গুলশান আক্রমণঃ মৌলিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
অতঃপর,
সম্প্রতি ২৫শে রামাদান, ১৪৩৭ হিজরিতে, ঢাকার গুলশান ক্যাফেতে ১৭ জন কাফির ও ২জন জালিম মুরতাদবাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
এই অভিযানের আলোকে,
যে বিষয়টি সামনে চলে আসছে তা হচ্ছে, গ্লোবাল জিহাদের ব্যাপারে আগ্রহী ব্যাক্তিবর্গ এই অপারেশনকে কিভাবে নিবে? এখানে অপারেশনের বৈধতা কিংবা অবৈধতার প্রশ্ন আসছে না। বরং, যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে – গুলশান রেইডের পর বাংলাদেশে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ দাওলার রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকল্পনাকে কিভাবে দেখা হবে?
বিষয়টি এভাবে আলোকপাত করা হতে পারে –
এত সল্পসময়ের ভেতর তানজিম আদ দাওলা (IS) এতগুলো হামলা সফলভাবে করে ফেললো, বিশেষ করে সর্বশেষ গুলশান অভিযানের মত ‘আন্তর্জাতিক’ মানের অভিযানও সফলভাবে পরিচালিত করলো তার বিপরীতে বাংলাদেশে তানজিম আল-কায়েদার সামরিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনার আলোকে কাজের গতি অতিরিক্ত সতর্ক ও ধীর হয়ে যাচ্ছে কি না?
তানজিম আদ দাওলার তুলনায় তানজিম আল-কায়েদা দাওয়াতি ময়দানেও পিছিয়ে পরছে কি না?
তানজিম আদ দাওলার তুলনায় তানজিম আল-কায়েদা দাওয়াতি ময়দানেও পিছিয়ে পরছে কি না?
১/ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলা’র দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
২/ তানজিম আল-কায়েদা, তানজিম আদ-দাওলার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত কি না।
৪/ দাওয়াতি ও মিডিয়ার ক্ষেত্রে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলা’র দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
৪/ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলা’র দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
সবশেষে, গুলশান আক্রমণের আলোকে বাংলাদেশে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম-আদ-দাওলার তুলনামূলক পর্যালোচনা।
আল-কায়েদা ও তানজিম-আদ-দাওলাঃ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
২০১৪ সালে ‘খিলাফাহ’ ঘোষণা করার পর দাওলা তাদের অধীনে থাকা ভূখন্ডের অধিকাংশই হারিয়ে ফেলেছে। একে একে তানজিম আদ-দাওলা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইন আল ইসলাম, তিকরিত, রামাদি, আনবার হারিয়েছে। ফাল্লুজার অধিকাংশও নিয়ন্ত্রণহারা। একেবারে কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় পর্যন্ত রেইড দিয়ে গিয়েছে আমেরিকা যা তাদের দুর্বলতা তুলে ধরে।
সিরিয়াতে তাদের দখলে থাকা ভুখন্ডের সবই তারা মুজাহিদিনদের থেকে দখল করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফিতনা এড়াতে এবং মূল শত্রু বাশার আল আসাদ ও তার মিত্রদের উপর ফোকাস রাখতে দাওলার সাথে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়াতেই মুজাহিদিনদের থেকে দাওলা এগুলো দখলে নিতে পেরেছিল।
এমনকি তাদের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ‘রাক্কা’ স্বাধীন করেছিল সিরিয়ার মুজাহিদ গ্রুপগুলো যাদেরকে তানজিম-আদ-দাওলা তাকফির করেছে ইতিমধ্যেই।
সিরিয়াতে বাশার সরকারকে হঠিয়ে তানজিম আদ দাওলা শুধুমাত্র পালমেইরা দখলে সক্ষম হয়। অথচ এটাও তারা দ্রুতই হারিয়ে ফেলে। সম্প্রতি তাদের মুখপাত্র আবু মুহাম্মাদ আদনানি জানিয়েছে যে, তারা গেরিলা যুদ্ধে ফিরে যাচ্ছে। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এত সুবিশাল, অভিজাত ও শক্তিশালী জিহাদি গ্রুপ এমন স্তিমিত হয়ে গেল!!
এটা ঠিক। অর্জন হিসেবে কেন্দ্রের বাইরে কিছু নজরকাড়া অভিযান বিচ্ছিন্নভাবে তারা করতে পেরেছে। কিন্তু যদি কেন্দ্রেই অস্তিত্ব বিলীনের ধারা অব্যাহত থাকে তখন এর বাস্তবতা বাইরে অবস্থানকারী সদস্যদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে তখন এধরণের অর্জনও খুব একটা দেখা যাবে না। কেননা ‘খিলাফাহ’র ফাঁকা বুলিই তো উৎসাহী যুবকদের কাছে তাদের মিথ্যাচার গোপন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল। যখন এই ফাঁকা বুলি আউরানোর সুযোগটাও হারিয়ে যাবে তখন তারা নতুন করে সদস্য সংগ্রহে হবে ব্যর্থ।
লক্ষণীয়, তিউনিশিয়া, সৌদি আরব, জর্ডান প্রভৃতি জায়গায় তারা বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু দৃষ্টি আকর্ষণকারী হামলা পরিচালিত করতে পারলেও এর ধারাবাহিকতা তারা আর ধরে রাখতে পারেনি। অভিযানগুলোর আগে এবং পরে তাদের অর্জন কোথায়?
নাইজেরিয়ার বোকো হারামের দাওলার তাকফিরি ও তাড়াহুড়াপ্রবণ সাম্রাজ্যবাদী পন্থা অনুসরণের পর থেকে তাদের অবনমনের হার লক্ষণীয়।
বিপরীতে, এবিষয়ে সংক্ষেপে আল-কায়েদার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো। আবু উবাইদা আল মাকদিসি (রহ) লিখেন,
যখনই একটি বৃহৎ শক্তি তার প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও সামরিক সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও মারাত্মক ভাবে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের পথ ধরে অথবা পশ্চাদপসরনের সম্ভাবনা অবজ্ঞা করে তখন এর ফলাফল অপরিবর্তনীয় ভাবে ধীরে ধীরে কিন্তু স্থায়ীভাবে অধঃপতনের দিকে যায়। আমেরিকা বর্তমানে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন।
গেরিলা যুদ্ধের অতিবিস্তৃতির উদাহরণ গুলোর মধ্যে সাংগঠনিক কাজে অতিবিস্তৃতি অন্যতম। এটি ঘটে তখন যখন সংগঠনের সদস্য বৃদ্ধির যে ধাক্কাটা বহন করার মত সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও সংগঠন কে বড় করা। এর মধ্যে রয়েছে সংগঠনে নতুন নিয়োগ দেয়া এবং প্রশাসন, প্রশিক্ষন, সামর্থ্য নির্মাণ এবং অস্ত্র ও নিরাপত্তা সংরক্ষনে জটিলতা। যার ফলে সংগঠনের উপর দায়িত্বের একটা বোঝা চেপে বসে। যা তার সামর্থ্যর বাহিরে চলে যায় এবং বাস্তব সুযোগ হারায়। বিপরীতে এটি আন্দোলনের সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সংগঠন পিছনের দিকে হাঁটতে থাকে এবং তাতে ফাটল ধরে।
তাদের সদস্যদের একতার অভাবে ও তাদের প্রয়োজন পুরণে এ অসামর্থ্য থাকলে এর ফলে সদস্যরা নিজের সংগঠনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর সাথে যদি কমতে থাকা অথবা নির্ধারিত আর্থিক সম্পদ থাকে এবং সাংগঠনিক প্রশিক্ষনের জন্য দক্ষ লোক না থাকেতবে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। এ অবস্থা আরো খারাপ হয় যদি সংগঠনের নেতা ও সদস্যদের মধ্যকার তথ্যগত দুরত্ব তৈরি হয়।
এ ধরণের দুরত্ব অনেক কারণে হতে পারে, যেমনঃ গেরিলা যুদ্ধে পেশাদারী ব্যক্তিকে জানা, যার ফলে সাংগঠনিক পরিসর বৃদ্ধির পুর্বে এবিষয়ে গবেষনার দরকার। এর বিভিন্ন দিক ও পরবর্তী ফলাফল বিবেচনায় আনতে হবে। সংগঠনের বিপদকালীন সময় পার করার সামর্থ্যর উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে সংগঠনের সংখ্যা জিহাদী কাজ যারা তত্ত্বাবধান করে তাদের জন্য চাপ হয়ে না দাঁড়ায়।
গেরিলা যুদ্ধের অতিবিস্তৃতির উদাহরণ গুলোর মধ্যে সাংগঠনিক কাজে অতিবিস্তৃতি অন্যতম। এটি ঘটে তখন যখন সংগঠনের সদস্য বৃদ্ধির যে ধাক্কাটা বহন করার মত সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও সংগঠন কে বড় করা। এর মধ্যে রয়েছে সংগঠনে নতুন নিয়োগ দেয়া এবং প্রশাসন, প্রশিক্ষন, সামর্থ্য নির্মাণ এবং অস্ত্র ও নিরাপত্তা সংরক্ষনে জটিলতা। যার ফলে সংগঠনের উপর দায়িত্বের একটা বোঝা চেপে বসে। যা তার সামর্থ্যর বাহিরে চলে যায় এবং বাস্তব সুযোগ হারায়। বিপরীতে এটি আন্দোলনের সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সংগঠন পিছনের দিকে হাঁটতে থাকে এবং তাতে ফাটল ধরে।
তাদের সদস্যদের একতার অভাবে ও তাদের প্রয়োজন পুরণে এ অসামর্থ্য থাকলে এর ফলে সদস্যরা নিজের সংগঠনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর সাথে যদি কমতে থাকা অথবা নির্ধারিত আর্থিক সম্পদ থাকে এবং সাংগঠনিক প্রশিক্ষনের জন্য দক্ষ লোক না থাকেতবে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। এ অবস্থা আরো খারাপ হয় যদি সংগঠনের নেতা ও সদস্যদের মধ্যকার তথ্যগত দুরত্ব তৈরি হয়।
এ ধরণের দুরত্ব অনেক কারণে হতে পারে, যেমনঃ গেরিলা যুদ্ধে পেশাদারী ব্যক্তিকে জানা, যার ফলে সাংগঠনিক পরিসর বৃদ্ধির পুর্বে এবিষয়ে গবেষনার দরকার। এর বিভিন্ন দিক ও পরবর্তী ফলাফল বিবেচনায় আনতে হবে। সংগঠনের বিপদকালীন সময় পার করার সামর্থ্যর উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে সংগঠনের সংখ্যা জিহাদী কাজ যারা তত্ত্বাবধান করে তাদের জন্য চাপ হয়ে না দাঁড়ায়।
শায়খের বক্তব্যের আলোকে দেখুন, তানজিম আদ-দাওলা’র বর্তমান বিপর্যয়ের অন্যতম একটি কারণ স্পষ্ট হয় কি না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এগুলো কি তারা জানে না? একটা সামরিক সংগঠন কি কৌশলের দিক থেকে এত দুর্বল হবে যে এই বিষয়গুলো তারা মাথায় রাখবে না?
উত্তর হচ্ছে – হ্যা তারা জানে। তবুও কেন তাদের এই অবস্থা? বাহ্যিকভাবে প্রাসঙ্গিক কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য,
১) নিজেদের মিডিয়ার মিথ্যাচার ও প্রতারণা দ্বারা নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে বাস্তবতা উপেক্ষা করা। যেমনটা আমেরিকার হয়েছে।
২) ‘খিলাফাহ’ ঘোষণার গ্রহণযোগ্যতা আদায়ে গোটা বিশ্বের মুসলিমদের সম্পৃক্ত করা তাদের উপর বাধ্যবাধকতা হিসেবে চেপে যায়। এই দাবী পূরণ করতে গিয়ে অতিপ্রসারতার ফাঁদে পা দেয়া।
৩) মুসলিমদের অন্যায় তাকফির ও হত্যা করার মাধ্যমে নিজেদের উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।
৪) বীভৎস উপায়ে মানুষ হত্যা ও তার প্রচারের মাধ্যমে জিহাদের ইমেজ নষ্ট করে ফেলা, নিজেদের তানজিমের সদস্যদেরকেও হত্যা করে ফেলা। যার ফলে গ্রহণযোগ্যতার বিলুপ্তি ঘটা।
অর্থাৎ, আমরা দেখতে পারছি তানজিম আদ-দাওলা কেন্দ্রভূমি ইরাক থেকে শুরু করে অন্যান্য ভূখণ্ডগুলোতে নিয়ন্ত্রিত কোনো পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে অক্ষম। সাময়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নাম কামানোর চেষ্টা করে তারা কিছুটা সফল হয়েছে বটে তবে দিনশেষে তাদের দমন করা কুফফারদের জন্য হয়ে যাচ্ছে পানির মত সহজ।
নতুবা, কুফফাররা ইরাকের এত বিশাল ভূখণ্ড একের পর এক এতদিন কিভাবে দখলে নিয়ে নিল??
উত্তর হিসেবে বলা যায়, পাল্টা আঘাতের জন্য তানজিম আদ-দাওলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অভাব এবং মূল শত্রু নুসাইরি-ক্রুসেডারদের বাদ দিয়ে ড্রুজ, ইয়াজিদি, কুর্দি এমনকি মুজাহিদিনদেরকে পর্যন্ত আক্রমণ করা। আল্লাহ্* তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিন। আমীন।
এতদিন ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে মুজাহিদিনদের উপর পাইকারী হামলা চালানো মুখপাত্র আদনানি একের পর এক ভূমি হারানোর পর বলে উঠেছে,
“... আর যে মনে করে আমরা কোন ভূমির প্রতিরক্ষা কিংবা কতৃত্বের জন্য যুদ্ধ করি, কিংবা এগুলোর বিজয়ের মাপকাঠি, নিশ্চয় সে সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে।“(অডিও বার্তা- আর তারা বেঁচে থাকে প্রমাণসহকারে) ।
অথচ তানজিম আদ দাওলা’র দাওয়াহ টিকেই আছে ‘খিলাফা’ এবং অধ্যুষিত ‘বিশাল ভূমি’ কেন্দ্রীক প্রচারণার উপর। তাদের কেন্দ্রীয় মিডিয়া আল-হায়াত মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রকাশিত একাধিক ভিডিওতে তারা তাদের খিলাফাহ’র অধীনে কত বড় ভূমি আছে তা দিয়েই মুসলিমদের বায়াহ দেওয়ার আহ্বান দিয়েছে। !
বিপরীতে, আল্লাহ’র সাহায্যে বিস্তৃত ভুখন্ড নিজেদের দখলে নিয়ে শারিয়াহ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও মরক্কো, মালি, লিবিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ককেশাস, পাকিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান, সুদানসহ মুসলিম ভূখন্ডের বিশাল জনগোষ্ঠী ও অসংখ্য ইসলামী সংগঠনের-উলামায়ে কেরামের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন-অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে সবর ও শক্তির সাথে তানজিম আল-কায়েদা এগিয়ে চলেছে। শরিয়াহ’র আইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে সুবিস্তৃত ভূমিতে। আলহামদুলিল্লাহ।
পরিস্থিতির দাবীতে কৌশলগত কারণে সল্পসময়ের জন্য পিছু হটলেও ফিরে আসতে পারছে দ্রুতই এবং কুফফারদের অন্তরে যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছে অত্যন্ত সুনিপুন দক্ষতায়। এবং, বিজয় আসে শুধুমাত্র আল্লাহ্* তা’আলার পক্ষ থেকেই।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে - দাওলা পরিচালিত চাকচিক্যময় কিছু অভিযান আর এইচডি ভিডিও সাময়িক আনন্দ সৃষ্টি করলেও তা ফলাফল এনে দিতে পারছে না।
অন্যদিকে তানজিম আল-কায়েদার শত্রু-মিত্র চিহ্নিতকরণের দক্ষতা, দীর্ঘ প্রস্তুতি ও পরিকল্পিত পদক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল আজ আমাদের চোখের সামনে। আলহামদুলিল্লাহ।
তানজিম আল-কায়েদা কি বাংলাদেশে তানজিম-আদ-দাওলার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত?
প্রথমত, আল-কায়েদার মূল প্রতিপক্ষ কুফরের সর্দার আমেরিকা ও তাদের স্থানীয় মিত্র দালাল শাসক। এছাড়াও যারা ব্যক্তিগত/প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত তারাও। তানজিম-আদ-দাওলা নামক ফিতনার উদ্ভব আল-কায়েদা সৃষ্টির বহু পরে। তানজিম-আদ-দাওলার ফিতনা সামনে আসার পরও আল-কায়েদা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। অর্থাৎ, তানজিম আল-কায়েদা ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য ‘আমেরিকা’ ও ‘মুরতাদ শাসক’ নামক কর্কটব্যাধিকে বাদ দিয়ে তানজিম-আদ-দাওলার সাথে প্রতিযোগিতায় কখনোই লিপ্ত হয়নি। বরং, তানজিম-আদ-দাওলার ফিতনাকে বিভিন্ন ভূখন্ডে অবস্থানভেদে দালিলীক খন্ডন, ঐক্যের আহ্বান এবং কোথাও যুদ্ধের মাধ্যমে নিরসন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই কখনোই, কোনো ভুখন্ডে তানজিম আদ-দাওলার সাথে প্রতিযোগিতাবশত অভিযানে বের হওয়ার উদাহারণ দেখা যায়না।
বরং, নিকট অতীত ও বর্তমানে উল্টোটাই প্রতীয়মান হয় যে, তানজিম আল-কায়েদার সাথে প্রতিযোগিতাই তানজিম আদ-দাওলার মূল লক্ষ্য। দাওয়াতি, মিডিয়া এবং সামরিক - সকল ময়দানেই আল-কায়েদার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা পরিষ্কার ফুটে ওঠে। ইয়েমেন, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া সর্বত্রই আল-কায়েদাকে বিচ্ছিন্ন ও দ্বিধাবিভক্ত করার উদ্দেশ্যে তানজিম আদ-দাওলার মিথ্যাচার ও প্রপঞ্চনির্ভর মিডিয়ার ঢালাও প্রচার-প্রসার সম্পর্কে সকলেই কম-বেশী অবগত। এমনকি, বাংলাদেশেও যদি কেউ সতর্কতার সাথে খেয়াল করে, চাপাতি এবং গুপ্তহত্যার মাধ্যমে ইসলামের শত্রুদের নিধনের অভিনব ও বরকতময় পন্থা সর্বপ্রথম তানজিম আল-কায়েদাই বাংলাদেশই সামনে নিয়ে এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
আল-কায়েদা কর্তৃক বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালিত হওয়ার পরই হঠাৎ করে তানজিম আদ-দাওলার আবির্ভাব ঘটে। অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, সংখ্যার দিক দিয়ে আল-কায়েদাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়াহুড়া তাদের মাঝে ছিল প্রবল...
যদি সেটা আল-কায়েদাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য নাও হয় তবুও তাদের কাজগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত। প্রায় প্রতিটা হামলাতেই গ্রেফতার ও শার’ঈভাবে উত্তীর্ণ নয় এমন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত আমাদের কাছে তাদের তাড়াহুড়াপ্রবণতাকে স্পষ্ট করে তোলে।
সুতরাং এটা পরিষ্কার, পৃথিবীর কোথাও তানজিম আদ-দাওলার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া তানজিম আল-কায়েদার উদ্দেশ্য নয়। যদি তাই হতো তাহলে, জুলহাজ মান্নান ও সামির মাহবুব হত্যার পর প্রদত্ত বিবৃতিতে আল-কায়েদা নিম্নোক্ত ভাষায় তানজিম আদ-দাওলাকে আহ্বান জানাতো না...
“দাউলাতুল ইসলামিয়া” (Islamic State) নামক দলটির কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই, আপনারা এমন সব লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করুন যার ব্যাপারে শরীয়াতের অনুমোদন আছে। কোনো নও-মুসলিম কিংবা ইসলামবিদ্বেষ-কুফরীর প্রমাণ নেই এমন কোন টার্গেটকে আক্রমণ করা উচিত হবে না। মুসলিম হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখতে হবেঃ ইসলামি শরীয়াতে একজন মুসলিমের রক্ত ঝরানো অনেক বড় ব্যাপার। ভুলেও যেন একজন মুসলমানের রক্তও প্রবাহিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা অবশ্য কর্তব্য। এদেশে তো দীর্ঘদিন থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জঘন্য অপরাধসমূহের ব্যাপারে সাধারণ মুসলিম ও মুজাহিদগণ সকলেই অবগত। এসকল ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে আক্রমণ করে মুসলিম জনগণকে জিহাদের চেতনায় উজ্জীবিত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা আপনাদেরকে
হাকিমুল উম্মাহ শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি (আল্লাহ্ তা’আলা তাকে রক্ষা করুন) এর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইঃ
“আমরা বাগদাদীর খিলাফাতকে স্বীকৃতি দেই না এবং এটা নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ মনে করি না। এর অর্থ এই নয় যে, তার সমুদয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ আমরা অবৈধ মনে করি। তার যেমন রয়েছে পাহাড়সম ভুল তেমনি রয়েছে যথার্থ কিছু পদক্ষেপও।
তার ভুলের ফিরিস্তি যতই বড় হোক না কেন আমি যদি ইরাক বা শামে উপস্থিত থাকতাম; খৃষ্টান, ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদী, সাফাবী ও নুসাইরীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতাম। কারণ, বিষয়টি এসবের অনেক উর্ধ্বে। এটি হচ্ছে খৃস্টানদের হামলার মুখোমুখি মুসলিম উম্মাহর সমস্যা। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই হামলার মোকাবেলা করা সকল মুজাহিদের অপরিহার্য দায়িত্ব।” (ইসলামী বসন্ত সিরিজ, ১ম পর্ব।)
হাকিমুল উম্মাহ শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি (আল্লাহ্ তা’আলা তাকে রক্ষা করুন) এর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইঃ
“আমরা বাগদাদীর খিলাফাতকে স্বীকৃতি দেই না এবং এটা নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ মনে করি না। এর অর্থ এই নয় যে, তার সমুদয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ আমরা অবৈধ মনে করি। তার যেমন রয়েছে পাহাড়সম ভুল তেমনি রয়েছে যথার্থ কিছু পদক্ষেপও।
তার ভুলের ফিরিস্তি যতই বড় হোক না কেন আমি যদি ইরাক বা শামে উপস্থিত থাকতাম; খৃষ্টান, ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদী, সাফাবী ও নুসাইরীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতাম। কারণ, বিষয়টি এসবের অনেক উর্ধ্বে। এটি হচ্ছে খৃস্টানদের হামলার মুখোমুখি মুসলিম উম্মাহর সমস্যা। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই হামলার মোকাবেলা করা সকল মুজাহিদের অপরিহার্য দায়িত্ব।” (ইসলামী বসন্ত সিরিজ, ১ম পর্ব।)
সুত্রঃ জুলহাজ মান্নান হত্যাকান্ডের পর আনসার আল ইসলামের প্রদত্ত বিবৃতি।
তবে এটা ঠিক, তানজিম-আদ-দাওলা কর্তৃক সৃষ্ট ঘোলাটে পরিস্থিতির আলোকে আল-কায়েদা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে যাতে জনমনে সংশয় সৃষ্টি না হয়। যেমন- ইয়েমেনে মসজিদে বোমা হামলার পর আল-কায়েদা জাজিরাতুল আরব নিন্দা জানায়।
এবং তানজিম-আদ-দাওলা কর্তৃক পরিচালিত অভিযানের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আল-কায়েদা কৌশলও তদানুযায়ী পরিবর্তন করে থাকে পরিস্থিতির দাবী অনুযায়ী। যা মোটেও প্রতিযোগিতামূলক আচরণ হিসেবে ধর্তব্য হবে না বরং রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবেই উল্লেখিত হবে।
অতএব, কারো জন্য তানজিম আল-কায়েদা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোক তানজিম আদ-দাওলা’র সাথে, এমনটা আশা করা কাম্য নয়।
দাওয়াতি ও মিডিয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি
মিডিয়ার ক্ষেত্রে কিংবা দাওয়াতের ক্ষেত্রে তানজিম আল-কায়েদা এবং তানজিম আদ-দাওলার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। দাওলার দাওয়াহ ও মিডিয়ার উদ্দেশ্য নিজেদের ‘খিলাফাহ’র সমর্থক-সদস্য-সৈনিক সংগ্রহ। কোনো ব্যক্তির জন্য অন্য কোনো জিহাদি তানজিমের সাথে মিলে কাজ করাকে তারা বৈধ মনে করে না। তারা জিহাদের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত করার জন্য নিজেদের তানজিমভুক্ত হওয়া ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক মনে করে। এরই ভিত্তিতে তাদের দাওয়াতি ও মিডিয়ার প্রকাশভঙ্গি গড়ে উঠেছে।
লক্ষণীয়, খিলাফাহ ঘোষণার পরপরই মুজাহিদিনদের মুরতাদ ঘোষণা করার ফতোয়া কেন আসলো? এবং ‘মুরতাদরা অধিক নিকৃষ্ট’ নীতির আলোকে মুজাহিদিনদের উপর আক্রমণ শুরু হলো? এমন আচরণ শুধুমাত্র মুজাহিদিন জামা’আতের মাঝে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তির প্রসারের মাধ্যমে বিভক্তির সৃষ্টি। জিহাদের পথিকদের অন্য জামাত থেকে দূরে সরিয়ে যে কোনো মূল্যে নিজেদের দলে ভেড়ানোর পেছনে তাদের এই নিকৃষ্ট তাকফিরি ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম।
অপরপক্ষে, তানজিম আল-কায়েদার দাওয়াহ হচ্ছে, এই উম্মতের মাঝে জিহাদের পুনর্জাগরণ ঘটানো এবং সর্বপ্রথম কুফর সর্দার আমেরিকার পতন ঘটানো। বি'ইজনিল্লাহ।
এই উদ্দেশ্যে জিহাদে শামিল হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তির জন্য আল-কায়েদাতে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। আল-কায়েদার আহ্বানও তা নয়। এছাড়া, সদস্য সংগ্রহ আল-কায়েদার জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়বস্ত নয়। কেননা সাংগঠনিক অতিপ্রসারতার কথা মাথায় রেখেই তানজিম আল-কায়েদা সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
যেহেতু, আল-কায়েদার দাওয়াতি ও মিডিয়া কার্যক্রম শুধুমাত্র সদস্য-সমর্থক সংগ্রহের মত সংকীর্ণ চিন্তাধারার মাঝে আবদ্ধ নয় সেহেতু বিচক্ষণ ব্যক্তির জন্য দাওলার দাওয়াহ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই ইনশা'আল্লাহ।
তবে এটা ঠিক, চাকচিক্যময় স্লোগানের ফাঁদে আটকা পরা দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তিরা সবসময়ই ছিল, আছে এবং থাকবে।
তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলাঃ প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আল-কায়েদার নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তু দেখেই বোঝা যায় একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই অভিযানগুলো পরিচালিত হয়। প্রতিটি অভিযানই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়ে থাকে এমনটাই দৃশ্যমান। যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে মেরুকরণ, যা এই অভিযানগুলোর দ্বারা অর্জিত হয়েছে।
তাগুত শাসকগোষ্ঠীকে বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা প্রদান করে আসছিল যে ব্লগার-প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠী তারাই এই অপারেশনগুলোর পর নিরাপত্তার সংকটে সম্মুখীন হয়ে সরকারের বিরোধিতা করেছে। আবার অন্যদিকে মুসলিমদের সেন্টিমেন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারও এসকল ব্লগার-প্রকাশকদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে। যার ফলে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ এর মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
এছাড়াও, কুফরের কেন্দ্র আমেরিকার দালাল জুলহাজ মান্নানকে হত্যার ফলে এদেশের মুসলিম সমাজকে সমকামীতার ব্যাধী থেকে পরিত্রাণ দেয়ার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের সৈনিক তৈরির রাস্তা প্রসারিত হয়েছে। এবং কুফরের সর্দার আমেরিকাকে প্রায় প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত করা সম্ভব হয়েছে তাদের মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট ভেস্তে দেয়ার মাধ্যমে। আলহামদুলিল্লাহ।
আল-কায়েদার দাওয়াহ ও জিহাদের অন্যতম লক্ষ্য, উম্মতকে জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত করা। তাই প্রতিটি অভিযানই এদেশের মানুষ কিভাবে নিবে সেটাকে সামনে রেখে পরিচালিত হয়। অবশ্যই এখানে জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করা উদ্দেশ্য নয় কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠের মনোতুস্টি উদ্দেশ্য নয় (যেমনটা দাওলা বলতে চায়)। বরং, এই চিন্তাধারা দীর্ঘদিন কুফর-ইলহাদ দ্বারা বেষ্টিত থাকা মুসলিম জনপদকে ইসলাম ও জিহাদের দিকে ফিরিয়ে আনার ধারাবাহিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত। এবং শায়খ আবদুল্লাহ আজ্জাম (রহ), শায়খ উসামা (রহ), শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল লিব্বি(রহ), শায়খ আতিয়াতুল্লাহ (রহ) (যাদেরকে তানজিম-আদ-দাওলাও হাক্ক মনে করে) সকলেরই দৃষ্টিভঙ্গি এমন ছিল।
আল-কায়েদার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ, শার’ঈ ও কৌশলী বিশ্লেষণের পরই হামলাগুলো পরিচালিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিহতদের একেবারে ঘনিষ্ঠরাও তাদের অপরাধ কিংবা অবস্থানের ব্যাপারে জানতো না। এধরণের অভিযানগুলো সময়সাপেক্ষ তা বলাই বাহুল্য। সময়সাপেক্ষ হলেও, এই অভিযানগুলোর কার্যকারি ফলাফল সবার কাছেই স্পষ্ট। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্* তা'আলার।
তাই এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশে আল-কায়েদার সামরিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপসমূহ সুস্থির ও কৌশলী হিসেবেই আমাদের সামনে আসে।
বিপরীতে, তানজিম আদ-দাওলা শুধুমাত্র নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়া ও অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই অভিযানগুলো করে আসছে। শিয়া-কাদিয়ানি, হিন্দু পুরোহিত, যে কোনো জাতিয়তার বিদেশী হত্যা মূলত অরাজকতা সৃষ্টি ও নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার উদ্দেশ্যকেই সামনে রাখা হয়েছে।
প্রতিটি অভিযানের পর গ্রেফতারি এড়াতে ব্যর্থতা এটাও প্রমাণ করে যে, গণহারে নতুন রিক্রুটদেরকেও তারা অপারেশনগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাদের গ্রেফতার হওয়া কিছু বন্দীদের বক্তব্যের আলোকেও এমনটা সামনে আসে। অর্থাৎ, যা হয় হোক- অপারেশন সংখ্যা বাড়ানোই তাদের উদ্দেশ্য।
রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলার প্রেক্ষাপট থেকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে টার্গেট নির্ধারিত হয়না। বরং, আশেপাশে কোনো হিন্দু-বিদেশ-কাদিয়ানি পাওয়া গেলেই তারা হত্যা করে ফেলতে চায়। যা পরিষ্কারভাবেই তাদের অরাজকতা সৃষ্টি ও হেডলাইনে থাকার উদ্দেশ্যকে প্রমাণ করে।
ভাই আবু আনওয়ার সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এই বিষয়টি,
"আল-ক্বাইদার ব্যবহৃত আরেকটি কৌশল হল গোপনে নিজেদের প্রসার ঘটানো, বৃদ্ধি, বিভিন্ন দলের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা গোপন করা, এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে মিডিয়াতে প্রচারে না যাওয়া। অন্যদিকে জামাতুল বাগদাদীর আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল-ক্বাইদা চায় সবাইকে বোঝাতে যে, তারা কোথাও নেই। জামাতুল বাগদাদী চায়, সবাইকে বোঝাতে যে তারা সব জায়গায় আছে। বিভিন্ন দলের সাথে সম্পৃক্ততা গোপন করার ব্যাপারে শাইখ উসামার যুক্তি ছিল- যখনই আল-ক্বাইদার সাথে কোন দলের সম্পৃক্ততার প্রকাশ পায় তখনই তাদের বিরুদ্ধে কুফফারের আক্রমণ বেড়ে যায়। এ কারণে এটা গোপন রাখাই উত্তম।"
এবং সর্বশেষ যে বিষয়! জনসম্পৃক্ততা দূরে থাকুক, নিজেদের দলের সদস্যদের বাইরে তানজিম-আদ-দাওলা বাকিদেরকে তো মুসলিমই মনে করতে চায় না। রামাদি, তিকরিতে তারা সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। মুজাহিদিনদের হত্যার মাধ্যমে এলাকা সম্প্রসারিত করা এবং পরবর্তীতে তা শিয়াদের কাছে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাধারণ মুসলিমদের রক্তের প্রতি তাদের উদাসীনতাকেই প্রমাণ করে। সেখানে উম্মতকে জাগ্রত করার উদ্দেশ্য তারা জিহাদি অভিযান পরিচালিত করবে সে আশা কিভাবে করা যায়!?
বাংলাদেশে জাপানি মুসলিমকে হত্যা করা, হুসেনি দালান আক্রমণে একজন সুন্নিকে হত্যা করার মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের অভাব ও হঠকারিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে ইতিমধ্যে। এবং, বন্দী হামলাকারীরা যখন পরে জানতে পেরেছে নিহতরা মুসলিম ছিল তখন আফসোস করেছে (নিউ ইয়র্ক টাইমস)।
এছাড়াও, বাংলাদেশের তানজিম আদ-দাওলাও হেফাজতসহ প্রায় সকল ইসলামী সংগঠন, অধিকাংশ উলামায়ে কেরামকে জাহমিয়া-কাফির-বিদ’আতি মনে করে থাকে। যা তাদের অফিশিয়াল বার্তাগুলোতে উঠে এসেছে।
পরিশেষে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ তুলে ধরছি,
“AQ is targeting the best from the best. but isis guys killing in jungle, in village, innocent hindu old guy etc, just to increase the number of claim,”
অতএব, উপরোক্ত তুলনামূলক আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ফসল ঘরে তোলাই আল-কায়েদার মানহাজ এবং তার বিপরীতে শুধুমাত্র নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়া ও অরাজকতা সৃষ্টিই তানজিম আদ-দাওলার উদ্দেশ্য।
গুলশান আক্রমণঃ তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ দাওলা
গুলশান আক্রমণের বিস্তারিত আলোচনা তিনটি বিষয়বস্তুর অধীনে আলোচনা করা হলো -
প্রথমত, কৌশলগত পর্যালোচনা
পাঁচজন সক্রিয় সদস্যের বিনিময়ে কিছু জাপানি আর ইটালি (মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া কিংবা ব্রিটেনের তুলনায় শত্রু হিসেবে যাদের প্রভাব অনেক অনেক কম) হত্যা করা বৈশ্বিক জিহাদের প্রেক্ষাপটে মোটেও ফায়দা এনে দেয়না। এর দ্বারা শুধুমাত্র তানজিম আদ দাওলা’র পূর্বের উদ্দেশ্য দুটিই সামনে আসে। আর তা হচ্ছে –
১) নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়া। ২) অরাজকতা সৃষ্টি।
বিপরীতে বাংলাদেশে আল-কায়েদার উদ্দেশ্য উপরের দুটির একটিও নয়। তদানুজায়ী কৌশল এবং কার্যক্রমে পার্থক্য অবশ্যই ফুটে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।
মূলতঃ বাংলাদেশ সরকার ‘মৌলবাদের উপস্থিতি’ স্বীকার না করতে চাওয়াতে আইএসের অস্থিরতা বেশ আগে থেকে দৃশ্যমান ছিল। গুলশান আক্রমণ চলাকালীনই ভেতরের ছবি প্রকাশ, অভিযান শেষ হওয়ামাত্রই হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করা থেকে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় বরাবরের মতই দুটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই অভিযানটি করেছে আই এস। কেননা অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতার মায়াজাল সৃষ্টি ও মিডিয়াতে একটানা অবস্থানের মাধ্যমে নিজেদের দলভারী করা তুলনামূলক কার্যকর বলেই ধরা হয়ে থাকে। যে কোনো মূল্যে দল ভারী করার মানসিকতার উপর ভিত্তি করে তাদের অপারেশনাল স্ট্র্যাটেজি গড়ে উঠেছে।
যার সাম্প্রতিক উদাহারণ – এই গুলশান অভিযান। গুলশান অভিযানে আক্রান্ত নাগরিকেরা হচ্ছে ইটালি, জাপানের নাগরিক। ন্যাটো জোটের বিমানহামলা বন্ধে কিংবা ইরাকি সেনাপ্রশিক্ষণ বন্ধের মত সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলার মত দেশ এগুলো কি না? এর আগে যেমন বেলজিয়ামে আক্রমণ হয়েছে সেটা কি এজন্য যে, বেলজিয়ামে ন্যাটোর সদরদপ্তর? বেলজিয়ামে ন্যাটোর সদরদপ্তর থাকলেও বেলজিয়াম বৈশ্বিক যুদ্ধে কাফিরদের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে? বেলজিয়াম আক্রমণের পর দাওলার অর্জন কতটুকু? কিংবা বাংলাদেশে ইটালি, জাপানি হত্যার ফলেই অর্জন কতটুকু?
গুলশান অভিযান সাময়িক ত্রাস সৃষ্টি ব্যাতীত কোনো অর্জনই এনে দেয় না। মাত্রাতিরিক্ত সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশও ঘটে না। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রভাববিস্তারকারী হামলা হিসেবেও বিবেচিত হবে কতটুকু সেটার প্রশ্নও থেকে যায়।
তবে অসংখ্য অপরিকল্পিত, হঠকারী হামলার মধ্যে অরল্যন্ডো হামলা বিশেষভাবে প্রশংসার যোগ্য।
কিন্তু বিপরীতে – আল্লাহ্* তা'আলার অনুমতিতে আল-কায়েদা পরিচালিত মাদ্রিদ আক্রমণ এমন সময় করা হয়েছিল যখন স্পেন গণহারে ইরাকে সৈন্য পাঠাচ্ছিল। মাদ্রিদ আক্রমণের পর স্পেন ইরাক থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং প্রো আমেরিকান স্প্যনিশ সরকারের পতন ঘটে।
ওয়েস্টগেট হামলা কেনিয়ান ক্রুসেডারদের আগ্রাসন ব্যাহত করার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল। যার সুদূরপ্রসারী ফলাফল সকলের কাছেই স্পষ্ট। অর্থাৎ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের আলোকেও দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী কৌশল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য ব্যাতীত আল-কায়েদা আমেরিকা ব্যাতীত অন্য কুফফার দেশগুলোকে পারতপক্ষে আক্রমণের শিকার বানায় না। এর উদ্দেশ্য, মোটেও ক্রুসেডার ও তার সহযোগীদের ছাড় দেয়া নয়।
বরং, আমেরিকাকে সর্বত্রই পেরেশান করে তোলার কারণ তো এটা যে, আমেরিকার পতন ঘটলে এর মিত্র ও দালাল রাষ্ট্রগুলো তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পরবে... এবং বি’ইজনিল্লাহ যা খুব নিকটেই। যেমনটা প্রত্যক্ষ করা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেত্রে। আলহামদুলিল্লাহ।
তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও – সাপের মাথা আমেরিকা ও আগ্রাসী ক্রুসেডার মিত্রদের (যেমন- মালিতে আগ্রাসী ক্রুসেডার ফ্রান্স, বুরকিনা ফাসো; সোমালিয়াতে আগ্রাসী ক্রুসেডার উগান্ডা, ইথিওপিয়া, কেনিয়া) বাদ দিয়ে যত্রতত্র আক্রমণ করার নীতি আল-কায়েদা অনুসরণ করেনা। এবং এটাই মুহসিনে উম্মাহ আল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন (রহ)’র দেখানো মানহাজ।
এ আলোচনা থেকেও তানজিম আদ-দাওলা’র ন্যায় সল্পমেয়াদী, তাৎক্ষনিক ফলাফল লাভের আকাঙ্খার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যের বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তাই যদি আল-কায়েদার সামর্থ্য থেকেও থাকে তবুও তানজিম আল-কায়েদা শুধুমাত্র প্রচারের আশায় ইটালি-জাপানি-ব্রাজিলিয়ান হত্যা করতে রাস্তায় নামবে না। কেননা, আল-কায়েদার নতুন করে নিজেকে প্রমাণের কিছুই নেই। সামর্থ্যের আলোচনা ইনশা’আল্লাহ আসছে।
দ্বিতীয়ত, গুলশান হামলাঃ পরিশোধিত চিন্তাধারা
পূর্বের সময়গুলোতে তানজিম-আদ-দাওলা এধরণের অপারেশনের মাধ্যমে গণহারে বাছবিচারহীন হত্যা করলেও গুলশান অভিযানে তানজিম আল-কায়েদার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
আল-কায়েদা পরিচালিত আলজেরিয়ার গ্যাস প্ল্যন্ট আক্রমণ, বুরকিনা ফাসোর হোটেল স্প্লেন্ডিড, কেনিয়ার ওয়েস্টগেট আক্রমণ প্রভৃতি আক্রমণগুলোতে মুসলিম রক্তের প্রতি আল-কায়েদার সতর্কতা ও কাফিরদের প্রতি কঠোরতার চমৎকার নীতি পূর্ব থেকে পশ্চিমের সকল মুসলমান, বিশেষত উলামায়ে কেরাম ও মুজাহিদিনদের অন্তর প্রশান্ত করেছে। প্রতিটি আক্রমণেই মুসলমানদের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং কাফিরদের সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধণ সম্ভব হয়েছে। ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
বাংলাদেশেও আল-কায়েদা উলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের মানুষদের মন ইতিমধ্যেই জয় করেছে। তানজিম আদ-দাওলার অগোছালো নীতি ও আল-কায়েদার সতর্ক পদক্ষেপ ইতিমধ্যে মানুষের কাছে আলাদা হয়ে গিয়েছে। মুরতাদগোষ্ঠী তাই আল-কায়েদার ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে বারবার শিয়া-কাদিয়ানি-পুরোহিত হত্যার সাথে ব্লগার হত্যার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। কেননা, সাধারণ মুসলমানদের দিকে লক্ষ্য রেখে এতদিন ব্লগারদের জন্য মুরতাদ প্রশাসন সমবেদনা জানাতে ছিল অক্ষম।
বাংলাদেশে আল-কায়েদা থেকে তানজিম-আদ-দাওলার অবস্থান অনেক নাজুক সেটা তানজিম আদ দাওলার স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকটও স্পষ্ট।
তা না হলে, বাংলার আই এসের আমির আবু ইব্রাহিম হানিফ কেন ‘ব্লগার’দের বিদেশ পলায়নের কৃতিত্ব নিতে চাইলেন?
বাংলাদেশে আল-কায়েদার জনপ্রিয়তার বিপরীতে নিজেদের দলছুট আক্রমণ ও তাড়াহুড়াপ্রবণতা জামাত-আল-বাগদাদিকে কিছুটা শিক্ষা নিতে বাধ্য করেছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয়।
গুলশান অভিযান তাই সম্পূর্ণ আল-কায়েদা মডেল অনুসরণ করেই পরিচালিত একথা বলতে দ্বিধান্বিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, তুরস্কের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আই এসের নির্বিচার বোমা হামলায় নিহত হয়েছে অসংখ্য আহলুস সুন্নাহ’র সদস্য।
তানজিম আদ দাওলার পক্ষ হতে আল-কায়েদার অনুসরণে মুসলিমদের রক্তকে প্রাধান্য দিয়ে অপারেশন করা হলো গুলশানে। যা তাদের ইতিহাসে বিরল। তাদেরকে এজন্য সাধুবাদ জানানো যেতে পারে।
অতএব, চূড়ান্ত বিদ্বেষপোষণ সত্ত্বেও বিচ্ছিন্নভাবে আল-কায়েদার অনুসরণ জারি রাখলেও, বাংলাদেশে কৌশলগত দিক দিয়ে আল-কায়েদা থেকে তানজিম আদ দাওলা পিছিয়ে আছে এখনো অনেক। দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে টিকে থাকার সামর্থ্যের প্রশ্ন সামনে আসলে এগিয়ে থাকবে আনসার আল ইসলামই। গুলশানের পরিশোধিত চিন্তাধারার হামলা তা নতুন করে প্রমাণ করে।
তৃতীয়ত, সামর্থ্যের প্রশ্ন–
প্রায় প্রতিটি হামলায়ই তানজিম আদ-দাওলা নিজেদের সদস্য হারিয়েছে। প্রচুর গ্রেফতারির পরও বাংলাদেশে একটি ক্ষুদ্র সদস্যগোষ্ঠীর মোটামুটি প্রশিক্ষিত আরও পাঁচজন সদস্যকেও অকাতরে বিলিয়ে দেয়া থেকেও বোঝা যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে টিকে থাকার বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের অগ্রসর হওয়া তাদের মূল লক্ষ্য নয়। এমন কৌশলের মাশুল তারা ইতিমধ্যে ইরাক-সিরিয়া ও লিবিয়াতে দিয়েছে।
এবং, এটা সকলের কাছেই দৃশ্যমান যে, বিশ্বের আর কোথাও সরাসরি যুদ্ধের ফ্রন্ট তারা আজ পর্যন্ত চালু করতে পারেনি। পূর্বপ্রতিষ্ঠিত মারেকাগুলোতে বিভক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে মুজাহিদিনদের অধীনে থাকা ভূমিগুলোতেই তারা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন- সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, আফগানিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই, মুরতাদ-কাফিররা যেভাবে তানজিম-আদ-দাওলাকে অন্যান্য স্থানে যেভাবে হত্যা-গ্রেফতারির মাধ্যমে দমনের চেষ্টা করে মুজাহিদিনরা তা মোটেও করে না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুজাহিদিনরা তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে ফিতনা এড়ানো এবং মূল শত্রুর থেকে মনোযোগ না সরানোর উদ্দেশ্যে।
গুলশান আক্রমণে পাঁচজন সক্রিয়, প্রশিক্ষিত সদস্যকে হারিয়ে ৭টা ইতালিয়ান ও ৭টা জাপানি হত্যা করা কি সামর্থ্য হিসেবে পরিগণিত হবে? বিচ্ছিন্ন কিছু আক্রমণ করতে পারাই কি জিহাদি তানজিমের সামর্থ্য বলে ধরা হবে?
প্রতিটি হামলায় গ্রেফতারি, সহজলভ্য লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ একটি জিহাদি তানজিমের সামর্থ্য প্রমাণ করে কি?
বিপরীতে,
২০১৫ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি অপারেশনের পরপর আল-কায়েদা গ্রেফতারি এড়াতে সক্ষম হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
প্রকাশ্যে দিনের আলোতে হোক, ঘরের ভেতরে হোক, সহস্রাধিক মানুষের ভীড়েই হোক – শুধুমাত্র আল্লাহ্* তা’আলার সাহায্য নিয়ে প্রায় সকল অপারেশনেই লক্ষ্যবস্তুর পতন ঘটিয়ে কোনো সদস্যকে না হারিয়েই অপারেশন শেষ করা সম্ভব হয়েছে।
লক্ষণীয়, আনসার আল ইসলামের অপারেশনগুলো বনে-জঙ্গলে-ক্ষেতে-খামারে কিংবা অজ পাড়াগায়ে সংঘটিত হয়নি। চিন্তা করে দেখুন, ঢাকার কলাবাগানের মত জায়গায় অপারেশন শেষ করে তিন-চারশ লোকের ভীড় ঠেলে পথিমধ্যে পুলিশের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে আল্লাহ’র সাহায্যে নিরাপদে ফিরে আসা কতটুকু সামর্থ্যের পরিচয় দেয়? ওয়ামা জালিকা আলাল্লাহি বি আজিজ।
তাহলে চিন্তা করা যাক, আল্লাহ্* তা'আলার সাহায্যে বাংলাদেশের বাস্তব প্রেক্ষাপটে ত্রিস্তরী নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে যে সকল ভাইয়েরা স্রেফ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে অপারেশন শেষে আবার বাতাসে মিলিয়ে যেতে পারে, এমন সাহসী ও ক্ষিপ্র ভাইদের মাত্র তিনজন আল্লাহ'র বান্দা শাহাদাতের নিয়তে অটোমেটিক রাইফেলসহ বাংলাদেশের যে কোনো ভবনে যে কোনো সময় প্রবেশে সক্ষম কি না?
আল্লাহ্* তা'আলার অনুগ্রহে, মাত্র ১৫দিনের জন্য ৩বছর পর দেশে আসা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে- ফেরার আগে হত্যা করার সামর্থ্য যাদের আছে, সম্পূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট পরিচালনাকারী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা বের করে ঘরের ভেতর গিয়ে হত্যা করে ফেলার সামর্থ্য যাদের আছে- তাদের পক্ষে হারবিদের চিহ্নিত করে হত্যা করা সম্ভব কি না?
নিজেকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, আল্লাহ্*’র অনুগ্রহপ্রাপ্ত এসকল ভাইদের মাত্র তিনজনকেও তানজিম আল কায়েদা বাংলাদেশ ফেরত পাবার আশা না করে গুলশান অভিযানের ন্যায় কোনো অভিযান পরিচালনা করতে চায় তাহলে সেটা সম্ভব কি না?
বি’ইজনিল্লাহ সম্ভব! অর্থাৎ, সামর্থ্যের প্রশ্নেও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বাংলাদেশেও আল-কায়েদা অনেকাংশে এগিয়ে। ওয়ালহামদুলিল্লাহ।
তবে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আল-কায়েদা কি এখনই তা করবে? আল-কায়েদার সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশলের আলোকে সে সময় কি এসেছে? শুধুমাত্র সদস্য সংগ্রহের নীতিকে সামনে রেখে এধরণের হামলা করা কি আল-কায়েদার মানহাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নাকি এধরণের এধরণের হামলা (ইশ্তিশহাদি হামলা) কুফরের কেন্দ্রে আঘাতের উদ্দেশ্যে আল-কায়েদা করে থাকে?
দীর্ঘ আলোচনার পর, পাঠকের পক্ষে প্রশ্নগুলোর উত্তর কিছুটা হলেও আচ করা সম্ভব ইনশা’আল্লাহ।
এখন পর্যন্ত যা যা আলোচনা হয়েছে –
১/ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলা’র দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
২/ তানজিম আল-কায়েদা কি তানজিম আদ-দাওলার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত কি না।
৪/ দাওয়াতি ও মিডিয়ার ক্ষেত্রে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলা’র দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
৪/ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম আদ-দাওলা’র দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
৫/ গুলশান আক্রমণের আলোকে বাংলাদেশে তানজিম আল-কায়েদা ও তানজিম-আদ-দাওলার তুলনামূলক পর্যালোচনা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, বাংলাদেশে তানজিম আল-কায়েদা দাওয়াতি, সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে একথা বলার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।
আশা করি, সত্যানুসন্ধানী ব্যাক্তিদের জন্য তা যথেষ্ট হবে। এবং আল্লাহ্* তা’আলাই সহজ করার মালিক।
পরিশেষে যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হচ্ছে, শার’ঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এই লেখাটি লেখা হয়নি। শুধুমাত্র এবং কেবলমাত্র কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আলোচনা করা হয়েছে। তাই উভয় তানজিম একই/কাছাকাছি আকিদা-মানহাজ অনুসরণ করে এমন কোনোপ্রকার দাবী গ্রহণযোগ্য হবে না।
শার’ঈ দৃষ্টিকোণ থেকে আল-কায়েদা ও জামাত-আল-বাগদাদির আক্কিদা-মানহাজের পার্থক্যের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন –
১/ ‘দাওলার আসল রূপ’, উস্তাদ আহমাদ নাবিল (হাফিজাহুল্লাহ)
২/ Methodological Differences Between Al-Qaeda & ISIS – Ahmad Ali Hamdan
এবং সর্বশেষ কথা – সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলার।
Comment