তালেবানের সিয়াসি বিষয়াশয়ে সংশয়ে পড়া ভাইদের প্রতি!
আল্লাহ তাআলার রহমতে আমাদের তালেবান ভাইয়েরা কুফরি জোটকে পরাস্ত করে আবার আফগানিস্তানে শরীয়াহর শাসন ফিরিয়ে এনেছেন। ক্ষমতা হাতে আসে পর থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে তাদের আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে বয়ান-বিবৃতি দিতে হচ্ছে।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ, শত্রুর চোখে ধূলো দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি এবং আন্তর্জাতিক কূট-কৌশল সম্পর্কে যারা ভালভাবে অবগত নই- তালেবানদের কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। দোহা চুক্তির সময় থেকেই এমনটা চলে আসছে। সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক এ ধরনের বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে তালেবানদের সমালোচনা এমনকি তাকফির পর্যন্ত করছে। আসল বিষয়টা হলো, তালেবানরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা সেটি উপলব্ধি করতে পারছি না এবং তখনকার সময়ে শরীয়াহর বিধান সম্পর্কেও আমরা অবগত নই।
একটি প্রশ্ন: যদি আপনার সাক্ষাতকার নেয়া হয়
আচ্ছা, ভাইদের আমি একটা প্রশ্ন করি, আজ যদি কোনো মিডিয়া আপনার সাক্ষাতকার নিতে আসে, আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনি জঙ্গি কিনা এবং জঙ্গিবাদ সমর্থন করেন কি’না? আলকায়েদা তালেবানের ব্যাপারে আপনার কি দৃষ্টিভঙ্গি?
মুহতারাম ভাই, আপনি বুকে হাত রেখে বলুন, আপনি কি জওয়াব দিতে পারবেন: আমি জঙ্গি! আমি জঙ্গিবাদ সমর্থন করি! আমি আলকায়েদা তালেবান সমর্থন করি!
পারবেন না। আপনি তখন এমনভাবে কথা ঘুরিয়ে বলতে চেষ্টা করবেন, যেন আপনি জেলের ভাত খাওয়া থেকেও বেঁচে যান, আবার আপনার কথাগুলো সম্পূর্ণ শরীয়তের খেলাফও না হয়। আপনার কোনো জঙ্গি সাথী যদি জিজ্ঞেস করে যে, ভাই আপনি মিডিয়ার সামনে জিহাদের ব্যাপারে উল্টো কথা বললেন?! তখন আপনি ব্যাখ্যা করে বুঝাবেন যে, আসলে আমি উল্টো বলিনি। তবে জান বাঁচানোর জন্য তখন কথাটা ঘুরিয়ে বলা ছাড়া কোনো পথ ছিল না।
মুহতারাম ভাই, তালেবানের বিষয়টা এভাবে উপলব্ধি করুন। তারা আসলে শরীয়তের খেলাফ বলেন না, তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে কথা ঘুরিয়ে বলতে হয়। যদি সিয়াসাহ এবং শরীয়াহর ইলম আপনার থাকতো, তাহলে তালেবানদের প্রকৃত উদ্দেশ্য আপনি বুঝতে পারতেন। বুঝতে পারতেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘুরিয়ে কথা বলা শরীয়াহ পরিপন্থী না।
যুদ্ধ কৌশলের নাম
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
الحرب خدعة. –صحيح البخاري: 2866
যুদ্ধ হচ্ছে কৌশলের নাম। -সহীহ বুখারি ২৮৬৬
যুদ্ধ হচ্ছে কৌশলের নাম। -সহীহ বুখারি ২৮৬৬
অর্থাৎ যুদ্ধের জয় পরাজয় নির্ভর করে কৌশলের উপর। কোনো একটা কৌশল ব্যর্থ হলে আপনার বিশাল সামরিক শক্তি ভেস্তে যেতে পারে। আবার কোনো একটা কৌশল সফল হলে সীমিত শক্তিতেও জিততে পারেন।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) বলেন,
وأصل الخدع إظهار أمر وإضمار خلافه. ... قال بن العربي الخداع في الحرب يقع بالتعريض وبالكمين ونحو ذلك .وفي الحديث الإشارة إلى استعمال الرأي في الحرب بل الاحتياج إليه آكد من الشجاعة. ... قال بن المنير معنى الحرب خدعة أي الحرب الجيدة لصاحبها الكاملة في مقصودها إنما هي المخادعة لا المواجهة وذلك لخطر المواجهة وحصول الظفر مع المخادعة بغير خطر. -فتح الباري لابن حجر (6/ 158)
কৌশল (الخدع) এর মূল অর্থ হচ্ছে, ‘দেখাবে এক রকম ভিতরে থাকবে উল্টো।’ … ইবনে আরাবি রহ. বলেন, যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন হতে পারে ঘুরিয়ে কথা বলা, গোপন জায়গায় কোনো বাহিনি বসিয়ে রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে। এ হাদিস এ দিকে ইঙ্গিত করছে যে, যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বরং বীরত্বের চেয়ে কৌশলের দরকার বেশি। … ইবনুল মুনায়্যির রহ. বলেন, ‘যুদ্ধ কৌশলের নাম’- এর অর্থ হচ্ছে, যুদ্ধের সুফল ও পূর্ণ উদ্দেশ্য হাসিল করার মাধ্যম হচ্ছে কৌশল; সম্মুখ মারামারি নয়। কারণ, সম্মুখ মারামারির বিষয়টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পক্ষান্তরে কৌশলের মাধ্যমে কোনো ঝুঁকি ছাড়াই উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে। -ফাতহুল বারি ৬/১৫৮
কৌশল (الخدع) এর মূল অর্থ হচ্ছে, ‘দেখাবে এক রকম ভিতরে থাকবে উল্টো।’ … ইবনে আরাবি রহ. বলেন, যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন হতে পারে ঘুরিয়ে কথা বলা, গোপন জায়গায় কোনো বাহিনি বসিয়ে রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে। এ হাদিস এ দিকে ইঙ্গিত করছে যে, যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বরং বীরত্বের চেয়ে কৌশলের দরকার বেশি। … ইবনুল মুনায়্যির রহ. বলেন, ‘যুদ্ধ কৌশলের নাম’- এর অর্থ হচ্ছে, যুদ্ধের সুফল ও পূর্ণ উদ্দেশ্য হাসিল করার মাধ্যম হচ্ছে কৌশল; সম্মুখ মারামারি নয়। কারণ, সম্মুখ মারামারির বিষয়টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পক্ষান্তরে কৌশলের মাধ্যমে কোনো ঝুঁকি ছাড়াই উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে। -ফাতহুল বারি ৬/১৫৮
অন্য হাদিসে এসেছে,
لم يكن رسول الله صلى الله عليه و سلم يريد غزوة إلا ورى بغيرها. –صحيح البخاري: 2787
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, তিনি কোনো যুদ্ধের ইরাদা করলে (সেটির কথা না বলে তাওরিয়া করে) অন্যটির দিকে ইঙ্গিত করতেন। -সহীহ বুখারি ২৭৮৭
যেমন ধরুন উদ্দেশ্য মক্কা। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামকে খায়বারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে, সেখানকার হাল কি? প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন? রাস্তা-ঘাটের কি অবস্থা? ইত্যাদি। এতে সকলেই মনে করবেন তিনি খায়বারে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আসলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মক্কার জন্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, তিনি কোনো যুদ্ধের ইরাদা করলে (সেটির কথা না বলে তাওরিয়া করে) অন্যটির দিকে ইঙ্গিত করতেন। -সহীহ বুখারি ২৭৮৭
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন,
والتورية أن يذكر لفظا يحتمل معنيين أحدهما أقرب من الآخر فيوهم إرادة القريب وهو يريد البعيد. -فتح الباري لابن حجر (8/ 117)
তাওরিয়া হচ্ছে, এমন একটি শব্দ বলবেন যার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী দু’টি অর্থ রয়েছে। বাহ্যত দেখাবেন তিনি কাছের (ও সকলে যে) অর্থটি (বুঝে সেটি) উদ্দেশ্য নিচ্ছেন, কিন্তু আসলে উদ্দেশ্য দূরবর্তীটি। -ফাতহুল বারি ৮/১১৭
তাওরিয়া হচ্ছে, এমন একটি শব্দ বলবেন যার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী দু’টি অর্থ রয়েছে। বাহ্যত দেখাবেন তিনি কাছের (ও সকলে যে) অর্থটি (বুঝে সেটি) উদ্দেশ্য নিচ্ছেন, কিন্তু আসলে উদ্দেশ্য দূরবর্তীটি। -ফাতহুল বারি ৮/১১৭
ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
واعلم أن المعاريض كما تكون بالقول فقد تكون بالفعل وقد تكون بهما. الفتاوى الكبرى لابن تيمية (6/ 125)
জেনে রাখ, তাওরিয়া কথার মাধ্যমে যেমন হতে পারে, কাজের মাধ্যমেও হতে পারে। কখনও উভয়টির মাধ্যমেও হতে পারে। -আলফাতাওয়াল কুবরা ৬/১২৫
জেনে রাখ, তাওরিয়া কথার মাধ্যমে যেমন হতে পারে, কাজের মাধ্যমেও হতে পারে। কখনও উভয়টির মাধ্যমেও হতে পারে। -আলফাতাওয়াল কুবরা ৬/১২৫
অর্থাৎ এমন একটি কাজ করলেন, যাকে সবাই একভাবে বুঝছেন, কিন্তু উদ্দেশ্য অন্য রকম, যে উদ্দেশ্যটি প্রথম দৃষ্টিতে সাধারণের বুঝের উর্ধ্বে।
তো এই যে কৌশল, এই যে ঘুরিয়ে কথা বলা, ভিতরে একটা লুকিয়ে রেখে আরেকটা প্রকাশ করা, এমন কোনো কাজ করা যেটি দশজন যেভাবে ব্যাখ্যা করছেন উদ্দেশ্য তার বিপরীত- এগুলো হলো যুদ্ধের মগজ। যারা এসব বিষয়ে যত বেশি পারদর্শী, জয় তাদের পদচুম্বন করবে তত তাড়াতাড়ি।
এটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারা জীবনের সীরাত। এমনটিই ছিল সাহাবায়ে কেরামের সীরাত।
আলী রাদি. তার বাহিনিকে বলেন,
إذا حدثتكم عن رسول الله صلى الله عليه و سلم حديثا فوالله لأن أخر من السماء أحب إلي من أن أكذب عليه وإذا حدثتكم فيما بيني وبينكم فإن الحرب خدعة. - صحيح البخاري : 6531
আমি যখন তোমাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদিস বর্ণনা করি (তখন আমি কোনোরূপ ঘুরানো ব্যতীত পরিষ্কার করে বলবো, তাওরিয়া করবো না। বরং) আকাশ থেকে পড়ে (গিয়ে মারা) যাওয়াও আমার কাছে রাসূলের নামে মিথ্যা বলার চেয়ে অধিক পছন্দের। তবে আমাদের নিজেদের বিষয়াশয়ে যখন কথা বলি (তখন আমি তাওরিয়া করতে পারি, বাহ্যত একটা বলে অন্যটা উদ্দেশ্য নিতে পারি। কারণ) যুদ্ধ হচ্ছে কৌশলের নাম। -সহীহ বুখারি ৬৫৩১
যুদ্ধের ময়দানে আলী রাদি.র দু’টি প্রতিপক্ষ ছিল: এক. মুআবিয়া রাদি. ও তার সমর্থক বাহিনি; দুই. খাওয়ারেজ। আমি যখন তোমাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদিস বর্ণনা করি (তখন আমি কোনোরূপ ঘুরানো ব্যতীত পরিষ্কার করে বলবো, তাওরিয়া করবো না। বরং) আকাশ থেকে পড়ে (গিয়ে মারা) যাওয়াও আমার কাছে রাসূলের নামে মিথ্যা বলার চেয়ে অধিক পছন্দের। তবে আমাদের নিজেদের বিষয়াশয়ে যখন কথা বলি (তখন আমি তাওরিয়া করতে পারি, বাহ্যত একটা বলে অন্যটা উদ্দেশ্য নিতে পারি। কারণ) যুদ্ধ হচ্ছে কৌশলের নাম। -সহীহ বুখারি ৬৫৩১
তিনি কোনো কথা বললে অসম্ভব ছিল না যে, গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তা তার প্রতিপক্ষের কাছে চলে যাবে এবং তার পরিকল্পনা ভণ্ডল হয়ে যাবে। এ জন্য নিজের বাহিনির সাথেও কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক সময় তাওরিয়া করে কথা বলতে পারেন- এটা তিনি স্বীকার করলেন। তবে যুদ্ধের বিষয়েও বা প্রতিপক্ষের ব্যাপারেও যদি তিনি কোনো হাদিস বর্ণনা করেন, তাহলে তিনি কখনই তাওরিয়া করবেন না। হাদিসে যা এসেছে পরিষ্কার বলবেন।
তাহলে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সীরাত দেখলাম যে, স্বয়ং নিজের লোক এবং ঘনিষ্ট জনদের সামনেও তারা প্রতিপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে তাওরিয়া করতেন। পরিষ্কার করে আসল উদ্দেশ্যটি বলতেন না, যাতে তা শত্রুর কানে পৌঁছে গিয়ে পরিকল্পনা নস্যাৎ না হয়ে যায়।
আপনি কি এটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন যে, সাহাবয়ে কেরামকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বাস করতেন না বিধায় গোপন রাখতেন?
নাউজুবিল্লাহ! কখনই নয়। সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে অধিক আমাতনদার, অধিক বিশ্বস্ত জামাত পৃথিবীর বুকে আর কোনটি আছে?
এখানে অবিশ্বাসের বিষয় নয়, বিষয় হলো স্পষ্ট করে বলে দিলে যেকোনোভাবে তা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে এবং সকল পরিকল্পনা সামান্য ভুলের কারণে নস্যাৎ হতে পারে। হতে পারে তা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে, কিংবা হতে পারে ভুলক্রমে কেউ তা প্রকাশ করে দেবেন।
আমরা দেখেছি, হাতিব বিন আবি বালতাআ রাদি. ফাতহে মক্কার অভিযানটির বিষয়ে জানতেন এবং তাবিল করে তিনি পত্র মারফত তা মক্কার মুশরিকদের নিকট পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। শেষে অহির মাধ্যমে অবগত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৎক্ষণাৎ সারিয়া পাঠিয়ে পত্র উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
তো সাহাবায়ে কেরামের মতো বিশ্বস্ত আমানতদার ব্যক্তিদের তরফ থেকেও যখন ভুলক্রমে হলেও প্রকাশ পেয়ে যাবার আশঙ্কা আছে, তখন অন্যদের ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
তো এই হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সীরাত: কোনোভাবেই আসল তথ্য, আসল মাকসাদ প্রকাশ না করা।
তালেবানের সিয়াসাত প্রসঙ্গ
আমাদের তালেবান ভাইয়েরা চতুর্দিক দিক থেকে কাফের মুরতাদদের দ্বারা বেষ্টিত। তারা যেকোনো ছুতায় ইমারাত ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। কোনো একটি কথাও যদি তাদের হস্তগত হয়, তাহলেও তারা সুযোগ হাতছাড়া করবে না। এমনিতেও তো তারা বারবার সাংবাদিকদের মাধ্যমে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এই সেই প্রশ্ন করিয়ে তথ্য বের করতে চায় যে, তারা জঙ্গি! তারা পশ্চাতগামী! তারা নারীবিদ্বেষী! মানবতাবিরোধী ইত্যাদি। পরিষ্কার কথাগুলোকেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এদিক ওদিক ব্যাখ্যা করে প্রচার করে।
এমন হালতে যদি তারা পরিষ্কার বলেন যে, আমাদের আকিদা হলো, আমরা আমাদের এক ইঞ্চি ভূমিও কোনো কাফের মুরতাদের হাতে রাখবো না! আমরা আজ হোক কাল হোক জিহাদ করে উদ্ধার করবোই! হে ভারত, আমরা অচিরেই তোমাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো! হে চীন, আমরা জিহাদ করে উইঘুরদের ভূমি ফিরিয়ে আনবো!
মুহতারাম ভাই, এভাবে ঘোষণা দিয়ে ইমারা কয়দিন টিকতে পারবে?! এক সাথে সবাইকে শত্রু বানানো শরীয়াহর নিয়ম নয়।
এক্ষেত্রে তারা বাধ্য হয়েই ঘুরিয়ে কথা বলবেন।
কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর আমরা হামলা করবো না- অর্থাৎ আপাতত আমরা করছি না। শক্তি হলে তখন করবো।
ইজরাইল ব্যতীত সকল রাষ্ট্রের সাথে আমরা সুসম্পর্ক চাই- অর্থাৎ আপাতত চাই। শক্তি হলে তখন সম্পর্ক ভেঙে যুদ্ধের ঘোষণা দেব।
মুহতারাম ভাই, এগুলো দুর্বলতার সময়ে জায়েয বরং জরুরী। কুরআন সুন্নাহ ও ফিকহের মুআদাআর বাবগুলোতে একটু চোখ বুলান।
আমরা নারীদের শিক্ষা ও কাজে বারণ করবো না- অর্থাৎ ইসলামী পোশাক পরে ইসলামী নিয়মমতো করতে বাধা নেই। এ শর্তটা কখনও তারা পরিষ্কার বলে, কখনও বলে না। তবে উদ্দেশ্য সব সময় এটিই।
‘আফগান ভূমি কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না’- এ বাক্যটাতে অনেক ভাই বেশি কষ্ট পেয়ে থাকেন।
আসলে ভাই একটু বুঝতে চেষ্টা করুন! তালেবান সব সময় আফগানে কাজ করে, বাহিরে যায় না। বাহিরে কাজ করে আলকায়েদা। বাংলাদেশের আলকায়েদার কি দরকার পড়বে আফগান ভূমি ব্যবহারের? প্রত্যেকে নিজ নিজ ভূমিতে কাজ করবে, আফগানে যাওয়ার তো কোনো দরকার নেই।
এক সময় আফগান; জিহাদের মারকাজ ছিল, কিন্তু এখন সারা দুনিয়াই জিহাদের মারকাজে পরিণত হয়েছে। এখন কাউকে ট্রেনিংয়ের জন্য আফগানে যেতে হবে না। এটা একটা বাস্তব কথা। তালেবান কাজ করবে ভিতরে, তাদের সৈনিক আলকায়েদা কাজ করবে বাহিরে। না তালেবানের বাহিরে যাওয়ার দরকার আছে, না আলকায়েদার আফগানে যাওয়ার দরকার আছে। এটি একটি বাস্তব সত্য। তাহলে কেন ভাই না বুঝে আপনি কষ্ট নিচ্ছেন??
আপনার পরিবারকে কেন জিহাদের দাওয়াত দিচ্ছেন না?
এরপরও যারা তালেবান ভাইদের সমালোচনা করেন, তাদের বলি: মুহতারা ভাই, আপনি কষ্ট নিবেন না। আপনি হয়তো পাঁচ বছর যাবত জিহাদে জড়িত। এ পর্যন্ত অনেককেই হয়তো আপনি দাওয়াত দিয়ে কাজে জড়িয়েছেন। কিন্তু এখনও আপনার পরিবারকে জিহাদের কথাটা বলতে পারেননি। কেনো ভাই? তারা কি আপনার শত্রু? আপনি যে জঙ্গি- এ কথাটা তাদের বললে কি সমস্যা আপনার? তারা কি আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবে? স্বাভাবিক দেবে না। কিন্তু এরপরও কেন আপনার প্রিয় বাবাকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন না, বাবা আমি জঙ্গি, আপনাকেও জঙ্গি হতে হবে।
আপনি ইমাম সাহেব হয়ে থাকলে কেন আপনি মুসল্লিদের পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন না, আপনি জঙ্গি, তাদেরকেও জঙ্গি হতে হবে?
মুহতারাম ভাই, অন্যের বিষয়টাও এভাবেই চিন্তা করুন। একান্ত আপনজনের কাছেও গোপন কথা চলে গেলে তা প্রকাশ হয়ে যাওয়া এবং বিপদ ঘটা অসম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই তখন পরিবার থেকেও গোপন রাখতে হচ্ছে। যতক্ষণ পরিষ্কার বলার মতো অবস্থা তৈয়ার হচ্ছে না, গোপনই রাখতে হচ্ছে। একে যেমন আপনি নাজায়েয বলবেন না, তালেবানের বিষয়টাও এভাবেই চিন্তা করুন।
***
[1] وأصل الخدع إظهار أمر وإضمار خلافه. وفيه التحريض على أخذ الحذر في الحرب والندب إلى خداع الكفار وأن من لم يتيقظ لذلك لم يأمن أن ينعكس الأمر عليه. قال النووي واتفقوا على جواز خداع الكفار في الحرب كيفما أمكن إلا أن يكون فيه نقض عهد أو أمان فلا يجوز. قال بن العربي الخداع في الحرب يقع بالتعريض وبالكمين ونحو ذلك .وفي الحديث الإشارة إلى استعمال الرأي في الحرب بل الاحتياج إليه آكد من الشجاعة ولهذا وقع الاقتصار على ما يشير إليه بهذا الحديث وهو كقوله الحج عرفة قال بن المنير معنى الحرب خدعة أي الحرب الجيدة لصاحبها الكاملة في مقصودها إنما هي المخادعة لا المواجهة وذلك لخطر المواجهة وحصول الظفر مع المخادعة بغير خطر. -فتح الباري لابن حجر (6/ 158)
[4] والمعنى: إذا حدثتكم عن النبي لا أكني ولا أعرض ولا أواري، وإذا حدثتكم عن غيره أفعل هذه الأشياء لأخدع بذلك من يحاربني، فإن الحرب ينقضي أمره بخدعة واحدة. عمدة القاري شرح صحيح البخاري (24/ 86)
(إذا حدثُتكم عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - حديثًا فَلأَنْ أَخِرَّ من السماء) أي أسقط (أَحَبُّ إليَّ من أن اكذبَ عليه) - صلى الله عليه وسلم - ولو على وجه التورية والكناية (وإذا حدثتُكم فيما بيني وبينكم، فإنّما الحَرْبُ خُدْعَةٌ) يمكن أن يكون فيه تورية. بذل المجهود في حل سنن أبي داود (13/ 193) (فلأن أخر من السماء) أي أسقط منها على الأرض فأهلك، وهذا من أشد صور الهلاك (فإن الحرب خدعة) بفتح الخاء وضمها مع سكون الدال، قيل: وبضم الخاء وفتح الدال أيضًا. يعني فيجوز أن أتكلم بالتورية، وأريد خلاف ما يظهر من الكلام. منة المنعم في شرح صحيح مسلم (2/ 136)
[5] قالوا: (ومن السنة إذا أراد غزو طائفة: أن يوري 5 بغيرها تورية لا يشكّ فيها القريب والبعيد، ولا يطّلع على مقصده أحداً من خواصه، ولا غيرهم، إلاّ إن دعت ضرورة إلى ذلك- كما فعل النبي - صلى الله عليه وسلم - في غزوة "تبوك" 6 - بل إن أمكنه: أن يورّي بغيرها ممّا هو- كحالها في القرب والبعد والخوف- فليفعل، ولا يعيّنها ما وجد لكتمانها سبيلاً) 7. أجوبة التسولي عن مسائل الأمير عبد القادر في الجهاد (ص: 233)
[1] وأصل الخدع إظهار أمر وإضمار خلافه. وفيه التحريض على أخذ الحذر في الحرب والندب إلى خداع الكفار وأن من لم يتيقظ لذلك لم يأمن أن ينعكس الأمر عليه. قال النووي واتفقوا على جواز خداع الكفار في الحرب كيفما أمكن إلا أن يكون فيه نقض عهد أو أمان فلا يجوز. قال بن العربي الخداع في الحرب يقع بالتعريض وبالكمين ونحو ذلك .وفي الحديث الإشارة إلى استعمال الرأي في الحرب بل الاحتياج إليه آكد من الشجاعة ولهذا وقع الاقتصار على ما يشير إليه بهذا الحديث وهو كقوله الحج عرفة قال بن المنير معنى الحرب خدعة أي الحرب الجيدة لصاحبها الكاملة في مقصودها إنما هي المخادعة لا المواجهة وذلك لخطر المواجهة وحصول الظفر مع المخادعة بغير خطر. -فتح الباري لابن حجر (6/ 158)
[2] كان رسول الله صلى الله عليه و سلم قلما يريد غزوة يغزوها إلا ورى بغيرها. –صحيح البخاري: 2788
[3] قال ابن الملك: أي: سترها بغيرها، وأظهر أنه يريد بها لما فيه من الحزم وإغفال العدو، والأمن من جاسوس يطلع على ذلك فيخبر به العدو، وتوريته - صلى الله عليه وسلم - كان تعريضا بأن يريد مثلا غزوة مكة، فيسأل الناس عن حال خيبر وكيفية طرقها لا تصريحا بأن يقول: إني أريد غزوة أهل الموضع الفلاني، وهو يريد غيرهم ; لأن هذا كذب غير جائز. مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (6/ 2535)[4] والمعنى: إذا حدثتكم عن النبي لا أكني ولا أعرض ولا أواري، وإذا حدثتكم عن غيره أفعل هذه الأشياء لأخدع بذلك من يحاربني، فإن الحرب ينقضي أمره بخدعة واحدة. عمدة القاري شرح صحيح البخاري (24/ 86)
(إذا حدثُتكم عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - حديثًا فَلأَنْ أَخِرَّ من السماء) أي أسقط (أَحَبُّ إليَّ من أن اكذبَ عليه) - صلى الله عليه وسلم - ولو على وجه التورية والكناية (وإذا حدثتُكم فيما بيني وبينكم، فإنّما الحَرْبُ خُدْعَةٌ) يمكن أن يكون فيه تورية. بذل المجهود في حل سنن أبي داود (13/ 193) (فلأن أخر من السماء) أي أسقط منها على الأرض فأهلك، وهذا من أشد صور الهلاك (فإن الحرب خدعة) بفتح الخاء وضمها مع سكون الدال، قيل: وبضم الخاء وفتح الدال أيضًا. يعني فيجوز أن أتكلم بالتورية، وأريد خلاف ما يظهر من الكلام. منة المنعم في شرح صحيح مسلم (2/ 136)
[5] قالوا: (ومن السنة إذا أراد غزو طائفة: أن يوري 5 بغيرها تورية لا يشكّ فيها القريب والبعيد، ولا يطّلع على مقصده أحداً من خواصه، ولا غيرهم، إلاّ إن دعت ضرورة إلى ذلك- كما فعل النبي - صلى الله عليه وسلم - في غزوة "تبوك" 6 - بل إن أمكنه: أن يورّي بغيرها ممّا هو- كحالها في القرب والبعد والخوف- فليفعل، ولا يعيّنها ما وجد لكتمانها سبيلاً) 7. أجوبة التسولي عن مسائل الأمير عبد القادر في الجهاد (ص: 233)
Comment