Announcement

Collapse
No announcement yet.

অধ্যাপক আলী রীয়াজের দৃষ্টিতে আইএস-আল কায়েদা( একটি গভেষণামূলক রিপোর্ট) ১ম পর্ব

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অধ্যাপক আলী রীয়াজের দৃষ্টিতে আইএস-আল কায়েদা( একটি গভেষণামূলক রিপোর্ট) ১ম পর্ব

    আইএস কীভাবে রাষ্ট্র ঘোষণা করল



    ইরাকের পর সিরিয়াতেও ইসলামিক স্টেটের পতন ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কি অবসান ঘটতে চলেছে? অন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার অবস্থাই বা কী? ইসলামভিত্তিক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের নিকট ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গতি–প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। চার পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব আজ ছাপা হলো।

    .
    আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিশ্বরাজনীতির দিকে যাঁরা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখেন, জুন মাসের শেষ দিকে তাঁদের মনোযোগ প্রধানত ছিল কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কার্যকলাপের ওপর। ইরাকের মসুল শহরে ইরাকের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আইএস জঙ্গিদের শেষ লড়াই, সিরিয়ার রাকায় যুদ্ধে আইএসের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশা, আবু বকর আল বাগদাদি রাশিয়ার হামলায় নিহত হয়েছেন কি না সেই বিষয়ের সত্যতা নিরূপণ; ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ের মারাউই শহরে আইএসের সশস্ত্র সমর্থকদের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের সেনাবাহিনীর অভিযান ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ছিল, যেমন লন্ডনে গাড়ি নিয়ে হামলা, আফগানিস্তানের কাবুলে ব্যাংকে বোমা হামলা ও পাকিস্তানের পারাচিনার বাজারে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন যথাক্রমে ৩৫ এবং ৭০ জনের বেশি। আইএসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় যেসব অভিযান চলছিল, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। কেননা, দৃশ্যত এই সব লড়াই থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিশেষত একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিদার হিসেবে, আইএসের ভবিষ্যৎ বোঝা যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের পরাজয় যে অত্যাসন্ন, সে বিষয়ে গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করলেও এই ধারণা আরও সুদৃঢ় হয় এই সময়েই।
    .
    কিন্তু সেই সময়ে অর্থাৎ জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে, আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস, ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা) একটি দলিল প্রকাশ করেছে, যা সবার মনোযোগ দাবি করে। কুড়ি পৃষ্ঠার এই দলিলের শিরোনাম হচ্ছে ‘কোড অব কন্ডাক্ট ফর মুজাহিদীন ইন দ্য সাব-কন্টিনেন্ট’ বা ‘উপমহাদেশের মুজাহিদদের আচরণবিধি’। এই দলিলের তাৎপর্য রয়েছে সারা বিশ্বের সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আল-কায়েদার নতুন কৌশলের ইঙ্গিতের বিবেচনায়। বাংলাদেশে যাঁরা জঙ্গিবাদবিষয়ক গবেষণা এবং কাউন্টার টেররিজমের সঙ্গে যুক্ত, এ বিষয় তাঁদের মনোযোগ দাবি করে। তবে এই দলিলের বিষয়বস্তু এবং এই দলিল কিসের ইঙ্গিত দেয়, সে সম্পর্কে আলোচনার আগে সারা পৃথিবীতে সাংগঠনিকভাবে আল-কায়েদার অবস্থা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার শক্তি ও কৌশলের বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা দরকার।
    আইএস ও আল-কায়েদার বাইরে অবশ্যই আরও সন্ত্রাসী সংগঠন আছে, যেমন সোমালিয়ায় আল শাবাব, নাইজেরিয়ার বোকো হারাম, ফিলিপাইনের আবু সায়াফ, পাকিস্তানের হরকাতুল মুজাহিদীন, যারা ইসলামপন্থী উগ্রবাদে বিশ্বাসী; ২০১০ সালের পর এদের কোনো কোনো সংগঠন, যথাক্রমে আল-কায়েদা বা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় রাষ্ট্রবহির্ভূত বা নন-স্টেট সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রধান সংগঠন হচ্ছে আইএস ও আল-কায়েদা।
    .
    গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আল-কায়েদা খুব বেশি আলোচিত হয়নি, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে আইএসের উত্থান, ইরাক ও সিরিয়ার এক বড় অঞ্চলে কর্তৃত্ব স্থাপন, তাদের অভূতপূর্ব নৃশংসতা, বিশ্বের অন্যত্র তার উপস্থিতি ও হামলা এবং সর্বোপরি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আইএসের কারণে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন ধরনের মেরুকরণ। ২০১৩ সালে আইএসের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্কচ্ছেদও এর একটি কারণ। গত কয়েক বছরে আল-কায়েদার প্রতি দৃষ্টি না থাকার অর্থ কি এই যে আল-কায়েদার মৃত্যু ঘটেছে বা আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে?
    .
    ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক অভিযান এবং ক্ষমতা থেকে তালেবানের অপসারণের পর আল-কায়েদা সেন্ট্রাল বা আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় কমান্ড ও প্রধান নেতারা হয় মারা যায় অথবা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আল-কায়েদার বিরুদ্ধে অব্যাহত সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে সংগঠনের দুর্বলতা প্রকাশিত হলেও সাংগঠনিকভাবে আল-কায়েদা সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত হয়নি। বরং সংগঠনটি সারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে তাদের কার্যক্রম বিস্তারের কৌশল গ্রহণ করে। ২০১৪ সাল নাগাদ আমরা আল-কায়েদার অন্তত তিনটি শক্তিশালী আঞ্চলিক শাখার উপস্থিতি ও সক্রিয়তা চিহ্নিত করতে পারি। সেগুলো হচ্ছে আল-কায়েদা ইন মাগরেব, আল-কায়েদা ইন আরব পেনিনসুলা এবং আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট। এর বাইরে আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আল-কায়েদার সাংগঠনিক উপস্থিতি। এসব আঞ্চলিক সাংগঠনিক কাঠামোর উপস্থিতির অর্থ এই নয় যে বিভিন্ন দেশে আলাদা করে আল-কায়েদার দেশীয় শাখা নেই। অনেকের ধারণা যে এই দেশভিত্তিক শাখাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা বিশ্লেষক বারাক মেন্ডেলসন বলেন যে আল-কায়েদা এখন পর্যন্ত সাতটি শক্তিশালী শাখা প্রতিষ্ঠা করেছে। এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব (২০০৩), ইরাক (২০০৪), আলজেরিয়া (২০০৬), ইয়েমেন (২০০৯), সোমালিয়া (২০১০), সিরিয়া (২০১২) এবং ভারতীয় উপমহাদেশ (২০১৪) (দেখুন, দ্য আল-কায়েদা ফ্র্যাঞ্চাইজ: দ্য এক্সপানশন অব আল-কায়েদা অ্যান্ড ইটস কনসিকিউয়েন্সেস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৬)।
    .
    আল-কায়েদা পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং পরবর্তী নৈরাজ্যকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ইরাক আক্রমণ আল-কায়েদাকে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। একদিকে ডি-বাথিফিকেশনের নামে সুসংগঠিত সেনাবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনাসদস্য ও অফিসারের চাকরিচ্যুতি, অন্যদিকে দখলদার বাহিনী কর্তৃক একেবারে মৌলিক সেবাব্যবস্থা, যেমন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, সাধারণ নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে পড়া একধরনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। প্রাথমিকভাবে সাদ্দাম হোসেনের সমর্থকেরা যে প্রতিরোধ তৈরি করেছিল, তা সামরিকভাবে মোকাবিলা করার সময় মার্কিন বাহিনীর আচরণ, বিশেষ করে আবু গারাইবের মতো বিভিন্ন কারাগারে অত্যাচারের ঘটনা, ইরাকিদের এই বিদ্রোহীদের প্রতিই সহানুভূতিশীল করে তোলে।
    এই পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে ২০০৫ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার পর। প্রথমত ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুন্নি জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ না করা এবং ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নুর-ই-আল মালিকি সরকারের নীতিসমূহ, যা সংখ্যালঘু সুন্নিদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের পথ সীমিত করে দেয়। মুক্তাদা আল-সদরের নেতৃত্বাধীন উগ্রপন্থী সদর বাহিনীর উত্থান, তার ব্যাপক প্রভাব এবং একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা ও অর্থনৈতিক অনুন্নয়ন এমন অবস্থা তৈরি করে, যে কারণে আল-কায়েদার পক্ষে সেখানে শক্তি সঞ্চয় সম্ভব হয়।
    .
    আবু মুসাব আল জারকাবি ১৯৯৯ সাল থেকে ‘জামাত আল তাওহিদ ওয়াল জিহাদ’ নামে যে সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলেন, তা-ই ২০০৪ সালের অক্টোবরে আল-কায়েদায় যোগ দেয় এবং আল-কায়েদা ইন ইরাক (একিউআই) হিসেবে প্রকাশিত হয়। ইরাকে মার্কিনিদের বিরুদ্ধে সাদ্দাম সমর্থক প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সখ্য থাকলেও জারকাবির লক্ষ্য হয়ে ওঠে শিয়া-সুন্নি বিভেদকে সহিংস সংঘাতে পরিণত করা। তাতে তিনি সাফল্যও লাভ করেন। কিন্তু এই কৌশল নিয়ে আল-কায়েদার নেতাদের সঙ্গে, বিশেষ করে আয়মান আল জাওয়াহিরির সঙ্গে তাঁর বিরোধের সূচনা হয়। ২০০৬ সালের গোড়ায় জারকাবি অন্য কিছু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে একত্রে গড়ে তোলেন ‘মুজাহিদীন শুরা কাউন্সিল’, উদ্দেশ্য তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। জুন মাসে জারকাবি এবং তাঁর দীক্ষাগুরু শেখ আবদেল রহমান মার্কিনদের হামলায় মারা গেলে এর নেতৃত্বে আসেন আবু আইয়ুব আল মাসরি, ১৫ অক্টোবর ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক’ বলে নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আমির-উল-মোমিনিন হিসেবে ঘোষণা করা হয় আবু উমর আল বাগদাদির নাম (আসল নাম হামিদ দাউদ খালিল আল-জাউই, মৃত্যু ২০১০)। আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতারা, এমনকি ওসামা বিন লাদেন, এই রাষ্ট্র এবং কথিত আমির-উল-মোমিনিনের প্রতি সমর্থন জানান।
    .
    ২০১০ সালে কথিত ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক’-এর প্রধান বা আমির-উল-মোমিনিনের দায়িত্ব নেন আবু বাকার আল বাগদাদি (আসল নাম ইবরাহিম ইবনে আওয়াদ ইবনে ইবরাহিম ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ আল-বাদরি); ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল ইসলামিক স্টেটকে সিরিয়ায় সম্প্রসারিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সিরিয়ায় এর অংশ বলে বিবেচিত হয় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘জাবাত আল নুসরা’। সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের সম্প্রসারণের ঘোষণা নিয়ে আল-কায়েদাপ্রধান জাওয়াহিরির সঙ্গে আবু বকর বাগদাদির প্রকাশ্য বিরোধের প্রেক্ষাপটে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আল-কায়েদা ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটায়। স্মরণ করা দরকার যে ইতিমধ্যে দৃশ্যপট থেকে অপসৃত হয়েছেন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন—২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে। তার তিন বছরের মাথায়, ২০১৪ সালের মে-জুন মাসে ইরাকের মসুলসহ বেশ কিছু এলাকা এবং সিরিয়ার একটি অঞ্চলে কর্তৃত্ব স্থাপনের পর ২৯ জুন ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া, দিনটি ছিল ১৪৩৫ হিজরি সনের রমজান মাসের প্রথম দিন। খলিফা হিসেবে ঘোষিত আবু বকর আল বাগদাদি ৪ জুলাই শুক্রবার মসুলের গ্র্যান্ড মসজিদে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন।
    .
    আগামীকাল পড়ুন: আইএসের উত্থানের সমান্তরালে আল-কায়েদার শক্তি সঞ্চয়
    আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।





  • #2
    আইএসের নামটা বেশি বেশি না বলাই ভালো।
    সম্মান নেইকো নাচে গানে,
    আছে মর্যাদা বিনিদ্র রজনী ও রণে।

    Comment


    • #3
      আলী রিয়াজ অনেক ঘাগু পাবলিক। আমাদের বিষয়গুলো ক্লিয়ারলি জানেন। তার রিপোর্টে আমি কোন ভুল তথ্য পাইনি।
      বাংলাদেশে আল-কায়েদার কার্যক্রমে তার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে । তাই সে সরকারকে আরো সতর্ক করতে তথ্যসমৃদ্ধ কলাম লিখতে বাধ্য হয়।

      Comment

      Working...
      X