কুফরী রাজনীতির ধারক-বাহকরা দ্বীন ইসলাম নিয়ে সর্বদাই তাদের ‘ধর্ম-ব্যবসা’ চালিয়ে যাবে যাতে সাধারণ মুসলিম জনগণকে ধোকা দিতে পারে। যদিও পাকিস্তানের এই ফেডারেল শরীয়াহ কোর্ট স্থাপিত হয়েছিল কোন এক ব্যক্তির নেক নিয়্যতে যাকে আমেরিকান কাফিররা সহ্য করতে না পেরে হত্যা করেছে। কিন্তু এই শরীয়াহ কোর্টের পরবর্তী হাল-চাল দেখলে সহজেই বুঝা যায় – কি সেই শরীয়াহ কোর্টের মাহাত্ম!! চলুন, একটু দেখে নেই।
১। কাগজে কলমে এই শরীয়া কোর্টের কাজ হচ্ছেঃ পাকিস্তানের কোন আইন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা খুঁজে দেখা। কিন্তু বাস্তবে ১৯৮০ সালে এটা স্থাপিত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেটা পাকিস্তানের কুফরী শাসন ব্যবস্থাকে কুফর বলে বুঝতে পারে নি!! কিছু হুদুদ এর শাস্তি এর ব্যাপারে রায় দেয়ার মাধ্যমে এটা দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা সাধারণ জনগণকে বোকা বানানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
২। এই শরীয়া কোর্টে মোট ৮ জন ক্বাজীর মধ্যে ৫ জন হচ্ছে সারা-জীবন তাগুতী, কুফরি বিচার-ব্যবস্থায় কাজ করে আসা ‘বিজ্ঞ ক্বাজী’!! আর বাকি ৩ জন হচ্ছেন, আলেম। তাহলে যে কোন রায়ে বিচারকদের মতভেদ হলে, রায় কোন পক্ষে যাবে তা সহজেই অনুমেয়।
৩। এখন পর্যন্ত এই কোর্টের প্রধান ক্বাজী হচ্ছেনঃ সারা-জীবন তাগুতী, কুফরি বিচার-ব্যবস্থায় কাজ করে আসা ক্বাজী সাহেবগণ!! তাহলে এই কোর্টের সার্বিক গতি কোন দিকে বুঝে নেন।
৪। পাকিস্তানের তাগুতী সুপ্রীম কোর্টে “শরীয়াহ আপিলেট বেঞ্চ” নামে একটি বেঞ্চ আছে, যা এই শরীয়াহ কোর্টের রায়ের আপিল নিষ্পত্তি করে। বুঝাই যায়, এই বেঞ্চও তাগুতী, কুফরী আইনের সর্বোচ্চ বিচারালায় সুপ্রীম কোর্টেরই একটি অংশ। আর এ কারণেই সেই বেঞ্চে মোট ৫ জন ক্বাজির মধ্যে ৩ জন সারা-জীবন তাগুতী, কুফরি বিচার-ব্যবস্থায় কাজ করে আসা ক্বাজী (!!) সাহেবান আর মাত্র ২ জন আলেম!! তাহলে শরীয়াহ আদালতের কোন রায়ে আপিল করলে এর মীমাংসা কারা করতেছেন – বুঝতেই পারছেন।
৫। এই শরীয়াহ কোর্টের অনেক কীর্তি আছে। এর মধ্যে একটি কীর্টি এই যে, ১৯৮১ সালে এই শরীয়াহ কোর্ট রায় দেয় যে, জ্বিনার শাস্তি হিসেবে রজম (পাথর মেরে শাস্তি দেয়া) নাকি ইসলামী আইনের পরিপন্থী!! সুবহানাল্লাহ! এই হলো গণতান্ত্রিক শরীয়াহ কোর্টের ফল!! তাহলে বুঝে নেন, কেমন সেই শরীয়াহ কোর্ট!!
৬। এই শরীয়াহ কোর্টের আরেক কীর্তি হলোঃ ১৯৮২ সালে এর ক্বাজী সাহেবগণ রায় দেন যে, ইসলামে নাকি নারীদেরকে বিচারক করতে কোন সমস্যা নেই!! এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৩ সালে ‘আশরাফ জেহান’ নামক জনৈক মহিলা ক্বাজী এই শরীয়া কোর্টের ক্বাজী হিসেবে নিযুক্ত হন!! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
এই মহিয়সী ক্ষণজন্মা ক্বাজীর একটি আলোচনার লিংকঃ alchetron.com/Ashraf-Jehan-645202-W আশা করি উনি পর্দা / হিজাব ছাড়া কোন উচ্চ-মানের দ্বীন ইসলাম অনুসরণ করেন, তা পাঠকরা সহজে বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
এইবার দেখুন প্রধান ক্বাজী সাহেবের কিছু নমুনাঃ
ক) প্রধান ক্বাজী ডঃ আগা রফিক খান বিদায়ী প্রধান ক্বাজী ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে বিদায় দিচ্ছেন।
খ) প্রধান ক্বাজীর সাথে নরওয়ে এর দূত মুহতারামা (!) চেলসি ল্যান্ডসভার্ক এর সাক্ষাত। এই ছবি এখানে দিলাম না। শুধু লিংক দিলাম। এই ছবিতে বেপর্দা মহিলা আছে। http://www.federalshariatcourt.gov.p...0Norway/02.jpg
গ) শরীয়াহ কোর্টের এক অনুষ্ঠানে ক্বাজী সাহেবগণের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত। ক্বাজী সাহেবগণকে এক নজর দেখলেই হয়তো অনেকেরই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে!!
ঘ) প্রধান ক্বাজী মহোদয়ের সাথে জাতিসংঘের এক মহিলা দূত (!!) এর একটি আনন্দঘন মূহুর্ত (!!) – এর ছবি দেয়া গেল না। শুধু লিংক দিলাম। https://www.federalshariatcourt.gov....20Knaul/04.jpg
ধন্য হে উম্মাহ!! তোমরা এমন ক্বাজী পেয়ে, ধন্য হে উম্মাহ!! তোমরা এমন শরীয়াহ কোর্ট পেয়ে!!!
৭। এত কিছু বলার মূল উদ্দেশ্য কি? এখন সেই কথায় আসি। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বলেছেন : রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘হে কাব ইবনে উজরাহ্, আমি তোমার জন্য বোকাদের নেতৃত্ব হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। অচিরেই তোমাদের মধ্যে শাসক হবে, যে কেউ তাদের কাছে যাবে, তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে, তাদের মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে, আমি তাদের নই, তারাও আমার নয়। সে ‘হাউজে কাউসারে’ প্রবেশ করতে পারবে না। যে কেউ তাদের কাছে যাবে না, তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে না, তাদের মিথ্যা দাবীসমূহের সত্যায়ন করবেনা, সে আমার, আমি তার। সে ‘হাউজে কাউসারে’ প্রবেশ করতে পারবে। (সুনান তিরমিযী -৬১৪, তাবরানী-২১২)
রসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :
রসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘শাসকদের দরজার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। যেই শাসকদের নিকট গমন করে, সেই পরীক্ষার মধ্যে পতিত হয়।’ (আবু দাউদ, নং-২৮৫৯, তিরমিযী নং-২২৫৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন : ‘একজন ব্যক্তি যে তার দ্বীনকে সাথে নিয়ে কোন শাসকের নিকট যায়, সে (শাসকের কাছ থেকে) বের হয়ে আসে তার সাথে কোন কিছু না নিয়েই (অর্থাৎ দ্বীন রেখে আসে)।’ - ‘আত্ তারিখ’ লিল ইমাম বুখারী (রঃ)।
হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বলেন :
‘তোমরা ফিতনার বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকো। বলা হলোঃ সেটা কি? তিনি বললেনঃ শাসকদের দরজা। তোমাদের কেউ শাসকদের কাছে যাবে, তার মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে তারপর বলবে, এটাতে কোন সমস্যা নেই’।
তিনি আরো বলেন : ‘অবশ্যই, তোমরা কখনোও শাসকদের দিকে এক বিঘত পরিমাণও অগ্রসর হয়ো না।’ (ইবনে আবী শাইবাহ কর্তৃক সংগৃহীত)
‘যখনই তুমি কোন আলেমকে দেখবে শাসকদের কাছে গমন করতে, জেনে রাখো, সে হচ্ছে একজন চোর। আর যদি তাকে ধনী লোকদের কাছে আনাগোনা করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো, যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে।’ (শুয়াবুল ঈমান, ইমাম বাইহাকী - ৪৯৭২, ইমাম যাহাবী (র.) এর সনদকে সহীহ বলেছেন, দেখুন সিয়ারাল আলামুন নুবালা ১৩/৫৮৬, এছাড়াও সালিম হিলালী সহীহ বলেছেন, জামি লি আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাবিস সামী, পৃ. ১৪, একই রকম কথা আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত একটি মারফু হাদিসে রয়েছে)
ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন : ‘যদি কোন আলেমকে নিয়মিত শাসকের দরবারে যেতে দেখো, তবে তার দ্বীন নিয়ে সন্দেহ করো।’
ইমাম সূফীয়ান সাওরী (র.) বলেন :
‘তোমরা সেখানে যেও না, এমনকি তারা যদি তোমাদেরকে শুধুমাত্র ‘কুল-হুয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করার জন্যও ডাকে।’ (শুয়াবুল ঈমান, ইমাম বাইহাকী)
উপরুক্ত হাদিস ও আছারগুলো এসেছে ইসলামিক খেলাফতের অধীনে থাকা জালেম শাসকের ব্যাপারে। তাহলে আল্লাহ্*র আইন পরিবর্তনকারী, নিজেরা আইন রচনাকারী, সেই কুফরী আইনে দেশ শাসনকারী, শরিয়াত প্রতিষ্ঠাকামীদেরকে হত্যাকারী শাসকদের ব্যাপারে সালাফে সালেহীনদের অবস্থান কি হবে??
আর এ সকল শাসকদের প্রতিষ্টিত কোর্টের “জাষ্টিস সাহেবদের” ব্যাপারে সালাফে সালেহীনদের অবস্থান কি হবে??
এই রকম কোন আলেমকে নিয়ে কি প্রশংসার খৈ ফুটানো উচিত? নিজের মাথার মুকুট মনে করা উচিত?
এই রকম কোন আলেমকে কি ইলম জগতের নক্ষত্র, সূর্য ইত্যাদি মনে করা উচিত?
এই রকম কোন আলেমকে কি ‘শাইখুল ইসলাম’ উপাধি দেয়া উচিত?
আল্লাহু আকবার! আমাদের কি হলো? সহজ বিষয়গুলোও কেন আমরা গুলিয়ে ফেলতেছি।
৮। আল্লাহ সকলকেই নূন্যতম কিছু আক্বল-বুদ্ধি দিয়েছেন। সেটা দিয়ে চিন্তা করে বলুন তো দেখিঃ
- কুফরী আইনে শাসনকারী, নিজেরা আইন রচনাকারী, ডজন-ডজন কুফরে বাওয়াহ (সুস্পষ্ট কুফরী) সম্পাদনকারী এ সকল শাসকদের স্থাপিত উপরুক্ত ধরনের শরীয়াহ কোর্ট কিংবা শরীয়াহ আপিলেট বেঞ্চ এ কি কোন আলেমের শরীক হওয়া উচিত?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তিনি কি পাকিস্তানের এ সকল কুফরী আইনে শাসনকারী শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদকে বৈধ জিহাদ মনে করতে পারবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তিনি কি পাকিস্তানের লাল-মসজিদের ঘটনায় পাকিস্তানের মুরতাদ শাসকের দোষ খুঁজে পাবেন নাকি মুজাহিদ, শহীদ আব্দুর রশীদ গাজী (রঃ) এর দোষ খুঁজে পাবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তিনি কি মোল্লা মোহাম্মদ উমার (রঃ) এর কাছে বৌদ্ধদের মূর্তি ধ্বংশ করার আবেদন নিয়ে যাবেন নাকি রক্ষা করার আবেদন নিয়ে যাবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তার অধিকাংশ ছাত্ররা কি জিহাদ সমর্থক হবেন নাকি জিহাদ-বিমুখ হবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে এই আলেমদের কাছ থেকে কি জিহাদের ফতোয়া নেয়া উচিত?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে এই আলেমদের কাছে কি দারুল হারব নাকি দারুল আমান – এই ফতোয়া নেয়া উচিত?
এই রকম কোন আলেমের কাছে হয়তো হায়েজ-নেফাসের ফতোয়া নেয়া যায় কিন্তু অবশ্যই গণতন্ত্র, তাগুত ইত্যাদি ব্যাপারে ফতোয়া নেয়া যায় না।
হয়তো যে সকল বিষয়ের সাথে মুরতাদ শাসক কিংবা বর্তমান সময়ের সাথে সম্পর্কিত নয়, এসব বিষয়ে ফতোয়া নেয়া যায় কিন্তু দারুল ইসলাম, দারুল কুফর, জিহাদ ইত্যাদি বিষয়ে ফতোয়া নেয়া যায় না। আর আল্লাহই ভাল জানেন।
৯। বাংলাদেশে যে রকম সরকার ঘেষা শাহবাগী আলেম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ গং-রা আছেন। পাকিস্তানেও তেমনি কুফরী আইনে দেশ শাসনকারী সরকার ঘেষা ‘মস্ত বড়’ আলেম আছেন। তাই পাকিস্তানের ঐ সকল আলেমকে মাথায় নিয়ে নাচলে, ইলম জগতে নিজেদের নেতা মনে করে নিলে বাংলাদেশের ফরিদ উদ্দিন সাহেবরা একা কি দোষ করলো?
কোন কোন বই এর মলাটে দেখি আবার বড় করে ‘জাষ্টিস অমুক লিখিত’ লেখা থাকে!! আমাদের বিবেক কি একেবারেই মরে গেছে??
আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট।
হক্ব তিতা হলেও হক্ব। হক্ব আমার-আপনার বিরুদ্ধে গেলেও হক্ব। হক্ব সর্বদাই হক্ব।
আল্লাহর দ্বীন কোন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না – সেই ব্যক্তি যত বড় জ্ঞানী কিংবা যত শক্তির অধিকারী কিংবা যত বুদ্ধিমত্তার অধিকারীই হোন না কেন। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) কোন আয়াতটি পড়েছিলেন মনে নেই?
ফি আমানিল্লাহ।
১। কাগজে কলমে এই শরীয়া কোর্টের কাজ হচ্ছেঃ পাকিস্তানের কোন আইন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা খুঁজে দেখা। কিন্তু বাস্তবে ১৯৮০ সালে এটা স্থাপিত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেটা পাকিস্তানের কুফরী শাসন ব্যবস্থাকে কুফর বলে বুঝতে পারে নি!! কিছু হুদুদ এর শাস্তি এর ব্যাপারে রায় দেয়ার মাধ্যমে এটা দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা সাধারণ জনগণকে বোকা বানানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
২। এই শরীয়া কোর্টে মোট ৮ জন ক্বাজীর মধ্যে ৫ জন হচ্ছে সারা-জীবন তাগুতী, কুফরি বিচার-ব্যবস্থায় কাজ করে আসা ‘বিজ্ঞ ক্বাজী’!! আর বাকি ৩ জন হচ্ছেন, আলেম। তাহলে যে কোন রায়ে বিচারকদের মতভেদ হলে, রায় কোন পক্ষে যাবে তা সহজেই অনুমেয়।
৩। এখন পর্যন্ত এই কোর্টের প্রধান ক্বাজী হচ্ছেনঃ সারা-জীবন তাগুতী, কুফরি বিচার-ব্যবস্থায় কাজ করে আসা ক্বাজী সাহেবগণ!! তাহলে এই কোর্টের সার্বিক গতি কোন দিকে বুঝে নেন।
৪। পাকিস্তানের তাগুতী সুপ্রীম কোর্টে “শরীয়াহ আপিলেট বেঞ্চ” নামে একটি বেঞ্চ আছে, যা এই শরীয়াহ কোর্টের রায়ের আপিল নিষ্পত্তি করে। বুঝাই যায়, এই বেঞ্চও তাগুতী, কুফরী আইনের সর্বোচ্চ বিচারালায় সুপ্রীম কোর্টেরই একটি অংশ। আর এ কারণেই সেই বেঞ্চে মোট ৫ জন ক্বাজির মধ্যে ৩ জন সারা-জীবন তাগুতী, কুফরি বিচার-ব্যবস্থায় কাজ করে আসা ক্বাজী (!!) সাহেবান আর মাত্র ২ জন আলেম!! তাহলে শরীয়াহ আদালতের কোন রায়ে আপিল করলে এর মীমাংসা কারা করতেছেন – বুঝতেই পারছেন।
৫। এই শরীয়াহ কোর্টের অনেক কীর্তি আছে। এর মধ্যে একটি কীর্টি এই যে, ১৯৮১ সালে এই শরীয়াহ কোর্ট রায় দেয় যে, জ্বিনার শাস্তি হিসেবে রজম (পাথর মেরে শাস্তি দেয়া) নাকি ইসলামী আইনের পরিপন্থী!! সুবহানাল্লাহ! এই হলো গণতান্ত্রিক শরীয়াহ কোর্টের ফল!! তাহলে বুঝে নেন, কেমন সেই শরীয়াহ কোর্ট!!
৬। এই শরীয়াহ কোর্টের আরেক কীর্তি হলোঃ ১৯৮২ সালে এর ক্বাজী সাহেবগণ রায় দেন যে, ইসলামে নাকি নারীদেরকে বিচারক করতে কোন সমস্যা নেই!! এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৩ সালে ‘আশরাফ জেহান’ নামক জনৈক মহিলা ক্বাজী এই শরীয়া কোর্টের ক্বাজী হিসেবে নিযুক্ত হন!! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
এই মহিয়সী ক্ষণজন্মা ক্বাজীর একটি আলোচনার লিংকঃ alchetron.com/Ashraf-Jehan-645202-W আশা করি উনি পর্দা / হিজাব ছাড়া কোন উচ্চ-মানের দ্বীন ইসলাম অনুসরণ করেন, তা পাঠকরা সহজে বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
এইবার দেখুন প্রধান ক্বাজী সাহেবের কিছু নমুনাঃ
ক) প্রধান ক্বাজী ডঃ আগা রফিক খান বিদায়ী প্রধান ক্বাজী ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে বিদায় দিচ্ছেন।
খ) প্রধান ক্বাজীর সাথে নরওয়ে এর দূত মুহতারামা (!) চেলসি ল্যান্ডসভার্ক এর সাক্ষাত। এই ছবি এখানে দিলাম না। শুধু লিংক দিলাম। এই ছবিতে বেপর্দা মহিলা আছে। http://www.federalshariatcourt.gov.p...0Norway/02.jpg
গ) শরীয়াহ কোর্টের এক অনুষ্ঠানে ক্বাজী সাহেবগণের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত। ক্বাজী সাহেবগণকে এক নজর দেখলেই হয়তো অনেকেরই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে!!
ঘ) প্রধান ক্বাজী মহোদয়ের সাথে জাতিসংঘের এক মহিলা দূত (!!) এর একটি আনন্দঘন মূহুর্ত (!!) – এর ছবি দেয়া গেল না। শুধু লিংক দিলাম। https://www.federalshariatcourt.gov....20Knaul/04.jpg
ধন্য হে উম্মাহ!! তোমরা এমন ক্বাজী পেয়ে, ধন্য হে উম্মাহ!! তোমরা এমন শরীয়াহ কোর্ট পেয়ে!!!
৭। এত কিছু বলার মূল উদ্দেশ্য কি? এখন সেই কথায় আসি। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বলেছেন : রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يا كعب بن عجرة من أمراء يكونون من بعدي فمن غشي أبوابهم فصدقهم في كذبهم وأعانهم على ظلمهم فليس مني ولست منه ولا يرد علي الحوض ومن غشي أبوابهم أو لم يغش فلم يصدقهم في كذبهم ولم يعنهم على ظلمهم فهو مني وأنا منه وسيرد علي الحوض
‘হে কাব ইবনে উজরাহ্, আমি তোমার জন্য বোকাদের নেতৃত্ব হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। অচিরেই তোমাদের মধ্যে শাসক হবে, যে কেউ তাদের কাছে যাবে, তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে, তাদের মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে, আমি তাদের নই, তারাও আমার নয়। সে ‘হাউজে কাউসারে’ প্রবেশ করতে পারবে না। যে কেউ তাদের কাছে যাবে না, তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে না, তাদের মিথ্যা দাবীসমূহের সত্যায়ন করবেনা, সে আমার, আমি তার। সে ‘হাউজে কাউসারে’ প্রবেশ করতে পারবে। (সুনান তিরমিযী -৬১৪, তাবরানী-২১২)
রসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :
إياكم وابواب السلطان ؛ فإنه قد أصبح صعبا هبوطا قال الهيثمي في مجمع الزوائد
রসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘শাসকদের দরজার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। যেই শাসকদের নিকট গমন করে, সেই পরীক্ষার মধ্যে পতিত হয়।’ (আবু দাউদ, নং-২৮৫৯, তিরমিযী নং-২২৫৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন : ‘একজন ব্যক্তি যে তার দ্বীনকে সাথে নিয়ে কোন শাসকের নিকট যায়, সে (শাসকের কাছ থেকে) বের হয়ে আসে তার সাথে কোন কিছু না নিয়েই (অর্থাৎ দ্বীন রেখে আসে)।’ - ‘আত্ তারিখ’ লিল ইমাম বুখারী (রঃ)।
হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বলেন :
قال حذيفة رضى الله عنه : إياكم ومواقف الفتن . قيل : وما هي ؟ قال : أبواب الأمراء ، يدخل أحدكم على الأمير فيصدقه بالكذب ، ويقول ما ليس فيه
‘তোমরা ফিতনার বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকো। বলা হলোঃ সেটা কি? তিনি বললেনঃ শাসকদের দরজা। তোমাদের কেউ শাসকদের কাছে যাবে, তার মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে তারপর বলবে, এটাতে কোন সমস্যা নেই’।
তিনি আরো বলেন : ‘অবশ্যই, তোমরা কখনোও শাসকদের দিকে এক বিঘত পরিমাণও অগ্রসর হয়ো না।’ (ইবনে আবী শাইবাহ কর্তৃক সংগৃহীত)
قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: " إِذَا رَأَيْتَ الْقَارِئَ يَلُوذُ بِالسُّلْطَانِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لِصٌّ وَإِذَا رَأَيْتَهُ يَلُوذُ بِالْأَغْنِياءِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ مُرَاءٍ) شعب الإيمان
‘যখনই তুমি কোন আলেমকে দেখবে শাসকদের কাছে গমন করতে, জেনে রাখো, সে হচ্ছে একজন চোর। আর যদি তাকে ধনী লোকদের কাছে আনাগোনা করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো, যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে।’ (শুয়াবুল ঈমান, ইমাম বাইহাকী - ৪৯৭২, ইমাম যাহাবী (র.) এর সনদকে সহীহ বলেছেন, দেখুন সিয়ারাল আলামুন নুবালা ১৩/৫৮৬, এছাড়াও সালিম হিলালী সহীহ বলেছেন, জামি লি আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাবিস সামী, পৃ. ১৪, একই রকম কথা আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত একটি মারফু হাদিসে রয়েছে)
ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন : ‘যদি কোন আলেমকে নিয়মিত শাসকের দরবারে যেতে দেখো, তবে তার দ্বীন নিয়ে সন্দেহ করো।’
ইমাম সূফীয়ান সাওরী (র.) বলেন :
إِنْ دَعَوْكَ أَنْ تَقْرَأَ عَلَيْهِمْ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ , فَلَا تَأْنَفْهُمْ - شعب الإيمان
‘তোমরা সেখানে যেও না, এমনকি তারা যদি তোমাদেরকে শুধুমাত্র ‘কুল-হুয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করার জন্যও ডাকে।’ (শুয়াবুল ঈমান, ইমাম বাইহাকী)
উপরুক্ত হাদিস ও আছারগুলো এসেছে ইসলামিক খেলাফতের অধীনে থাকা জালেম শাসকের ব্যাপারে। তাহলে আল্লাহ্*র আইন পরিবর্তনকারী, নিজেরা আইন রচনাকারী, সেই কুফরী আইনে দেশ শাসনকারী, শরিয়াত প্রতিষ্ঠাকামীদেরকে হত্যাকারী শাসকদের ব্যাপারে সালাফে সালেহীনদের অবস্থান কি হবে??
আর এ সকল শাসকদের প্রতিষ্টিত কোর্টের “জাষ্টিস সাহেবদের” ব্যাপারে সালাফে সালেহীনদের অবস্থান কি হবে??
এই রকম কোন আলেমকে নিয়ে কি প্রশংসার খৈ ফুটানো উচিত? নিজের মাথার মুকুট মনে করা উচিত?
এই রকম কোন আলেমকে কি ইলম জগতের নক্ষত্র, সূর্য ইত্যাদি মনে করা উচিত?
এই রকম কোন আলেমকে কি ‘শাইখুল ইসলাম’ উপাধি দেয়া উচিত?
আল্লাহু আকবার! আমাদের কি হলো? সহজ বিষয়গুলোও কেন আমরা গুলিয়ে ফেলতেছি।
৮। আল্লাহ সকলকেই নূন্যতম কিছু আক্বল-বুদ্ধি দিয়েছেন। সেটা দিয়ে চিন্তা করে বলুন তো দেখিঃ
- কুফরী আইনে শাসনকারী, নিজেরা আইন রচনাকারী, ডজন-ডজন কুফরে বাওয়াহ (সুস্পষ্ট কুফরী) সম্পাদনকারী এ সকল শাসকদের স্থাপিত উপরুক্ত ধরনের শরীয়াহ কোর্ট কিংবা শরীয়াহ আপিলেট বেঞ্চ এ কি কোন আলেমের শরীক হওয়া উচিত?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তিনি কি পাকিস্তানের এ সকল কুফরী আইনে শাসনকারী শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদকে বৈধ জিহাদ মনে করতে পারবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তিনি কি পাকিস্তানের লাল-মসজিদের ঘটনায় পাকিস্তানের মুরতাদ শাসকের দোষ খুঁজে পাবেন নাকি মুজাহিদ, শহীদ আব্দুর রশীদ গাজী (রঃ) এর দোষ খুঁজে পাবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তিনি কি মোল্লা মোহাম্মদ উমার (রঃ) এর কাছে বৌদ্ধদের মূর্তি ধ্বংশ করার আবেদন নিয়ে যাবেন নাকি রক্ষা করার আবেদন নিয়ে যাবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে তার অধিকাংশ ছাত্ররা কি জিহাদ সমর্থক হবেন নাকি জিহাদ-বিমুখ হবেন?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে এই আলেমদের কাছ থেকে কি জিহাদের ফতোয়া নেয়া উচিত?
- সুদীর্ঘ ২২ বছর কোন আলেম এখানে চাকুরী করলে এই আলেমদের কাছে কি দারুল হারব নাকি দারুল আমান – এই ফতোয়া নেয়া উচিত?
এই রকম কোন আলেমের কাছে হয়তো হায়েজ-নেফাসের ফতোয়া নেয়া যায় কিন্তু অবশ্যই গণতন্ত্র, তাগুত ইত্যাদি ব্যাপারে ফতোয়া নেয়া যায় না।
হয়তো যে সকল বিষয়ের সাথে মুরতাদ শাসক কিংবা বর্তমান সময়ের সাথে সম্পর্কিত নয়, এসব বিষয়ে ফতোয়া নেয়া যায় কিন্তু দারুল ইসলাম, দারুল কুফর, জিহাদ ইত্যাদি বিষয়ে ফতোয়া নেয়া যায় না। আর আল্লাহই ভাল জানেন।
৯। বাংলাদেশে যে রকম সরকার ঘেষা শাহবাগী আলেম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ গং-রা আছেন। পাকিস্তানেও তেমনি কুফরী আইনে দেশ শাসনকারী সরকার ঘেষা ‘মস্ত বড়’ আলেম আছেন। তাই পাকিস্তানের ঐ সকল আলেমকে মাথায় নিয়ে নাচলে, ইলম জগতে নিজেদের নেতা মনে করে নিলে বাংলাদেশের ফরিদ উদ্দিন সাহেবরা একা কি দোষ করলো?
কোন কোন বই এর মলাটে দেখি আবার বড় করে ‘জাষ্টিস অমুক লিখিত’ লেখা থাকে!! আমাদের বিবেক কি একেবারেই মরে গেছে??
আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট।
হক্ব তিতা হলেও হক্ব। হক্ব আমার-আপনার বিরুদ্ধে গেলেও হক্ব। হক্ব সর্বদাই হক্ব।
আল্লাহর দ্বীন কোন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না – সেই ব্যক্তি যত বড় জ্ঞানী কিংবা যত শক্তির অধিকারী কিংবা যত বুদ্ধিমত্তার অধিকারীই হোন না কেন। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) কোন আয়াতটি পড়েছিলেন মনে নেই?
ফি আমানিল্লাহ।
Comment