আপনি কি কখনো ইসলামের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করেছেন?
আমি এই নিবন্ধটি শুরু করছি একটি প্রশ্ন দ্বারা,
আমরা কি ইসলামের স্বার্থে কখনো ত্যাগ স্বীকার করেছি?
আমাদের পছন্দনীয় কোন কিছু বিসর্জন দিয়েছি?
আমাদের ভালোবাসার কোন কিছু ছেড়ে দিয়েছি?
ইসলামের জন্য এমন কোন কিছু ত্যাগ করেছি যা আমরা সঞ্চিত করে রেখেছিলাম?
যাহোক, সরল ভাষায় বললে; ইসলামের কল্যাণের জন্য আমরা কি কখনো অর্থ খরচ করেছি যা আপেক্ষিকভাবে কম পরিমাণের না? ধরা যাক, শুক্রবার দিন জুমু’আর সালাত আদায়ের সময় যখন আমাদের সামনে একটি দান বাক্স চলে আসে, আমরা তখন কি করব? কি পরিমাণ অর্থ আমরা ঐ বাক্সে রাখব? ১০ ডলার? ৫ ডলার? ১ ডলার এমনটি ৫০ সেন্ট?
এমন অনেক জিনিসই আমাদের জীবনে রয়েছে যা আমরা মিস করেছি। আমাদের জীবন যা এখনো অনেক তরুণ, আমরা মনে করি যে আমাদের দ্বীনের জন্য ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ, আমরা এই দ্বীনের বাইরের জিনিসের ব্যাপারে ত্যাগ করার দিকে আগ্রহী। যেমনঃ বন্ধুত্বের জন্য ত্যাগ স্বীকার, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার, বন্ধুদের জন্য ত্যাগ স্বীকার, ভালোবাসার মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার এমনকি এমন কোন কিছুর জন্য ত্যাগ স্বীকার যেটা কিনা নিতান্তই কৌতুকপূর্ণ। এইগুলোর জন্য ত্যাগ স্বীকার অনেক সহজ মনে হয়। কিন্তু ইসলামের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করাটাকে অনেক ভারী মনে হয়।
আমাদের এখনো মনে আছে যে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কত উদার ব্যক্তি ছিলেন, তিনি আল্লাহর জন্য নিজের বৎসকেও জবেহ্ করার ইচ্ছা করেছিলেন। একটি সন্তানের জন্য আকুল এক পিতা, যিনি কিনা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই পুত্রকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, এটাই হল সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার।
“নিশ্চয়ই ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শেরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।”(সূরা নাহলঃ১২)
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ বেপরওয়া, প্রশংসার মালিক।”(সূরা মুমতাহিনাঃ৬) হযরত ইবরাহীম (আঃ) আমাদের সামনে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর ত্যাগ স্বীকারের স্পৃহা তেমনই মহান ছিল যেমনটি ছিল ইসলামের প্রতি তাঁর ভালোবাসার স্পৃহা। সেই স্পৃহাটাই আজ আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
আমাদের ভালোবাসা এবং ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা এখনো অনেক ক্ষুদ্র।
অবশ্যই এই ধরনের ত্যাগ স্বীকার কোন প্রকার অনুশীলন ব্যতীত সম্ভব ছিল না। ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাকওয়ার বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। আর তিনি সেগুলোর প্রত্যেকটিতে শতভাগ সফলতার সাথে পাস করেছিলেন। মনে করে দেখুন, কিভাবে ইবরাহীম (আঃ) মরুভূমির নির্জন প্রান্তরে তাঁর পত্নীকে নির্বাসিত করেছিলেন। এগুলোর সবই হল পরীক্ষা যেগুলোর মাধ্যমে ইসলামের স্বার্থে আমাদের ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা নিরূপিত হয়।
❒সময় এসেছে ত্যাগ স্বীকারের প্রশিক্ষণ লাভ করার,
আসুন জেনে নিই একজন সাহাবীর ঘটনা এবং তিনি ইসলামের জন্যে কি ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন সেই ঘটনা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট একজন অতি সাধারণ সাদামাটা একজন লোক কিছু প্রশ্ন নিয়ে উপস্থিত হলেন, তিনি সা’দ আল আসওয়াদ আল সুলুমি নামে পরিচিত, তিনি জানতে চাইলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমিও কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব?”রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর করলেন, “অবশ্যই! অবশ্যই তুমিও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে যদি তুমি একজন বিশ্বাসী হয়ে থাক”। সা’দ অবাক হয়ে বললেন, “কিন্তু আমি! আমি তো বিশ্বাসীদের মাঝেও অতি সাধারণ নগণ্য একজন মানুষ !”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে সা’দ অন্যান্য বিশ্বাসীদের জন্যে যা পুরষ্কার রয়েছে তোমার জন্যেও অনুরুপ রয়েছে,”
“তাহলে কেন কেউই তার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়না?”, সা’দ জানতে চাইলেন। উল্লেখ্য, তিনি এতই সাধারণ একজন লোক ছিলেন যে, সামাজিক তথাকথিত মান মর্যাদাহীনতার কথা তুলে কেউই তাদের মেয়েকে তাঁর সাথে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ইবন আল-ওয়াহাব এর নিকট যাওয়ার উপদেশ দিলেন, তিনি ছিলেন মদীনার সম্ভ্রান্ত নেতাদের একজন যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, এবং তাঁর কন্যা সৌন্দর্যের কারণে অন্যান্য নারীদের চেয়ে বিশিষ্ট ও সুপরিচিত ছিলেন।
নবীজী সা’দ কে এই উপদেশ দিলেন যে তিনি যেন ইবন আল-ওয়াহাব এর নিকট গিয়ে বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব এসেছে যে, ইবন আল-ওয়াহাব যেন সা’দ এর সাথে তাঁর কন্যার বিয়ে দেন।
সা’দ তাঁর নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ইবন আল ওয়াহাব এর বাড়িতে হাজির হলেন, তিনি খুশি এবং উত্তেজনায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলেন। যিনি কিনা মদীনার অতি সাধারণ একজন নগণ্য মানুষ তিনি বিয়ে করবেন একজন সম্ভ্রান্ত নেতার সুন্দরী কন্যাকে! তিনি দরজার কড়া নেড়ে ইবন আল ওয়াহাবকে বললেন, আল্লাহর রাসূল আপনার নিকট আমাকে প্রেরণ করেছেন, আর তিনি অনুরোধ করেছেন আপনি যেন আমার সাথে আপনার কন্যার বিয়ে দেন।
ইবন আল ওয়াহাব সবিস্ময়ে বলে উঠলেন, “তুমি ! তোমার কাছে আমার মেয়ে ! তুমি কি আমার মেয়ের সম্পর্কে কিছুই জাননা ! সে তার সৌন্দর্যের জন্যে বিখ্যাত”এবং তিনি উপদেশ দিলেন সা’দ যেন বাড়ি চলে যায়।যখন সা’দ ভগ্ন মনে হাঁটতে শুরু করলেন, তারপূর্বে ইবন আল ওয়াহাব এর কন্যা তাদের এই কথোপকথন শুনে ফেলেন, তিনি বলেন, “ও আব্বা, থামুন, থামুন ! এটা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে অনুরোধ। আমরা যদি আল্লাহর রাসূল এর অনুরোধ প্রত্যাখান করি তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায় হবে? আমাদের অবস্থান কোথায় হবে যদি আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সচেতনতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই? আমি বলছি আমরা কোথায় থাকব, আমরা এখানেই থাকব আজ আমরা যেখানে আছি !”এবং তিনি সা’দ কে বললেন, “আল্লাহর রাসূলের নিকট যান, তাঁকে বলুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি”।
সা’দ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গেলেন এবং তিনি ছিলেন আনন্দে বিভোর ! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিয়ের মোহরানা ঠিক করলেন ৪০০ দিরহাম। একথা শুনে সা’দ অবাক হয়ে বলেন, “৪০০ দিরহাম ! হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজের চোখে কখনও ৪০০ দিরহাম দেখিনি !”রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন আলী, আব্দুর রহমান ইবন আউফ এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর নিকট যান এবং প্রত্যেককে ২০০ দিরহাম করে দিতে বলেন। তাঁরা প্রত্যেকে ২০০ দিরহামের আরও বেশি করে দিলেন।
নিজের স্ত্রীর নিকট যাওয়ার পূর্বে তিনি একটি বাজারের নিকট থামলেন, তিনি ভাবলেন তাঁর স্ত্রীর জন্যে কিছু উপহার কিনে নিয়ে যাবেন। বাজারে অবস্থান কালেই তিনি শুনলেন, জিহাদের জন্যে আহবান করা হচ্ছে এবং অস্ত্রসহ তৈরি হবার জন্য আহবান করা হচ্ছে। সা’দ যেখানে ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আকাশের দিকে মাথা ঊঁচু করে বললেন, “হে আল্লাহ ! আমি এই দিরহামগুলোর বিনিময়ে এমন কিছু কিনব যা আপনাকে সন্তুষ্ট করবে”। তিনি একটি তরবারী কিনলেন, একটি ঘোড়া কিনলেন এবং আল্লাহর রাসূলের চোখ এড়ানোর জন্যে নিজের মুখমণ্ডল একটি কাপড়ে ঢেকে নিলেন। কারণ তিনি জানতেন, যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখে ফেলেন তাহলে তিনি তাঁকে বাড়ি ফেরত পাঠাবেন কারণ তিনি মাত্রই বিয়ে করেছেন , তিনি সদ্য বিবাহিত।
সাহাবীরা বলাবলি শুরু করলেন, “কে এই লোক, মুখ ঢেকে ঘোড়া ছুটিয়ে জিহাদের জন্য আসছে”? আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাব করলেন, “ছাড় তাকে, সে জিহাদের জন্যে আসছে”। সা’দ সাহসিকতার সাথে বীরদর্পে ঘোড়া ছুটিয়ে ময়দানে মিশে গেলেন, এবং এক পর্যায়ে তাঁর ঘোড়া আহত হয়ে পড়ে গেল, তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, এবারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গাঢ় চামড়ার রং দেখে তাঁকে চিনে ফেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন, “হে সা’দ, এটা কি তুমি?”সাদ বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা মাতার জান আপনার জন্য কুরবান হোক, এটা সাদ”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে সাদ, তোমার জন্যে জান্নাত ছাড়া আর কোন পুরষ্কার নেই”একথা শুনে সাদ লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন এবং দৌড়ে যুদ্ধের ময়দানে হারিয়ে গেলেন। একটু পর শোনা গেল, লোকেরা বলছে সাদ আহত হয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৌড়ে গেলেন সাদকে দেখার জন্যে। তিনি খুঁজতে লাগলেন, তিনি যুদ্ধাহত সাদের মাথা নিজের কোলে রাখলেন, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চোখের অশ্রু সাদের মুখমণ্ডলে পড়তে লাগল, নবীজী কাঁদতে শুরু করলেন। একটু পর তিনি হাসতে শুরু করলেন, এরপর তিনি তাকালেন।
বই অংশ নিচে ...
আমি এই নিবন্ধটি শুরু করছি একটি প্রশ্ন দ্বারা,
আমরা কি ইসলামের স্বার্থে কখনো ত্যাগ স্বীকার করেছি?
আমাদের পছন্দনীয় কোন কিছু বিসর্জন দিয়েছি?
আমাদের ভালোবাসার কোন কিছু ছেড়ে দিয়েছি?
ইসলামের জন্য এমন কোন কিছু ত্যাগ করেছি যা আমরা সঞ্চিত করে রেখেছিলাম?
যাহোক, সরল ভাষায় বললে; ইসলামের কল্যাণের জন্য আমরা কি কখনো অর্থ খরচ করেছি যা আপেক্ষিকভাবে কম পরিমাণের না? ধরা যাক, শুক্রবার দিন জুমু’আর সালাত আদায়ের সময় যখন আমাদের সামনে একটি দান বাক্স চলে আসে, আমরা তখন কি করব? কি পরিমাণ অর্থ আমরা ঐ বাক্সে রাখব? ১০ ডলার? ৫ ডলার? ১ ডলার এমনটি ৫০ সেন্ট?
এমন অনেক জিনিসই আমাদের জীবনে রয়েছে যা আমরা মিস করেছি। আমাদের জীবন যা এখনো অনেক তরুণ, আমরা মনে করি যে আমাদের দ্বীনের জন্য ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ, আমরা এই দ্বীনের বাইরের জিনিসের ব্যাপারে ত্যাগ করার দিকে আগ্রহী। যেমনঃ বন্ধুত্বের জন্য ত্যাগ স্বীকার, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার, বন্ধুদের জন্য ত্যাগ স্বীকার, ভালোবাসার মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার এমনকি এমন কোন কিছুর জন্য ত্যাগ স্বীকার যেটা কিনা নিতান্তই কৌতুকপূর্ণ। এইগুলোর জন্য ত্যাগ স্বীকার অনেক সহজ মনে হয়। কিন্তু ইসলামের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করাটাকে অনেক ভারী মনে হয়।
আমাদের এখনো মনে আছে যে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কত উদার ব্যক্তি ছিলেন, তিনি আল্লাহর জন্য নিজের বৎসকেও জবেহ্ করার ইচ্ছা করেছিলেন। একটি সন্তানের জন্য আকুল এক পিতা, যিনি কিনা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই পুত্রকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, এটাই হল সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার।
“নিশ্চয়ই ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শেরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।”(সূরা নাহলঃ১২)
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ বেপরওয়া, প্রশংসার মালিক।”(সূরা মুমতাহিনাঃ৬) হযরত ইবরাহীম (আঃ) আমাদের সামনে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর ত্যাগ স্বীকারের স্পৃহা তেমনই মহান ছিল যেমনটি ছিল ইসলামের প্রতি তাঁর ভালোবাসার স্পৃহা। সেই স্পৃহাটাই আজ আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
আমাদের ভালোবাসা এবং ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা এখনো অনেক ক্ষুদ্র।
অবশ্যই এই ধরনের ত্যাগ স্বীকার কোন প্রকার অনুশীলন ব্যতীত সম্ভব ছিল না। ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাকওয়ার বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। আর তিনি সেগুলোর প্রত্যেকটিতে শতভাগ সফলতার সাথে পাস করেছিলেন। মনে করে দেখুন, কিভাবে ইবরাহীম (আঃ) মরুভূমির নির্জন প্রান্তরে তাঁর পত্নীকে নির্বাসিত করেছিলেন। এগুলোর সবই হল পরীক্ষা যেগুলোর মাধ্যমে ইসলামের স্বার্থে আমাদের ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা নিরূপিত হয়।
❒সময় এসেছে ত্যাগ স্বীকারের প্রশিক্ষণ লাভ করার,
আসুন জেনে নিই একজন সাহাবীর ঘটনা এবং তিনি ইসলামের জন্যে কি ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন সেই ঘটনা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট একজন অতি সাধারণ সাদামাটা একজন লোক কিছু প্রশ্ন নিয়ে উপস্থিত হলেন, তিনি সা’দ আল আসওয়াদ আল সুলুমি নামে পরিচিত, তিনি জানতে চাইলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমিও কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব?”রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর করলেন, “অবশ্যই! অবশ্যই তুমিও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে যদি তুমি একজন বিশ্বাসী হয়ে থাক”। সা’দ অবাক হয়ে বললেন, “কিন্তু আমি! আমি তো বিশ্বাসীদের মাঝেও অতি সাধারণ নগণ্য একজন মানুষ !”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে সা’দ অন্যান্য বিশ্বাসীদের জন্যে যা পুরষ্কার রয়েছে তোমার জন্যেও অনুরুপ রয়েছে,”
“তাহলে কেন কেউই তার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়না?”, সা’দ জানতে চাইলেন। উল্লেখ্য, তিনি এতই সাধারণ একজন লোক ছিলেন যে, সামাজিক তথাকথিত মান মর্যাদাহীনতার কথা তুলে কেউই তাদের মেয়েকে তাঁর সাথে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ইবন আল-ওয়াহাব এর নিকট যাওয়ার উপদেশ দিলেন, তিনি ছিলেন মদীনার সম্ভ্রান্ত নেতাদের একজন যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, এবং তাঁর কন্যা সৌন্দর্যের কারণে অন্যান্য নারীদের চেয়ে বিশিষ্ট ও সুপরিচিত ছিলেন।
নবীজী সা’দ কে এই উপদেশ দিলেন যে তিনি যেন ইবন আল-ওয়াহাব এর নিকট গিয়ে বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব এসেছে যে, ইবন আল-ওয়াহাব যেন সা’দ এর সাথে তাঁর কন্যার বিয়ে দেন।
সা’দ তাঁর নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ইবন আল ওয়াহাব এর বাড়িতে হাজির হলেন, তিনি খুশি এবং উত্তেজনায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলেন। যিনি কিনা মদীনার অতি সাধারণ একজন নগণ্য মানুষ তিনি বিয়ে করবেন একজন সম্ভ্রান্ত নেতার সুন্দরী কন্যাকে! তিনি দরজার কড়া নেড়ে ইবন আল ওয়াহাবকে বললেন, আল্লাহর রাসূল আপনার নিকট আমাকে প্রেরণ করেছেন, আর তিনি অনুরোধ করেছেন আপনি যেন আমার সাথে আপনার কন্যার বিয়ে দেন।
ইবন আল ওয়াহাব সবিস্ময়ে বলে উঠলেন, “তুমি ! তোমার কাছে আমার মেয়ে ! তুমি কি আমার মেয়ের সম্পর্কে কিছুই জাননা ! সে তার সৌন্দর্যের জন্যে বিখ্যাত”এবং তিনি উপদেশ দিলেন সা’দ যেন বাড়ি চলে যায়।যখন সা’দ ভগ্ন মনে হাঁটতে শুরু করলেন, তারপূর্বে ইবন আল ওয়াহাব এর কন্যা তাদের এই কথোপকথন শুনে ফেলেন, তিনি বলেন, “ও আব্বা, থামুন, থামুন ! এটা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে অনুরোধ। আমরা যদি আল্লাহর রাসূল এর অনুরোধ প্রত্যাখান করি তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায় হবে? আমাদের অবস্থান কোথায় হবে যদি আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সচেতনতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই? আমি বলছি আমরা কোথায় থাকব, আমরা এখানেই থাকব আজ আমরা যেখানে আছি !”এবং তিনি সা’দ কে বললেন, “আল্লাহর রাসূলের নিকট যান, তাঁকে বলুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি”।
সা’দ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গেলেন এবং তিনি ছিলেন আনন্দে বিভোর ! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিয়ের মোহরানা ঠিক করলেন ৪০০ দিরহাম। একথা শুনে সা’দ অবাক হয়ে বলেন, “৪০০ দিরহাম ! হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজের চোখে কখনও ৪০০ দিরহাম দেখিনি !”রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন আলী, আব্দুর রহমান ইবন আউফ এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর নিকট যান এবং প্রত্যেককে ২০০ দিরহাম করে দিতে বলেন। তাঁরা প্রত্যেকে ২০০ দিরহামের আরও বেশি করে দিলেন।
নিজের স্ত্রীর নিকট যাওয়ার পূর্বে তিনি একটি বাজারের নিকট থামলেন, তিনি ভাবলেন তাঁর স্ত্রীর জন্যে কিছু উপহার কিনে নিয়ে যাবেন। বাজারে অবস্থান কালেই তিনি শুনলেন, জিহাদের জন্যে আহবান করা হচ্ছে এবং অস্ত্রসহ তৈরি হবার জন্য আহবান করা হচ্ছে। সা’দ যেখানে ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আকাশের দিকে মাথা ঊঁচু করে বললেন, “হে আল্লাহ ! আমি এই দিরহামগুলোর বিনিময়ে এমন কিছু কিনব যা আপনাকে সন্তুষ্ট করবে”। তিনি একটি তরবারী কিনলেন, একটি ঘোড়া কিনলেন এবং আল্লাহর রাসূলের চোখ এড়ানোর জন্যে নিজের মুখমণ্ডল একটি কাপড়ে ঢেকে নিলেন। কারণ তিনি জানতেন, যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখে ফেলেন তাহলে তিনি তাঁকে বাড়ি ফেরত পাঠাবেন কারণ তিনি মাত্রই বিয়ে করেছেন , তিনি সদ্য বিবাহিত।
সাহাবীরা বলাবলি শুরু করলেন, “কে এই লোক, মুখ ঢেকে ঘোড়া ছুটিয়ে জিহাদের জন্য আসছে”? আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাব করলেন, “ছাড় তাকে, সে জিহাদের জন্যে আসছে”। সা’দ সাহসিকতার সাথে বীরদর্পে ঘোড়া ছুটিয়ে ময়দানে মিশে গেলেন, এবং এক পর্যায়ে তাঁর ঘোড়া আহত হয়ে পড়ে গেল, তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, এবারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর গাঢ় চামড়ার রং দেখে তাঁকে চিনে ফেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন, “হে সা’দ, এটা কি তুমি?”সাদ বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা মাতার জান আপনার জন্য কুরবান হোক, এটা সাদ”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে সাদ, তোমার জন্যে জান্নাত ছাড়া আর কোন পুরষ্কার নেই”একথা শুনে সাদ লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন এবং দৌড়ে যুদ্ধের ময়দানে হারিয়ে গেলেন। একটু পর শোনা গেল, লোকেরা বলছে সাদ আহত হয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৌড়ে গেলেন সাদকে দেখার জন্যে। তিনি খুঁজতে লাগলেন, তিনি যুদ্ধাহত সাদের মাথা নিজের কোলে রাখলেন, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চোখের অশ্রু সাদের মুখমণ্ডলে পড়তে লাগল, নবীজী কাঁদতে শুরু করলেন। একটু পর তিনি হাসতে শুরু করলেন, এরপর তিনি তাকালেন।
বই অংশ নিচে ...
Comment