Trends in Global Jihad Movement
বৈশ্বিক জিহাদের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ
তৃতীয় অধ্যায়ঃ
প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা
প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা
(সম্পূর্ণ পর্ব)
সাক্ষাৎকার গ্রহীতাঃ আই এস এবং আল কায়েদার অন্যতম একটা পার্থক্য হল তাদের প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা।অভিজ্ঞ জিহাদিরা সব আল কায়েদার ক্যাম্পে আর অন্য দিকে তরুণ প্রজন্মের জিহাদিরা আইএসের প্রতি আকৃষ্ট।আপনি কি এখনও মনে করেন যে, আইএস তাদের প্রেরণা হারিয়ে ফেলছে? আর ভবিষ্যতে তরুণ সুন্নি জিহাদিরা কি করবে? তারা কি জিহাদকে পরিত্যাগ করবে? বা আল কায়েদার কাছে ফিরে যাবে? নাকি তারা নতুন কোন গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করবে?
*আহমেদ আল হামাদানঃ এই প্রশ্নের উত্তর হবে অনেক জটিল। হ্যাঁ বেশীরভাগ তরুণ মুজাহিদিন আইএসের দিকে ধাবমান এবং এটা এই কারণে যে, তরুণদের বেশীরভাগেরই মারামারির প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ রয়েছে। আর তারা প্রতিশোধের নেশায় অনেক সময় এমন আগ্রাসিভাবে হত্যা এবং নির্যাতনে লিপ্ত হয়ে পড়ে যে, তাদের এই আচরণের কোন ভাল ফল বা এর কোন ক্ষতির কথা তখন তারা চিন্তা করে না। আর অনেক সময় তাদের এসব কর্মকাণ্ড শরিয়াহর সাথে মিলে না। বরং তারা এসব করে শুধুমাত্র নিজেদের সন্তুষ্টির জন্যই।
আর এজন্যই ড. আইমান আল যাওয়াহিরি শাইখ জারকাউইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, এবং তিনি তার এক চিঠিতে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, “নেতাদের জন্য একটা অন্যতম বিপজ্জনক বিষয় হল তাদের সমর্থকদের অতি উৎসাহ, বিশেষ করে তরুণদের। যারা আল্লাহ্*র দ্বীনকে সমর্থন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে আছে এবং জ্বলছে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের এই অতি উৎসাহকে প্রজ্ঞার সাথে নিয়ন্ত্রন করা।”
এছাড়াও শাইখ উসামা বিন লাদেনও এক চিঠিতে এই প্রসঙ্গে শাইখ আবু বাসীর আল উহাইশীকে লেখেন যে, “যুদ্ধসমূহে জয়ী হতে হলে তরুণদের উৎসাহী মনোভাব থাকাটা একটা জরুরী বিষয়। কিন্তু একে কখনোই যুদ্ধের এমন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে পরিণত করা যাবে না, যাতে নেতৃত্ব তরুণদের এই উৎসাহী মনোভাবের পেছনে ছুটেই যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করবেন। যেমনটা কবি মুতানাব্বি বলেছেনঃ চিন্তাভাবনা আসে সাহসীর সাহসের আগে, এটা(চিন্তাভাবনা) আসে প্রথমে তারপর আসে দ্বিতীয়টা।”
তাই আল কায়েদার মতে যেকোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে অতি উৎসাহ নয়, বরং ঐ বিষয়ের ফলাফলটাই বেশি পরিমাপযোগ্য।
যে সবচেয়ে কঠিন এবং কর্কশভাবে কথা বলে তরুণেরা তার দিকেই আকৃষ্ট হয়, আর এটা যে শুধুমাত্র আমিই লক্ষ্য করেছি এমন নয়। যেমনটা শাইখ আল মাকদিসি এ বিষয়ে বলেন যে, “যুবকদের মধ্যে অনেকেরই সঠিক শিক্ষার অভাব রয়েছে, এর কারণ হল তাদের আলেমদের মজলিসে পর্যাপ্ত সময় না দেয়া, ঠিক পরিবেশে বেড়ে না উঠা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সঙ্গীরা এবং সালাফদের শিষ্টাচার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা। তাই এখন তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অভদ্র, অভব্য আচরণের মত রোগের অসুস্থতা আর এজন্যই তারা আকৃষ্ট হচ্ছে চরমপন্থার দিকে যাকে অজ্ঞতার কারণে তারা এখন ধারণা করে নিয়েছে যে, সবচেয়ে কঠোর পথই হল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পথ।”
এর আগে এসকল অতি উৎসাহী তরুণের আল কায়েদা ছাড়া অন্য কোন অপশন ছিল না। আর তাদের নীতি সম্পর্কে আগে আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, তারা এদেরকে নিজেদের মত ছেড়ে দিতেন না এবং তাদেরকে এই নীতি অনুযায়ী চলতে বাধ্য করা হত, যা তাদের ঐ অতি উচ্চাশাকে দমিয়ে রাখতো। আর এখনতো তরুণদের হাতে আরেকটি অপশন এসেছে, যেখানে যত নিষ্ঠুর কাজ তারা করতে চায় সব করতে পারে। এবং তাদের কাজের ফলাফল ভাল হবে কিনা বা কোন লাভ হবে কিনা অথবা এর খারাপ কোন ফলাফল হবে কিনা সে সম্পর্কে কোন চিন্তাভাবনা করা ছাড়াই নিজেদেরকে এসব কাজে তারা নিয়োজিত করে। এবং অনেক অতি উৎসাহী তরুণ তাদের বহুল কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ করেছে আইসিসে এসে।
দ্বিতীয়ত, তরুণদের অনেকেই জিহাদি অভিজ্ঞতার দিকে একেবারেই নতুন এবং তাদের এই অভিজ্ঞতা আগের বয়স্ক জিহাদিদের থেকে ভিন্ন। যারা তাদের জীবন এই জিহাদেই অতিবাহিত করেছেন, এবং প্রত্যক্ষ করেছেন সেসব কারণ যা এর আগে জিহাদে ব্যর্থতা নিয়ে এসেছিল এবং আবার প্রত্যক্ষ করছেন আইএসের দ্বারা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। যেমন, সবার সাথে একই সাথে বিরোধিতা করা আর সবার সাথে একসাথে যুদ্ধের ফ্রন্ট খোলা এবং যে শত্রুর ব্যাপারে সবাই একমত তাদের সাথে যুদ্ধের তুলনায় বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের সাথে যুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়া, তাদের চরমপন্থা ও উম্মাহর থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া, যার ফলে উম্মাহর সমর্থনও তাদের থেকে দূরে সরে যাওয়া। আর এসব অভিজ্ঞতাই তাদের পূর্বের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তিতে বাধা দিচ্ছে।
আল্লাহ্*র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুমিন কখনো এক গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না।” বিপরীতদিকে তরুণ প্রজন্মের জিহাদিরা কিছু অডিও স্পিচ অথবা ভিডিও ক্লিপ ছাড়া জিহাদ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর তাদের সত্যিকারভাবে ময়দানের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতাও ছিল না, যা থেকে তারা সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
অন্য যে বিষয়টা তরুণদের আল কায়েদার চেয়ে আইএসের দিকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তাহলো তাদের বিপুল মিডিয়া ক্যাম্পেইন। যা মুলত তরুণদের উদ্দেশ্য করেই তারা চালু রেখেছিল। আর তরুণদের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ বিশেষকরে অনারব ভাষী তরুণদের সাথে। যেমন, আইএস সবসময় তাদের প্রকাশনাগুলো অনুবাদ করতে থাকে এবং তাদের বিবৃতিসমূহ কোন নির্দিষ্ট দেশের লোক দিয়ে (যেমন ইংল্যান্ড) তৈরি করিয়ে সেখানকার তরুণদের মধ্যে প্রচার করে এবং তাদেরকে নিজেদের দিকে আহবান করতে থাকে। আবার তাদের যে অফিশিয়াল ম্যাগাজিন সেটা ইংরেজি ভাষার এবং তারা আমাক্ব নিউজ নামে যে চ্যানেল চালু করেছে তাও ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়।
আইএস এটা সবসময় নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে, তারা তরুণদের আকর্ষণ করছে। তারা তাদের প্রোপাগান্ডা তীব্রতার সাথে ইংরেজি ভাষায় প্রচার করার এটা একটা কারণ হতে পারে যে, এটি একটি সার্বজনীন ভাষা যা বিভিন্ন জাতীয়তার মানুষ সহজেই বুঝতে সক্ষম। তাই তারা এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে সক্ষম হয়। তুলনামুলকভাবে, এসময় আল কায়েদার দিক থেকে তরুণদের তাদের সাথে যোগদানের আহবানে খুবই কমতি ছিল। তারা তাদের সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো তেমন একটা অনুবাদ করে নি। এবং তরুণদের সাথে ইংরেজি ভাষায় তাদের কোন সরাসরি এবং নিয়মিত যোগাযোগও এসময় ছিল না। এবং তাদের যেসকল ইংরেজি ভাষার ম্যাগাজিন ছিল সেগুলোও তেমন একটা নিয়মিত ছিল না। দেখা যেত দুই মাস পার হয়ে গেছে কিন্তু নতুন কোন ইস্যু এখনও বের হয়নি। আর একারণেই তরুণদের অনেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে, যারা তাদের উদ্দেশ্য করে কথা বলছিল এবং যারা তাদের ঘটনাগুলো এসব তরুণদের উদ্দেশ্য করেই সাজাচ্ছিল।
সর্বোপরি আমরা যা আলোচনা করলাম তার মূল কথা এটাই যে, এসকল ঘটনায় (অর্থাৎ আই এস আল কায়েদার বিরুদ্ধে যা দাবী করছিল) আল কায়েদার প্রতিক্রিয়া অনেক ধীরে হওয়ায় (তারা আশা করেছিল এই অবস্থা আপোষে নিজেদের মধ্যে সমাধান করা যাবে) অনেক তরুণ ইসলামিক স্টেটের সারিতে যোগদান করে। তারপর প্রাথমিকভাবে এরা ক্রমান্বয়ে তাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে সমর্থক যোগাড়ের কাজও শুরু করে। তারা তাদের বন্ধুদের অথবা যারা মাত্র কারাগার থেকে বের হয়েছে তাদের ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া বা একে সমর্থন করার জন্য আহবান করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ আমার কথাই বলা যায়, যখন আমি কারাগার থেকে ছাড়া পাই আমি দেখি যে, আমার বন্ধুদের বেশীরভাগই আইএসকে সমর্থন করছে, তখন আমিও তাদের সাথে আইএসকে সমর্থন শুরু করি, এবং আমি সেসময় শামের ঐ সকল ঘটনা এবং বিষয় যেগুলোতে মতপার্থক্য দেখা দিচ্ছিল তাতে আইএসের বিবৃতিকেই প্রাধান্য দেয়া শুরু করি।
আর আরেকটা বিষয় হল যদি আইএস তাদের প্রাথমিক প্রেরণা হারিয়ে ফেলে, তবুও তাদের পুরনো যে সব জিনিস তারা প্রোপাগান্ডার কাজে ব্যবহার করেছিল, তা আরও অনেকদিন কার্যকরভাবে তাদের সৈন্য সংগ্রহের কাজে লাগবে। যেমন শাইখ আনোয়ার আল আওলাকিকে ২০১২ সালে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু তার কথা এখনও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, এবং রিক্রুটের কাজে ব্যবহার হয়, যদিও শাইখের ইন্তিকালের পর চার বছর পার হয়ে গেছে।
তাই আল কায়েদার সামনে একমাত্র যে সমাধান খোলা ছিল, তা হল মিডিয়া প্রোপাগান্ডার ক্ষেত্রে আইএসের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দেয়া। অন্যথায় যারা জিহাদে যোগ দিতে চায় তাদের জন্য আইএসই হয়ে দাঁড়াবে একমাত্র বিকল্প।
কিন্তু আইএসের সাথে দৈনিক মিডিয়া যুদ্ধ চালানো ছাড়াও, অন্য আরেকটা বিষয় আল কায়েদাকে সাহায্য করতে পারে। তা হল আইএসের ভিডিওগুলো দেখার পর প্রচুর পরিমাণে আরব এবং অনারব যোদ্ধা এখানে যোগদান করে, যেগুলোতে আইএসকে একটি নিখুঁত যথাযথ দল হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু যখন তারা এই দলে যোগদান করে এরপর এখানকার নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ দেখে, তখন তারা ঘাবড়ে যায়। ইসলামিক স্টেট যখন রাক্কাহ এবং শারকিয়্যার মত শহরগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, এবং যখন আল আদনানি ঘোষণা দেয় যে, যারা তাদের সারিতে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবে তাদের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়া হবে, তখনই এসকল নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।
আর এই পরিস্থিতিতে অনেকে আইএস ত্যাগ করে চলে যায় এবং ভিন্নমতাবলম্বী অনেকে পরবর্তীতে আইএসে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রেকর্ড করে, যেখানে তারা আইএসের ভুলসমূহ এবং তাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা সম্পর্কে তুলে ধরে। আর এটাই ক্রমান্বয়ে তাদের সৈন্য সংগ্রহে এবং প্রোপাগান্ডার কাজে বাধার সৃষ্টি করে। এজন্য আইএস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার মধ্যে ছিল অনেক সুপরিচিত ব্যাক্তি যারা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে, তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে দেয়া এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা। উদাহরণস্বরূপ বেন আলি, ড. সা’দ আল হুনাইতি ও মাহদি জাইদান এবং আরও অনেকের কথা বলা যায় যাদের একসময় মিডিয়াতে ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এটা এই ভয়ে করা হয় যে, যদি তারা পরবর্তীতে বিচ্যুত হয়ে যায়। তাই আইএসের অধীনে এসকল মিডিয়া ব্যাক্তিত্বের মিডিয়ায় উপস্থিতি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরে তাদের দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিল যারা সংশয় প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে। এজন্য এধরনের সন্দেহ অবিশ্বাসের মোকাবিলায় তারা আগেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমন লোকদের খুঁজে বের করে, যাদের হয়তোবা পরবর্তীতে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এজন্য অনেক সময় সদস্যদের অনেক আচরণের তারা ভুল অর্থ করে বসে। এবং এই অর্থের উপর ভিত্তি করে তাদের উপর অত্যাচার ও অন্যায় শুরু করে। একবার এক সৈনিক আল আদনানি এবং বাগদাদির কোন জীবনী তাকে দেয়া যাবে কিনা তা জানতে চায়, কারণ তারা তার রাষ্ট্রের নেতা এবং সে তাদের সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চাইছিল। কিন্তু তাকে স্পাই বলে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের কার্যক্রমে এধরণের ভীতির উপস্থিতি, সৈনিকদের বেশ নাকাল করে ফেলে, বিশেষ করে যখন তাদের আনুগত্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
একারণে অনেকেই এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিল, কারণ তারা নিজেদের একটা স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে দেখতে পায়। এটা তরুণদের ক্ষেত্রেও ঘটে।
আর তরুণীদের ক্ষেত্রে, তাদের কারো কারো এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাওয়ার কারণ হল, তাদের জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা। যে তরুণী খিলাফাতের ভুমিতে কোন অভিভাবক ছাড়াই এসেছে, তাকে এভাবে একলা রাখা হবে না, হয় তাকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা হবে, আর যদি সে পূর্বেই বিবাহিত থাকে তাহলে তাকে তার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং অন্য কারো সাথে আবার বিয়েতে বাধ্য করা হবে। এমনিভাবে, যে মহিলা তার স্বামীর সাথে এখানে এসেছে, যদি তার স্বামী নিহত হয়, তবে তার সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, তার আবার বিয়ে করতে হবে। আর এই ধরণের ঘটনা বারবার মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে।
এখন আমি এই ইস্যুতে কিছু বলার জন্য জাবহাত আল নুসরার সাবেক আমিরকে দিচ্ছি, যিনি আলবুকামালে আছেন। তিনি এখন আমাদের তার প্রত্যক্ষ করা এধরনের কিছু গল্প শোনাবেন।
আমিরঃ এধরণের এক ভুক্তভোগী আমাকে একটি অডিও রেকর্ডিং পাঠিয়েছেন। যাতে জাবহাত ফাতেহ আল শামের মুহাজিরিনদের প্রধান আবু হাজার আল তিউনিসি এই কথা গুলো বলছিলেনঃ
“আমি আপনাকে কিছু পুরুষ এবং মহিলার গল্প শোনাবো যারা এখানে আমার কাছে পালিয়ে এসেছিল।এই গল্পগুলোর কিছু বেশ মজার আর কিছু এমন আছে যা শুনে আপনি কেদে ফেলবেন।বিভিন্ন ধরনের অনেক গুলো গল্প এখানে আছে।আমি এখানে তেমনই এক ঘটনা বর্ণনা করছি।
দুজন ব্রিটিশ মহিলা আমার কাছে এসেছিল, যাদের একজন এখন জাবহাতের কাস্টডিতে আছে।তারা পালিয়ে এসেছিল।তারা আমাকে বলছিল যে সেখানে একটি বিশাল ঘর ছিল, যেখানে তারা রাখতো বিধবা মহিলাদের এবং ঐ মহিলাদের যারা তাদের মা-বাবা থেকে পালিয়ে এসেছিল, একারনে যে, তারা (আইসিস) তাদের এটা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয় যে, তাদের মা-বাবারা কুফফার, যারা পশ্চিমা এবং মুরতাদদের দেশসমূহে থাকে।তাই এসব মহিলা এখানে এসেছিল, আর তারা তাদের এই ঘরে রেখেছে এবং তাদের বলছে যে, “তোমাদের সবার জন্য বিয়ে করা বাধ্যতামূলক।একজনও এখানে অবিবাহিত অবস্থায় থাকতে পারবে না, হোক সে বিধবা অথবা হোক সে এখানে নতুন এসেছে। ”
তারা আরও বলছিল, “ এই ঘরটি ছিল বেশ সংকীর্ণ।এপার্টমেন্টগুলো ছিল একটার উপর অন্যটা।সেখানে থাকা, খাওয়া, পান করা এবং বাথরুম ব্যবহার করাও ছিল বেশ কঠিন কারণ প্রতি একশ মেয়ের জন্য এখানে মাত্র দুটো বাথরুম ছিল”।
তারা বলছিল সেখানে একজন ইরাকী মহিলা ছিল, যে বেশ ভাল ইংরেজি বলতে পারত, আর সে ছিল এমন একজন মহিলা যার অপরাধ এবং কর্কশ আচরণ অনেকটা আল আনবারির মত ছিল এবং সে এখানের মেয়েদের প্রতি খুবই খারাপ ব্যবহার করত।সে পুরুষদের এখানে নিয়ে আসত যাদের বেশিরভাগই ছিল ইরাকী নেতারা, আর সে তাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটাকে বাছাই করে দিতো।আর তাদের সামনে জোর করে ঐ মেয়ের চেহারা উন্মুক্ত করে দেয়া হত।আর ঐ লোক যদি এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতো তাহলে তার অবশ্যই এই লোককে বিয়ে করতে হত।বেশীরভাগ বিয়ে জোর করেই সংগঠিত হত।নাহলে ঐ মেয়ের এই ঘরেই বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে থাকতে হত, যতদিন না সে নিজেকে বলে যে, “আমি নাহয় বিয়ে করলামই............ এতে কি আর হবে।” 2৩
আর এই দুই মহিলা ওখান থেকে আরও দেড় বছর আগে পালিয়ে এসেছিল যখন পরিস্থিতি ছিল আরও সহজ।তারা একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে চুক্তি করলো এবং টাকা দিল আর সে তাদের সেখান থেকে বের করে আনে।সে তাদেরকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নিতে থাকে এটা বলে যে তারা তার স্ত্রী।তারা আমাদের কাছাকাছি এক জায়গায় এসে পৌঁছায়, আমি সেখানে গিয়ে তাদের রিসিভ করি এবং আমার বাসায় নিয়ে আসি।আমার সাথে ছিল আমার স্ত্রী, মা এবং বোনেরা।সেসময় খুব ঠাণ্ডা পড়ছিল আর তারা কাঁপছিল।তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমরা এমন কাউকে চিনি কিনা যে এক ব্রিটিশ বোনকে বিয়ে করেছিল যাকে তারা আগে থেকে চিনতো।তারা ঐ ভাইকেও চিনতো।সে আগে ব্রিটেনে থাকত।আমি তাদের আমার স্ত্রীর সাথে আমাদের বাসায় রাখি, তাদের খাবার এবং পানীয়ও দিই আর এরপর তাদের ঐ ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাই।
তারা ঐ ভাইয়ের সাথে কয়েকদিন থাকল আর তারপর তার উপর তাকফির করে বসলো।এবং তারা ওখান থেকে চলে গেল, ঐ ভাই পরে আমাকে বলে যে, “তারা তোমার উপরও তাকফির করেছে”। অবশ্য তারা বলছিল যে আইসিস জালিম এবং অপরাধী।আর আমরা মনে করেছিলাম তারা তাদের আগের অবস্থা থেকে তওবা করেছে।যদিও পরে এটা আমাদের কাছে পরিস্কার হয় যে, তারা ছিল তাকফিরি আর ভাই বলছিল যে, “ তারা বলেছে তুমি একজন কাফির”।
তাই আমি বললাম, “ কেন তারা বলল আমি একজন কাফির? আমি কি করেছি?”
সে বলল, “তারা বলেছে যে তুমি জায়নিস্টদের সমর্থন কর”।
আমি বললাম, “ কিভাবে আমি জায়নিস্টদের সমর্থন করি? আমার কাছে কি একটা অস্ত্র কারখানা আছে?”
সে বলল, “ না।এটা একারণে যে তুমি পেপসি কিনেছিলে, আর তাদের একজন বলছিল “সে একজন মুরতাদ, সে এবং তার স্ত্রী।কারণ তারা আমাদের পেপসি খেতে বাধ্য করেছিল”।তখন অপরজন বলছিল, “ শুধুমাত্র সে-ই মুরতাদ কারণ সে-ই আমাদের সামনে পেপসি নিয়ে এসেছিল”।”
এরকম তরুণ, যাদের আমি আইএস থেকে বের করে এনেছি, তাদের মধ্যকার এক যুবককে আহরার বন্দী করে রেখেছিল।তারপর আহরারের নেতা মুহাম্মদ নাজিব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ আইসিস সম্পর্কে তোমার অভিমত কি?” সে বলল, “মুরতাদ”।তখন আহরারের ঐ নেতা হাসছিলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তারা কিভাবে মুরতাদ?”
আমি তাকে সেখান থেকে বের করে আনতে গেলাম, এই কারণে যে আমি তাকে তিউনিসিয়াতে চিনতাম এবং আমি জানতাম যে সে খুবই সরল এবং সাদাসিধা একজন ব্যক্তি।তাই আমি তাকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম।এরপর একবার আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তুমি কি বাগদাদি কে একজন কাফির মনে কর?” সে বলল, “হ্যাঁ, আমি তাকে কাফির মনে করি।” তাই আমি তাকে বললাম, “কেন?” তখন সে বলল, “সে হল তাগুতের শীর্ষ পাঁচের একজন যে মানুষকে তাকে উপাসনার জন্য আহবান করে।”
তাই, তাদের ব্যপারে তোমার,.................. আল্লাহর প্রশংসা............... মনে হবে যে তারা আজিব মানুষ।তুমি দেখবে যে সে সকল মানুষের উপর তাকফির করছে এবং সবার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।আর প্রথম যাদের উপর এধরণের লোকেরা তাকফির করে তারা হল আইসিস ......।আর তারা বিশ্বাস করে যে এই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে খারাপ মানুষ , যারা ইসরায়েলের চেয়েও খারাপ, তারা হচ্ছে আইসিস......!
প্রধানত তাদের ৯০% ই মনে করে যে এখানকার সব গ্রুপগুলো হচ্ছে মুরতাদ এবং কাফির যদিও তারা এদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ভাল ব্যবহার করে।এমনকি ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সৈন্যরাও যারা তাদের ওখান থেকে বের করে এনেছে আর তাদের প্রতি ভাল আচরণ করেছে।
একবার আমি এরকম একজনকে তার পরিবার সহ বের করে আনতে সাহায্য করেছিলাম, সে সময় সে কাঁদছিল। সে আইসিসের এরিয়া থেকে বের হওয়ার পর আরও তিন মাসের মত আজাজে ছিল , এর মানে এই এলাকা সম্পূর্ণ ত্যাগ করার আগে সে মোট ৫ মাসের মত এখানে ছিল। পরবর্তীতে সে যখন তুরস্কে পৌছায় তারপর এক ভাই আমাকে বলে যে, সে নাকি বলছিল, “আবু হাজারের মধ্যে অনেক ভাল গুন আছে, অনেক ভাল গুন।কিন্তু তারপরও সে একজন মুরতাদ কারণ সে এখনো জাবহাতের সাথে আছে”।
সব প্রশংসা আল্লাহর।আশ্চর্য চিন্তাধারা! আমি বলি যদি তাদের জন্য রাস্তা খোলা থাকত তাহলে তাদের একজনও আইসিসের সাথে থাকত না।এরকম খুব বড় সংখ্যক পলাতক এখন ফাইলাকের সাথে আছে এবং FSA এর সাথে আছে।আল্লাহই জানেন এদের সংখ্যা কেমন হবে।শখানেক, হতে পারে হাজারখানেক আইসিস কে ত্যাগ করে চলে গেছে।যদি দরজা খোলা থাকত, তবে এদের একজনও এখানে থাকত না।
এখানে বেশ বড় সংখ্যক নারী ও পুরুষ আছেন যাদের সাথে আমার কথা হয়েছে এবং তারা ওখান থেকে বের হতে চান।আর এটা তো জানাই আছে যে, যে আইএসকে ত্যাগ করবে চাইবে এবং ধরা পড়বে, তারপর তার বিচার করা হলে তাদের মতে তার শাস্তি হবে, হয় কারাগার অথবা মৃত্যুদণ্ড।কারণ এটা কে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে প্ররোচনা হিসেবে দেখা হবে।
তাদের কারাগারগুলো সব ভরতি হয়ে গেছে।আর এসকল কারাবন্দীদের মধ্যে বেশীরভাগই হলেন মুহাজিরেরা।ওখানে আবু হারিস আল তিউনিসি নামে এক লোক ছিলেন।তিনি আমাকে চিনতেন।তার বন্ধুরা ওখান থেকে তার আগেই বেরিয়ে এসেছিলেন।পরে আমি তাকে আমার নাম্বারটা পাঠাই।তারপর তিনি যখন বেরিয়ে যেতে চাইলেন তখন তারা তাকে ধরে ফেললো।পরবর্তীতে আমি খবর পাই যে, তারা তাকে হত্যা করে ফেলেছে।একবার তিউনিসিয়ার দুই যুবক তাদের ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।তারা পালিয়ে ইদলিবে চলে এসেছিলো।সেখানে তারা পাঁচদিন ছিল।তাদের একজন এই পাঁচদিনে এক ওয়াক্ত সালাতও পড়েনি।কারণ দ্বীনের প্রতি তার আগ্রহ ছিল একেবারে অল্প দিনের।তারা ইদলিবে এমনভাবে ধূমপান করে, হাতে কফি নিয়ে, আর বিলিয়ার্ড খেলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেন তারা এখন তিউনিসিয়ার রাজধানীতে আছে।পরে তারা তুরস্কে চলে যায়।আমি পরে শুনেছি যে, তাদের একজন পরে ইউরোপে চলে যায়, তার একজন গার্লফ্রেন্ড আছে, যে আগে আইসিসকে সাপোর্ট করতো, সেও ওখানে পালিয়েই এসেছিল।ঐ যুবক ঐ মেয়ের সাথে একসাথে থাকার জন্য সুইডেনে চলে যায়।
অবশ্যই তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদের মন এখনো, এধরনের বিকৃত তাকফিরি চিন্তাধারা থেকে মুক্ত, যদিও এদের সংখ্যা খুব কম।তিউনিসিয়ার এক ব্যবসায়ী ছিল, যার বয়স ২৪-২৫ বছরের থেকে বেশি হবে না। তার মন এধরণের বিকৃত তাকফিরি চিন্তাধারায় তেমন দূষিত ছিল না।
কিন্তু অপরদিকে যেসকল লোকেরা আইসিসকে ত্যাগ করে গেছে, তাদের বেশিরভাগই মনে করে যে, আইসিসের লোকেরা মুরতাদ।এমনকি তাদের কেউ কেউ তো যারা আইসিসকে তাকফির করে না তাদেরকেও তাকফির করে।
তাদের মধ্যে এখন কেমন যেন একটা অসহায়ত্ব কাজ করে এবং তারা এখন আর মোটেও বিশ্বাস করে না যে জিহাদ বলতে আদৌ কিছু হচ্ছে।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ সুদানে চলে গেছে এবং কেউ কেউ ইউরোপেও চলে গেছে।আবার কেউ আছে যারা আত্মসমর্পণ করেছে এবং বেশ বড় একটা অংশ এখন তুরস্কে অবস্থান করছে।স্বাভাবিকভাবেই তারা সব মানুষের উপরই তাকফির করে এবং বলে যে, যেহেতু সব মানুষই কাফির, তাই সিরিয়ার কুফফার কিংবা অন্য যেকোনো কুফফারের সাথে থাকার চেয়ে, তুরস্কের কুফফারদের সাথে থাকাই সবচেয়ে ভাল।”
আমরা আমাদের এক ভাইয়ের জবানিতে এতক্ষণ শুনলাম যে, তাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে জিহাদকে পরিত্যাগ করেছে। হতে পারে একারনে যে, তার মধ্যকার চরমপন্থি চিন্তাভাবনার বৃদ্ধি এত বেশি হয়েছে যে, তার মতে সব দলগুলোই এখন অবিশ্বাসীতে পরিণত হয়েছে (অনেকটা অবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে অবিশ্বাসীর যুদ্ধ), “তাই আমি কেনইবা আর যুদ্ধ করব?”
অথবা এটা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হতে পারে যে, বাস্তবে যখন এই গ্রুপের অবস্থা সে দেখতে পেল, সে যে আদর্শবাদী স্বপ্ন এতদিন ধরে লালন করেছে, এটা তার কাছে সম্পূর্ণ বিপরীত মনে হল। সে চিন্তা করেছিল যে, এটা হবে তার স্বপ্নের ইসলামিক স্টেট যেখানে সে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবন অতিবাহিত করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সে যা দেখল তাতে সে মনঃক্ষুণ্ণ হল এবং তার বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল এবং সে আশা হারিয়ে ফেলল এবং হতাশায় নিমজ্জিত হল, আর একারণে সে সবকিছুকেই পরিত্যাগ করে আগে সে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরে যেতে চাইল।
আর এধরণের ঘটনা আগেও ঘটেছে, এমনকি আল কায়েদার একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, শাইখ আতিউল্লাহ আল লিবির ক্ষেত্রেও এটা ঘটেছিল। যদি আল্লাহ তাকে ভাইদের সাথে ধৈর্য ধরে দৃঢ় না রাখতেন।
তিনি যখন আলজেরিয়ার জিহাদে যোগ দিয়েছিলেন, তার তখনকার অভিজ্ঞতা ছিল যে, সেখানকার এধরণের চরমপন্থিরা জিহাদকে কলুষিত করে ফেলেছিল যতদিন না এর মধ্যে ফাটল তৈরি হয় এবং এটা দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে যায়।
তিনি বলেন, “আমি নিজেই আলজেরিয়াতে একটি জটিল অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হই এবং চামড়া বাঁচিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হই। তখন আমি চিন্তা করেছিলাম যে, ভবিষ্যতে আমার জীবনে আমি আর কোন জিহাদের সম্ভাবনা দেখছি না। এবং আমি একদম নিরাশ হয়ে গিয়েছিলাম এবং বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, নৈরাশ্যবোধ এবং এধরণের আরও যা হতে পারে সব তখন আমাকে পেয়ে বসেছিল যা বর্ণনা করাও জটিল। শুধুমাত্র আল্লাহই এসময় আমাকে মজবুতি দান করে, ভাইদের সাহচর্য থেকে উপকৃত করে এবং যাদের পূর্বাভিজ্ঞতা ছিল তাদের মাধ্যমে সান্তনা প্রদান করে আমায় রক্ষা করেছিলেন”।
উপরে যে দুটো কারণ উল্লেখ করেছি, এদের উভয়টাই আইএসের জন্য ছিল ক্ষতিকর, কারণ যদি তারা তাদের দেশে ফিরে যায় এবং তারা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে তা বর্ণনা করে এবং তারা যদি মিডিয়া এবং বাস্তবতার যে বিশাল পার্থক্য আছে সেটা নিয়ে কথা বলে। এবং বিশেষ করে যদি যে ব্যাক্তি ফিরে গেছে অথবা পরিবর্তিত হয়ে গেছে, সে যদি এমন কেউ হয় যাকে মান্য করে হয় এবং তার অনেক অনুসারী আছে। কারণ এই ঘটনা অনেককেই নিজেদের অবস্থা পুনরায় বিবেচনা করতে বাধ্য করবে এবং অনেকেই পথ পরিবর্তন করে ফেলবে।
আইসিস এই ভয় পায় যে, এদের জন্য আল কায়েদা একটা বিকল্প হতে পারে এবং তাই তারা আগেই কিছু স্টেপ নিয়ে রাখে। একারণে আল কায়েদার ব্যাপারে কথা বলা, একে আক্রমণ করা এবং বিকৃত তথ্য ছড়ানোকে তারা অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে গন্য করে। তাই তুমি যদি আইসিসের দাবিক ম্যাগাজিনটা দেখো, তুমি সেখানে দেখবে যে, এদের প্রচারিত মিডিয়া প্রোপাগান্ডায় আল কায়েদাকে আমেরিকান, রাফেজি এবং নুসাইরিদের চেয়েও বেশিবার টার্গেট করা হয়েছে। তাই তুমি যখন এধরণের সত্য কিংবা মিথ্যা থেকে উদ্ভুত প্রোপাগান্ডায় তোমার মগজ ভরিয়ে ফেলবে, তখন যদি আইসিস থেকে বেরিয়ে যাওও তুমি ভুলেও আল কায়েদাতে যোগদান করবে না।
আর এটাই হচ্ছে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তত্ত্বের বাস্তব উদাহরণ যা সম্পর্কে শাইখ আবু কাতাদা তার গ্লোবালাইজেশন নিয়ে করা এক অডিও সিরিজে বলেছেন, “একটি দল তার দলের সমর্থকদের প্রতি মিথ্যা বলতে থাকে, এভাবে তারা অনবরত তাদের প্রতি মিথ্যা বলতে থাকে যতক্ষণ না এই মিথ্যাগুলো এমন নিশ্চয়তার স্তরে পৌঁছায় যে, তাদের কাছে এখন যদি সত্যকেও উন্মোচন করে দেয়া হয় তবে এটা তাদের উপর কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে না। এভাবে তারা এ মিথ্যাগুলোর সাথে বসবাসেই অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং ফিরে না আসার স্তরে পৌঁছে যায়। এই মূলনীতিটাকে নাজি প্রোপাগান্ডা মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসের কথা দিয়ে এক সাথে এভাবে বলা যায়, “ মিথ্যা বলতে থাক এবং মিথ্যা বলতে থাক যতক্ষণ না মানুষ তোমাকে বিশ্বাস করা শুরু করে”।
তাই আমাদের হাতে এখন তিনটি অপশন আছে,
১। আল কায়দাতে যোগদান করা এবং জিহাদের কাজকে চালু রাখা।
২। জিহাদকে ত্যাগ করা এবং এর সাথে আর যা আছে তাও ত্যাগ করা এবং হিজরতের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া এবং দ্বীন পালন শুরুর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। ( এটা অবশ্য যদি সরকার মেনে নেয় সেক্ষেত্রে, কারণ যদিও কেউ এরকম পদক্ষেপ নিতে চায়ও, যেহেতু সে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছে তাই দেশে ফেরা মাত্রই তার সরকার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করবে। এবং নতুন এক জীবন শুরু করার বদলে সে জিহাদি কারাবন্দীদের সাথে কারাগারে থাকা শুরু করবে এবং তারা তাকে হতাশ না হয়ে এই পথে অটল থাকার জন্য অনবরত উৎসাহ দিতে থাকবে।)
৩। একটি নতুন জিহাদি দলের উদ্ভব হতে পারে, যা হবে আল কায়েদার থেকে স্বাধীন এবং এমন সবাইকে আকর্ষণ করবে যারা আল কায়েদা এবং আইএসের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
এর মধ্যে কোন অপশনটা সবচেয়ে বেশিবার লোকে বাছাই করবে, তা এই মুহূর্তে বিচার করাটা বেশ কঠিন।
টোরে হ্যামিং কর্তৃক এই উত্তরের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
সময়ের সবচেয়ে দুর্দান্ত জিহাদি দলে যোগদান করাটা তরুণদের জন্য সবসময়ই সেরা পছন্দ। আমরা সিঞ্জার রেকর্ড থেকে জানি যে, আল কায়েদা ইন ইরাকের সময় এ দলে যোগদান করা মানুষের গড় বয়স ছিল ২৪ থেকে ২৫ বছর। CTC এর The Caliphate’s Global Workforce এ প্রসেস করা ইসলামিক স্টেটের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে আমরা দেখি যে, এখানে যোগ দেয়া লোকজনেরও প্রায় একই ধরণের বয়স অর্থাৎ ২৬ থেকে ২৭ বছর বয়সের মধ্যে।
এভাবে ক্রমান্বয়ে কোন একটা জিহাদি প্রজেক্টে যোগ দিতে ইচ্ছুক তরুণদের কাছে ইসলামিক স্টেট একটা আদর্শ অপশনে পরিণত হয়। এটা তরুণদের তাদের হতাশাকে সহিংসতার মাধ্যমে প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। আর তাদের মিডিয়া মেশিন মানুষকে তাদের দিকে আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। এখন আল কায়েদার জন্য আশার বিষয় হল, যদিও আইএসের প্রোপাগান্ডা মেশিন মানুষকে তাদের দিকে আকর্ষণে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তথাপি এরা যখন ভেতর থেকে স্টেটকে পর্যবেক্ষণ করে, সে অভিজ্ঞতা আবার তাদের আইএসকে ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল যে, এরা কোথায় যাবে? তারা কি আল কায়েদার সারিতে যোগদান করবে? জিহাদকে একেবারে পরিত্যাগ করবে? নাকি ইসলামিক স্টেট যেহেতু তাদের প্রেরণা হারিয়ে ফেলছে তাই এখন নতুন কোন আন্দোলন শুরু হবে?
এই মুহূর্তে এত তাড়াতাড়ি এই প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তরে আসা বেশ কঠিন। অবশ্যই আল কায়েদা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে মানুষদের তার দিকে আকর্ষণের চেষ্টা করবে, যারা আইএসের কার্যক্রমে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। আল জাওয়াহিরি এবং আল মাকদিসি উভয়েই লোকদের আল কায়েদাতে যোগদানের রাস্তা খোলা রেখেছেন। আল কায়েদার নেতারা তাদের ‘লম্বা এবং বোরিং’ লেকচার সমূহের জন্য সমালোচিত হচ্ছিলেন, যা ইসলামিক স্টেট নেতাদের আগ্রাসী বাগাড়ম্বরের তুলনায় বলা হচ্ছিল।
যাই হোক, আল কায়েদার জনপ্রিয়তা এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। আল জাওয়াহিরি তার সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তাগুলোতে আকর্ষণীয় এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গি ব্যবহার করছেন। এবং আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনির মত আল কায়েদার তরুণ প্রজন্মের সহানুভূতিশীল আলেমরা এই পরিবেশের পরিবর্তনে সাহায্য করছেন, যাতে তরুণদের জন্য এই মুভমেন্টের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটা সম্পূর্ণ প্রজন্ম এখন বেড়ে উঠছে যাদের কাছে সহিংসতা একেবারেই স্বাভাবিক একটা বিষয়। তাদের কেউ কেউ একসময় হয়তো জিহাদের পথে হাঁটবে, কিন্তু তারা যে আইএস কিংবা আল কায়েদাকে এজন্য বাছাই করবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই।
Comment