আমাদের দাওয়াহ
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ@ ১। আমরা যেভাবে ঘুমিয়ে থাকি সেভাবে একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবো। তারপর যেভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠি সেভাবে আখেরাতে জেগে উঠবো। তারপর আমাদের সবার বিচার হবে। এতে আমাদেরকে হয় জান্নাতে অথবা জাহান্নামে যেতে হবে। জান্নাতে যাবার একমাত্র পথ হচ্ছে দ্বীন ইসলাম। আল্লাহ রব্বুল আলামীন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেছেনঃ
“আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত, আয়াতঃ ৫৬)
@ ২। আমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করবো, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করবো না। শুধুমাত্র তাঁর কাছেই দুয়া করবো, তাঁকে ছাড়া জীবিত-মৃত অন্য কারো কাছে দুয়া করবো না, তাঁকে ছাড়া অন্যকে সিজদা করবো না, বিপদ-মুসীবতে শুধুমাত্র তাঁর কাছেই সাহায্য চাইবো।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! এমন একটি কথার দিকে আসো - যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান - আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে রব বানাবো না।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৪)
আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তাঁর থেকে বেশী ভয় করবো না কিংবা ভালোবাসবো না। তাঁর কাছে ছাড়া অন্য কারো আছে রিযিক কিংবা সন্তান-সন্ততি চাইবো না। তাঁর হুকুমের বাইরে অন্য কারো আনুগত্য করবো না। শুধুমাত্র আল্লাহরই আইন মানবো, তাঁর আইন ছাড়া কোন তাগুত-মুরতাদ শাসকের বানানো আইন (মানব রচিত আইন) মানবো না। গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে একমাত্র আল্লাহকেই মানবো।
কারণ আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ “তাঁর কাছেই গায়েবের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না।” (সূরা আনআম, আয়াতঃ ৫৯)
@ ৩। আমরা সকল প্রকার তাগুত তথা মিথ্যা মাবুদদেরকে অস্বীকার করবো যারা নিজেরা আল্লাহর কোন না কোন বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে দাবী করছে – হোক সেটা গায়েবের জ্ঞান, হোক সেটা আইন-বিধান রচনা করার অধিকার, হোক সেটা হালাল-হারাম নির্ধারনের অধিকার, হোক সেটা দুয়া, রুকু, সিজদা কিংবা অন্য কোন ইবাদাত লাভ করার অধিকার। যেমনঃ জ্যোতিষী, শয়তান, গণক, মূর্তি, এদেশে আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী সংসদের সংসদ সদস্য, সেই আইন প্রয়োগকারী বিচার বিভাগ ও প্রশাসন, ঐ সকল পীর যাদেরকে রুকু-সিজদা ইত্যাদি ইবাদত করা হয় এবং সে এতে সন্তুষ্ট থাকে ইত্যাদি।
ইমাম তাবারী (রঃ) বলেন,
“আমাদের মতে সঠিক মত হলো, আল্লাহর উপর সীমালংঘনকারী মাত্রই তাগুত বলে চিহ্নিত, যার অধীনস্থ ব্যক্তিরা চাপের মুখে বা তাকে তোষামোদ করার জন্য বা তার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তার ইবাদত করে। এ (তাগুত) উপাস্যটি মানুষ কিংবা শয়তান কিংবা মূর্তি কিংবা প্রতিমা অথবা অন্য যেকোন কিছু হতে পারে।” (তাফসীর তাবারী, সূরা বাকারা এর ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীর)
আমরা সকল প্রকার তাগুতকে বাতিল জানবো, তাদের ইবাদাত, আনুগত্য, অনুসরণ, অনুকরণ পরিত্যাগ করবো, তাদের সাথে শত্রুতা করবো ও ঘৃণা পোষণ করবো।
কারণ আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে রয়েছে চমৎকার আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যা কিছুর ইবাদত কর, তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে থাকবে চিরশত্রুতা যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনো।” (সূরা মুমতাহিনা, আয়াতঃ ৪)
@ ৪। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই আমাদের দ্বীনি, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, রাস্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে একক ও একমাত্র আদর্শ। অন্য কোন জাতীয়-বিজাতীয় ব্যক্তি (যেমনঃ গান্ধী-জিন্নাহ, মুজিব-জিয়া ইত্যাদি) আমাদের আদর্শ হতে পারে না।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“নিশ্চয়ই, যারা আল্লাহর কাছে ও আখেরাতে (কল্যাণের) আশা রাখে, তাদের জন্যে আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ২১)
@ ৫। আমরা সকল প্রকার শিরক, কুফর, নিফাকী ও বিদয়াত থেকে সর্বদা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবো।
আল্লাহ বলেছেনঃ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ, আয়াতঃ ৭২)
আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর হচ্ছেঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন পীর-মাজার ইত্যাদিকে সেজদা করা, তাদের কাছে দুয়া করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য নজর-নিয়াজ পেশ করা, অন্য কারো নামে মান্নত করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করে ভয় করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করা, সংসদ ভবনে-আদালতে রচিত আল্লাহর আইনের বিরোধী আইন মান্য করা, বাংলাদেশের কুফরী সংবিধানকে মান্য করা ও সম্মান করা, এজন্য শপথ করা। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ইত্যাদি গণতান্ত্রিক দলসমূহকে ভোট প্রদান করা। এদেশের মানব রচিত কুফরী আদালতে বিচার চাওয়া, মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে মুরতাদ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে সাহায্য করা, তথ্য দেয়া, তাদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করা ইত্যাদি। আমরা এসব শিরক-কুফর থেকে সর্বাত্বকভাবে বেঁচে থাকবো।
ঈমান ও আক্বীদার সংশোধনের পাশাপাশি আমরা নামাজ, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাতসহ অন্যান্য সকল ফরজ-ওয়াজিব যথাসাধ্য পালন করবো। এবং সকল প্রকার হারাম থেকে সর্বাত্বকভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো। কারণ রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যা কিছু আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছি তা থেকে দূরে থাকো, আর যা কিছু করতে নির্দেশ দিয়েছি তা সাধ্যমতো পালন করো।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং – ১৩৩৭)
@ ৬। আমাদের এই জমীনে বর্তমানে ইসলামী আইন (ইসলামী শরীয়াত) কায়েম ও বিজয়ী নেই। বর্তমান কাফের-মুরতাদ সরকারসমূহ (বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ইত্যাদি কুফরপন্থী দলের দ্বারা গঠিত গণতান্ত্রিক সরকার) ইসলামী শরীয়া আইন বাদ দিয়ে মানব-রচিত কুফরী-শিরকী আইনের প্রবর্তন ও প্রচলন করেছে।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“আল্লাহর পাশাপাশি তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে এবং মরিয়মের পুত্রকে মসীহকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একক ইলাহ এর ইবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তারা তাঁর সাথে যে সকল শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র।” (সূরা তওবা, আয়াতঃ ৩১)
এই আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে যেখানে তিনি আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) কে বলেছিলেনঃ
'“আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা কি তারা হারাম করে না? এবং তারা (অনুসারীরা) তা হারাম করে নেয় না? আবার আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা কি তারা হালাল করে না? এবং তারা (অনুসারীরা) তা হালাল করে নেয় না? তিনি বললেন, জ্বি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এটাই হলো তাদের ইবাদত করা'৷” (তাফসীর তাবারী, মুসনাদে আহমাদ, সুনান তিরমিযী। ইমাম ,তিরমিযী (রঃ) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)৷
এদেশের কাফির-মুরতাদ সরকারগুলো এখানে নব্য আহবার ও রাহবানের ভূমিকা নিয়েছে। যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের উপর এই কুফরী-শিরকী আইন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে চাপিয়ে রেখেছে। যেমনঃ আল্লাহ মদ হারাম করেছেন আর এই মুরতাদ সরকারগুলো মদকে হালাল করে দিয়েছে, মদের লাইসেন্স দিচ্ছে। আল্লাহ জ্বিনা হারাম করেছেন আর এই মুরতাদ সরকারগুলো পতিতাবৃত্তির জন্য লাইসেন্স দিচ্ছে। আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন, সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন আর এই মুরতাদ সরকারগুলো সুদের ভিত্তিতে পুরো অর্থনীতি পরিচালনা করছে। সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনার লাইসেন্স দিচ্ছে।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“তারা কি জাহেলিয়াতের বিচার-ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?” (সূরা মায়িদাহ, আয়াতঃ ৫০)
অত্যন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে, এরা এসব জাহেলী বাতিল আইনকে বলছে যুগ উপযোগী আইন- আর আহকামুল হাকেমীন আল্লাহর দেয়া আইন-বিধানকে বলছে মধ্যযুগীয় শাসন। এটা তাদের আরেকটি সুস্পষ্ট কুফরী।
@ ৭। এছাড়াও এদেশের মুরতাদ সরকারসমূহ যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত সন্ত্রাসী-কাফির-ক্রুসেডার দেশসমূহের (যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ইত্যাদি) পা-চাটা গোলামের ভূমিকা পালন করছে, এদেরকে বন্ধু-সাহায্যকারী-পরামর্শক হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই মুরতাদ সরকারগুলো এই দেশে হিন্দু-খ্রীষ্টান-ইহুদীদের কুফরী-শিরকী আদর্শ এবং কৃষ্টি-কালচার প্রচার-প্রসার করছে এবং ‘পুতুল সরকার’ হিসেবে তাদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে আউলিয়া (বন্ধু, অভিভাবক, রক্ষক) হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের আউলিয়া। তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে আউলিয়া হিসেবে নিবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা মায়িদাহ, আয়াতঃ ৫১)
@ ৮। এইসব মানবরচিত কুফরী মতবাদপন্থী দলকে ভোট দেয়া, সমর্থন করা, তাদের পক্ষে মিছিল-মিটিং করা, তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা, তাদের পক্ষে কথা বলা, তাদের পক্ষে কলম ধরা ইত্যাদি সবই হচ্ছে শিরক-কুফর-হারাম ও বিদয়াত।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি। (কিন্তু) তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়।” (সূরা নিসা, আয়াতঃ ৬০)
ঈমানের দাবী করার পর বিচার-ফায়সালার জন্য এসব কুফরী বিচার-ব্যবস্থার কাছে শুধুমাত্র যাওয়ার ইচ্ছা করায় আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদের ঈমানের দাবীকে নাকচ করেছেন। তাহলে এসব কুফরী-শিরকী আইন-বিধান-মতবাদের পক্ষে কাজ করার হুকুম কি হতে পারে? ভালোভাবে চিন্তা করুন।
@ ৯। সলফে সালেহীনগণ, মুজতাহিদ ইমামগণ ও পরবর্তী যুগের ইমামগণের মধ্যে ও আমাদের মাজহাবে এই ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, কোন মুসলিম এলাকার শাসকের মধ্যে এই রকম সুষ্পষ্ট কুফরী দেখা গেলে তার সাথে সশস্ত্র জিহাদ-ক্বিতাল করে তাকে হটিয়ে ইসলামী শরীয়াত জারি করা হচ্ছে ঐ এলাকার সামর্থবানদের উপর ফরজে-আইন। আর যদি সামর্থ না থাকে তবে শক্তি-সামর্থ অর্জন করা হচ্ছে ফরজে আইন। আর তার সমর্থনে যদি কোন বাহিনী থাকে তবে ঐ মুরতাদ বাহিনীসহ ঐ শাসককে হটানো হচ্ছে ফরজে আইন।
এর দলীল হলো উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) বর্ণিত হাদীস যেখানে তিনি বলেছেনঃ
অর্থাৎ, “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাকে বাইয়াত দিলাম। তিনি তখন আমাদেরকে যে শপথ গ্রহণ করান তার মধ্যে ছিল – ‘আমরা শুনবো ও মানবো, আমাদের অনুরাগে ও বিরাগে, আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিলেও যোগ্য ব্যক্তির সাথে আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না।’ তিনি বলেন, যে যাবৎ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।’” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
এ ব্যাপারে ইজমা উল্লেখ করে ইমাম নববী (রঃ) বলেছেন,
“আল কাযী ইয়াজ (রঃ) বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে যে, কাফিরের হাতে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না; সুতরাং তার থেকে যদি কুফরী প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে অপসারণ করতে হবে।’” তিনি আরো বলেন, “সুতরাং তার থেকে কোন কুফরী বা শরীয়াহ পরিবর্তন বা বিদয়াত প্রকাশ পেলে, তাহলে সে তার দায়িত্ব থেকে খারিজ হয়ে গেল এবং তার আনুগত্যের হক সে হারালো; আর এ অবস্থায় মুসলিমদের জন্য আবশ্যক যে তারা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, তাকে অপসারণ করবে এবং একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক নিয়োগ করবে যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। আর যদি একদল মানুষ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এটি সম্ভব না হয় তবে ঐ দলটিকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ঐ কাফিরকে অপসারণ করতে হবে। তবে বিদ’আতীর ক্ষেত্রে এটি আবশ্যক নয় যদি না তারা মনে করে যে তারা এটি করতে সক্ষম। অর্থাৎ যদি সত্যিই অক্ষমতা বিরাজ করে তাহলে বিদ্রোহ করা আবশ্যক নয়, তবে মুসলিমদের ঐ ভুমি থেকে অন্য কোথাও তাদের দ্বীন নিয়ে হিজরত করতে হবে।” (সহীহ মুসলিম বি শারহুন নববী, কিতাবুল ইমারাহ ১২/২২৮)
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেছেনঃ
দাউদী (রঃ) বলেছেন, আলেমরা এ ব্যাপারে একমত যে, শাসক জালেম হলে যদি সামর্থ থাকে ফিতনা ও জুলুম ছাড়া তাকে অপসারণ করার তাহলে তা ওয়াজিব। তা না হলে ধৈর্য্য ধরা ওয়াজিব। অন্যরা বলেছেন, ফাসিক ও বিদয়াতীর কাছে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না। যদি সে প্রথমে ন্যায়পরায়ণ থাকে ও পরে বিদয়াত ও জুলুম করে তবে তার অপসারণ ও বিরুদ্ধাচারণের ব্যাপারে মতভেদ হয়েছে। সঠিক মত হচ্ছে, তা না করা যতক্ষণ না সে কুফরী করে। তখন তাকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধাচারণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ফিতান, ৩০/১১০)
আর এই ইজমা ইবনে হাজার (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে ইবনে বাত্তাল, ইবনে আত তীন, আদ দাউদী প্রমুখও ইজমা উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাজার (রঃ) বলেন,
“আর এ ব্যাপারে ইজমার সারমর্ম হলো তাকে তার কুফরীর কারণে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমকে এই উদ্দেশ্যে রুখে দাঁড়াতে হবে, যার এই কাজ করার শক্তি আছে তার জন্য রয়েছে সওয়াব, যে এটা অবহেলা করবে সে গুনাহগার হবে, আর যে এতে অসমর্থ তার জন্য ওয়াজিব হবে ঐ এলাকা থেকে হিজরত করা।” (ফাতহুল বারী, কিতাবুল ফিতান, ১৩/১২৩)
@ ১০। এছাড়াও এই মুরতাদ সরকারের নিরাপত্তা দানকারী বাহিনীসমূহ যেমনঃ র*্যাব, আর্মি, বিডিআর, পুলিশ ইত্যাদি হচ্ছে কুফরের বাহিনী এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করাও আমাদের উপর ফরজ।
কারণ আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“যারা ঈমানদার তারা যে, লড়াই করে আল্লাহর পথে। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পক্ষে সুতরাং তোমরা লড়াই করতে থাকো শয়তানের আউলিয়াদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” (সূরা নিসা, আয়াতঃ ৭৬)
যারাই দ্বীন ইসলাম ক্বায়েমের চেষ্টা করে, এই বাহিনীগুলো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এদেশের মুরতাদ সরকারগুলো এসব মুরতাদ নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমেই তাদের কুফরী-শিরকী আইন জারি রেখেছে। মুরতাদ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো না থাকলে এসব কাফির-মুরতাদ সরকার এদেশের মুসলমানদের উপর তাদের এই শিরকী আইন একদিনও কায়েম রাখতে পারতো না।
দেশ রক্ষার অযুহাত দেখিয়ে মুরতাদ সরকারগুলো এই বাহিনীর অনেককে ধোঁকায় ফেলে আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করে রেখেছে। আর অন্যান্যরা দুনিয়ার সামান্য বেতনের লোভে তাদের আখিরাত বিক্রয় করে দিয়েছে।
@ ১১। তাই এই জমীনে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আমাদেরকে সর্বাত্বক জিহাদ করতে হবে, এর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। দল-মত, মাজহাব-মাসলাক নির্বিশেষে, ফিক্বহী-ফুরুঈ ইখতিলাফ ছেড়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সবাই দ্বীন কায়েমের এই জিহাদে শরীক হবো। আমরা আনসার হবো, মুজাহিদ হবো, নিজের জান ও মাল আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর পথে আমরা এমনভাবে আনসার হবো, মুজাহিদীনদেরকে রক্ষা করবো যেমনভাবে আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততিদের রক্ষা করে থাকি।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
“হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা জানো।” (সূরা ছফ, আয়াতঃ ১০-১১)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হক্বকে হক্ব হিসেবে চিনার এবং এর অনুসরন করার তৌফিক দিন, বাতিলকে বাতিল হিসেবে চিনার এবং এ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন। আমরা সবাইকে এই দাওয়াত পৌঁছে দিবো। ইনশাআল্লাহ।
হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা সত্য পৌঁছে দিয়েছি।
হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা সত্য পৌঁছে দিয়েছি।
হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা সত্য পৌঁছে দিয়েছি।
হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা সত্য পৌঁছে দিয়েছি।
হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা সত্য পৌঁছে দিয়েছি।
Comment