রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদরাসায় হামলা: আরাকান ও বাংলাদেশের মুসলিমদের প্রতি কিছু আবেদন
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মাদরাসায় হামলা হয়েছে। বেশ কিছু আলিম, তালিবুল ইলম ও সাধারণ মুসলমান শহীদ হয়েছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এছাড়াও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা নিজেদের অভিভাবকহীন ভাবছেন। ভয়, কষ্ট ও পেরেশানি ঘরবাড়ি হারা, ভিটেমাটি ছাড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের যেন পিছুই ছাড়ছে না। হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি’মাল ওয়াকিল। নিশ্চয় মুসলিমদের এই কষ্ট আমাদের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে। আমাদেরকে পেরেশান করে তোলে। তাই সকল রোহিঙ্গা মুসলিম ও বাংলাদেশের মুসলিমদের প্রতি কিছু আর্জি পেশ কতে চাই –
১। নিজেদের মধ্যকার আগ্রাসী মনোভাব দূর করুন!
নিঃসন্দেহে ফিতনার এই যুগে মুসলিমরা ফিকহি, ফিকরি ও আকিদাগত বিভিন্ন মতপার্থক্যের কারণে বিভিন্ন দল ও জামাআতে বিভক্ত। আমাদেরকে সকল মুসলিম দল ও গ্রুপকে সাথে নিয়েই চলতে হবে। শুধু মাত্র দলগত কারণে বা তুচ্ছ বিষয়ের মতপার্থক্যের কারণে অপরের সাথ শত্রুতা করা যাবে না। সকল প্রকার দলাদলি পরিহার করে মূল উদ্দেশ্যের উপর ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আর সেটি হচ্ছে আরাকানকে বৌদ্ধ বার্মিজ সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করা ও আরাকানে শরিয়াহ শাসন প্রতিষ্ঠা করা। যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করছেন, কোনভাবেই তাদের বিরোধিতা করা যাবে না, চাই তারা নিজ তানজিমের হোক কিংবা অন্য তানজিমের হোক। নিজ তানজিমের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা মনোভাব দূর করতে হবে। আমি যেমন আমার তানজিমের ভাইদের মোহাব্বাত করি তেমনি অন্য তানজিমের ভাইদেরও মোহাব্বাত করতে হবে। কেননা আল্লাহর পথে কাজ করা থেকে কাউকে বাধা দেয়ার অধিকার আল্লাহ আপনাকে দেননি। আমাদের নিজেদের মধ্যকার দলবিচ্ছেদের সুযোগ যেন কুফ্ফাররা নিতে না পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার।
২- নিজেদেরে মধ্যকার বিভেদ ও অন্যায়ভাবে রক্তপাত বন্ধ করুন!
মুসলিমদের রক্তের মূল্য পুরো পৃথিবীর চেয়েও দামি। কুরআন ও সুন্নাহতে মুসলিম রক্ত ও সম্মান রক্ষার কঠিন তাগিদ এসেছে। অন্যায় রক্তপাত ও সম্মান নষ্ট করার ব্যাপারে শক্ত ধমকি এসেছে। অন্যায়ভাবে একজন মুসলমানকে হত্যা করা পুরো পৃথিবীর মানুষকে হত্যা করার নামান্তর। কিন্তু আফসোস! এতো বড় ধমকি আসার পরেও আমরা তুচ্ছ কারণে একে অপরের সাথে কঠিন দন্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ছি। স্মরণ করুন! আল্লাহ তা’আলার বানী-
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)
একজন মুসলিম ভাই, এমনকি একজন আলিমের রক্ত প্রবাহিত করতেও আমরা কুন্ঠাবোধ করছিনা। হে মুসলিম ভাই! আপনি আপনার প্রতিটি কাজের ব্যপারে আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করুন। অন্যায়ভাবে মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত করা থেকে বেঁচে থাকুন! শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লিবি রহিমাহুল্লাহ’র সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যকে নিজেদের দিল ও দেমাগে বসিয়ে নিন, সেটি হচ্ছে- ‘পৃথিবী ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক আমাদের সংগঠন, দল এবং অস্তিত্ব। কিন্তু আমাদের হাত যেন বেআইনীভাবে মুসলমানের রক্ত ঝরার কারণ না হয়’। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টারত সকল হক্ব তানজিমকে গ্রহণ করার মানসিকতা রাখুন।
৩- সাধারণ মুসলিমদের শিক্ষার পিছনে মেহনত করুন!
দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা মুসলিমরা লাগাতার জুলুম, নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হওয়ার কারণে সকল মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত, যার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল দীনি ও দুনিয়াবি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল রোহিঙ্গাদের শিক্ষিত করে তোলার পিছনে মেহনত করা দরকার। সকল রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ ও সচেতন ব্যক্তিদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান করছি। নিঃসন্দেহে একটি শিক্ষিত জাতিই তার শত্রুদের সাথে লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবে।
৪- বার্মিজ মিলিটারি প্রশাসন আপনাদের মূল শত্রু!
বার্মিজ মিলিটারি প্রশাসন আপনাদের টার্গেটের মূল কেন্দ! তাদের সাথেই আপনাদের লড়াই, বিশেষ করে এই মুহূর্তে তাদের টার্গেট করা পূর্বের তুলনায় সহজ হবে। কারণ তারা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের জনগণ-ই বার্মিজ মিলিটারি’র সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে! সুতরাং আল্লাহ আপনাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছেন, তা কাজে লাগান!
৫- বাংলাদেশের জনগণ ও প্রশাসনের সাথে বিরোধ এড়িয়ে চলুন!
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিম, উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার শ্রেণী আপনাদের সকল বিপদে এগিয়ে এসেছেন। আপনাদেরকে জান ও মাল দিয়ে সাহায্য করেছেন। আপনাদের দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন। আপনাদের জন্য আনসারের ভূমিকা পালন করেছেন। আপনাদের উচিত তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এমনকি বাংলাদেশের প্রশাসনের সাথেও সব ধরণের ঝামেলা ও বিবাদ এড়িয়ে চলতে হবে। অপহরণ, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন উপায়ে স্থানীয় জনগণকে পেরেশান করে তোলা রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করা উচিত। আপনাদের প্রতি এ দেশের মানুষের যে ভালোবাসা ও সমর্থন রয়েছে, তা আপনাদেরকে নিজ ভূখণ্ড উদ্ধার করা ও সেখানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহারের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। যারা এই ভালোবাসা ও সমর্থন নষ্ট করছেন, নিঃসন্দেহে আপনারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিপদ্গ্রস্থ করার অপরাধে অপরাধী হবেন! হে আমার ভাইয়েরা! আল্লাহকে ভয় করুন! আল্লাহকে ভয় করুন!
৬- আপনাদেরকে আঞ্চলিক চিন্তা থেকে বের হতে হবে!
আপনাদের জয়-পরাজয় উম্মতের জয় পরাজয়ের সাথেই সম্পৃক্ত। আপনাদের ভূখণ্ডের মত উম্মতের অনেক ভূখণ্ড একই সমস্যায় আক্রান্ত। তাই আপনাদেরকে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর ফিকির থাকতে হবে পুরো উম্মতের মুক্তির। আপনাদেরকে আঞ্চলিক চিন্তা থেকে বের হয়ে উম্মতের সাথে একত্রে কাজ করতে হবে। উম্মতের মুজাহিদদের সাথে ঐক্যের মাধ্যমেই আপনাদের বিজয় ত্বরান্বিত হবে ইনশা আল্লাহ।
হে আরাকানের সাধারণ মুসলিমগণ, হে রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ, হে সশস্ত্র সংগঠনের নেতৃত্ব ও সাথী ভাইয়েরা! হে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্যে কর্মরত বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন এনজিও ও সংগঠনের সাথে যুক্ত ভাইয়েরা! আপনাদের প্রতি আবেদন উপরোক্ত পয়েন্টগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন! আপনাদের কাজ, আন্দোলন ও লড়াইকে শরিয়াহ’র অনুগামী করবেন! আল্লাহকে ভয় করবেন! ইনশা আল্লাহ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় একদিন আরাকানও জালিম বৌদ্ধ বার্মিজ সামরিক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হবে।
আপনাদের ভাই
আহমাদ শাহ
২৬ অক্টোবর ২০২১ ইংরেজি
আহমাদ শাহ
২৬ অক্টোবর ২০২১ ইংরেজি
Comment