দ্বিতীয় অভিযোগঃ এক মানহাজ যা শান্তিপূর্ণ পন্থায় বিশ্বাসী
আদনানি দাবি করে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্*র বিচ্যুতিসমূহের মধ্যে একটি বিচ্যুতি হল এই যে, আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্* শান্তিপূর্ণ পন্থায় কাজ করায় বিশ্বাসী। কিন্তু উসামার আল-ক্বা’ইদা শান্তিপ্রিয় পন্থায় বিশ্বাসী ছিল না। “এ কখনোই আমদের মানহাজ ছিল না, আর কখনো হবেও না” শিরোনামের বার্তাটিতে আল-ক্বা’ইদা কোন কোন ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হয়েছে তার আলোচনায় আদনানি বলেছিল – “কিন্তু এ বিষয়টি হল দ্বীনের বিকৃতির ও পথভ্রষ্টতার, ব্যাপারট হল মিল্লাতু ইব্রাহীমের দাওয়াহ, তাগুত ও তার অনুসারীদের বর্জন এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার পরিবর্তে অহিংসবাদে বিশ্বাসী এক পথ বেছে নেয়ার।“
এবং ইতিপূর্বে “অহিংসবাদ কাদের ধর্ম?” বার্তাটিতে আদনানি সে যেসব বিষয় উত্থাপন করেছিল তার মধ্যে কয়েকটি হল –
১- অহিংসবাদের জায়গা হল আস্তাকুড়ে! এবং এর দিকে আহবান হচ্ছে বাতিলের দিকে আহবান!
২- শান্তিপূর্ণ অবস্থান না সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে আর না পারে বাতিলকে অপসারণ করতে! কেউ যদি এর বিপরীত দাবী করে, সে যেন নিজেকে নবীজী ﷺ এর চেয়েও বেশী জ্ঞানী এবং দয়ালু দাবী করল, এবং দাবি করলো তার নির্দেশনা নবীজীর ﷺ নির্দেশনার চেয়ে উত্তম।
৩- আর যে বলে যে আল্লাহর দ্বীন শান্তিপূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত হবে, সে তো আল্লাহর কিতাব এবং নবীজী ﷺ এর সুন্নাহকে পেছনে ছুড়ে ফেলে নিজের নফসের অনুসরণ করেছে।
৪- অহিংসবাদের ফিকহ হচ্ছে, পরাধীনতা, পদাবনতা আর দাসত্বের ফিকহ।
৫- যারা কিনা শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি ও অহিংসবাদের দিকে আহবান জানায়, তাদের চাইতে ঐ মুরগীর সাহস বেশি যে কিনা নিজের ছানাগুলোকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করে!
অথচ আল-ক্বা;’ইদার যোদ্ধারা আজো অস্ত্র ধারণ করে আছে এবং ক্বিতাল চালিয়ে যাচ্ছে!
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ পন্থাকে গ্রহন করা, আর কোন ক্ষেত্রে অনেকগুলো একাধিক উপায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পন্থাকে একটি পন্থা হিসেবে গ্রহন করার মধ্যে পার্থক্য আছে।
শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী, যিনি কিনা উসামার আল-ক্বা’ইদাতে ছিলেন এ ব্যাপারটির ব্যাখ্যায় বলেন-
“মূলত আল-ক্বা’ইদা এবং এর মুজাহিদগণ সর্বক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ উপায় কাজ করার বিরোধিতা করেন না। এবং তাদের কোন বক্তব্যেও আপনি এমন কিছু পাবেন না। বরং তারা কুফর এবং যুলুমের বিরুদ্ধে সাধ্য অনুযায়ী শরীয়াহ সম্মত সকল উপায়ে প্রতিরোধ গড়ার আহবান করে থাকেন। আর এসকল পদ্ধতির মধ্যে শিখর হল এবং মূল ভিত্তি হল জিহাদ। মুজাহিদরা যে ব্যাপারটির বিরোধিতা করেন, তা হল শান্তিপূর্ণ উপায়কেই সম্পূর্ণভাবে জিহাদের বিকল্প হিসেবে গ্রহন করা। জিহাদের পথ হল প্রস্তুতি ও আসলিহাত অর্জন করার, অস্ত্রের মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায়, আঘাত করা, ক্বিতাল করা এবং বিস্ফোরণের। শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে এ পথের অনুরূপ বিকল্প গণ্য কোরার বিরোধিতা মুজাহিদিন করে থাকেন। যদি কোথাও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে শরীয়াহর সীমারেখার বাহিরে না গিয়ে কোন লক্ষ্য অথবা লক্ষ্যের কিছুটা হলেও অর্জন সম্ভব হয়, তবে মুজাহিদরা কখনোই বাধা দেন নি। আর আল-ক্বা’ইদার নেতৃবৃন্দই তো কত বার এ রকম জনপ্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলন ও অবরোধ-সমাবেশের প্রতি জনগণকে আহবান করেছেন!”[1]
উসামার আল-ক্বা’ইদার সময়েই শায়খ আইমান আয্*-যাওয়াহিরীকে একটি সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়, “ইতিপূর্বে আপনাদের দেওয়া বক্তব্যগুলোতে যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দিকে আহবান করে আপনি তাদের সমালোচনা করেছেন; অথচ আজ আমরা শুনছি আপনি রাজনৈতিক আন্দোলন, সভা-সমাবেশ আর অবরোধের প্রতি মানুষকে আহবান করছেন”।
এ প্রশ্নের উত্তরে শায়খ আইমান বলেন-
“না! আমি সমালোচনা করেছি তাদের, যারা দেশের শাসক শ্রেণী এবং ক্রুসেডর হানাদারদের বিরুদ্ধে বিরোধিতাকে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য সীমাবদ্ধ রাখার প্রতি আহবান করে। আর এ শ্রেণীর চাইতেও নিকৃষ্ট হল তারা যারা শাসক ও ক্রুসেডার হানাদারদের বিরুদ্ধে যারা জিহাদের করে এবং এর আহবান জানায়, তাদের বিরোধিতা করে। তবে জনসমাবেশ এবং এ জাতীয় কর্মসূচিগুলো মূলত জিহাদী কার্যক্রমকে পরিপূর্ণতা দেয় ও সহায়তা করে।”[2]
সুতরাং আদনানির এ অভিযোগের জবাবকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১) শায়খ উসামার ইন্তেকালের পর আল-ক্বা’ইদা কি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে জিহাদের বিকল্প হিসেবে গ্রহন করেছে?
২) শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিকে একটি বৈধ পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা কি পথভ্রষ্টতার প্রমাণ?
প্রথমটির ক্ষেত্রে, আমরা এমন কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করবো যার দ্বারা আদনানির মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচিত হবে।
শায়খ হুসাম আব্দুল রাউফ, যিনি খুরাসানের নেতৃবৃন্দের অন্তর্ভুক্ত, বলেন, “যারা বলে যে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিক যে পরিস্থিতির কারনে মুসলিমরা ক্রমাগত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে, একে শান্তিপূর্ণ জনপ্রিয় আন্দোলনের পদ্ধতির মাধ্যমে বদলানো সম্ভব, তাদের প্রতি আমরা বলি, “আপনারা দ্বীনের একটি অংশ গ্রহণ করেছেন। এবং দ্বীনের যে একটি অংশ আপনারা গ্রহন করেছেন শুধু এটুকুরই সঠিক রূপ ও প্রয়োগ পদ্ধতি যদি আপনারা ভালোভাবে অনুধাবন করতেন তাহলেও আমাদের একটি চাওয়া পূর্ণ হতো। আর আপনারা যে অংশগুলো বাদ দিয়েছেন সেগুলো হল, জিহাদ, হুদুদের প্রয়োগ, হিসবাহ (তত্ত্বাবধান), এবং অন্যান্য বল প্রয়োগ ও নিবৃত্ত করার অন্যন্য পদ্ধতির যেগুলোর দ্বারা প্রথম অংশের (যে অংশটি আপনারা গ্রহন করেছেন) স্বাভাবিক প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। অর্থাৎ দ্বীনের একটি অংশ হল “দিকনির্দেশনা দানকারী কুরআন” এবং অপরটি হচ্ছে “সাহায্যকারী তলোয়ার”। নিশ্চয়ই আল্লাহ কুরআন দিয়ে যা প্রতিহত করেন না, সেটাকে তিনি শক্তি দ্বারা প্রতিহত করান।”[3]
শায়খ আবু দুজানা আল-বাশা আল-বাসিসী বলেন, “এইসব অপরাধীরা তাদের কথা এবং কাজের মাধ্যমেই তারা যেটাকে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি বলে, সেটার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, কারণ তাদের অভিধান অনুযায়ী অহিংস পদ্ধতির অর্থ হচ্ছে নিজেদের খেয়াল খুশির কাছে আত্মসমর্পণ করা। সত্য হচ্ছে, যে ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই, সত্যের বল প্রয়োগ ব্যতীত বাতিলকে সরানো যাবে না, ধ্বংস করা যাবে না। আর যারা বল প্রয়োগ ব্যতীত শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাতিলকে প্রতিরোধের কথা বলে, তারা মূলত বিভ্রান্তির অথৈ সাগরে হাবডুবু খাচ্ছে, এবং তাদের রক্তের সাগরে হাবুডুবু খাবারও প্রবল সম্ভাবনা আছে, এবং তাও কোনরূপ লক্ষ্য অর্জন ব্যতিরেকেই! এবং এ বিষয়টি এখনো পর্যন্ত আমাদের ভূখন্ডগুলোতে যতোগুলো বিপ্লব কিংবা বিপ্লবী আন্দোলন হয়েছে, প্রতিটির ক্ষেত্রেই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ ব্যাপারটি বোঝার জন্য এতো গভীর চিন্তারও দরকার হয় না, সামান্য মগজ আর সদিচ্ছা থাকাই যথেষ্ঠ।”[4]
আযযাম আল-আম্রিকি[5] বলেন, “যারা বলেন জিহাদ, শুহাদা এবং মূল্যবান সকল কিছুর আত্মত্যাগ ছাড়াই শুধু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনা সম্ভব, তাদের প্রতি জবাব হল- সাম্প্রতিক এসব ঘটনাবলীর মাধ্যমে জিহাদী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সেসব কথার সত্যতাই প্রমাণিত হয়েছে যা তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, আর তা হলঃ ভোট কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক খেলার নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনা যাবে না। আর না-ই বা পরিবর্তনা আনা যাবে ত্বাগুত এবং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দরজায় ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে, তোষামোদী, আপোস অথবা পশ্চাদপসরণের মাধ্যমে।”[6]
একই জায়গায় তিনি আরো বলেন, “যারা গোঁ ধরে যে, বিপ্লব হতে হবে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ, রক্তপাতহীন বা তাদের ভাষায় “অহিংস বিপ্লব”; যেখানে এমনকি হাক্বের জন্যও এক ফোঁটা রক্তপাত হবে না, তারা আসলে বিপ্লবের ইতিহাসই পড়ে নি।”[7]
তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা এই দুনিয়া আকড়ে পড়ে থাকার প্রতি আগ্রহী হয়ে পরিপূর্ণ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ বেছে নেইও, তবুও তারা (তাগুত ও হানাদার ক্রুসেডার) অনন্তকাল পর্যন্ত আমাদেরকে হত্যা করতেই থাকবে।“[8]
তিনি আরো বলেন, “সুতরাং হে লিবিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন এবং পুরো অঞ্চলের জাগ্রত মুসলিম বীরেরা! আপনারা দেখেছেন এবং জেনেছেন যে, পরিবর্তন এবং স্বীয় অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া কখনো ভোটাভুটির, অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক খেলায় অংশগ্রহণ, অথবা ত্বাগুত এবং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দরজায় মাথা নত করে ভিক্ষাবৃত্তি ও তোষামোদী, অথবা আপোস এবং বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে আসবে না। বরং এটি আসবে ধৈর্যের সাথে ইসলামের আদর্শ, মূলনীতির উপর অবিচল থাকার মাধ্যমে। লক্ষ্যের উপর দৃঢ় থেকে উত্তরোত্তর ধৈর্যের বৃদ্ধির সাথে সাথে আত্বত্যাগ, শাহাদাত, জিহাদ এবং ক্বিতালের মাধ্যমে।”[9]
এবং “ত্যাগ ও শাহাদাতের উম্মাহ” – শীর্ষক বক্তব্যে তিনি আরো বলেছেন “মিশরের জন্য আজ দরকার হল দাওয়াহ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জিহাদ ও ক্বিতাল”
যদি আসলেই তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদের পরিবর্তে আল-ক্বা’ইদাহ্* কোন নতুন মানহাজ গ্রহন করে থাকে, এবং তারা যদি আসলেই অহিংসবাদে বিশ্বাসী হয়ে থাকে, তাহলে কেন মিশরের জন্য সমাধান হিসেবে তিনি “জিহাদ”-কে উল্লেখ করলেন?
“মুসলিমদের গৌরব এবং অপরাধীদের লাঞ্ছনা” নামক বার্তায় আয্*যাম আল-আম্রিকি বলেন, “হে লিবিয়ার মুসলিম ভাইয়েরা! তারা আপনাদের বলে তাগুতের অপসারণের মাধ্যমেই নাকি বিপ্লব শেষ হয়ে গিয়েছে। না! আপনাদের বিপ্লব এখনো শেষ হয় নি, এবং ততোক্ষন শেষ হবে না, যতোক্ষণ না লিবিয়াতে শরীয়াহ দ্বারা পরিচালিত ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরুন, যা আপনাদের বিষয়গুলোকে সংরক্ষণ করে, এবং দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরুন আপনাদের অস্ত্রগুলোকেও, যার মধ্য রয়েছে সুরক্ষা, শক্তি এবং সম্মান।”
যদি আল-ক্বা’ইদাহ্* অহিংসবাদে বিশ্বাসী হয়, জিহাদের বদলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে নিজেদের মানহাজ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, তবে কেন তারা অস্ত্র দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধরার উপদেশ দিচ্ছে? নাকি শান্তিপূর্ণ, অহিংস আন্দোলনে অস্ত্রের প্রয়োজন হয়?!
উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আদম[10] বলেন, “লিবিয়ান বিপ্লব হত্যাকারী যালিমদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ও তাদের সমূলে উৎপাটিত করার একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এবং অন্যান্য যেসব সমাজ লিবিয়া যা অর্জন করেছে সেরকম অর্জন করতে চায়, তাদেরও লিবিয়ানদের মত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে দিয়েই তা অর্জন করতে হবে। কারন এ অনিবার্য।[11]
(আইসিসের দাবি অনুযায়ী) যারা নাকি জিহাদ-ক্বিতালকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছে, তারাই তৎকালীন সময়ের একমাত্র সশস্ত্র বিদ্রোহকে “চমৎকার দৃষ্টান্ত” বলেছেন…চিন্তার বিষয়…!
ড. আইমান আয্*-যাওয়াহিরী তার “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা” নামক বার্তায় বলেন, “এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, এ “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত” এর বিকল্প কি হতে পারে? বিকল্প হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তার সাহাবাদের সুন্নাহ, আর তা হচ্ছে দাওয়াহ এবং জিহাদ।”
যদি তিনি অহিংস পদ্ধতিতেই বিশ্বাসী হতেন, তবে তার জন্য দাওয়াহ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য বের হতে বলাটাই অধিক উপযুক্ত হতো না?
একইভাবে দুই পবিত্র মসজিদের ভূমির অধিবাসীদের উদ্দেশ্য “ওয়াহী নাযিল ও ইসলামের শেকড়ের ভূমির মুসলিমদের প্রতি” – শীর্ষক বার্তা শায়খ আইমান আয্*-যাওয়াহিরী বলেন – ন্যায়নিষ্ঠ বীরদের পদাঙ্ক অনুসরণ করুন, যেমন: উসামাহ্* বিন লাদিন, আনওয়ার আল-আওলাকি, আব্দুল্লাহ্* আর-রাশুদ, ইউসুফ আল’উয়াইরি[12] ও খাত্তাব- আল্লাহ তাদের সকলের উপর রহমত বর্ষন করুন।’
আব্দুল্লাহ আর-রাশুদ আর ইউসুফ আল-‘উয়ায়রি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা দুই পবিত্র মাসজিদের ভূমিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বের হয়েছিলেন? নাকি তারা অস্ত্রসহ বের হয়েছিলেন?
আস্*সাহাব ফাউন্ডেশনের সাথে সপ্তম সাক্ষাৎকারে ড. আইমানকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, সেটি কীভাবে আসবে? সেটির উত্তর আপনার কাছ থেকে চাই। আমি আরও উত্তর চাই- যে ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে জিজ্ঞেস করেছিলাম- সেনাবাহিনী ও তাদের সেক্যুলার মিত্রদের বিরুদ্ধে যে জনবিদ্রোহ শুরু হয়েছে, আপনি কি মনে করেন, এই পথে কোনো রকমের সাফল্য সম্ভব?’
ড. আইমান প্রতিউত্তরে বললেন, ‘আমি আপনার কাছে এ ব্যাপারে ‘আমভাবে প্রযোজ্য একটি নিয়ম উল্লেখ করছি। দ্বীন, সম্মান, সম্পদ ও জীবনের সুরক্ষার জন্য যালিমের যুলুমের প্রতিরোধ করা মযলুমের অধিকার; সেটি হতে পারে কথার মাধ্যমে অথবা প্রতিবাদের মাধ্যমে কিংবা লড়াইয়ের মাধ্যমে… এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। অপরাধী যালিমের কোনো অধিকার নেই যে, মজলুম কীভাবে প্রতিরোধ করবে তা নির্ধারণ করবে, বরং স্বাভাবিকভাবেই সব বৈধ উপায় মযলুমের জন্য খোলা রয়েছে এবং কারও অধিকার নেই যালিমের বিরুদ্ধে কোনো বৈধ প্রতিরোধে মযলুমকে বাধা দেবে। আমেরিকা ও পশ্চিমারা চায়, তাদের ও তাদের দালালদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ্*র প্রতিবাদ যেন শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।’[13]
আমি বলি, যদি তারা জিহাদ-ক্বিতালের বিপরীতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে গ্রহণ করে থাকে, তারপরও তারা কেন বলে যে, লড়াই হচ্ছে অনেকগুলো সমাধানের মধ্যে একটি? তারা অবশ্যই বলত, ‘আমরা ও অ্যামেরিকা একমত হয়েছি, সমাধান শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যেই হতে হবে!’
একই সাক্ষাৎকারে তাকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তবে সেখানে জিহাদি কার্যক্রম রয়েছে ও সশস্ত্রভাবে শাসকের বিরোধিতা করা হচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?’
ড. আইমান আয্*-যাওয়াহিরী বলেন, ‘এমন প্রতিটি জিহাদি কার্যক্রমের জন্য আমরা দু’আ করি যা পরিচালিত হয় যায়নিস্ট, অ্যামেরিকার স্বার্থ ও ঐসব সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যারা ইস্রাইলের সীমান্তরক্ষী, এবং মুসলিম ভূখন্ডগুলোর অভ্যন্তরীণ অপরাধীদের রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে।“[14]
তিনি যদি জিহাদের পরিবর্তে শান্তিবাদকেই গ্রহণ করতেন, তবে নিশ্চয় তিনি জিহাদ ও ক্বিতালের জন্য দু’আ না করে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের উপদেশ দিতেন।
আস্*সাহাব ফাউন্ডেশন থেকে প্রচারিত, ‘অতীত থেকে শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা’ নামক বার্তাটির শেষের দিকে মিশরীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আনসার আল-বাইতিল মাকদিসের একটি অপারেশনের প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ব্যাপারে আল-ক্বা’ইদার বিশ্বাস আছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটার অস্তিত্ব কোথায় তাহলে?!
আল-ক্বা’ইদাহ্* ফি মাগরিব আল-ইসলামিয়্যাহর আমির শাইখ আবু মুস্*য়াব আব্দুল ওয়াদুদ তার ‘উমার আল্*মুখতারের ওয়ারিশদের প্রতি অভিনন্দন’ নামক বার্তায় লিবিয়ার বিপ্লবকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। অথচ লিবিয়ার বিপ্লব শান্তিপূর্ণ নয় বরং একটি সশস্ত্র বিপ্লব ছিলো! যদি আল-ক্বা’ইদাহ্* জিহাদ-ক্বিতাল বর্জন করে শান্তিপূর্ণ মানহাজ গ্রহণ করেই থাকে- যেমনটি আদনানি দাবি করেছেন- তবে তিনি কীভাবে তা সমর্থন করলেন?!
দ্বিতীয়তঃ শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিকে একটি বৈধ পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা কি পথভ্রষ্টতার প্রমাণ?
অর্থাৎ, যারাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অনুমোদন করেছে অথবা সমর্থন করছে, তারা সবাই কি বিপথগামী? যদি তাই হয়, তাহলে নিচে আমরা যাদের কথা তুলে ধরতে যাচ্ছি তারা সবাই বিপথগামী –
“ইসলামের শহীদের (আমরা তাকে গণ্য করি) বক্তব্য – শীর্ষক শায়খ উসামার শেষ বার্তাতে তিনি বলেছেন –
‘আমার মুসলিম উম্মাহ্*, আমরা আপনাদের সাথে এই মহান ঐতিহাসিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি… উম্মাহ্* অনেক দিন ধরে বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছে, যেটির সুসংবাদের সূচনা প্রাচ্য থেকে এসেছে। এরপর হঠাৎ করেই পশ্চিম থেকে থেকে বিপ্লবের সূর্য উদিত হলো এবং তিউনিসিয়া থেকে বিপ্লবকে তা উদ্ভাসিত করলো। পুরো উম্মাহ এর সহযোগী ও সমর্থক হবার ইচ্ছা পোষণ করলো, তাদের অন্তর হলো আনন্দিত, শাসকদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে এল এবং অনিবার্য প্রতিশ্রুতির আগমনের ব্যাপারে ইয়াহুদিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। তেমনি যালিমের পতনের মাধ্যমে অপমান, অবনমন, ত্রাস, হিংস্রতার বিপরীতে জাগ্রত হলো মুক্তি, সম্মান, সাহস ও নির্ভীকতা। মুক্তির জন্য পরিবর্তনের বাতাস বইতে লাগলো। তিউনিসিয়া এর নেতৃত্ব নিলো এবং তিউনিসিয়ার মানুষের প্রজ্জ্বলিত এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের আলো, মিসরের যোদ্ধাদেরকেও তাহরির স্কয়ারের দিকে উদ্ধুদ্ধ করলো, এক মহান বিপ্লবের গোড়াপত্তন হলো, এক মহান বিপ্লব!!’
সুতরাং এটি নিশ্চয় একটি ইঙ্গিত যে, শাইখ উসামাহ্* শান্তিপূর্ণ বিপ্লবে বিশ্বাসীদের একজন। এজন্যই তিনি এই শান্তিপূর্ণ বিপ্লব ‘মহান ঐতিহাসিক ঘটনা’ ও ‘মহান বিপ্লব’ বলেও উল্লেখ করেছেন!
এমনকি অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে, ISIS নিজেরাও কিছু দেশে শান্তিপূর্ণ পন্থা অবলম্বনের প্রতি আহবান করেছে এবং অনুমোদন করেছে! আর তারা তিনটি আলাদা জায়গায় শান্তিপূর্ণ পন্থাকে অসৎ কাজের নিষেধ বলেও উল্লেখ করেছে!
১- প্রথমটি হলো, ইরাকে দাবি আদায়ের জন্য আহ্*লুস সুন্নাহ্*র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীর ব্যাপারে তারা ‘আহলুস্* সুন্নাহর স্বাধীন জনসাধারণের জন্য প্রতিশোধের তৃতীয় ঢেউ”- শিরোনামে একটি বক্তব্য প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে তারা বলে:
‘আমরা আবারও সেইসব মুসলিমদের অভিনন্দন জানাতে চাই, যারা তাদের দ্বীন ও ইয্*যতের জন্য- বন্দী মুসলিম বোনদের উদ্ধারে জন্য, যুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য- এবং আহ্*লুস্* সুন্নাহর ওপর ক্রুসেডার সমর্থিত অপরাধী চক্র যা করে যাচ্ছে, যারা মুসলিমদের ওপর নিকৃষ্ট সাফাওয়ি বিষ পান করিয়ে যাচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হয়েছে। আমরা তাদের জানাচ্ছি, ‘নিশ্চয়ই আপনাদের মুজাহিদ সন্তানেরা কখনোই আপনাদের পরিত্যাগ করবে না, ইনশাআল্লাহ্* এবং আপনারা সবসময়, সবখানে যেখানেই আপনারা দ্বীনের স্বার্থে ও যুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থা নেবেন আপনার তাদেরকে আপনাদের সামনের কাতারে পাবেন। আমরা আপনাদের শয়তানের দালালদের ব্যাপারে সতর্ক করছি, যারা মুজাহিদদের ব্যাপারে গুজব ছড়াচ্ছে যে, মুজাহিদরা নাকি আপনাদের বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের বিরুদ্ধে– অথচ এটি মিথ্যা ও মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছুই নয়, এতে বিচক্ষণ ও বিশ্বাসীদের প্রতারিত হওয়া উচিত হবে না। কিন্তু আমারা আপনাদের আবারও আহবান করছি এবং মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনাদের সকল কর্মসূচির যেন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণা এবং আপনাদের প্রচেষ্টা থেকে সবসময় সুবিধা পাওয়ার সন্ধানে থাকা চোরেরা আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ব্যর্থ হওয়ার কারণ হতে পারে, আর তা সাফাওয়ি ইরানিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনঠাসা করে মালিকির সাম্প্রদায়িক অপরাধী প্রশাসনকে সুবিধা দেবে… এবং মনে রাখবেন হে লোকসকল, আল্লাহ্* যাদের বিশ্বাসঘাতকদের কাতারে ফেলবেন- যারা কিনা দ্বীন ও সম্মান বিক্রি করে- তারা আপনাদের অধিকার বিনষ্টের কারণ হবে, এরা কখনোই সম্মান-মর্যাদা রক্ষায় ও অধিকার অর্জনে কাজে আসবে না।’
আমরা এই বার্তায় তিনটি ব্যাপার দেখতে পাই:
* এ বার্তাটিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে বলা হয়নি!
* এ বার্তার মূল বক্তব্য হল, আইসিস বার্তায় উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে না।
* এ বার্তাতে শয়তানের দালালদের যে বর্ননা দেওয়া হয়েছে সেটা অনুযায়ী আদনানি নিজেই একজন শয়তানের দালাল, কারণ এ বার্তার বক্তব্য অনুযায়ী মুজাহিদিন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও আন্দোলনকে জায়েজ মনে করে না এমন গুজব শুধু শয়তানের দালালরাই ছড়ায়।
নোট: কেউ হয়তো বলতে পারেন যে- এই বার্তাটি বানোয়াট, এটি যে ইসলামিক স্টেটের, এর কোনো প্রমাণ নেই। মূলত, এটি হচ্ছে তাদের অফিসিয়াল বার্তা, যা শুমূখ ফোরামের ‘দাউলাতুল ইসলামের সকল বিবৃতি’ বিভাগে এখনও সংরক্ষিত আছে এবং এটি আল ফাজর মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো! এবং এটি ‘মুরাসিল আশ-শুমুখখ’- থেকেও প্রচার করা হয়েছিল। যেখান থেকে শুধুমাত্র অফিসিয়াল বার্তাই প্রচার করা হয়।
২- দ্বিতীয়ত, দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাকের মাজলিশ শূরা সদস্য আবু উবাইদা আল-ইরাকি এবং জিহাদি মিডিয়ার উর্ধ্বতনদের মধ্যে একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ সাক্ষাৎকারটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ‘Elites of the Jihadi media’ এবং “আল-ফুরক্বান” মিডিয়াআর সমন্বয়। উল্লেখ্য আল-ফুরক্বান হল আইসিসের অফিশিয়াল মিডিয়া। সাক্ষাৎকারটিতে আবু উবাইদা সেই শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের ব্যাপারে যা বলেন:
‘…এর মানে এই নয় যে, আন্দোলন সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলতে হবে অথবা এর অর্জন সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করতে হবে- যেমনটি অনেকে করছে- কারণ যা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি, সেটির জন্য যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা বর্জন করা উচিত নয়। বরং এখনও তাওয়াগিত শাসকদের বিরুদ্ধে যে কোনো বৈধ পথে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমরা আহ্বান করছি। আমরা এটিকে আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদের সর্বোচ্চ পর্যায় বলেই মনে করি… সাথে সাথে আমরা অস্বীকার করি না যে, এইরকম অনেকগুলো পন্থা– যেগুলোকে আজ শান্তিপূর্ণ বলা হচ্ছে– আসলে অসৎ কাজের নিষেধের আওতায়ই পড়ে, যেটি শক্তি ও সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল, যেমনটি রাসুলুল্লাহ্* ﷺ বলেছেন, ‘যদি তোমরা কোনো অন্যায় দেখো, তবে হাত দিয়ে থামাও, তা না পারলে কথা দিয়ে, তাও না পারলে অন্তর থেকে ঘৃণা করো এবং এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম ইমান’।’
এই বার্তাটিতে যে বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে:
– শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও এর অর্জন পুরোপুরি বর্জন করা উচিত নয়, যেমনটি অনেকে করছে। (যেমন আদনানির মতো লোকেরা)
– শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অসৎ কাজের নিষেধের (নাহি আনিল মুনকার) আওতাধীন!! অর্থাৎ এটি এগুলো বৈধ পন্থা!!!
৩- তৃতীয়ত, আল-ফুরকান ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘সালিল আস-সাওয়ারিম’ প্রকাশনার প্রথম পর্বে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখানো হয়, ইসলামি রাষ্ট্রের একজন যোদ্ধা বলছেন, ‘তিউনিসিয়ার ব্যাপারে আমরা বলতাম সেখানে কোনো ইসলাম নেই। আর আজ তারা আল্লাহ্*র অনুগ্রহে বিদ্রোহ করেছে। এখন সেখানে ইসলামের পতাকা তুলে আল্লাহ্*র শারিয়াহ্* কায়েমের জন্য আন্দোলন চলছে।’ সেই একই প্রচারণায়, তিউনিশিয়ার বিক্ষোভ আন্দোলনের একটি ছবি দেখিয়ে নিচে মন্তব্য দেখানো হয় যে, ‘তিউনিসিয়া তার প্রভুর শারিয়াহ্*কে সমর্থন করছে।’
এই বার্তাটির উল্লেখযোগ্য দিক হলোঃ
– তিউনিশিয়ার ব্যাপার যোদ্ধাটি বলএছে ‘এখন তারা আল্লাহ্*র অনুগ্রহে বিদ্রোহ করেছে’। যদি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও অহিংস আন্দোলন এটি শয়তানি, হারাম কাজই হতো- যেমনটি আদনানি দাবি করে- তাহলে কেন যোদ্ধাটি ‘আল্লাহ্*র অনুগ্রহে’ বললো?!!
– ‘তিউনিসিয়া তার প্রভুর শারিয়াহ্*কে সমর্থন করছে’-র দ্বারা বুঝায় যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শারিয়াহ্*কে সমর্থনের একটি উপায়!!!
এমনকিও, তুর্কি বিন্*’আলিও (আইসিসের প্রধান শার’ঈ) আমেরিকান দূতাবাসের সামনে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে একটি বিবৃতি দেন! এ বিবৃতিটি “অ্যামেরিকান দূতাবাসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে আবু সুফিয়ান আস-সুলামি” শিরোনামে ইন্তারনেটে বিদ্যমান আছে। শুধু তাই না কারাবন্দীদের মুক্তির দাবিতে একাধিকবার এরকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তুর্কি বিন্*’’আলি অংশগ্রহণ করেছে। আমি জানি না তখন তার ধর্ম শান্তিবাদের ধর্ম ছিলো কিনা!!
বরঞ্চ, মাজলিশ শুরা আল’ মুজাহিদিন ফি আকনাফ বাইতিল মাকদিসকেও- যাদের বেশির ভাগ এখন ISIS-র সমর্থক – শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ব্যাপারে ISIS-র বক্তব্যের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট গণ্য করা উচিৎ। ইবন তাইমিয়্যাহ সেন্টার থেকে মাজলিশ শুরা আল’ মুজাহিদিন ফি আকনাফ বাইতিল মাকদিস অফিসিয়ালি একটি প্রবন্ধ প্রচার করে, যেখানে বলা হয়, ‘গাজায় সালাফি জিহাদিদের উচিৎ জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করা, এবং সেখানকার ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অনুকূল পরিস্থিতির সুবিধা নেয়া। তাদের উচিৎ সালাফি দাওয়াহর স্বাধীনতা ও অবাধ প্রচারণার পক্ষে, এবং যেন হামাস সালাফি জিহাদিদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদীদের হয়ে যে ধাওয়া ও দমনপীড়ন চালাচ্ছে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট করা। এর জন্য ভাইদের বিপদে ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে পুরষ্কারের প্রত্যাশা করতে হবে, কাজগুলোতে অধ্যবসায়ী হতে হবে, মিডিয়ার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং যা হামাস এতদিন শ্বাসরোধ করে চেপে রেখেছে সে বার্তা প্রত্যেক মুসলিমের কাছে পৌঁছাতে হবে যাতে করে আমাদের মুসলিমদের ওপরে চলা নিপীড়ন থেমে যায়।’ [15]
শাইখ নাসির আল-ফাহ্*দ[16] যিনি তাদের বাইয়াহ দিয়েছিল মনে করে ISIS সমর্থকেরা খুব আনন্দিত হয়ে পড়েছিল, – নিজেই সেসব লোকেদের বিরোধিতা করেছিলেন, যারা কিনা আরবের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে হারাম বলেছিল। তিনি তাদের যুক্তিকে তিনটি ভাগে খণ্ডন করেছিলেন। শায়খ বলেন, ‘তাদের বিবৃতিতে যে দাবি করা হলো, এটি (শান্তিপূর্ণ আন্দোলন) মন্দের দিকে নিয়ে যাবে, তা সত্য নয়। আমরা এখন দেখছি যে, প্রতিটি জায়গায়ই এমন আন্দোলন হচ্ছে, আর যে মন্দের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপনকারীরা আপত্তি করছে সেরকম কোন কিছু আমরা এসব আন্দোলন থেকে দেখি নি। বরং এ থেকে অনেক ভালো কিছুই অর্জিত হয়েছে, যেমন মিশরের তাগূতের অপসারণ। যদিও এটি ইসলামি সরকার ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়নি, তবুও এটি যুলুম ও নিপীড়ন কমাতে এবং ন্যায় বিচার আনতে সক্ষম হয়েছে- যা এ তাগুতের শাসনকালে ছিল না।’[17]
তাহলে কি শায়খ নাসির আল-ফাহ্*দ কি সেসব লোকের অন্তর্ভুক্ত যারা অহিংসবাদের ধর্মকে বৈধতা দান করেন ও প্রচার করেন?
যদি বলা হয় যে, ISIS শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ব্যাপারে তাদর পূর্বের বিবৃতিগুলোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে, তাহলে বলবো, তবে কি ISIS স্বীকার করে নিবে যে, তারা যখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির দিকে আহ্বান করছিলো, তখন তারা মূলত নিম্নোক্ত অপরাধসমূহের মধ্যে পতিত হয়েছিলোঃ
– তারা দাবি করেছিল রাসূলুল্লাহর ﷺ চেয়েও তারা বেশি জ্ঞানী ও দয়ালু, তাদের দেখানো পথ রাসূলুল্লাহর ﷺ দেখানো পথের চেয়ে উত্তম!
– তারা আল্লাহ্*র কিতাব ও রাসূলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহ্*কে নিজেদের পেছনে ছুঁড়ে ফেলে নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করছিলো!
– তারা আবর্জনার দিকে আহবান করছিলো।
– তারা শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণের ফিকহ্*কে অনুমোদন করছিলো এবং এটির প্রশংসাও করছিলো।
– কারন আদনানির মতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সমর্থন দিলে যেসব গুনাহ করা হয়, যা সে আরোপ করেছে আল-ক্বা’ইদাহ্*র উপর, তার সবই তাহলে তাদের উপর আরোপিত হতে পারে।
– একইভাবে শায়খ উসামাহ্*, শাইখ নাসির আল-ফাহ্*দ, তুর্কি বিন্*’আলি ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ISIS-র ওইসব সমর্থকদের ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ সমভাবে প্রযোজ্য?
পরিশেষে আমরা দুটো সম্ভাব্য উত্তর পাই:
– আদনানি প্রথম অভিযোগটি বুঝিয়েছ। অর্থাৎ আল-ক্বা’ইদাহ্* জিহাদের বদলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে মানহাজ হিসেবে গ্রহন করেছে। যদি এটি আদনানির বক্তব্য হয় তবে এক্ষেত্রে আদনানি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হন।
– অথবা সে দ্বিতীয়টি বুঝিয়েছে। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হালকা বিশ্বাস রাখাও হচ্ছে পথভ্রষ্টতা, তাহলে এই পর্যন্ত যতোজন নেতা ও মানুষের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারাসহ আদনানির নিজের দল ISIS- সকলেই পথভ্রষ্ট, গোমরাহ।
আর এ ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবে না যে, আদনানি ঐ একই জায়গায় দাবি করেছিলেন যে- আল-ক্বা’ইদাহ্* তাদের নতুন মানহাজের কারনে নাকি ‘জিহাদ’ শব্দটি উল্লেখ করতে লজ্জা বোধ করে। একারনে তারা “জিহাদ” এর বদলে আন্দোলন, বিপ্লব, জনসমর্থন, প্রচেষ্টা, প্রচারণা, উত্থান ইত্যাদি শব্দ গ্রহণ করেছে।
যদি আল-ক্বা’ইদাহ্* জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করে লজ্জাই বোধ করতো, তাহলে প্রথমেই কেন তারা তাদের জামা’আহর নাম ‘তানযিম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ’ থেকেই জিহাদ শব্দটি বাদ দিয়ে দিলো না? এখনো তাদের জামা’আর নামের মাঝেই জিহাদ শব্দটি বিদ্যমান। যখন নিজেদের নামের মাঝেই সগৌরবে তারা জিহাদ শবটিকে ধারন করছে তাহলে কীভাবে তারা জিহাদ শব্দটি নিয়ে লজ্জিত হলো?!
এখন আমরা দেখবো আল-ক্বা’ইদাহ্*র নেতাদের বার্তায় কটবার “জিহাদ” শব্দটি এসেছে আর কতোবার আদনানির উল্লেখি অন্যান্য শব্দগুলো এসেছে –
– ‘বিশ্বাস অহংকারকে পরাজিত করেছে’ নামক বার্তায় ড. আইমান আয্*-যাওয়াহিরী ‘জিহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ২০ বার, এর বিপরীতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি মাত্র ১ বার উচ্চারণ করেছেন।
– “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা” নামক বার্তায় ড. আয্*-যাওয়াহিরি ‘জিহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ২১ বার, এর বিপরীতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি মাত্র ৬ বার উচ্চারণ করেছেন।
– ‘তাগূতের মোকাবেলায় ঐক্য’ নামক বার্তায় ড. আয্*-যাওয়াহিরী ‘জিহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ১০ বার, এর বিপরীতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি ১ বারও উচ্চারণ করেননি।
যদি তাদের মানহাজ জিহাদ শব্দ উচ্চারণে লজ্জিতবোধ করার মানহাজ হয়, তাহলে তিনি জিহাদ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ৫১ বার, এর বিপরীতে আদনানির দাবি করা ওইসব শব্দ উচ্চারণ করেছেন মাত্র ৭ বার। আর আদনানি দাবি করছে ৫১ বারের বিপরীতে ৭ বার উল্লেখ করা এসব শব্দের মাধ্যমে তিনি এবং আল-ক্বা’ইদাহ্* জিহাদকে প্রতিস্থাপিত করেছেন! যদি (আদনানির দাবি অনুযায়ী) জিহাদের লজ্জাবোধ করার পর্ব তিনি ৫১ বার শুধু জিহাদ শব্দটিই উচ্চারণ করে থাকেন, তাহলে জিহাদ শব্দটি ব্যবহারের ব্যাপারে যদি তিনি লজ্জিত না হতেন তবে কতোশতবার জিহাদ শব্দটি উচ্চারিত হত!
=====================
রেফারেন্স
[1] আরব বিপ্লব এবং ফসল ঘরে তোলার মৌসুম, পৃষ্ঠা ৫
[2] “শায়খ আইমান আয্*-যাওয়াহিরীর সকল প্রবন্ধ, রিসালাহ, চিঠি ও বক্তব্যের সংকলন”, পৃষ্ঠা ৪০২
[3] “জিহাদ ও সমসাময়িক আরব বিপ্লবের মধ্যে সম্পর্কে” – প্রবন্ধ
[4] “মিশরের ঘটনাবলীর ব্যাপারে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ”, পৃষ্ঠা ৪
[5] আয্*যাম আল-আম্রিকি ছিলেন তানযীম আল-ক্বা’ইদাহ খুরাসানের অফিশিয়াল মুখপাত্র। ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের সমন জারি করেছে। তিনি হলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম অ্যামেরিকান নাগরিক যাকে রাষ্ট্রদ্রোহে অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
[6] “ত্যাগ ও শাহাদাতের উম্মাহ”, পৃষ্ঠা ৯
[7] ঐ, পৃষ্ঠা ২৪
[8] ঐ, পৃষ্ঠা ১৫৭
[9] ঐ, পৃষ্ঠা ২০৪
[10] তানযীম আল-ক্বা’ইদাহ খুরাসানের নিরাপত্তা বিষয়ক নেতা
[11] মিশর ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পৃষ্ঠা ৩
[12] আব্দুল্লাহ আর –রাশুদ ছিলেন বিলাদুল হারামাইনে (সাউদী আরব) তানযীম আল-ক্বাইদার শুরা কমিটির প্রধান, এবং সাউদী আরবের সরকার পক্ষ থেকে যে ২৬ জনের বিউরদ্ধে হুলিয়া জারি করে হয়েছিল তিনি তাদের অন্যতম। শায়খ ইউসুফ আল ‘উয়াউরি বিলাদুল হারামাইনে তানযীম আল-ক্বা’ইদার উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অন্যতন, এবং যে হুলিয়া জাইর করে যে ১৯ জনের লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছিল তাদের অন্যতম। উভয়েই শাহাদাত বরণ করেছেন।
[13] বেদনা ও আশার মধ্যবর্তী পরিস্থিতি, পৃষ্ঠা ১৬
[14] বেদনা ও আশার মধ্যবর্তী পরিস্থিতি, পৃষ্ঠা ১৭
[15] “বাইতিল মাকদিসের পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে সালাফি জিহাদিদের জন্য মানহাজগত নির্দেশনা”, পৃষ্ঠা ৫।
[16] জিহাদিদের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য শায়খদের অন্যতম। শায়খ আইমান আয্*-যাওয়াহিরী তার “Exonertaion” নামক গ্রন্থে একাধিকবার শায়খ নাসিরের কথা উদ্ধৃত করেছেন। ২০০৩ সালে শায়খ আলি খুদাইর এবং শায়খ আহমেদ আল খালিদির সাথে সাউদী সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালে আইসিসের কিছু সমর্থক টুইটারে দাবি করে শায়খ নাসির সাউদী আরবের জেলের ভেতর থেকে আইসিসকে বাইয়াহ দিয়েছে। যার স্বপক্ষে তারা প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছে কয়েক লাইন লেখা সম্বলিত একটি কাগজের একটি অস্পষ্ট ছবি, যেটাকে তারা শায়খের হাতের লেখা বলে দাবি করেছ। কিন্তু শায়খের ছাত্রদের কাছ থেকে শায়খের হাতের লেখার যে নমুন পাওয়া গেছে তার সাথে এ লেখার কোন মিল নেই, এবং শায়খের ছাত্র বা পরিবারের পক্ষ থেকে কন গ্রহনযোগ্য সূত্র থেকে এ দাবির পক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায় নি
[17] আলা হায়ের কারাগার থেকে ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা ৪৮
Comment