আবারও আসলাম। কিছু কথার বিনিময় করবো বলে এসেছি। সাদামাটা কথা বলে যাবো। শারয়ি দলিল এখানে আনা হচ্ছে না, এর যোগ্যও নই এবং যখন কিনা আলোচ্য বিষয়গুলো শারয়ি নুসুসে প্রতিষ্ঠিত, তখন দলিলভিত্তিক আলোচনা এনে আনাড়ি কাজ করাটা অর্থহীন হবে বলেই বিশ্বাস করি, এই আলোচনার ভার আলিমদের কাছেই অর্পণ করলাম।
সম্প্রতি গুলশানে ঘটে যাওয়া is কর্তৃক হামলার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার অবতারণা ঘটাচ্ছেন। বলে রাখা ভালো, is-র ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি নিয়ে আহলুস সুন্নাহর আলিমগণ সন্দেহগ্রস্ত নন। মিল্লাতু ইবরাহিমের দিকে আহ্বানকারী উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে সচেতনতা জারি রেখেছেন। কথা হলো গুলশান-হামলাকে কেন্দ্র করে একটি বিষয় ওঠে এসেছিলো- এই হামলার শারয়ি বাস্তবতা কতোটুকু? আর একজন মুসলিম কীভাবে এই হামলাকে মূল্যায়ন করবে? হারবি কাফিরদের রক্তের কোনো মূল্য নেই- এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলিমগণ ফোরামে আলোচনা করেছেন। মিল্লাতু ইব্*রাহিমের দিকে আহ্বানকারী ও এর প্রতিষ্ঠারত জিহাদি এক তানজিম হলো কায়িদাতুল জিহাদ। কায়িদাতুল জিহাদ এর মানহাজ সুস্পষ্ট করেছে।
এখন কথা হচ্ছে, যুদ্ধরত কাফিরদের রক্তপাত হালাল এবং ক্ষেত্রবিশেষে এই রক্তপাত ওয়াজিব। মাসিক আলকাউসার এদেশের আহনাফ-দেওবন্দিদের কাছে জনপ্রিয় ইলমি পত্রিকা। মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া প্রতিষ্ঠানটি এদেশের দেওবন্দিদের ইলমি পতাকাবাহী এবং এই ভূমির জন্য বৈধ প্রতিনিধি। অন্যান্য বড় দেওবন্দি আলিম বিচ্ছিন্নভাবে যে আকিদাহ্ ও মানহাজের প্রচার করুক না কেন, একে দেওবন্দিয়াতের প্রতিনিধিত্ব বলা চলে না, বা বলা যায় না। মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ও মাসিক আলকাউসার দেওবন্দিদের প্রতিনিধি হিশেবে ধরা যায়। মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবকে দেওবন্দিয়াতের বৈধ প্রতিনিধি হিশেবে ধরা কর্তব্য। আর এই কর্তব্য আরও মজবুত হয় যখন এদেশের দেওবন্দিরা তাঁকে ইলমি বিষয়ে উপস্থাপন করে থাকেন। ফলে তাঁর ও তাঁর প্রতিষ্ঠান এবং পত্রিকাকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। ওখান থেকে একটি কথা অনেক কাজকে পরিবর্তন করে দেয়ার সামর্থ্য রাখে। তাই, ওখান থেকে কোনো বিভ্রান্তি আসলেও বলা উচিত। এর আগেও আমার দেয়া প্রস্তাবনায় এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমি কথা বলেছিলাম।
মূল কথায় আসা যাক, গুলশান-হামলা নিয়ে মাসিক আলকাউসারে 'প্রসঙ্গ : গুলশান-হত্যাকাণ্ড : “সর্বস্তরে দ্বীনী তালীমের বিস্তার ঘটানো সময়ের দাবি” : “কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ নয়” : “জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যা মুসলমানদের জানানো উচিত। এটি নিষিদ্ধ করলে সমস্যার সমাধান হবে না।”' শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছে, মাসিক আলকাউসারের সম্পাদক, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর মুদির মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ সাহেব এবং আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর আমিনুত তালিম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেব সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
এখানে দুজন উত্তর দেয়াতে কার্ উত্তর কোনটি বুঝতে সমস্যা হয়। যাইহোক, এই এলোমেলো সাক্ষাৎকার-আলোচনায় কটি বিষয় আমি তুল ধরছি-
তাঁদেরকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত যে, তাঁরা আর যাইহোক, বর্তমানের অন্যান্য আলিমদের মতো একপেশে মূল্যায়ন করছেন না, অথবা দেশপ্রেমভিত্তিক আলোচনা আনছেন না। তাঁরা যতটুকু পেরেছেন তাঁদের মতো করে ভারসাম্য এনেছেন।
১. কাফিরের রক্তের ব্যাপারে দ্ব্যর্থবোধক বক্তব্য প্রদান-
এক প্রশ্নের জবাবে কাফিরদের হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তিনি এ ব্যাপারটি বিক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। মূল সূত্র ধরে আলোচনা করেননি। ফলে আলোচনা কূটনৈতিক হয়ে যাবার সন্দেহ জাগতে পারে। মানুষ হত্যার অবৈধতার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত এনেছেন। কিছু গতানুগতিক কথা বলেছেন।
এক পর্যায়ে তিনি এইসব বিদেশিদের হত্যা করা নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। মুআহাদকে হত্যা সংক্রান্ত হাদিস এনে তিনি বলেন,‘মুআহাদ বলতে যে বা যাদের সাথে আহদ বা চুক্তি হয়েছে তাদেরকে বুঝায়। ফিকহী ভাষায় সে যিম্মি হোক বা সুলাহকারী মুআহাদ বা মুসতা’মান (আশ্রয় গ্রহণকারী)। যারা মুসলিম দেশে ভিসা নিয়ে অন্য ভাষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে থাকছে তারা যে মুআহাদের অন্তর্ভুক্ত এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’
একটু পরে তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং শরীয়তে যেসব কারণে প্রাণদণ্ডের বিধান রয়েছে ঐসব কারণ সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়া ছাড়া কাউকে হত্যা করা বৈধ নয়। অমুসলিমের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ হয় না।’
যাক, তাঁর এই ভিসাসংক্রান্ত কথানুযায়ী আমরা ধরে নিতে পারি, তিনিও জানেন ও মানেন- কাফিরের রক্ত কুফরের কারণেই হালাল। কিন্তু, বাস্তবে তাঁর একটি কথা এ ব্যাপারে সন্দেহ ও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে- ‘কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ হয় না।’এ একটি কথা আহদসংক্রান্ত আলোচনাটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করেছে। আর আহলুল ইলমগণ এসব ব্যাপারের ফাঁকটুকু ঠিক ধরতে পারলেও, সাধারণ দেওবন্দি সমাজ বিভ্রান্ত হবে- এ সুনিশ্চিত। আর এসব হামলা ও হত্যার ব্যাপারটিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে শারয়ি দণ্ডবিধি রাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করার আলোচনাটি আরও ধাঁধায় ফেলে দেয়, আসলে কী বুঝানো হচ্ছে!? এভাবেই এসব মাসায়ালায় মুজাহিদদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং রোগাক্রান্ত লোকদের জন্য এগুলো দলিল হবে। সমস্যা আরও বাড়বে যখন তাঁদের এসব কথাকে ঢাল বানিয়ে একদল লোক নিজেদের ফাতাওয়া ও ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রচার ও প্রসার করতে নেমে যাবে। দ্ব্যর্থবোধক এই বক্তব্যের ফলাফল কারা বহন করবে- দেওবন্দি সমাজ, is নাকি কায়িদাতুল জিহাদ?! আর এর সুফল কে নেবে- তাওয়াগিত, মুরতাদ ও কুফরগোষ্ঠী নাকি দেওবন্দি সমাজ?!
২. মানবরচিত বিধান ও শারিয়াহর মুখপাত্র শাসকগোষ্ঠীকে মুসলিমদের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিশেবে মেনে নেয়া-
তাঁদের কথাগুলোতে এ কথা সুস্পষ্ট যে, তাঁরা এসব শাসকগোষ্ঠীকে মুসলিমদের বৈধ কর্তৃপক্ষ ভাবছেন। ভাবদৃষ্টে মনে হতে পারে- এটা যেন উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের মতো কোনো ইসলামি শাসনের যুগ, যেখানে শাসক হলো জালিম! মুরতাদ কর্তৃক প্রদেয় ভিসাকে শারয়ি চুক্তির আওতায় আনা এবং বিদেশিদের মুয়াহাদ বলা যে কতোটুকু আকিদাহর বিপর্যয়, তা ভেঙে বলা যাবে না। এই শাসকগুলো কর্তৃক আল্লাহর বিধানের বিপরীতে মানবের শারিয়াহ্ দিয়ে শাসনের বিষয়টি চরমভাবে উপেক্ষিত, যদিও এটি তাওহিদের অন্যতম একটি দিক। এসব ব্যাপারে কথা বলা এখানে অপ্রাসঙ্গিক মনে করছি। এ ব্যবচ্ছেদ করতে গেলে আলোচনা দীর্ঘ হবে এবং সময়ের অপচয় ঘটবে, কারণ, মিল্লাতু ইবরাহিমের কোনো পথিক তাঁদেরকে নবির- সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- অনুসরণীয় ওয়ারিশ ভাবতে প্রস্তুত থাকার কথা নন। তবুও ইতিবাচক- উত্তরদাতা এক জায়গায় তাঁদের ‘বৈধ’ ‘দায়িত্বশীল’দে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তাদের আরো বুঝতে হবে যে, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের প্রিয় ধর্ম ইসলামের বিধান সমুন্নত রাখা এবং এর সঠিক চর্চা, বিস্তার ও প্রয়োগও তাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্বের বিষয়ে তাদেরকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।’
৩. ইসলামি জিহাদের মুখপাত্রের ভূমিকা –
এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে, তবুও এ সময়ের অপচয়। গোটা আলোচনাতে তাঁরা এ কথা বুঝাতে চাইছেন যে– পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হলেও- তাঁরা জিহাদের ফিকহ ভালো জানেন এবং এর সঠিক প্রয়োগবিধিও তাঁদের নখদর্পণে। অথচ, মুসলিম উম্মাহর এই সংকট নিরসনে কোনো ইতিবাচক তত্ত্বও তাঁরা এ পর্যন্ত দিতে পারেননি। উপরন্তু, নির্যাতিত মুসলিমদের ব্যাপারগুলো এনে আবেগতাড়িত তরুণদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। ভাবখানা এমন- তাঁরা আবেগতাড়িত নন এবং জিহাদের বাস্তভিত্তিক প্রয়োগ কী, তা তাঁরা জানেন। অথচ উম্মাহ আজ পর্যন্তও তাঁদের জিহাদি ভূমিকার সুফল দেখতে পাচ্ছে না। আর গোটা জিহাদের ভার তাঁরা কাদের ওপর দিচ্ছেন? এই ‘বৈধ’ শাসকদের ওপর কিনা- তাও স্পষ্ট নয়। এসব শাসক প্রতিনিয়ত আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে, হারামের সয়লাবে গোটা দেশ ও জাতিকে ভাসিয়ে দিচ্ছে এবং প্রিয়তম মুহাম্মাদের শাতিমকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। মজার ব্যাপার হলো যারা জিহাদকে স্তব্ধ করতে চায়, জিহাদকে ফাসাদ মনে করে, একটা দ্বীনি বই রাখার ছুতোতে জিহাদি বই রাখার অপরাধে গ্রেফতার করে- তাদেরকে আবার বৈধ শাসক ভেবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে! এইতো সেদিন, এ মুরতাদেরা এঁদেরই মাসলাকের আলিমদের রক্তে এই ভূমিকে সিক্ত করেছে। হ্যাঁ, এরা ‘বৈধ’ শাসক-ই বটে! আল্লাহ রহম করুন তাঁদের প্রতি! আমি সেসব ভাইদের কথাকেও সঠিক বলি না, যারা বলে থাকেন- জিহাদের আলিমদের কাছ থেকেই জিহাদের ইলম নিতে হবে। না, সুস্পষ্ট শারয়ি ইলম কখনও কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারে না। তাহাজ্জুদগুজার নন এমন আলিম কি তাহাজ্জুদের হুকুম আহকাম নিয়ে কথা বলতে পারবেন না বা তাঁর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত ফিকহ নেয়া যাবে না? না, এ ধারণা বাস্তবসম্মত নয়।
হ্যাঁ, ময়দানের খুঁটিনাটি ব্যাপারে ফাতাওয়া ভিন্ন কথা। কিন্তু মৌলিক নীতিমালা বলেতো কথা আছে! থাক, কথা এ পর্যন্তই।
৪. বাস্তবধর্মী প্রাজ্ঞ এবং দ্বীনের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হিশেবে নিজেদের উপস্থাপন-
তাঁরা নিজেদের বাস্তবধর্মী প্রাজ্ঞ ও দ্বীনের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হিশেবে নিজেদের উপস্থাপন করছেন, অন্তত আমার মনে হচ্ছে। তরুণদের আবেগের ব্যাপারটি এমনভাবে আনছেন যেন তাঁরাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার সঠিক উপায়ের সঠিক প্রয়োগ-নীতি সম্পর্কে জানেন এবং চর্চাও করছেন, তাঁরা সুস্থ মাথায় এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আর সবশেষে দ্বীনের তালিম-তরবিয়তকেই আলোচনায় জোর দিচ্ছেন। দ্বীনের সার্বিক সমুন্নতি, জিহাদ, তাওহিদুল আমালি, তাশরি-হাকিমিয়াহ্ ইত্যাদি বিষয় অনুপস্থিত। উম্মাহর উত্তরণের দিকটি তাঁরা দিতেই পারছেন না। দিতে না পারা সমস্যা নয়, সমস্যা হলো- দিতে পারছেন বা দেয়ার প্রকৃত কর্তৃপক্ষ তাঁরাই, এমন পরোক্ষভাবে হলেও বুঝানো। হায়! তাঁরা যদি জানতেন, ভারসাম্যের অধিকারী এক আলিম আছেন, যিনি ভারসাম্যের মূর্ত প্রতীক, যিনি আবেগ ও প্রজ্ঞাকে সমন্বয় করতে সক্ষম, হায়, তাঁরা যদি শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আলমাকদিসির কথা জানতেন! তাঁরা যদি জানতেন, আজকের কায়িদাতুল জিহাদ কত প্রজ্ঞাপূর্ণ ও ভারসাম্যের নীতিতে পরিচালিত, এঁরা বোমার ভাষার চেও ইলম, শিক্ষা, বিশুদ্ধতার মানহাজ বেশি বুঝেন । এঁরা আধুনিক যুদ্ধ-কৌশল ও রাজনীতি এবং সিয়াসায় সবচে পারঙ্গম। এত প্রজ্ঞা ও বাস্তবতার নীতি নিয়ে মাদরাসার গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে বসে উম্মাহকে সংকট-নিরসনের সবক দিলেতো হবে না, এ তো দিনশেষে সবাই ভুলে যাবে, আর বাস্তবেও তাই, কেউ মনে রাখে না। মাদরাসার গণ্ডিতে থেকেই কিন্তু সবক দেয়ার কথা ছিলো। কেন, ইমাম হামুদ বিন উকলা আশশুয়াইবি কোন্ ময়দানের লোক ছিলেন? কোন্ ময়দানের লোক ছিলেন শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আলআলওয়ান?! ব্যাপার হলো তাওহিদ, ব্যাপার হলো মিল্লাতু ইবরাহিম, ব্যাপার হলো আল্ ওয়ালা ওয়াল্ বারা।
এতক্ষণ আলোচনা-সমালোচনা হলো। আলকাউসারের এমন ভূমিকায় কী সমস্যা তৈরি হতে পারে -
কায়িদাতুল জিহাদের জন্য কিছু আবেদন-
মাসিক আলকাউসারের এই সাক্ষাৎকারটিতে অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এখানে তরুণদের আবেগকে একেবারেই ছোটো করা হয়নি, বরং এই হামলার আবেগকে প্রশংসা করা হয়েছে, কৌশলে এতে তাওয়াগিতকে হুঁশিয়ার করাও হয়েছে। অন্যান্য আলিমদের মতো দেশ-প্রেমিক সুনাগরিক সাজার কসরত করা হয়নি। ‘মগজ-ধোলাই’ ‘জঙ্গিবাদ’ এসব স্থান পায়নি এতে। এ থেকে অন্যান্য দেওবন্দিসহ সব ধারার আলিমদের শিক্ষা নেয়া উচিত। এখানে কাফিরদের ভালোবাসায় গদ-গদও করা হয়নি। ইনসাফের সাথে এ সাক্ষাৎকারটিকে মূল্যায়ন করতে হবে।
পরিশেষে কথা হলো- মাসিক আলকাউসার ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া মিল্লাতু ইবরাহিমের পথিকদের আশার স্থান নয়। কোনো আলিমকে নিয়ে এই ভাবনাও বাড়াবাড়ি- তিনি আমার মতো চিন্তা করবেন, আমার কথাগুলোই বলবেন। আলিম-উলামাদের সীমাবদ্ধতাও বুঝা উচিত। এটি মনে রাখতে হবে, সবাই ইমাম আহমাদ হন না, সবাই ইমামে আযম আবু হানিফা হতে পারে না, সবাই ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ হতে পারে না। এটি মনে রাখলে প্রত্যাশার চাপও কমবে, আশাহত হবার দুঃখও লাঘব হবে। আর আমাদের সামনেতো বর্তমানে ইমাম আবু হানিফা, আহমাদ, ইবনু তাইমিয়াহদের উদাহরণ আছেই। হ্যাঁ, হয়তো এ ভূমিতে আমাদের চোখ জুড়ায়নি, তাই বলে কি মহান রবের এই ভূমিতে কোনো হক আলিম নেই-ই, যিনি তাওহিদের পতাকা তুলে ধরেননি? আছে, ছিলো, আর থাকবেও, ইনশাআল্লাহ্। বাকি হলো, এই কাফেলাকে চিনে নেয়া, এই কাফেলাকে সঙ্গ দেয়া। অল্পরাই বড়ো কিছু করে, আর সবাই এর সুফল ভোগ করে। আমরা যেন অল্পদের মাঝেই হই এবং উম্মাহর ব্যথায় ব্যথিত হই।
সম্প্রতি গুলশানে ঘটে যাওয়া is কর্তৃক হামলার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার অবতারণা ঘটাচ্ছেন। বলে রাখা ভালো, is-র ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি নিয়ে আহলুস সুন্নাহর আলিমগণ সন্দেহগ্রস্ত নন। মিল্লাতু ইবরাহিমের দিকে আহ্বানকারী উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে সচেতনতা জারি রেখেছেন। কথা হলো গুলশান-হামলাকে কেন্দ্র করে একটি বিষয় ওঠে এসেছিলো- এই হামলার শারয়ি বাস্তবতা কতোটুকু? আর একজন মুসলিম কীভাবে এই হামলাকে মূল্যায়ন করবে? হারবি কাফিরদের রক্তের কোনো মূল্য নেই- এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলিমগণ ফোরামে আলোচনা করেছেন। মিল্লাতু ইব্*রাহিমের দিকে আহ্বানকারী ও এর প্রতিষ্ঠারত জিহাদি এক তানজিম হলো কায়িদাতুল জিহাদ। কায়িদাতুল জিহাদ এর মানহাজ সুস্পষ্ট করেছে।
এখন কথা হচ্ছে, যুদ্ধরত কাফিরদের রক্তপাত হালাল এবং ক্ষেত্রবিশেষে এই রক্তপাত ওয়াজিব। মাসিক আলকাউসার এদেশের আহনাফ-দেওবন্দিদের কাছে জনপ্রিয় ইলমি পত্রিকা। মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া প্রতিষ্ঠানটি এদেশের দেওবন্দিদের ইলমি পতাকাবাহী এবং এই ভূমির জন্য বৈধ প্রতিনিধি। অন্যান্য বড় দেওবন্দি আলিম বিচ্ছিন্নভাবে যে আকিদাহ্ ও মানহাজের প্রচার করুক না কেন, একে দেওবন্দিয়াতের প্রতিনিধিত্ব বলা চলে না, বা বলা যায় না। মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ও মাসিক আলকাউসার দেওবন্দিদের প্রতিনিধি হিশেবে ধরা যায়। মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবকে দেওবন্দিয়াতের বৈধ প্রতিনিধি হিশেবে ধরা কর্তব্য। আর এই কর্তব্য আরও মজবুত হয় যখন এদেশের দেওবন্দিরা তাঁকে ইলমি বিষয়ে উপস্থাপন করে থাকেন। ফলে তাঁর ও তাঁর প্রতিষ্ঠান এবং পত্রিকাকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। ওখান থেকে একটি কথা অনেক কাজকে পরিবর্তন করে দেয়ার সামর্থ্য রাখে। তাই, ওখান থেকে কোনো বিভ্রান্তি আসলেও বলা উচিত। এর আগেও আমার দেয়া প্রস্তাবনায় এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমি কথা বলেছিলাম।
মূল কথায় আসা যাক, গুলশান-হামলা নিয়ে মাসিক আলকাউসারে 'প্রসঙ্গ : গুলশান-হত্যাকাণ্ড : “সর্বস্তরে দ্বীনী তালীমের বিস্তার ঘটানো সময়ের দাবি” : “কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ নয়” : “জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যা মুসলমানদের জানানো উচিত। এটি নিষিদ্ধ করলে সমস্যার সমাধান হবে না।”' শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছে, মাসিক আলকাউসারের সম্পাদক, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর মুদির মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ সাহেব এবং আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর আমিনুত তালিম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেব সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
এখানে দুজন উত্তর দেয়াতে কার্ উত্তর কোনটি বুঝতে সমস্যা হয়। যাইহোক, এই এলোমেলো সাক্ষাৎকার-আলোচনায় কটি বিষয় আমি তুল ধরছি-
১. কাফিরের রক্তের ব্যাপারে দ্ব্যর্থবোধক বক্তব্য প্রদান
২. মানবরচিত বিধান ও শারিয়াহর মুখপাত্র শাসকগোষ্ঠীকে মুসলিমদের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিশেবে মেনে নেয়া
৩. ইসলামি জিহাদের মুখপাত্রের ভূমিকা
৪. বাস্তবধর্মী প্রাজ্ঞ এবং দ্বীনের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হিশেবে নিজেদের উপস্থাপন।
২. মানবরচিত বিধান ও শারিয়াহর মুখপাত্র শাসকগোষ্ঠীকে মুসলিমদের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিশেবে মেনে নেয়া
৩. ইসলামি জিহাদের মুখপাত্রের ভূমিকা
৪. বাস্তবধর্মী প্রাজ্ঞ এবং দ্বীনের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হিশেবে নিজেদের উপস্থাপন।
১. কাফিরের রক্তের ব্যাপারে দ্ব্যর্থবোধক বক্তব্য প্রদান-
এক প্রশ্নের জবাবে কাফিরদের হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তিনি এ ব্যাপারটি বিক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। মূল সূত্র ধরে আলোচনা করেননি। ফলে আলোচনা কূটনৈতিক হয়ে যাবার সন্দেহ জাগতে পারে। মানুষ হত্যার অবৈধতার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত এনেছেন। কিছু গতানুগতিক কথা বলেছেন।
এক পর্যায়ে তিনি এইসব বিদেশিদের হত্যা করা নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। মুআহাদকে হত্যা সংক্রান্ত হাদিস এনে তিনি বলেন,‘মুআহাদ বলতে যে বা যাদের সাথে আহদ বা চুক্তি হয়েছে তাদেরকে বুঝায়। ফিকহী ভাষায় সে যিম্মি হোক বা সুলাহকারী মুআহাদ বা মুসতা’মান (আশ্রয় গ্রহণকারী)। যারা মুসলিম দেশে ভিসা নিয়ে অন্য ভাষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে থাকছে তারা যে মুআহাদের অন্তর্ভুক্ত এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’
একটু পরে তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং শরীয়তে যেসব কারণে প্রাণদণ্ডের বিধান রয়েছে ঐসব কারণ সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়া ছাড়া কাউকে হত্যা করা বৈধ নয়। অমুসলিমের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ হয় না।’
যাক, তাঁর এই ভিসাসংক্রান্ত কথানুযায়ী আমরা ধরে নিতে পারি, তিনিও জানেন ও মানেন- কাফিরের রক্ত কুফরের কারণেই হালাল। কিন্তু, বাস্তবে তাঁর একটি কথা এ ব্যাপারে সন্দেহ ও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে- ‘কোনো অমুসলিমকে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা বৈধ হয় না।’এ একটি কথা আহদসংক্রান্ত আলোচনাটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করেছে। আর আহলুল ইলমগণ এসব ব্যাপারের ফাঁকটুকু ঠিক ধরতে পারলেও, সাধারণ দেওবন্দি সমাজ বিভ্রান্ত হবে- এ সুনিশ্চিত। আর এসব হামলা ও হত্যার ব্যাপারটিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে শারয়ি দণ্ডবিধি রাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করার আলোচনাটি আরও ধাঁধায় ফেলে দেয়, আসলে কী বুঝানো হচ্ছে!? এভাবেই এসব মাসায়ালায় মুজাহিদদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং রোগাক্রান্ত লোকদের জন্য এগুলো দলিল হবে। সমস্যা আরও বাড়বে যখন তাঁদের এসব কথাকে ঢাল বানিয়ে একদল লোক নিজেদের ফাতাওয়া ও ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রচার ও প্রসার করতে নেমে যাবে। দ্ব্যর্থবোধক এই বক্তব্যের ফলাফল কারা বহন করবে- দেওবন্দি সমাজ, is নাকি কায়িদাতুল জিহাদ?! আর এর সুফল কে নেবে- তাওয়াগিত, মুরতাদ ও কুফরগোষ্ঠী নাকি দেওবন্দি সমাজ?!
২. মানবরচিত বিধান ও শারিয়াহর মুখপাত্র শাসকগোষ্ঠীকে মুসলিমদের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিশেবে মেনে নেয়া-
তাঁদের কথাগুলোতে এ কথা সুস্পষ্ট যে, তাঁরা এসব শাসকগোষ্ঠীকে মুসলিমদের বৈধ কর্তৃপক্ষ ভাবছেন। ভাবদৃষ্টে মনে হতে পারে- এটা যেন উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের মতো কোনো ইসলামি শাসনের যুগ, যেখানে শাসক হলো জালিম! মুরতাদ কর্তৃক প্রদেয় ভিসাকে শারয়ি চুক্তির আওতায় আনা এবং বিদেশিদের মুয়াহাদ বলা যে কতোটুকু আকিদাহর বিপর্যয়, তা ভেঙে বলা যাবে না। এই শাসকগুলো কর্তৃক আল্লাহর বিধানের বিপরীতে মানবের শারিয়াহ্ দিয়ে শাসনের বিষয়টি চরমভাবে উপেক্ষিত, যদিও এটি তাওহিদের অন্যতম একটি দিক। এসব ব্যাপারে কথা বলা এখানে অপ্রাসঙ্গিক মনে করছি। এ ব্যবচ্ছেদ করতে গেলে আলোচনা দীর্ঘ হবে এবং সময়ের অপচয় ঘটবে, কারণ, মিল্লাতু ইবরাহিমের কোনো পথিক তাঁদেরকে নবির- সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- অনুসরণীয় ওয়ারিশ ভাবতে প্রস্তুত থাকার কথা নন। তবুও ইতিবাচক- উত্তরদাতা এক জায়গায় তাঁদের ‘বৈধ’ ‘দায়িত্বশীল’দে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তাদের আরো বুঝতে হবে যে, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের প্রিয় ধর্ম ইসলামের বিধান সমুন্নত রাখা এবং এর সঠিক চর্চা, বিস্তার ও প্রয়োগও তাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্বের বিষয়ে তাদেরকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।’
৩. ইসলামি জিহাদের মুখপাত্রের ভূমিকা –
এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে, তবুও এ সময়ের অপচয়। গোটা আলোচনাতে তাঁরা এ কথা বুঝাতে চাইছেন যে– পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হলেও- তাঁরা জিহাদের ফিকহ ভালো জানেন এবং এর সঠিক প্রয়োগবিধিও তাঁদের নখদর্পণে। অথচ, মুসলিম উম্মাহর এই সংকট নিরসনে কোনো ইতিবাচক তত্ত্বও তাঁরা এ পর্যন্ত দিতে পারেননি। উপরন্তু, নির্যাতিত মুসলিমদের ব্যাপারগুলো এনে আবেগতাড়িত তরুণদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। ভাবখানা এমন- তাঁরা আবেগতাড়িত নন এবং জিহাদের বাস্তভিত্তিক প্রয়োগ কী, তা তাঁরা জানেন। অথচ উম্মাহ আজ পর্যন্তও তাঁদের জিহাদি ভূমিকার সুফল দেখতে পাচ্ছে না। আর গোটা জিহাদের ভার তাঁরা কাদের ওপর দিচ্ছেন? এই ‘বৈধ’ শাসকদের ওপর কিনা- তাও স্পষ্ট নয়। এসব শাসক প্রতিনিয়ত আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে, হারামের সয়লাবে গোটা দেশ ও জাতিকে ভাসিয়ে দিচ্ছে এবং প্রিয়তম মুহাম্মাদের শাতিমকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। মজার ব্যাপার হলো যারা জিহাদকে স্তব্ধ করতে চায়, জিহাদকে ফাসাদ মনে করে, একটা দ্বীনি বই রাখার ছুতোতে জিহাদি বই রাখার অপরাধে গ্রেফতার করে- তাদেরকে আবার বৈধ শাসক ভেবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে! এইতো সেদিন, এ মুরতাদেরা এঁদেরই মাসলাকের আলিমদের রক্তে এই ভূমিকে সিক্ত করেছে। হ্যাঁ, এরা ‘বৈধ’ শাসক-ই বটে! আল্লাহ রহম করুন তাঁদের প্রতি! আমি সেসব ভাইদের কথাকেও সঠিক বলি না, যারা বলে থাকেন- জিহাদের আলিমদের কাছ থেকেই জিহাদের ইলম নিতে হবে। না, সুস্পষ্ট শারয়ি ইলম কখনও কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারে না। তাহাজ্জুদগুজার নন এমন আলিম কি তাহাজ্জুদের হুকুম আহকাম নিয়ে কথা বলতে পারবেন না বা তাঁর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত ফিকহ নেয়া যাবে না? না, এ ধারণা বাস্তবসম্মত নয়।
হ্যাঁ, ময়দানের খুঁটিনাটি ব্যাপারে ফাতাওয়া ভিন্ন কথা। কিন্তু মৌলিক নীতিমালা বলেতো কথা আছে! থাক, কথা এ পর্যন্তই।
৪. বাস্তবধর্মী প্রাজ্ঞ এবং দ্বীনের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হিশেবে নিজেদের উপস্থাপন-
তাঁরা নিজেদের বাস্তবধর্মী প্রাজ্ঞ ও দ্বীনের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হিশেবে নিজেদের উপস্থাপন করছেন, অন্তত আমার মনে হচ্ছে। তরুণদের আবেগের ব্যাপারটি এমনভাবে আনছেন যেন তাঁরাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার সঠিক উপায়ের সঠিক প্রয়োগ-নীতি সম্পর্কে জানেন এবং চর্চাও করছেন, তাঁরা সুস্থ মাথায় এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আর সবশেষে দ্বীনের তালিম-তরবিয়তকেই আলোচনায় জোর দিচ্ছেন। দ্বীনের সার্বিক সমুন্নতি, জিহাদ, তাওহিদুল আমালি, তাশরি-হাকিমিয়াহ্ ইত্যাদি বিষয় অনুপস্থিত। উম্মাহর উত্তরণের দিকটি তাঁরা দিতেই পারছেন না। দিতে না পারা সমস্যা নয়, সমস্যা হলো- দিতে পারছেন বা দেয়ার প্রকৃত কর্তৃপক্ষ তাঁরাই, এমন পরোক্ষভাবে হলেও বুঝানো। হায়! তাঁরা যদি জানতেন, ভারসাম্যের অধিকারী এক আলিম আছেন, যিনি ভারসাম্যের মূর্ত প্রতীক, যিনি আবেগ ও প্রজ্ঞাকে সমন্বয় করতে সক্ষম, হায়, তাঁরা যদি শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আলমাকদিসির কথা জানতেন! তাঁরা যদি জানতেন, আজকের কায়িদাতুল জিহাদ কত প্রজ্ঞাপূর্ণ ও ভারসাম্যের নীতিতে পরিচালিত, এঁরা বোমার ভাষার চেও ইলম, শিক্ষা, বিশুদ্ধতার মানহাজ বেশি বুঝেন । এঁরা আধুনিক যুদ্ধ-কৌশল ও রাজনীতি এবং সিয়াসায় সবচে পারঙ্গম। এত প্রজ্ঞা ও বাস্তবতার নীতি নিয়ে মাদরাসার গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে বসে উম্মাহকে সংকট-নিরসনের সবক দিলেতো হবে না, এ তো দিনশেষে সবাই ভুলে যাবে, আর বাস্তবেও তাই, কেউ মনে রাখে না। মাদরাসার গণ্ডিতে থেকেই কিন্তু সবক দেয়ার কথা ছিলো। কেন, ইমাম হামুদ বিন উকলা আশশুয়াইবি কোন্ ময়দানের লোক ছিলেন? কোন্ ময়দানের লোক ছিলেন শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আলআলওয়ান?! ব্যাপার হলো তাওহিদ, ব্যাপার হলো মিল্লাতু ইবরাহিম, ব্যাপার হলো আল্ ওয়ালা ওয়াল্ বারা।
এতক্ষণ আলোচনা-সমালোচনা হলো। আলকাউসারের এমন ভূমিকায় কী সমস্যা তৈরি হতে পারে -
১/ সাধারণের ইমান এখন ইয়াকিনে রূপান্তর ঘটবে- না, এসব রক্তপাত যারা ঘটায় তারা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু।
২/ তাওয়াগিত এর কদর্যের আরও বৈধতা পাবে, আলকাউসারের এই সাক্ষাৎকারটি কিন্তু দরবারি আলিমদের মতো না, একটু কূটনৈতিক ধাঁচের- তাঁদের কাছে হিকমতও হতে পারে- ফলে এর ফলাফল তাওয়াগিত নেবে। মাঝখান থকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কায়িদাতুল জিহাদ এবং বেঁচে যাবেন দেওবন্দি কর্তৃপক্ষগণ।
২/ তাওয়াগিত এর কদর্যের আরও বৈধতা পাবে, আলকাউসারের এই সাক্ষাৎকারটি কিন্তু দরবারি আলিমদের মতো না, একটু কূটনৈতিক ধাঁচের- তাঁদের কাছে হিকমতও হতে পারে- ফলে এর ফলাফল তাওয়াগিত নেবে। মাঝখান থকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কায়িদাতুল জিহাদ এবং বেঁচে যাবেন দেওবন্দি কর্তৃপক্ষগণ।
১ আহলুস সুন্নাহর আলিমগণকে এবার মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবের কাছে এ ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা তুলতে হবে- সামনা-সামনি বা যেভাবেই হোক- নিরাপত্তাজনিত ব্যাপার কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, এটি তানজিমের কৌশলের ওপর নির্ভরশীল।
২/ তাওহিদের জন্য এই জিহাদ চলবেই, কোথাও কোনো আলিম তা রুখতে পারেনি, ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বন্ধ করতে হবে। এই কথাগুলো ধ্রুব সত্য। এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই। দিনশেষে তাওয়াগিত ভাঁড় আলিমদের আবর্জনায় ছুঁড়ে ফেলে দেবে- এ নিয়ে চিন্তিত হবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু, বাস্তবতা বুঝতে হবেই, এমনিতেই সাধারণের সাথে কায়িদাতুল জিহাদের অনেক দূরত্ব, আরও তাওহিদ সম্পর্কে যদি এই হয় এই দেশের দ্বীনি দায়িত্বশীলদের অবস্থা, তাহলে সাধারণের অবস্থা কী হবে,ভাবা যায়? মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক কোনো ভাঁড় আলিম নন, কোনো দরবারি আলিম নন- আমার ধারণা মতে- তাই, এ ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া অমূলক নয়। তাঁর মাঝে ইনসাফ ওই ভারসাম্য আছে। এই দেশে দেওবন্দিদের শুদ্ধ মানহাজের ধারা এই আলকাউসার ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়াকেই ধরা যায়। ফলে এসব মাসায়ালাগুলো এই কর্তৃপক্ষের কাছে তুলতে হবে। তাঁদের কাছে পৌঁছুতে হবে। যদি সবচে বড় আলিমের সামনে দাঁড়ানোর মতো আলিম এই কায়িদাতুল জিহাদে না থাকে এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের কথা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে সামনের দিনগুলো আরও বেদনাদায়ক ও কঠিন হতে পারে, তাই প্রস্তুতি নেয়াটা কায়িদাতুল জিহাদের জন্য আগাম সুখবর হতে পারে। সময় থাকতেই সচেতনতা জরুরী ও কাম্য।
৩/ তাওয়াগিতের কাছে এ খবর পৌঁছানো যেতে পারে যে, মুআহাদ ছাড়া কাফিরদের রক্ত বৈধ বা হারবি কাফিরের রক্তপাত বৈধ- এমন বিষয় অমুক অমুক আলিম বা প্রতিষ্ঠানের লেখনী থেকে পাওয়া যাচ্ছে বা বুঝে আসছে, তাহলে তাওয়াগিত ও তাঁদের মুখোমুখি করা হবে। এতে তাওয়াগিতের সম্মানপ্রার্থী এসব ব্যক্তিত্ব তাওয়াগিতের আসল রূপ বুঝতে পারবেন বলে আশা করা যায়। এটি ব্যাপক আকারে করা যেতে পারে। সামাজিক সাইটে এ ব্যাপারে ভাইয়েরা বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
৪/ ইলমের কর্তৃপক্ষের কাছে কায়িদাতুল জিহাদের মানহাজ ও এর প্রয়োগনীতি এবং এর দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে হবে। দৃষ্টিকোণের পার্থক্যে মাসায়ালায় ভুল বুঝা-বুঝির সৃষ্টি হয়। এসব কীভাবে পৌঁছানো যায়- এ চিন্তা দায়িত্বশীলগণ করবেন। কায়িদাতুল জিহাদ কেন, কী কারণে এসব হামলা এবং তাকফির হালাল ও ওয়াজিব মনে করে, তা জানাতে হবে। হয়তো তাঁদের ইনসাফের নীতি তাতে বজায় রবে।
২/ তাওহিদের জন্য এই জিহাদ চলবেই, কোথাও কোনো আলিম তা রুখতে পারেনি, ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বন্ধ করতে হবে। এই কথাগুলো ধ্রুব সত্য। এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই। দিনশেষে তাওয়াগিত ভাঁড় আলিমদের আবর্জনায় ছুঁড়ে ফেলে দেবে- এ নিয়ে চিন্তিত হবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু, বাস্তবতা বুঝতে হবেই, এমনিতেই সাধারণের সাথে কায়িদাতুল জিহাদের অনেক দূরত্ব, আরও তাওহিদ সম্পর্কে যদি এই হয় এই দেশের দ্বীনি দায়িত্বশীলদের অবস্থা, তাহলে সাধারণের অবস্থা কী হবে,ভাবা যায়? মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক কোনো ভাঁড় আলিম নন, কোনো দরবারি আলিম নন- আমার ধারণা মতে- তাই, এ ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া অমূলক নয়। তাঁর মাঝে ইনসাফ ওই ভারসাম্য আছে। এই দেশে দেওবন্দিদের শুদ্ধ মানহাজের ধারা এই আলকাউসার ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়াকেই ধরা যায়। ফলে এসব মাসায়ালাগুলো এই কর্তৃপক্ষের কাছে তুলতে হবে। তাঁদের কাছে পৌঁছুতে হবে। যদি সবচে বড় আলিমের সামনে দাঁড়ানোর মতো আলিম এই কায়িদাতুল জিহাদে না থাকে এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের কথা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে সামনের দিনগুলো আরও বেদনাদায়ক ও কঠিন হতে পারে, তাই প্রস্তুতি নেয়াটা কায়িদাতুল জিহাদের জন্য আগাম সুখবর হতে পারে। সময় থাকতেই সচেতনতা জরুরী ও কাম্য।
৩/ তাওয়াগিতের কাছে এ খবর পৌঁছানো যেতে পারে যে, মুআহাদ ছাড়া কাফিরদের রক্ত বৈধ বা হারবি কাফিরের রক্তপাত বৈধ- এমন বিষয় অমুক অমুক আলিম বা প্রতিষ্ঠানের লেখনী থেকে পাওয়া যাচ্ছে বা বুঝে আসছে, তাহলে তাওয়াগিত ও তাঁদের মুখোমুখি করা হবে। এতে তাওয়াগিতের সম্মানপ্রার্থী এসব ব্যক্তিত্ব তাওয়াগিতের আসল রূপ বুঝতে পারবেন বলে আশা করা যায়। এটি ব্যাপক আকারে করা যেতে পারে। সামাজিক সাইটে এ ব্যাপারে ভাইয়েরা বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
৪/ ইলমের কর্তৃপক্ষের কাছে কায়িদাতুল জিহাদের মানহাজ ও এর প্রয়োগনীতি এবং এর দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে হবে। দৃষ্টিকোণের পার্থক্যে মাসায়ালায় ভুল বুঝা-বুঝির সৃষ্টি হয়। এসব কীভাবে পৌঁছানো যায়- এ চিন্তা দায়িত্বশীলগণ করবেন। কায়িদাতুল জিহাদ কেন, কী কারণে এসব হামলা এবং তাকফির হালাল ও ওয়াজিব মনে করে, তা জানাতে হবে। হয়তো তাঁদের ইনসাফের নীতি তাতে বজায় রবে।
পরিশেষে কথা হলো- মাসিক আলকাউসার ও মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া মিল্লাতু ইবরাহিমের পথিকদের আশার স্থান নয়। কোনো আলিমকে নিয়ে এই ভাবনাও বাড়াবাড়ি- তিনি আমার মতো চিন্তা করবেন, আমার কথাগুলোই বলবেন। আলিম-উলামাদের সীমাবদ্ধতাও বুঝা উচিত। এটি মনে রাখতে হবে, সবাই ইমাম আহমাদ হন না, সবাই ইমামে আযম আবু হানিফা হতে পারে না, সবাই ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ হতে পারে না। এটি মনে রাখলে প্রত্যাশার চাপও কমবে, আশাহত হবার দুঃখও লাঘব হবে। আর আমাদের সামনেতো বর্তমানে ইমাম আবু হানিফা, আহমাদ, ইবনু তাইমিয়াহদের উদাহরণ আছেই। হ্যাঁ, হয়তো এ ভূমিতে আমাদের চোখ জুড়ায়নি, তাই বলে কি মহান রবের এই ভূমিতে কোনো হক আলিম নেই-ই, যিনি তাওহিদের পতাকা তুলে ধরেননি? আছে, ছিলো, আর থাকবেও, ইনশাআল্লাহ্। বাকি হলো, এই কাফেলাকে চিনে নেয়া, এই কাফেলাকে সঙ্গ দেয়া। অল্পরাই বড়ো কিছু করে, আর সবাই এর সুফল ভোগ করে। আমরা যেন অল্পদের মাঝেই হই এবং উম্মাহর ব্যথায় ব্যথিত হই।
Comment