বাই’য়াহ ভঙ্গকারী কে?
আদনানি দাবি করেছে আইসিস আল-ক্বা’ইদাহ্*র কাছে কোন ধরনের আনুগত্যের বাই’য়াহ দ্বারা আবদ্ধ ছিল না, এবং তাদের ও আল-ক্বা’ইদাহ্*র মধ্য সম্পর্ক ছিল নিছক শ্রদ্ধা ও বিনয়ের। সে আরও দাবি করেছে, বাগদাদি ও জাওলানির মধ্যকার বিরোধে আল-ক্বা’ইদাহ্* হস্তক্ষেপ করেছে, এবং যিনি নেতার আনুগত্য থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আল-ক্বা’ইদাহ্* তাকেই সমর্থন দিয়েছে! ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীর বিবৃতি ‘শামের মুজাহিদীনের রক্ত সংরক্ষণে শাহাদাহ্*” -র জবাবে আদনানি তার বক্তব্য ‘দুঃখিত! হে আল-ক্বা’ইদাহ্*র আমির’– শীর্ষক বিবৃতিতে আলাদা ভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করে, এবং আইসিস কখনো আল-ক্বা’ইদাহ্*র অধীনস্ত ছিল একথা অস্বীকার করে। তার এ বক্তব্যে আদনানি দাবি করে আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধার ও বিনয়ের এবং এ সম্পর্ক ছিল বৈশ্বিক জিহাদের ঐক্যের স্বার্থে। প্রশ্ন হল এ দুটি সংগঠনের মাঝে সম্পর্ক কি আসলেই এমন ছিল?
‘শামের মুজাহিদীনের রক্ত সংরক্ষণে শাহাদাহ্*’[1] – শীর্ষক বক্তব্যে শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী তৎকালীন দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক (Islamic State of Iraq- ISI) – এর নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে আল-ক্বা’ইদাহ্*র কাছে যেসব চিঠি পাঠানো হয়েছিল তার কিছু কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন –
‘সম্মানিত শায়খ (আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন) আপনাদের নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন এখানকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে এবং ঐক্যের ভিত্তিতে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এবং তিনি জানতে চাচ্ছেন সংগঠনের নতুন নেতা সম্পর্কে ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনটি আপনাদের মতে অধিকতর উপযুক্ত হবে? দাউলা কি প্রকাশ্যে বাই’য়াহ পুনঃনবায়ন করবে, নাকি পূর্বের ন্যায় গোপনে তা করবে?’
“দাউলা কি প্রকাশ্যে বাই’য়াহ পুনঃনবায়ন করবে, নাকি পূর্বের ন্যায় গোপনে তা করবে”- এ শব্দগুলো নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করুন। একথা থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় আবু বাকর আল-বাগদাদি আমির হবার আগে থেকেই আইসিস, আল-ক্বা’ইদাহ্*র কাছে বাই’য়াহবদ্ধ ছিল। এবং এসম্পর্ক শুধুমাত্র শ্রদ্ধার ও বিনয়ের নয় যেমনটা আদনানি দাবি করেছে।
আবার দেখুন, আদনানি তার বক্তব্য “দুঃখিত, হে আল-ক্বা’ইদাহ্*র আমির”- এ বলেছেঃ “নিশ্চয় আপনার বক্তব্যে আপনি যা বলেছেন তার সবই সত্য।[2]“ সুতরাং শায়খ আইমান তার বক্তব্যে আল-ক্বা’ইদাহ্*র কাছে আইসিসের বাই’য়াহবদ্ধ থাকার যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, আল-ক্বা’ইদাহ্*র প্রতি আইসিসের আমিরের বাই’য়াহ পুনঃনবায়নের যে চিঠি উপস্থাপন করেছেন তার সত্যতা সম্পর্কে আদনানি নিজের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
অতঃপর শাইখ ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী তার ‘সম্মানিত শাইখদের প্রতি উত্তর’ নামক বার্তায় আবু বকর আল-বাগদাদি ঠিক যে শব্দাবলীতে আল-ক্বা’ইদাহ্* বাই’য়াহ প্রদান করেছিল তা হুবহু তুলে ধরেছেন –
“হে আমাদের সম্মানিত শায়খ, আমরা আপনাদের কাছ সুস্পষ্ট করতে চাই, এবং আপনার কাছে ঘোষণা করতে চাই, আমরা আপনাদেরই একটি অংশ। আমরা আপনাদের অন্তর্ভুক্ত এবং আপনাদেরই। এবং আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি আমাদের বিষয়াদির ব্যাপারে আপনি আমাদের আমির, এবং আমাদের উপর আপনার অধিকার হল, যতোক্ষন জীবিত আছি আমরা আপনার কথা শুনবো এবং মানবো, আর আপনার উপর আমাদের অধিকার হল, আপনার কাছ থেকে পরামর্শ ও উপদেশ পাওয়া। এবং আপনার আদেশ পালন আমাদের উপর বাধ্যতামূলক। তবে অনেক সময় কিছু ক্ষেত্রে আমাদের এখানকার বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সুতরাং আমরা আশা করি আপনার হৃদয় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং তারপর পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি নির্দেশ প্রদান করবেন। আর আমরা আপনার তূণীরের তীর মাত্র।“
প্রশ্ন হল, কোন ধরনের শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সম্পর্কে আমৃত্যু শোনা ও আনুগত্য করা আবশ্যক হয়?! এবং কোন ধরনের শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সম্পর্কে এক পক্ষের বক্তব্য অপর পক্ষের উপর অবশ্য পালনীয় হয়?! অথচ একথা সরাসরি আদনানির বক্তব্যের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক যেখানে সে আল-ক্বা’ইদাহ্*র নির্দেশের ব্যাপারে দাবি করেছে, “এগুলো (আল-ক্বা’ইদাহ্*র নির্দেশ) আইসিসের অঞ্চলে প্রযোজ্য না, এবং এসব নির্দেশ মানা আইসিসের জন্য আবশ্যক না”!
সুতরাং আমরা কয়েকটি নিম্নোক্ত কয়েকটি উপসংহারে উপনীত হতে পারি –
জাওলানির সিদ্ধান্ত[3] না বিশ্বাসঘাতকতা ছিল আর না বাই’য়াহ ভঙ্গ ছিল, কারন সে শুধুমাত্র তার সরাসরি ঊর্ধ্বতন আঞ্চলিক আমিরের বদলে সামগ্রিক ভাবে নিজে মূল আমির, তার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করেছে।
আইসিসি যদিও জাওলানিকে বাই’য়াহভঙ্গ এবং মুজাহিদিনের সারিকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, কিন্তু তারা নিজেরাই আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে ঠিক একই জিনিষ করেছে। তারা আল-ক্বা’ইদাহ্*র প্রতি তাদের বাই’য়াহ ভঙ্গ করেছে এবং মুজাহিদিনের সঙ্ঘবদ্ধ সারিসমূহকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সুতরাং বাই’য়াহ ভঙ্গ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগ তাদের ব্যাপারেই অধিক প্রযোজ্য।
========
রেফারেন্সঃ
[1] ইংরেজী অনুবাদের লিঙ্ক – http://bit.ly/29MMxXq
[2] সম্পূর্ণ বাক্যটি হল – “নিশ্চয় আপনার বক্তব্যে আপনি যা বলেছেন তার সবই সত্য। বরং আমি এর সাথে আপনার হয়ে আরো যোগ করছি; কিছুদিন আগ পর্যন্ত যদি দাউলার সাথে আল-ক্বা’ইদাহ্*র সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে আমরা জবাব দিতাম, এ সম্পর্ক হ একজন সৈন্যের সাথে তার আমিরের।“
[3] আবু বাকর আল বাগদাদি যখন সম্পূর্ণ নিজের সিদ্ধান্তে এপ্রিল ২০১৩-তে, দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক (Islamic State of Iraq-ISI) ও জাবহাত আন-নুসরার সম্মিলনে দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক ওয়া আশ-শাম (Islamic State of Iraq & Sham) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় তখন জাবহাত আন-নুসরার আমির শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-জাওলানি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন, এবং সরাসরি শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কাছে তার বাইয়াহ ঘোষণা করেন, এবং উক্ত বিষয়টি মীমাংসার জন্য শায়খ আইমানের কাছে পেশ করেন। এ ঘোষণার সময় দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফি ইরাক (Islamic State of Iraq- ISI) এবং জাবহাত আন-নুসরা উভয়ের আল-ক্বা’ইদাহ্*র শাখা ছিল। উক্ত ঘোষণার সময় আবু মুহাম্মাদ আল-জাওলানি ছিলেন আবু বাকর আল-বাগদাদির অধীনস্ত, এবং আল-বাগদাদি ছিল আল-ক্বা’ইদাহ্*র আমির শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কাছে বাই’য়াহবদ্ধ।
Comment