আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর জিহাদকে ফরজ করেছেন। তিনি আমাদের উপর জিহাদকে ফরজ করেছেন দু্ই ভাবে, জান ও মালের মাধ্যমে । আমাদেরকে ফরজ আদায় করতে হলে সাধ্য অনুযায়ী জান ও মাল দুইটিই ব্যয় করতে হবে। শুধু একটি আদায় করলে অন্যটি ফরিজা আদায় হবে না, যেটাতে আমরা অনেকেই ভূল করে থাকি। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:
انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٩:٤١]
তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।
আল্লাহর নবী বলেন:
و عن أنس (رض) : أن النبي عليه السلام قال : (( جاهدوا المشركين بأموالكم و أنفسكم و ألسنتكم )) رواه أبو داود بإسناد صحيح
আনাস হতে বর্ণিত, নবী আলাইহিস সালাম বলেছেন: “ মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমরা জান-মাল ও বাক্য দ্বারা সংগ্রাম চালাও।”
আবদুল্লাহ আযযাম (রহ তাঁর ‘‘মুসলিমদের ভূমি প্রতিরক্ষা’’ লিখনীতে মাল দ্বারা জিহাদ করা অধ্যায়ে বলেন:
যদি মুজাহিদীনদের মালের প্রয়োজন হয় তখন একজনের মাল দ্বারা জিহাদ করা ফরদ। তখন মহিলা ও শিশুর মাল দ্বারা জিহাদ করাও ফারদ, এটি ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহীমাহুল্লাহ) বলেছেন। এই জন্যই জিহাদে যখন মালের প্রয়োজন হবে তখন মাল জমা করা হারাম। ইবনে তাইমিয়্যাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আমাদের কছে এত সামান্য মাল আছে যে, হয় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের উপর খরচ করতে হবে অথবা জিহাদে ব্যয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি করবো?” তিনি বলেছেলেন, “ যদিও দুর্ভিক্ষ পীড়িতরা মারা যায় তবুও আমরা জিহদকে অগ্রাধিকার দিব। মুসলিমদেরকে যখন শত্রুরা বর্ম হিসাবে ব্যবহার করে তখন ঐ মুসলিমরা আমাদের হাতে নিহত হয় অথচ এখানে দুর্ভিক্ষ পীড়িতরা আল্লাহর হুকুমের অধীনে মারা যায়।
আল কুরতুবী বলেছেন: “আলিমগণ একমত পোষন করেছেন যে, যাকাত পরিশোধের পরও যদি মুসলিমদের কোন পয়োজন থাকে; তবে তারা নিজেদের মাল থেকে খরচ করবে উক্ত প্রয়োজন পূরণ করার জন্য।”
ইমাম মালিক বলেছেন, মুসলিম বন্দীদেরকে মুক্ত করা ফারদ। যদিও সমস্ত সম্পদ খরচ হয়ে যায়। এ ব্যাপারেও সবাই একমত পোষণ করেছেন।”
একজন ব্যক্তিকে রক্ষার চাইতে দ্বীনকে রক্ষা করা অগ্রাধিকার যোগ্য, এবং সম্পদকে রক্ষার চাইতে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা অগ্রাধিকার যোগ্য। সুতরাং একজন মুজাহিদীন এর রক্তের চাইতে একজন ধনীর সম্পদ মূল্যবান নয়।
আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের উৎকর্ষ সমূহ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:
۞ إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [٩:١١١]
আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনইদেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ۖ وَأُخْرَىٰ تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধনইসম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।
حَدَّثَنَا سَعْدُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ (ﷺ) قَالَ " مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ دَعَاهُ خَزَنَةُ الْجَنَّةِ، كُلُّ خَزَنَةِ باب أَىْ فُلُ هَلُمَّ ". قَالَ أَبُو بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ، ذَاكَ الَّذِي لاَ تَوَى عَلَيْهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) " إِنِّي لأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ ".
সা‘দ ইবন হাফস (র) ........... আবূ হুরায়রা (লা) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক প্রহরী তাকে আহবান করবে। (তারা বলবে), হে অমুক। এদিকে আস। আবূ বকর (রাযিঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! তাহলে তো তার জন্য ক্ষতি নেই। নবী (ﷺ) বলেন, ‘আমি আশা করি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ، قَالَ حَدَّثَنِي يَحْيَى، قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي بُسْرُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ حَدَّثَنِي زَيْدُ بْنُ خَالِدٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) قَالَ " مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا
আবূ ম‘‘মার (র) ........... যায়দ ইবন খালিদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করে সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন জিহাদকারীর পরিবারইপরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশুনা করে, সেও যেন জিহাদ করল।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، حَدَّثَنَا هِلاَلٌ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) قَامَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ " إِنَّمَا أَخْشَى عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِي مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَرَكَاتِ الأَرْضِ ". ثُمَّ ذَكَرَ زَهْرَةَ الدُّنْيَا، فَبَدَأَ بِإِحْدَاهُمَا وَثَنَّى بِالأُخْرَى، فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَوَيَأْتِي الْخَيْرُ بِالشَّرِّ فَسَكَتَ عَنْهُ النَّبِيُّ (ﷺ) قُلْنَا يُوحَى إِلَيْهِ. وَسَكَتَ النَّاسُ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِمِ الطَّيْرَ، ثُمَّ إِنَّهُ مَسَحَ عَنْ وَجْهِهِ الرُّحَضَاءَ، فَقَالَ " أَيْنَ السَّائِلُ آنِفًا أَوَخَيْرٌ هُوَ ـ ثَلاَثًا ـ إِنَّ الْخَيْرَ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِالْخَيْرِ، وَإِنَّهُ كُلُّ مَا يُنْبِتُ الرَّبِيعُ مَا يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ كُلَّمَا أَكَلَتْ، حَتَّى إِذَا امْتَلأَتْ خَاصِرَتَاهَا اسْتَقْبَلَتِ الشَّمْسَ، فَثَلَطَتْ وَبَالَتْ ثُمَّ رَتَعَتْ، وَإِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، وَنِعْمَ صَاحِبُ الْمُسْلِمِ لِمَنْ أَخَذَهُ بِحَقِّهِ، فَجَعَلَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ، وَمَنْ لَمْ يَأْخُذْهُ بِحَقِّهِ فَهْوَ كَالآكِلِ الَّذِي لاَ يَشْبَعُ، وَيَكُونُ عَلَيْهِ شَهِيدًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
মুহাম্মদ ইবন সিনান (র) ........... আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি আমার পর তোমাদের জন্য ভয় করি এ ব্যাপাওে যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার কল্যাণের (মঙ্গলের) দরজা খুলে দেওয়া হবে। তারপর তিনি দুনিয়ার নিয়ামতের উল্লেখ করেন। এতে তিনি প্রথমে একটির কথ বলেন, পরে দ্বিতীয়টির বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলুল্লা্হ! কল্যাণও কি অকল্যাণ বয়ে আনবে? নবী (ﷺ) নিরব রইলেন, আমরা বললাম, তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে্ সমস্ত লোকও এমনভাবে নিরবতা অবলম্বন করল, যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুখের ঘাম মুছে বললেন, এখনকার সেই প্রশ্নকারী কোথায়? তাকে কল্যাণকর? তিনি তিনবার এ কথাটি বললেন। কল্যাণ কল্যাণই বয়ে আনবে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বসন্তকালীন উদ্ভিদ (পশুকে) ধ্বংস এবং ধ্বংসোম্মুখ করে ফেলে। কিন্তু যে পশু সেই ঘাস এ পরিমাণ খায় যাতে তার ক্ষুধা মিটে, তারপর রোদ পোহায় এবং মল মুত্র ত্যাগ করে, এরপর আবার ঘাস খায়। নিশ্চই এ মাল সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদই উত্তম যে ন্যায়ত তা উপার্জন করেছে এবং আল্লাহর পথে, ইয়াতীম ও মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য খরচ করেছে। আবার যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে খরচ করে তার দৃষ্টান্ত এমন ভক্ষণকারীর ন্যায় যার ক্ষুধা মিটে না এবং তা কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
Comment