ইসলামিক স্টেটের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান চরমপন্থা
the increasing extremism within
the islamic state
সাক্ষাতকার গ্রহীতাঃ the increasing extremism within
the islamic state
সাম্প্রতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল আইএসের শরিয়াহ কাউন্সিল থেকে তুরকি বিন আলির অপসারণ। ‘অজ্ঞতার অজুহাত’ এবং ‘তাকফির আল আধির’ এর ব্যাপারে তার মোডারেট দৃষ্টিভঙ্গির অভিযোগে এই অপসারণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে আইএসের মধ্যে বিন আলি ট্রেন্ডের পরাজয় এবং তথাকথিত হাজিমিদের (আহমেদ আল হাজিমির অনুসারীরা) বিজয় হিসেবে গণ্য করা যায়। এ ঘটনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আহমেদ আল হামদানঃ
তাকফিরের ব্যাপারে চরমপন্থা এমন একটি ভাইরাস যা প্রায় সকল জিহাদি গ্রুপের মধ্যে পাওয়া যায়। এটা হয় অজ্ঞতা, আবেগপ্রবনতা আর নিজেকে নিগৃহীত মনে করা এবং আরও বিভিন্ন কারণে। অবশ্য বিভিন্ন গ্রুপ এ রোগটাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে মোকাবেলা করে। কেউ কেউ এটাকে ধীরে ধীরে এমনভাবে মোকাবেলা করে যে যাদের মধ্যে চরমপন্থা আছে বলে মনে হয়, তাদের বিভিন্ন শরিয়াহ কোর্স করানো হয়। যেমনটা ওয়াজিরিস্তানের একদল যুবককে এমন কিছু শরিয়াহ কোর্স করানো হয়েছিল। আল কায়েদার কর্মকর্তারা তাদের একটি শরিয়াহ কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করেন যেখানে তাদেরকে তাদের চিন্তাধারা সংশোধনের জন্য আনা হয়েছিল।৩৬
অথবা এই চরমপন্থিদের ঐ গ্রুপ থেকে বিতারণ করা। যেমন শাইখ আবু মুস’আব আয যারকাউই তার গ্রুপের এক সমন্বয়কারীকে গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, যিনি (সমন্বয়কারী) ইরাকের জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য বিন বায এবং ইবনে উসাইমিনের মত সৌদি উলামাদের উপর তাকফির করাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন।৩৭
কিন্তু এমন কিছু গ্রুপও আছে যারা এই রোগকে তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করে না এবং করার চেষ্টাও করে না। তাই এই রোগ দৃঢ়ভাবে তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং আপনি দেখবেন যে হঠাত করে এর নেতারা গ্রুপের চরমপন্থি লবির পক্ষ থেকে চাপ অনুভব করবে এবং তাদেরকে এদের আদর্শ ও চিন্তাধারা গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা হবে। অথবা এই চরমপন্থিরা এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। যেমনটা আলজেরিয়ার gia এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল যখন আয জাইতুনির চরমপন্থি অংশটি, এই গ্রুপের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং এর ক্ষমতা নিয়ে নেয় এবং তাদের আদর্শ সমগ্র গ্রুপের উপর চাপিয়ে দেয়।৩৮
আইএস হল এমন গ্রুপগুলোর মধ্যে যারা প্রথমথেকেই চরমপন্থিদের মোকাবেলায় কোন ব্যবস্থা নেয় নি। আর তাই এটা ধীরে ধীরে তাদের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আমি শতভাগ নিশ্চিত নই, তবে ধারণা করি যে, এর নেতারা তাদের সৈন্যদের তাকফিরের ব্যাপারে অতিরঞ্জন করার ব্যাপারে নিজেরাই ছিলেন বিভ্রান্ত। এবং তারা সৈন্যদের সামনে দুর্বলতা প্রকাশিত হবে ভেবে ভয় পেতেন, এজন্য তারা তাদের সাথে এবিষয়ে মানিয়ে চলতেন। এভাবে তারা অবশ্য পরবর্তীতে আরও একধাপ এগিয়ে তাদের নিজেদের উপরও তাকফির করাকে প্রতিরোধ করেছেন, যাতে এই ইস্যু তাদেরকে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে নিয়ে না যায়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৩৬
আসলে শাইখ উসামা বিন লাদেন সাধারণ সৈন্যদের মধ্যে, কাউকে তাকফির করা নিয়ে আলোচনা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “একটি বিশুদ্ধ হাদিসে আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইকে কাফির বলে সম্বোধন করে, তবে তাদের যে কোন একজন অবশ্যই কাফির হয়ে যাবে। যদি তার কথা ঠিক হয় (ঐ ব্যক্তি কাফির হয়, তাহলে তো হলো), আর তা না হলে এটা তার দিকেই ফিরে আসবে।” তাই এই ইস্যু নিয়ে আলোচনার করার ব্যাপারে এটা একটা খুবই কঠোর সতর্কবার্তা, বিশেষ করে এই তাকফির যদি কোন ব্যাক্তির উপর হয়। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করুন এবং সতর্ক হোন এবং আবার সতর্ক হোন। মানুষকে তাকফির করা খুবই বড় একটি গুনাহ। এটা সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজগুলোর মধ্যে একটা। তাই নিজের জিহ্বাকে সংযত করুন।
আর যিনি কথা বলবেন তিনি যদি আহলে ইলমদের মধ্যে কেউ হন এবং তাকফিরের সকল নিয়মগুলো তার জানা থাকে তাহলে সমস্যা নেই। তিনি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন এবং তার ভাইদের এই বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় দুর করে দিতে পারেন। যেমন কিছু মানুষ ইমান ভঙ্গকারী কাজে জড়িত তাদের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা। তাই এটা একটা বিস্তৃত এবং সংবেদনশীল বিষয়। কখনো একজন মানুষ এমন কোন কাজ করতে পারে যা কুফর, কিন্তু তার অজ্ঞতা কিংবা তার উপর হয়ত বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এজন্য সে কাফিরে পরিণত হবে না। এগুলো খুবই বিস্তৃত ব্যাপার তাই সাধারণ ভাইদের জন্য এগুলো শিখা কিংবা এগুলোতে বিশেষজ্ঞ হওয়াটা সহজ নয়। কিন্তু আমরা আমভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তাই আল্লাহকে ভয় করুন এবং এই বিষয় থেকে দুরে থাকুন এবং অধিকপরিমাণে আল্লাহর স্মরণে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বারবার বলে বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আল্লাহর এসব অনুগ্রহের জন্য শুকরিয়া প্রকাশ করুন। যতদিন না আমরা আল্লাহর সাথে মিলিত হচ্ছি ততদিন যেন তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন। তাই তুমি কথা বলার আগে চিন্তা কর যে, তোমার একথার প্রভাব কি হবে। আর আল্লাহর আনুগত্যে এবং তার রাস্তায় জিহাদে কঠোর হও। এবং ঐসব বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর যে ব্যপারে তোমার গভীর জ্ঞান নেই। এবং যেকোনো সময় হুটহাট ফতওয়া দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।
[আস সাহাব মিডিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘বিশ্বাস ঔদ্ধত্যকে পরাজিত করে’ ভিডিওর ৫৮ঃ০০ মিনিট হতে]
আফগানিস্তানের সাবেক মুজাহিদ এবং গুয়ান্তানামো কারাগারের সাবেক বন্দি ওয়ালিদ মুহাম্মদ আল হাজ্জ তার টুইটার পেজে লেখেন, “ আমাদের নেতা শাইখ উসামা বিন লাদেন, আল্লাহ তার উপর রহম করুন, একবার ফারুক মিলিটারি ক্যাম্পের সকল সদস্যকে, শুধুমাত্র গার্ডদের গেটে ছেড়ে দিয়ে, এক জায়গায় জড়ো করলেন, যখন তিনি শুনতে পেলেন যে, ক্যাম্পের মুজাহিদিনদের মধ্যে কেউ কেউ এই বিষয়ে তাদের মতামত দেয়া শুরু করেছে যে, অমুক ধরণের লোক একজন কাফের, অমুক ধরণের লোক একজন মুরতাদ। তখন তিনি আমাদের জড়ো করলেন এবং বললেন হে আমার পুত্রেরা!! তোমরা এখানে এসেছ প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতির জন্য। তাই নিজেদেরকে তাকফিরের বিষয়ে জড়িত করো না, এই বিষয়টা আলেমদের জন্য ছেড়ে দাও। ”
৩৭
আল কায়দা ইন ইরাকের শরিয়াহ কমিটির একজন সদস্য, মায়সারাহ আল গারিব বলেন, “ শামের এক ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছিল যিনি সম্প্রতি ইরাকে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি তার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা আমাকে বলেন। সংক্ষেপে যা ছিল, ইরাকে প্রবেশের আগে তিনি একজন ভাইয়ের সাথে দেখা করেন যিনি আরব উপদ্বীপের বড় এক গোত্র থেকে এসেছিলেন। তো তারা যখন খাচ্ছিলেন তখন সমন্বয়কারী, ভাইদের বিন বায এবং ইবনে উসাইমিন সম্পর্কে তাদের বিশ্বাসের কথা জিজ্ঞেস করলেন। এতে সমন্বয়কারী নিশ্চিত হলেন যে, উপদ্বীপ থেকে আসা ভাই তাদের উপর তাকফির করেন না। তাই এই মেজবান এতে খুব অবাক হলেন এবং ঐ ভাইকে সমালোচনা করছিলেন আর বললেন যে, শাইখ আবু মুসআব তাদের উভয়ের উপর তাকফির করেন এবং যে তাদের উপর তাকফির করবে না তারা জিহাদের ভূমিতে প্রবেশ করতে পারবে না। তখন ঐ ভাই বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি তাহলে আমাকে ইরাকে প্রবেশ করতে দিবেন না?” এবং মেজবান জবাব দিলেন , “হ্যাঁ”। আর তিনি তাই করছিলেন, যা তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি ঐ ভাইকে যেখান থেকে তিনি এসেছিলেন সেখানেই পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ঐ ভাই (শামের) যার সাথে আমার কথা হয়েছিল, তিনি ছিলেন ভীত এবং তিনি এই ব্যাপারে তার মনোভাব প্রকাশ করছিলেন না এই ভয়ে যে, তাকেও হয়ত জিহাদ এবং রিবাতের ভূমিতে প্রবেশে বাধা দেয়া হবে। আমি সাথে সাথেই এই ঘটনা আমাদের শাইখের (জারকাউই), আল্লাহ তার উপর রহম করুন, কাছে জানাই, বিশেষত একারণে যে তিনি আমাকে বিশ্বাস করতেন যে জিহাদের ময়দানের সকল খবর তাকে জানাতে কারণ নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি লুকিয়ে থাকার প্রাক্কালে তার অনুসারীরা হয়ত তার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না। তো এ ঘটনায় তিনি খুবই রেগে যান এবং তিনি ঐ লোকদের হুমকি দেন যারা তার উপর এমন মতামত চাপিয়ে দিচ্ছে যা তিনি বিশ্বাস করেন না এবং তিনি তার সহকারীকে আদেশ দেন এই বিষয়টা তদন্ত করে দেখার জন্য। এবং যদি এটা সত্য হয় তাহলে ঐ মেজবানকে যেন এই গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর শাইখ আমাকে বললেন, “এটা সত্য যে আমি বিশ্বাস করি তারা তাদের ফতওয়া সমূহের দ্বারা উম্মাহকে বিভ্রান্ত করছেন, কিন্তু এজন্য আমি তাদের উপর তাকফির করি না। আল্লাহর কসম যদি আরব উপদ্বীপের ঐ ভাই (বাদশা) ফাহাদের উপরও তাকফির না করত, তাও আমি তাকে জিহাদ করা থেকে বিরত করতাম না। ইরাকে এমন অনেকেই প্রবেশ করেছে যারা সৌদি সরকারের উপর তাকফির করে না।”
["আল জারকাউইকে আমি যেমন জানতাম" -৩/৬ আল ফুরকান ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত]
৩৮
শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহ, যিনি সেসময় আলজেরিয়াতে ছিলেন, জামাল জাইতুনি (আবু আব্দুর রহমান আমিন) কর্তৃক সংঘটিত অভ্যুথানের বিষয়ে বর্ণনা করেন। যা সংঘটিত হয়েছিল ঐ গ্রুপের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। এসময় এই গ্রুপের মিডিয়া অফিসিয়ালদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে একটা বিবৃতি প্রকাশ করার জন্য বাধ্য করা হয় যাতে শুরা কাউন্সিলের নামে বলা হয় যে পূর্ববর্তী আমিরকে অপসারণ করা হয়েছে এবং জাইতুনি তার স্থানে নিয়োগ পেয়েছে। এটা সে (জাইতুনি) দ্রুত সব ব্যাটালিয়ন এবং ব্রিগেডে ছড়িয়ে দেয় যা (বিবৃতি) ধীরে ধীরে সবখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এরপর সে সত্যিকারের আমির এবং শুরা কাউন্সিলের সাথে দেখা করে এবং ক্ষমতা থেকে সরে যেতে অস্বীকার করে এটা বলে যে, "তলোয়ারই আমার এবং তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করবে।" তাই উনারা সরে গেলেন এবং রক্তপাত এড়াতে নেতৃত্ব তার জন্য ছেড়ে দিলেন।" ['আলজেরিয়ান অভিজ্ঞতা' শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহর বই, পৃষ্ঠা ১৬]
[চলবে]
ভাই দুয়া করবেন। বাকি অংশ ইন শা আল্লাহ সামনে আসছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েতের উপর রাখেন এবং শহীদি মৃত্যু দান করেন।
আর কোন ভুল ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে অবশ্যই জানাবেন।
ওয়াসসালাম।
Comment