বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
ইন্নালহামদালিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি সাল্লাম তাসলিমান কাসীরা
‘আম্মা বা’আদ
মালিকুল মুলক রাব্বুল ‘আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
“মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” (সূরা সফ, ৬১: ২-৪)
তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [আত তাওবাহ, ১৬]
আপনি কি সেসব লোককে দেখেননি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি ক্বিতালের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর ক্বিতাল ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। ( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখিরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না। [আন-নিসা, ৭৭]
গত বেশ কয়েক বছরে তাওহীদ ও জিহাদের দাওয়াহ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে বেশ অনেকটুকুই ছড়িয়ে পড়েছে। যে প্রজন্মের আগে সময় কাটতো জাহিলিয়্যাহর বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে, আজ তাদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের কাছে এসব কিছু ছাপিয়ে জিহাদের ডাক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যারা আগে নিজেদের সালাত নিয়েই চিন্তা করতো না, আজ উম্মাহর রক্তের নদী দেখে তাদের হৃদয় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।। কুফফার ও তাওয়াগীত যতোই জিহাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যতোই জিহাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে, যতই জিহাদের ডাককে চাপা দিতে চাইছে ততোই এ ডাক আরো ছড়িয়ে পড়ছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য তাঁর স্বীয় কাজে প্রবল থাকেন যদিও অধিকাংশ লোকেরাই তা জানেন না।
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। [আত তাওবাহ, ৩২]
তবে চিরাচরিত সত্য হল একটি কাজ যখন শুরু হয় তখন মান নিয়ন্ত্রন করা যতোটুকু সহজ হয়, কাজের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে তা আর অতোটা সহজ থাকে না। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে এটা সাধারন ভাবে সত্য। এ কথা অনলাইন দাওয়াহ ও দা’ঈদের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা যদি অনলাইনে জিহাদের দাওয়াহ এবং দা’ঈদের দিকে তাকাই তাহলে এ সত্যের প্রমান পাওয়া যায়। যে মানহাজের দাওয়াহ আমরা করছি, যে মানহাজের অনুসরন আমরা করছি তার শর্ত, বৈশিষ্ট্য এবং দাবিগুলো সম্পর্কে দেখা যায় অনেক ভাই-ই ওয়াকিবহাল নন।
যেমন, আজকাল একটি কথা খুব বেশি শোনা যায় আর তা হল “মানহাজের ভাই” বা “অমুক আমাদের মানহাজের”। এধরনের কথা দ্বারা বোঝানো হয় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি জিহাদের মানহাজের অনুসারী। মুসলিম হিসেবে আমাদের মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকাই যথেষ্ট। ‘আমভাবে এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই, এক মুসলিমের সম্পদ, রক্ত, সম্মানকে তার মুসলিম ভাই হেফাযত করবে। পরিচয় হিসেবে এটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত। সেখানে আলাদা করে “মানহাজের ভাই” বা এধরনের শব্দাবলীর প্রয়োগ কতোটা যৌক্তিক সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তার উপর এ ধরনের শব্দাবলী ব্যবহৃত হয় সম্পূর্ণ বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন ভাবে। খোজ নিলে দেখা যায় যাকে বা যাদেরকে “মানহাজের ভাই” বলা হচ্ছে তিনি না কোন জিহাদী তানযীমের সাথে যুক্ত, আর না সক্রিয়ভাবে কোন ধরনের জিহাদী কর্মকান্ডের সাথে। এবং এই ভাইদের বিশাল একটা অংশকে যখন জিহাদের কাজের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যান। বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে সেলিব্রিটি হিসেবে এবং “জিহাদী সেলিব্রিটি, মানহাজের ভাই” হিসেবে পরিচিত তাদের জন্য এটা প্রায় ১০০% ক্ষেত্রে সত্য। তাহলে এ কোন মানহাজের কথা হচ্ছে? যারা এরকম বলে থাকেন তাদের মধ্যে প্রচলিত ধারনাটা হল যে ব্যক্তি জিহাদ সমর্থন করে, কিংবা তানযীম আল-ক্বা’ইদাকে সমর্থন করে। যারা জিহাদ সমর্থন করেন, যারা ৯/১১ সমর্থন করেন, শাতেম মারা সমর্থন করেন, জিহাদ করা উচিত সমর্থন করেন তারা হল “মানহাজের ভাই”, তারা হল আমাদের “মানহাজের”। কিন্তু আসলে কি মানহাজ বলতে এটাকেই বোঝানো হয়, মানহাজ বলতে কি নিছক কোন তাত্ত্বিক ও নিষ্ক্রিয় সমর্থনের মনোভাবকে বোঝানো হয়? আর এটা কি বৈশ্বিক জিহাদ তথা তানযীম আল-ক্বা’ইদার মানহাজ?
মানহাজ বলতে আসলে কি বোঝানো হয়? নাতিদীর্ঘ অ্যাকাডেমিক আলোচনায় না গিয়ে সাধারন ভাবে বলা যায় মানহাজ হল কর্মপদ্ধতি। যদিও মানহাজের সবচেয়ে প্রচলিত সংজ্ঞা হলঃ মানহাজ হল ‘ইলম, গ্রহন, বিশ্লেষন ও বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি, তথাপি একথা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত মানহাজের পরিধি শুধুমাত্র ‘ইলম অর্জন ও বাস্তবায়নের মধ্যে সীমিত না, বরং তা আরো ব্যাপক। আধুনিক সময়ে মানহাজের সর্বাধিক প্রচলিত অর্থ হল দ্বীন কায়েমের জন্য কর্মপদ্ধতি। যেমন ধরুন, কেউ যদি বলে দ্বীন কায়েমের পন্থা হল দাওয়াত ও তাযকিয়্যাহ এবং এ বিশ্বাসের উপর কাজ করে, তবে তার মানহাজ হল দাওয়াহ ও তাযকিয়্যাহর মানহাজ। যেমন তাবলীগ জামাত। কেউ যদি বলে দ্বীন প্রতিষ্ঠার উপায় হল ইসলামী সমাজ বিনির্মান ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া, এবং সে এই তত্ত্বের উপর আমল করে তবে এটা তার মানহাজ। যেমন - জামায়াতে ইসলামী বা ইখওয়ানুল মুসলিমীন। কেউ যদি মনে করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ হল আথারী আক্বীদার দাওয়াহ দেওয়া, এবং সে এই বিশ্বাসের উপর কাজ করে তবে তার সেটাই তার মানহাজ, যেমন শায়খ আলবানীর সালাফি দাওয়াহ। কেউ যদি মনে করে উম্মাহর উত্তরনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তারবিয়্যাহ, তাসফিয়াহ, তা’লীম, দাওয়াহ, এবং সে এই বিশ্বাসের উপর ‘আমল করে তবে সেটাই তার মানহাজ।
এখানে লক্ষনীয় হল মানহাজ সরাসরি আমলের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। মানহাজ বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত। নিছক সমর্থন বা সহমর্মিতার সাথে না। একারনে শুধুমাত্র সমর্থনের সাথে মানহাজের যোগসূত্র খোজা হাস্যকর। নির্দিষ্ট কোন একটি আদর্শ ধারন ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি মানহাজের অনুসরন সম্ভব। তবে জিহাদের ক্ষেত্রে যখন এটা বলা হয় তখন এটা আরো বেশি গুরুতর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারন জিহাদ হল একটি ইবাদাত, যা আমাদের সময় একটি ফরয ইবাদাত। ইবাদাতের ক্ষেত্রে সমর্থনের কোন ধারনা সাহাবায়ে কেরামদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত দ্বীন ইসলামে কখনই ছিল না। কোন সুস্থ মস্তিকের দ্বীনের বুঝ সম্পন্ন ব্যক্তিকে আপনি কখনো বলতে দেখবেন না, “আমি মাগরিবের তিন রাকাত সালাত” সমর্থন করি। নিজে আদায় করি না।“ তার চেয়েও বড় কথা হল এই ব্যাক্তিকে কেউ কখনো আমার “নামাজী ভাই” বলে কিন্তু সম্বোধন করবে না, আর নাই বা সে নামাজী হিসেবে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য হবে শার’ঈ দৃষ্টিকন থেকে কিংবা সাধারন মানবিক বিচার-বিবেচনার দৃষ্টিকোণ থেকে, যতোক্ষন না সে ফরয সালাত আদায় না করছে। একইভাবে কেউ কিন্তু কখনো বলে না “আমি রামাদ্বানের সিয়াম সমর্থন করি, ফরয মনে করি, যারা সিয়াম পালন করছে তাদের সমর্থন করি, তারা খুব ভালো কাজ করছে, তবে আমি নিজে সিয়াম পালন করি না।“ সম্ভবত এখানে একটু ভুল করলাম। দুঃখজনক ভাবে আমাদের সময়ে কিছু যিন্দিক এবং নামধারী “সেক্যুলার” মুসলিম বাংলাদেশে আছে যারা এমন কথা বলে। তবে শার’ঈ ভাবে এ ধরনের কথার কোন ভিত্তি নেই, এবং ফারয আমল থেকে বিনা ওজরে বিরত থাকার কারনে এই ব্যক্তি ফাসিক্ব বলে গন্য হবে। এই দ্বীন তাত্ত্বিকতার দ্বীন না, দ্বীনের আবশ্যক বিষয়ে সমর্থনের জায়গা আল্লাহ আমাদেরকে দেননি। ইবাদাতের বিষয়গুলো আমাদের সমর্থন সাপেক্ষ নয়, বরং এগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক হল শোনার ও মানার। আপনি জেনেছেন ফযরের দুই রাকাত সালাত ফরয এখন আপনি বাধ্য এই দুই রাকাত সালাত আদায় করতে। আপনি যদি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর অবাধ্যতা করলেন এবং আপনার এ অবস্থানের কোন শার’ঈ যৌক্তিকতা বা জাস্টিফিকেশান নেই। এখানে আপনি সমর্থনের কথা বলে পার পাবেন না।
এখন চিন্তা করুন জিহাদের কথা। সালাফদের, সকল মাযহাবের ইমামদের অবস্থান অনুযায়ী বর্তমানের জিহাদ ফারযুল আইন। অর্থাৎ বর্তমানে জিহাদ প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয যেভাবে ব্যক্তির উপর ফযরের দুই রাকাত সালাত ফরয। [বিস্তারিত জানতে দেখুন, “মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা” শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম]। একই সাথে শাহ আব্দুল আযীযের বিখ্যাত ফাতাওয়া, যা এখনো রদ করা কিংবা অপবনোদন করা এখনো সম্ভব হয়নি অনুযায়ী হিন্দুস্তান দারুল হারব, যেখানে জিহাদ ফরয। এবং যেসব “জিহাদ সমর্থক মানহাজের ভাই” আছেন তারাও জিহাদ যে ফারযুল আইন তা স্বীকার করেন। তাহলে প্রশ্ন হল কেউ যদি এটা স্বীকার করে তবে তার করণীয় কি? অবশ্যই তার জন্য আবশ্যক এই ফরয কাজে শামিল হওয়া। এখানে মাঝামাঝি কোন কিছু নেই। দ্বীনের যেকোন ফরয বিধান সম্পর্কে ব্যক্তি অবগত হওয়া মাত্র তার উপর ওই বিধান ফরয। অর্থাৎ সে বাধ্য তখন তা পালন করতে। এখানে নিছক সমর্থনের কোন সু্যোগ নেই। আর মুসলিম মাত্রই জিহাদ সমর্থন করে, শাহবাগী ফরিদউদ্দীন মাসউদও জিহাদ সমর্থন করে, কারন জিহাদ অস্বীকার করা কুফর। সমস্যাটা জিহাদ সমর্থন নিয়ে কখনোই ছিল না, যে ‘আলিমরা সালাহ আদ-দ্বীনকে বলেছিল ক্রুসেডারদের সাথে মিত্রতা করতে তারাও কিন্তু জিহাদ সমর্থন করতেন।
কিন্তু তারা কি সমর্থন করতে না? তারা কিসের বিপক্ষে ছিলেন? তাদের সমস্যাটা কি নিয়ে ছিল? তাদের সমস্যা ওই মূহুর্তে জিহাদ করা নিয়ে। তাদের সমস্যা ছিল তাত্ত্বিকভাবে যা দ্বীনের ফরয বিধান হিসেবে স্বীকার তারা করছেন তার উপর সঠিক ভাবে আমল করা নিয়ে। নিজে জিহাদ করা নিয়ে। যতোক্ষন জিহাদ একটি দূরবর্তী, তাত্ত্বিক বিষয় থাকে ততোক্ষন সবাই এর পক্ষেই কথা বলে। কিন্তু যখনই তাগুতের সামনে আজ, এখন, এখানে জিহাদ করার কথা আসে, তখন সমস্যাটা ব্যাপক ভাবে দেখা দেয়। দুঃখজনক ভাবে এই হাজার বছর পুরনো ব্যাধি এখনো প্রবল বিক্রমে বিদ্যমান, এবং আজ শুধুমাত্র উলামায়ে সু’রাই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত না।
এতো গেল ফরয জিহাদের কথা, আর জিহাদের মানহাজ অর্থাৎ দ্বীন কায়েমের পদ্ধতি হিসেবে জিহাদকে বেছে নেওয়া এবং তার অনুসরন করার অর্থ কি? এ ব্যাপারে আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
“সুতরাং, এই মানহাজ, যা আমাদের সামনে সুবাহের ন্যায় স্বচ্ছ, তা কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শারী‘আহ্-এর দালীলে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্ অপর এক ক্বওম নিয়ে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফফারদের প্রতি অতি কঠোর, তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আর আল্লাহ্ প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।‘[আল-মাইদাহঃ৫৪]
সুতরাং, এই আয়াতটি আমরা যে অবস্থার মধ্যে আছি সেই সম্পর্কে বলছেঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে,…”
যখন রিদ্দাহ্/দ্বীন-ত্যাগ সংঘটিত হয়, তখন মানুষকে দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনার জন্য কি কি গুণাবলীর প্রয়োজন? তো এখানে ৬টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার কথা থেকে শুরু করেঃ
“…যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফফারদের প্রতি অতি কঠোর,…”। সুতরাং, এই গুণাবলী অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরীঃ
[১] আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি একান্ত ভালোবাসা
[২] ঈমানদারদের প্রতি বিনয় ও সহানুভূতি
[৩] কল্যাণের সাথে সাহায্য করা এবং তা করা সর্বোত্তম পদ্ধতিতে
[৪] কুফফারদের প্রতি কঠোরতা, আর এটা ইসলামের সবচাইতে শক্তিশালী বন্ধনঃ আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ (আনুগত্য এবং সম্পর্কচ্ছেদ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমরা ঈমানদারদের সাথে আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সম্পর্ক স্থাপন করি, এবং আমরা কুফফারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি, আর তাদের সাথে খুব কঠোর আচরণ করি ।
[৫,৬] এরপর ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গুণাবলী হলঃ “…তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না…”।
আর, মানুষদেরকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনার জন্য, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা – এ বৈশিষ্ট্য দু’টির গুরুত্ব অত্যাধিক।
সুতরাং, যারা এমন মনে করে যে, মানুষকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব (এই গুণাবলী অর্জন ব্যতীত) এবং একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন কিনা ইসলামের ছায়া পৃথিবীর বুক থেকে অপসারিত হয়েছে, তবে এমন মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেন নি । কারণ এই আয়াতটি সম্পূর্নরূপে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান একটি আয়াত ।
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া ]
অতঃপর শায়খ উসামা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিমোক্ত হাদীসটি উল্লেখ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনার পর বলেন –
“আর আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, আর তা হলঃ শ্রবন, আনুগত্য, জিহাদ, হিজরাহ এবং জামা‘আহ।”
[ইমাম আহমাদ ও ইমাম আত-তিরমিযির দ্বারা বর্ণিত]
এখানে বিষয়টি হল, প্রথম পাঁচটি বিষয় যা হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, এগুলোকে অপর পাঁচটি বিষয় ব্যতীত মানবজাতির জন্য একটি শাসনব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । একইভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে কমপক্ষে এবং অন্তরের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়, যখন সে মানবরচিত বিধানের দ্বারা শাসন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের কর্তৃত্ব থাকে না। আর আমরা যদি এই পাঁচটি বিষয়কে মনযোগ দিয়ে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন গোত্রের প্রতি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দা’ওয়াহ্*-এর বাস্তবতার সাথে এই পাঁচটি বিষয় সম্পূর্নরূপে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দৃঢ়সমর্থকঃ
আর আমরা যখন আল্লাহর কিতাব এবং আল্লাহর রসূলের ﷺ সুন্নাহর অনুসরণের চেষ্টা করি, তখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনের সম্প্রসারণের পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছেঃ
[১] একটি জামা‘আহ্
[২] আদেশ শোনা
[৩] আনুগত্য করা
[৪] হিজরাহ করা
[৫] জিহাদ করা
সুতরাং, যারা হিজরাহ করার এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ত্যাগ স্বীকার ব্যতীত ইসলামের জন্য কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এরূপ মানুষেরা মুহাম্মাদের ﷺ মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর যদি তারা বুঝে থাকে, তবে তারা এর উপর ‘আমল করেনি, বরং তারা অন্যান্য ধরনের আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের দ্বারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। সুতরাং, এরূপ মানুষেরা এ সকল বড় ‘ইবাদাতসমূহের ভারী ফলাফল থেকে পলায়ন করছে, কারণ নিশ্চয়ই জিহাদ একটি কষ্টকর ‘আমল, যা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, এখন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জামা‘আহ্ ও জিহাদের গুরুত্ব অত্যাধিক।“
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]
সুতরাং, কিছু সুনির্দিষ্ট গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্য এ মানহাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। শায়খ উসামা বিন লাদিনের ভাষায় একজন ব্যক্তি তখন এ মানহাজের অনুসরনকারী হবে যখন সে মানহাজের আবশ্যক শর্তাবলীর উপর আমল করবে। অর্থাৎ সে জামা’আবদ্ধ হবে, শুনবে ও মানবে, হিজরাহ ও জিহাদ করবে। অর্থাৎ মানহাজের বিষয়টি আমলের সাথে সম্পর্কিত কোন একটি মনোভাব ধারন করার সাথে না, এবং এটাই স্বাভাবিক। এবং শায়খ উসামা বিল লাদিনের রাহিমাহুল্লাহর কথা থেকে স্পষ্ট যে এ মানহাজ সমর্থনের মানহাজ না, বরং এ মানহাজ হল জামা’আবদ্ধ হওয়া, শোনা ও মানা, হিজরাহ ও জিহাদের মানহাজ। এবং এখানে জামা’আবদ্ধ হবার উল্লেখ দেখে অস্বস্তি বোধ করার কিছু নেই, কারন জিহাদ মূলত একটি জামা’আবদ্ধ ইবাদাত। [আমরা এক্ষেত্রে জামা’আবদ্ধ হওয়া বলতে একটি খাস মুক্বাতীল জামা’আকে বোঝাচ্ছি, এবং নিজেদের জামা’আর ব্যাপারে ‘আম অর্থ প্রয়োগ করে নিজেদের জামা’আহকেই খাওয়ারিজদের মতো মুসলিমদের একমাত্র বৈধ জামা’আ মনে করি না]
তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি যে এ কাজগুলো উপযুক্ত ওজর ছাড়া ছেড়ে দেয়, কিন্তু বলে সে এ মানহাজের সমর্থন করে তাকে “মানহাজের ভাই” বলা যেতে পারে? শার’ঈ বিচারে, মানহাজের অর্থগত বিচারের এবং বর্তমান সময়ে যারা জিহাদের মানহাজকে আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরুজ্জীবিত করেছেন তাদের বিবৃত মাপকাঠির আলোকে, কোন বিবেচনাতেই তো এরকম একজন ব্যক্তিকে - সে যতোই অন্তরঙ্গ বন্ধু বা শ্রদ্ধাভাজন দ্বীনি ভাই হোন না কেন – এই মানহাজের অনুসারী বলা যায় না। সমর্থনের কোন মানহাজ এ দ্বীনের মধ্যে নেই। এ দ্বীন তো মাদ্রিদ-বার্সেলোনার এল ক্লাসিকো না, বা ভারত-পাকিস্তান খেলা না, যে জার্সি পরে সমর্থন করলেই হয়ে গেল। এটাতো এমন হয়ে গেল যেন কেউ বলছে “আমি প্রাউড নন-প্র্যাক্টিসিং মুসলিম” আর তারপর আরেকজন এসে বললো “হ্যা উনি সাচ্চা মুসলিম”! দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এরকম কথার, এরকম অবস্থানের কোন ভিত্তি কি আদৌ আছে?
বরং শায়খ উসামা তো যথার্থই বলেছেন এ মানহাজ কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমনি ভাবে প্রতিটি মানহাজের কিছু সুনিদিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গুনাবলী যার। যার আদর্শ ও আমলে যে মানহাজের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে তিনি সে মানহাজের। এতো নিছক মৌখিক দাবির বিষয় নয়। যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশে ইসলামের জন্য, দ্বীনের সুরক্ষার জন্য, খেদমতের জন্য, প্রতিষ্ঠার জন্য উম্মাহর জন্য, হাক্বুল্লাহ ও হাক্বুল ইবাদের দিকে তাকিয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজটি করা উচিত, আপনি কোন কাজটি করবেন? জবাবে কেউ যদি বলেন বাংলাদেশে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইমান ও আমলের মেহনত তাহলে সেটা তার মানহাজ - যদি কেউ বলেন বাংলাদেশে কাজ আক্বিদা সাহীহ করা, শিরক-বিদ’আ দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে দূর করা তবে সেটা তার মানহাজ - যদি কেউ বলেন ক্রিটিকাল থিংকিং করা, শারীয়াহ নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করা, ইসলামের সংস্কার করা, তবে সেটাই তার মানহাজ - যদি কেউ বলে বাংলাদেশে কাজ ইসলামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, সমাজ সেবা করা, তবে সেটাই তার মানহাজ - কারো উত্তর যদি হয় বাংলাদেশে কাজ হল ‘ইলম চর্চা, তাজউয়ীদ শেখা, আরবী শেখা ও শেখানো তবে সেটাই তার মানহাজ - যদি কেউ বলে বাংলাদেশে কাজ হল মিডিয়া সেল তৈরি করে মিডিয়া দাওয়াহ করা তবে সেটাই তার মানহাজ। কিন্তু এর কোনটি তাওহীদ ওয়াল হাদীদের, দাওয়াহ ওয়াল জিহাদের মানহাজ না। কারন উপরোক্ত মানহাজের উপর আমলকারীরা এ কাজগুলো করেন কিন্তু তারা জিহাদ করেন না। শুধুমাত্র মুক্বাতীল জামা’আর সদস্যদের মধ্যেই ক্বিতালের এ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, একারনে ক্বিতালের এ ফারযিয়্যাত একমাত্র মুক্বাতীল জামা’আর সদস্যরাই পালন করছেন অন্যান্য কাজগুলো করার পাশাপাশি। এবং এজন্য জরুরী নয় যে জামা’আর সকল সদস্যই ক্বিতাল করুক, বরং মুক্বাতীল জামা’আর সদস্য হিসেবে যে ভাই মিডিয়ার কাজ করছেন তিনি ক্বিতালের সহায়ক ও সম্পূরক হিসেবেই তাই করছেন। তিনি ক্বিতাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিডিয়ার কাজ করছেন না। একই কথা সে দা’ঈ ভাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তাগুত বর্জনের প্রতি দাওয়াহ দিচ্ছেন, এবং ব্যাক্তি যাতে এ নীতির উপর আমল করতে পারে, যাতে করে ব্যাক্তি মিল্লাতু ইব্রাহীমের উপর চলতে পারে সে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন, এ নীতির উপর ভিত্তি করে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছে এমন জামা’আর সাথে তিনি নিজে আবদ্ধ হয়েছেন এবং অন্যকে আহবান করছেন। অন্যদিকে উপরোক্ত মানহাজ সমূহের উপর আমলকারীর নিজেরা জিহাদের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় থাকেন, এবং অন্যদেরকেও নিষ্ক্রিয় হবার শিক্ষা দেন, আর তাদের সক্রিয়তা থাকে শুধু নিষ্ক্রিয় সমর্থনের ক্ষেত্রে। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুআতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
উহুদের দিন যারা যুদ্ধে যায় নি তারা জিহাদ সমর্থন করতো কি করতো না, তা নিয়ে কিন্তু সৃষ্টি জগতের কারো আগ্রহ নেই। খন্দকের দিনগুলোতে কে জিহাদ সমর্থন করে আর কে করে না এ হিসাব কিন্তু করা হয় নি। তাবুকের সময় যারা পেছনে বসে ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ কি জিহাদ সমর্থন করতো কি না – সে বিষয় ক্বুর’আনের কোন আয়াতই নাযিল হয় নি। পরিমাপ করা হয়েছে আমল। যারা মু’মিন তাদের বিশ্বাসের প্রমান তারা কাজের মাধ্যমেই দিয়েছে। আর যারা ওজরবিহীন ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে তাদের সমর্থন থাকা বা না থাকা গুরুত্ব পায় নি। গুরুত্ব পেয়েছে ফরয ইবাদাতের ব্যাপারে তাদের নিস্ক্রিয়তা, যার ভিত্তিতে তাদের মুনাফিক বল আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং ক্বুর’আনে বিভিন্ন জায়গায় কড়া ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। এ দ্বীন নিষ্ক্রিয়তার দ্বীন না। ইমান থেকে শুরু করে জিহাদ, এ দ্বীনের কোন কিছুই মুখে বুলি আউড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না বরং প্রতিটি বিষয়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে দিতে আমরা বাধ্য। অর্থাৎ আমল করতে আমরা আদিষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [আত তাওবাহ, ১৬]
আমরা কি মনে করছি আল্লাহর দ্বীনের বিধিবিধানগুলো ঠুনকো কিছু যখন চাইলাম মানলাম যখন চাইলাম সমর্থনসাপেক্ষে ছেড়ে দিলাম? এমন বিভ্রান্তি থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। প্রকৃতপক্ষে এধরনের ব্যক্তির অবস্থান তাই, যে অবস্থা ফরয ত্যাগ কারীর হয়, আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দি শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
“...অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিসক্ব”। “আর যদি তারা বের হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ তাদের বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’”[সূরা আত-তাওবাহঃ৪৬]
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]
কোন মুসলিম ভাইয়ের মন কষ্ট দেওয়া, কাউকে ছোট করা আমাদের উদ্দেশ্য না। মুসলিম ভাই হিসেবে প্রতিটি ভাই আমাদের কাছে প্রিয়, আল্লাহ হেদায়েত করুন তাদেরকে এবং আমাদেরকে, আল্লাহ আর রাহমানুর রাহীম একত্রিত করে দিন আমাদের জান্নাতে। মুসলিম ভাই পরিচয়টাই যথেষ্ট, এর বেশি আর কোন পরিচয় নিস্প্রয়োজন। কিন্তু যদি মানহাজের ভাই বলতেই হয় তবে হেলাফেলার সাথে কাউকে বলা সম্ভব না। রক্ত, রিমান্ড,জেল, যুলুমের, বুলেট, ফাসির পথ, আর নিস্তরঙ্গ নিষ্ক্রিয় সমর্থনের পথ এক না। আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের কারনে ঘর ছাড়া আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না আল্লাহর দ্বীনের জন্য দুনিয়াকে তালাক দিয়ে দেওয়া আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না দিনের পর দিন রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে সুযোগের অপেক্ষায় আল্লাহর শত্রু ও আমাদের শত্রুদের শিকারী বাঘের মতো অনুসরন করতে থাকা মুজাহিদিনের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের কারাগারে বন্ধী আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না ঠিক এ কথাগুলো লেখার সময় মুরতাদীনের হাতে রিমান্ডে বন্দী আমাদের ভাইদের কথা; ইয়া আল্লাহ আপনি আপনার এ বান্দাদের হেফাযতকারী হয়ে যান, আপনি তাদের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন, আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের হাতে নিহত আমাদের ভাইয়ের কথা যার রক্তের বদলা নেওয়া আমাদের উপর আজ ওয়াজিব, রাহিমাহুল্লাহু ওয়া তা’আলা। এ ভাইরা কোন নির্দিষ্ট ক, খ, গ, তানযীমের হওয়া আবশ্যক না, বরং আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করতে গিয়ে আহলুস সুন্নাহর অন্তভুক্ত এরকম যতো ভাই আছে, পৃথিবীর যেকোন কোণাতে, তারা সকলেই আমাদের মানহাজের ভাই, এরাই আমাদের রক্তের ভাই। এদের রক্তই আমাদের রক্ত, এদের কষ্টই আমাদের কষ্ট, এদের অশ্রুই আমাদের অশ্রু – হে আল্লাহ আপনি আপনার দুর্বল বান্দাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন সহায় নেই। এসব কিছু ভুলে গিয়ে এসব ত্যাগ তিতিক্ষাকে ভুলে গিয়ে লাইক-কমেন্ট দিয়ে অ্যাক্টিভ থাকা, সাপ্তাহিক হালাকা আর নিষ্ক্রিয় সমর্থনকে আমরা এক করে ফেলতে পারি না। নিশ্চয় প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলটির মত নয়। নিশ্চয় যে সমুদ্রে ঝড় নেই সে সমুদ্র আমাদের নয়।
আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই হিযবিয়্যাহ থেকে, স্বীয় স্বার্থের কারনে মুসলিমের অন্তরে আঘাত করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার হাক্বের উপরে তাঁর সৃষ্টির হাক্বকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই “পাছে লোকে কি বলে” এ চিন্তায় হাক্ব প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, মুজাহিদিনের হাক্বের উপরে মুজাহিদিনের সাথে ওয়ালার উপরে, মুজাহিদিনের বক্তব্যকে তুলে ধরার উপরে, বসে থাকা ব্যক্তিত্বদের স্থান দিতে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, মুহাজির ওয়াল আনসারদের অধিকার বিস্মৃত হওয়া থেকে, আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাগুতের কারাগারী বন্দী আমাদের শুয়ুখ ও ভাইদের কথা ভুলে যাওয়া থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাঁর দ্বীনের ফারযিয়্যাতের কথা নিছক কসমেটিক ঐক্যের অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়া থেকে। আর অতিকঠোরতার অভিযোগ উত্থাপনকারীদের প্রতি জবাব হিসেবে আল ইমাম আল মুজাদ্দি শায়খ উসামা বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ এ উক্তিটিই যথেষ্ট-
"যদি একজন ব্যক্তি জিহাদ না করে বসে থাকে এবং রাস্তা থেকে কাঁটা বা তার সদৃশ কোন বাঁধা সড়ানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে, যেটি কিনা ঈমানেরই একটি প্রশাখা, যখন কিনা অপরদিকে জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে ফারদ কর্তব্যে পরিণত হয়েছে, তখন তার সেই কর্মের ব্যাপারে এরূপ বলা হবে না যেঃ “আল্লাহ যেন তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন,” বরং, আমাদের দ্বীনের মাঝে সে একটি ফাসিক্ব ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্*”-কে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দ্বীনকে সাহায্য করার ফারদ/ (বাধ্যতামূলক) কর্তব্য থেকে পলায়ন করেছে।
সুতরাং, এই প্রধান বিষয়টির ব্যাপারে সচেতন থাকা অতি জরুরী বিষয় যেটির কিছু ব্যতিক্রম স্থান ব্যতীত প্রায় সমগ্র মুসলিম ভূখন্ডেই অনুপস্থিতি আজ সকলের চোখের সামনে সম্পূর্ন স্বচ্ছ।"
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]
-----------------------
ইনশা আল্লাহ চলবে
ইন্নালহামদালিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি সাল্লাম তাসলিমান কাসীরা
‘আম্মা বা’আদ
মালিকুল মুলক রাব্বুল ‘আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
“মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” (সূরা সফ, ৬১: ২-৪)
তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [আত তাওবাহ, ১৬]
আপনি কি সেসব লোককে দেখেননি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি ক্বিতালের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর ক্বিতাল ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। ( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখিরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না। [আন-নিসা, ৭৭]
গত বেশ কয়েক বছরে তাওহীদ ও জিহাদের দাওয়াহ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে বেশ অনেকটুকুই ছড়িয়ে পড়েছে। যে প্রজন্মের আগে সময় কাটতো জাহিলিয়্যাহর বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে, আজ তাদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের কাছে এসব কিছু ছাপিয়ে জিহাদের ডাক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যারা আগে নিজেদের সালাত নিয়েই চিন্তা করতো না, আজ উম্মাহর রক্তের নদী দেখে তাদের হৃদয় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।। কুফফার ও তাওয়াগীত যতোই জিহাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যতোই জিহাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে, যতই জিহাদের ডাককে চাপা দিতে চাইছে ততোই এ ডাক আরো ছড়িয়ে পড়ছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য তাঁর স্বীয় কাজে প্রবল থাকেন যদিও অধিকাংশ লোকেরাই তা জানেন না।
তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। [আত তাওবাহ, ৩২]
তবে চিরাচরিত সত্য হল একটি কাজ যখন শুরু হয় তখন মান নিয়ন্ত্রন করা যতোটুকু সহজ হয়, কাজের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে তা আর অতোটা সহজ থাকে না। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে এটা সাধারন ভাবে সত্য। এ কথা অনলাইন দাওয়াহ ও দা’ঈদের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা যদি অনলাইনে জিহাদের দাওয়াহ এবং দা’ঈদের দিকে তাকাই তাহলে এ সত্যের প্রমান পাওয়া যায়। যে মানহাজের দাওয়াহ আমরা করছি, যে মানহাজের অনুসরন আমরা করছি তার শর্ত, বৈশিষ্ট্য এবং দাবিগুলো সম্পর্কে দেখা যায় অনেক ভাই-ই ওয়াকিবহাল নন।
যেমন, আজকাল একটি কথা খুব বেশি শোনা যায় আর তা হল “মানহাজের ভাই” বা “অমুক আমাদের মানহাজের”। এধরনের কথা দ্বারা বোঝানো হয় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি জিহাদের মানহাজের অনুসারী। মুসলিম হিসেবে আমাদের মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকাই যথেষ্ট। ‘আমভাবে এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই, এক মুসলিমের সম্পদ, রক্ত, সম্মানকে তার মুসলিম ভাই হেফাযত করবে। পরিচয় হিসেবে এটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত। সেখানে আলাদা করে “মানহাজের ভাই” বা এধরনের শব্দাবলীর প্রয়োগ কতোটা যৌক্তিক সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তার উপর এ ধরনের শব্দাবলী ব্যবহৃত হয় সম্পূর্ণ বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন ভাবে। খোজ নিলে দেখা যায় যাকে বা যাদেরকে “মানহাজের ভাই” বলা হচ্ছে তিনি না কোন জিহাদী তানযীমের সাথে যুক্ত, আর না সক্রিয়ভাবে কোন ধরনের জিহাদী কর্মকান্ডের সাথে। এবং এই ভাইদের বিশাল একটা অংশকে যখন জিহাদের কাজের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যান। বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে সেলিব্রিটি হিসেবে এবং “জিহাদী সেলিব্রিটি, মানহাজের ভাই” হিসেবে পরিচিত তাদের জন্য এটা প্রায় ১০০% ক্ষেত্রে সত্য। তাহলে এ কোন মানহাজের কথা হচ্ছে? যারা এরকম বলে থাকেন তাদের মধ্যে প্রচলিত ধারনাটা হল যে ব্যক্তি জিহাদ সমর্থন করে, কিংবা তানযীম আল-ক্বা’ইদাকে সমর্থন করে। যারা জিহাদ সমর্থন করেন, যারা ৯/১১ সমর্থন করেন, শাতেম মারা সমর্থন করেন, জিহাদ করা উচিত সমর্থন করেন তারা হল “মানহাজের ভাই”, তারা হল আমাদের “মানহাজের”। কিন্তু আসলে কি মানহাজ বলতে এটাকেই বোঝানো হয়, মানহাজ বলতে কি নিছক কোন তাত্ত্বিক ও নিষ্ক্রিয় সমর্থনের মনোভাবকে বোঝানো হয়? আর এটা কি বৈশ্বিক জিহাদ তথা তানযীম আল-ক্বা’ইদার মানহাজ?
মানহাজ বলতে আসলে কি বোঝানো হয়? নাতিদীর্ঘ অ্যাকাডেমিক আলোচনায় না গিয়ে সাধারন ভাবে বলা যায় মানহাজ হল কর্মপদ্ধতি। যদিও মানহাজের সবচেয়ে প্রচলিত সংজ্ঞা হলঃ মানহাজ হল ‘ইলম, গ্রহন, বিশ্লেষন ও বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি, তথাপি একথা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত মানহাজের পরিধি শুধুমাত্র ‘ইলম অর্জন ও বাস্তবায়নের মধ্যে সীমিত না, বরং তা আরো ব্যাপক। আধুনিক সময়ে মানহাজের সর্বাধিক প্রচলিত অর্থ হল দ্বীন কায়েমের জন্য কর্মপদ্ধতি। যেমন ধরুন, কেউ যদি বলে দ্বীন কায়েমের পন্থা হল দাওয়াত ও তাযকিয়্যাহ এবং এ বিশ্বাসের উপর কাজ করে, তবে তার মানহাজ হল দাওয়াহ ও তাযকিয়্যাহর মানহাজ। যেমন তাবলীগ জামাত। কেউ যদি বলে দ্বীন প্রতিষ্ঠার উপায় হল ইসলামী সমাজ বিনির্মান ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া, এবং সে এই তত্ত্বের উপর আমল করে তবে এটা তার মানহাজ। যেমন - জামায়াতে ইসলামী বা ইখওয়ানুল মুসলিমীন। কেউ যদি মনে করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ হল আথারী আক্বীদার দাওয়াহ দেওয়া, এবং সে এই বিশ্বাসের উপর কাজ করে তবে তার সেটাই তার মানহাজ, যেমন শায়খ আলবানীর সালাফি দাওয়াহ। কেউ যদি মনে করে উম্মাহর উত্তরনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তারবিয়্যাহ, তাসফিয়াহ, তা’লীম, দাওয়াহ, এবং সে এই বিশ্বাসের উপর ‘আমল করে তবে সেটাই তার মানহাজ।
এখানে লক্ষনীয় হল মানহাজ সরাসরি আমলের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। মানহাজ বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত। নিছক সমর্থন বা সহমর্মিতার সাথে না। একারনে শুধুমাত্র সমর্থনের সাথে মানহাজের যোগসূত্র খোজা হাস্যকর। নির্দিষ্ট কোন একটি আদর্শ ধারন ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি মানহাজের অনুসরন সম্ভব। তবে জিহাদের ক্ষেত্রে যখন এটা বলা হয় তখন এটা আরো বেশি গুরুতর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারন জিহাদ হল একটি ইবাদাত, যা আমাদের সময় একটি ফরয ইবাদাত। ইবাদাতের ক্ষেত্রে সমর্থনের কোন ধারনা সাহাবায়ে কেরামদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত দ্বীন ইসলামে কখনই ছিল না। কোন সুস্থ মস্তিকের দ্বীনের বুঝ সম্পন্ন ব্যক্তিকে আপনি কখনো বলতে দেখবেন না, “আমি মাগরিবের তিন রাকাত সালাত” সমর্থন করি। নিজে আদায় করি না।“ তার চেয়েও বড় কথা হল এই ব্যাক্তিকে কেউ কখনো আমার “নামাজী ভাই” বলে কিন্তু সম্বোধন করবে না, আর নাই বা সে নামাজী হিসেবে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য হবে শার’ঈ দৃষ্টিকন থেকে কিংবা সাধারন মানবিক বিচার-বিবেচনার দৃষ্টিকোণ থেকে, যতোক্ষন না সে ফরয সালাত আদায় না করছে। একইভাবে কেউ কিন্তু কখনো বলে না “আমি রামাদ্বানের সিয়াম সমর্থন করি, ফরয মনে করি, যারা সিয়াম পালন করছে তাদের সমর্থন করি, তারা খুব ভালো কাজ করছে, তবে আমি নিজে সিয়াম পালন করি না।“ সম্ভবত এখানে একটু ভুল করলাম। দুঃখজনক ভাবে আমাদের সময়ে কিছু যিন্দিক এবং নামধারী “সেক্যুলার” মুসলিম বাংলাদেশে আছে যারা এমন কথা বলে। তবে শার’ঈ ভাবে এ ধরনের কথার কোন ভিত্তি নেই, এবং ফারয আমল থেকে বিনা ওজরে বিরত থাকার কারনে এই ব্যক্তি ফাসিক্ব বলে গন্য হবে। এই দ্বীন তাত্ত্বিকতার দ্বীন না, দ্বীনের আবশ্যক বিষয়ে সমর্থনের জায়গা আল্লাহ আমাদেরকে দেননি। ইবাদাতের বিষয়গুলো আমাদের সমর্থন সাপেক্ষ নয়, বরং এগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক হল শোনার ও মানার। আপনি জেনেছেন ফযরের দুই রাকাত সালাত ফরয এখন আপনি বাধ্য এই দুই রাকাত সালাত আদায় করতে। আপনি যদি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর অবাধ্যতা করলেন এবং আপনার এ অবস্থানের কোন শার’ঈ যৌক্তিকতা বা জাস্টিফিকেশান নেই। এখানে আপনি সমর্থনের কথা বলে পার পাবেন না।
এখন চিন্তা করুন জিহাদের কথা। সালাফদের, সকল মাযহাবের ইমামদের অবস্থান অনুযায়ী বর্তমানের জিহাদ ফারযুল আইন। অর্থাৎ বর্তমানে জিহাদ প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয যেভাবে ব্যক্তির উপর ফযরের দুই রাকাত সালাত ফরয। [বিস্তারিত জানতে দেখুন, “মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা” শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম]। একই সাথে শাহ আব্দুল আযীযের বিখ্যাত ফাতাওয়া, যা এখনো রদ করা কিংবা অপবনোদন করা এখনো সম্ভব হয়নি অনুযায়ী হিন্দুস্তান দারুল হারব, যেখানে জিহাদ ফরয। এবং যেসব “জিহাদ সমর্থক মানহাজের ভাই” আছেন তারাও জিহাদ যে ফারযুল আইন তা স্বীকার করেন। তাহলে প্রশ্ন হল কেউ যদি এটা স্বীকার করে তবে তার করণীয় কি? অবশ্যই তার জন্য আবশ্যক এই ফরয কাজে শামিল হওয়া। এখানে মাঝামাঝি কোন কিছু নেই। দ্বীনের যেকোন ফরয বিধান সম্পর্কে ব্যক্তি অবগত হওয়া মাত্র তার উপর ওই বিধান ফরয। অর্থাৎ সে বাধ্য তখন তা পালন করতে। এখানে নিছক সমর্থনের কোন সু্যোগ নেই। আর মুসলিম মাত্রই জিহাদ সমর্থন করে, শাহবাগী ফরিদউদ্দীন মাসউদও জিহাদ সমর্থন করে, কারন জিহাদ অস্বীকার করা কুফর। সমস্যাটা জিহাদ সমর্থন নিয়ে কখনোই ছিল না, যে ‘আলিমরা সালাহ আদ-দ্বীনকে বলেছিল ক্রুসেডারদের সাথে মিত্রতা করতে তারাও কিন্তু জিহাদ সমর্থন করতেন।
কিন্তু তারা কি সমর্থন করতে না? তারা কিসের বিপক্ষে ছিলেন? তাদের সমস্যাটা কি নিয়ে ছিল? তাদের সমস্যা ওই মূহুর্তে জিহাদ করা নিয়ে। তাদের সমস্যা ছিল তাত্ত্বিকভাবে যা দ্বীনের ফরয বিধান হিসেবে স্বীকার তারা করছেন তার উপর সঠিক ভাবে আমল করা নিয়ে। নিজে জিহাদ করা নিয়ে। যতোক্ষন জিহাদ একটি দূরবর্তী, তাত্ত্বিক বিষয় থাকে ততোক্ষন সবাই এর পক্ষেই কথা বলে। কিন্তু যখনই তাগুতের সামনে আজ, এখন, এখানে জিহাদ করার কথা আসে, তখন সমস্যাটা ব্যাপক ভাবে দেখা দেয়। দুঃখজনক ভাবে এই হাজার বছর পুরনো ব্যাধি এখনো প্রবল বিক্রমে বিদ্যমান, এবং আজ শুধুমাত্র উলামায়ে সু’রাই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত না।
এতো গেল ফরয জিহাদের কথা, আর জিহাদের মানহাজ অর্থাৎ দ্বীন কায়েমের পদ্ধতি হিসেবে জিহাদকে বেছে নেওয়া এবং তার অনুসরন করার অর্থ কি? এ ব্যাপারে আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
“সুতরাং, এই মানহাজ, যা আমাদের সামনে সুবাহের ন্যায় স্বচ্ছ, তা কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শারী‘আহ্-এর দালীলে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্ অপর এক ক্বওম নিয়ে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফফারদের প্রতি অতি কঠোর, তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আর আল্লাহ্ প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।‘[আল-মাইদাহঃ৫৪]
সুতরাং, এই আয়াতটি আমরা যে অবস্থার মধ্যে আছি সেই সম্পর্কে বলছেঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে,…”
যখন রিদ্দাহ্/দ্বীন-ত্যাগ সংঘটিত হয়, তখন মানুষকে দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনার জন্য কি কি গুণাবলীর প্রয়োজন? তো এখানে ৬টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার কথা থেকে শুরু করেঃ
“…যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফফারদের প্রতি অতি কঠোর,…”। সুতরাং, এই গুণাবলী অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরীঃ
[১] আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি একান্ত ভালোবাসা
[২] ঈমানদারদের প্রতি বিনয় ও সহানুভূতি
[৩] কল্যাণের সাথে সাহায্য করা এবং তা করা সর্বোত্তম পদ্ধতিতে
[৪] কুফফারদের প্রতি কঠোরতা, আর এটা ইসলামের সবচাইতে শক্তিশালী বন্ধনঃ আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ (আনুগত্য এবং সম্পর্কচ্ছেদ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমরা ঈমানদারদের সাথে আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সম্পর্ক স্থাপন করি, এবং আমরা কুফফারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি, আর তাদের সাথে খুব কঠোর আচরণ করি ।
[৫,৬] এরপর ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গুণাবলী হলঃ “…তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না…”।
আর, মানুষদেরকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনার জন্য, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা – এ বৈশিষ্ট্য দু’টির গুরুত্ব অত্যাধিক।
সুতরাং, যারা এমন মনে করে যে, মানুষকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব (এই গুণাবলী অর্জন ব্যতীত) এবং একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন কিনা ইসলামের ছায়া পৃথিবীর বুক থেকে অপসারিত হয়েছে, তবে এমন মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেন নি । কারণ এই আয়াতটি সম্পূর্নরূপে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান একটি আয়াত ।
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া ]
অতঃপর শায়খ উসামা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিমোক্ত হাদীসটি উল্লেখ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনার পর বলেন –
“আর আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, আর তা হলঃ শ্রবন, আনুগত্য, জিহাদ, হিজরাহ এবং জামা‘আহ।”
[ইমাম আহমাদ ও ইমাম আত-তিরমিযির দ্বারা বর্ণিত]
এখানে বিষয়টি হল, প্রথম পাঁচটি বিষয় যা হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, এগুলোকে অপর পাঁচটি বিষয় ব্যতীত মানবজাতির জন্য একটি শাসনব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । একইভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে কমপক্ষে এবং অন্তরের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়, যখন সে মানবরচিত বিধানের দ্বারা শাসন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের কর্তৃত্ব থাকে না। আর আমরা যদি এই পাঁচটি বিষয়কে মনযোগ দিয়ে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন গোত্রের প্রতি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দা’ওয়াহ্*-এর বাস্তবতার সাথে এই পাঁচটি বিষয় সম্পূর্নরূপে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দৃঢ়সমর্থকঃ
আর আমরা যখন আল্লাহর কিতাব এবং আল্লাহর রসূলের ﷺ সুন্নাহর অনুসরণের চেষ্টা করি, তখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনের সম্প্রসারণের পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছেঃ
[১] একটি জামা‘আহ্
[২] আদেশ শোনা
[৩] আনুগত্য করা
[৪] হিজরাহ করা
[৫] জিহাদ করা
সুতরাং, যারা হিজরাহ করার এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ত্যাগ স্বীকার ব্যতীত ইসলামের জন্য কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এরূপ মানুষেরা মুহাম্মাদের ﷺ মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর যদি তারা বুঝে থাকে, তবে তারা এর উপর ‘আমল করেনি, বরং তারা অন্যান্য ধরনের আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের দ্বারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। সুতরাং, এরূপ মানুষেরা এ সকল বড় ‘ইবাদাতসমূহের ভারী ফলাফল থেকে পলায়ন করছে, কারণ নিশ্চয়ই জিহাদ একটি কষ্টকর ‘আমল, যা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, এখন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জামা‘আহ্ ও জিহাদের গুরুত্ব অত্যাধিক।“
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]
সুতরাং, কিছু সুনির্দিষ্ট গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্য এ মানহাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। শায়খ উসামা বিন লাদিনের ভাষায় একজন ব্যক্তি তখন এ মানহাজের অনুসরনকারী হবে যখন সে মানহাজের আবশ্যক শর্তাবলীর উপর আমল করবে। অর্থাৎ সে জামা’আবদ্ধ হবে, শুনবে ও মানবে, হিজরাহ ও জিহাদ করবে। অর্থাৎ মানহাজের বিষয়টি আমলের সাথে সম্পর্কিত কোন একটি মনোভাব ধারন করার সাথে না, এবং এটাই স্বাভাবিক। এবং শায়খ উসামা বিল লাদিনের রাহিমাহুল্লাহর কথা থেকে স্পষ্ট যে এ মানহাজ সমর্থনের মানহাজ না, বরং এ মানহাজ হল জামা’আবদ্ধ হওয়া, শোনা ও মানা, হিজরাহ ও জিহাদের মানহাজ। এবং এখানে জামা’আবদ্ধ হবার উল্লেখ দেখে অস্বস্তি বোধ করার কিছু নেই, কারন জিহাদ মূলত একটি জামা’আবদ্ধ ইবাদাত। [আমরা এক্ষেত্রে জামা’আবদ্ধ হওয়া বলতে একটি খাস মুক্বাতীল জামা’আকে বোঝাচ্ছি, এবং নিজেদের জামা’আর ব্যাপারে ‘আম অর্থ প্রয়োগ করে নিজেদের জামা’আহকেই খাওয়ারিজদের মতো মুসলিমদের একমাত্র বৈধ জামা’আ মনে করি না]
তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি যে এ কাজগুলো উপযুক্ত ওজর ছাড়া ছেড়ে দেয়, কিন্তু বলে সে এ মানহাজের সমর্থন করে তাকে “মানহাজের ভাই” বলা যেতে পারে? শার’ঈ বিচারে, মানহাজের অর্থগত বিচারের এবং বর্তমান সময়ে যারা জিহাদের মানহাজকে আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরুজ্জীবিত করেছেন তাদের বিবৃত মাপকাঠির আলোকে, কোন বিবেচনাতেই তো এরকম একজন ব্যক্তিকে - সে যতোই অন্তরঙ্গ বন্ধু বা শ্রদ্ধাভাজন দ্বীনি ভাই হোন না কেন – এই মানহাজের অনুসারী বলা যায় না। সমর্থনের কোন মানহাজ এ দ্বীনের মধ্যে নেই। এ দ্বীন তো মাদ্রিদ-বার্সেলোনার এল ক্লাসিকো না, বা ভারত-পাকিস্তান খেলা না, যে জার্সি পরে সমর্থন করলেই হয়ে গেল। এটাতো এমন হয়ে গেল যেন কেউ বলছে “আমি প্রাউড নন-প্র্যাক্টিসিং মুসলিম” আর তারপর আরেকজন এসে বললো “হ্যা উনি সাচ্চা মুসলিম”! দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এরকম কথার, এরকম অবস্থানের কোন ভিত্তি কি আদৌ আছে?
বরং শায়খ উসামা তো যথার্থই বলেছেন এ মানহাজ কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমনি ভাবে প্রতিটি মানহাজের কিছু সুনিদিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গুনাবলী যার। যার আদর্শ ও আমলে যে মানহাজের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে তিনি সে মানহাজের। এতো নিছক মৌখিক দাবির বিষয় নয়। যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশে ইসলামের জন্য, দ্বীনের সুরক্ষার জন্য, খেদমতের জন্য, প্রতিষ্ঠার জন্য উম্মাহর জন্য, হাক্বুল্লাহ ও হাক্বুল ইবাদের দিকে তাকিয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজটি করা উচিত, আপনি কোন কাজটি করবেন? জবাবে কেউ যদি বলেন বাংলাদেশে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইমান ও আমলের মেহনত তাহলে সেটা তার মানহাজ - যদি কেউ বলেন বাংলাদেশে কাজ আক্বিদা সাহীহ করা, শিরক-বিদ’আ দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে দূর করা তবে সেটা তার মানহাজ - যদি কেউ বলেন ক্রিটিকাল থিংকিং করা, শারীয়াহ নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করা, ইসলামের সংস্কার করা, তবে সেটাই তার মানহাজ - যদি কেউ বলে বাংলাদেশে কাজ ইসলামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, সমাজ সেবা করা, তবে সেটাই তার মানহাজ - কারো উত্তর যদি হয় বাংলাদেশে কাজ হল ‘ইলম চর্চা, তাজউয়ীদ শেখা, আরবী শেখা ও শেখানো তবে সেটাই তার মানহাজ - যদি কেউ বলে বাংলাদেশে কাজ হল মিডিয়া সেল তৈরি করে মিডিয়া দাওয়াহ করা তবে সেটাই তার মানহাজ। কিন্তু এর কোনটি তাওহীদ ওয়াল হাদীদের, দাওয়াহ ওয়াল জিহাদের মানহাজ না। কারন উপরোক্ত মানহাজের উপর আমলকারীরা এ কাজগুলো করেন কিন্তু তারা জিহাদ করেন না। শুধুমাত্র মুক্বাতীল জামা’আর সদস্যদের মধ্যেই ক্বিতালের এ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, একারনে ক্বিতালের এ ফারযিয়্যাত একমাত্র মুক্বাতীল জামা’আর সদস্যরাই পালন করছেন অন্যান্য কাজগুলো করার পাশাপাশি। এবং এজন্য জরুরী নয় যে জামা’আর সকল সদস্যই ক্বিতাল করুক, বরং মুক্বাতীল জামা’আর সদস্য হিসেবে যে ভাই মিডিয়ার কাজ করছেন তিনি ক্বিতালের সহায়ক ও সম্পূরক হিসেবেই তাই করছেন। তিনি ক্বিতাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিডিয়ার কাজ করছেন না। একই কথা সে দা’ঈ ভাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তাগুত বর্জনের প্রতি দাওয়াহ দিচ্ছেন, এবং ব্যাক্তি যাতে এ নীতির উপর আমল করতে পারে, যাতে করে ব্যাক্তি মিল্লাতু ইব্রাহীমের উপর চলতে পারে সে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন, এ নীতির উপর ভিত্তি করে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছে এমন জামা’আর সাথে তিনি নিজে আবদ্ধ হয়েছেন এবং অন্যকে আহবান করছেন। অন্যদিকে উপরোক্ত মানহাজ সমূহের উপর আমলকারীর নিজেরা জিহাদের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় থাকেন, এবং অন্যদেরকেও নিষ্ক্রিয় হবার শিক্ষা দেন, আর তাদের সক্রিয়তা থাকে শুধু নিষ্ক্রিয় সমর্থনের ক্ষেত্রে। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুআতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
উহুদের দিন যারা যুদ্ধে যায় নি তারা জিহাদ সমর্থন করতো কি করতো না, তা নিয়ে কিন্তু সৃষ্টি জগতের কারো আগ্রহ নেই। খন্দকের দিনগুলোতে কে জিহাদ সমর্থন করে আর কে করে না এ হিসাব কিন্তু করা হয় নি। তাবুকের সময় যারা পেছনে বসে ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ কি জিহাদ সমর্থন করতো কি না – সে বিষয় ক্বুর’আনের কোন আয়াতই নাযিল হয় নি। পরিমাপ করা হয়েছে আমল। যারা মু’মিন তাদের বিশ্বাসের প্রমান তারা কাজের মাধ্যমেই দিয়েছে। আর যারা ওজরবিহীন ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে তাদের সমর্থন থাকা বা না থাকা গুরুত্ব পায় নি। গুরুত্ব পেয়েছে ফরয ইবাদাতের ব্যাপারে তাদের নিস্ক্রিয়তা, যার ভিত্তিতে তাদের মুনাফিক বল আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং ক্বুর’আনে বিভিন্ন জায়গায় কড়া ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। এ দ্বীন নিষ্ক্রিয়তার দ্বীন না। ইমান থেকে শুরু করে জিহাদ, এ দ্বীনের কোন কিছুই মুখে বুলি আউড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না বরং প্রতিটি বিষয়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে দিতে আমরা বাধ্য। অর্থাৎ আমল করতে আমরা আদিষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [আত তাওবাহ, ১৬]
আমরা কি মনে করছি আল্লাহর দ্বীনের বিধিবিধানগুলো ঠুনকো কিছু যখন চাইলাম মানলাম যখন চাইলাম সমর্থনসাপেক্ষে ছেড়ে দিলাম? এমন বিভ্রান্তি থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। প্রকৃতপক্ষে এধরনের ব্যক্তির অবস্থান তাই, যে অবস্থা ফরয ত্যাগ কারীর হয়, আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দি শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
“...অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিসক্ব”। “আর যদি তারা বের হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ তাদের বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’”[সূরা আত-তাওবাহঃ৪৬]
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]
কোন মুসলিম ভাইয়ের মন কষ্ট দেওয়া, কাউকে ছোট করা আমাদের উদ্দেশ্য না। মুসলিম ভাই হিসেবে প্রতিটি ভাই আমাদের কাছে প্রিয়, আল্লাহ হেদায়েত করুন তাদেরকে এবং আমাদেরকে, আল্লাহ আর রাহমানুর রাহীম একত্রিত করে দিন আমাদের জান্নাতে। মুসলিম ভাই পরিচয়টাই যথেষ্ট, এর বেশি আর কোন পরিচয় নিস্প্রয়োজন। কিন্তু যদি মানহাজের ভাই বলতেই হয় তবে হেলাফেলার সাথে কাউকে বলা সম্ভব না। রক্ত, রিমান্ড,জেল, যুলুমের, বুলেট, ফাসির পথ, আর নিস্তরঙ্গ নিষ্ক্রিয় সমর্থনের পথ এক না। আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের কারনে ঘর ছাড়া আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না আল্লাহর দ্বীনের জন্য দুনিয়াকে তালাক দিয়ে দেওয়া আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না দিনের পর দিন রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে সুযোগের অপেক্ষায় আল্লাহর শত্রু ও আমাদের শত্রুদের শিকারী বাঘের মতো অনুসরন করতে থাকা মুজাহিদিনের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের কারাগারে বন্ধী আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না ঠিক এ কথাগুলো লেখার সময় মুরতাদীনের হাতে রিমান্ডে বন্দী আমাদের ভাইদের কথা; ইয়া আল্লাহ আপনি আপনার এ বান্দাদের হেফাযতকারী হয়ে যান, আপনি তাদের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন, আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের হাতে নিহত আমাদের ভাইয়ের কথা যার রক্তের বদলা নেওয়া আমাদের উপর আজ ওয়াজিব, রাহিমাহুল্লাহু ওয়া তা’আলা। এ ভাইরা কোন নির্দিষ্ট ক, খ, গ, তানযীমের হওয়া আবশ্যক না, বরং আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করতে গিয়ে আহলুস সুন্নাহর অন্তভুক্ত এরকম যতো ভাই আছে, পৃথিবীর যেকোন কোণাতে, তারা সকলেই আমাদের মানহাজের ভাই, এরাই আমাদের রক্তের ভাই। এদের রক্তই আমাদের রক্ত, এদের কষ্টই আমাদের কষ্ট, এদের অশ্রুই আমাদের অশ্রু – হে আল্লাহ আপনি আপনার দুর্বল বান্দাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন সহায় নেই। এসব কিছু ভুলে গিয়ে এসব ত্যাগ তিতিক্ষাকে ভুলে গিয়ে লাইক-কমেন্ট দিয়ে অ্যাক্টিভ থাকা, সাপ্তাহিক হালাকা আর নিষ্ক্রিয় সমর্থনকে আমরা এক করে ফেলতে পারি না। নিশ্চয় প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলটির মত নয়। নিশ্চয় যে সমুদ্রে ঝড় নেই সে সমুদ্র আমাদের নয়।
আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই হিযবিয়্যাহ থেকে, স্বীয় স্বার্থের কারনে মুসলিমের অন্তরে আঘাত করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার হাক্বের উপরে তাঁর সৃষ্টির হাক্বকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই “পাছে লোকে কি বলে” এ চিন্তায় হাক্ব প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, মুজাহিদিনের হাক্বের উপরে মুজাহিদিনের সাথে ওয়ালার উপরে, মুজাহিদিনের বক্তব্যকে তুলে ধরার উপরে, বসে থাকা ব্যক্তিত্বদের স্থান দিতে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, মুহাজির ওয়াল আনসারদের অধিকার বিস্মৃত হওয়া থেকে, আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাগুতের কারাগারী বন্দী আমাদের শুয়ুখ ও ভাইদের কথা ভুলে যাওয়া থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাঁর দ্বীনের ফারযিয়্যাতের কথা নিছক কসমেটিক ঐক্যের অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়া থেকে। আর অতিকঠোরতার অভিযোগ উত্থাপনকারীদের প্রতি জবাব হিসেবে আল ইমাম আল মুজাদ্দি শায়খ উসামা বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ এ উক্তিটিই যথেষ্ট-
"যদি একজন ব্যক্তি জিহাদ না করে বসে থাকে এবং রাস্তা থেকে কাঁটা বা তার সদৃশ কোন বাঁধা সড়ানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে, যেটি কিনা ঈমানেরই একটি প্রশাখা, যখন কিনা অপরদিকে জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে ফারদ কর্তব্যে পরিণত হয়েছে, তখন তার সেই কর্মের ব্যাপারে এরূপ বলা হবে না যেঃ “আল্লাহ যেন তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন,” বরং, আমাদের দ্বীনের মাঝে সে একটি ফাসিক্ব ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্*”-কে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দ্বীনকে সাহায্য করার ফারদ/ (বাধ্যতামূলক) কর্তব্য থেকে পলায়ন করেছে।
সুতরাং, এই প্রধান বিষয়টির ব্যাপারে সচেতন থাকা অতি জরুরী বিষয় যেটির কিছু ব্যতিক্রম স্থান ব্যতীত প্রায় সমগ্র মুসলিম ভূখন্ডেই অনুপস্থিতি আজ সকলের চোখের সামনে সম্পূর্ন স্বচ্ছ।"
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]
-----------------------
ইনশা আল্লাহ চলবে
Comment