পরিক্ষা ও ধৈর্য্য" ঈমানী যিন্দেগীর এক অত্যাবশ্যকীয় বাস্তবতা।।
نحمده ونصلى على رسوله الكريم اما بعد، فاعوذ بالله من السيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم-اللذي خلق الموت والحياة ليبلوكم ايكم احسن عملا
ইমতিহান ও সবর তথা পরিক্ষা ও ধৈর্য্য মানব জীবনের এক অলংঘলীয় বাস্তবতা। কোন মানুষের পক্ষে দুনিয়াতে একটি সুস্থ, সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের জন্য জীবন চলার পথে উত্তির্ন হতে হয় বহু পরিক্ষায়। বাস্তব জীবনে অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে সে পরিক্ষাগুলোতে উত্তির্ন না হয়ে কোন মানুষের পক্ষে সুন্দর ক্যারিয়ার গঠন অসম্ভব।
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী আবাস্থলের সুখের জন্য আপনাকে-আমাকে পারি দিতে হয় বহু বাধা-বিপত্তি ও কষ্টের মহানদী। আহারে, অর্ধাহারে, অনাহারে কাটাতে হয় বহু দিন। আর অনিদ্রা ও তদ্রাচ্ছন্নতায় কাটে বহু রাত। স্বীয় মাতা-পিতা, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে একান্ত সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে মাসের পর মাস।
সুবহানাল্লাহ! এরপরও আমরা থেমে থাকিনা। বিপদের বাধ মানিনা। কষ্টের পরোয়া করিনা। কেনো?! কিসের জন্য এতো কষ্ট?! এইতো ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য। কেননা, চলমান জীবনের ধরপাকরে যদি আমরা কাবু হয়ে যাই, তাহলে তো এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের সেই অনিশ্চিত সুখগুলো আরো বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সুবহানাল্লাহ! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য যদি আমাদের এতো এতো পরিক্ষায় ধৈর্য্যের সাথে উত্তির্ন হতে হয়; সবরের এক দীর্ঘ মারহালা পাড়ি দিতে হয়; তাহলে চিরস্থায়ী আখেরাতের সুনিশ্চিত ও চিরস্থায়ী সুখের জন্য মহান রবের পরিক্ষায় উত্তির্ন হতে ও ধৈর্য্যধারণ করতে কেনো আমরা প্রস্তুত থাকিনা??!
হে ভাই! যদি পরিক্ষা ও সবর ছাড়া দুনিয়ার এই সামান্য ও ক্ষণস্থায়ী সুখ অর্জনই সম্ভব না হয়, তাহলে কিভাবে পরিক্ষা ও ধৈর্য্য ছাড়া আখেরাতের সুনিশ্চিত ও চিরস্থায়ী সুখ অর্জন সম্ভব হবে???!
যদি দুনিয়াদাররা দুনিয়া অর্জনের জন্য এতো বেশি কষ্ট সহ্য করতে পারে, তাহলে আমরা আখেরাতের দাবিদাররা কেনো দীন প্রতিষ্ঠা তথা আখেরাত অর্জনের জন্য এতোটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারিনা??!
আমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে উঁচু মর্যাদা আশা করি, অথচ উঁচু মর্যাদায় আস্বীন হওয়ার মাধ্যম তথা মহান রবের পরিক্ষাসমূহে উত্তির্ন হতে যথাযথ চেষ্টা-ফিকির ও মুজাহাদা করিনা। আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করি, কিন্তু আল্লাহর পথে আসতে থাকা বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য্য অবলম্বন করিনা।
{প্রিয় ভাই আমার! যে ব্যক্তি দারুল আসবাবের বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, সে মুলত নিজের সাথেই প্রতারণা করেছে।}
অল্লাহি! সফলতা কখনোই সে ব্যক্তির পদচুম্বন করবেনা, যে ব্যক্তি বিপদে ধৈর্য্যধারণ করেনা এবং মহান রবের দেয়া বাস্তবসম্মত পরিক্ষাসমূহের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করেনা। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোর'আনে এরশাদ করেছেন-
وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ
আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরিক্ষা করবো কিছু ভয়-ভীতি, ক্ষুধার কষ্ট, জান-মাল, ফসল ও ফল-ফলাদির ক্ষতি দ্বারা। (অতএব, হে নাবী) আপনি (শুধু) ধৈর্য্যশীলদে সুসংবাদ দান করুন। ( বাকারাঃ১৫৫)
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡہُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ
তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থা প্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিলো এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিলো; এমন কি রাসূল ও বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলো, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? সতর্ক হও, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (বাকারাঃ২১৪)
দেখুন আল্লাহর পবিত্র কালামের ভাষ্য আমাদের কি সবক দিচ্ছে। প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর সাহাবিদের উপর বিপদ-মুসিবত ও কষ্টের যে দীর্ঘ পরিক্ষা এসেছিলো, আমাদের থেকে মহান রব্বুল আলামিন সে পরিক্ষা না নিয়ে জান্নাত দেবেন না। তিনি আমাদেরকে বলে দিলেন সেই কষ্টের পরিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত আমরা যেনো জান্নাতে প্রবেশের কল্পনাও না করি।
আমার ভাই! আমাদের সবার জীবনে কোন না কোনভাবে পরিক্ষা ও ধৈর্য্যের মারহালাগুলো আসতেই থাকবে। আমরা না চাইলেও আসতে থাকেব। যদি আমরা অপ্রস্তুত থাকি তবু্ও আসতে থাকবে। যতোদিন আমরা বেঁচে থাকবো ততোদিন অনিচ্ছা স্বত্তেও এই পরিক্ষাগুলো আমাদের দিয়ে যেতে হবে। বিশেষভাবে যারা মুজাহিদীন ও দায়ী ইলাল্লাহ রয়েছেন তাঁদের জন্য সবরকে সংগী করা ছাড়া এক কদমও অগ্রসর হওয়ার সুযোগ নেই। তাই সব কিছু মেনে নিয়ে আমাদেরকে এই পরিক্ষাগুলোতে পাশ করতেই হবে। অন্যথায় যে জাহান্নাম!!! আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোর'আনে এরশাদ করেন-
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ یَعۡلَمَ الصّٰبِرِیۡنَ
তোমরা কি ধারণা করছো যে, তোমারা জান্নাতে চলে যাবে?! অথচ, আল্লাহ তাআলা এটা জেনে নেবেন না যে, তোমাদের মধ্যে কারা কারা জিহাদ করেছে ও (জিহাদের পথে আগত সকল দুঃখ-কষ্টে) ধৈর্য্যধারণ করেছে। (আল-ইমরান: ১৪২)
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡہُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ
তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থা প্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিলো এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিলো; এমন কি রাসূল ও বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলো, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? সতর্ক হও, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (বাকারাঃ২১৪)
فَاصۡبِرۡ کَمَا صَبَرَ اُولُوا الۡعَزۡمِ مِنَ الرُّسُلِ وَ لَا تَسۡتَعۡجِلۡ لَّہُمۡ ؕ کَاَنَّہُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَ مَا یُوۡعَدُوۡنَ ۙ لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا سَاعَۃً مِّنۡ نَّہَارٍ ؕ بَلٰغٌ ۚ فَہَلۡ یُہۡلَکُ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
অতএব, আপনি ধৈর্য্যধারণ করুন যেমনটি করেছিলো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। এবং তাদের জন্য (শাস্তির) প্রার্থনায় তড়িঘড়ি করবেন না। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা যেদিন তারা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন তাদের মনে হবে, তারা যেন দিনের এক দন্ডের বেশি পৃথিবীতে অবস্থান করেনি। এটা এক স্পষ্ট ঘোষণা, আল্লাহ হতে বিমুখ সম্প্রদায় ব্যতীত কাউকে ধ্বংস করা হবেনা। (আহক্বফ:৩৫)
فَاصۡبِرۡ صَبۡرًا جَمِیۡلًا
সুতরাং, আপনি সবরে জামিল তথা সুন্দরতম ধৈর্য্য অবলম্বন করুন। (মা'আরিজ:৫)
فَاصۡبِرۡ لِحُکۡمِ رَبِّکَ وَ لَا تَکُنۡ کَصَاحِبِ الۡحُوۡتِ ۘ اِذۡ نَادٰی وَ ہُوَ مَکۡظُوۡمٌ
অতএব, আপনি ধৈর্য্যধারণ করুন আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায়, এবং আপনি মাছওয়ালার (ইউনুস আঃ) ন্যায় অধৈর্য্য হবেন না। সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করছিল। (ক্বলাম:৪৮)
وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ حَتّٰی نَعۡلَمَ الۡمُجٰہِدِیۡنَ مِنۡکُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ ۙ وَ نَبۡلُوَا۠ اَخۡبَارَکُمۡ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যতক্ষণ না আমি জেনে নেই তোমাদের মধ্যে কে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল। এবং আমি তোমাদের কার্যাবলী পরীক্ষা করি। (মুহাম্মাদ:৩১)
সুতরাং, হে ভাই! বিপদে হীনমন্যতার কোন সবব নেই এবং নৈরাশ্যের কোন সুযোগ নেই। বরং প্রতিটি মুহুর্তে আমাকে-আপনাকে ভাবতে হবে, কিভাবে সবরের এই পরিক্ষাগুলোতে উত্তির্ন হওয়া যায়। এবং মহান রবের সামনে নিজের ঈমান ও আমলগুলোকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী প্রমাণ করা যায়। এবং সকল পরিস্থিতিতে নিজের আমলসমূহকে সুন্দর ও পরিপাটি করা যায়। অতএব, আমরা যে অবস্থাতেই থাকিনা কেনো মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের আমলগুলোকে সুন্দর করেই চলতে হবে।
সবরের ফজিলত
----------------------
মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোর'আনে এরশাদ করেন-
اِنۡ تَمۡسَسۡکُمۡ حَسَنَۃٌ تَسُؤۡہُمۡ ۫ وَ اِنۡ تُصِبۡکُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّفۡرَحُوۡا بِہَا ؕ وَ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا لَا یَضُرُّکُمۡ کَیۡدُہُمۡ شَیۡـًٔا ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطٌ
যদি তোমাদেরকে কল্যাণ স্পর্শ করে তাহলে তারা অসন্তষ্ট হয়; আর যদি অমঙ্গল উপস্থিত হয় তখন তারা আনন্দিত হয়ে থাকে, এবং যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো ও সংযমী হও তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবেনা। তারা যা করে - নিশ্চয়ই আল্লাহ তার পরিবেষ্টনকারী। (আল-ইমরান:১২০)
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَ صَابِرُوۡا وَ رَابِطُوۡا ۟ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা ধৈর্য্য অবলম্বন করো এবং সহিষ্ণু ও সুপ্রতিষ্ঠিত হও; এবং আল্লাহকে ভয় করো যেনো তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হতে পারো। (আল-ইমরানঃ২০০)
. وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ
আর সুসংবাদ ধৈর্য্যশীলদের জন্য। (বাকারা:১৫৫)
قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰہِ وَاسِعَۃٌ ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَہُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ
(আমার পক্ষ থেকে) বলে দিন- হে আমার মু’মিন বান্দারা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যারা এই দুনিয়ায় কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ। প্রশস্ত আল্লাহর পৃথিবী। নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলদেরকে ভরপুর পুরষ্কার দেয়া হবে। (যুমার:১০)
নবিজী সাঃ বলেন-
. وَمَا أُعْطِىَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ « مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
(আল্লাহর তা'আলার পক্ষ থেকে) সবর তথা ধৈর্য্যের চেয়ে উত্তম ও প্রসস্থ কোন কিছু মানুষকে দান করা হয়নি।
( সহীহুল বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০, মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮, ১৬৪৪, আহমাদ ১০৬০৬, ১০৬২২, ১০৬৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮০, দারেমী ১৬৪৬)
باب الصبر وَعَنْ أبي يَحْيَى صُهَيْبِ بْنِ سِنَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : »عَجَباًلأمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ آُلَّهُ لَهُ خَيْرٌ ، وَلَيْسَ ذَلِكَ لأِحَدٍ إِلاَّ للْمُؤْمِن : إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْراً لَهُ ، وَإِنْأَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خيْراً
لَهُ
আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য্যধারণ করে, ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।
(মুসলিম ২৯৯৯, আহমাদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমী ২৭৭৭)
عَنْ أَنَسٍ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : مَرَّ النَّبِيُّ صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم بِامْرَأَةٍ تَبْكِي عِنْدَ قَبْرٍ فَقَال : »اتَّقِي االلهوَاصْبِرِي « فَقَالَتْ : إِلَيْكَ عَنِّي ، فَإِنِّكَ لَمْ تُصَبْ بمُصِيبتى، وَلَمْ تعْرفْهُ ، فَقيلَ لَها : إِنَّه النَّبِيُّ صَلّى االلهُ عَلَيْهِوسَلَّم ، فَأَتتْ بَابَ النَّبِّي صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فلَمْ تَجِد عِنْدَهُ بَوَّابينَ ، فَقالتْ : لَمْ أَعْرِفْكَ ، فقالَ : » إِنَّماالصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأولَى « متفقٌ عليه.وفي رواية لمُسْلمٍ : » تَبْكِي عَلَى صَبيٍّ لَهَا
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’’ সে বলল, ‘আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি আপনি তাতে পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং (এ কথা শুনে) সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে (সরাসরি প্রবেশ করে) বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত সবর।’’
মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে, সে (মহিলাটি) তার মৃত শিশুর জন্য কাঁদছিল।
(সহীহুল বুখারী ১২৫২, ১২৮৩, ১৩০২, ৭১৫৪, মুসলিম ৯২৬,
তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ ৩১২৪, ইবনুূু মাজাহ ১৫৯৬, আহমাদ ১১৯০৮, ১২০৪৯, ১২৮৬০)
- باب الصبر وعَنْ عائشَةَ رضي اللَّهُ عنها أنَهَا سَأَلَتْ رسولَ اللَّه صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم عَن الطَّاعونِ ، فَأَخبَرَهَا أَنَهُ آَانَعَذَاباً يَبْعَثُهُ اللَّه تعالى عَلَى منْ يَشَاءُ ، فَجَعَلَهُ اللَّهُ تعالَى رحْمةً للْمُؤْمنِينَ ، فَلَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَقَعُ في الطَّاعُونفَيَمْكُثُ في بلَدِهِ صَابِراً مُحْتَسِباً يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلاَّ مَا آَتَبَ اللَّهُ لَهُ إِلاَّ آَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ الشَّهِيدِ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, ‘‘এটা আযাব; আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি ইচ্ছা করেন এটা প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিলেন। ফলে (এখন) যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে এবং সে নিজ দেশে ধৈর্য সহকারে নেকীর নিয়তে অবস্থান করবে, সে জানবে যে, তার নিকট তাই পৌঁছবে, যা আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য লিখে দিয়েছেন, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য শহীদের মত পুরস্কার রয়েছে।
(সহীহুল বুখারী ৩৪৭৪, ৫৭৩৪, ৬৬১৯ আহমাদ ২৩৮৩৭, ২৪৬৮৬, ২৫৬০৮)
باب الصبر وعَنْ أَنسٍ رضي اللَّه عنه قال : سَمِعْتُ رسول اللَّه صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقولُ : » إنَّ اللَّه عَزَّ وجَلَّ قَالَ: إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبدِي بحبيبتَيْهِ فَصبَرَ عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الْجنَّةَ « يُريدُ عينيْه ، رواه البخاريُّ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।
(সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫, ১৩৬০৭)
সুতরাং, হে ভাই আবারো ভেবে দেখুন। বাস্তবতায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। দীন কায়েমের এই রক্ত পিচ্ছিল পথে বিপদ আপনার নিত্যদিনের সংগী একথাটি খুব ভালোভাবে মনে রাখুন। এবং চিরসত্য এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। আর পবিত্র কোর'আনের আয়াতে কারিমাগুলো ও মোবারক হাদিসের ভাষ্যগুলো বারবার স্মরণ করতে থাকুন।
তাহলে কিভাবে সবর অবলম্বন করবো??
--------------------------------------------------
৩টি কাজের সমন্বয়ে আপনাকে-আমাকে সবর অবলম্বন করতে হবে। আরো সহজ ভাষায় বললে ৩ টি কাজের সমন্বয়কেই সবর তথা ধৈর্য্য বলা হয়। যদি আমরা সে ৩ টি কাজ একসাথে করতে পারি, তাহলে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার ঘোষণা অনুযায়ী আমরা সাবিরিন তথা ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবো। এবং সাবিরিনদের ব্যপারে পবিত্র কোর'আন ও মোবারক সুন্নায় যতো ফাজায়েল বর্ণিত হয়েছে তা লাভ করতে পারবো। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামিন।
★প্রথম কাজ-
الصبر على الطاعة
তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার আনুগত্যের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যত নির্দেশ প্রদান করেছেন, এগুলো পালন করতে গিয়ে, আমাদেরকে অনেক বাধা-বিপত্তি, দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগের সম্মুখীন হতে হবে। তখন সবকিছু মেনে নিয়ে মহান আল্লাহর আদেশ পালন করাই হলো- আল্লাহর আনুগত্যের উপর ধৈর্য্য।
★দ্বিতীয় কাজ
الصبر عن المعاصي
তথা গুনাহ পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যেসকল কাজসমূহ করতে নিষেধ করেছেন, সেকাজগুলো ছেড়ে দিতে গিয়ে বা ছেড়ে দেয়ার কারণে যত বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-কষ্ট আসবে "তা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াই হলো- গুনাহ পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য।
★তৃতীয় কাজ
الصبر على المصائب
তথা আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া সকল বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য্যধারণ করা। হা-হুতাশ বা মনক্ষুন্ন না করা। এবং এঅবস্থায়ও মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার যথাযথ প্রশংসা ও শোকরিয়া আদায়ে কোনরুপ কমতি এবং ত্রুটি না করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে বোঝার এবং ইতকান ও ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফিক দান করুন। পরিশেষে পবিত্র কোর'আনের ছোট্ট একটি সূরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। মহান রব্বুল আলামিন বলেন-
وَ الۡعَصۡرِ ۙ
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ ۙ
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ
সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য্যধারণে পরস্পরকে উদ্ধুদ্ধ করে।
سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العلمين
نحمده ونصلى على رسوله الكريم اما بعد، فاعوذ بالله من السيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم-اللذي خلق الموت والحياة ليبلوكم ايكم احسن عملا
ইমতিহান ও সবর তথা পরিক্ষা ও ধৈর্য্য মানব জীবনের এক অলংঘলীয় বাস্তবতা। কোন মানুষের পক্ষে দুনিয়াতে একটি সুস্থ, সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের জন্য জীবন চলার পথে উত্তির্ন হতে হয় বহু পরিক্ষায়। বাস্তব জীবনে অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে সে পরিক্ষাগুলোতে উত্তির্ন না হয়ে কোন মানুষের পক্ষে সুন্দর ক্যারিয়ার গঠন অসম্ভব।
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী আবাস্থলের সুখের জন্য আপনাকে-আমাকে পারি দিতে হয় বহু বাধা-বিপত্তি ও কষ্টের মহানদী। আহারে, অর্ধাহারে, অনাহারে কাটাতে হয় বহু দিন। আর অনিদ্রা ও তদ্রাচ্ছন্নতায় কাটে বহু রাত। স্বীয় মাতা-পিতা, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে একান্ত সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে মাসের পর মাস।
সুবহানাল্লাহ! এরপরও আমরা থেমে থাকিনা। বিপদের বাধ মানিনা। কষ্টের পরোয়া করিনা। কেনো?! কিসের জন্য এতো কষ্ট?! এইতো ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য। কেননা, চলমান জীবনের ধরপাকরে যদি আমরা কাবু হয়ে যাই, তাহলে তো এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের সেই অনিশ্চিত সুখগুলো আরো বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সুবহানাল্লাহ! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য যদি আমাদের এতো এতো পরিক্ষায় ধৈর্য্যের সাথে উত্তির্ন হতে হয়; সবরের এক দীর্ঘ মারহালা পাড়ি দিতে হয়; তাহলে চিরস্থায়ী আখেরাতের সুনিশ্চিত ও চিরস্থায়ী সুখের জন্য মহান রবের পরিক্ষায় উত্তির্ন হতে ও ধৈর্য্যধারণ করতে কেনো আমরা প্রস্তুত থাকিনা??!
হে ভাই! যদি পরিক্ষা ও সবর ছাড়া দুনিয়ার এই সামান্য ও ক্ষণস্থায়ী সুখ অর্জনই সম্ভব না হয়, তাহলে কিভাবে পরিক্ষা ও ধৈর্য্য ছাড়া আখেরাতের সুনিশ্চিত ও চিরস্থায়ী সুখ অর্জন সম্ভব হবে???!
যদি দুনিয়াদাররা দুনিয়া অর্জনের জন্য এতো বেশি কষ্ট সহ্য করতে পারে, তাহলে আমরা আখেরাতের দাবিদাররা কেনো দীন প্রতিষ্ঠা তথা আখেরাত অর্জনের জন্য এতোটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারিনা??!
আমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে উঁচু মর্যাদা আশা করি, অথচ উঁচু মর্যাদায় আস্বীন হওয়ার মাধ্যম তথা মহান রবের পরিক্ষাসমূহে উত্তির্ন হতে যথাযথ চেষ্টা-ফিকির ও মুজাহাদা করিনা। আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করি, কিন্তু আল্লাহর পথে আসতে থাকা বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য্য অবলম্বন করিনা।
{প্রিয় ভাই আমার! যে ব্যক্তি দারুল আসবাবের বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, সে মুলত নিজের সাথেই প্রতারণা করেছে।}
অল্লাহি! সফলতা কখনোই সে ব্যক্তির পদচুম্বন করবেনা, যে ব্যক্তি বিপদে ধৈর্য্যধারণ করেনা এবং মহান রবের দেয়া বাস্তবসম্মত পরিক্ষাসমূহের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করেনা। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোর'আনে এরশাদ করেছেন-
وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ
আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরিক্ষা করবো কিছু ভয়-ভীতি, ক্ষুধার কষ্ট, জান-মাল, ফসল ও ফল-ফলাদির ক্ষতি দ্বারা। (অতএব, হে নাবী) আপনি (শুধু) ধৈর্য্যশীলদে সুসংবাদ দান করুন। ( বাকারাঃ১৫৫)
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡہُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ
তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থা প্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিলো এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিলো; এমন কি রাসূল ও বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলো, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? সতর্ক হও, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (বাকারাঃ২১৪)
দেখুন আল্লাহর পবিত্র কালামের ভাষ্য আমাদের কি সবক দিচ্ছে। প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর সাহাবিদের উপর বিপদ-মুসিবত ও কষ্টের যে দীর্ঘ পরিক্ষা এসেছিলো, আমাদের থেকে মহান রব্বুল আলামিন সে পরিক্ষা না নিয়ে জান্নাত দেবেন না। তিনি আমাদেরকে বলে দিলেন সেই কষ্টের পরিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত আমরা যেনো জান্নাতে প্রবেশের কল্পনাও না করি।
আমার ভাই! আমাদের সবার জীবনে কোন না কোনভাবে পরিক্ষা ও ধৈর্য্যের মারহালাগুলো আসতেই থাকবে। আমরা না চাইলেও আসতে থাকেব। যদি আমরা অপ্রস্তুত থাকি তবু্ও আসতে থাকবে। যতোদিন আমরা বেঁচে থাকবো ততোদিন অনিচ্ছা স্বত্তেও এই পরিক্ষাগুলো আমাদের দিয়ে যেতে হবে। বিশেষভাবে যারা মুজাহিদীন ও দায়ী ইলাল্লাহ রয়েছেন তাঁদের জন্য সবরকে সংগী করা ছাড়া এক কদমও অগ্রসর হওয়ার সুযোগ নেই। তাই সব কিছু মেনে নিয়ে আমাদেরকে এই পরিক্ষাগুলোতে পাশ করতেই হবে। অন্যথায় যে জাহান্নাম!!! আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোর'আনে এরশাদ করেন-
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ یَعۡلَمَ الصّٰبِرِیۡنَ
তোমরা কি ধারণা করছো যে, তোমারা জান্নাতে চলে যাবে?! অথচ, আল্লাহ তাআলা এটা জেনে নেবেন না যে, তোমাদের মধ্যে কারা কারা জিহাদ করেছে ও (জিহাদের পথে আগত সকল দুঃখ-কষ্টে) ধৈর্য্যধারণ করেছে। (আল-ইমরান: ১৪২)
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡہُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ
তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থা প্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিলো এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিলো; এমন কি রাসূল ও বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলো, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? সতর্ক হও, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (বাকারাঃ২১৪)
فَاصۡبِرۡ کَمَا صَبَرَ اُولُوا الۡعَزۡمِ مِنَ الرُّسُلِ وَ لَا تَسۡتَعۡجِلۡ لَّہُمۡ ؕ کَاَنَّہُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَ مَا یُوۡعَدُوۡنَ ۙ لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا سَاعَۃً مِّنۡ نَّہَارٍ ؕ بَلٰغٌ ۚ فَہَلۡ یُہۡلَکُ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
অতএব, আপনি ধৈর্য্যধারণ করুন যেমনটি করেছিলো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। এবং তাদের জন্য (শাস্তির) প্রার্থনায় তড়িঘড়ি করবেন না। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা যেদিন তারা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন তাদের মনে হবে, তারা যেন দিনের এক দন্ডের বেশি পৃথিবীতে অবস্থান করেনি। এটা এক স্পষ্ট ঘোষণা, আল্লাহ হতে বিমুখ সম্প্রদায় ব্যতীত কাউকে ধ্বংস করা হবেনা। (আহক্বফ:৩৫)
فَاصۡبِرۡ صَبۡرًا جَمِیۡلًا
সুতরাং, আপনি সবরে জামিল তথা সুন্দরতম ধৈর্য্য অবলম্বন করুন। (মা'আরিজ:৫)
فَاصۡبِرۡ لِحُکۡمِ رَبِّکَ وَ لَا تَکُنۡ کَصَاحِبِ الۡحُوۡتِ ۘ اِذۡ نَادٰی وَ ہُوَ مَکۡظُوۡمٌ
অতএব, আপনি ধৈর্য্যধারণ করুন আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায়, এবং আপনি মাছওয়ালার (ইউনুস আঃ) ন্যায় অধৈর্য্য হবেন না। সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করছিল। (ক্বলাম:৪৮)
وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ حَتّٰی نَعۡلَمَ الۡمُجٰہِدِیۡنَ مِنۡکُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ ۙ وَ نَبۡلُوَا۠ اَخۡبَارَکُمۡ
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যতক্ষণ না আমি জেনে নেই তোমাদের মধ্যে কে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল। এবং আমি তোমাদের কার্যাবলী পরীক্ষা করি। (মুহাম্মাদ:৩১)
সুতরাং, হে ভাই! বিপদে হীনমন্যতার কোন সবব নেই এবং নৈরাশ্যের কোন সুযোগ নেই। বরং প্রতিটি মুহুর্তে আমাকে-আপনাকে ভাবতে হবে, কিভাবে সবরের এই পরিক্ষাগুলোতে উত্তির্ন হওয়া যায়। এবং মহান রবের সামনে নিজের ঈমান ও আমলগুলোকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী প্রমাণ করা যায়। এবং সকল পরিস্থিতিতে নিজের আমলসমূহকে সুন্দর ও পরিপাটি করা যায়। অতএব, আমরা যে অবস্থাতেই থাকিনা কেনো মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের আমলগুলোকে সুন্দর করেই চলতে হবে।
সবরের ফজিলত
----------------------
মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোর'আনে এরশাদ করেন-
اِنۡ تَمۡسَسۡکُمۡ حَسَنَۃٌ تَسُؤۡہُمۡ ۫ وَ اِنۡ تُصِبۡکُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّفۡرَحُوۡا بِہَا ؕ وَ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا لَا یَضُرُّکُمۡ کَیۡدُہُمۡ شَیۡـًٔا ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطٌ
যদি তোমাদেরকে কল্যাণ স্পর্শ করে তাহলে তারা অসন্তষ্ট হয়; আর যদি অমঙ্গল উপস্থিত হয় তখন তারা আনন্দিত হয়ে থাকে, এবং যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো ও সংযমী হও তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবেনা। তারা যা করে - নিশ্চয়ই আল্লাহ তার পরিবেষ্টনকারী। (আল-ইমরান:১২০)
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَ صَابِرُوۡا وَ رَابِطُوۡا ۟ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা ধৈর্য্য অবলম্বন করো এবং সহিষ্ণু ও সুপ্রতিষ্ঠিত হও; এবং আল্লাহকে ভয় করো যেনো তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হতে পারো। (আল-ইমরানঃ২০০)
. وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ
আর সুসংবাদ ধৈর্য্যশীলদের জন্য। (বাকারা:১৫৫)
قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰہِ وَاسِعَۃٌ ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَہُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ
(আমার পক্ষ থেকে) বলে দিন- হে আমার মু’মিন বান্দারা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যারা এই দুনিয়ায় কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ। প্রশস্ত আল্লাহর পৃথিবী। নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলদেরকে ভরপুর পুরষ্কার দেয়া হবে। (যুমার:১০)
নবিজী সাঃ বলেন-
. وَمَا أُعْطِىَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ « مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
(আল্লাহর তা'আলার পক্ষ থেকে) সবর তথা ধৈর্য্যের চেয়ে উত্তম ও প্রসস্থ কোন কিছু মানুষকে দান করা হয়নি।
( সহীহুল বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০, মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮, ১৬৪৪, আহমাদ ১০৬০৬, ১০৬২২, ১০৬৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮০, দারেমী ১৬৪৬)
باب الصبر وَعَنْ أبي يَحْيَى صُهَيْبِ بْنِ سِنَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : »عَجَباًلأمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ آُلَّهُ لَهُ خَيْرٌ ، وَلَيْسَ ذَلِكَ لأِحَدٍ إِلاَّ للْمُؤْمِن : إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْراً لَهُ ، وَإِنْأَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خيْراً
لَهُ
আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য্যধারণ করে, ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।
(মুসলিম ২৯৯৯, আহমাদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমী ২৭৭৭)
عَنْ أَنَسٍ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : مَرَّ النَّبِيُّ صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم بِامْرَأَةٍ تَبْكِي عِنْدَ قَبْرٍ فَقَال : »اتَّقِي االلهوَاصْبِرِي « فَقَالَتْ : إِلَيْكَ عَنِّي ، فَإِنِّكَ لَمْ تُصَبْ بمُصِيبتى، وَلَمْ تعْرفْهُ ، فَقيلَ لَها : إِنَّه النَّبِيُّ صَلّى االلهُ عَلَيْهِوسَلَّم ، فَأَتتْ بَابَ النَّبِّي صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فلَمْ تَجِد عِنْدَهُ بَوَّابينَ ، فَقالتْ : لَمْ أَعْرِفْكَ ، فقالَ : » إِنَّماالصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأولَى « متفقٌ عليه.وفي رواية لمُسْلمٍ : » تَبْكِي عَلَى صَبيٍّ لَهَا
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’’ সে বলল, ‘আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি আপনি তাতে পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং (এ কথা শুনে) সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে (সরাসরি প্রবেশ করে) বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত সবর।’’
মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে, সে (মহিলাটি) তার মৃত শিশুর জন্য কাঁদছিল।
(সহীহুল বুখারী ১২৫২, ১২৮৩, ১৩০২, ৭১৫৪, মুসলিম ৯২৬,
তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ ৩১২৪, ইবনুূু মাজাহ ১৫৯৬, আহমাদ ১১৯০৮, ১২০৪৯, ১২৮৬০)
- باب الصبر وعَنْ عائشَةَ رضي اللَّهُ عنها أنَهَا سَأَلَتْ رسولَ اللَّه صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم عَن الطَّاعونِ ، فَأَخبَرَهَا أَنَهُ آَانَعَذَاباً يَبْعَثُهُ اللَّه تعالى عَلَى منْ يَشَاءُ ، فَجَعَلَهُ اللَّهُ تعالَى رحْمةً للْمُؤْمنِينَ ، فَلَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَقَعُ في الطَّاعُونفَيَمْكُثُ في بلَدِهِ صَابِراً مُحْتَسِباً يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلاَّ مَا آَتَبَ اللَّهُ لَهُ إِلاَّ آَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ الشَّهِيدِ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, ‘‘এটা আযাব; আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি ইচ্ছা করেন এটা প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিলেন। ফলে (এখন) যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে এবং সে নিজ দেশে ধৈর্য সহকারে নেকীর নিয়তে অবস্থান করবে, সে জানবে যে, তার নিকট তাই পৌঁছবে, যা আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য লিখে দিয়েছেন, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য শহীদের মত পুরস্কার রয়েছে।
(সহীহুল বুখারী ৩৪৭৪, ৫৭৩৪, ৬৬১৯ আহমাদ ২৩৮৩৭, ২৪৬৮৬, ২৫৬০৮)
باب الصبر وعَنْ أَنسٍ رضي اللَّه عنه قال : سَمِعْتُ رسول اللَّه صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقولُ : » إنَّ اللَّه عَزَّ وجَلَّ قَالَ: إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبدِي بحبيبتَيْهِ فَصبَرَ عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الْجنَّةَ « يُريدُ عينيْه ، رواه البخاريُّ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।
(সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫, ১৩৬০৭)
সুতরাং, হে ভাই আবারো ভেবে দেখুন। বাস্তবতায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। দীন কায়েমের এই রক্ত পিচ্ছিল পথে বিপদ আপনার নিত্যদিনের সংগী একথাটি খুব ভালোভাবে মনে রাখুন। এবং চিরসত্য এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। আর পবিত্র কোর'আনের আয়াতে কারিমাগুলো ও মোবারক হাদিসের ভাষ্যগুলো বারবার স্মরণ করতে থাকুন।
তাহলে কিভাবে সবর অবলম্বন করবো??
--------------------------------------------------
৩টি কাজের সমন্বয়ে আপনাকে-আমাকে সবর অবলম্বন করতে হবে। আরো সহজ ভাষায় বললে ৩ টি কাজের সমন্বয়কেই সবর তথা ধৈর্য্য বলা হয়। যদি আমরা সে ৩ টি কাজ একসাথে করতে পারি, তাহলে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার ঘোষণা অনুযায়ী আমরা সাবিরিন তথা ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবো। এবং সাবিরিনদের ব্যপারে পবিত্র কোর'আন ও মোবারক সুন্নায় যতো ফাজায়েল বর্ণিত হয়েছে তা লাভ করতে পারবো। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামিন।
★প্রথম কাজ-
الصبر على الطاعة
তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার আনুগত্যের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যত নির্দেশ প্রদান করেছেন, এগুলো পালন করতে গিয়ে, আমাদেরকে অনেক বাধা-বিপত্তি, দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগের সম্মুখীন হতে হবে। তখন সবকিছু মেনে নিয়ে মহান আল্লাহর আদেশ পালন করাই হলো- আল্লাহর আনুগত্যের উপর ধৈর্য্য।
★দ্বিতীয় কাজ
الصبر عن المعاصي
তথা গুনাহ পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যেসকল কাজসমূহ করতে নিষেধ করেছেন, সেকাজগুলো ছেড়ে দিতে গিয়ে বা ছেড়ে দেয়ার কারণে যত বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-কষ্ট আসবে "তা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াই হলো- গুনাহ পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য।
★তৃতীয় কাজ
الصبر على المصائب
তথা আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া সকল বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য্যধারণ করা। হা-হুতাশ বা মনক্ষুন্ন না করা। এবং এঅবস্থায়ও মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার যথাযথ প্রশংসা ও শোকরিয়া আদায়ে কোনরুপ কমতি এবং ত্রুটি না করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে বোঝার এবং ইতকান ও ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফিক দান করুন। পরিশেষে পবিত্র কোর'আনের ছোট্ট একটি সূরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। মহান রব্বুল আলামিন বলেন-
وَ الۡعَصۡرِ ۙ
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ ۙ
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ
সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য্যধারণে পরস্পরকে উদ্ধুদ্ধ করে।
سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العلمين
Comment