Announcement

Collapse
No announcement yet.

উম্মাহর নেতৃত্বদানে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • উম্মাহর নেতৃত্বদানে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী



    উম্মাহর নেতৃত্বদানে
    গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী

    ***

    الصفات المهمة
    لقيادة الأمة




    সংকলন ও বিন্যাস:

    শায়খ ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহীম

    ‘আবু হাফ্স আল-মাকদিসি’


    উৎসর্গ

    এই কিতাবটি উৎসর্গ করছি:

     আগ্রাসনের কালো থাবা ও স্বৈরাচারি শাসনব্যবস্থার জুলুম থেকে মুক্তিকামী মুসলিম উম্মাহর প্রতি। যে শাসনব্যবস্থা মুসলিম উম্মাহকে রাব্বুল আলামিনের শরীয়ত থেকে দূরে রেখেছে।

     আমার সম্মানিত পিতা-মাতার প্রতি। আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন এবং তাদেরকে সুউচ্চ জান্নাতুল ফিরদাউসে আবাস দান করুন!

     ঐ সকল ভাগ্যাহত বন্দীদের প্রতি, যারা জীবনের শ্রেষ্ঠ মূহুর্তগুলো তাগুতদের কারাগারসমূহে অতিবাহিত করছেন।

     আল্লাহর পথে দাওয়াত ও কিতালের ভূমিসমূহে অবস্থানকারী সকল মুজাহিদ ও মুরাবিতদের প্রতি, বিশেষত: দখলকৃত মসজিদে আকসার মুরাবিতীনের প্রতি!

     ঐ সকল জিহাদী শায়খ ও আলেমদের প্রতি, যারা সম্মানের মুকুট, পৃথিবীর অপরিহার্য অঙ্গ।

     উম্মাহর সেনাবাহিনীর ঐ সকল ভাইদের প্রতি! যারা কষ্টের উপর অবিচল রয়েছেন এবং নিকট-দূর সকলের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন।

     আমার স্ত্রীর প্রতি, যিনি আমার সঙ্গে একসাথে জেলখানা,সফর ও চিকিৎসার কষ্ট-কাঠিন্য সহ্য করেছেন.. আমার পুত্র কণ্যা,ভাই,বোন,পরিবার ও চাচা-চাচিদের প্রতি।

     শহীদদের পিতা মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি! আহত উম্মাহর জখমী ও শোকসন্তপ্তদের প্রতি।

     আমার উপর অধিকার রাখে,এমন সকলের প্রতি।



    ভূমিকা:-


    সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক, অসহায়দের সাহায্যকারী, তাওহীদবাদীদের সম্মানিতকারী এবং কাফের ও মুনাফিকদের প্রতি কঠোরতাকারী। দরূদ ও সালাম তাওহীদবাদীদের ইমাম ও মুজাহিদদের নেতার প্রতি এবং তার পরিবারবর্গ, সাহাবা ও কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার নির্দেশিত পথে চলবে তাদের প্রতি।

    নিশ্চয়ই সর্বাধিক সত্যবাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ নবী মুস্তফা সা: এর পথ। অত:পর:
    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার নবী-রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন স্ব স্ব কওমকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য। মিথ্যা,জুলুম ও অত্যাচারের অন্ধকার থেকে ইনসাফ, দয়া, উত্তম চরিত্র ও উন্নত সামাজিক মূল্যবোধের দিকে নিয়ে আসার জন্য। যেমনটা রিবয়ী ইবনে আমের রা: বলেছেন:
    نحن قوم قد ابتعثنا الله لنخرج العباد من عبادة العباد إلى عبادة رب العباد، ومن جور الأديان إلى عدل الإسلام ومن ضيق الدنيا إلى سعة الدنيا والآخرة
    “আমরা এমন সম্প্রদায়, আমাদেরকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে বের করে মানুষের রবের দাসত্বের দিকে নিয়ে আসার জন্য, সকল ধর্মের জুলুম থেকে ইসলামের ইনসাফের দিকে নিয়ে আসার জন্য, দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রশস্ততার দিকে নিয়ে আসার জন্য।” (ইবনে কাসীর রহ: আলবিদায়া ওয়াননিহায়ায় ইহা উল্লেখ করেছেন। এর সনদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।)

    এগুলো অল্প কিছু কথা, কিন্তু এর অর্থ ব্যাপক। কারণ এতে তিনি(রাঃ) সেই মহান দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন, যা আল্লাহ তা’আলা আখিরী উম্মাহর উপর অর্পণ করেছেন। আর তিনি এই উম্মাহর জন্য যে পথ নির্ধারণ করলেন তা হচ্ছে- إخراج الناس من الظلمات إلى النور
    “মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসা”।

    এবার আমরা দেখি, আমাদের অবস্থা কি? আমরা তো দেখছি, আমাদের উম্মাহর অনেক লোক সে পথ থেকে বের হয়ে গেছে,ফলে তারা নিজেরাও বক্র হয়েছে, অন্যদেরকে বক্রপথে নিয়েছে এবং ধোঁকা,জুলুম ও অত্যাচারে লিপ্ত হয়েছে।

    আল্লাহ তার নবী মুহাম্মদ সা: কে এমন এক যুগে প্রেরণ করেছেন,যে যুগ দেখেছে এমন জুলুম, পথভ্রষ্টতা ও শিরক,যার উপমা পৃথিবী কখনো দেখেনি এবং দেখবেও না। সেই মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ সা: ঈমানী বন্ধনের ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে ধরাধামে আগমন করলেন ইসলামের বার্তা,তাওহীদ ও হেদায়াতের আলো নিয়ে। তিনি ভ্রান্ত চিন্তাধারাগুলোকে পরিশুদ্ধ করলেন। সমাজকে পথভ্রষ্টতা, অজ্ঞতা,জুলুম ও মূর্খতার অন্ধকার থেকে ইনসাফ,দয়া ও সাম্যের দিকে নিয়ে আসলেন। যাতে কোন আরবীর জন্য অনারবীর উপর তাকওয়া ব্যতীত কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। ফলে এটা সেই মর্যাদাকর বিষয়ে পরিণত হল,যার ব্যাপারে সমস্ত মাখুলুক (সৃষ্টি) প্রতিযোগীতা করবে,তথা তাকওয়া,আল্লাহর নৈকট্য ও তার সরল দ্বীনের শিক্ষাসমূহ বাস্তবায়ন।
    এর মাধ্যমেই নবী সা: তার সাহাবীদেরকে সর্বিকভাবে চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দিলেন। যার মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বের দিকও। একারণেই ইতিহাস আজও পর্যন্ত তাদের মত নেতৃত্বদানকারী ও পরিচালনাকারী দেখেনি। আর এমনটা হবে না কেন? তারা তো আদম সন্তানের সরদার, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী নবীর হাতে শিক্ষা লাভ করেছেন।

    নবী সা: এর নেতৃত্ব ছিল প্রকৃত অর্থেই অতুলনীয় নেতৃত্ব। তার নেতৃত্বের প্রশংসা করার মত কি যোগ্যতাই বা আমার আছে? তিনি রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের ভিত্তিকে এমন একটি কাঠামোর উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার বর্ণনা কোন মানুষ দিতে অক্ষম। ফলে স্বল্প দিনের মধ্যে সর্বপ্রকার আভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেললেন। তাঁর সমাজকে এমন আদর্শ ও সুসভ্য সমাজ রূপে গড়ে তুললেন, যা সামাজিক উৎকর্ষতার সর্বোচ্চ স্তর লাভ করেছিল। অনুরূপই ছিল তার পররাষ্ট্রনীতি।

    তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ইচ্ছানুযায়ী কিছু গোত্রের সাথে মিত্রতা গঠন করলেন এবং কিছু গোত্রের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করলেন। তিনি বিভিন্ন রাজা- বাদশাহদের নিকট প্রেরিত তার দূতদেরকে খুব গুরুত্বের সাথে মনোনীত করতেন। তাই আমর ইবনে আস রা: কে আম্মানের বাদশার প্রতি দূত হিসাবে মনোনীত করলেন। হাতিব ইবনে আবি বালতাআ রা: কে মিশরের বাদশা মুকাওকিসের প্রতি দূত হিসাবে মনোনীত করলেন। নিজের জন্য একটি আংটি বানালেন, যেন তার যুগের অন্যান্য বাদশাহদের সাথে মিল রাখতে পারেন।

    তিনি সা: যখন মদীনার বাইরে যেতেন, তখন মদীনার কার্যাদী পরিচালনার জন্য তার সাহাবীদের মধ্যে কাউকে শাসক বানাতেন। এই ধারাবাহিকতায় একবার আলী রা:কে শাসক বানালেন,একবার উসমান রা:কে শাসক বানালেন।

    তিনি বিভিন্ন ক্ষুদ্র দল বা বড় বাহিনীর জন্য উদ্দিষ্ট শহর বা কওমের বংশ বিবেচনাপূর্বক এবং নিজ সাহাবাদের যোগ্যতার ব্যাপারে স্বীয় ধারণার আলোকে কোন উপযুক্ত লোককে আমির বানাতেন। এজন্য একবার আমির বানিয়েছিলেন আবু বকরকে,একবার আলীকে, আবার কখনো আমর ইবনুল আসকে,খালিদ ইবনুল ওয়ালিদকে,আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহকে বা উসামা ইবনে যায়দকে (অথচ তিনি বয়সে অনেক ছোট ছিলেন)।
    যে সাহাবী যে প্রাকৃতিক বিশেষ গুণের ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হতেন,তিনি তার সেই গুণটিকে আরো বাড়িয়ে তুলতেন। প্রত্যেককে সেই গুণের আলোকে কোন উপাধি দিতেন। তারপর তাকে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতেন,যা ঐ বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতার প্রতি তার আত্মবিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করত।

    হ্যাঁ,তা ছিল এমন এক শিক্ষা,যা পৃথিবী পূর্বেও কখনো দেখেনি এবং পরেও দেখবে না। যে শিক্ষা রাসূলুল্লাহ সা: এর যুগকে সর্বকালের সেরা যুগে পরিণত করেছিল। তাই আমি সেই যুগের যতই প্রশংসা করি,তার শ্রেষ্ঠত্ব যতই বর্ণনা করি,কখনো তা শেষ করতে পারবো না।

    আজ মুসলিমদের নেতৃত্ব ঠিক সেভাবে গড়ে তোলা অতীব জরুরী, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সা: তার সাহাবীদেরকে গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষত: যেহেতু আমরা এমন এক যামানায় নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়েছি,যখন ফেৎনার ঢল ঢেউয়ের ন্যায় একটির উপর আরেকিট আছড়ে পড়ছে। উম্মাহ আজ এমন একজন ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনবোধ করছে,যে তাদেরকে সেই বিভেদ,দলাদলি,হিংসা, হানাহানি, বিভ্রান্তি, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও জুলুম থেকে মুক্তি দিবে,যা খেলাফতের পতন,অত:পর বৃটেন ও ফ্রান্সের হাতে সকল দেশগুলো ছোট ছোট রাজ্যে পরিণতি হওয়ার পর থেকে অধিক পরিপুষ্ট হয়েছে।

    এই উম্মাহর আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন এক নেতৃত্বের, যে হবে প্রজ্ঞাশীল,কুরআন-সুন্নাহর আলেম। তার জাতি যে পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে তা গভীরভাবে অনুধাবন করবে। অত:পর তার বিরুদ্ধে অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকেও তার আলোকে চিন্তা করবে। যেটা নবী সা: স্পষ্টভাবে বলেছেন:
    "يوشك الأمم أن تداعى عليكم كما تداعى الأكلة إلى قصعتها ” ، فقال قائل: ومن قلة نحن يومئذ ؟ قال: ” بل أنتم يومئذ كثير، ولكنكم غثاء كغثاء السيل، ولينزعن الله من صدور عدوكم المهابة منكم وليقذفن في قلوبكم الوهن” ، فقال قائل: يا رسول الله وما الوهن؟ قال: حب الدنيا، وكراهية الموت".

    “অচিরেই সকল জাতি-গোষ্ঠী পরস্পরকে তোমাদের বিরুদ্ধে আহ্বান করবে,যেমন খাবার প্লেটে একজন আরেকজনকে আহ্বান করে। একজন বলল, সে দিন আমাদের সংখ্যা কম থাকার কারণে এমনটি হবে? রাসূল সা: বললেন: বরং সেদিন তোমরা অনেক বেশি থাকবে। কিন্তু তোমরা হবে ¯স্রোতে প্রবাহমান আবর্জনার ন্যায়। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় উঠিয়ে নিবেন আর তোমাদের অন্তরে ওয়াহান ঢেলে দিবেন। একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ওয়াহান কি? তিনি বললেন: দুনিয়ার ভালবাসা ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা”।
    (বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও আবু দাউদ।)

    এই নেতৃত্বের আবশ্যকীয় দায়িত্ব হল উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, দল ও অঞ্চলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা। সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ভাষণ প্রদান,উম্মাহর বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন উন্নয়নশীল কর্মসূচি বাস্তবায়ন,বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা,যত বেশি সম্ভব উলামা, চিন্তাবিদ,রাজনৈতিক ও জিহাদী নেতৃবৃন্দকে একত্রিত করা এবং এমন অনেক সত্যনিষ্ঠ ও আমানতদার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে,যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সা: এর সুন্নাহর আলোকে এমন একটি সংবিধান প্রণয়ন করবে,জীবনের সকল বিষয়ে যার থেকে সমাধান নেওয়া হবে।

    যে সকল বিষয় বুঝা কখনো কখনো কারো জন্য কঠিন হয়ে পড়ে,সেগুলোতে উম্মাহর পূর্বসূরীদের বুঝের দিকে প্রত্যাবর্তন করা হবে। যেন সর্ববিষয়ে পূর্ণাঙ্গ এমন একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়,যার লক্ষ্য হবে “খেলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ” ফিরিয়ে আনা এবং ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’ পুনরায় বাস্তবায়ন করা।


    ইসলামে প্রতিপালন মূলক নেতৃত্ব


    ইসলামে প্রতিপালন মূলক নেতৃত্ব কোন চাকুরী বা ক্ষমতা নয়। বরং এটি জীবনের একটি আদর্শ। জীবন পরিচালনার পদ্ধতি। যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে খেলাফত বাস্তবায়ন করা, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা,তার আদেশগুলো পালন করা এবং তার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করা।
    এর দ্বারা নেতৃত্বের এই দৃষ্টিভঙ্গি আর পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। কেননা যারা দুনিয়া-আখিরাত উভয়টার জন্য কাজ করে আর যারা কেবল দুনিয়ার জন্য কাজ করে

    এই দুই শ্রেণীর মাঝে বিস্তর ব্যাবধান থাকে। একারণে প্রত্যেক সংজ্ঞা দানকারীর দৃষ্টিভঙ্গি ও সামগ্রীক পরিবর্তনশীল উপাদানগুলোর কারণে এর সংজ্ঞার মধ্যেও পার্থক্য হবে। যেমন পরিপার্শ্বিকতা,বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামরিক,সামাজিক,মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ এবং অভিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে সংজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য হয়।

    উম্মাহর জন্য নেতৃত্ব,দেহের জন্য আত্মার ন্যায়। এটি এমন জিনিস,যা দেহকে নাড়া দেয়, তাতে আনন্দ ও প্রশান্তির অনুভূতি দেয়। এমন জিনিস,যা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে অধিক ব্যাথিত হয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আনন্দ ও উচ্ছাসের অনুভূতি দেয়। তাই উম্মাহর নেতৃত্বই হচ্ছে তার দেহের প্রধান পরিচালক। নেতৃত্বই তাকে আশঙ্কাজনক বিষয় থেকে দূরে থাকার দিকনির্দেশ করে এবং দেহকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ করে। যেন উম্মাহর জীবন সর্বোত্তমভাবে পরিচালিত হয়।

    রাসূল সা: বলেন:
    "ترى المؤمنين في تراحمهم وتوادهم وتعاطفهم كمثل الجسد إذا اشتكى عضوا تداعى له سائر جسده بالسهر والحمى". رواه البخاري في صحيحه
    পরস্পর দয়া,ভালবাসা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে মুমিনদেরকে দেখবে একটি দেহের ন্যায়, যার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে তার জন্য পুরো দেহই অনিদ্রা ও জ্বরে কাটায়। (ইমাম বুখারী রহ: সহীহ বুখারীতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)

    আজ উম্মাহর জন্য স্ব-রাষ্ট্রনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি অঙ্গনে প্রজ্ঞাবান একটি নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। যা প্রতিটি বিষয়কে সঠিক পরিমাণে ও সঠিক স্থানে রাখবে। যেন উম্মাহর সন্তানদের মাঝে শরয়ী শাসনব্যবস্থার প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারে। যা এক শ্রেণীর অজ্ঞদের কর্মকান্ডের কারণে অনেকের কাছেই ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    উম্মাহ প্রতীক্ষা করছে কে তাদেরকে শত্রুদের কবল থেকে এবং উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী তাগুত শাসকদের কবল থেকে তাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিবে। যারা তাদেরকে যুগ যুগ ধরে শাসন করে আসছে। উম্মাহ অনেক বেশি প্রয়োজনবোধ করছে এমন এক নেতৃত্বের, যা তাদের উপর সহনশীল হবে, তাদের প্রতি কোমল হবে,তাদের সাথে নম্রতা ও ভালবাসার আচরণ করবে এবং তাদের প্রতি দয়াশীল হবে আর তাদের শত্রুদের প্রতি হবে কঠোর। যেমন আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন:

    مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
    “মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তার সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে,(কখনও) সিজদায়,আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। তাদের আলামত তাদের চেহারায় পরিষ্ফুট, সিজদার ফলে। এই হল তাদের সেই গুণাবলী,যা তাওরাতে বর্ণিত আছে। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত এই, যেন এক শস্যক্ষেত্র, যা তার কুঁড়ি বের করল, তারপর তাকে শক্ত করল। তারপর তা পুষ্ট হল। তারপর তা নিজ কান্ডের উপর এভাবে সোজা দাঁড়িয়ে গেল যে, তা কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে ফেলে। এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” (আল-ফাত্হ ২৯)

    এমন নেতৃত্ব,যা মুসলমানদের জ্ঞান-বুদ্ধির সম্মান ও মূল্যায়ন করবে;তাকে উপহাসের বস্তু বানাবে না ।
    فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
    “(হে নবী!) তারপর আল্লাহর রহমতই ছিল,যদ্দরুন তাদের প্রতি তুমি কোমল আচরণ করেছ। তুমি যদি রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর হৃদয় হতে,তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর,তাদের জন্য মাগফিরাতের দু’আ কর এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সাথে পরার্শ করতে থাক। অত:পর তুমি যখন (কোন বিষয়ে) মনস্থির করবে,তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন।” (আলে ইমরান:১৫৯)

    সকল মানুষের সাথে কোমল আচরণ করা ইসলামের একটি উন্নত বৈশিষ্ট্য। এমন ব্যক্তিই এই গুণে গুণান্বিত হতে পারে,ঈমান যার হৃদরেয় গভীরে প্রবেশ করেছে,চেতনায় ও কর্মে দৃঢ়ভাবে স্থান করে নিয়েছে। যে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছে যে,কোমলতাই সৌভাগ্য,শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্বের চাবিকাঠি। উম্মাহ আজ কতই না প্রয়োজনবোধ করে এমন একটি নেতৃত্বের, যে তাদের সাথে কোমল আচরণ করবে,তাদেরকে নতুন করে জেগে উঠতে সাহায্য করবে!!

    আবুদ্দারদা রা: এর সূত্রে রাসূল সা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন:
    مَنْ أُعْطِيَ حَظُّهُ مِنَ الرِّفْقِ فَقَدْ أُعْطِيَ حَظُّهُ مِنَ الْخَيْرِ، وَمَنْ حُرِمَ حَظًّهُ مِنَ الرِّفْقِ ، فَقَدْ حُرِمَ حَظُّهُ مِنَ الْخَيْرِ، أَثْقَلُ شَيْءٍ فِي مِيزَانِ الْمُؤْمِنِ، يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حُسْنُ الْخُلُقِ
    “যাকে তার কোমলতার ভাগ দেওয়া হয়েছে, তাকে তার কল্যাণের ভাগ দেওয়া হল। আর যাকে তার কোমলতার ভাগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে তার কল্যাণের ভাগ থেকে বঞ্চিত করা হল। কিয়মাতের দিন মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারি বস্তু হবে তার উত্তম চরিত্র।” (বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও তিরমিযী।)

    ইসলাম আমাদেরকে কোমলতার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করেছে, তার দিকে আহ্বান করেছে ও উৎসাহিত করেছে। ইসলাম আমাদের নিকট বর্ণনা করেছে যে,যে ব্যক্তি কার্যগতভাবেই কল্যাণের প্রেমিক ও তার প্রতি আগ্রহী হয়,কোমলতার প্রভাব ও ফলাফল তাকে সকল কর্মকান্ডে কোমলতা অনুসন্ধান করতে বাধ্য করবে। সুতরাং কোমলতা হল,সকল আমলের সৌন্দর্য্য ও ঔজ্জল্য। যা তার শ্রেষ্ঠত্বের একটি রহস্যও বটে। হযরত: আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা: এর সূত্রে রাসূল সা: থেকে বর্ণিত: إنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيَرْضَاهُ، وَيُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ مَالاَ يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ
    “নিশ্চয়ই আল্লাহ কোমল। তিনি কোমলতাকে ভালবাসেন ও পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার প্রতিদান হিসাবে এমন বিষয় দান করেন,যা কঠোরতার দ্বারা দান করেন না। (বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহ:।)

    আমি পূর্বে মুসলিম নেতৃত্বের গুণাবলীর সম্পর্কে একটি কিতাব লিখেছি। এখানে উক্ত কিতাবে উল্লেখিত গুণগুলোর উপর আরো দুইটি গুণ বর্ণনা করবো। গুণ দু’টি হচ্ছে: ‘বীরত্ব’ ও ‘পরামর্শ করা’। আল্লাহর এই মুখাপেক্ষী বান্দার অভিমত হচ্ছে, এই ন’টি গুণ হল এমন গুণ, যা একজন মুক্তিদাতা নেতার (যদি উপাধিটি সঠিক হয়ে থাকে) মাঝে বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত জরুরী।

    উক্ত গুণগুলো হচ্ছে:

    العلم- الحلم- الحكمة- الحزم- الجود- الخطابة- الشجاعة- الشوري- الصدق

    ইলম, সহনশীলতা, প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, দানশীলতা, বাগ্মিতা, বীরত্ব,পরামর্শ ও সততা।

    যদিও আরো অনেক গুণাবলী রয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি, এগুলো হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই কিতাবের বাকে বাকে এসকল গুণগুলোর স্বতন্ত্র বিশ্লেষণ করবো ইনশাআল্লাহ।

  • #2
    প্রথম গুণ: العلم/ ইলম

    وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
    “আর বল,হে প্রভু! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও”
    ইলম:
    আভিধানিক অর্থঃ- জানা। যেমন: বলা হয়: علم الشيئ يعلمه علما(সে বিষয়টির ইলম অর্জন করেছে বা করবে।) অর্থাৎ সে জেনেছে বা জানবে।

    পারিভাষিক অর্থ:
    ‘কোন জিনিসের প্রকৃত তত্ত্ব জানা’।
    কেউ বলেছেন, ‘জ্ঞাত জিনিসের ব্যাপারে অস্পষ্টতা দূর করা’। আর জাহালত বা অজ্ঞতা হল তার বিপরীত।
    কেউ বলেন, এর কোন সংজ্ঞার প্রয়োজন নেই। কেউ বলেন,‘ইলম এমন একটি প্রোথিত গুণ, যার দ্বারা সামগ্রীক ও একক বিষয়সমূহ উপলব্ধি করা যায়’।

    আমরা সেই ইলমের আলোচনা দিয়ে শুরু করবো,যে ইলমের আলোচনা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তার নবী সা: এর সঙ্গে কথা শুরু করেছেন-
    اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
    “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (আলাক:১)
    অন্য আয়াতে বলেছেন:
    فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
    “তাই জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আর নিজের গুনাহর জন্য এবং মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আল্লাহ তোমার গতিবিধি ও অবস্থানস্থল সম্পর্কে জানেন।” (মুহাম্মদ:১৯)

    হাসান ইবনে ফযল রহ: বলেন: ‘তাই তোমার ইলমের উপর আরো ইলম বৃদ্ধি কর’।
    আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহীর সূচনাই হল ইলম দিয়ে। ইলম হচ্ছে একটি নূর, যার মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। যাতে তাদের জীবন তার সন্তুষ্টি মত পরিচালিত হয়।

    মানুষের ইলম যত বৃদ্ধি পায়,আপন রবের প্রতি,নিজ আত্মার প্রতি এবং স্বীয় দাওয়াত সঠিক ও হক হওয়ার প্রতি তার আস্থা ও বিশ্বাস তত বৃদ্ধি পায় এবং উক্ত দাওয়াত বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়তার সাথে পথ চলার হিম্মতও বৃদ্ধি পায়। যেন সম্ভাব্য সর্বাধিক পরিমাণ বান্দার নিকট আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছে যায়।

    ইলম যদি ব্যাপকভাবে সবার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গুণ বলে গণ্য নাও হয়,তথাপি একজন মুসলিম নেতার জন্য অত্যাবশ্যকীয় গুণগুলোর মধ্যে ইলম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটা অন্যান্য গুণগুলোর সাথেও জড়িত। কেননা কিছু গুণ রয়েছে,যেগুলো ইলম ছাড়া অস্তিত্ত্বেই আসতে পারে না। যেমন সহনশীলতা। এটা ইলমের সাথে পরিমিত হওয়া অনিবার্য। এমনিভাবে দৃঢ়তা ও বীরত্বের গুণদ্বয়ও। এমনিভাবে প্রতিটি গুণই কোনও না কোনভাবে ইলমের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং ইলম হল সকল গুণগুলোর উৎস ও ভিত্তি।

    একজন নেতা এক মুহূর্তের জন্যও এ গুণটি হতে অমুখাপেক্ষী থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে যে স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন এবং যে গুরুদায়িত্ব তাকে দিয়েছেন,সে দায়িত্বের জন্য যতটুকু ইলম প্রয়োজন,ততটুকু ইলম অর্জন করা তার উপর ফরজ। আর এই ইলম অর্জন করা হবে আল্লাহর কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস থেকে। এবং সবশেষে সঠিক উৎস হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচার অনুসন্ধানের মাধ্যমে। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় রাসূল সা: বা সাহাবীদের আমল সম্পর্কে অবগত হওয়া,তাতে চিন্তা করা,অত:পর আমাদের যামানায় তার অনুরূপ ঘটনাবলীকে তার সাথে কিয়াস করার মাধ্যমেও সমাধান লাভ করা যায়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কারণ ইলমের বিষয়টি আরও ব্যাপক। শুধু এগুলোর উপরই ক্ষ্যান্ত থাকা সঠিক নয়। কারণ অনেক সময় আমাদের যামানায় এমন বিষয় সংঘটিত হয়,যার অনুরূপ ঘটনার ক্ষেত্রে রাসূল সা: বা সাহাবাগণের অবস্থান দেখলে মনে হয়,আমাদের যামানায় এর থেকে ভিন্নটা উত্তম।

    স্পষ্ট করার জন্য বলি: কখনো কোন লোক কোন একটি ঘটনায় কঠোর আচরণ অবলম্বন করার পক্ষে রাসূল সা: এর এমন একটি ঘটনা দিয়ে দলিল দিল,যাতে রাসূল সা: কঠোর আচরণ অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু লোকটি উক্ত ঘটনার সময় বোঝেনি। কারণ রাসূল সা: কঠোর আচরণ অবলম্বন করেছিলেন মদীনায় হিজরতের পরে। পক্ষান্তরে মক্কায় থাকাকালে এমন ঘটনার ক্ষেত্রে ‘ক্ষমা ও মার্জনা’ই ছিল তার একমাত্র কথা। এবং সাহাবায়ে কেরামকেও এরই আদেশ দিতেন। আর উক্ত হুকুমটি আমাদের বর্তমান যামানায় আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কারো নিকট অস্পষ্ট নয় যে,বর্তমানে শাসন ও ক্ষমতা অমুসলিমদের হাতে। যা একটা সীমা পর্যন্ত রাসূল সা: ও সাহাবায়ে কেরামের মক্কার অবস্থার সাথে সাদৃশ্য রাখে। রাসূল সা: সে সময় অন্যায়কে বাঁধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করতেন না। আমি যা জানি,তাতে এরকম কোন ঘটনা নেই যে, রাসূল সা: যুদ্ধের ময়দান ছাড়া কোন কাফেরকে হত্যা করেছেন বা শাস্তি দিয়েছেন।

    যাইহোক,মক্কী জীবনে রাসূল সা: শুধু আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন আর ক্ষমা করে যেতেন। অর্থাৎ সে সময় রাসূলুল্লাহ সা: এর একমাত্র কাজ ছিল তার রবের দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, যেহেতু তখন মুসলিমগণ ছিলেন দুর্বল। যাতে কাফেররা রাসূলুল্লাহ সা: এর পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ দলিল পেয়ে যায় এবং পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সা: থেকে তাদের নিকট অপছন্দনীয় বিষয়গুলো দেখলে তার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে না পড়ে। অর্থাৎ তাদের অহংকার ও জুলুমের কারণে যেগুলোকে অপছন্দ করে।
    আমাদের বর্তমান অবস্থাটিও ঠিক অনুরূপ। কেননা বর্তমানে এমন অনেক অমুসলিম রয়েছে, যাদের ইসলামের ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই,চাই পাশ্চাত্যের হোক বা আমাদের সমাজের খৃষ্টানরাই হোক। এমনকি অনেক মুসলিমও এমন রয়েছে। এক্ষেত্রে ইসলামের বিশুদ্ধ নিদর্শনগুলো থেকে যে যত দূরে,তার অজ্ঞতার পরিমাণও সে স্তরের। একারণে এখন যদি ‘নাহি আনিল মুনকার’ করতেই হয়,তাহলে নম্রতা থেকে ধাপে ধাপে কঠোরতার দিকে যেতে হবে। অত:পর এই নম্রতার কথা সমস্ত সৃষ্টির কর্ণকুহরে ও দৃষ্টির সামনে এমনভাবে পৌঁছে দিতে হবে, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সা: যখন মক্কায় মানুষকে দাওয়াত দিয়েছিলেন,তখন নিকট-দূরের প্রতিটি গোত্রই মুশরিকদের প্রতি রাসূল সা: এর ক্ষমা ও মার্জনার বিষয়ে ব্যাপকভাবে জেনে গিয়েছিল।

    কিন্তু এর বিপরীত করলে এই দ্বীনকে বিকৃতভাবে চিত্রায়িত করা হবে। যা বর্তমানে হয়েছেও। ‘সন্ত্রাস ও কট্টরপন্থী’ তকমা গায়ে লেগেছে। এমনকি যখনই তাদের আলোচনা সামনে আসে, তখনই এই চিত্রটি ভেসে উঠে। আর এটা শুধু সেই অজ্ঞতার কারণে,যা-নিজেদেরকে উম্মাহর নেতৃত্বদানের অধিকারী দাবিকারী- কিছু লোককে এমন কাজে লিপ্ত করিয়েছে,যা মানুষকে আল্লাহর দ্বীন ও তার শরীয়ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং এ বিষয়টাকে উপদেশ গ্রহণের দৃষ্টিতে দেখা উচিত। কেননা রাসূলুল্লাহ সা: হুদুদ কায়েম করা ও হত্যাযোগ্য লোকদেরকে হত্যা করার কাজ তখনই শুরু করেছেন,যখন কাফেররা ও অন্য সবাই এই দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ দলিল পেয়ে গিয়েছিল। এমনকি তারা একথাও জেনে গিয়েছিল যে,রাসূলুল্লাহ সা: এর দয়া,তার কঠোরতার উপর প্রবল এবং তার নিকট কঠোরতা থেকে দয়া ও করুণাই অধিক প্রিয়। ফলে তিনি যখন মদীনায় কঠোরতার আচরণ গ্রহণ করলেন,তখন কাফেরদের কোন ছোট প্রমাণও অবশিষ্ট রইল না।
    এমন পরিবেশ তিনি একদিনে বা একরাতে প্রস্তুত করেননি।

    ইমাম সারাখসী রহ: বলেন:
    انْ الْأَمْرَ بِالْجِهَادِ وَبِالْقِتَالِ نَزَلَ مُرَتَّبًا. فَقَدْ كَانَ النَّبِيُّ (صلى الله عليه وسلم) مَأْمُورًا فِي الِابْتِدَاءِ بِتَبْلِيغِ الرِّسَالَةِ وَالْإِعْرَاضِ عَنْ الْمُشْرِكِينَ ...ثُمَّ أَمَرَ بِالْمُجَادَلَةِ بِالْأَحْسَنِ ... ثُمَّ أَذِنَ لَهُمْ فِي الْقِتَالِ ... ثُمَّ أُمِرُوا بِالْقِتَالِ إنْ كَانَتْ الْبِدَايَةُ مِنْهُمْ ... ثُمَّ أُمِرُوا بِالْقِتَالِ بِشَرْطِ انْسِلَاخِ الْأَشْهُرِ الْحُرُمِ ... ثُمَّ أُمِرُوا بِالْقِتَالِ مُطْلَقًا).
    “জিহাদ ও কিতালের আদেশ পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: প্রথমে শুধু রিসালাত পৌঁছানো আর কাফেরদেরকে এড়িয়ে চলতে আদিষ্ট ছিলেন। তারপর উত্তম পন্থায় বিতর্ক করার আদেশ পান। তারপর যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। তারপর যুদ্ধের আদেশ করা হয়,যদি কাফেরদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা হয়। তারপর তাদেরকে হারাম মাস সমূহ অতিক্রম করার শর্তে কিতালের আদেশ দেওয়া হয়। তারপর ব্যাপকভাবে যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়”।

    আমি এ বিষয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত করলাম। কারণ,আপনারা জেনেছেন,আমাদের দেশগুলোতে এমন কর্মকান্ড শুরু হয়েছে,যেগুলোকে ইসলামী মনে করা হয়,অথচ ইসলাম এগুলো থেকে মুক্ত। একারণেই মুসলিম নেতৃত্বের উপর আবশ্যক ছিল সর্বদা ইলম অর্জনের চেষ্টা করা এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে নির্ভরযোগ্য, হেদায়াতপ্রাপ্ত ও সত্যবাদী আলেমদের থেকে পরামর্শ নেওয়া। যেন উম্মাহকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারেন,বিভ্রান্তির গোলকধাঁধা থেকে স্পষ্ট সত্যের আলোতে নিয়ে আসতে পারেন।

    উপরন্তু তাকেএরূপ দলিলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে,যার দ্বারা তিনি তার বিরুদ্ধাবাদী বাতিলপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করতে পারেন। এমনিভাবে তার কর্তব্য হবে,প্রজা / মা’মুরদেরকে (অধীনস্ত) ইলম অর্জনে উৎসাহিত করা,এর জন্য অনেক ইলমী মারকায ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা.. .. ..ইত্যাদি।

    আর শাসক নিজেই তালিবুল ইলমদের ব্যয়ভার বহন করা,তাদের জন্য নিয়মতান্ত্রিক ভাতা ধার্য করা,যা তাদেরকে প্রাত্যহিক জীবনে সহযোগীতা করবে,আলেমদেরকে তাদের মর্যাদা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা,তা’লীমে নিয়োজিতদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করা,বহির্দেশ থেকে আলেমদেরকে আমন্ত্রণ জানানো ইত্যাদি তার অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। যেন এর মাধ্যমে ইলম প্রসার লাভ করে এবং মুসলিম শহরগুলো ইলমের সৌরভে সুরভিত হয়,উন্নতি লাভ করে।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা ও তার রাসূল সা: মুসলিমদেরকে ইলম অন্বেষণ করতে ও আলেমদের অনুসরণ করতে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:
    وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
    “মুসলিমদের পক্ষে এটাও সমীচীন নয় যে, তারা (সর্বদা) সকলে এক সঙ্গে (জিহাদে) বের হয়ে যাবে। একটি অংশ কেন (জিহাদে) বের হয় না,যাতে (যারা জিহাদে যায়নি) তারা দ্বীনের উপলব্ধি অর্জনের চেষ্টা করে এবং সতর্ক করে তাদের কওম (-এর সেই সবলোক)কে, যারা জিহাদে গিয়েছে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে,ফলে তারা (গুনাহ থেকে) সতর্ক থাকবে।” াওবা:১২২)
    আবুদ্দারদা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সা: কে বলতে শুনেছি,
    مَنْ سَلَكَ طَريقا يَبتَغي فيه عِلما سَهل اللّهُ له طَريقا إلى الجَنّة وإنّ الملائِكَةَ لَتَضَعُ أجنِحَتَها لِطالِبِ العِلمِ وإنّ العالِمَ ليَستَغفِر لَهُ مَن في السَماواتِ وَمَن في الأرضِ حَتّى الحيتانُ في الماء. وَفَضلُ العالِمِ على العابِدِ كَفَضلِ القَمَر على سائر الكواكِبِ، إنّ العُلماءَ وَرَثَةُ الأنبياء، إنّ الأنبياءَ لَم يُورِّثوا دينارا ولا دِرهَما، إنّما ورّثوا العِلمَ فَمَن أخَذَ بِهِ أخَذَ بِحَظّ وافِر
    “যে ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে পথ চলে,আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষণকারীদের জন্য তাদের ডানাসমূহ বিছিয়ে দেন। আলিমের জন্য আকাশ ও যমীনের অধিবাসীরা-এমনকি সমুদ্রের মাছও- ক্ষমা প্রার্থনা করে। আবিদের উপর আলিমের শ্রেষ্ঠত্ব হল, তারকারাজীর উপর চন্দ্রের শ্রেষ্ঠত্বের ন্যায়। নিশ্চয়ই নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না; বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী বানান। তাই যে এটা গ্রহণ করল, সে ই পূর্ণ অংশ গ্রহণ করল”। (বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী)

    মুআবিয়া রা: বর্ণনা করেছেন, নবী সা: বলেন: : "من يرد الله به خيراً يفقهه في الدين". “আল্লাহ যার ব্যাপারে কল্যাণ চান,তাকে দ্বীনের বুঝ দান করেন”। (বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী ও মুসলিম)

    ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ: বলেন: “
    এটা প্রমাণ করে,যাকে তিনি দ্বীনের ফিকহ বা বুঝ দান করেননি,তার ব্যাপারে কল্যাণের ইচ্ছা করেননি। আর যাকে দ্বীনের বুঝ দান করেছেন, তার ব্যাপারে কল্যাণের ইচ্ছা করেছেন। তবে তখন ফিকহ দ্বারা উদ্দেশ্য হবে এমন ইলম,যার অনিবার্য ফল হচ্ছে আমল। কিন্তু যদি তার দ্বারা নিছক ইলম উদ্দেশ্য হয়,তখন এটা একথা প্রমাণ করবে না যে,যে দ্বীনি বুঝ অর্জন করেছে,তার ব্যাপারে কল্যাণের ইচ্ছা করা হয়েছে। কারণ তখন কল্যাণের ইচ্ছা করার জন্য দ্বীনি বুঝ থাকা হবে শর্ত। আর প্রথমোক্ত অবস্থায় তা হবে ফল। আল্লাহ ই ভাল জানেন”।

    ইবনে বাত্তাল রহ: বলেন:
    “এর মধ্যে সকল মানুষের উপর আলেমদের শ্রেষ্ঠ হওয়ার এবং অন্য সকল ইলমের উপর দ্বীনি ফিকহ শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। আর এর শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ হল, যেহেতু এটা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করতে,তার আনুগত্যে অটল থাকতে ও তার অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। তাই ইলমের দ্বারাই সমস্ত ইবাদত বিশুদ্ধ ও উপযুক্ত হয়,আর তা না হলে প্রত্যেকের অবস্থানুযায়ী ত্রুটি হতে থাকে। এমনকি কখনো তা গুনায় পরিণত হয়। ইলমের দ্বারা জাতি উন্নতি লাভ করে আর ইলম ছাড়া পতিত হয়। আর উম্মাহর নেতৃবৃন্দই উক্ত ইলমের সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী। রাসূল সা: এক হাদিসে এমনটিই বর্ণনা করেছেন,যা বর্ণনা করেছেন হযরত আবুদ্দারদা রা:,রাসূলুল্লাহ বলেছেন: “নিশ্চয়ই আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ। আর নিশ্চয়ই নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানিয়ে যান না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী বানান। তাই যে তা গ্রহণ করল,সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করল।”

    ইলম অর্জন শুধু শরয়ী ইলম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটা যেকোন কারিগরি,প্রযুক্তিগত, সামরিক ও অন্যান্য ইলমকেও অন্তর্ভূক্ত করে। আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: বলেন: “ইলম অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ”। বর্ণনা করেছেন ইমাম বায়হাকি রহ। ইমাম আল-বানী তার ‘সহীহুল জামে’ কিতাবে এর বিশুদ্ধতা বর্ণনা করেছেন।

    ইমাম বাইহাকী রহ: বলেন: “উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন ইলম,যা কোন সুস্থ মস্তিস্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির অজানা থাকার অবকাশ নেই। অথবা এমন জিনিসের ইলম,যা শুধু তার সামনে উপস্থিত হয়। সে এটা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে জেনে নিবে। অথবা উদ্দেশ্য হচ্ছে,যতক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ লোক এই দায়িত্ব পালন না করে,ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ। আল্লাহই ভাল জানেন।

    ইলম ও আলেমদের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আরও বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: এর নিকট দুই ব্যক্তির আলোচনা করা হল: তাদের একজন আবিদ (শুধু ইবাদতকারী), অপরজন (ইবাদতকারী) আলিম। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, আবিদের উপর আলিমের শ্রেষ্ঠত্ব হল তোমাদের সবচেয়ে নিন্মস্তরের লোকের উপর আমার শ্রেষ্ঠত্বের মত। অত:পর রাসূল সা: বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ এবং আসমান ও যমীনবাসীগণ-এমনকি গর্তের পিপিলিকা ও সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত- ঐ ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, যে মানুষকে কল্যাণ শিক্ষা দেয়।”

    ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ: বলেন: যেহেতু তার প্রদত্ত শিক্ষাটিই তাদের মুক্তি, সৌভাগ্য ও আত্মশুদ্ধির কারণ হবে, একারণে আল্লাহ তা’আলা তাকেও অনুরূপ আমলের সাওয়াব দিবেন। আর তা এভাবে যে- তিনি তার সালাত, ফেরেশতাদের সালাত ও যমীনবাসীদের সালাত থেকে একটি অংশ তার জন্য নির্ধারণ করবেন, যা তার মুক্তি, সৌভাগ্য ও সফলতার কারণ হবে। কারণ যেমনিভাবে মানুষকে কল্যাণ শিক্ষা দাতা আল্লাহর দ্বীন ও তার বিধি-বিধানকে প্রকাশকারী এবং মানুষের নিকট আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর পরিচয় দানকারী, অনুরূপ আল্লাহ তা’আলাও নিজের সালাত, আসমানবাসীদের সালাত ও যমীনবাসীদের সালাত তার জন্য নিয়োজিত করবেন, যার ফলে আসমান ও যমীনবাসীদের মাঝে তার প্রশংসা, সম্মান ও স্তুতি গাওয়া হবে।

    ইমাম বদরুদ্দীন ইবনে জামাআহ রহ: বলেন: জেনে রাখুন! ঐ ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা কিছু হতে পারে না, যার জন্য দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনায় ফেরেশতাগণ ও অন্যান্য মাখলুকগণ নিয়োজিত হন এবং তার জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন।
    একজন নেককার ব্যক্তি বা যার ব্যাপারে সালিহ হওয়ার ধারণা করা হয়,তার থেকে দু’আ নেওয়ার ব্যাপারেই মানুষ প্রতিযোগীতা করে,তাহলে ফেরেশতাদের দু’আর বিষয়টি কত মর্যাদাপূর্ণ!

    ফেরেশতাদের ডানা বিছানোর অর্থ কি.. এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন এর অর্থ হল,তার জন্য বিনয়ী হওয়া। কেউ বলেছেন,তার নিকট আসা ও তার সাথে উপস্থিত হওয়া। কেউ বলেছেন,তাকে সম্মান করা। কেউ বলেছেন,এর অর্থ হল,ফেরেশতাগণ তাকে ডানার উপর বহন করে,অত:পর তাকে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। আর পশুপাখিকে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার বুঝ দেওয়ার কারণ হিসাবে কেউ কেউ বলেছেন: প্রথমত: যেহেতু এগুলোকে সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধার জন্য। উপরন্তু আলেমগণই এগুলোর মধ্যে কোনটি হালাল,কোনটি হারাম,তা বর্ণনা করেন এবং এদের প্রতি দয়া করার ও এদের ক্ষতি না করার উপদেশ দেন।

    ............ইনশাআল্লাহ চলবে।

    Comment


    • #3
      যাজাকুমুল্লাহ আখী, অনেক দিন থেকেই এটার অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন।
      মুমিনদেরকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব
      রোম- ৪৭

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহু খাইর...

        Comment

        Working...
        X