প্রতিশোধকামী উম্মাহর প্রতি কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বার্তা
প্রথম আসর
কে আছে, কুরআনের হেফাজত করবে?
শায়খ আইমান আল-জাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ)
প্রথম আসর
কে আছে, কুরআনের হেফাজত করবে?
শায়খ আইমান আল-জাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবা ও যারা তাঁর সাথে বন্ধুত্ব রাখে তাদের উপর।
কে আছে, কুরআনের হেফাজত করবে?
হে সর্বাস্থানের মুসলিম ভাইগণ! আস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ!
এই সিরিজ শুরু করার পূর্বে সংক্ষিপ্তভাবে সেই মহা আন্দোলন থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে চাই, যাকে ‘আরব বসন্ত’ বলে ভূষিত করা হয়েছে, যা মিশর, তিউনিশিয়া ও ইয়ামানে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। আর লিবিয়ায় তার পরিণতি কোন্ দিকে গড়ায় তা আল্লাহই ভাল জানেন। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য ও তাওফীকে শামে এর মাধ্যমে বিজয়ের পথ সম্পর্কে অবগত হওয়া গেছে।
বোঝার সহজের জন্য মিশরে কি কি ঘটেছে তার ইতবৃত্তি সংক্ষেপে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। কারণ এতে অক্ষম ও পথচ্যুত মুসলিমদের ব্যর্থতার করুন চিত্র আর উদ্ধত ও অবাধ্য ক্রুসেডারদের শত্রুতার প্রকৃত রূপ ফুটে উঠবে এবং মিশরের ঘটনাবলী থেকে যে ফলাফল আবিস্কার করা যাবে, তা অন্যান্য দেশেও বাস্তবায়িত করা যাবে।
মূলত: মিশরের কাহিনী ২৫ শে জানুয়ারী ২০১১ থেকে শুরু হয়নি। অনুরূপ আদবিয়া চত্ত্বরের হত্যাযজ্ঞ, গণবিপ্লব ও সেনাবাহিনীর উত্থানের মাধ্যমে তা শেষও হয়ে যায়নি। কাহিনী এরও পূর্বের। এই কাহিনীর সূচনা হয়েছে ইমাম ও সংস্কারক শহীদ হাসানুল বান্না রহ: এর মাধ্যমে। এই মহান দায়ীই যুবকদেরকে বিনোদনকেন্দ্র, মদ্যশালা ও বিকৃত সূফিবাদের আসরসমূহ থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে একটি সুবিন্যস্ত বাহিনীর রূপ দান করেছেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। কিন্তু এই সমস্ত অবদান সত্ত্বেও তিনি অনেক বড় বড় কিছু ভুলের মধ্যে পড়েছেন, যা অনেক ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা সৃষ্টি করেছে এবং ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে।
শায়খ হাসান আল-বান্না তার আন্দোলন শুরু করেছেন বাহ্যত: বাদশা ফুআদের সমর্থনের মাধ্যমে। যে একজন ভ্রষ্ট শাসক ছাড়া কিছুই ছিল না। যে ১৯২৩ সালের সংবিধানের আলোকে শাসন পরিচালনা করত, যেটা শুধু মিশরের ইতিহাসেই নয়; বরং আরবের সংবিধানসমূহের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। এছাড়া স্বয়ং ফুআদও ছিল মিশরে দখলদার ইংরেজদের একজন অনুগত সদস্য।
তার মৃত্যুর পর তারই আদর্শ নিয়ে ক্ষমতায় আসে তার পুত্র ফারুক। যাকে হাসানুল বান্না রহ: অনেক বেশি সমর্থন করেন। যখন সে শাসন ক্ষমতায় বসে, তখন শায়খ হাসান আল-বান্না আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সা:এর সুন্নাহর ভিত্তিতে তার কাছে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের বায়আতের ঘোষণা দেন। অথচ ফারুক এই বায়আত গ্রহণ করেনি, যদিও ইখওয়ানের সমর্থনের কারণে আনন্দিত হয়েছে। কারণ সে হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের দ্বারা শাসনকারী একজন শাসক। একই সময়ে সে ইংরেজ কর্তৃত্বেরও অনুগত ছিল।
শায়খ হাসান আল-বান্না এই সংশয়কে শুধু প্রচার করেই ক্ষ্যান্ত হলেন না; বরং তাতে আপাদমস্তক ডুব দিলেন। তাকে আমিরুল মুমিনীন বলে ডাকলেন এবং যেকোন সময়, যেকোন স্থানে তার সমর্থনে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন ও তাকে ‘কুরআনের হেফাজতকারী’ বলে উপাধি দিলেন।
একারণে শায়খ হাসানুল বান্না রহ: এর কথায় ৪০ লাখ লোক ফারুকের হাতে এই মর্মে বায়আত গ্রহণ করে যে, তারা কুরআনের হেফাজতের জন্য তার সামনে মরতে রাজি এবং ইখওয়ানুল মুসলিমীন হল তার একনিষ্ঠ সৈন্যবাহিনী। তাদের পত্রিকা আরো দাবি করে যে, তারা তার জন্য নিজেদের আত্মাগুলোকে হাদিয়া হিসাবে পেশ করবে।
শায়খ হাসানুল বান্না ফারুককে মুসলমানদের খেলাফতের জন্য চেষ্টা করা ও ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব দান করার প্রতি উৎসাহিত করে। তাকে বায়আত দেওয়ার জন্য ইখওয়ানুল মুসলিমীনের চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করে। আর তার নিকট আবেদন করে, যেন সে এই মর্মে একটি রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করে যে, মুসলিম মিশরে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্য ছাড়া কোন আইন করা হবে না। আর তখন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ১ লক্ষ্য যুবক তার জন্য সদাপ্রস্তুত সৈনিক হয়ে যাবে। অত:পর এ ব্যাপারে অপেক্ষার প্রহর অনেক দীর্ঘ হয়।
১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে, যখন ফারুক ফিলিস্তীনে মিশরীয় সেনাবাহিনীর অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার দালালী নিয়ন্ত্রণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল, যখন উক্ত সেনাবাহিনী আপাদমস্তক মাস্তি ও পাপাচারে নিমজ্জিত ছিল, সে সময় শায়খ হাসানুল বান্না তাকে এই বলে সম্ভোধন করেন:
“হে আমাদের অভিভাবক! আপনি আমাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা পরিচালিত করুন। জাতি আপনার পশ্চাতে রয়েছে। আর আপনার চতুর্পার্শ্বে আল্লাহ সর্বোত্তম হেফাজতকারী ও সর্বশক্তিমান সাহায্যকারী।”
শায়খ ইমাম শুধু এই হঠকারিতাপূর্ণ ধোঁকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। বরং তিনি এর সাথে আরেকটি প্রতারণা যোগ করেন, যা ভয়াবহতায় তার চেয়ে কম নয়। তা হচ্ছে তিনি একটি অপরিপূর্ণ ও অস্পষ্ট কথার অবতারণা করেন। তিনি বলেন: সাংবিধানিক আইনের শাসন পরিপূর্ণভাবে ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সাংবিধানিক আইনের শাসন পৃথিবীর অন্য সকল শাসনব্যবস্থার তুলনায় ইসলামের অধিক নিকটবর্তী। ইখওয়ানুল মুসলিমীন অন্য কোন শাসনব্যবস্থাকে তার সমকক্ষ মনে করে না।
শায়খ শুধু এতটুকুতেই ক্ষান্ত হননি। তিনি আরো কঠিন ভুলের মধ্যে লিপ্ত হন। তিনি ১৯২৩ সালের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের প্রশংসা করলেন। তিনি দাবি করেন: ‘যে মৌলিক নীতিমালার উপর মিশরের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত তা ইসলামী মূলনীতিসমূহের বিরোধী নয়। তা ইসলামী শাসনব্যবস্থা থেকে দূরেও নয় এবং তার সাথে সাংঘর্ষিকও নয়। মিশরের সংবিধান প্রণেতারা তা প্রণয়ন করার সময় এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন, যেন তার বর্ণনাসমূহের মধ্য থেকে কোন বর্ণনা ইসলামী মূলনীতিসমূহের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।’
এটি একটি দু:সাহসিকতাপূর্ণ ভ্রান্তি, যা ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূলতত্ত্ব সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখে, এমন কারো নিকট এটা অস্পষ্ট নয়। স্বয়ং ইমাম শহীদ রহ:ই পরবর্তীতে তার ভ্রান্তি স্বীকার করেছেন।
ইমাম হাসানুল বান্না রহ: শুধু এই চিন্তাগত ভুলের মধ্যেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি। বরং তিনি এটা কার্যকর করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যান। ফলে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ষষ্ঠ অধিবেশন পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কারণ তাদের ধারণামতে পার্লামেন্ট নির্বাচন উম্মাহর মিম্বার। যেখান থেকে যেকোন শুভ চিন্তার কথা শোনা হয় এবং প্রতিটি রুচিশীল দিকনির্দেশনা প্রকাশিত হয়। যেন তাদের ধারণামতে এটি উকায মেলা বা হায়দবারাক বা হাওয়ারীদের পরামর্শ সভার একট নতুন সংস্করণ, যাতে যেকোন আওয়াজকারী যা ইচ্ছা চিৎকার করবে, অত:পর তা কার্যকর করে ফেলবে।
এসকল ভ্রান্তিতে ডুবন্ত অবস্থায় শায়খ হাসানুল বান্না দুই দফা নির্বাচনে প্রার্থীতা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমবার তাম্রমন্ত্রীর ইঙ্গিতে প্রার্থীতা থেকে সরে পড়তে বাধ্য হন। দ্বিতীয়বার অনড় থাকতে চাইলে সরকার মিথ্যারোপ করে তাকে বসিয়ে দেয়।
তাই এখনও কি ইখওয়ানের জন্য বৃটেনের তথা গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ বোঝার সময় হয়নি? এখনও কি তারা নাটক বুঝতে পারেনি, না সর্বদাই না বোঝার উপর থাকবে?
তারপর দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়। শায়খ হাসানুল বান্না বুঝতে পারেন, এ সব শুধুই তামাশা এবং শরীয়তের বিধানাবলীর বিরোধী। তাই শাহাদাত লাভের আট মাস পূর্বে তিনি ‘কুরআনের যুদ্ধ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন, যাতে তিনি একথা স্বীকার করেন যে, মিশরের সংবিধানে ও আইনে যা আছে, তা কখনোই মিশরকে ইসলামী রাষ্ট্র বানাবে না, আল্লাহর বিধানের সাথে এগুলোর কোন সম্পর্কে নেই। বরং এগুলো আল্লাহর বিধানের সাথে বিদ্রোহ। তাই উম্মাহকে কুরআনের জন্য এই সকল শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং তাদেরকে কুরআনের শাসন মানতে বাধ্য করা হবে।
অবশেষে শহীদ ইমামের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছিল সেই ব্যক্তির হাতে, যাকে তিনি কুরআনের রক্ষক বলে অভিহিত করেছিলেন। বাদশাহ ফারুকই ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তাকে হত্যা করে।
তাই এখন কি হাসানুল বান্নার অনুসারীরা তার হত্যাকারী থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে? নাকি উস্তাদ হাদিয়ী রহ: এর মত লোকেরা তাকেই ‘মহান বাদশা’ বলে অভিহিত করেছে?
তারা ফারুকের কপটতার মাঝেই চলতে থাকল। অবশেষে ফারুককে বাদ দিয়ে জামাল আব্দুন নাসেরের সাথে মিত্রতা করল। আব্দুন নাসেরের বিচারকদের মধ্যে একজন ছিল আনওয়ার সাদাত, যে উক্ত দলের স্বনামধন্য ফকীহ, আব্দুল কাদির আওদাহ রহ: ও তার সহপাঠিদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়।
তারপর আব্দুন নাসেরের মুত্যুর পর তারা আনওয়ার সাদাতের সাথে মিত্রতা করে। ফলে আনওয়ার সাদাত তাদেরকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা দেয়।
অত:পর তার মৃত্যুর পর তারা কামাল সিনায়িরীর হত্যাকারী হোসনি মোবারকের সাথে মিত্রতা করে। তারপর তারা মুনাফেকীর মহরা দিতে থাকে। দ্বিতীয়বার হোসনি মোবারককে বায়আত দেওয়ার জন্য গণভবনে জনসমাবেশের আয়োজন করে। তারা তার সাথে থেকে মুজাহিদদের আক্রমণ ও যুব সম্প্রদায়ের ক্রোধে হাওয়া দেওয়ার জন্য যে মন্দ ব্যবসায় অংশ নেয়, তার মাধ্যমে তারা বড় ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে।
অত:পর একসময় তারা তার বৈরী হয়ে যায় এবং বারাদায়ীর পশ্চাতে আমেরিকান কৃপা দূতকে নির্বাচন করে। যখন বিপ্লব সংঘটিত হয়, তখন তারা ছিল সর্বপ্রথম চুক্তি আদান-প্রদানকারী। আকস্মিকভাবেই তারা সেনাবাহিনীর সাথে আতাঁত করে নেয়।
এখন দেখার বিষয় হল, তারা কি তাদের হত্যাকারীর বিরুদ্ধে সেই ‘কুরআনী যুদ্ধে’অবতীর্ণ হয়েছে, যেটা তাদের শায়খ তাদেরকে আদেশ করে গেছেন?
আফসোস তাদের জন্য! তারা তাদের শায়খের আদেশ সম্পর্কে অজ্ঞ সেঁজেছে। তারা বাস্তবতা ও শরীয়তের বিধানাবলীর ব্যাপারে একই ভুলের উপর অব্যাহত গতিতে চলছে।
তাদের শায়খ শহীদ রহ: বাস্তবতা বুঝতে ভুল করেছেন, ফলে ফারুককে কুরআনের রক্ষক এবং মিশরের সংবিধানকে ইসলামের অনুকূল সংবিধান বলে অভিহিত করেছেন। আর তার শীষ্যরা এতটুকুতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি; বরং আরো গভীরে ঢুকেছে। তারা স্পষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতার ভাষা নিজেদের জন্য গ্রহণ করে নিয়েছে, যা দেশীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে। ফলে তারা একজন পরিপূর্ণ ধর্মহীন ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীর মত ঘোষণা করেছে: তারা ততক্ষণ পর্যন্ত কোন শরয়ী বিধান পাশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তার পক্ষে ফায়সালা না দেয়। এছাড়া তারা ইসরাঈল ও আমেরিকার সাথে যেকোন সমঝোতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর ভিত্তিতেই তারা বিপ্লোত্তর নির্বাচনসমূহে অংশ গ্রহণ করে। যার ফলে মুহাম্মদ মুরসী প্রজতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পদ অধিকার করেন।
ফলে তারা একই ভুলে আরেকবার পতিত হয়। আর তারা ধারণা করে, তারা সেই জিনিস বাস্তবায়ন করে ফেলেছে, যা তারা তাদের দীর্ঘ জীবনে স্বপ্ন দেখছিল। অথচ শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে মুহাম্মদ মুরসী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের একজন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ছাড়া কিছুই না। এক্ষেত্রে তার মাঝে ও হোসনী মোবারকের মাঝে কোনই তারতম্য নেই, যার মত লোক রাষ্ট্রীয় সংবিধান, ইসরাঈলের সাথে সমঝোতা ও আত্মসমর্পণ এবং জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দের সাথে অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দিতে পারে।
তার মাঝে ও হোসনি মোবারকের মাঝে পার্থক্য এটাই যে, তিনি গণতন্ত্রকে তার থেকে আরো কঠোরভাবে অনুসরণ করেছেন। তিনি সকলকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছেন, যদিও এতে জিহাদী নীতির প্রতি তীর্যক ইঙ্গিত ছিল। সম্ভবত এটা তার ঐ সকল অপরাধগুলোর একটি, যার জন্য আমেরিকা ও তার দোসররা তাকে কখনো ক্ষমা করবে না। হোসনির পতনের পর থেকে মুরসীর কারাবন্দী হওয়া পর্যন্ত ইখওয়ান একবারও এই ভ্রষ্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে কোন একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন করার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি; ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা তো দূরের কথা। ফলে পূর্বের অপরাধিরাই বিচার বিভাগ, সেনা বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত থাকে। এরা তো শৃগাল ও চিতার আদর্শে বেড়ে উঠেছে। আর ইখওয়ান নিজেদেরকে প্রতিপালিত করেছে পোষ্য প্রাণীর খামারের ন্যায়, যাতে মুরগীর দল অধিক খাবার পেয়ে পরিপুষ্ট থাকে, কিন্তু আশপাশের চোর-গুণ্ডা ও বণ্য প্রাণীদের ব্যাপারে থাকে বেখবর।
এই যখন ইখওয়ানের কাহিনী, তখন নব উঠন্ত তোষামোদকারী সালাফীদের কাহিনী সংলাপ ও অর্থ অর্জন ছাড়া কি হবে? বরং ঐ সকল ব্যর্থ ও নমনীয় বিপ্লবীদের অবস্থাই বা কি হবে, যারা লাঞ্ছনাকর চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং পণ্ডিত মেরিটারের শীষ্যত্ব গ্রহণ করে?
তাই আমাদেরকে আমাদের পন্থা নিরীক্ষণ করে দেখতে হবে, ভুল-ভ্রান্তির সংশোধন করতে হবে; একই ভুল বার বার করা চলবে না। তাই মিশর, আরব বসন্তের দেশসমূহ, ইসলামী বিশ্ব ও সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি আত্মমর্যাদাশীল মুসলিমকে স্বীয় আকীদা ও নীতির ব্যাপারে সিংহের ন্যায় হতে হবে। কারণ যে সিংহের মত হবে না, তাকে চিতারা খেয়ে ফেলবে। আমাদের প্রজন্মকে সিংহশাবকের ন্যায় গড়ে তুলতে হবে; মেষশাবকের ন্যায় নয়। আমাদেরকে আমাদের যুদ্ধে নামতে হবে আল্লাহর কিতাব সামনে নিয়ে, যা সঠিক পথপ্রদর্শন করবে এবং তরবারী নিয়ে, যা তার সাহায্য করবে।
তাই বার্তা কি পৌঁছেছে?? হে লোক সকল! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক!!!
পরিশেষে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের সরদার মুহাম্মাদ সা: এর উপর এবং তার পরিবারবর্গ ও সাহাবাদের উপর।
ওয়াস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
Comment