সাথে এবং কল্পনাতীত কম রক্তপাতে আফগানের গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ ও প্রাদেশিক রাজধানী সমূহ দখলের মাধ্যমে মুজাহিদীনরা আমেরিকানদের এই আশা সম্পূর্ণরূপে ম্লান করে দেন।
তাছাড়া, শত্রুপক্ষের সকলের মনে করেছিল অন্ততপক্ষে কাবুল বিজয়ের সময় ভয়ঙ্কর কিছু যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হবে সারা বিশ্বের মানুষ। ১৯৯৬ -এ মুরতাদ নাজিবুল্লাহ'কে হত্যার মত বর্তমান নেতৃস্থানীয়দের হত্যা করা হবে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে রক্তপাতহীন কাবুল বিজয় ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে পশ্চিমা কুফফারদের গালে প্রচন্ড চপেটাঘাত করেন তালেবান নেতৃস্থানীয়রা। পোপ থেকে শুরু করে জাতিসংঘ; সেক্যুলার মিডিয়া থেকে শুরু করে আমেরিকান জোট রাষ্ট্র সকলেই নিশ্চুপ হয়ে যায়। সকলের চোখে মুখে একই প্রশ্ন, "এই কি হলো?"।
কিন্তু কাফেররা ইসলামের চির শত্রু। তারা পদে পদে লাঞ্চিত হওয়ার পরও তাদের প্রোপাগান্ডা স্থগিত রাখেনি। আর এই ক্ষেত্রে তারা যে অস্ত্রটি বার বার ব্যবহার করেছে তা হলো "নারী অধিকার"। নারীদের পর্দা সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও তাফসীর সম্মানিত আলেমদের আলোচনা ও দারসের মাধ্যমে সকলের কাছেই পরিষ্কার। নারীশিক্ষা, তাদের কর্মজীবন ও ব্যাবসা সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল নিয়েও যঠেষ্ট(যথেষ্ট) আলোচনা হয়েছে। তাই শরীয়(শরয়ী) বিধানের পাশাপাশি বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার আলোকে নারীর অধিকার নিয়ে বিশেষ করে আফগান নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জাতি, গোত্র, দেশ ভেদে মানুষের কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কিছু নিজস্বতা রয়েছে। সক্রিয়তা রয়েছে তাদের ভাষা, আচরণে, পোশাকে চিন্তা-চেতনায়। তাই আমেরিকার নারীরা স্বাধীনতা মানে বেহায়াপনা, লজ্জাহীনতা ও সহকর্মীদের কাছে শারিরীক অপদস্থতাকে মনে করলেও; তা কিন্তু সারা বিশ্বের নারীদের স্বাধীনতার মানদন্ড নয়। আমেরিকা বা পশ্চিমা নারীদের স্বাধীনতা মানদন্ড থেকে আফগানি নারীদের স্বাধীনতা মানদণ্ড সম্পূর্ণ আলাদা। আফগান নারীরা স্বাধীনতা বলতে বুঝেন ইমানদ্বারিতা, লজ্জাশীলতা, পর্দাশীলতা, স্বামীর সহযোগী, সন্তান পালনকারী মা হিসেবে সম্মানিত হওয়াকে। তাই আফগান নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার আগে অবশ্যই তাদের প্রকৃত স্বাধীনতা আর অধিকার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে।
ঠিক যেমটা তালিবানদের একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল আলিম শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব কাবুলি (রাহিঃ) الد عانم الا ساسيت لفكر طا لبان অর্থাৎ “তালিবানের চিন্তাধারার মৌলিক ভিত্তি” শিরােনামে একটি ধারাবাহিক আর্টিকেলে আফগান নারীদের প্রতি আমেরিকান ও তার মিত্র শক্তির নিকৃষ্ট দৃষ্টিকোণের প্রসঙ্গে লিখেছেন, "যেহেতু পশ্চিমা ক্রুসেডাররা তাদের নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার কারণে পূর্ণ ইসলামকেই বিরােধীতা করে, তাই এটি কোনাে আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, তারা নারীদের সফলতা বা বিফলতার ক্ষেত্রে তালিবানের মূলনীতিরও বিরােধিতা করবে। পশ্চিমাদের চিন্তায় সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে, তারা বস্তুবাদী লিবারেল (মুক্তচিন্তা) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আফগান নারীদের যাচাই করে। যদি তারা আফগানি মহিলাদেরকে তাদের দ্বীন, সামাজিক অবস্থান, শরিয়তের পক্ষ থেকে চারিত্রিক ও সাংস্কৃতিক কর্তব্য ও তাঁর জাতির সভ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখত, তাহলে আফগান মুমিন নারীদের ব্যাপারে তাদের মাথায় এরকম নষ্ট চিন্তা আসতাে না। "
সুতরাং যারা আফগান নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকারের কথা বলেন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে আফগান নারীদের পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পর্দাশীলতার প্রসার করা। দ্বিতীয়ত, দ্বীনি ইলম, তরবিয়ত ও আমলের পরিবেশ তৈরী করা; এবং বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলের সাথে একই সারিতে জিহাদ, সবর, হিজরত ও যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের সহযোগী হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু নারী স্বাধীনতার ফেরিওয়ালা আমেরিকা ও তাদের নোংরা দাজ্জালি মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে নারীদের উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনায় বাধ্য করা এবং আইন ও বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে নারীদের দ্বীনের বিধান থেকে বের করে তাদের প্রকৃত অবস্থান পরিবর্তন ঘটানো।
কাবুল পতনের পর থেকে নেট জগতে ও দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রে কমিউনিস্ট শাসন আমলের সময়কালীন আফগান নারীদের কিছু ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। সে সকল ছবিতে খোলামেলা পোশাকে অফিসগামী আফগান নারীদের দেখানো হচ্ছে। আরও দেখানো হচ্ছে স্কুলের প্যারেড ও রাজনৈতিক র*্যালিতে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া আফগানি নারীদেরকে। যা পশ্চিমাদের আদর্শ নারী স্বাধীনতা প্রতিচ্ছবি। এই ছবিগুলোর মাধ্যমে একদিকে যেমন সাধারণ মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে; অন্যদিকে বিজয়ী তালেবানদের চিন্তাধারাকে অপমানিত ও বিতর্কিত করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে কাফেরেরা চক্রান্ত করে বিগত ১০০ বছর যাবৎ মুসলমানদের সমরবিদ্যা, অস্ত্রবিদ্যা ও রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখলেও, বর্তমান প্রজন্মকে তো ইতিহাসের শিক্ষা থেকেও অনেক দূরে সরিয়ে ফেলেছে। কারন ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্য জ্ঞান রাখেন তারাও জানেন আফগান নারীদের ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীনতা জগদ্বিখ্যাত। তারা উম্মুল মুমিনীন ও সদ্দচরিত্র মুজাহিদীন নারীদের যোগ্য অনুসারী। তারা এমন প্রজন্মদের জন্ম দিয়েছেন যারা বিগত দুই শতাব্দী যাবৎ ইংরেজি, রাশিয়ান, আমেরিকান, ইউরোপ ও কাফেরদের জোট শক্তি ন্যাটো ও জাতিসংঘের মতো আগ্রাসী শক্তিকে বিভিন্ন যুদ্ধে অত্যন্ত লাঞ্ছনাদায়ক পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন।
তাহলে, এসকল ছবি সমূহের ইতিকথা কি? আসলে কি আফগানিস্তানে আধুনিকতার নামে বেহায়াপনা বিরাজমান ছিল? উত্তর হচ্ছে, এই ছবিগুলো আফগান নারীদের সামগ্রিক সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি নয়; বরং বৃটেন, আমেরিকা ও রাশিয়ানদের গোলামী করা বিশাল আফগান ভূখন্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশের নমুনা মাত্র।
আফগানের মাটিতে নারীদের বেপর্দা আর বেআব্রু করার নিকৃষ্ট প্রচেষ্টা শুরু হয় বাদশা হাবিবুল্লাহ সময় থেকে। বাদশা হাবিবুল্লাহ ক্ষমতায় আসে এবং সে তার অন্দরমহলে পশ্চিমা পােশাক এর প্রসার ঘটাতে শুরু করে। এরপর ক্ষমতায় আরােহণ করে তার ছেলে বাদশা আমানুল্লাহ। সে ছিল যুবক এবং লিবারেল (উদার) পশ্চিমা বিশ্বাসে প্রভাবিত। সে একবার আশ্চর্যজনকভাবে ইউরােপ সফরে গিয়ে সেখানে ছয় মাস কাটিয়ে দেয়। তখন তার সাথে স্ত্রী আফগানি পােশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু সে উক্ত সফর থেকে ফিরে আসে পশ্চিমা পা খােলা পােশাক পরে। এরপর পশ্চিমা বিশ্বাসে প্রবাহিত বাদশা জিহাদ ও মুজাহিদিনের দেশে পশ্চিমা পােশাক বিস্তার করার জন্য সরকারি বড় বড় আমলাদের মজলিসে তার স্ত্রীকে উড়না খুলে ফেলার আদেশ দেয় এবং পুরুষদের মাঝে মাথা খােলা,বুক উন্মুক্ত অবস্থায় বসে। তখন বাদশা মন্ত্রীদের স্ত্রীদেরকেও এই কাজ করার কথা বলে। আর এভাবেই নারীদেরকে উলঙ্গ করার আন্দোলন এবং তাদেরকে শরয়ি পর্দা থেকে বের করে দেওয়ার কাজ শাসকের অন্দরমহল ও প্রাসাদ থেকেই শুরু হয়। এরপর ক্ষমতায় আসে ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা মুক্তচিন্তায় লালিত বাদশা জহির শাহ। সে ব্যাপকভাবে মহিলাদেরকে বেহায়াপনা করার সুযােগ দিয়ে দেয়। পুরাে দেশে সহশিক্ষা চালু করে এবং চরিত্র ধ্বংসের সমস্ত মাধ্যম ও রাস্তা খুলে দেয়। পুরাে জাতির দ্বীন ধ্বংসের জন্য তারা দেশে দ্বীন (ইসলাম) কে জাতির জন্য আমি মনে করা নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমের বীজ বপন করে। অতঃপর তার উত্তরাধিকারী হয় তার চাচাতাে ভাই (মুহাম্মদ দাউদ), যে একই ধারাবাহিকতায় কার্যক্রম চালিয়ে নিতে থাকে কমিউনিস্টরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে হত্যা করার আগ পর্যন্ত। তখন কমিউনিস্টদের সাথে দেশে সােভিয়েত দখলদাররাও চলে আসে এবং লাল কুকুরদের সামনে দেশের সমস্ত দরজা খুলে যায়, যাতে তারা শহরের নারীদের অন্তরের অবশিষ্ট চরিত্র, দ্বীন, সততা ও লজ্জা-শরমকে ধ্বংস করে দিতে পারে। পরবর্তীতে যখন কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটে এবং জিহাদি দলগুলাে রব্বানীর নেতৃত্বে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তখন রব্বানী প্রশাসন শরিয়ত বাস্তবায়ন ও কমিউনিস্টদের রেখে যাওয়া অসৎ কাজগুলাের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, বরং কমিউনিস্টদের সাথে মিলে ক্ষমতার লোভে অন্যান্য দলগুলাের সাথে বিবাদে লিপ্ত থাকে।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে তালিবানরা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর যখন ক্ষমতায় আরােহণ করে তখন তারা আফগানের শাসন অঙ্গনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন ও ধৃষ্টতার এক ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে পান। পাশাপাশি আফগানের রাষ্ট্রকাঠামোর প্রতিটি অঙ্গনে এবং প্রশাসনের প্রতিটি ধাপে ধাপে দূর্ণীতি, অন্যায় ও জুলুমের চিত্র স্পষ্ট হয় এবং বিশাল আফগানি সমাজকে চরম পর্যায়ের চারিত্রিক অধঃপতনে নিমজ্জিত দেখতে পান। বিদ্যমান এই নষ্টামির প্রতিরােধে তালিবান প্রশাসন তৎকালীন সময়ে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়ােজন অনুভব করেছিলেন। যে সিদ্ধান্ত সমূহ আজকের দিনেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর চেয়ে কম শক্তিশালী কোন কার্যক্রম ব্যতীত এই ব্যাপক অশ্লীলতাকে সংশােধন করা সম্ভব তখনও সম্ভব ছিল না, বর্তমানেও নেই। তাই তালিবান প্রশাসন নিচের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলে।
১) নারীদের শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে আলাদা পরিবেশ,কারিকুলাম,আইন-কানু ও বিল্ডিং তৈরি করা পর্যন্ত তাদের সহশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া। এর উদ্দেশ্য কখনাে নারীদের শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া ছিল না।
২) নারীদেরকে সমস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।
৩) শরিয়তের হুকুম বাস্তবায়ন ও অশ্লীলতার প্রসার বন্ধ করার জন্য পর্দাকে আবশ্যক করে দেয়া।
৪)শরিয়তের হুদুদ বা নির্ধারিত শাস্তিসমূহকে বাস্তবায়ন করা,এর মধ্যে রয়েছে রজম ও চাবুক মারার হদ।
৫) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা। মানুষকে দ্বীনের ব্যাপারে সচেতন করা। আর যারা শুধু নাসিহার মাধ্যমে অশ্লীলতা থেকে ফিরে আসবে না তাদেরকে শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৬) পশ্চিমা সংস্থাগুলাের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের সমস্ত কার্যক্রমের উপর নজরদারি করা।
৭) সন্দেহজনক সংস্থাগুলােকে মিডিয়ার মালিক হওয়া থেকে বিরত রাখা, যাতে করে মানুষের কাছে বিষাক্ত চিন্তাধারা প্রসার করা থেকে বাঁধা দিয়ে সমাজকে রক্ষা করা যায়।
যখন কুফর ও অশ্লীলতার ধারক রাষ্ট্রগুলাে তালেবান প্রশাসনের এই সমস্ত কার্যক্রম দেখলাে এবং বুঝতে পারলাে যে বর্তমান তালেবান প্রশাসনও আগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। যখন তারা নিশ্চিত হয়ে গেল, দ্বীন ও আফগান নারীদের ইজ্জত ও অধিকারের প্রহরী তালেবান প্রশাসন তাদের ভ্রান্ত চিন্তা ও কুফুরি দৃষ্টিভঙ্গি আফগান নারী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে দিবে না। তখন তারা নানা ছল চাতুরি শুরু করল এবং তাদের দাবিতে আফগান নারীদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনার দাবি জানাতে শুরু করল।
পশ্চিমা ক্রুসেডাররা নারীদের জন্য এই সব কিছু এজন্য করছে না যে, তারা নারী অধিকার নিশ্চিত করেতে চায়। বরং তারা আফগানি নারীদেরকে তাদের ঈমানী স্বভাব চরিত্র থেকে বের করার জন্য তা করছে। যাতে করে সে নারীত্বের পবিত্র স্বভাব হারিয়ে ফেলে।
সকলেরই অবগত থাকা উচিত, আফগান নারীরা অনেকাংশেই অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের নারীদের তুলনায় ভিন্ন। এই ভিন্নতার দৃষ্টান্ত হচ্ছে,আফগান নারীরা এখনাে আল্লাহর রহমতে তাদের বিশুদ্ধ ঈমানি স্বভাবের উপর অটল রয়েছেন এবং তাদের চিন্তাধারা পশ্চিমাদের বস্তুবাদী দূষণের দ্বারা দুষিত হয়ে যায়নি৷ তারা আজও পর্যন্ত সবর ও জিহাদের উপর অটল রয়েছেন। এখনাে তারা দৈনিকের খাবারের উপরে ধৈর্য ধরে থাকে এবং তারা অদ্যাবধি পবিত্রতা ও সতীত্বকে অবাধ মেলামেশা ও উলঙ্গপনার ওপর প্রাধান্য দিয়ে আসছে। ফলে এই গুণই তাদেরকে ইসলামি মূলনীতির ভিত্তিতে একটি ঈমানদার প্রজন্ম গড়ে তােলার জন্য প্রস্তুত করেছে, যারা নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে তাদেরকে রক্ষা করছে।
সুতরাং এখানে মূল বিষয় নারীদের অধিকার বা স্বাধীনতা নয়; এমনকি তালেবানের বিরুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধও না। বরং তা হচ্ছে নারী অধিকার আদায়ের নামে ইসলাম ও ঈমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে তালিবানের চিন্তাধারা হচ্ছে সেই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে একজন নারী সম্মানিত মা, স্নেহের বোন, আদরের কন্যা অথবা আনুগত্যশীল স্ত্রী হিসেবে অর্থাৎ সর্ব অবস্থায় নারীরা হচ্ছেন মর্যাদায় আসীন হয়ে থাকেন। তাই তালেবান নেতৃত্বস্থানীয়রা যেভাবে শরীয় আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী অধিকারের পক্ষে যুদ্ধ করছেন, সেভাবেই এক সাধারণ তালেবান মুজাহিদও তার রক্ত ও জীবন বিলিয়ে দিয়ে নারীদের সম্মান ও ইজ্জতের প্রতিরােধ করছেন। তারা কখনােই নারীদেরকে পশ্চিমা শয়তানি শক্তি এবং প্রাচ্যের দাজ্জালি শক্তির হাতে খেলার বস্তুতে পরিণত হওয়াকে সহ্য করবে না।
মূলত শুধু তালেবান মুজাহিদনরা কেন, বরং সেসকল ব্যাক্তি নারীদের স্বাধীনতা এবং নারীদের দ্বীনি অধিকার সংরক্ষণের বাস্তবিক শক্তি, যারা তাদেরকে পশ্চিমা পাপাচারী নেকড়েদের হাত থেকে রক্ষা করছেন।
আল্লাহ্ আমাদের তালেবান ভাইদের কুরবানীগুলো বুঝায় তওফিক দান করুন। আমেরিকান তথা পশ্চিমাদের সামরিক আগ্রাসন ও নির্যাতন যেভাবে আমাদের নিকট স্পষ্ট, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও প্রপাগাণ্ডামূলক আগ্রাসন আমাদের বুঝার এবং প্রতিরোধ করার তওফিক দান করুন। আমিন..
সহায়ক আর্টিকেলঃالد عانم الا ساسيت لفكر طا لبان (তালিবানের চিন্তাধারার মৌলিক ভিত্তি)
লেখকঃ আলিম শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব কাবুলি (রাহিঃ)
আগ্রাসী আমেরিকানরা আশা করেছিল তাদের সৈন্য প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু হলে, তালেবান মুজাহিদরাও গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ দখলের কার্যক্রম শুরু করবেন। এতে প্রচণ্ড যুদ্ধ ও ব্যাপক রক্তপাত হবে যা, আফগান মুজাহিদদেরকে বিতর্কিত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিশ্বের সেরা সেরা জেনারেল, বড় বড় যুদ্ধ বিশ্লেষকদের অবাক করে দিয়ে অতি দ্রুততার সাথে এবং কল্পনাতীত কম রক্তপাতে আফগানের গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ ও প্রাদেশিক রাজধানী সমূহ দখলের মাধ্যমে মুজাহিদীনরা আমেরিকানদের এই আশা সম্পূর্ণরূপে ম্লান করে দেন।
তাছাড়া, শত্রুপক্ষের সকলের মনে করেছিল অন্ততপক্ষে কাবুল বিজয়ের সময় ভয়ঙ্কর কিছু যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হবে সারা বিশ্বের মানুষ। ১৯৯৬ -এ মুরতাদ নাজিবুল্লাহ'কে হত্যার মত বর্তমান নেতৃস্থানীয়দের হত্যা করা হবে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে রক্তপাতহীন কাবুল বিজয় ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে পশ্চিমা কুফফারদের গালে প্রচন্ড চপেটাঘাত করেন তালেবান নেতৃস্থানীয়রা। পোপ থেকে শুরু করে জাতিসংঘ; সেক্যুলার মিডিয়া থেকে শুরু করে আমেরিকান জোট রাষ্ট্র সকলেই নিশ্চুপ হয়ে যায়। সকলের চোখে মুখে একই প্রশ্ন, "এই কি হলো?"।
কিন্তু কাফেররা ইসলামের চির শত্রু। তারা পদে পদে লাঞ্চিত হওয়ার পরও তাদের প্রোপাগান্ডা স্থগিত রাখেনি। আর এই ক্ষেত্রে তারা যে অস্ত্রটি বার বার ব্যবহার করেছে তা হলো "নারী অধিকার"। নারীদের পর্দা সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও তাফসীর সম্মানিত আলেমদের আলোচনা ও দারসের মাধ্যমে সকলের কাছেই পরিষ্কার। নারীশিক্ষা, তাদের কর্মজীবন ও ব্যাবসা সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল নিয়েও যঠেষ্ট(যথেষ্ট) আলোচনা হয়েছে। তাই শরীয়(শরয়ী) বিধানের পাশাপাশি বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার আলোকে নারীর অধিকার নিয়ে বিশেষ করে আফগান নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জাতি, গোত্র, দেশ ভেদে মানুষের কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কিছু নিজস্বতা রয়েছে। সক্রিয়তা রয়েছে তাদের ভাষা, আচরণে, পোশাকে চিন্তা-চেতনায়। তাই আমেরিকার নারীরা স্বাধীনতা মানে বেহায়াপনা, লজ্জাহীনতা ও সহকর্মীদের কাছে শারিরীক অপদস্থতাকে মনে করলেও; তা কিন্তু সারা বিশ্বের নারীদের স্বাধীনতার মানদন্ড নয়। আমেরিকা বা পশ্চিমা নারীদের স্বাধীনতা মানদন্ড থেকে আফগানি নারীদের স্বাধীনতা মানদণ্ড সম্পূর্ণ আলাদা। আফগান নারীরা স্বাধীনতা বলতে বুঝেন ইমানদ্বারিতা, লজ্জাশীলতা, পর্দাশীলতা, স্বামীর সহযোগী, সন্তান পালনকারী মা হিসেবে সম্মানিত হওয়াকে। তাই আফগান নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার আগে অবশ্যই তাদের প্রকৃত স্বাধীনতা আর অধিকার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে।
ঠিক যেমটা তালিবানদের একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল আলিম শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব কাবুলি (রাহিঃ) الد عانم الا ساسيت لفكر طا لبان অর্থাৎ “তালিবানের চিন্তাধারার মৌলিক ভিত্তি” শিরােনামে একটি ধারাবাহিক আর্টিকেলে আফগান নারীদের প্রতি আমেরিকান ও তার মিত্র শক্তির নিকৃষ্ট দৃষ্টিকোণের প্রসঙ্গে লিখেছেন, "যেহেতু পশ্চিমা ক্রুসেডাররা তাদের নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার কারণে পূর্ণ ইসলামকেই বিরােধীতা করে, তাই এটি কোনাে আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, তারা নারীদের সফলতা বা বিফলতার ক্ষেত্রে তালিবানের মূলনীতিরও বিরােধিতা করবে। পশ্চিমাদের চিন্তায় সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে, তারা বস্তুবাদী লিবারেল (মুক্তচিন্তা) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আফগান নারীদের যাচাই করে। যদি তারা আফগানি মহিলাদেরকে তাদের দ্বীন, সামাজিক অবস্থান, শরিয়তের পক্ষ থেকে চারিত্রিক ও সাংস্কৃতিক কর্তব্য ও তাঁর জাতির সভ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখত, তাহলে আফগান মুমিন নারীদের ব্যাপারে তাদের মাথায় এরকম নষ্ট চিন্তা আসতাে না। "
সুতরাং যারা আফগান নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকারের কথা বলেন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে আফগান নারীদের পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পর্দাশীলতার প্রসার করা। দ্বিতীয়ত, দ্বীনি ইলম, তরবিয়ত ও আমলের পরিবেশ তৈরী করা; এবং বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলের সাথে একই সারিতে জিহাদ, সবর, হিজরত ও যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের সহযোগী হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু নারী স্বাধীনতার ফেরিওয়ালা আমেরিকা ও তাদের নোংরা দাজ্জালি মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে নারীদের উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনায় বাধ্য করা এবং আইন ও বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে নারীদের দ্বীনের বিধান থেকে বের করে তাদের প্রকৃত অবস্থান পরিবর্তন ঘটানো।
কাবুল পতনের পর থেকে নেট জগতে ও দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রে কমিউনিস্ট শাসন আমলের সময়কালীন আফগান নারীদের কিছু ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। সে সকল ছবিতে খোলামেলা পোশাকে অফিসগামী আফগান নারীদের দেখানো হচ্ছে। আরও দেখানো হচ্ছে স্কুলের প্যারেড ও রাজনৈতিক র*্যালিতে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া আফগানি নারীদেরকে। যা পশ্চিমাদের আদর্শ নারী স্বাধীনতা প্রতিচ্ছবি। এই ছবিগুলোর মাধ্যমে একদিকে যেমন সাধারণ মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে; অন্যদিকে বিজয়ী তালেবানদের চিন্তাধারাকে অপমানিত ও বিতর্কিত করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে কাফেরেরা চক্রান্ত করে বিগত ১০০ বছর যাবৎ মুসলমানদের সমরবিদ্যা, অস্ত্রবিদ্যা ও রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখলেও, বর্তমান প্রজন্মকে তো ইতিহাসের শিক্ষা থেকেও অনেক দূরে সরিয়ে ফেলেছে। কারন ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্য জ্ঞান রাখেন তারাও জানেন আফগান নারীদের ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীনতা জগদ্বিখ্যাত। তারা উম্মুল মুমিনীন ও সদ্দচরিত্র মুজাহিদীন নারীদের যোগ্য অনুসারী। তারা এমন প্রজন্মদের জন্ম দিয়েছেন যারা বিগত দুই শতাব্দী যাবৎ ইংরেজি, রাশিয়ান, আমেরিকান, ইউরোপ ও কাফেরদের জোট শক্তি ন্যাটো ও জাতিসংঘের মতো আগ্রাসী শক্তিকে বিভিন্ন যুদ্ধে অত্যন্ত লাঞ্ছনাদায়ক পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন।
তাহলে, এসকল ছবি সমূহের ইতিকথা কি? আসলে কি আফগানিস্তানে আধুনিকতার নামে বেহায়াপনা বিরাজমান ছিল? উত্তর হচ্ছে, এই ছবিগুলো আফগান নারীদের সামগ্রিক সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি নয়; বরং বৃটেন, আমেরিকা ও রাশিয়ানদের গোলামী করা বিশাল আফগান ভূখন্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশের নমুনা মাত্র।
আফগানের মাটিতে নারীদের বেপর্দা আর বেআব্রু করার নিকৃষ্ট প্রচেষ্টা শুরু হয় বাদশা হাবিবুল্লাহ সময় থেকে। বাদশা হাবিবুল্লাহ ক্ষমতায় আসে এবং সে তার অন্দরমহলে পশ্চিমা পােশাক এর প্রসার ঘটাতে শুরু করে। এরপর ক্ষমতায় আরােহণ করে তার ছেলে বাদশা আমানুল্লাহ। সে ছিল যুবক এবং লিবারেল (উদার) পশ্চিমা বিশ্বাসে প্রভাবিত। সে একবার আশ্চর্যজনকভাবে ইউরােপ সফরে গিয়ে সেখানে ছয় মাস কাটিয়ে দেয়। তখন তার সাথে স্ত্রী আফগানি পােশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু সে উক্ত সফর থেকে ফিরে আসে পশ্চিমা পা খােলা পােশাক পরে। এরপর পশ্চিমা বিশ্বাসে প্রবাহিত বাদশা জিহাদ ও মুজাহিদিনের দেশে পশ্চিমা পােশাক বিস্তার করার জন্য সরকারি বড় বড় আমলাদের মজলিসে তার স্ত্রীকে উড়না খুলে ফেলার আদেশ দেয় এবং পুরুষদের মাঝে মাথা খােলা,বুক উন্মুক্ত অবস্থায় বসে। তখন বাদশা মন্ত্রীদের স্ত্রীদেরকেও এই কাজ করার কথা বলে। আর এভাবেই নারীদেরকে উলঙ্গ করার আন্দোলন এবং তাদেরকে শরয়ি পর্দা থেকে বের করে দেওয়ার কাজ শাসকের অন্দরমহল ও প্রাসাদ থেকেই শুরু হয়। এরপর ক্ষমতায় আসে ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা মুক্তচিন্তায় লালিত বাদশা জহির শাহ। সে ব্যাপকভাবে মহিলাদেরকে বেহায়াপনা করার সুযােগ দিয়ে দেয়। পুরাে দেশে সহশিক্ষা চালু করে এবং চরিত্র ধ্বংসের সমস্ত মাধ্যম ও রাস্তা খুলে দেয়। পুরাে জাতির দ্বীন ধ্বংসের জন্য তারা দেশে দ্বীন (ইসলাম) কে জাতির জন্য আমি মনে করা নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমের বীজ বপন করে। অতঃপর তার উত্তরাধিকারী হয় তার চাচাতাে ভাই (মুহাম্মদ দাউদ), যে একই ধারাবাহিকতায় কার্যক্রম চালিয়ে নিতে থাকে কমিউনিস্টরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে হত্যা করার আগ পর্যন্ত। তখন কমিউনিস্টদের সাথে দেশে সােভিয়েত দখলদাররাও চলে আসে এবং লাল কুকুরদের সামনে দেশের সমস্ত দরজা খুলে যায়, যাতে তারা শহরের নারীদের অন্তরের অবশিষ্ট চরিত্র, দ্বীন, সততা ও লজ্জা-শরমকে ধ্বংস করে দিতে পারে। পরবর্তীতে যখন কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটে এবং জিহাদি দলগুলাে রব্বানীর নেতৃত্বে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তখন রব্বানী প্রশাসন শরিয়ত বাস্তবায়ন ও কমিউনিস্টদের রেখে যাওয়া অসৎ কাজগুলাের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, বরং কমিউনিস্টদের সাথে মিলে ক্ষমতার লোভে অন্যান্য দলগুলাের সাথে বিবাদে লিপ্ত থাকে।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে তালিবানরা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর যখন ক্ষমতায় আরােহণ করে তখন তারা আফগানের শাসন অঙ্গনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন ও ধৃষ্টতার এক ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে পান। পাশাপাশি আফগানের রাষ্ট্রকাঠামোর প্রতিটি অঙ্গনে এবং প্রশাসনের প্রতিটি ধাপে ধাপে দূর্ণীতি, অন্যায় ও জুলুমের চিত্র স্পষ্ট হয় এবং বিশাল আফগানি সমাজকে চরম পর্যায়ের চারিত্রিক অধঃপতনে নিমজ্জিত দেখতে পান। বিদ্যমান এই নষ্টামির প্রতিরােধে তালিবান প্রশাসন তৎকালীন সময়ে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়ােজন অনুভব করেছিলেন। যে সিদ্ধান্ত সমূহ আজকের দিনেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর চেয়ে কম শক্তিশালী কোন কার্যক্রম ব্যতীত এই ব্যাপক অশ্লীলতাকে সংশােধন করা সম্ভব তখনও সম্ভব ছিল না, বর্তমানেও নেই। তাই তালিবান প্রশাসন নিচের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলে।
১) নারীদের শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে আলাদা পরিবেশ,কারিকুলাম,আইন-কানু ও বিল্ডিং তৈরি করা পর্যন্ত তাদের সহশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া। এর উদ্দেশ্য কখনাে নারীদের শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া ছিল না।
২) নারীদেরকে সমস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।
৩) শরিয়তের হুকুম বাস্তবায়ন ও অশ্লীলতার প্রসার বন্ধ করার জন্য পর্দাকে আবশ্যক করে দেয়া।
৪)শরিয়তের হুদুদ বা নির্ধারিত শাস্তিসমূহকে বাস্তবায়ন করা,এর মধ্যে রয়েছে রজম ও চাবুক মারার হদ।
৫) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা। মানুষকে দ্বীনের ব্যাপারে সচেতন করা। আর যারা শুধু নাসিহার মাধ্যমে অশ্লীলতা থেকে ফিরে আসবে না তাদেরকে শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৬) পশ্চিমা সংস্থাগুলাের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের সমস্ত কার্যক্রমের উপর নজরদারি করা।
৭) সন্দেহজনক সংস্থাগুলােকে মিডিয়ার মালিক হওয়া থেকে বিরত রাখা, যাতে করে মানুষের কাছে বিষাক্ত চিন্তাধারা প্রসার করা থেকে বাঁধা দিয়ে সমাজকে রক্ষা করা যায়।
যখন কুফর ও অশ্লীলতার ধারক রাষ্ট্রগুলাে তালেবান প্রশাসনের এই সমস্ত কার্যক্রম দেখলাে এবং বুঝতে পারলাে যে বর্তমান তালেবান প্রশাসনও আগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। যখন তারা নিশ্চিত হয়ে গেল, দ্বীন ও আফগান নারীদের ইজ্জত ও অধিকারের প্রহরী তালেবান প্রশাসন তাদের ভ্রান্ত চিন্তা ও কুফুরি দৃষ্টিভঙ্গি আফগান নারী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে দিবে না। তখন তারা নানা ছল চাতুরি শুরু করল এবং তাদের দাবিতে আফগান নারীদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনার দাবি জানাতে শুরু করল।
পশ্চিমা ক্রুসেডাররা নারীদের জন্য এই সব কিছু এজন্য করছে না যে, তারা নারী অধিকার নিশ্চিত করেতে চায়। বরং তারা আফগানি নারীদেরকে তাদের ঈমানী স্বভাব চরিত্র থেকে বের করার জন্য তা করছে। যাতে করে সে নারীত্বের পবিত্র স্বভাব হারিয়ে ফেলে।
সকলেরই অবগত থাকা উচিত, আফগান নারীরা অনেকাংশেই অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের নারীদের তুলনায় ভিন্ন। এই ভিন্নতার দৃষ্টান্ত হচ্ছে,আফগান নারীরা এখনাে আল্লাহর রহমতে তাদের বিশুদ্ধ ঈমানি স্বভাবের উপর অটল রয়েছেন এবং তাদের চিন্তাধারা পশ্চিমাদের বস্তুবাদী দূষণের দ্বারা দুষিত হয়ে যায়নি৷ তারা আজও পর্যন্ত সবর ও জিহাদের উপর অটল রয়েছেন। এখনাে তারা দৈনিকের খাবারের উপরে ধৈর্য ধরে থাকে এবং তারা অদ্যাবধি পবিত্রতা ও সতীত্বকে অবাধ মেলামেশা ও উলঙ্গপনার ওপর প্রাধান্য দিয়ে আসছে। ফলে এই গুণই তাদেরকে ইসলামি মূলনীতির ভিত্তিতে একটি ঈমানদার প্রজন্ম গড়ে তােলার জন্য প্রস্তুত করেছে, যারা নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে তাদেরকে রক্ষা করছে।
সুতরাং এখানে মূল বিষয় নারীদের অধিকার বা স্বাধীনতা নয়; এমনকি তালেবানের বিরুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধও না। বরং তা হচ্ছে নারী অধিকার আদায়ের নামে ইসলাম ও ঈমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে তালিবানের চিন্তাধারা হচ্ছে সেই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে একজন নারী সম্মানিত মা, স্নেহের বোন, আদরের কন্যা অথবা আনুগত্যশীল স্ত্রী হিসেবে অর্থাৎ সর্ব অবস্থায় নারীরা হচ্ছেন মর্যাদায় আসীন হয়ে থাকেন। তাই তালেবান নেতৃত্বস্থানীয়রা যেভাবে শরীয় আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী অধিকারের পক্ষে যুদ্ধ করছেন, সেভাবেই এক সাধারণ তালেবান মুজাহিদও তার রক্ত ও জীবন বিলিয়ে দিয়ে নারীদের সম্মান ও ইজ্জতের প্রতিরােধ করছেন। তারা কখনােই নারীদেরকে পশ্চিমা শয়তানি শক্তি এবং প্রাচ্যের দাজ্জালি শক্তির হাতে খেলার বস্তুতে পরিণত হওয়াকে সহ্য করবে না।
মূলত শুধু তালেবান মুজাহিদনরা কেন, বরং সেসকল ব্যাক্তি নারীদের স্বাধীনতা এবং নারীদের দ্বীনি অধিকার সংরক্ষণের বাস্তবিক শক্তি, যারা তাদেরকে পশ্চিমা পাপাচারী নেকড়েদের হাত থেকে রক্ষা করছেন।
আল্লাহ্ আমাদের তালেবান ভাইদের কুরবানীগুলো বুঝায় তওফিক দান করুন। আমেরিকান তথা পশ্চিমাদের সামরিক আগ্রাসন ও নির্যাতন যেভাবে আমাদের নিকট স্পষ্ট, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও প্রপাগাণ্ডামূলক আগ্রাসন আমাদের বুঝার এবং প্রতিরোধ করার তওফিক দান করুন। আমিন..
وَءَاخِرُ دَعْوَىٰهُمْ أَنِ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
আবু দানিয়াল উসামা
তারিখঃ ০২ সফর, ১৪৪৩ হিজরি।।
তারিখঃ ০২ সফর, ১৪৪৩ হিজরি।।
সহায়ক আর্টিকেলঃالد عانم الا ساسيت لفكر طا لبان (তালিবানের চিন্তাধারার মৌলিক ভিত্তি)
লেখকঃ আলিম শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব কাবুলি (রাহিঃ)
Comment