দেশ বড় নয়; ঈমান বড় : সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি খােলা চিঠি
আদি পিতা-মাতা এক হওয়ার সুত্রে আপনারা আমার রক্তের সম্পর্কের ভাই। প্রিয় ভাই! একটু ভাবুন। আপনি একদা এই পৃথিবীতে ছিলেন না। আপনার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ আপনাকে এই ধরায় পাঠিয়েছেন। এখন আপনি পথিবীতে আছেন। কিছু দিন পর আপনি এখানে থাকবেন না। আল্লাহ তাআলার কাছে চলে যাবেন।
তিনি আপনাকে আপনার কর্মের ফলাফল দান করবেন। যদি আপনি দুনিয়ায় থেকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তি পাওয়ার মত কিছু নেক আমল করে গিয়ে থাকেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে মহাপুরষ্কারে পুরষ্কিত করবেন। আর যদি আল্লাহর দ্বীনের বিরােধিতা ও তাঁর অবাধ্যতায় জীবনটা কাটিয়ে যান তাহলে প্রজ্জলিত অগ্নির যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আপনার অপেক্ষা করছে। এটা এমন এক মহাতস্য যা বুদ্ধিমান ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হল, এই যে ৬০-৭০ বছরের হায়াত দিয়ে আল্লাহ তাআলা আপনাকে পৃথিবীতে পাঠালেন এর উদ্দেশ্য কী? সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যই যদি না জানেন তাহলে তাে আপনি তাকে খুশি করতে পারবেন না। যেমন, আপনি যে বাহিনীর সদস্য সে বাহিনী সরকার কী জন্য তৈরি করেছে? ঐ বাহিনীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী? তা যদি না জানেন, তাহলে আপনি এমন কোনাে কাজ করে বসবেন যা আপনার বাহিনীর উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সেক্ষেত্রে আপনার চাকুরী তাে যাবেই, অনেক ক্ষেত্রে জীবনও যেতে পারে।
তাই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ আপনাকে কী উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তা জানা উচিত এবং সে অনুযায়ী চলা উচিত। আশা করি আপনি বুদ্ধিমান। আপনাকে এ বিষয়টা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়ােজন নেই।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। জীবনের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে তাঁর হুকুমকে মেনে নেয়া এবং সে অনুযায়ী চলাই হল তাঁর ইবাদত। আল্লাহ তাআলা আপনার মনীব। আপনি তার গােলাম। মনীব গােলামকে যখন যা আদেশ করে গােলামকে তা মান্য করতে হয়। ঠিক তেমনি আপনাকে আল্লাহ যখন যা আদেশ করবেন তা মান্য করতে হবে। আদেশগুলাে আপনার মনপুত হলেও মানতে হবে, মনপুত না হলেও মানতে হবে। এর নামই দাসত্ব।
ইবাদাত শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ নয়। নামায, রােযা, হজ্জ, যাকাতই শুধু ইবাদত নয়। সমাজকে ইসলামের বিধান মত পরিচালনা করা, রাষ্ট্রকে ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করা। রাষ্ট্রে আল্লাহর দেওয়া দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন করা। চোরের হাত কেটে দেওয়া, ডাকাতের ডান হাত ডান পা কেটে দেওয়া, যিনাকারীকে বেত্রাঘাত করা, মদখােরকে শাস্তি দেওয়া। সুদি কারবার বন্ধ করা এসবও ইবাদাত।
আপনি যেমন ব্যক্তি জীবনে ইবাদাতের জন্য আদিষ্ট, তেমনি রাষ্ট্রীয় জীবনেও ইবাদাতের জন্য আদিষ্ট। কারণ, ইসলাম শুধু ব্যক্তি জীবনে পালনীয় ধর্ম নয়। মুসলমানের জন্য ব্যক্তি জীবনে ধার্মিক হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিধর্মী হওয়ার কোনাে সুযােগ নেই। ইসলামে যেমন, ব্যক্তি জীবনের সমস্ত বিধান লেখা আছে, তেমনি ইসলামে সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের সমস্ত হুকুমও লিপিবদ্ধ আছে।
যে মুসলিম শুধু ব্যক্তি জীবনে ধর্ম পালন করে কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে ধর্ম পালন করে না। বরং রাষ্ট্রকে ধর্মের উর্ধের্ব মনে করে। সে আসলে মুসলিম নয়। বরং সে মুশরিক। সে আল্লাহর কিছু বিধানকে মেনে নিয়েছে আর বিধানের বড় অংশকে অস্বীকার করেছে। তাই সে মুসলিম হতে পারেনি। তার ঈমান গ্রহণযােগ্য নয়।
আপনি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে থাকেন। পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন। জান্নাত ও জাহান্নামে ঈমান রেখে থাকেন। আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করে চির সুখের স্থান জান্নাত লাভ করতে চান, তাহলে ভাই আপনাকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে হবে। আপনাকে পরিপূর্ণরূপে ইসলামে দাখেল হতে হবে। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করতে পারবেন না। আপনাকে ব্যক্তি জীবনেও ধার্মিক হতে হবে, আর রাষ্ট্রীয় জীবনেও ধার্মিক হতে হবে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা তাঁর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করতে বলেছেন এবং স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যে বা যারা তাঁর বিধান অনুযায়ী বিচারফায়সালা করবে না, তারা কাফের। আর যারা আল্লাহর কোনাে বিধানকে অপছন্দ করবে তাদের কাফের হওয়ার মধ্যেতাে কোনাে সন্দেহ-ই নেই। তাই আপনি পরকালে মুক্তি পেতে চাইলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার যাবতীয় বিধি-নিষেধ মেনে নিতে হবে। যারা আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে কুফরী সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে কোনােভাবে তাদেরকে সহযােগিতা করতে পারবেন না।
আপনি অস্ত্র হাতে যখন কুফরী সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের পক্ষে দাঁড়ান, তাদেরকে সেল্টার দেন। তাদেরকে নিরাপত্তা দেন। তাদের আদেশকে আল্লাহর আদেশের উপর প্রাধান্য দেন। তাদের হুকুমে নির্দোশ মুসলিমদেরকে হত্যা করেন। যারা আল্লাহর যমিনে আল্লাহর আইন কায়েম করতে চায়, তাদের উপর নির্যাতন চালান, তখন আপনার ঈমানটা ভেঙ্গে যায়।
খােদাদ্রোহী তাগুত সরকারকে প্রকাশ্য সহযােগিতা করায় আপনিও তাগুতের একজন গােলামে পরিণত হয়ে যান।দুনিয়ার সামান্য কিছু অর্থের লােভে পড়ে চিরস্থায়ী আখেরাতকে হাত ছাড়া করে ফেলেন।
তারা আপনাদেরকে বুঝায় মাতৃভূমির ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। মাতৃভূমির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে হবে। দেশের জন্য যেকোনাে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
একথাগুলাে ইসলাম সমর্থন করে না। মাতৃভূমির ভালবাসা কখনাে ঈমানের অঙ্গ নয়। এ কথাটিকে হাদীস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। অথচ এটি হাদীস নয়। হাদীস বিশারদগণ এটাকে জাল ও বানােয়াট বলেছেন। তাছাড়া জন্মভূমি বা মাতৃভূমির প্রেম সব প্রাণীর অন্তরেই স্বভাবগতভাবে থাকে।
ইতর শ্রেণীর প্রাণী কুকুরও তার জন্মস্থানকে ভালবাসে। মুসলিম-কাফের ও মানব-দানব নির্বিশেষে সবার ভিতরেই যে বিষয়টি পাওয়া যায়, সে বিষয়টি কোন যুক্তিতে ঈমানের অংশ হতে পারে?!
এই ভিত্তিহীন একটা কথার উপর ভিত্তি করে আপনি উৎসাহিত হচ্ছেন। আর নিজেদের তৈরি করা জাতীয়তা এবং সেই জাতীয়তার সীমানা রক্ষার জন্য নিজেকে কুরবান করে দিচ্ছেন।
যে দেশ আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা পরিচালিত নয় সে দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে আপনার রব আপনাকে আদেশ দেননি। বরং ঐ দেশের বিরােধিতার হুকুম দিয়েছেন।
আপনি আপনার রবের অবাধ্য হয়ে রবের কোনাে মাখলুকের বাধ্য হতে পারেন না। এর কোনাে অধিকার আপনার নেই। কারণ, আপনি কচুরীপানার মত ভেসে আসেননি। লক্ষ্যউদ্দেশ্যহীনভাবে আপনাকে এ ধরার বুকে প্রেরণ করা হয়নি। আপনি একমহাপরাক্রমশালী সত্তার দাস। আপনাকে তাঁর হুকুমকেই সর্বত্র প্রাধান্য দিতে হবে।
দুনিয়ার মান-ইজ্জত ও অর্থ কড়ির লােভে পড়ে যা ইচ্ছা তা করার অধিকার আপনার নেই। যদি এমন কিছু করেন, তাহলে আখেরাতে তাে আপনাকে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবেই। আর দুনিয়াতেও আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ নির্বাচিত বান্দাদের দ্বারা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে পারেন।
তাই সতর্ক হােন। দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর নেককার বান্দাদের সাথে যােগ দিন। জিহাদের পথে এগিয়ে আসুন। আল্লাহর জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজের জান-মাল উৎসর্গ করে দিন। দেশের ভালবাসার উপর আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল সা. এবং তাঁর পথে জিহাদের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিন।
আপনার রব আপনাকে বলছেন, “হে ঈমানদারগণ! তােমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করাে না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তােমাদের যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী।
বল, তােমাদের নিকট যদি তােমাদের পিতা তােমাদের সন্তান, তােমাদের ভাই তােমাদের পত্নী, তােমাদের গােত্র তােমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তােমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তােমাদের বাসস্থান-যাকে তােমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তার রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” সূরা তাওবা:২৩-২৪।
মনে রাখবেন একজন মুমিনের কাছে ঈমান সবচেয়ে বড় সম্পদ। ঈমানের কাছে দেশ কিছুই নয়। এই দেশ এবং দেশের নেতারা একদিন আপনার কোনাে কাজে আসবে না। আজ যাদের নির্দেশে আপনি আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের উপর হাত তুলছেন, যাদের হুকুমকে আল্লাহর হুকুমের সমতুল্য বানিয়ে তাদের কথায় আল্লাহর বান্দাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে শহীদ করে দিচ্ছেন, কাল কিয়ামতের দিন তারা আপনার সামান্যতম উপকার করতে পারবে না। আল্লাহ পাক আপনাদের মত ব্যক্তিদের পরকালীন চিত্র আল-কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “আর কোন লােক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পােষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। স্মরণ কর সেই সময়ে কথা, অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক। তখন অনুসারীরা বলবে, কতই না ভাল হত, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযােগ দেয়া হত। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি।
এভাবেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে | অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।” (সূরা বাকারা:৬৫-৬৭) অতএব, হে ভাই ফিরে আসুন। আল্লাহর পথে ফিরে আসুন। দরবারী আলেমদের অপব্যাখ্যার মারপ্যাচে পড়ে নিজের আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না।
এখনও সময় আছে আল্লাহর বড়ত্বকে, আল্লাহর রাজত্বকে এবং আল্লাহর হুকুমাতকে মেনেনিন। আল্লাহর জমীনে আল্লাহর হুকুমাত ও রাজত্ব কায়েম করা আপনারও দায়িত্ব। তাই এই দায়িত্ব পালনের দিকে ফিরে আসুন। মুজাহিদ ভাইদের সহযােগিতা করুন। আখেরাত ও ঈমানকে হেফাজত করুন।
আল্লাহ তাআলা প্রতিনিয়ত অগণিত মাখলুককে খাওয়াচ্ছেন। আপনার এই চাকুরী না থাকলেও আল্লাহ তাআলা আপনাকে খাওয়াবেন। তাই তাগুতের গােলামী ছেড়ে দিয়ে মুজাহিদদের সাথে যােগ দিন। জিহাদ ও শাহাদাতের অশেষ মর্যাদা হাসিল করুন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।
আমীন।
--- 📓নেদায়ে তাওহীদ
নেদায়ে তাওহীদ ডাউনলোড লিংক
সরাসরি ক্লিকে ডাউনলোড না হলে লিংক কপি করে কোনো ব্রাউজারে পেস্ট করুন
আদি পিতা-মাতা এক হওয়ার সুত্রে আপনারা আমার রক্তের সম্পর্কের ভাই। প্রিয় ভাই! একটু ভাবুন। আপনি একদা এই পৃথিবীতে ছিলেন না। আপনার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ আপনাকে এই ধরায় পাঠিয়েছেন। এখন আপনি পথিবীতে আছেন। কিছু দিন পর আপনি এখানে থাকবেন না। আল্লাহ তাআলার কাছে চলে যাবেন।
তিনি আপনাকে আপনার কর্মের ফলাফল দান করবেন। যদি আপনি দুনিয়ায় থেকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তি পাওয়ার মত কিছু নেক আমল করে গিয়ে থাকেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে মহাপুরষ্কারে পুরষ্কিত করবেন। আর যদি আল্লাহর দ্বীনের বিরােধিতা ও তাঁর অবাধ্যতায় জীবনটা কাটিয়ে যান তাহলে প্রজ্জলিত অগ্নির যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আপনার অপেক্ষা করছে। এটা এমন এক মহাতস্য যা বুদ্ধিমান ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হল, এই যে ৬০-৭০ বছরের হায়াত দিয়ে আল্লাহ তাআলা আপনাকে পৃথিবীতে পাঠালেন এর উদ্দেশ্য কী? সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যই যদি না জানেন তাহলে তাে আপনি তাকে খুশি করতে পারবেন না। যেমন, আপনি যে বাহিনীর সদস্য সে বাহিনী সরকার কী জন্য তৈরি করেছে? ঐ বাহিনীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী? তা যদি না জানেন, তাহলে আপনি এমন কোনাে কাজ করে বসবেন যা আপনার বাহিনীর উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। সেক্ষেত্রে আপনার চাকুরী তাে যাবেই, অনেক ক্ষেত্রে জীবনও যেতে পারে।
তাই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ আপনাকে কী উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তা জানা উচিত এবং সে অনুযায়ী চলা উচিত। আশা করি আপনি বুদ্ধিমান। আপনাকে এ বিষয়টা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়ােজন নেই।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। জীবনের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে তাঁর হুকুমকে মেনে নেয়া এবং সে অনুযায়ী চলাই হল তাঁর ইবাদত। আল্লাহ তাআলা আপনার মনীব। আপনি তার গােলাম। মনীব গােলামকে যখন যা আদেশ করে গােলামকে তা মান্য করতে হয়। ঠিক তেমনি আপনাকে আল্লাহ যখন যা আদেশ করবেন তা মান্য করতে হবে। আদেশগুলাে আপনার মনপুত হলেও মানতে হবে, মনপুত না হলেও মানতে হবে। এর নামই দাসত্ব।
ইবাদাত শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ নয়। নামায, রােযা, হজ্জ, যাকাতই শুধু ইবাদত নয়। সমাজকে ইসলামের বিধান মত পরিচালনা করা, রাষ্ট্রকে ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করা। রাষ্ট্রে আল্লাহর দেওয়া দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন করা। চোরের হাত কেটে দেওয়া, ডাকাতের ডান হাত ডান পা কেটে দেওয়া, যিনাকারীকে বেত্রাঘাত করা, মদখােরকে শাস্তি দেওয়া। সুদি কারবার বন্ধ করা এসবও ইবাদাত।
আপনি যেমন ব্যক্তি জীবনে ইবাদাতের জন্য আদিষ্ট, তেমনি রাষ্ট্রীয় জীবনেও ইবাদাতের জন্য আদিষ্ট। কারণ, ইসলাম শুধু ব্যক্তি জীবনে পালনীয় ধর্ম নয়। মুসলমানের জন্য ব্যক্তি জীবনে ধার্মিক হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিধর্মী হওয়ার কোনাে সুযােগ নেই। ইসলামে যেমন, ব্যক্তি জীবনের সমস্ত বিধান লেখা আছে, তেমনি ইসলামে সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের সমস্ত হুকুমও লিপিবদ্ধ আছে।
যে মুসলিম শুধু ব্যক্তি জীবনে ধর্ম পালন করে কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে ধর্ম পালন করে না। বরং রাষ্ট্রকে ধর্মের উর্ধের্ব মনে করে। সে আসলে মুসলিম নয়। বরং সে মুশরিক। সে আল্লাহর কিছু বিধানকে মেনে নিয়েছে আর বিধানের বড় অংশকে অস্বীকার করেছে। তাই সে মুসলিম হতে পারেনি। তার ঈমান গ্রহণযােগ্য নয়।
আপনি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে থাকেন। পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন। জান্নাত ও জাহান্নামে ঈমান রেখে থাকেন। আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করে চির সুখের স্থান জান্নাত লাভ করতে চান, তাহলে ভাই আপনাকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে হবে। আপনাকে পরিপূর্ণরূপে ইসলামে দাখেল হতে হবে। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করতে পারবেন না। আপনাকে ব্যক্তি জীবনেও ধার্মিক হতে হবে, আর রাষ্ট্রীয় জীবনেও ধার্মিক হতে হবে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা তাঁর বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করতে বলেছেন এবং স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যে বা যারা তাঁর বিধান অনুযায়ী বিচারফায়সালা করবে না, তারা কাফের। আর যারা আল্লাহর কোনাে বিধানকে অপছন্দ করবে তাদের কাফের হওয়ার মধ্যেতাে কোনাে সন্দেহ-ই নেই। তাই আপনি পরকালে মুক্তি পেতে চাইলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার যাবতীয় বিধি-নিষেধ মেনে নিতে হবে। যারা আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে কুফরী সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে কোনােভাবে তাদেরকে সহযােগিতা করতে পারবেন না।
আপনি অস্ত্র হাতে যখন কুফরী সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের পক্ষে দাঁড়ান, তাদেরকে সেল্টার দেন। তাদেরকে নিরাপত্তা দেন। তাদের আদেশকে আল্লাহর আদেশের উপর প্রাধান্য দেন। তাদের হুকুমে নির্দোশ মুসলিমদেরকে হত্যা করেন। যারা আল্লাহর যমিনে আল্লাহর আইন কায়েম করতে চায়, তাদের উপর নির্যাতন চালান, তখন আপনার ঈমানটা ভেঙ্গে যায়।
খােদাদ্রোহী তাগুত সরকারকে প্রকাশ্য সহযােগিতা করায় আপনিও তাগুতের একজন গােলামে পরিণত হয়ে যান।দুনিয়ার সামান্য কিছু অর্থের লােভে পড়ে চিরস্থায়ী আখেরাতকে হাত ছাড়া করে ফেলেন।
তারা আপনাদেরকে বুঝায় মাতৃভূমির ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। মাতৃভূমির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে হবে। দেশের জন্য যেকোনাে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
একথাগুলাে ইসলাম সমর্থন করে না। মাতৃভূমির ভালবাসা কখনাে ঈমানের অঙ্গ নয়। এ কথাটিকে হাদীস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। অথচ এটি হাদীস নয়। হাদীস বিশারদগণ এটাকে জাল ও বানােয়াট বলেছেন। তাছাড়া জন্মভূমি বা মাতৃভূমির প্রেম সব প্রাণীর অন্তরেই স্বভাবগতভাবে থাকে।
ইতর শ্রেণীর প্রাণী কুকুরও তার জন্মস্থানকে ভালবাসে। মুসলিম-কাফের ও মানব-দানব নির্বিশেষে সবার ভিতরেই যে বিষয়টি পাওয়া যায়, সে বিষয়টি কোন যুক্তিতে ঈমানের অংশ হতে পারে?!
এই ভিত্তিহীন একটা কথার উপর ভিত্তি করে আপনি উৎসাহিত হচ্ছেন। আর নিজেদের তৈরি করা জাতীয়তা এবং সেই জাতীয়তার সীমানা রক্ষার জন্য নিজেকে কুরবান করে দিচ্ছেন।
যে দেশ আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা পরিচালিত নয় সে দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে আপনার রব আপনাকে আদেশ দেননি। বরং ঐ দেশের বিরােধিতার হুকুম দিয়েছেন।
আপনি আপনার রবের অবাধ্য হয়ে রবের কোনাে মাখলুকের বাধ্য হতে পারেন না। এর কোনাে অধিকার আপনার নেই। কারণ, আপনি কচুরীপানার মত ভেসে আসেননি। লক্ষ্যউদ্দেশ্যহীনভাবে আপনাকে এ ধরার বুকে প্রেরণ করা হয়নি। আপনি একমহাপরাক্রমশালী সত্তার দাস। আপনাকে তাঁর হুকুমকেই সর্বত্র প্রাধান্য দিতে হবে।
দুনিয়ার মান-ইজ্জত ও অর্থ কড়ির লােভে পড়ে যা ইচ্ছা তা করার অধিকার আপনার নেই। যদি এমন কিছু করেন, তাহলে আখেরাতে তাে আপনাকে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবেই। আর দুনিয়াতেও আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ নির্বাচিত বান্দাদের দ্বারা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে পারেন।
তাই সতর্ক হােন। দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর নেককার বান্দাদের সাথে যােগ দিন। জিহাদের পথে এগিয়ে আসুন। আল্লাহর জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজের জান-মাল উৎসর্গ করে দিন। দেশের ভালবাসার উপর আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল সা. এবং তাঁর পথে জিহাদের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিন।
আপনার রব আপনাকে বলছেন, “হে ঈমানদারগণ! তােমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করাে না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তােমাদের যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী।
বল, তােমাদের নিকট যদি তােমাদের পিতা তােমাদের সন্তান, তােমাদের ভাই তােমাদের পত্নী, তােমাদের গােত্র তােমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তােমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তােমাদের বাসস্থান-যাকে তােমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তার রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” সূরা তাওবা:২৩-২৪।
মনে রাখবেন একজন মুমিনের কাছে ঈমান সবচেয়ে বড় সম্পদ। ঈমানের কাছে দেশ কিছুই নয়। এই দেশ এবং দেশের নেতারা একদিন আপনার কোনাে কাজে আসবে না। আজ যাদের নির্দেশে আপনি আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের উপর হাত তুলছেন, যাদের হুকুমকে আল্লাহর হুকুমের সমতুল্য বানিয়ে তাদের কথায় আল্লাহর বান্দাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে শহীদ করে দিচ্ছেন, কাল কিয়ামতের দিন তারা আপনার সামান্যতম উপকার করতে পারবে না। আল্লাহ পাক আপনাদের মত ব্যক্তিদের পরকালীন চিত্র আল-কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “আর কোন লােক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পােষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। স্মরণ কর সেই সময়ে কথা, অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক। তখন অনুসারীরা বলবে, কতই না ভাল হত, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযােগ দেয়া হত। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি।
এভাবেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে | অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।” (সূরা বাকারা:৬৫-৬৭) অতএব, হে ভাই ফিরে আসুন। আল্লাহর পথে ফিরে আসুন। দরবারী আলেমদের অপব্যাখ্যার মারপ্যাচে পড়ে নিজের আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না।
এখনও সময় আছে আল্লাহর বড়ত্বকে, আল্লাহর রাজত্বকে এবং আল্লাহর হুকুমাতকে মেনেনিন। আল্লাহর জমীনে আল্লাহর হুকুমাত ও রাজত্ব কায়েম করা আপনারও দায়িত্ব। তাই এই দায়িত্ব পালনের দিকে ফিরে আসুন। মুজাহিদ ভাইদের সহযােগিতা করুন। আখেরাত ও ঈমানকে হেফাজত করুন।
আল্লাহ তাআলা প্রতিনিয়ত অগণিত মাখলুককে খাওয়াচ্ছেন। আপনার এই চাকুরী না থাকলেও আল্লাহ তাআলা আপনাকে খাওয়াবেন। তাই তাগুতের গােলামী ছেড়ে দিয়ে মুজাহিদদের সাথে যােগ দিন। জিহাদ ও শাহাদাতের অশেষ মর্যাদা হাসিল করুন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।
আমীন।
--- 📓নেদায়ে তাওহীদ
নেদায়ে তাওহীদ ডাউনলোড লিংক
সরাসরি ক্লিকে ডাউনলোড না হলে লিংক কপি করে কোনো ব্রাউজারে পেস্ট করুন
Comment