বৈশ্বিক জিহাদের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ
তৃতীয় অধ্যায়ঃ প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা
সাক্ষাৎকার গ্রহীতাঃ আই এস এবং আল কায়েদার অন্যতম একটা পার্থক্য হল তাদের প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা। অভিজ্ঞ জিহাদিরা সব আল কায়েদার ক্যাম্পে আর অন্য দিকে তরুণ প্রজন্মের জিহাদিরা আইএসের প্রতি আকৃষ্ট। আপনি কি এখনও মনে করেন যে, আইএস তাদের প্রেরণা হারিয়ে ফেলছে? আর ভবিষ্যতে তরুণ সুন্নি জিহাদিরা কি করবে? তারা কি জিহাদকে পরিত্যাগ করবে? বা আল কায়েদার কাছে ফিরে যাবে? নাকি তারা নতুন কোন গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করবে?
আহমেদ আল হামাদানঃ এই প্রশ্নের উত্তর হবে অনেক জটিল। হ্যাঁ বেশীরভাগ তরুণ মুজাহিদিন আইএসের দিকে ধাবমান এবং এটা এই কারণে যে, তরুণদের বেশীরভাগেরই মারামারির প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ রয়েছে। আর তারা প্রতিশোধের নেশায় অনেক সময় এমন আগ্রাসিভাবে হত্যা এবং নির্যাতনে লিপ্ত হয়ে পড়ে যে, তাদের এই আচরণের কোন ভাল ফল বা এর কোন ক্ষতির কথা তখন তারা চিন্তা করে না। আর অনেক সময় তাদের এসব কর্মকাণ্ড শরিয়াহর সাথে মিলে না। বরং তারা এসব করে শুধুমাত্র নিজেদের সন্তুষ্টির জন্যই। আর এজন্যই ড. আইমান আল যাওয়াহিরি শাইখ জারকাউইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, এবং তিনি তার এক চিঠিতে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, “নেতাদের জন্য একটা অন্যতম বিপজ্জনক বিষয় হল তাদের সমর্থকদের অতি উৎসাহ, বিশেষ করে তরুণদের। যারা আল্লাহ্*র দ্বীনকে সমর্থন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে আছে এবং জ্বলছে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের এই অতি উৎসাহকে প্রজ্ঞার সাথে নিয়ন্ত্রন করা।”
এছাড়াও শাইখ উসামা বিন লাদেনও এক চিঠিতে এই প্রসঙ্গে শাইখ আবু বাসীর আল উহাইশীকে লেখেন যে, “যুদ্ধসমূহে জয়ী হতে হলে তরুণদের উৎসাহী মনোভাব থাকাটা একটা জরুরী বিষয়। কিন্তু একে কখনোই যুদ্ধের এমন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে পরিণত করা যাবে না, যাতে নেতৃত্ব তরুণদের এই উৎসাহী মনোভাবের পেছনে ছুটেই যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করবেন। যেমনটা কবি মুতানাব্বি বলেছেনঃ চিন্তাভাবনা আসে সাহসীর সাহসের আগে, এটা(চিন্তাভাবনা) আসে প্রথমে তারপর আসে দ্বিতীয়টা।”
তাই আল কায়েদার মতে যেকোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে অতি উৎসাহ নয়, বরং ঐ বিষয়ের ফলাফলটাই বেশি পরিমাপযোগ্য।
যে সবচেয়ে কঠিন এবং কর্কশভাবে কথা বলে তরুণেরা তার দিকেই আকৃষ্ট হয়, আর এটা যে শুধুমাত্র আমিই লক্ষ্য করেছি এমন নয়। যেমনটা শাইখ আল মাকদিসি এ বিষয়ে বলেন যে, “যুবকদের মধ্যে অনেকেরই সঠিক শিক্ষার অভাব রয়েছে, এর কারণ হল তাদের আলেমদের মজলিসে পর্যাপ্ত সময় না দেয়া, ঠিক পরিবেশে বেড়ে না উঠা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সঙ্গীরা এবং সালাফদের শিষ্টাচার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা। তাই এখন তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অভদ্র, অভব্য আচরণের মত রোগের অসুস্থতা আর এজন্যই তারা আকৃষ্ট হচ্ছে চরমপন্থার দিকে যাকে অজ্ঞতার কারণে তারা এখন ধারণা করে নিয়েছে যে, সবচেয়ে কঠোর পথই হল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পথ।”
এর আগে এসকল অতি উৎসাহী তরুণের আল কায়েদা ছাড়া অন্য কোন অপশন ছিল না। আর তাদের নীতি সম্পর্কে আগে আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, তারা এদেরকে নিজেদের মত ছেড়ে দিতেন না এবং তাদেরকে এই নীতি অনুযায়ী চলতে বাধ্য করা হত, যা তাদের ঐ অতি উচ্চাশাকে দমিয়ে রাখতো। আর এখনতো তরুণদের হাতে আরেকটি অপশন এসেছে, যেখানে যত নিষ্ঠুর কাজ তারা করতে চায় সব করতে পারে। এবং তাদের কাজের ভাল কি ফলাফল বা কি লাভ হবে অথবা এর খারাপ কোন ফলাফল হবে কিনা সে সম্পর্কে কোন চিন্তাভাবনা করা ছাড়াই নিজেদেরকে এসব কাজে তারা নিয়োজিত করে। এবং অনেক অতি উৎসাহী তরুণ তাদের বহুল কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ করেছে আইসিসে এসে।
দ্বিতীয়ত, তরুণদের অনেকেই জিহাদি অভিজ্ঞতার দিকে একেবারেই নতুন এবং তাদের এই অভিজ্ঞতা আগের বয়স্ক জিহাদিদের থেকে ভিন্ন। যারা তাদের জীবন এই জিহাদেই অতিবাহিত করেছেন, এবং প্রত্যক্ষ করেছেন সেসব কারণ যা এর আগে জিহাদে ব্যর্থতা নিয়ে এসেছিল এবং আবার প্রত্যক্ষ করছেন আইএসের দ্বারা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। যেমন, সবার সাথে একই সাথে বিরোধিতা করা আর সবার সাথে একসাথে যুদ্ধের ফ্রন্ট খোলা এবং যে শত্রুর ব্যাপারে সবাই একমত তাদের সাথে যুদ্ধের তুলনায় বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের সাথে যুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়া।
[ আপাতত এতটুকু দেয়া হল, ইনশাআল্লাহ আপডেট হতে থাকবে। ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন।]
Comment