সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, তিনি ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই। সালাম এবং রহমত বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর।
অত:পর,
নি:সন্দেহে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার নিয়ামাত গুণে শেষ করতে পারবো না, যার অগণিত নিয়ামাত আমাদের ঘিরে রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামাত হচ্ছে, যাকে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা ঈমান দিয়েছেন এবং তাকে সে অনুযায়ী চলার তৌফিক্ব দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাতকে জিহাদ ফি সাবী লিল্লাহ দিয়ে সন্মানীত করেছেন, যদি আমরা উপলব্ধি করি। আর এটা এজন্য যে, আল্লাহ মু‘মিনদের হাতে কাফিরদের শাস্তি দিতে পছন্দ করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবীদের সর্বাক্তক জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার শারী‘আহ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তারা এত বড় কোরবানী করেছেন বলেই আমরা আজ উঁচু গলায় ইসলামের ডাক দিতে পারছি আল্লাহর অনুমতিক্রমে। একমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই আল্লাহ ইসলামের দুশমনদের গোড়া কর্তণ করেছেন।
যাইহোক, আল্লাহর অশেষ রহমতে দুনিয়ার অনেক জায়গায় আবার জিহাদ বুলন্দ হচ্ছে। এবং নিঃসন্দেহে সম-সাময়িক আলিমদের ঐক্যমতে আজ সারা দুনিয়ায় যেখানে জিহাদের ফ্রন্ট (ময়দান) উম্মোচিত হয়েছে বা হয়নি, সে সব জায়গায় জিহাদ প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফারদুল আ‘ইন হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। সে হিসেবে, আল্লাহ কুর’আনে যাদেরকে জিহাদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তারা ব্যতীত সকল মুসলিমের উপর জান এবং মাল দিয়ে তাগুত ও মুরতাদ শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফারদুল আ‘ইন। যেমন আল্লাহ কুর’আনে বলেনঃ
“আর ছলনাকারী বেদুঈন লোকেরা এলো, যাতে তাদের অব্যাহতি লাভ হতে পারে এবং নিবৃত্ত থাকতে পারে তাদেরই যারা আল্লাহ ও রসূলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল। এবার তাদের উপর শীঘ্রই আসবে বেদনাদায়ক আযাব যারা কাফির। দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ্য লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে পবিত্র হবে আল্লাহ ও রসূলের সাথে। নেককারদের উপর অভিযোগের পথ নেই। আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’’ [সূরা আত্-তাওবা (৯):৯০-৯১]
যে পরিস্থিতিতে মুরতাদ শাসকগণ আজ সারা দুনিয়ায় আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শারী‘আহ পরিবর্তন করে নিজের হাতে বানানো আইন দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে শাসন করছে এবং তাদেরকে এই কুফর আইনের উপর চলতে বাধ্য করছে, এমতাবস্থায় কোন মু‘মিনের জন্য ঘরে বসে থাকা শোভনীয় নয়, যদি আমরা আসলেই আল্লাহ এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ভালবাসি। কারণ এমতাবস্থায় কোন শারী‘আহ সঙ্গত ওযর ছাড়া জিহাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ঘরে বসে থাকা নিফাক্বের পরিচয় হিসাবে ক্বুর‘আনে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন:
‘‘আর যখন নাযিল হয় কোন সূরা যে, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর উপর, তাঁর রসূলের সাথে একাত্ন হয়ে; তখন বিদায় কামনা করে তাদের সামর্থ্যবান লোকেরা এবং বলে আমাদের অব্যাহতি দিন, যাতে আমরা (নিস্ক্রিয়ভাবে) বসে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পারি। তারা পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া (সমস্ত রকম ভাল এবং সঠিক হিদায়াত থেকে) হয়েছে তাদের অন্তর সমূহের উপর। বস্ত্তত তারা বোঝে না।’’ [সূরা আত্-তাওবা (৯): ৮৬-৮৭]
আমাদের মুজাহিদ শাইখ্ আনোয়ার আওলাক্বী (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তার মাশ‘আরী আল আশওয়াক নামক সিরিজ লেকচারে এই আয়াতের ব্যাপারে বলেছেন:
‘‘(যার সারমর্ম হচ্ছে) এই সমস্ত মুনাফিক্ব যারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করেছে, তারঁ সাথে উঠা বসা করেছে, তাঁর মুখ থেকে সরাসরি ক্বুরআন এবং হাদীছ শুনেছে, জ্ঞানী সাহাবীদের সাথে সময় অতিবাহিত করেছে যার ফলে তারা আমাদের থেকে শারী‘আর ব্যাপারে বেশী জ্ঞানী ছিল কিন্তু তারপর যখন তারা তাবুক অভিযানে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে না গিয়ে ঘরে বসে থাকবেন বেশী আনন্দিত ছিল, যার কারণে আল্লাহ তাদের ক্বালবে্ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এত জ্ঞানী হওয়া সত্বেও আল্লাহ বলেছেন তারা দ্বীন বোঝে না।’’
তাই প্রত্যেক মু‘মিনের উচিত জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর সামনে নিজের ঈমানের সত্যবাদিতা প্রমাণ করা। এবং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী এবং মিথ্যাবাদী। কোন কোন সময় আল্লাহ মু‘মিনদের জীবনে তাকে আ‘মলে সালিহ করার সুযোগ দেন; যে এই সুযোগের মর্যাদা বুঝে তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পাথেয় বানায় সেই প্রকৃতপক্ষে বুদ্বিমান। এবং এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করার কারণে আল্লাহ তাকে একের পর এক আমলে সালিহ করার তৌফিক্ব দান করেন। নি:সন্দেহে ভাল আ‘মল আল্লাহর তৌফিক্বক্রমে সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে এই আ‘মলে সালিহ করার সুযোগকে যারা মর্যাদা দেয় না এবং একে কাজে লাগায় না, হয়ত তারা পরবর্তীতে আফসোস করবে, এমনও হতে পারে এই সুযোগ তার জীবনে আর দ্বিতীয় বার আসবে না। তাই প্রত্যেক মু‘মিনের উচিত যখন জিহাদের ডাক আসে, আর তখন সে সব দিক দিয়ে স্বশরীরে জিহাদ করতে সক্ষম অথবা মাল দিয়ে অথবা জিহাদের অন্যান্য কাজে সহযোগীতা করতে সক্ষম: প্রথম অবস্থাতেই তার ডাকে সাড়া দেওয়া। অন্যথায় আল্লাহ তাকে পরবর্তীতে আর জিহাদ করার তৌফিক্ব নাও দিতে পারেন।
যেমন আল্লাহ ক্বুর‘আনে বলেন:
‘‘বস্ত্তত: আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের মধ্য থেকে কোন শ্রেণীবিশেষের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং অত:পর তারা তোমার কাছে অভিযানে বেরোবার অনুমতি কামনা করে, তবে তুমি বলো যে, তোমরা কখনো আমার সাথে বেরোবে না এবং আমার পক্ষ হয়ে কোন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে না, তোমরা তো প্রথমবারে বসে থাকা পছন্দ করেছ, কাজেই পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথেই বসে থাক।’’[সূরা আত্-তাওবা(৯):৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাছীর (রহীমাহুল্লাহ) তার তাফসীরে বলেন:
(অধ্যায়) মুনাফিক্বদের জিহাদে যাওয়া থেকে বাঁধা দেয়া হয়েছে: আল্লাহ তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নির্দেশ দেন: (বস্ত্তত: আল্লাহ যদি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এই অভিযান (তাবুক) থেকে (কোন শ্রেণীবিশেষের দিকে) ক্বাতাদার মত অনুযায়ী এখানে (মদীনার) বার জন (মুনাফিক্ব) কে ইঙ্গিত করা হয়েছে,(এবং অত:পর তারা তোমার কাছে অভিযানে বেরোবার অনুমতি কামনা করে) আপনার [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সাথে অন্য যুদ্ধে যাওয়ার জন্য, (তবে তুমি বলো যে, তোমরা কখনো আমার সাথে বেরোবে না এবং আমার পক্ষ হয়ে কোন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে না) এটা (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের জন্য ধমক এবং শাস্তিস্বরুপ। আল্লাহ এই (শাস্তির) সিদ্বান্তের পিছনে বলেন: (তোমরা তো প্রথমবারে বসে থাকা পছন্দ করেছ)
এরকম অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
‘‘আর আমরাও তাদের অন্ত:করণ ও তাদের দৃষ্টি পাল্টে দেব যেমন তারা প্রথমবার এতে ঈমান আনে নি; আর তাদের ছেড়ে দেবো তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত ভাবে ঘুরে বেড়াতে।’’ [সূরা আন’আম(৬):১১০]
একটি মন্দ কর্মের শাস্তি স্বরুপ কাউকে অন্য একটি মন্দ কর্মের দিকে ধাবিত করা হয়। একই ভাবে একটি আমলে সালিহের পুরস্কার স্বরুপ তাকে অন্য একটি আ‘মলে সালিহের প্রতি ধাবিত করা হয় ……. আল্লাহ পরবর্তিতে বলেনঃ
(কাজেই পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথেই বসে থাক) ইবনে আববাস (রদিআল্লাহু আনহু) এর মত অনুযায়ী এখানে ঐসব লোকদের ইঙ্গিত করা হয়েছে যারা (তাবুক) অভিযানে না গিয়ে ঘরে বসে ছিল। Tafsir Ibn Kathir (abridged), Darussalam Vol :4
আমাদের প্রিয় মুজাহিদ শাইখ আনোয়ার আওলাক্বী তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী: মদীনা পার্ট-২ লেকচার সিরিজে কা‘ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) এর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাবুক অভিযানে অংশ গ্রহন না করার পিছনে বুখারী শরীফে যে বিখ্যাত হাদীছ স্বয়ং ক’াব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন তার উপর বিশেষ মনোযোগ আকর্ষন করেছেন এবং বলেছেনঃ
‘‘ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যুম (রহীমাহুল্লাহ) এই হাদীছ থেকে আমাদের জন্য কিছু শিক্ষনীয় বিষয় বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছেঃ আল্লাহ যখন কারো জন্য কোন আমলে সালিহ করার সুযোগ খুলে দেন তখন তার উচিত দেরী না করে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। প্রিয় ভাই বোনেরা কোন কোন সময় আল্লাহ আপনাদের জীবনে আমলে সালিহ করার সুযোগ খুলে দেন। এই সুযোগ আসে আবার চলে যায়। কিছু সময় এই সুযোগ ভাল কিছু নিয়ে চলে যায়। যদি আপনারা এই সুযোগের সদ্বব্যবহার না করেন, তাহলে হতে পারে আপনারা সারা জীবনের জন্য এটা হারাবেন।
কা’ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) এর জন্য তাবুক অভিযানে অংশ গ্রহণের সুযোগ খোলা হয়েছিল কিন্তু তিনি তা হারিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে যেটা তিনি (কা’ব) স্বয়ং বলেছেনঃ ‘‘হায় আফসোস! আমি মনে করেছি আমি (তাবুক অভিযানের) সব প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করতে পারব’’। তাই জিহাদে অংশ গ্রহণ থেকে পিছনে থাকবেন না, এই ভেবে যে আমি তো যেতেই পারব। তাই আল্লাহ আপনার জন্য যে সুযোগ খুলে দিয়েছেন তার সদ্ধব্যবহার করুন এবং কোন কোন সময় এই সুযোগের সদ্বব্যবহার না করার পরিণতি অনেক ভয়াবহ হতে পারে, যেমন আল্লাহ বলেন:
‘‘ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ ও রসূলের প্রতি সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন তাতে যা তোমাদের জীবন দান করে। আর জানো যে আল্লাহ মানুষের ও তার অন্ত:করণের মাঝখানে বিরাজ করছেন; আর নি:সন্দেহ তিনি – তাঁরই কাছে তোমাদের একত্রিত করা হবে।’’[সূরা আনফাল(৬): ২৪]
আল্লাহ আপনাকে পরবর্তীতে (জিহাদে) অংশগ্রহণ করার তৌফিক্ব না দিয়ে আপনার এবং আপনার ক্বলবে্র মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেন। তাই যে সুযোগ আপনার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে তার সদ্বব্যবহার করুন এবং (জিহাদ থেকে) পিছনে থাকবেন না।
আল্লাহ সূরা আনআ‘মে বলেন:
‘‘আর আমরাও তাদের অন্ত:করণ ও তাদের দৃষ্টি পাল্টে দেব যেমন তারা প্রথমবার এতে ঈমান আনে নি; আর তাদের ছেড়ে দেবো তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত ভাবে ঘুরে বেড়াতে।’’[সূরা আন’আম(৬):১১০]
তারা প্রথমবারে (ঈমান আনতে) প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই আল্লাহ তাদের ক্বলব্ এবং চোখ উল্টিয়ে দিয়েছেন, তাই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া‘লা অন্য আয়াতে বলেন:
‘‘আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে হিদায়াত করার পর পথভ্রষ্ট করে দেন, যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেসব বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দেন, যা হতে তারা বেঁচে থাকবে; নি:সন্দেহে আল্লাহ সব- কিছুতে সর্বজ্ঞাতা।’’[সূরা আত্-তাওবা(৯):১১৫]
আল্লাহ তাদের কাছে স্পষ্ট করেছেন তাদের কি পরিত্যাগ করা উচিত। আল্লাহ তাদের সৎ আমল করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাই আল্লাহ (হিদায়াতের পর) তাদের পথভ্রষ্ট করেছেন।
(ইবনুল ক্বইয়্যুম থেকে বর্ণিত) পরবর্তী শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে: তাবুক অভিযান থেকে শুধুমাত্র তারাই রয়ে গিয়েছিল যারা মুনাফিক্ব, জিহাদ করতে অসমর্থ (অসুস্থ, পঙ্গু ইত্যাদি) এবং যাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় থাকার জন্য নিয়োগ করেছেন। তাই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ না করা নিফাক্বের পরিচয় হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে।’’
(শাইখ আনোয়ার আওলাক্বীর বক্তব্য শেষ)
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এজন্য যে, কা‘ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) এর তাবুকে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা, এজন্য তাকে কত বড় খেসারত দিতে হয়েছে এবং এ ঘটনার উপর কুর‘আনের আয়াতও [সূরা আত্-তাওবা(৯):১১৬-১১৭] আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা কি জানি, কা‘ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) কত বড় সাহাবী ছিলেন? তিনি হচ্ছেন একজন বড় আলিম সাহাবী, যিনি বদর ছাড়া সব যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন, এমনকি বাইয়াতে আ‘কাবায়ও। যে বাইয়াতকে সাহাবীরা বদর যুদ্ধ থেকেও বেশী ফযীলতপূর্ণ মনে করতেন। তাও বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পিছনে তার সঙ্গত কারণ ছিল। তাই ক‘াব ইবনে মালিকের যদি শুধু একটি অভিযানে অংশগ্রহণ না করার জন্য এত বড় খেসারত দিতে হয়েছে, যার বর্ণনা কা‘ব (রদিআল্লাহু আনহু) স্বয়ং দিয়েছেন এবং ক্বুর‘আনেও বর্ণিত হয়েছে; তাহলে আমাদের অবস্থা কি, যারা এখনও জিহাদ থেকে পিছনে রয়েছি, এমন কি জিহাদে কোন অংশগ্রহণও নেই; কোন শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযর ছাড়া। কিসের উপর ভিত্তি করে আমরা নিশ্চিন্ত বসে আছি?
আর একটি বিষয় হচ্ছে, তখন তো কা’ব ইবনে মালিকের তওবা কবুল করে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যার কারণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আল্লাহ কা’ব (রদিআল্লাহু আনহু) এর তওবা কবুল করেছেন। এমন কি সত্য কথা বলতে কি; এ ঘটনার পর কা’ব (রদিআল্লাহু আনহু) এর মর্যাদা সাহাবীদের মাঝে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের কারও অবস্থার উপর এখন তো আর অহী অবর্তীর্ণ হবে না, তাই কেউ যদি আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেক দূরে সরেও যায়, তাহলে কিভাবে বুঝবো? তাই ক্বা’বের এই ঘটনার পর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ যে শিক্ষা নিয়েছেন এবং সতর্ক হয়েছেন, তার থেকেও বেশী সতর্ক আমাদের হওয়া উচিত, যেন আমরা এত বড় বিপর্যয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পরি। আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন। কারণ কা‘বের এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে পূর্ববর্তী এবং বর্তমান যুগের আলিমদের অনেক কিতাব এবং আলোচনা রয়েছে। প্রবন্ধ ছোট না করার ইচ্ছা থাকলে, আমি সেখান থেকে কিছু এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে শাইখ ওসামা বিন লাদেনের লিখিত কিতান ‘‘দারসে হাদীছে ক্বা’ব (রদিআল্লাহু আনহু) ’’।
তাই আমি ভাই-বোনদের বলব, বুখারী শরীফ (Vol.5, Book 59, Hadith 702, Riyad-us- Saliheen Hadith:21) থেকে স্বয়ং ক্বা’ব ইবনে মালিকের জবানী থেকে এই হাদীছ পড়তে নয়, বরং পর্যবেক্ষণ করে নিজ নিজ অবস্থার হিসাব নিতে, আল্লাহই একমাত্র তেŠফীক্ব দাতা।
তাই আমি বলছি, আমরা যদি, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাব, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিহাদ থেকে কাউকে অব্যাহতি দেন নি, না আলিম সাহাবীদেরকে, না ধনী সাহাবীদেরকে, না গরীব সাহাবীদেরকে, না তখনকার গোত্রপতী সাহাবীদেরকে, না তখনকার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সাহাবীদেরকে; আর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনেই রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তবে যদি জিহাদের বা জামা‘আতের আমির কাউকে কোন বিশেষ কাজে নিয়োজিত করেন, তবে তা ভিন্ন কথা। যেমন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রদিআল্লাহু আনহু) কে তাবুক অভিযানের সময় মদীনায় নিয়োগ করেছেন, এটা আলী (রদিআল্লাহু আনহু) এর কোন ব্যক্তিগত অভিমত ছিল না, তিনি তাবুক অভিযানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যাওয়ার জন্য আকুল ছিলেন।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেকে আমিরের সামনে পেশ করা, জিহাদের আমির তার অবস্থা বুঝে তাকে তার উপযু্ক্ত জায়গায় কাজ করার জন্য নিয়োগ করবেন। যেমন খুরাসানের বর্তমান মুজাহিদদের আমির আবু আবদুল্লাহ আতিয়া আল্লাহ আল-লিবিব (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) একটি লিখিত প্রবন্ধে বলেন:
‘‘সেজন্য এখন আমাদের জন্য জিহাদ ফারদুল আ‘ইন বলতে আমরা যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হল: প্রত্যেক মুসলিম তার সামর্থ অনুযায়ী এবং যেটা তার জন্য উপযুক্ত ও যেটা তাকে করতে বলা হয়েছে, সেভাবে (জিহাদের) কাজ করবে।
এবং অবশেষে শাইখ্ আবদুল্লাহ আয্যাম (রহীমাহুল্লাহ) এর ‘‘Join The Caravan’’ কিতাব থেকে নকল করে যেটা আমি বার বার বলেছি যে, যে তার জান এবং প্রস্ত্ততি কোরবানী করে জিহাদ এবং মুজাহিদীনদের কাফিলায় যোগ দিয়েছে এবং তার কথাকে আমলে পরিণত করেছে এই বলে যে:
‘‘এখানে আমি মুসলিমদের একজন তীর (অর্থাৎ মুসলিম আর্মিদের সাথে জিহাদ করতে প্রস্ত্তত) হিসাবে হাজির আছি, তাই মুসলিমদের আমির আমাকে যেখানে ইচ্ছা (জিহাদের) কাজে লাগাক।’’
তাই আমি উদাহরণ স্বরূপ বলছি; ওমুক এবং ওমুক চেচ্নিয়ায় জান, কারণ সেখানে ওমুকের প্রয়োজন এবং তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব। এবং ওমুক -ওমুক (জিহাদের) ওমুক জায়গায় যান এবং ওমুক আপনার নিজ জায়গায় অবস্থান করে (জিহাদের জন্য) মাল (অর্থ) সংগ্রহ করুন, ব্যবসা করুন, (দ্বীনের জন্য) লিখুন, বলুন, দাওয়া দিন, মিডিয়ার কাজ করুন অথবা জ্ঞান অর্জন করতে থাকুন এবং ওমুক ও ওমুক ওমুক -ওমুক কাজ করুন। তাই বুঝা গেল যার জন্য জিহাদের আমিরের সাথে যোগাযোগ সম্ভব, যাতে করা তারা (জিহাদের আমিরগণ) জানতে পারেন তার জন্য (দ্বীনের) কোন কাজ উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয়, এগুলো সবই সম্পাদিত হবে ঈমানের সাথে, সত্যবাদীতার সাথে, ইখলাছের সাথে।
যারা এটা করতে সক্ষম নয়; যাদের সংখ্যাই বেশী তাদের সাধারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আগানো উচিৎ এবং যতটুকু সম্ভব (আল্লাহর রাস্তায়) চেষ্টা-সাধনা করা উচিৎ। এগুলোর জন্য আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ তাক্বওয়া জরুরী। প্রয়োজনে জিহাদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী, সত্যবাদী এবং সালিহ্ লোকদের সাথে পরামর্শ করুন। আল্লাহ তাদের হিদায়াত এবং সফলতা দান করুন।
ইনশা‘আল্লাহ এভাবে তারা তাদের (জিহাদের) দায়িত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে পারবে এবং নিজেদের (জিহাদের জন্য) প্রস্ত্তত করতে পারবে। আল্লাহর কাছে শুধু তাক্বওয়াই গ্রহণযোগ্য। সেজন্য সত্য কথা বলতে কি; এই সময়ে জিহাদ করার জন্য পিতা-মাতার কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। সব কিছুর ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জ্ঞানী এবং নেই কোন শক্তি, নেই কোন ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া।’’ (আবু আবদুল্লাহ আতিয়া আল্লাহ আল-লিবিবর বক্তব্য শেষ)
তাই কেউ যদি জিহাদের জন্য শুধু মাল খরচ করে, এটা তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য যতক্ষণ সে জান দিয়ে জিহাদ না করতে পারে; কোন শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযরের কারণে, অনুরুপভাবে যারা জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছে তাদেরও মাল খরচ করতে হবে সামর্থ অনুযায়ী। আর কেউ শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযরের কারণে যদি জান এবং মাল কোন টাই দিতে না পারে, তাহলে তার উচিত জিহাদ এবং দাওয়ার কাজে সার্বিক সহযোগীতার চেষ্টা করা। (এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে কেউ আনোয়ার আল আওলাকীর মাশ‘আরী আল আশওয়াক সিরিজ লেকচার শুনতে পারেন এবং তারই লিখা কিতাব ‘‘ 44 Ways to Serve & Parcipate in Jihaad’’ পড়তে পারেন) আর প্রকৃত পক্ষে সব কিছুই নির্ভর করে নিয়্যত এবং ইখলাছের উপর। কেউ যদি শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযরের কারণে জিহাদ না করতে পারেন, তাহলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট এবং ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তার জন্য রাস্তা খুলে দিবেন। এর জন্য তাক্বওয়া, সবর, তাওয়াক্কুল এবং ইস্তিক্বামাত একান্ত জরুরী।
কারণ এগুলো এজন্যই বলছি যে, সম্প্রতি জিহাদের হুকুমের ব্যাপারে অনেকের মধ্যে কিছু অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা গেছে। এবং হয়ত এ ব্যাপারে আমাদের কিছু অবহেলাও রয়েছে। একটি বিষয় সকলের ক্বলবে গাঁথা উচিত যে, আল্লাহ হচ্ছেন আস-সামাদ, তিনি কোন কজেই আমাদের উপর মুখাপেক্ষী নন, যেটা আল্লাহ ক্বুর’আনে স্পষ্টভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘোষণা করেছেন, বরং সব সময়, সব কাজে আমরাই তাঁর কাছে মুখাপেক্ষী। তাই কেউ যদি আল্লাহর রাস্তায় জান এবং মাল দেয়, এটা তার নিজের জন্যই, এতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কোন মুখাপেক্ষীতা বা প্রয়োজন নেই। তিনি হচ্ছেন আশ-শাকুর; যিনি বান্দাকে আমলে সালিহ করার তৌফীক্ব দান করেন এবং তিনি অতি অল্প আমলের জন্য কাউকে জান্নাতে অতি উচ্চ অবস্থান দান করেন। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য, নতুবা আমাদের সকল প্রচেষ্টা তো অতি সামান্যই, যদি আমরা আল্লাহর রাস্তার নিহতও হই।
আর যদি কেউ জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা তাদেরকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে নিয়ে আসতে সক্ষম। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন হতে ফিরে যায়, তবে (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই।) কেননা আল্লাহ সত্বরই (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুসলিমদের প্রতি মেহেরবান থাকবে, কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন বস্ত্তত: আল্লাহ প্রাচুর্যদানকারী, মহাজ্ঞানী। ’’[সূরা মা’য়িদা(৫): ৫৪]
তাই আমি বিশেষ করে ঐ সমস্ত ভাই এবং বোনদের বলব; যাদেরকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করে; তাদের সামর্থ অনুযায়ী। যদি তারা আল্লাহ রাস্তায় জান দিয়ে জিহাদ না করতে পারে বা করেও। কেননা জিহাদের জন্য প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশী মালের প্রয়োজন হয়। কেননা মুজাহিদদের সামনে এমনও অনেক সময় এসেছে যে, তারা অর্থের অভাবে কাফিরদের উপর হামলা করতে পারেনি এবং অনেক ক্ষেত্রে অর্থের অভাবে অনেক অসমর্থতাও সামনে এসেছে। যেমন খুরাসানের বর্তমান মুজাহিদদের আমির আবু আবদুল্লাহ আতিয়া আল্লাহ আল-লিবিব (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তার একই প্রবন্ধে বর্তমানে খুরাসানে জিহাদ পরিচালনার ব্যাপারে কিছু সমস্যা আলোচনা করার পর বলেছেন:
‘‘যেটা উম্মাহর ধনী ব্যক্তিদের বড় অংকের আর্থিক সহযোগীতা না করার কারণে সংঘটিত হয়েছে এবং তাদেরও অবহেলা এর সাথে জড়িত, যাদের দক্ষতার সাথে উম্মাহ পরিচালনার ক্ষমতা রয়েছে এবং যাদের কোন বিশেষ কাজে দক্ষতা রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাদের বিশেষ দক্ষতার কারণে অন্যান্যদের থেকে পৃথক করেছেন।
তাই আমাদেরকে মাল এবং দক্ষ ব্যক্তি দিয়ে সাহায্য করুন এবং আপনারা দেখতে পাবেন কত জিহাদের ফ্রন্ট (ময়দান) এবং ট্রেনিং ক্যাম্প আমরা খুলি এবং আল্লাহর সাহায্যে তাঁর শত্রুদের কি অবস্থা করি। শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা সাহায্য চাই। আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমাদের জন্য উত্তম জিম্মাদার।’’
আর এজন্যই ক্বুর’আনের প্রায় সব জায়গায় যেখানে জান দিয়ে জিহাদের কথা এসেছে সেখানে মালের কথাও এসেছে। এর প্রয়োজনীয়তা আমার মত অক্ষম মুসলিমের আর বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। এবং যেসব মালদার ভাই-বোনদের এখন সুযোগ রয়েছে কোন মুজাহিদ পরিবারকে সাহায্য করা বা কোন মুজাহিদ বন্দীকে সাহায্য করা বা তার পরিবারকে সাহায্য করা বা যেসব বোনদের স্বামী আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে গেছে তাদের সাহায্য করা, আপনারা কি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদীছ শুনেছেন?
‘‘যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে না, অথবা কোন মুজাহিদকে (জিহাদের সরঞ্জামাদি বা অর্থ দিয়ে) তৈরি করে না, অথবা কোন মুজাহিদের রেখে যাওয়া পরিবারের খোঁজ খবর রাখে না (বা দেখাশোনা করে না), আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামাতের আগে অকস্মাত আযাব দিয়ে শাস্তি দিবেন’’।[সহীহ আবূ দাউদ]
শাইখ্ আবু বাসীর (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) এই হাদীছের ব্যাপারে বলেন:
‘‘তাই কোন মু’মিনের জন্য উল্লেখিত তিন শ্রেণী ব্যতীত অন্য কোন শ্রেণীতে শামিল হওয়া উচিত নয়: হয় সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, অথবা কোন মুজাহিদের রেখে যাওয়া পরিবারের খোঁজ খবর রাখবে (বা দেখাশোনা করবে) অথবা কোন মুজাহিদকে আল্লাহর রাস্তায় তৈরি করবে; অন্যথায় সে তার উপর ক্বিয়ামাতের পূর্বেই(আল্লাহর) আযাব আসার অপেক্ষা করুক; আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না এই আযাবের বিষয়বস্তু এবং প্রকৃতি কিরূপ হবে।’’
কারণ এখানে শুধু আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ বা কোন মুজাহিদ পরিবারকে সাহায্য করাই মুখ্য বিষয় নয়, বরং এর সাথে এক পুরা মজবুত জিহাদ প্রক্রিয়া জড়িত। একজন মুজাহিদ যখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে যায়; সে যখন দেখে যে, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহতও হই, তাহলে পিছনে আমার সেইসব আন্তরিক প্রিয় ভাই-বোনেরা রয়েছে, যারা আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারকে শুধু আর্থিক সহযোগীতা বা দেখা শোনাই নয়, বরং তাকওয়া, সবর এবং ইস্তিক্বামাতের সবকও শিখাবে। এমনকি প্রয়োজনে শহীদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আল্লাহর দিকে দাওয়াহও দেয়ার চেষ্টা করবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তাহলে একজন মুজাহিদ আল্লাহর রাস্তায় আন্তরিক ভাবে তার জান কোরবান করতে দ্বিধাবোধ করবে। আমরা কি এটা ভেবে দেখেছি!
আমাদের মুজাহিদ শাইখ আনোয়ার আল আওলাক্বী (আল্লাহ তাকে হিফাযাত করুন) তার এক লেকচারে আফসোস করে বলেছেনঃ
‘‘ইয়ামানের এক ভাই আমাকে বলেছেন, কোন এক জন বোনের স্বামী জিহাদে শহীদ হওয়ার পর, সেই বোন আর্থিক অভাবের সম্মুখীন হন, এমনকি সেই বোন ঈদের দিন মানুষের কাছে তার বাচ্চাদের ঈদের জন্য পুরানা জামা-কাপড় তালাশ করছে। ’’
আল্লাহু আকবার! হায় আফসোস আমাদের, আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার সামনে কি জবাব দেব? আমাদের কি অশ্রুসিক্ত হচ্ছে না! রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী এবং এইসব ভাইদের রক্তের বিনিময়েই তো আজ আমাদের কাছে ইসলাম এসেছে।
কেননা পূর্বেই বলেছি, আল্লাহ আপনাকে আজ আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করার সুযোগ দিয়েছেন, হয়ত এই সুযোগ সব সময় থাকবে না, হয়ত আর আসবেও না। কেননা কত সময় আছে যে, আমরা আল্লাহর কাছে দো’আ করিঃ হে আল্লাহ আমাকে আপনার রাস্তায় জান এবং মাল দিয়ে জিহাদ করার তৌফিক্ব দ্বান করুন; আর যখন আল্লাহ আমাদের দো’আ ক্ববুল করেন এবং আর আমাদের সামনে এর সুযোগ খুলে দেন, তখন যদি আমরা দ্রুততা এবং আন্তরিকতার সাথে সাড়া না দেই; তখন কি আমাদের সূরা তাওবার এই আয়াত জানা নেই!
‘‘আর তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে (প্রচুর সম্পদ) দান করেন, তবে আমরা অবশ্যই খুব দান-খয়রাত করবো এবং সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো। কার্যত: যখন আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে (প্রচুর সম্পদ) দান করলেন, তখন তারা তাতে কার্পণ্য করতে লাগলো এবং (আনুগত্য করা হতে) তারা গোঁড়ামীর সাথেই বিমুখতা অবলম্বন করলো। সুতরাং আল্লাহ তাদের শাস্তি স্বরুপ তাদের অন্তরসমূহে নিফাক্ব ঢেলে দিলেন, যা আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার দিন পর্যন্ত থাকবে, এই কারণে যে, তারা আল্লাহর সাথে নিজেদের ওয়াদার খিলাফ করেছে, আর এই কারণে যে, তারা (পূর্ব হতেই) মিথ্যা বলছিল।’’[সূরা আত্-তাওবা(৯): ৭৫-৭৭ ]
এখন সময় এসেছে কথাকে আ’মলে পরিণত করার. . . . . . . . . . . . . . . .
আমি আল্লাহর কাছে দো’আ করি, তিনি যেন আমাদের ভাই-বোনদের সিরাতুল মুস্তাক্বিমের উপর দৃঢ় রাখেন, আমাদেরকে নাবী, সিদ্দীক্ব, সালিহীন এবং শুহাদাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আমীন!
অত:পর,
নি:সন্দেহে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার নিয়ামাত গুণে শেষ করতে পারবো না, যার অগণিত নিয়ামাত আমাদের ঘিরে রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামাত হচ্ছে, যাকে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা ঈমান দিয়েছেন এবং তাকে সে অনুযায়ী চলার তৌফিক্ব দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাতকে জিহাদ ফি সাবী লিল্লাহ দিয়ে সন্মানীত করেছেন, যদি আমরা উপলব্ধি করি। আর এটা এজন্য যে, আল্লাহ মু‘মিনদের হাতে কাফিরদের শাস্তি দিতে পছন্দ করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবীদের সর্বাক্তক জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার শারী‘আহ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তারা এত বড় কোরবানী করেছেন বলেই আমরা আজ উঁচু গলায় ইসলামের ডাক দিতে পারছি আল্লাহর অনুমতিক্রমে। একমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই আল্লাহ ইসলামের দুশমনদের গোড়া কর্তণ করেছেন।
যাইহোক, আল্লাহর অশেষ রহমতে দুনিয়ার অনেক জায়গায় আবার জিহাদ বুলন্দ হচ্ছে। এবং নিঃসন্দেহে সম-সাময়িক আলিমদের ঐক্যমতে আজ সারা দুনিয়ায় যেখানে জিহাদের ফ্রন্ট (ময়দান) উম্মোচিত হয়েছে বা হয়নি, সে সব জায়গায় জিহাদ প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফারদুল আ‘ইন হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। সে হিসেবে, আল্লাহ কুর’আনে যাদেরকে জিহাদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তারা ব্যতীত সকল মুসলিমের উপর জান এবং মাল দিয়ে তাগুত ও মুরতাদ শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফারদুল আ‘ইন। যেমন আল্লাহ কুর’আনে বলেনঃ
“আর ছলনাকারী বেদুঈন লোকেরা এলো, যাতে তাদের অব্যাহতি লাভ হতে পারে এবং নিবৃত্ত থাকতে পারে তাদেরই যারা আল্লাহ ও রসূলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল। এবার তাদের উপর শীঘ্রই আসবে বেদনাদায়ক আযাব যারা কাফির। দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ্য লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে পবিত্র হবে আল্লাহ ও রসূলের সাথে। নেককারদের উপর অভিযোগের পথ নেই। আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’’ [সূরা আত্-তাওবা (৯):৯০-৯১]
যে পরিস্থিতিতে মুরতাদ শাসকগণ আজ সারা দুনিয়ায় আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শারী‘আহ পরিবর্তন করে নিজের হাতে বানানো আইন দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে শাসন করছে এবং তাদেরকে এই কুফর আইনের উপর চলতে বাধ্য করছে, এমতাবস্থায় কোন মু‘মিনের জন্য ঘরে বসে থাকা শোভনীয় নয়, যদি আমরা আসলেই আল্লাহ এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ভালবাসি। কারণ এমতাবস্থায় কোন শারী‘আহ সঙ্গত ওযর ছাড়া জিহাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ঘরে বসে থাকা নিফাক্বের পরিচয় হিসাবে ক্বুর‘আনে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন:
‘‘আর যখন নাযিল হয় কোন সূরা যে, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর উপর, তাঁর রসূলের সাথে একাত্ন হয়ে; তখন বিদায় কামনা করে তাদের সামর্থ্যবান লোকেরা এবং বলে আমাদের অব্যাহতি দিন, যাতে আমরা (নিস্ক্রিয়ভাবে) বসে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পারি। তারা পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া (সমস্ত রকম ভাল এবং সঠিক হিদায়াত থেকে) হয়েছে তাদের অন্তর সমূহের উপর। বস্ত্তত তারা বোঝে না।’’ [সূরা আত্-তাওবা (৯): ৮৬-৮৭]
আমাদের মুজাহিদ শাইখ্ আনোয়ার আওলাক্বী (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তার মাশ‘আরী আল আশওয়াক নামক সিরিজ লেকচারে এই আয়াতের ব্যাপারে বলেছেন:
‘‘(যার সারমর্ম হচ্ছে) এই সমস্ত মুনাফিক্ব যারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করেছে, তারঁ সাথে উঠা বসা করেছে, তাঁর মুখ থেকে সরাসরি ক্বুরআন এবং হাদীছ শুনেছে, জ্ঞানী সাহাবীদের সাথে সময় অতিবাহিত করেছে যার ফলে তারা আমাদের থেকে শারী‘আর ব্যাপারে বেশী জ্ঞানী ছিল কিন্তু তারপর যখন তারা তাবুক অভিযানে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে না গিয়ে ঘরে বসে থাকবেন বেশী আনন্দিত ছিল, যার কারণে আল্লাহ তাদের ক্বালবে্ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এত জ্ঞানী হওয়া সত্বেও আল্লাহ বলেছেন তারা দ্বীন বোঝে না।’’
তাই প্রত্যেক মু‘মিনের উচিত জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর সামনে নিজের ঈমানের সত্যবাদিতা প্রমাণ করা। এবং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন ঈমানের দাবিতে কারা সত্যবাদী এবং মিথ্যাবাদী। কোন কোন সময় আল্লাহ মু‘মিনদের জীবনে তাকে আ‘মলে সালিহ করার সুযোগ দেন; যে এই সুযোগের মর্যাদা বুঝে তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পাথেয় বানায় সেই প্রকৃতপক্ষে বুদ্বিমান। এবং এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করার কারণে আল্লাহ তাকে একের পর এক আমলে সালিহ করার তৌফিক্ব দান করেন। নি:সন্দেহে ভাল আ‘মল আল্লাহর তৌফিক্বক্রমে সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে এই আ‘মলে সালিহ করার সুযোগকে যারা মর্যাদা দেয় না এবং একে কাজে লাগায় না, হয়ত তারা পরবর্তীতে আফসোস করবে, এমনও হতে পারে এই সুযোগ তার জীবনে আর দ্বিতীয় বার আসবে না। তাই প্রত্যেক মু‘মিনের উচিত যখন জিহাদের ডাক আসে, আর তখন সে সব দিক দিয়ে স্বশরীরে জিহাদ করতে সক্ষম অথবা মাল দিয়ে অথবা জিহাদের অন্যান্য কাজে সহযোগীতা করতে সক্ষম: প্রথম অবস্থাতেই তার ডাকে সাড়া দেওয়া। অন্যথায় আল্লাহ তাকে পরবর্তীতে আর জিহাদ করার তৌফিক্ব নাও দিতে পারেন।
যেমন আল্লাহ ক্বুর‘আনে বলেন:
‘‘বস্ত্তত: আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের মধ্য থেকে কোন শ্রেণীবিশেষের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং অত:পর তারা তোমার কাছে অভিযানে বেরোবার অনুমতি কামনা করে, তবে তুমি বলো যে, তোমরা কখনো আমার সাথে বেরোবে না এবং আমার পক্ষ হয়ে কোন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে না, তোমরা তো প্রথমবারে বসে থাকা পছন্দ করেছ, কাজেই পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথেই বসে থাক।’’[সূরা আত্-তাওবা(৯):৮৩]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাছীর (রহীমাহুল্লাহ) তার তাফসীরে বলেন:
(অধ্যায়) মুনাফিক্বদের জিহাদে যাওয়া থেকে বাঁধা দেয়া হয়েছে: আল্লাহ তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নির্দেশ দেন: (বস্ত্তত: আল্লাহ যদি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এই অভিযান (তাবুক) থেকে (কোন শ্রেণীবিশেষের দিকে) ক্বাতাদার মত অনুযায়ী এখানে (মদীনার) বার জন (মুনাফিক্ব) কে ইঙ্গিত করা হয়েছে,(এবং অত:পর তারা তোমার কাছে অভিযানে বেরোবার অনুমতি কামনা করে) আপনার [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সাথে অন্য যুদ্ধে যাওয়ার জন্য, (তবে তুমি বলো যে, তোমরা কখনো আমার সাথে বেরোবে না এবং আমার পক্ষ হয়ে কোন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে না) এটা (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের জন্য ধমক এবং শাস্তিস্বরুপ। আল্লাহ এই (শাস্তির) সিদ্বান্তের পিছনে বলেন: (তোমরা তো প্রথমবারে বসে থাকা পছন্দ করেছ)
এরকম অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
‘‘আর আমরাও তাদের অন্ত:করণ ও তাদের দৃষ্টি পাল্টে দেব যেমন তারা প্রথমবার এতে ঈমান আনে নি; আর তাদের ছেড়ে দেবো তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত ভাবে ঘুরে বেড়াতে।’’ [সূরা আন’আম(৬):১১০]
একটি মন্দ কর্মের শাস্তি স্বরুপ কাউকে অন্য একটি মন্দ কর্মের দিকে ধাবিত করা হয়। একই ভাবে একটি আমলে সালিহের পুরস্কার স্বরুপ তাকে অন্য একটি আ‘মলে সালিহের প্রতি ধাবিত করা হয় ……. আল্লাহ পরবর্তিতে বলেনঃ
(কাজেই পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথেই বসে থাক) ইবনে আববাস (রদিআল্লাহু আনহু) এর মত অনুযায়ী এখানে ঐসব লোকদের ইঙ্গিত করা হয়েছে যারা (তাবুক) অভিযানে না গিয়ে ঘরে বসে ছিল। Tafsir Ibn Kathir (abridged), Darussalam Vol :4
আমাদের প্রিয় মুজাহিদ শাইখ আনোয়ার আওলাক্বী তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী: মদীনা পার্ট-২ লেকচার সিরিজে কা‘ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) এর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাবুক অভিযানে অংশ গ্রহন না করার পিছনে বুখারী শরীফে যে বিখ্যাত হাদীছ স্বয়ং ক’াব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন তার উপর বিশেষ মনোযোগ আকর্ষন করেছেন এবং বলেছেনঃ
‘‘ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যুম (রহীমাহুল্লাহ) এই হাদীছ থেকে আমাদের জন্য কিছু শিক্ষনীয় বিষয় বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছেঃ আল্লাহ যখন কারো জন্য কোন আমলে সালিহ করার সুযোগ খুলে দেন তখন তার উচিত দেরী না করে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। প্রিয় ভাই বোনেরা কোন কোন সময় আল্লাহ আপনাদের জীবনে আমলে সালিহ করার সুযোগ খুলে দেন। এই সুযোগ আসে আবার চলে যায়। কিছু সময় এই সুযোগ ভাল কিছু নিয়ে চলে যায়। যদি আপনারা এই সুযোগের সদ্বব্যবহার না করেন, তাহলে হতে পারে আপনারা সারা জীবনের জন্য এটা হারাবেন।
কা’ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) এর জন্য তাবুক অভিযানে অংশ গ্রহণের সুযোগ খোলা হয়েছিল কিন্তু তিনি তা হারিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে যেটা তিনি (কা’ব) স্বয়ং বলেছেনঃ ‘‘হায় আফসোস! আমি মনে করেছি আমি (তাবুক অভিযানের) সব প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করতে পারব’’। তাই জিহাদে অংশ গ্রহণ থেকে পিছনে থাকবেন না, এই ভেবে যে আমি তো যেতেই পারব। তাই আল্লাহ আপনার জন্য যে সুযোগ খুলে দিয়েছেন তার সদ্ধব্যবহার করুন এবং কোন কোন সময় এই সুযোগের সদ্বব্যবহার না করার পরিণতি অনেক ভয়াবহ হতে পারে, যেমন আল্লাহ বলেন:
‘‘ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ ও রসূলের প্রতি সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন তাতে যা তোমাদের জীবন দান করে। আর জানো যে আল্লাহ মানুষের ও তার অন্ত:করণের মাঝখানে বিরাজ করছেন; আর নি:সন্দেহ তিনি – তাঁরই কাছে তোমাদের একত্রিত করা হবে।’’[সূরা আনফাল(৬): ২৪]
আল্লাহ আপনাকে পরবর্তীতে (জিহাদে) অংশগ্রহণ করার তৌফিক্ব না দিয়ে আপনার এবং আপনার ক্বলবে্র মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেন। তাই যে সুযোগ আপনার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে তার সদ্বব্যবহার করুন এবং (জিহাদ থেকে) পিছনে থাকবেন না।
আল্লাহ সূরা আনআ‘মে বলেন:
‘‘আর আমরাও তাদের অন্ত:করণ ও তাদের দৃষ্টি পাল্টে দেব যেমন তারা প্রথমবার এতে ঈমান আনে নি; আর তাদের ছেড়ে দেবো তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত ভাবে ঘুরে বেড়াতে।’’[সূরা আন’আম(৬):১১০]
তারা প্রথমবারে (ঈমান আনতে) প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই আল্লাহ তাদের ক্বলব্ এবং চোখ উল্টিয়ে দিয়েছেন, তাই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া‘লা অন্য আয়াতে বলেন:
‘‘আল্লাহ এরূপ নন যে, কোন জাতিকে হিদায়াত করার পর পথভ্রষ্ট করে দেন, যে পর্যন্ত না তাদেরকে সেসব বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দেন, যা হতে তারা বেঁচে থাকবে; নি:সন্দেহে আল্লাহ সব- কিছুতে সর্বজ্ঞাতা।’’[সূরা আত্-তাওবা(৯):১১৫]
আল্লাহ তাদের কাছে স্পষ্ট করেছেন তাদের কি পরিত্যাগ করা উচিত। আল্লাহ তাদের সৎ আমল করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাই আল্লাহ (হিদায়াতের পর) তাদের পথভ্রষ্ট করেছেন।
(ইবনুল ক্বইয়্যুম থেকে বর্ণিত) পরবর্তী শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে: তাবুক অভিযান থেকে শুধুমাত্র তারাই রয়ে গিয়েছিল যারা মুনাফিক্ব, জিহাদ করতে অসমর্থ (অসুস্থ, পঙ্গু ইত্যাদি) এবং যাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় থাকার জন্য নিয়োগ করেছেন। তাই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ না করা নিফাক্বের পরিচয় হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে।’’
(শাইখ আনোয়ার আওলাক্বীর বক্তব্য শেষ)
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এজন্য যে, কা‘ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) এর তাবুকে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা, এজন্য তাকে কত বড় খেসারত দিতে হয়েছে এবং এ ঘটনার উপর কুর‘আনের আয়াতও [সূরা আত্-তাওবা(৯):১১৬-১১৭] আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা কি জানি, কা‘ব ইবনে মালিক (রদিআল্লাহু আনহু) কত বড় সাহাবী ছিলেন? তিনি হচ্ছেন একজন বড় আলিম সাহাবী, যিনি বদর ছাড়া সব যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন, এমনকি বাইয়াতে আ‘কাবায়ও। যে বাইয়াতকে সাহাবীরা বদর যুদ্ধ থেকেও বেশী ফযীলতপূর্ণ মনে করতেন। তাও বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পিছনে তার সঙ্গত কারণ ছিল। তাই ক‘াব ইবনে মালিকের যদি শুধু একটি অভিযানে অংশগ্রহণ না করার জন্য এত বড় খেসারত দিতে হয়েছে, যার বর্ণনা কা‘ব (রদিআল্লাহু আনহু) স্বয়ং দিয়েছেন এবং ক্বুর‘আনেও বর্ণিত হয়েছে; তাহলে আমাদের অবস্থা কি, যারা এখনও জিহাদ থেকে পিছনে রয়েছি, এমন কি জিহাদে কোন অংশগ্রহণও নেই; কোন শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযর ছাড়া। কিসের উপর ভিত্তি করে আমরা নিশ্চিন্ত বসে আছি?
আর একটি বিষয় হচ্ছে, তখন তো কা’ব ইবনে মালিকের তওবা কবুল করে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যার কারণে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আল্লাহ কা’ব (রদিআল্লাহু আনহু) এর তওবা কবুল করেছেন। এমন কি সত্য কথা বলতে কি; এ ঘটনার পর কা’ব (রদিআল্লাহু আনহু) এর মর্যাদা সাহাবীদের মাঝে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের কারও অবস্থার উপর এখন তো আর অহী অবর্তীর্ণ হবে না, তাই কেউ যদি আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেক দূরে সরেও যায়, তাহলে কিভাবে বুঝবো? তাই ক্বা’বের এই ঘটনার পর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ যে শিক্ষা নিয়েছেন এবং সতর্ক হয়েছেন, তার থেকেও বেশী সতর্ক আমাদের হওয়া উচিত, যেন আমরা এত বড় বিপর্যয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পরি। আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন। কারণ কা‘বের এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে পূর্ববর্তী এবং বর্তমান যুগের আলিমদের অনেক কিতাব এবং আলোচনা রয়েছে। প্রবন্ধ ছোট না করার ইচ্ছা থাকলে, আমি সেখান থেকে কিছু এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে শাইখ ওসামা বিন লাদেনের লিখিত কিতান ‘‘দারসে হাদীছে ক্বা’ব (রদিআল্লাহু আনহু) ’’।
তাই আমি ভাই-বোনদের বলব, বুখারী শরীফ (Vol.5, Book 59, Hadith 702, Riyad-us- Saliheen Hadith:21) থেকে স্বয়ং ক্বা’ব ইবনে মালিকের জবানী থেকে এই হাদীছ পড়তে নয়, বরং পর্যবেক্ষণ করে নিজ নিজ অবস্থার হিসাব নিতে, আল্লাহই একমাত্র তেŠফীক্ব দাতা।
তাই আমি বলছি, আমরা যদি, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাব, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিহাদ থেকে কাউকে অব্যাহতি দেন নি, না আলিম সাহাবীদেরকে, না ধনী সাহাবীদেরকে, না গরীব সাহাবীদেরকে, না তখনকার গোত্রপতী সাহাবীদেরকে, না তখনকার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সাহাবীদেরকে; আর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনেই রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তবে যদি জিহাদের বা জামা‘আতের আমির কাউকে কোন বিশেষ কাজে নিয়োজিত করেন, তবে তা ভিন্ন কথা। যেমন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রদিআল্লাহু আনহু) কে তাবুক অভিযানের সময় মদীনায় নিয়োগ করেছেন, এটা আলী (রদিআল্লাহু আনহু) এর কোন ব্যক্তিগত অভিমত ছিল না, তিনি তাবুক অভিযানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যাওয়ার জন্য আকুল ছিলেন।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেকে আমিরের সামনে পেশ করা, জিহাদের আমির তার অবস্থা বুঝে তাকে তার উপযু্ক্ত জায়গায় কাজ করার জন্য নিয়োগ করবেন। যেমন খুরাসানের বর্তমান মুজাহিদদের আমির আবু আবদুল্লাহ আতিয়া আল্লাহ আল-লিবিব (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) একটি লিখিত প্রবন্ধে বলেন:
‘‘সেজন্য এখন আমাদের জন্য জিহাদ ফারদুল আ‘ইন বলতে আমরা যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হল: প্রত্যেক মুসলিম তার সামর্থ অনুযায়ী এবং যেটা তার জন্য উপযুক্ত ও যেটা তাকে করতে বলা হয়েছে, সেভাবে (জিহাদের) কাজ করবে।
এবং অবশেষে শাইখ্ আবদুল্লাহ আয্যাম (রহীমাহুল্লাহ) এর ‘‘Join The Caravan’’ কিতাব থেকে নকল করে যেটা আমি বার বার বলেছি যে, যে তার জান এবং প্রস্ত্ততি কোরবানী করে জিহাদ এবং মুজাহিদীনদের কাফিলায় যোগ দিয়েছে এবং তার কথাকে আমলে পরিণত করেছে এই বলে যে:
‘‘এখানে আমি মুসলিমদের একজন তীর (অর্থাৎ মুসলিম আর্মিদের সাথে জিহাদ করতে প্রস্ত্তত) হিসাবে হাজির আছি, তাই মুসলিমদের আমির আমাকে যেখানে ইচ্ছা (জিহাদের) কাজে লাগাক।’’
তাই আমি উদাহরণ স্বরূপ বলছি; ওমুক এবং ওমুক চেচ্নিয়ায় জান, কারণ সেখানে ওমুকের প্রয়োজন এবং তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব। এবং ওমুক -ওমুক (জিহাদের) ওমুক জায়গায় যান এবং ওমুক আপনার নিজ জায়গায় অবস্থান করে (জিহাদের জন্য) মাল (অর্থ) সংগ্রহ করুন, ব্যবসা করুন, (দ্বীনের জন্য) লিখুন, বলুন, দাওয়া দিন, মিডিয়ার কাজ করুন অথবা জ্ঞান অর্জন করতে থাকুন এবং ওমুক ও ওমুক ওমুক -ওমুক কাজ করুন। তাই বুঝা গেল যার জন্য জিহাদের আমিরের সাথে যোগাযোগ সম্ভব, যাতে করা তারা (জিহাদের আমিরগণ) জানতে পারেন তার জন্য (দ্বীনের) কোন কাজ উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয়, এগুলো সবই সম্পাদিত হবে ঈমানের সাথে, সত্যবাদীতার সাথে, ইখলাছের সাথে।
যারা এটা করতে সক্ষম নয়; যাদের সংখ্যাই বেশী তাদের সাধারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আগানো উচিৎ এবং যতটুকু সম্ভব (আল্লাহর রাস্তায়) চেষ্টা-সাধনা করা উচিৎ। এগুলোর জন্য আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ তাক্বওয়া জরুরী। প্রয়োজনে জিহাদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী, সত্যবাদী এবং সালিহ্ লোকদের সাথে পরামর্শ করুন। আল্লাহ তাদের হিদায়াত এবং সফলতা দান করুন।
ইনশা‘আল্লাহ এভাবে তারা তাদের (জিহাদের) দায়িত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে পারবে এবং নিজেদের (জিহাদের জন্য) প্রস্ত্তত করতে পারবে। আল্লাহর কাছে শুধু তাক্বওয়াই গ্রহণযোগ্য। সেজন্য সত্য কথা বলতে কি; এই সময়ে জিহাদ করার জন্য পিতা-মাতার কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। সব কিছুর ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জ্ঞানী এবং নেই কোন শক্তি, নেই কোন ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া।’’ (আবু আবদুল্লাহ আতিয়া আল্লাহ আল-লিবিবর বক্তব্য শেষ)
তাই কেউ যদি জিহাদের জন্য শুধু মাল খরচ করে, এটা তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য যতক্ষণ সে জান দিয়ে জিহাদ না করতে পারে; কোন শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযরের কারণে, অনুরুপভাবে যারা জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছে তাদেরও মাল খরচ করতে হবে সামর্থ অনুযায়ী। আর কেউ শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযরের কারণে যদি জান এবং মাল কোন টাই দিতে না পারে, তাহলে তার উচিত জিহাদ এবং দাওয়ার কাজে সার্বিক সহযোগীতার চেষ্টা করা। (এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে কেউ আনোয়ার আল আওলাকীর মাশ‘আরী আল আশওয়াক সিরিজ লেকচার শুনতে পারেন এবং তারই লিখা কিতাব ‘‘ 44 Ways to Serve & Parcipate in Jihaad’’ পড়তে পারেন) আর প্রকৃত পক্ষে সব কিছুই নির্ভর করে নিয়্যত এবং ইখলাছের উপর। কেউ যদি শারী‘য়াহ সঙ্গত ওযরের কারণে জিহাদ না করতে পারেন, তাহলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট এবং ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তার জন্য রাস্তা খুলে দিবেন। এর জন্য তাক্বওয়া, সবর, তাওয়াক্কুল এবং ইস্তিক্বামাত একান্ত জরুরী।
কারণ এগুলো এজন্যই বলছি যে, সম্প্রতি জিহাদের হুকুমের ব্যাপারে অনেকের মধ্যে কিছু অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা গেছে। এবং হয়ত এ ব্যাপারে আমাদের কিছু অবহেলাও রয়েছে। একটি বিষয় সকলের ক্বলবে গাঁথা উচিত যে, আল্লাহ হচ্ছেন আস-সামাদ, তিনি কোন কজেই আমাদের উপর মুখাপেক্ষী নন, যেটা আল্লাহ ক্বুর’আনে স্পষ্টভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘোষণা করেছেন, বরং সব সময়, সব কাজে আমরাই তাঁর কাছে মুখাপেক্ষী। তাই কেউ যদি আল্লাহর রাস্তায় জান এবং মাল দেয়, এটা তার নিজের জন্যই, এতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কোন মুখাপেক্ষীতা বা প্রয়োজন নেই। তিনি হচ্ছেন আশ-শাকুর; যিনি বান্দাকে আমলে সালিহ করার তৌফীক্ব দান করেন এবং তিনি অতি অল্প আমলের জন্য কাউকে জান্নাতে অতি উচ্চ অবস্থান দান করেন। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য, নতুবা আমাদের সকল প্রচেষ্টা তো অতি সামান্যই, যদি আমরা আল্লাহর রাস্তার নিহতও হই।
আর যদি কেউ জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা তাদেরকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে নিয়ে আসতে সক্ষম। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন হতে ফিরে যায়, তবে (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই।) কেননা আল্লাহ সত্বরই (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুসলিমদের প্রতি মেহেরবান থাকবে, কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন বস্ত্তত: আল্লাহ প্রাচুর্যদানকারী, মহাজ্ঞানী। ’’[সূরা মা’য়িদা(৫): ৫৪]
তাই আমি বিশেষ করে ঐ সমস্ত ভাই এবং বোনদের বলব; যাদেরকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করে; তাদের সামর্থ অনুযায়ী। যদি তারা আল্লাহ রাস্তায় জান দিয়ে জিহাদ না করতে পারে বা করেও। কেননা জিহাদের জন্য প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশী মালের প্রয়োজন হয়। কেননা মুজাহিদদের সামনে এমনও অনেক সময় এসেছে যে, তারা অর্থের অভাবে কাফিরদের উপর হামলা করতে পারেনি এবং অনেক ক্ষেত্রে অর্থের অভাবে অনেক অসমর্থতাও সামনে এসেছে। যেমন খুরাসানের বর্তমান মুজাহিদদের আমির আবু আবদুল্লাহ আতিয়া আল্লাহ আল-লিবিব (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তার একই প্রবন্ধে বর্তমানে খুরাসানে জিহাদ পরিচালনার ব্যাপারে কিছু সমস্যা আলোচনা করার পর বলেছেন:
‘‘যেটা উম্মাহর ধনী ব্যক্তিদের বড় অংকের আর্থিক সহযোগীতা না করার কারণে সংঘটিত হয়েছে এবং তাদেরও অবহেলা এর সাথে জড়িত, যাদের দক্ষতার সাথে উম্মাহ পরিচালনার ক্ষমতা রয়েছে এবং যাদের কোন বিশেষ কাজে দক্ষতা রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাদের বিশেষ দক্ষতার কারণে অন্যান্যদের থেকে পৃথক করেছেন।
তাই আমাদেরকে মাল এবং দক্ষ ব্যক্তি দিয়ে সাহায্য করুন এবং আপনারা দেখতে পাবেন কত জিহাদের ফ্রন্ট (ময়দান) এবং ট্রেনিং ক্যাম্প আমরা খুলি এবং আল্লাহর সাহায্যে তাঁর শত্রুদের কি অবস্থা করি। শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা সাহায্য চাই। আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমাদের জন্য উত্তম জিম্মাদার।’’
আর এজন্যই ক্বুর’আনের প্রায় সব জায়গায় যেখানে জান দিয়ে জিহাদের কথা এসেছে সেখানে মালের কথাও এসেছে। এর প্রয়োজনীয়তা আমার মত অক্ষম মুসলিমের আর বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। এবং যেসব মালদার ভাই-বোনদের এখন সুযোগ রয়েছে কোন মুজাহিদ পরিবারকে সাহায্য করা বা কোন মুজাহিদ বন্দীকে সাহায্য করা বা তার পরিবারকে সাহায্য করা বা যেসব বোনদের স্বামী আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে গেছে তাদের সাহায্য করা, আপনারা কি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদীছ শুনেছেন?
‘‘যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে না, অথবা কোন মুজাহিদকে (জিহাদের সরঞ্জামাদি বা অর্থ দিয়ে) তৈরি করে না, অথবা কোন মুজাহিদের রেখে যাওয়া পরিবারের খোঁজ খবর রাখে না (বা দেখাশোনা করে না), আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামাতের আগে অকস্মাত আযাব দিয়ে শাস্তি দিবেন’’।[সহীহ আবূ দাউদ]
শাইখ্ আবু বাসীর (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) এই হাদীছের ব্যাপারে বলেন:
‘‘তাই কোন মু’মিনের জন্য উল্লেখিত তিন শ্রেণী ব্যতীত অন্য কোন শ্রেণীতে শামিল হওয়া উচিত নয়: হয় সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, অথবা কোন মুজাহিদের রেখে যাওয়া পরিবারের খোঁজ খবর রাখবে (বা দেখাশোনা করবে) অথবা কোন মুজাহিদকে আল্লাহর রাস্তায় তৈরি করবে; অন্যথায় সে তার উপর ক্বিয়ামাতের পূর্বেই(আল্লাহর) আযাব আসার অপেক্ষা করুক; আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না এই আযাবের বিষয়বস্তু এবং প্রকৃতি কিরূপ হবে।’’
কারণ এখানে শুধু আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ বা কোন মুজাহিদ পরিবারকে সাহায্য করাই মুখ্য বিষয় নয়, বরং এর সাথে এক পুরা মজবুত জিহাদ প্রক্রিয়া জড়িত। একজন মুজাহিদ যখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে যায়; সে যখন দেখে যে, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহতও হই, তাহলে পিছনে আমার সেইসব আন্তরিক প্রিয় ভাই-বোনেরা রয়েছে, যারা আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং পরিবারকে শুধু আর্থিক সহযোগীতা বা দেখা শোনাই নয়, বরং তাকওয়া, সবর এবং ইস্তিক্বামাতের সবকও শিখাবে। এমনকি প্রয়োজনে শহীদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আল্লাহর দিকে দাওয়াহও দেয়ার চেষ্টা করবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তাহলে একজন মুজাহিদ আল্লাহর রাস্তায় আন্তরিক ভাবে তার জান কোরবান করতে দ্বিধাবোধ করবে। আমরা কি এটা ভেবে দেখেছি!
আমাদের মুজাহিদ শাইখ আনোয়ার আল আওলাক্বী (আল্লাহ তাকে হিফাযাত করুন) তার এক লেকচারে আফসোস করে বলেছেনঃ
‘‘ইয়ামানের এক ভাই আমাকে বলেছেন, কোন এক জন বোনের স্বামী জিহাদে শহীদ হওয়ার পর, সেই বোন আর্থিক অভাবের সম্মুখীন হন, এমনকি সেই বোন ঈদের দিন মানুষের কাছে তার বাচ্চাদের ঈদের জন্য পুরানা জামা-কাপড় তালাশ করছে। ’’
আল্লাহু আকবার! হায় আফসোস আমাদের, আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার সামনে কি জবাব দেব? আমাদের কি অশ্রুসিক্ত হচ্ছে না! রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী এবং এইসব ভাইদের রক্তের বিনিময়েই তো আজ আমাদের কাছে ইসলাম এসেছে।
কেননা পূর্বেই বলেছি, আল্লাহ আপনাকে আজ আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করার সুযোগ দিয়েছেন, হয়ত এই সুযোগ সব সময় থাকবে না, হয়ত আর আসবেও না। কেননা কত সময় আছে যে, আমরা আল্লাহর কাছে দো’আ করিঃ হে আল্লাহ আমাকে আপনার রাস্তায় জান এবং মাল দিয়ে জিহাদ করার তৌফিক্ব দ্বান করুন; আর যখন আল্লাহ আমাদের দো’আ ক্ববুল করেন এবং আর আমাদের সামনে এর সুযোগ খুলে দেন, তখন যদি আমরা দ্রুততা এবং আন্তরিকতার সাথে সাড়া না দেই; তখন কি আমাদের সূরা তাওবার এই আয়াত জানা নেই!
‘‘আর তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে (প্রচুর সম্পদ) দান করেন, তবে আমরা অবশ্যই খুব দান-খয়রাত করবো এবং সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো। কার্যত: যখন আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে (প্রচুর সম্পদ) দান করলেন, তখন তারা তাতে কার্পণ্য করতে লাগলো এবং (আনুগত্য করা হতে) তারা গোঁড়ামীর সাথেই বিমুখতা অবলম্বন করলো। সুতরাং আল্লাহ তাদের শাস্তি স্বরুপ তাদের অন্তরসমূহে নিফাক্ব ঢেলে দিলেন, যা আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার দিন পর্যন্ত থাকবে, এই কারণে যে, তারা আল্লাহর সাথে নিজেদের ওয়াদার খিলাফ করেছে, আর এই কারণে যে, তারা (পূর্ব হতেই) মিথ্যা বলছিল।’’[সূরা আত্-তাওবা(৯): ৭৫-৭৭ ]
এখন সময় এসেছে কথাকে আ’মলে পরিণত করার. . . . . . . . . . . . . . . .
আমি আল্লাহর কাছে দো’আ করি, তিনি যেন আমাদের ভাই-বোনদের সিরাতুল মুস্তাক্বিমের উপর দৃঢ় রাখেন, আমাদেরকে নাবী, সিদ্দীক্ব, সালিহীন এবং শুহাদাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আমীন!
Comment