(আগের অংশ)
দ্বিতীয়ত, তরুণদের অনেকেই জিহাদি অভিজ্ঞতার দিকে একেবারেই নতুন এবং তাদের এই অভিজ্ঞতা আগের বয়স্ক জিহাদিদের থেকে ভিন্ন। যারা তাদের জীবন এই জিহাদেই অতিবাহিত করেছেন, এবং প্রত্যক্ষ করেছেন সেসব কারণ যা এর আগে জিহাদে ব্যর্থতা নিয়ে এসেছিল এবং আবার প্রত্যক্ষ করছেন আইএসের দ্বারা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। যেমন, সবার সাথে একই সাথে বিরোধিতা করা আর সবার সাথে একসাথে যুদ্ধের ফ্রন্ট খোলা এবং যে শত্রুর ব্যাপারে সবাই একমত তাদের সাথে যুদ্ধের তুলনায় বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের সাথে যুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়া, তাদের চরমপন্থা ও উম্মাহর থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া, যার ফলে উম্মাহর সমর্থনও তাদের থেকে দূরে সরে যাওয়া। আর এসব অভিজ্ঞতাই তাদের পূর্বের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তিতে বাধা দিচ্ছে।
আল্লাহ্*র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিন কখনো এক গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না।” বিপরীতদিকে তরুণ প্রজন্মের জিহাদিরা কিছু অডিও স্পিচ অথবা ভিডিও ক্লিপ ছাড়া জিহাদ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর তাদের সত্যিকারভাবে ময়দানের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতাও ছিল না, যা থেকে তারা সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
অন্য যে বিষয়টা তরুণদের আল কায়েদার চেয়ে আইএসের দিকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তাহলো তাদের বিপুল মিডিয়া ক্যাম্পেইন। যা মুলত তরুণদের উদ্দেশ্য করেই তারা চালু রেখেছিল। আর তরুণদের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ বিশেষকরে অনারব ভাষী তরুণদের সাথে। যেমন, আইএস সবসময় তাদের প্রকাশনাগুলো অনুবাদ করতে থাকে এবং তাদের বিবৃতিসমূহ কোন নির্দিষ্ট দেশের লোক দিয়ে (যেমন ইংল্যান্ড) তৈরি করিয়ে সেখানকার তরুণদের মধ্যে প্রচার করে এবং তাদেরকে নিজেদের দিকে আহবান করতে থাকে। আবার তাদের যে অফিশিয়াল ম্যাগাজিন সেটা ইংরেজি ভাষার এবং তারা আমাক্ব নিউজ নামে যে চ্যানেল চালু করেছে তাও ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়।
আইএস এটা সবসময় নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে, তারা তরুণদের আকর্ষণ করছে। তারা তাদের প্রোপাগান্ডা তীব্রতার সাথে ইংরেজি ভাষায় প্রচার করার এটা একটা কারণ হতে পারে যে, এটি একটি সার্বজনীন ভাষা যা বিভিন্ন জাতীয়তার মানুষ সহজেই বুঝতে সক্ষম। তাই তারা এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে সক্ষম হয়। তুলনামুলকভাবে, এসময় আল কায়েদার দিক থেকে তরুণদের তাদের সাথে যোগদানের আহবানে খুবই কমতি ছিল। তারা তাদের সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো তেমন একটা অনুবাদ করে নি। এবং তরুণদের সাথে ইংরেজি ভাষায় তাদের কোন সরাসরি এবং নিয়মিত যোগাযোগও এসময় ছিল না। এবং তাদের যেসকল ইংরেজি ভাষার ম্যাগাজিন ছিল সেগুলোও তেমন একটা নিয়মিত ছিল না। দেখা যেত দুই মাস পার হয়ে গেছে কিন্তু নতুন কোন ইস্যু এখনও বের হয়নি। আর একারণেই তরুণদের অনেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে, যারা তাদের উদ্দেশ্য করে কথা বলছিল এবং যারা তাদের ঘটনাগুলো এসব তরুণদের উদ্দেশ্য করেই সাজাচ্ছিল।
সর্বোপরি আমরা যা আলোচনা করলাম তার মূল কথা এটাই যে, এসকল ঘটনায় (অর্থাৎ আই এস আল কায়েদার বিরুদ্ধে যা দাবী করছিল) আল কায়েদার প্রতিক্রিয়া অনেক ধীরে হওয়ায় (তারা আশা করেছিল এই অবস্থা আপোষে নিজেদের মধ্যে সমাধান করা যাবে) অনেক তরুণ ইসলামিক স্টেটের সারিতে যোগদান করে। তারপর প্রাথমিকভাবে এরা ক্রমান্বয়ে তাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে সমর্থক যোগাড়ের কাজও শুরু করে। তারা তাদের বন্ধুদের অথবা যারা মাত্র কারাগার থেকে বের হয়েছে তাদের ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া বা একে সমর্থন করার জন্য আহবান করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ আমার কথাই বলা যায়, যখন আমি কারাগার থেকে ছাড়া পাই আমি দেখি যে, আমার বন্ধুদের বেশীরভাগই আইএসকে সমর্থন করছে, তখন আমিও তাদের সাথে আইএসকে সমর্থন শুরু করি, এবং আমি সেসময় শামের ঐ সকল ঘটনা এবং বিষয় যেগুলোতে মতপার্থক্য দেখা দিচ্ছিল তাতে আইএসের বিবৃতিকেই প্রাধান্য দেয়া শুরু করি।
আর আরেকটা বিষয় হল যদি আইএস তাদের প্রাথমিক প্রেরণা হারিয়ে ফেলে, তবুও তাদের পুরনো যে সব জিনিস তারা প্রোপাগান্ডার কাজে ব্যবহার করেছিল, তা আরও অনেকদিন কার্যকরভাবে তাদের সৈন্য সংগ্রহের কাজে লাগবে। যেমন শাইখ আনোয়ার আল আওলাকিকে ২০১২ সালে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু তার কথা এখনও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, এবং রিক্রুটের কাজে ব্যবহার হয়, যদিও শাইখের ইন্তিকালের পর চার বছর পার হয়ে গেছে।
তাই আল কায়েদার সামনে একমাত্র যে সমাধান খোলা ছিল, তা হল মিডিয়া প্রোপাগান্ডার ক্ষেত্রে আইএসের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দেয়া। অন্যথায় যারা জিহাদে যোগ দিতে চায় তাদের জন্য আইএসই হয়ে দাঁড়াবে একমাত্র বিকল্প।
কিন্তু আইএসের সাথে দৈনিক মিডিয়া যুদ্ধ চালানো ছাড়াও, অন্য আরেকটা বিষয় আল কায়েদাকে সাহায্য করতে পারে। তা হল আইএসের ভিডিওগুলো দেখার পর প্রচুর পরিমাণে আরব এবং অনারব যোদ্ধা এখানে যোগদান করে, যেগুলোতে আইএসকে একটি নিখুঁত যথাযথ দল হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু যখন তারা এই দলে যোগদান করে এরপর এখানকার নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ দেখে, তখন তারা ঘাবড়ে যায়। ইসলামিক স্টেট যখন রাক্কাহ এবং শারকিয়্যার মত শহরগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, এবং যখন আল আদনানি ঘোষণা দেয় যে, যারা তাদের সারিতে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবে তাদের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়া হবে, তখনই এসকল নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।
আর এই পরিস্থিতিতে অনেকে আইএস ত্যাগ করে চলে যায় এবং ভিন্নমতাবলম্বী অনেকে পরবর্তীতে আইএসে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রেকর্ড করে, যেখানে তারা আইএসের ভুলসমূহ এবং তাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা সম্পর্কে তুলে ধরে। আর এটাই ক্রমান্বয়ে তাদের সৈন্য সংগ্রহে এবং প্রোপাগান্ডার কাজে বাধার সৃষ্টি করে। এজন্য আইএস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার মধ্যে ছিল অনেক সুপরিচিত ব্যাক্তি যারা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে, তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে দেয়া এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা। উদাহরণস্বরূপ বেন আলি, ড. সা’দ আল হুনাইতি ও মাহদি জাইদান এবং আরও অনেকের কথা বলা যায় যাদের একসময় মিডিয়াতে ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এটা এই ভয়ে করা হয় যে, যদি তারা পরবর্তীতে বিচ্যুত হয়ে যায়। তাই আইএসের অধীনে এসকল মিডিয়া ব্যাক্তিত্বের মিডিয়ায় উপস্থিতি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরে তাদের দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিল যারা সংশয় প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে। এজন্য এধরনের সন্দেহ অবিশ্বাসের মোকাবিলায় তারা আগেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমন লোকদের খুঁজে বের করে, যাদের হয়তোবা পরবর্তীতে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এজন্য অনেক সময় সদস্যদের অনেক আচরণের তারা ভুল অর্থ করে বসে। এবং এই অর্থের উপর ভিত্তি করে তাদের উপর অত্যাচার ও অন্যায় শুরু করে। একবার এক সৈনিক আল আদনানি এবং বাগদাদির কোন জীবনী তাকে দেয়া যাবে কিনা তা জানতে চায়, কারণ তারা তার রাষ্ট্রের নেতা এবং সে তাদের সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চাইছিল। কিন্তু তাকে স্পাই বলে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের কার্যক্রমে এধরণের ভীতির উপস্থিতি, সৈনিকদের বেশ নাকাল করে ফেলে, বিশেষ করে যখন তাদের আনুগত্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
একারণে অনেকেই এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিল, কারণ তারা নিজেদের একটা স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে দেখতে পায়। এটা তরুণদের ক্ষেত্রেও ঘটে।
আর তরুণীদের ক্ষেত্রে, তাদের কারো কারো এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাওয়ার কারণ হল, তাদের জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা। যে তরুণী খিলাফাতের ভুমিতে কোন অভিভাবক ছাড়াই এসেছে, তাকে এভাবে একলা রাখা হবে না, হয় তাকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা হবে, আর যদি সে পূর্বেই বিবাহিত থাকে তাহলে তাকে তার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং অন্য কারো সাথে আবার বিয়েতে বাধ্য করা হবে। এমনিভাবে, যে মহিলা তার স্বামীর সাথে এখানে এসেছে, যদি তার স্বামী নিহত হয়, তবে তার সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, তার আবার বিয়ে করতে হবে। আর এই ধরণের ঘটনা বারবার মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে।
[সাথেই থাকবেন। ইনশাআল্লাহ আপডেট হতে থাকবে। ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন।]
দ্বিতীয়ত, তরুণদের অনেকেই জিহাদি অভিজ্ঞতার দিকে একেবারেই নতুন এবং তাদের এই অভিজ্ঞতা আগের বয়স্ক জিহাদিদের থেকে ভিন্ন। যারা তাদের জীবন এই জিহাদেই অতিবাহিত করেছেন, এবং প্রত্যক্ষ করেছেন সেসব কারণ যা এর আগে জিহাদে ব্যর্থতা নিয়ে এসেছিল এবং আবার প্রত্যক্ষ করছেন আইএসের দ্বারা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। যেমন, সবার সাথে একই সাথে বিরোধিতা করা আর সবার সাথে একসাথে যুদ্ধের ফ্রন্ট খোলা এবং যে শত্রুর ব্যাপারে সবাই একমত তাদের সাথে যুদ্ধের তুলনায় বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের সাথে যুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়া, তাদের চরমপন্থা ও উম্মাহর থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া, যার ফলে উম্মাহর সমর্থনও তাদের থেকে দূরে সরে যাওয়া। আর এসব অভিজ্ঞতাই তাদের পূর্বের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তিতে বাধা দিচ্ছে।
আল্লাহ্*র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিন কখনো এক গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না।” বিপরীতদিকে তরুণ প্রজন্মের জিহাদিরা কিছু অডিও স্পিচ অথবা ভিডিও ক্লিপ ছাড়া জিহাদ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর তাদের সত্যিকারভাবে ময়দানের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতাও ছিল না, যা থেকে তারা সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
অন্য যে বিষয়টা তরুণদের আল কায়েদার চেয়ে আইএসের দিকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তাহলো তাদের বিপুল মিডিয়া ক্যাম্পেইন। যা মুলত তরুণদের উদ্দেশ্য করেই তারা চালু রেখেছিল। আর তরুণদের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ বিশেষকরে অনারব ভাষী তরুণদের সাথে। যেমন, আইএস সবসময় তাদের প্রকাশনাগুলো অনুবাদ করতে থাকে এবং তাদের বিবৃতিসমূহ কোন নির্দিষ্ট দেশের লোক দিয়ে (যেমন ইংল্যান্ড) তৈরি করিয়ে সেখানকার তরুণদের মধ্যে প্রচার করে এবং তাদেরকে নিজেদের দিকে আহবান করতে থাকে। আবার তাদের যে অফিশিয়াল ম্যাগাজিন সেটা ইংরেজি ভাষার এবং তারা আমাক্ব নিউজ নামে যে চ্যানেল চালু করেছে তাও ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়।
আইএস এটা সবসময় নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে, তারা তরুণদের আকর্ষণ করছে। তারা তাদের প্রোপাগান্ডা তীব্রতার সাথে ইংরেজি ভাষায় প্রচার করার এটা একটা কারণ হতে পারে যে, এটি একটি সার্বজনীন ভাষা যা বিভিন্ন জাতীয়তার মানুষ সহজেই বুঝতে সক্ষম। তাই তারা এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে সক্ষম হয়। তুলনামুলকভাবে, এসময় আল কায়েদার দিক থেকে তরুণদের তাদের সাথে যোগদানের আহবানে খুবই কমতি ছিল। তারা তাদের সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো তেমন একটা অনুবাদ করে নি। এবং তরুণদের সাথে ইংরেজি ভাষায় তাদের কোন সরাসরি এবং নিয়মিত যোগাযোগও এসময় ছিল না। এবং তাদের যেসকল ইংরেজি ভাষার ম্যাগাজিন ছিল সেগুলোও তেমন একটা নিয়মিত ছিল না। দেখা যেত দুই মাস পার হয়ে গেছে কিন্তু নতুন কোন ইস্যু এখনও বের হয়নি। আর একারণেই তরুণদের অনেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে, যারা তাদের উদ্দেশ্য করে কথা বলছিল এবং যারা তাদের ঘটনাগুলো এসব তরুণদের উদ্দেশ্য করেই সাজাচ্ছিল।
সর্বোপরি আমরা যা আলোচনা করলাম তার মূল কথা এটাই যে, এসকল ঘটনায় (অর্থাৎ আই এস আল কায়েদার বিরুদ্ধে যা দাবী করছিল) আল কায়েদার প্রতিক্রিয়া অনেক ধীরে হওয়ায় (তারা আশা করেছিল এই অবস্থা আপোষে নিজেদের মধ্যে সমাধান করা যাবে) অনেক তরুণ ইসলামিক স্টেটের সারিতে যোগদান করে। তারপর প্রাথমিকভাবে এরা ক্রমান্বয়ে তাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে সমর্থক যোগাড়ের কাজও শুরু করে। তারা তাদের বন্ধুদের অথবা যারা মাত্র কারাগার থেকে বের হয়েছে তাদের ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া বা একে সমর্থন করার জন্য আহবান করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ আমার কথাই বলা যায়, যখন আমি কারাগার থেকে ছাড়া পাই আমি দেখি যে, আমার বন্ধুদের বেশীরভাগই আইএসকে সমর্থন করছে, তখন আমিও তাদের সাথে আইএসকে সমর্থন শুরু করি, এবং আমি সেসময় শামের ঐ সকল ঘটনা এবং বিষয় যেগুলোতে মতপার্থক্য দেখা দিচ্ছিল তাতে আইএসের বিবৃতিকেই প্রাধান্য দেয়া শুরু করি।
আর আরেকটা বিষয় হল যদি আইএস তাদের প্রাথমিক প্রেরণা হারিয়ে ফেলে, তবুও তাদের পুরনো যে সব জিনিস তারা প্রোপাগান্ডার কাজে ব্যবহার করেছিল, তা আরও অনেকদিন কার্যকরভাবে তাদের সৈন্য সংগ্রহের কাজে লাগবে। যেমন শাইখ আনোয়ার আল আওলাকিকে ২০১২ সালে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু তার কথা এখনও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, এবং রিক্রুটের কাজে ব্যবহার হয়, যদিও শাইখের ইন্তিকালের পর চার বছর পার হয়ে গেছে।
তাই আল কায়েদার সামনে একমাত্র যে সমাধান খোলা ছিল, তা হল মিডিয়া প্রোপাগান্ডার ক্ষেত্রে আইএসের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দেয়া। অন্যথায় যারা জিহাদে যোগ দিতে চায় তাদের জন্য আইএসই হয়ে দাঁড়াবে একমাত্র বিকল্প।
কিন্তু আইএসের সাথে দৈনিক মিডিয়া যুদ্ধ চালানো ছাড়াও, অন্য আরেকটা বিষয় আল কায়েদাকে সাহায্য করতে পারে। তা হল আইএসের ভিডিওগুলো দেখার পর প্রচুর পরিমাণে আরব এবং অনারব যোদ্ধা এখানে যোগদান করে, যেগুলোতে আইএসকে একটি নিখুঁত যথাযথ দল হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু যখন তারা এই দলে যোগদান করে এরপর এখানকার নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ দেখে, তখন তারা ঘাবড়ে যায়। ইসলামিক স্টেট যখন রাক্কাহ এবং শারকিয়্যার মত শহরগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, এবং যখন আল আদনানি ঘোষণা দেয় যে, যারা তাদের সারিতে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবে তাদের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়া হবে, তখনই এসকল নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।
আর এই পরিস্থিতিতে অনেকে আইএস ত্যাগ করে চলে যায় এবং ভিন্নমতাবলম্বী অনেকে পরবর্তীতে আইএসে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রেকর্ড করে, যেখানে তারা আইএসের ভুলসমূহ এবং তাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা সম্পর্কে তুলে ধরে। আর এটাই ক্রমান্বয়ে তাদের সৈন্য সংগ্রহে এবং প্রোপাগান্ডার কাজে বাধার সৃষ্টি করে। এজন্য আইএস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার মধ্যে ছিল অনেক সুপরিচিত ব্যাক্তি যারা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে, তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে দেয়া এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা। উদাহরণস্বরূপ বেন আলি, ড. সা’দ আল হুনাইতি ও মাহদি জাইদান এবং আরও অনেকের কথা বলা যায় যাদের একসময় মিডিয়াতে ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এটা এই ভয়ে করা হয় যে, যদি তারা পরবর্তীতে বিচ্যুত হয়ে যায়। তাই আইএসের অধীনে এসকল মিডিয়া ব্যাক্তিত্বের মিডিয়ায় উপস্থিতি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরে তাদের দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিল যারা সংশয় প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে। এজন্য এধরনের সন্দেহ অবিশ্বাসের মোকাবিলায় তারা আগেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমন লোকদের খুঁজে বের করে, যাদের হয়তোবা পরবর্তীতে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এজন্য অনেক সময় সদস্যদের অনেক আচরণের তারা ভুল অর্থ করে বসে। এবং এই অর্থের উপর ভিত্তি করে তাদের উপর অত্যাচার ও অন্যায় শুরু করে। একবার এক সৈনিক আল আদনানি এবং বাগদাদির কোন জীবনী তাকে দেয়া যাবে কিনা তা জানতে চায়, কারণ তারা তার রাষ্ট্রের নেতা এবং সে তাদের সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চাইছিল। কিন্তু তাকে স্পাই বলে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের কার্যক্রমে এধরণের ভীতির উপস্থিতি, সৈনিকদের বেশ নাকাল করে ফেলে, বিশেষ করে যখন তাদের আনুগত্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
একারণে অনেকেই এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিল, কারণ তারা নিজেদের একটা স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে দেখতে পায়। এটা তরুণদের ক্ষেত্রেও ঘটে।
আর তরুণীদের ক্ষেত্রে, তাদের কারো কারো এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাওয়ার কারণ হল, তাদের জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা। যে তরুণী খিলাফাতের ভুমিতে কোন অভিভাবক ছাড়াই এসেছে, তাকে এভাবে একলা রাখা হবে না, হয় তাকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা হবে, আর যদি সে পূর্বেই বিবাহিত থাকে তাহলে তাকে তার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং অন্য কারো সাথে আবার বিয়েতে বাধ্য করা হবে। এমনিভাবে, যে মহিলা তার স্বামীর সাথে এখানে এসেছে, যদি তার স্বামী নিহত হয়, তবে তার সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, তার আবার বিয়ে করতে হবে। আর এই ধরণের ঘটনা বারবার মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে।
[সাথেই থাকবেন। ইনশাআল্লাহ আপডেট হতে থাকবে। ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন।]
Comment