আমরা যদি বিগত শতাব্দী থেকে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের সমসাময়িক ইতিহাস দেখি তাহলে দেখতে পাব যে, যে শ্রেণীটা বিপ্লব করেছে তারা সংখ্যায় কম হোক বা বেশী হোক তারা সমাজের মূল ধারার সমস্ত শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা- বিপ্লবের মূল স্তর তথা বিজয়ের আগেই অর্জন করেছিল।
নিজেদের আদর্শের জন্য অথবা বিপ্লবের লক্ষ্য হাসিলের জন্য বিপ্লবী শ্রেণীটি এত বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছে যে সমাজের সর্বস্তরের মানুষই তাদের এই ত্যাগকে এক পর্যায়ে সমর্থন দিতে শুরু করে।
রাশিয়ার জেনারেল কর্নিলভ বলশেভিকদের, বিশেষভাবে লেলিনকে জার্মান চর আখ্যা দিয়ে তার পার্টির উপর দমন-পীড়ন চালায়।
আবার, সোভিয়েত ইউনিয়নের বা আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদে মুজাহিদরা এত বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছেন যে, যার ফলে পরবর্তীতে সময়েও জনগন তাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে এবং ১৯৯৬ সালে ও ২০২১ সালে তালিবানরা ক্ষমতায় আসে।
সুতরাং যে শ্রেণীটি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিবে তাদের জন্য এটা আবশ্যক যে তারা ত্যাগ-তিতিক্ষার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যার মাধ্যমে তাদের আদর্শ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। পরিণামদ, জনসমর্থন ও আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লবের অগ্রবর্তী শ্রেণীটির পক্ষে সম্ভব হবে জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস রচনা করতে।
সর্বশেষ একশত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিপ্লবের ক্ষেত্রে যে সকল শ্রেনীকে নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়- শ্রমিক শ্রেণী, কৃষক শ্রেণী, সেনাবাহিনী ও উলামা-তলাবাগণ।
(১)
আমাদের দেশের ইসলামী আন্দোলনের মাঝে একটা সাধারণ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, তারা কওমী উলামাদের নের্তৃত্বে তালেব ইলম কিংবা 'ঘরোয়া' প্র*্যাক্টিসিং দায়ীদের মাধ্যমে এদেশে একটা বিপ্লব গড়ে তুলবে, ফ্রন্ট চালু হবে।
দ্বীনের প্রতি আন্তরিকতার কারণেই সম্ভবত তাদের ব্যাপারে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু '৪৭ এর পর থেকে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত নির্যাতন-শোষনের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের গণআন্দোলনের সাথে এই শ্রেণীটির সরাসরি কোনো ভূমিকা বা সম্পৃক্ততা নেই।
যার ফলে তাদেরকে বরাবরই সমাজের ব্রাত্য ও নিস্ক্রিয় শ্রেনীই থেকে যেতে হয়। কারণ ইতিহাস কেবল কীর্তিমানদের স্মরণ রাখে, বিচক্ষণদের না। ব্যাক্তিগত ইতিহাস তো ভিন্ন কথা।
এটাই বাস্তবতা যে,
'৫২, '৬২, '৬৯ বা '৭১ এ জাতির গতিপথ নির্ধারনী পরিস্থিতির কোথাও পক্ষে-বিপক্ষে এই মহান শ্রেণিটির কোন সক্রিয়তা তো ছিলই না, কোনো পরিকল্পিত কর্মসূচীও তাদের মস্তিষ্কে জায়গা করতে পারেনি।
'৭১ এর পরও এদেশে বহু ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। মুশরিক ভারত দ্বারা বহু দ্বীন ও দেশবিরোধী কাজ সংগটিত হয়েছে। কিন্তু এই শ্রেণীটি সেসবের বিরুদ্ধে কখনো কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সর্বশেষ কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া অন্তর বিদীর্ণকারী ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের মতিঝিল, ভোলা আর বি.বাড়িয়ারই ধারাবাহিকতা। সামনে এমন ঘটনা আরো ঘটবে এটাও বলা যায়। কেননা, এটা ইতিমধ্যেই একটা ফেনোমেনা বা প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। জনসাধারণের অনবদ্য ভূমিকার ফলে ক্রমান্বয়ে মেরুকরণ তীব্র হচ্ছে।
ইতালীয় দার্শনিক বেনেদিত্তো ক্রোচে বলেন,
"প্রতিটি জাতির এমন কিছু সামাজিক আবেগ আছে, যার মধ্যে জাতিগত বৈশিষ্ট্য সমূহ নির্যাসের আকারে পুরো মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। এবং কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলে সেই আবেগ ফণা মেলে হুংকার দিয়ে উঠে।"
একটু লক্ষ্য করলেই আমরা বুঝতে পারব, ১/২ দিনের গণআক্রোশ আর অল্প কয়েকজনের আত্মত্যাগ, এ দেশের মানুষের কাছে যেভাবে শাসকগোষ্ঠীকে হিন্দুত্ববাদী ও তাগুত হিসেবে চিহ্নিত করেছে; 'সুবিবেচক' দায়ীদের চাতুর্যপূর্ণ দাওয়াত শত বছরেও তা করতে পারেনি।
দ্বীনের তুলনামূলক সঠিক বুঝ ও আবেগ থাকা সত্ত্বেও এই বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ অভিজাত শ্রেনীটি বারবারই নের্তৃত্ব ছেড়ে অনুসরণের পথই বেছে নিয়েছে।
যার ফলে ইসলামের জন্য ফুসে ওঠা এই অসাধারণ ঘটনাকে জাতির ভাগ্য নির্ধারণের অনুকূলে না এনে, সবর, নীরবতা আর হিকমতের ভুল বয়ান দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তুলছেন!
অথচ, আফগানিস্তানের উলামায়ে কেরামের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। উনারা জাতির সমস্যা, সংকট যেমন উপলব্ধি করতে পারতেন, একইভাবে সমাধানের পথ চিহ্নিতকরণ ও অবলম্বনেও দ্রুত অগ্রসর হতেন। এতে মূল্য যা ই দিতে হোক না কেন। যার ফলে দাবী নানারকম হওয়া সত্ত্বেও ফলাফল অন্যরকম প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে!
মোটকথা, এদেশের বাস্তবতায় ইসলামপন্থীদের বিপ্লব কেবল ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত একটি বিশেষ শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল হওয়ার ধারণাটি, বরাবরের ন্যায় ঋনাত্মক ফলাফলই আনতে পারে হয়তো!
আমরা আরো বোঝার চেষ্টা করব, ইসলামপন্থীদের জন্য কেবল উল্লেখিত শ্রেণীটি নয়, বাকি সহায়ক শ্রেণীগুলোর ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য যে,
'সমাজের যে কোনো একটি শ্রেনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে গণবিপ্লব সম্ভব নয়।'
বরং, সফলতার জন্য ব্যাপকভাবে জনসাধারণকে আমাদের দাওয়াত ও উদ্দেশ্যের সাথে একীভূত করা আবশ্যক।
(২)
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ও ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পর, এদেশের শাসনক্ষমতায় সেনাবাহিনীই শক্তির কেন্দ্র হয়ে যায়। পরবর্তী একটা সময় পর্যন্ত সামরিক বাহিনীই এদেশের শক্তির কেন্দ্র হিসেবে ছিল। এরপর ৯০ দশকের শেষ দিকে এরশাদবিরোধী তথা সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
যদিও বাহ্যিকভাবে এরশাদের পতন গণআন্দোলন মনে হয়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনী এরশাদের বিরুদ্ধে চলে যাওয়াটাই তার পতনের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।
১/১১ এবং এর পরবর্তী সময় আওয়ামী গোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পাশাপাশি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ফলে সামরিক বাহিনী পাওয়ার সেন্টার থেকে বিচ্যুত হয়।
পরপর দুইটি নির্বাচনে তাদের 'তাবেদারী' ভূমিকার মাধ্যমে সবার কাছে এই বাহিনীটির আসল চরিত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিও ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদেরা নানান স্বপ্ন দেখেন ও দেখান!
(৩)
সেনাবাহিনীর বিষয়টি স্পস্ট করার পর একথাও বলতে হয় যে,
কৃষক, শ্রমিক, মজুর- এদেকেও বিপ্লবের মূল শ্রেণী হিসেবে গন্য করা যায় না। কারণ এরাও বর্তমানে সমাজের মৌলিক শক্তি নয়। পুঁজিবাদের জয়জয়কার এবং আদর্শিক বামপন্থী রাজনীতির বিলোপ ঘটায় এই শ্রেনীটি সাংস্কৃতিক মান হারিয়ে ফেলেছে এটাই বাস্তবতা। তাই এককভাবে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখতে সম্ভবত তারা আর সক্ষম নয়।
এরা মাঝেমধ্যে যে আন্দোলন করে তা মূলত সরকার বা তাদের দলীয় বাহিনীর গ্রীন সিগনালেই। অথবা সিবিআইয়ের চাদায় চলা ট্রেড ফেডারেশনের নেতাদের স্বার্থে!
আবার, মাও সেতুং কৃষকদের সাথে নিয়ে গ্রাম দখল করে শহর অবরোধের কথা বলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে চারু মজুমদার ও এদেশে সিরাজ শিকদার প্রমুখ মাওবাদীরা কৃষকদের সাথে নিয়ে বিপ্লবের লাইন গ্রহণ করেছিল "গ্রামাঞ্চল দখল করে মুক্তাঞ্চল তৈরি করে শহর অবরোধ"কে কৌশল সাব্যস্ত করেছিল।
এরা উভয়ই বিপ্লবের শ্রেণি হিসেবে কৃষক শ্রেণীকে নির্ধারণ করেছিল। কেন?? কারণ তাদের গুরু মাও সে তুং এই শ্রেণীকে নিয়ে এভাবেই বিপ্লব করেছিল!!
তাই দেখা যায়, এরা এদেশে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল, অথচ তাদের সংগঠনসমূহে কৃষকদের তেমন কোন উপস্থিতিই ছিল না।
চারু মজুমদার যে কৃষকদের পাশে পেয়েছিল, তাদের পরিচয় কৃষকের চেয়েও বেশী চা-শ্রমিক সাওতাল জাতি বলা উচিত।
অন্যদিকে বাংলার কৃষকরা তো সিরাজ শিকদারকে ডাকাত সর্দারই মনে করতো!
মূলত এরা উভয়ই প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে পারেনি। চীনের আন্তঃসামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক অবস্থান, সামন্তবাদি ব্যবস্থা ইত্যাদি লক্ষ্য করলে সহজেই বুঝা যায় যে ওই দেশে কৃষক শ্রেণিটিই ছিল সমাজের বিপ্লবের মূল শ্রেণী শক্তি।
আরো ভালো করে বোঝা দরকার,
তালেবান প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ করেছে, আবার কান্দাহারসহ প্রাদেশিক শহরে স্থানীয় বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করেছে এবং কাবুলে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।
এখন কি এটা বলা যাবে যে,
বিপ্লবের রাজনৈতিক লাইন হল বিদেশী শক্তি হটাতে গেরিলা যুদ্ধ-প্রদেশ দখলে সম্মুখ যুদ্ধ এবং রাজধানীতে সশস্ত্র অবরোধ??
অবশ্যই না!
কারণ এগুলো ছিল রণনীতি। আর এই রণনীতি স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। মূলত এই রণনীতি কেমন হবে সেটা নির্ভর করে, বিপ্লবী দলের রাজনৈতিক লাইন কেমন হবে তার উপর।
এছাড়াও,
আমরা যদি মার্ক্সবাদীদের অবস্থা দেখী তাহলে দেখতে পাব যে, ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনের বিপ্লবে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশী।
একইসাথে সেনা সদস্যরাও ছিল।
তাই আমাদের দেশের একসময়ের মার্ক্সবাদীরাও তাদের বিপ্লবের লাইন হিসেবে গ্রহন করেছে "গণ-অভ্যুত্থান"।
(সমকালীন সময়ে ফরহাদ মজহার এখনো এই তত্ত্বে বিশ্বাসী ও আগ্রহী!)
আর এজন্য তারা শ্রেণী হিসেবে নির্ধারণ করেছিল "শ্রমিক" শ্রেনীকে। তাই তাদের গণসংগঠনও শ্রমিকদেরকে টার্গেট করে বেশী।
কেন? কারণ মূলত লেলিন বিপ্লবে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশী ছিল এবং ওরা বিপ্লবের মূল শ্রেণী হিসেবে কাজ করেছে!!
এক্ষেত্রেও যদি আপনি তৎকালীন সময়ের রাশিয়ার বাস্তবতা দেখেন তাহলে দেখবেন, জারতন্ত্রের পতনের পর ফেব্রুয়ারিতে যে বুর্জোয়া বিপ্লব হয়, ঐ বুর্জোয়ারা সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকদের প্রচুর রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান করে।
তাই পুর্ব থেকেই বিদ্যমান ট্রেড ইউনিয়নগুলো ঐ সময় আরও শক্তি সঞ্চয় করে।
এমনকি সেনা গ্যরিসনসমূহের অভ্যন্তরে সৈনিকরা রাজনৈতিক চর্চা এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার পায়। তাই সেখানে সৈনিকদের সংগঠিত করা সহজ হয়।
কিন্তু এখানে বামপন্থীরা '৭৫ এর পর আর সেনাবাহিনীতে সেই প্রভাবের ছিটেফোটাও ফিরিয়ে আনতে পারেনি। আর শ্রমিক ইউনিয়নের কথা তো আগেই বলা হলো।
মার্ক্সবাদীরা তাদের অধিকাংশ বিষয়ে পরষ্পরবিরোধী অবস্থান নিলেও, তাদের সব গ্রুপ-উপদল নিজেদের লক্ষ্য থেকে ওলামা-তলাবায়ে কেরাম ও দ্বীনদার মুসলিমদেরকে ছেঁটে ফেলার ব্যাপারে একমত ছিল।
তাই তারা এই শ্রেণীটির ওপর শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতন, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কখনো কথা বলেনি। অথচ শোষকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বিভিন্ন কথিত সংখ্যালঘুদের পক্ষে তারা সব সময় সোচ্চার।
এদেশের মার্ক্সবাদীরা ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ও তার অনুসারীদের বাদ দিয়ে তাদের কথিত বিপ্লব করতে চেয়েছিল। ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাই হয়েছে, মুখ থুবড়ে পরে তাদের আন্দোলন!
সবশেষে এই উপসংহারে আসতে হয় যে, ৯২% আবেগপ্রবণ মুসলিমবিশিষ্ট এই ছোট্ট সমতল ভূমিতে সংকট ও সম্ভাবনা উভয়ই বিদ্যমান। যার ফলে ইতিহাস একাধিকবার, এদেশে দুশ বছরের ঘটনাপ্রবাহ দুই দিনে ঘটে যেতে দেখেছে।
আর এমন পরিস্থিতিতে কেবল দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্ষম এবং সাহসী ব্যাক্তিরাই পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে।
তাই উত্তম অবস্থান হয়তো এটাই যে,
বিশুদ্ধ আকিদা ও চিন্তাধারাবিশিষ্ট যোগ্য অগ্রবর্তী বাহিনীর প্রস্তুতের পাশাপাশি, কেবল বিশেষ কোনো শ্রেনীকে অবলম্বন না করে সমাজের সকল শ্রেনী-পেশার মানুষকে আমাদের লক্ষ্যের সাথে একীভূত করা চাই।
তাই! আমাদের উলামা-দাঈসহ প্রত্যেকেরই দায়িত্ব-
ইসলামের জন্য অগ্রসর হওয়া জনতাকে সমন্বিত আন্দোলনে একত্রিত করা এবং ক্রমাগত তাদের সাহায্য সহযোগিতা ও সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা দিতে এগিয়ে আসা!
রাতারাতি একটি আন্দোলন বা সামরিক ক্যুয়ের মাধ্যমে জালিমশাহীর স্থির প্রতিস্থাপন বা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটানো সম্ভব না। বরং, বার বার একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিই পারে চূড়ান্ত পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে, যা আলহামদুলিল্লাহ বারবারই হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।
শুধু দরকার সাহসী ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এমন নের্তৃত্বের, যারা পরিস্থিতিকে ইসলামের অনুকূলে ঘুরিয়ে দিবেন!
এখন বাচাল বুদ্ধিজীবি বা সূফী দরবেশ নয়, প্রয়োজন শুধু জীবনের উপর মৃত্যুকে প্রাধান্য দানকারী নের্তৃত্বশ্রেণী। আল্লাহ তা আলা এই অগ্রবর্তী বাহিনীটিকে প্রস্তুত করে দিন এবং বাকিদের তাদের চেনার ও আনুগত্যের তাওফিক দিন।
সর্বশেষ কিন্তু প্রয়োজনীয় কথা হচ্ছে,
অগ্রবর্তী বাহিনীর সদস্য সংগ্রহ বা তরবিয়তের সুবিধার্থে বিশেষ কোনো শ্রেণীকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আমাদের লক্ষ্যানুযায়ী কার্যকর রাখা আলাদা দুটি বিষয়।
তবে, এও ঠিক যত বেশী শ্রেণী বা মানুষের নিকট পৌছানো সম্ভব অগ্রবর্তী বাহিনী তত বেশী যোগ্যতর ও সক্ষম হবে।
আর আল্লাহ তা আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
নিজেদের আদর্শের জন্য অথবা বিপ্লবের লক্ষ্য হাসিলের জন্য বিপ্লবী শ্রেণীটি এত বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছে যে সমাজের সর্বস্তরের মানুষই তাদের এই ত্যাগকে এক পর্যায়ে সমর্থন দিতে শুরু করে।
রাশিয়ার জেনারেল কর্নিলভ বলশেভিকদের, বিশেষভাবে লেলিনকে জার্মান চর আখ্যা দিয়ে তার পার্টির উপর দমন-পীড়ন চালায়।
আবার, সোভিয়েত ইউনিয়নের বা আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদে মুজাহিদরা এত বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছেন যে, যার ফলে পরবর্তীতে সময়েও জনগন তাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে এবং ১৯৯৬ সালে ও ২০২১ সালে তালিবানরা ক্ষমতায় আসে।
সুতরাং যে শ্রেণীটি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিবে তাদের জন্য এটা আবশ্যক যে তারা ত্যাগ-তিতিক্ষার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যার মাধ্যমে তাদের আদর্শ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। পরিণামদ, জনসমর্থন ও আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লবের অগ্রবর্তী শ্রেণীটির পক্ষে সম্ভব হবে জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস রচনা করতে।
সর্বশেষ একশত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিপ্লবের ক্ষেত্রে যে সকল শ্রেনীকে নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়- শ্রমিক শ্রেণী, কৃষক শ্রেণী, সেনাবাহিনী ও উলামা-তলাবাগণ।
(১)
আমাদের দেশের ইসলামী আন্দোলনের মাঝে একটা সাধারণ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, তারা কওমী উলামাদের নের্তৃত্বে তালেব ইলম কিংবা 'ঘরোয়া' প্র*্যাক্টিসিং দায়ীদের মাধ্যমে এদেশে একটা বিপ্লব গড়ে তুলবে, ফ্রন্ট চালু হবে।
দ্বীনের প্রতি আন্তরিকতার কারণেই সম্ভবত তাদের ব্যাপারে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু '৪৭ এর পর থেকে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত নির্যাতন-শোষনের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের গণআন্দোলনের সাথে এই শ্রেণীটির সরাসরি কোনো ভূমিকা বা সম্পৃক্ততা নেই।
যার ফলে তাদেরকে বরাবরই সমাজের ব্রাত্য ও নিস্ক্রিয় শ্রেনীই থেকে যেতে হয়। কারণ ইতিহাস কেবল কীর্তিমানদের স্মরণ রাখে, বিচক্ষণদের না। ব্যাক্তিগত ইতিহাস তো ভিন্ন কথা।
এটাই বাস্তবতা যে,
'৫২, '৬২, '৬৯ বা '৭১ এ জাতির গতিপথ নির্ধারনী পরিস্থিতির কোথাও পক্ষে-বিপক্ষে এই মহান শ্রেণিটির কোন সক্রিয়তা তো ছিলই না, কোনো পরিকল্পিত কর্মসূচীও তাদের মস্তিষ্কে জায়গা করতে পারেনি।
'৭১ এর পরও এদেশে বহু ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। মুশরিক ভারত দ্বারা বহু দ্বীন ও দেশবিরোধী কাজ সংগটিত হয়েছে। কিন্তু এই শ্রেণীটি সেসবের বিরুদ্ধে কখনো কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সর্বশেষ কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া অন্তর বিদীর্ণকারী ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের মতিঝিল, ভোলা আর বি.বাড়িয়ারই ধারাবাহিকতা। সামনে এমন ঘটনা আরো ঘটবে এটাও বলা যায়। কেননা, এটা ইতিমধ্যেই একটা ফেনোমেনা বা প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। জনসাধারণের অনবদ্য ভূমিকার ফলে ক্রমান্বয়ে মেরুকরণ তীব্র হচ্ছে।
ইতালীয় দার্শনিক বেনেদিত্তো ক্রোচে বলেন,
"প্রতিটি জাতির এমন কিছু সামাজিক আবেগ আছে, যার মধ্যে জাতিগত বৈশিষ্ট্য সমূহ নির্যাসের আকারে পুরো মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। এবং কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলে সেই আবেগ ফণা মেলে হুংকার দিয়ে উঠে।"
একটু লক্ষ্য করলেই আমরা বুঝতে পারব, ১/২ দিনের গণআক্রোশ আর অল্প কয়েকজনের আত্মত্যাগ, এ দেশের মানুষের কাছে যেভাবে শাসকগোষ্ঠীকে হিন্দুত্ববাদী ও তাগুত হিসেবে চিহ্নিত করেছে; 'সুবিবেচক' দায়ীদের চাতুর্যপূর্ণ দাওয়াত শত বছরেও তা করতে পারেনি।
দ্বীনের তুলনামূলক সঠিক বুঝ ও আবেগ থাকা সত্ত্বেও এই বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ অভিজাত শ্রেনীটি বারবারই নের্তৃত্ব ছেড়ে অনুসরণের পথই বেছে নিয়েছে।
যার ফলে ইসলামের জন্য ফুসে ওঠা এই অসাধারণ ঘটনাকে জাতির ভাগ্য নির্ধারণের অনুকূলে না এনে, সবর, নীরবতা আর হিকমতের ভুল বয়ান দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তুলছেন!
অথচ, আফগানিস্তানের উলামায়ে কেরামের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। উনারা জাতির সমস্যা, সংকট যেমন উপলব্ধি করতে পারতেন, একইভাবে সমাধানের পথ চিহ্নিতকরণ ও অবলম্বনেও দ্রুত অগ্রসর হতেন। এতে মূল্য যা ই দিতে হোক না কেন। যার ফলে দাবী নানারকম হওয়া সত্ত্বেও ফলাফল অন্যরকম প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে!
মোটকথা, এদেশের বাস্তবতায় ইসলামপন্থীদের বিপ্লব কেবল ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত একটি বিশেষ শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল হওয়ার ধারণাটি, বরাবরের ন্যায় ঋনাত্মক ফলাফলই আনতে পারে হয়তো!
আমরা আরো বোঝার চেষ্টা করব, ইসলামপন্থীদের জন্য কেবল উল্লেখিত শ্রেণীটি নয়, বাকি সহায়ক শ্রেণীগুলোর ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য যে,
'সমাজের যে কোনো একটি শ্রেনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে গণবিপ্লব সম্ভব নয়।'
বরং, সফলতার জন্য ব্যাপকভাবে জনসাধারণকে আমাদের দাওয়াত ও উদ্দেশ্যের সাথে একীভূত করা আবশ্যক।
(২)
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ও ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পর, এদেশের শাসনক্ষমতায় সেনাবাহিনীই শক্তির কেন্দ্র হয়ে যায়। পরবর্তী একটা সময় পর্যন্ত সামরিক বাহিনীই এদেশের শক্তির কেন্দ্র হিসেবে ছিল। এরপর ৯০ দশকের শেষ দিকে এরশাদবিরোধী তথা সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
যদিও বাহ্যিকভাবে এরশাদের পতন গণআন্দোলন মনে হয়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনী এরশাদের বিরুদ্ধে চলে যাওয়াটাই তার পতনের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।
১/১১ এবং এর পরবর্তী সময় আওয়ামী গোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পাশাপাশি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ফলে সামরিক বাহিনী পাওয়ার সেন্টার থেকে বিচ্যুত হয়।
পরপর দুইটি নির্বাচনে তাদের 'তাবেদারী' ভূমিকার মাধ্যমে সবার কাছে এই বাহিনীটির আসল চরিত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিও ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদেরা নানান স্বপ্ন দেখেন ও দেখান!
(৩)
সেনাবাহিনীর বিষয়টি স্পস্ট করার পর একথাও বলতে হয় যে,
কৃষক, শ্রমিক, মজুর- এদেকেও বিপ্লবের মূল শ্রেণী হিসেবে গন্য করা যায় না। কারণ এরাও বর্তমানে সমাজের মৌলিক শক্তি নয়। পুঁজিবাদের জয়জয়কার এবং আদর্শিক বামপন্থী রাজনীতির বিলোপ ঘটায় এই শ্রেনীটি সাংস্কৃতিক মান হারিয়ে ফেলেছে এটাই বাস্তবতা। তাই এককভাবে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখতে সম্ভবত তারা আর সক্ষম নয়।
এরা মাঝেমধ্যে যে আন্দোলন করে তা মূলত সরকার বা তাদের দলীয় বাহিনীর গ্রীন সিগনালেই। অথবা সিবিআইয়ের চাদায় চলা ট্রেড ফেডারেশনের নেতাদের স্বার্থে!
আবার, মাও সেতুং কৃষকদের সাথে নিয়ে গ্রাম দখল করে শহর অবরোধের কথা বলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে চারু মজুমদার ও এদেশে সিরাজ শিকদার প্রমুখ মাওবাদীরা কৃষকদের সাথে নিয়ে বিপ্লবের লাইন গ্রহণ করেছিল "গ্রামাঞ্চল দখল করে মুক্তাঞ্চল তৈরি করে শহর অবরোধ"কে কৌশল সাব্যস্ত করেছিল।
এরা উভয়ই বিপ্লবের শ্রেণি হিসেবে কৃষক শ্রেণীকে নির্ধারণ করেছিল। কেন?? কারণ তাদের গুরু মাও সে তুং এই শ্রেণীকে নিয়ে এভাবেই বিপ্লব করেছিল!!
তাই দেখা যায়, এরা এদেশে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল, অথচ তাদের সংগঠনসমূহে কৃষকদের তেমন কোন উপস্থিতিই ছিল না।
চারু মজুমদার যে কৃষকদের পাশে পেয়েছিল, তাদের পরিচয় কৃষকের চেয়েও বেশী চা-শ্রমিক সাওতাল জাতি বলা উচিত।
অন্যদিকে বাংলার কৃষকরা তো সিরাজ শিকদারকে ডাকাত সর্দারই মনে করতো!
মূলত এরা উভয়ই প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে পারেনি। চীনের আন্তঃসামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক অবস্থান, সামন্তবাদি ব্যবস্থা ইত্যাদি লক্ষ্য করলে সহজেই বুঝা যায় যে ওই দেশে কৃষক শ্রেণিটিই ছিল সমাজের বিপ্লবের মূল শ্রেণী শক্তি।
আরো ভালো করে বোঝা দরকার,
তালেবান প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ করেছে, আবার কান্দাহারসহ প্রাদেশিক শহরে স্থানীয় বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করেছে এবং কাবুলে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।
এখন কি এটা বলা যাবে যে,
বিপ্লবের রাজনৈতিক লাইন হল বিদেশী শক্তি হটাতে গেরিলা যুদ্ধ-প্রদেশ দখলে সম্মুখ যুদ্ধ এবং রাজধানীতে সশস্ত্র অবরোধ??
অবশ্যই না!
কারণ এগুলো ছিল রণনীতি। আর এই রণনীতি স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। মূলত এই রণনীতি কেমন হবে সেটা নির্ভর করে, বিপ্লবী দলের রাজনৈতিক লাইন কেমন হবে তার উপর।
এছাড়াও,
আমরা যদি মার্ক্সবাদীদের অবস্থা দেখী তাহলে দেখতে পাব যে, ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনের বিপ্লবে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশী।
একইসাথে সেনা সদস্যরাও ছিল।
তাই আমাদের দেশের একসময়ের মার্ক্সবাদীরাও তাদের বিপ্লবের লাইন হিসেবে গ্রহন করেছে "গণ-অভ্যুত্থান"।
(সমকালীন সময়ে ফরহাদ মজহার এখনো এই তত্ত্বে বিশ্বাসী ও আগ্রহী!)
আর এজন্য তারা শ্রেণী হিসেবে নির্ধারণ করেছিল "শ্রমিক" শ্রেনীকে। তাই তাদের গণসংগঠনও শ্রমিকদেরকে টার্গেট করে বেশী।
কেন? কারণ মূলত লেলিন বিপ্লবে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশী ছিল এবং ওরা বিপ্লবের মূল শ্রেণী হিসেবে কাজ করেছে!!
এক্ষেত্রেও যদি আপনি তৎকালীন সময়ের রাশিয়ার বাস্তবতা দেখেন তাহলে দেখবেন, জারতন্ত্রের পতনের পর ফেব্রুয়ারিতে যে বুর্জোয়া বিপ্লব হয়, ঐ বুর্জোয়ারা সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকদের প্রচুর রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান করে।
তাই পুর্ব থেকেই বিদ্যমান ট্রেড ইউনিয়নগুলো ঐ সময় আরও শক্তি সঞ্চয় করে।
এমনকি সেনা গ্যরিসনসমূহের অভ্যন্তরে সৈনিকরা রাজনৈতিক চর্চা এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার পায়। তাই সেখানে সৈনিকদের সংগঠিত করা সহজ হয়।
কিন্তু এখানে বামপন্থীরা '৭৫ এর পর আর সেনাবাহিনীতে সেই প্রভাবের ছিটেফোটাও ফিরিয়ে আনতে পারেনি। আর শ্রমিক ইউনিয়নের কথা তো আগেই বলা হলো।
মার্ক্সবাদীরা তাদের অধিকাংশ বিষয়ে পরষ্পরবিরোধী অবস্থান নিলেও, তাদের সব গ্রুপ-উপদল নিজেদের লক্ষ্য থেকে ওলামা-তলাবায়ে কেরাম ও দ্বীনদার মুসলিমদেরকে ছেঁটে ফেলার ব্যাপারে একমত ছিল।
তাই তারা এই শ্রেণীটির ওপর শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতন, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কখনো কথা বলেনি। অথচ শোষকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত বিভিন্ন কথিত সংখ্যালঘুদের পক্ষে তারা সব সময় সোচ্চার।
এদেশের মার্ক্সবাদীরা ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ও তার অনুসারীদের বাদ দিয়ে তাদের কথিত বিপ্লব করতে চেয়েছিল। ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাই হয়েছে, মুখ থুবড়ে পরে তাদের আন্দোলন!
সবশেষে এই উপসংহারে আসতে হয় যে, ৯২% আবেগপ্রবণ মুসলিমবিশিষ্ট এই ছোট্ট সমতল ভূমিতে সংকট ও সম্ভাবনা উভয়ই বিদ্যমান। যার ফলে ইতিহাস একাধিকবার, এদেশে দুশ বছরের ঘটনাপ্রবাহ দুই দিনে ঘটে যেতে দেখেছে।
আর এমন পরিস্থিতিতে কেবল দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্ষম এবং সাহসী ব্যাক্তিরাই পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে।
তাই উত্তম অবস্থান হয়তো এটাই যে,
বিশুদ্ধ আকিদা ও চিন্তাধারাবিশিষ্ট যোগ্য অগ্রবর্তী বাহিনীর প্রস্তুতের পাশাপাশি, কেবল বিশেষ কোনো শ্রেনীকে অবলম্বন না করে সমাজের সকল শ্রেনী-পেশার মানুষকে আমাদের লক্ষ্যের সাথে একীভূত করা চাই।
তাই! আমাদের উলামা-দাঈসহ প্রত্যেকেরই দায়িত্ব-
ইসলামের জন্য অগ্রসর হওয়া জনতাকে সমন্বিত আন্দোলনে একত্রিত করা এবং ক্রমাগত তাদের সাহায্য সহযোগিতা ও সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা দিতে এগিয়ে আসা!
রাতারাতি একটি আন্দোলন বা সামরিক ক্যুয়ের মাধ্যমে জালিমশাহীর স্থির প্রতিস্থাপন বা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটানো সম্ভব না। বরং, বার বার একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিই পারে চূড়ান্ত পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে, যা আলহামদুলিল্লাহ বারবারই হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।
শুধু দরকার সাহসী ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এমন নের্তৃত্বের, যারা পরিস্থিতিকে ইসলামের অনুকূলে ঘুরিয়ে দিবেন!
এখন বাচাল বুদ্ধিজীবি বা সূফী দরবেশ নয়, প্রয়োজন শুধু জীবনের উপর মৃত্যুকে প্রাধান্য দানকারী নের্তৃত্বশ্রেণী। আল্লাহ তা আলা এই অগ্রবর্তী বাহিনীটিকে প্রস্তুত করে দিন এবং বাকিদের তাদের চেনার ও আনুগত্যের তাওফিক দিন।
সর্বশেষ কিন্তু প্রয়োজনীয় কথা হচ্ছে,
অগ্রবর্তী বাহিনীর সদস্য সংগ্রহ বা তরবিয়তের সুবিধার্থে বিশেষ কোনো শ্রেণীকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আমাদের লক্ষ্যানুযায়ী কার্যকর রাখা আলাদা দুটি বিষয়।
তবে, এও ঠিক যত বেশী শ্রেণী বা মানুষের নিকট পৌছানো সম্ভব অগ্রবর্তী বাহিনী তত বেশী যোগ্যতর ও সক্ষম হবে।
আর আল্লাহ তা আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
Comment