ইসলামিক স্টেটের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান চরমপন্থা
the increasing extremism within the islamic state
সাক্ষাতকার গ্রহীতাঃthe increasing extremism within the islamic state
সাম্প্রতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল আইএসের শরিয়াহ কাউন্সিল থেকে তুরকি বিন আলির অপসারণ। ‘অজ্ঞতার অজুহাত’ এবং ‘তাকফির আল আধির’ এর ব্যাপারে তার মোডারেট দৃষ্টিভঙ্গির অভিযোগে এই অপসারণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে আইএসের মধ্যে বিন আলি ট্রেন্ডের পরাজয় এবং তথাকথিত হাজিমিদের (আহমেদ আল হাজিমির অনুসারীরা) বিজয় হিসেবে গণ্য করা যায়। এ ঘটনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আহমেদ আল হামদানঃ
তাকফিরের ব্যাপারে চরমপন্থা এমন একটি ভাইরাস যা প্রায় সকল জিহাদি গ্রুপের মধ্যে পাওয়া যায়। এটা হয় অজ্ঞতা, আবেগপ্রবনতা আর নিজেকে নিগৃহীত মনে করা এবং আরও বিভিন্ন কারণে। অবশ্য বিভিন্ন গ্রুপ এ রোগটাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে মোকাবেলা করে। কেউ কেউ এটাকে ধীরে ধীরে এমনভাবে মোকাবেলা করে যে, যাদের মধ্যে চরমপন্থা আছে বলে মনে হয়, তাদের বিভিন্ন শরিয়াহ কোর্স করানো হয়। ওয়াজিরিস্তানের এরকম একদল যুবককে এমন কিছু শরিয়াহ কোর্স করানো হয়েছিল। আল কায়েদার কর্মকর্তারা তাদের একটি শরিয়াহ কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করেন যেখানে তাদেরকে তাদের চিন্তাধারা সংশোধনের জন্য আনা হয়েছিল।৩৬
অথবা এই চরমপন্থিদের ঐ গ্রুপ থেকে বিতারণ করা। যেমন শাইখ আবু মুস’আব আয যারকাউই তার গ্রুপের এক সমন্বয়কারীকে গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, যিনি (সমন্বয়কারী) ইরাকের জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য বিন বায এবং ইবনে উসাইমিনের মত সৌদি উলামাদের উপর তাকফির করাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন।৩৭
কিন্তু এমন কিছু গ্রুপও আছে যারা এই রোগকে তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করে না এবং করার চেষ্টাও করে না। তাই এই রোগ দৃঢ়ভাবে তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং আপনি দেখবেন যে হঠাৎ করে এর নেতারা গ্রুপের চরমপন্থি লবির পক্ষ থেকে চাপ অনুভব করবে এবং তাদেরকে এদের আদর্শ ও চিন্তাধারা গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা হবে। অথবা এই চরমপন্থিরা এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। যেমনটা আলজেরিয়ার GIA এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল যখন আয জাইতুনির চরমপন্থি অংশটি, এই গ্রুপের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং এর ক্ষমতা নিয়ে নেয় এবং তাদের আদর্শ সমগ্র গ্রুপের উপর চাপিয়ে দেয়।৩৮
আইএস হল এমন গ্রুপগুলোর মধ্যে যারা প্রথমথেকেই চরমপন্থিদের মোকাবেলায় কোন ব্যবস্থা নেয় না। আর তাই এটা ধীরে ধীরে তাদের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আমি শতভাগ নিশ্চিত নই, তবে ধারণা করি যে, এর নেতারা তাদের সৈন্যদের তাকফিরের ব্যাপারে অতিরঞ্জন করার ব্যাপারে নিজেরাই ছিলেন বিভ্রান্ত। এবং তারা সৈন্যদের সামনে দুর্বলতা প্রকাশিত হবে ভেবে ভয় পেতেন, এজন্য তারা তাদের সাথে এবিষয়ে মানিয়ে চলতেন। এভাবে তারা অবশ্য পরবর্তীতে আরও একধাপ এগিয়ে তাদের নিজেদের উপরও তাকফির করাকে প্রতিরোধ করেছেন, যাতে এই ইস্যু তাদেরকে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে নিয়ে না যায়।
- আইএসের যে সকল অবস্থা আমাকে এসব কথা বলতে প্রণোদিত করেছে, তার মধ্যে আছে, তারা হঠাৎ করে কোন একটা বিষয়কে তাকফিরের সাথে সম্পর্কিত করে নেয়, এরপর তারা বলা শুরু করে যে, যে ঐ বিষয়গুলো সমর্থন করবে তারা পথভ্রষ্ট।
- আহরার আশ শামের শুরা কাউন্সিলের একজন সদস্য আবু ইয়াযিন আশ শামীর বর্ণনা অনুযায়ী শামে আইসিসের রাষ্ট্র ঘোষণার পর, উনি এবং আবু মুহাম্মদ আল আদনানী এবং আইএসের একদল শরিয়াহ কর্মকর্তার মধ্যে যে বিতর্ক হয়েছিল, তাতে এদের মধ্যকার উপস্থিত একজন উল্লেখ করেন যে, তারা আসলে বাধ্য হন আত্মরক্ষামূলক অবস্থায় যেতে। যখন শাইখ যাওয়াহিরি মুরসিকে 'ডক্টর মুরসি' বলে সম্বোধন করেন তখন আইএসের সৈন্যেরা তাদের নেতাদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। অর্থাৎ সৈন্যেরা আছে আক্রমনাত্নক অবস্থানে আর নেতারা রক্ষনাত্নক।৩৯
তাই এটা এখন স্পষ্ট যে আইসিস তাদের ঐ সকল সৈন্যদের দমন করতে চাচ্ছে, যারা তাদের উপর দুর্বলতার অভিযোগ আনছে। এভাবে তাদের নীতি নির্ধারিত হচ্ছে তাদের সৈন্যদের আচরণ এবং প্রতিক্রিয়ার উপর। আর তারা চরমপন্থার মোকাবেলা করছে চরমপন্থা দিয়ে।
এখন আমরা যদি 'আধিরের' (এমন ব্যাক্তি যে অন্যের উপর অজ্ঞতার অজুহাতে তাকফির করে না) উপর তাকফির করার ব্যাপারে কথা বলতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা লাগবে যে “শিরকে আকবরের ক্ষেত্রে অজ্ঞতার অজুহাত খাটবে না”।
শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব, তার পূর্ববর্তী কিছু উলামার লেখা হতে ব্যাখ্যা করেন যে একজন মুসলিম যে শিরকে আকবরে লিপ্ত তার ক্ষেত্রে বলা যাবে না যে সে অজ্ঞতা কিংবা অপব্যাখ্যার শিকার। শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রেই তার থেকে অজুহাত গ্রহণ করা হবে আর সেটা হল যদি তাকে বাধ্য করা হয় অথবা শত্রুদের দ্বারা বলপ্রয়োগের শিকার হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আমি একটি কবরকে উদ্দেশ্য করে সিজদা করি এবং ঐ মৃত মানুষের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করি যে ঐ কবরে আছে এবং বলি যে, “হে আলী! আমার বিষয়গুলো আমার জন্য সহজ করে দাও এবং আমাকে সাহায্য কর”।
যেসব ইবাদতের বিষয়গুলো শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই খাস যেমন সেজদা করা এবং এমন কোন প্রয়োজনের জন্য নিজেকে সমর্পণ করা যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ পূরণ করার ক্ষমতা রাখে না। তাই আপনি যখন দাঁড়াবেন এবং সেজদা করবেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দিকে এর মানে হল আপনি অন্য কাউকে এমন একটা বিষয়ে আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করছেন যা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ক্ষেত্রে খাটে না।
তার মানে আপনি এখন শিরকে লিপ্ত আছেন (আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করার মাধ্যমে)।
এবং এখন আমার যদি এটা অজানা থাকে যে এই কাজটি শিরক (আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা), তাহলে কি শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব আমার অজ্ঞতার অজুহাতে আমাকে বাচাতে পারবেন? এর উত্তর হবে ‘না’। এবং যদি আমি এই ভুল ব্যাখ্যার কারণে চিন্তা করি যে এই লোকটি আমার এবং আল্লাহর মাঝে মধ্যস্ততাকারী তাহলে কি শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব আমাকে এই অজুহাতে বাচাতে পারবেন যে আমি অপব্যাখ্যার শিকার? এর উত্তরও হবে ‘না’।
কিন্তু যখন একদল লোক এসে আমাকে অস্ত্র দিয়ে হুমকি দিবে এবং তারা এই বিষয়ে সিরিয়াস থাকবে আর তাদের হাত থেকে আমার পালানোর কোন উপায় থাকবে না, এবং আমাকে বলবে, “এই কবরের উদ্দেশ্যে সেজদা কর নাহয় আমরা তোমাকে হত্যা করব”। তখন তিনি আমার উপর অজুহাত দিতে পারবেন। তাই এই সেজদা করাটা ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে যতক্ষণ এই কাজকে আপনি মন থেকে ঘৃণা করছেন। আর এটাই হল একমাত্র সময় যখন শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব আমার অজুহাত গ্রহণ করবেন।
কিন্তু কেন প্রথম দুই ক্ষেত্রে আমার অজুহাত খাটবে না? কারণ আল্লাহ আমাদের কাছে শিরককে একেবারে বিস্তারিতভাবে কুরআনের আয়াতসমূহে সহজভাবে বুঝার মত করেই বর্ণনা করেছেন, যাতে আমরা সাবধান হই। তাই যার কাছেই কুরআন পৌঁছেছে, সে - ই এ ব্যাপারে হুজ্জাহ (সুস্পষ্ট দলিল) প্রাপ্ত হয়েছে। আর এ ব্যাপারে পুনরায় তার সংশয় নিরসন করাটা বাধ্যতামূলক নয়। তাই এ বিষয়টার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, যার কাছেই কুরআন পৌঁছেছে, সে-ই হুজ্জাহ (সুস্পষ্ট দলিল) প্রাপ্ত হয়েছে।
তাই একজন মুসলিমের উপর তখনই তাকফির করা যাবে, যদি সে এমন কোন কাজ করে যা শিরকে আকবর হিসেবে সালাফি (পশ্চিমাদের কাছে যারা ওয়াহহাবি বলে পরিচিত) মাজহাবে যুগ যুগ ধরে পরিগণিত হয়ে আসছে। এই বিষয়টা নিয়ে নতুন করে আবার পর্যালোচনা শুরু হয়েছে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের (বর্তমান রাজত্ব) প্রতিষ্ঠার পর পর আর একারণে এখন আমরা এ বিষয়টাতে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাচ্ছি।৪০ তা স্বত্বেও এখনও কিছু সৌদি অফিসিয়াল ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব এই ইজমায়ী দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেন।
উদাহরণস্বরূপ,
- কমিটি অফ দ্য সিনিয়র স্কলারস এর সদস্য, ড. সালিহ আল ফাউযান শাইখ রশিদ আবুল ’আলা এর লেখা এমন দুটি বই ‘দাবিত তাকফির আল মু’আইয়্যান’ এবং ‘আরিদ আল জাহল’ এর ভূমিকা লিখেছেন, যা সৌদি কারাগারসমূহে বহুল প্রচারিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।
- এছাড়া “বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ফতওয়াসমূহের প্রচার এবং পথপ্রদর্শন সংস্থা” (রিসালাত আল বুহুছ আল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা ওয়া দা’ওয়াহ ওয়াল ইরশাদ) এর সদস্য শাইখ ইবনে জিবরীনও সৌদি কারাগারসমূহে বহুল প্রচারিত শাইখ মাদহাত আল ফারাজ এর বই “আল উজর বিল জাহল তাহতা আল মিহজার আশ শারি’ঈ” এর ভূমিকা লিখেছেন।
- এছাড়া “বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ফতওয়াসমূহের প্রচার এবং পথপ্রদর্শন সংস্থা” (রিসালাত আল বুহুছ আল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা ওয়া দা’ওয়াহ ওয়াল ইরশাদ) এর সদস্য শাইখ ইবনে জিবরীনও সৌদি কারাগারসমূহে বহুল প্রচারিত শাইখ মাদহাত আল ফারাজ এর বই “আল উজর বিল জাহল তাহতা আল মিহজার আশ শারি’ঈ” এর ভূমিকা লিখেছেন।
তাই দেখা যায় যে, সালাফি মাজহাবের মধ্যের বিভিন্ন দল কিছু বিষয়ে পরস্পর দ্বিমত পোষণ করলেও কিছু বিষয়ে তারা একই মতের অনুগামী।
এখন আইএসের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক গ্রুপ এবং লবি যদি শিরকে আকবরের ক্ষেত্রে অজ্ঞ লোকেদের অজুহাতকে গ্রহণ না করে, তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
এই মতবিরোধের ইস্যু শুধু এটাই নয়, আসলে আর এর সাথে আইসিসের এবং এর নেতাদের বৈধতার বিষয়টাও জড়িয়ে আছে।
এটা হচ্ছে তাকফির উল আধির (এমন ব্যাক্তির উপর তাকফির করা, অজ্ঞতার অজুহাতের কারণে যে অন্যের উপর তাকফির করে না) এর ইস্যু এবং এর উপর ভিত্তি করে যে চেইন তাকফির করা হয় সেই ইস্যু।
ধরা যাক, ‘সুলাইমান’ নামের এক লোক এমন একটা কাজ করল যা শিরক। এখন এই সব গ্রুপের মত অনুসারে সে একজন মুশরিক এতে কোন মতবিরোধ নেই। এখন, এই বিষয়ে ‘আহমেদ’ তার কিছু সংশয় থাকার কারণে সুলাইমানের উপর তাকফির করে না। এবার তারা সবাই দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে যায় - তুরকি বিন আলীর গ্রুপ বলে যে, আহমেদ একজন কাফিরে পরিণত হবে না যতক্ষণ না তার সামনে সুলাইমানের শিরকী কাজের ব্যাপারে তার সংশয় দুর করা হয়। যাতে বিষয়টা তাকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং তার সন্দেহ দুর হয়ে যায়। (এভাবে কারো সন্দেহ দুর করাকে বলে তাকে হুজ্জাহ দেওয়া।)
তাই তুরকি বিন আলী, এই ধরণের লোক যে একজন মুশরিক অথবা কাফিরকে তাকফির করে না, তাঁর ব্যাপারে বলেন যে, “আর এমন ব্যাক্তি যে শরিয়াহ থেকে দলিল পাওয়ার পর অন্য কোন লোকের কুফরের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও সে ঐ ব্যাক্তিকে তাকফির করে না, সে কাফির”।৪১
তাই উপরের এই বিবৃতি থেকে এটাও বুঝা যায় যে, যার কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়নি তাঁর উপর তাকফির করা যাবে না।
অন্যদিকে হাজিমি গ্রুপ সাথে সাথেই আহমেদের উপর তাকফির করবে। এই বিষয়ে তারা তাকে বুঝানো কিংবা তার সংশয় দুর করার কোন প্রয়োজনই মনে করবে না। এমনকি যে ব্যাক্তি আহমেদকে তাকফির করবে না, তারা তাকেও তাকফির করবে।
ইয়েমেনে ইসলামিক স্টেটের একজন শরিয়াহ কর্মকর্তা আবু বিলাল আল হারবি, যিনি আগে আল হাজিমির কাছের লোক ছিলেন বলেন যে, “আমরা তার এই সাম্প্রতিক ফিতনা, আধিরের উপর তাকফির করা থেকে মুক্ত। এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, যে অজুহাত করছে তাকে ততক্ষণ তাকফির করা যাবে না, যতক্ষণ এ বিষয়টা তাকে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে এবং তার সকল সন্দেহ দুর করা হয়েছে। আমি আল হাজিমিকে চেইন তাকফিরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন সে বলে যে, এটা চেইনের তৃতীয় ব্যাক্তি পর্যন্ত যায় (যে শিরককারির কাফের হওয়ার ব্যাপারে অজুহাত দেখায়, যে তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে অজুহাত দেখায়, যে তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে অজুহাত দেখায় এভাবে চেইনের তৃতীয় ব্যাক্তি পর্যন্ত অর্থাৎ চেইন তাকফিরে পরপর তিনজন লোক)। এবং আমি তাকে এভাবে শুধুমাত্র তৃতীয় ব্যাক্তি পর্যন্ত তাকফির করার দলিল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি, কিন্তু সে আমাকে কোন প্রমাণ দেখাতে পারে নি”।৪২
এই মতবিরোধ কিভাবে আইসিস এবং এর নেতাদের বৈধতায় প্রভাব ফেলে?
- এদের মতে শিয়ারা মুশরিক এবং কাফির।
- শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরি সব শিয়াদের উপর তাকফির করেন না। তিনি সাধারণ জনগণের জন্য অজুহাত প্রয়োগ করেন এবং একারণে হাজিমি গ্রুপের মতে তিনি একজন কাফির ও মুশরিক।
- বাগদাদি শাইখ জাওয়াহিরিকে পূর্বে একবার এই বলে সম্বোধন করেছেন, “আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন” এবং “মুজাহিদ শাইখ”, আর এর মানে হল তিনি (বাগদাদি) তাঁর উপর তাকফির করেন না।
- তাই তিনি (বাগদাদি) নিজেও একজন কাফির।
আর যদি নেতাই হয় কাফির তাহলে এটা কোন ইসলামিক স্টেটই নয়!!!
আর দ্বিতীয় সমস্যাটি হল অনেকেই আছে যারা আরবিতে কথা বলতে পারে না। তারা রাশিয়ান কিংবা ইংরেজিতে কথা বলে, আর তাদের মধ্যে এ বিষয়টা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে এটা তাদের মধ্যে শিকড় গেড়ে ফেলছে। আর আধিরের (অজুহাতকারির) উপর তাকফির করার এই ইস্যুর ক্ষেত্রে, আইসিস তাদের প্রোপাগান্ডা গুলো মূলত এই দুটি ভাষাতেই ছড়িয়ে থাকে, আর তাদের কাছে যারা আসে, বিশেষ করে যারা রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে তাদের মধ্যে আধিরের উপর তাকফির করার এই বিদ’আতটা সবচেয়ে প্রকট। আর এখন মূলত ঐ ধরণের চিন্তাধারার লোকেরাই আইসিসে প্রবেশ করছে, ফলে আইসিসের মধ্যে এই ধরণের লোকদের প্রভাব ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। তাদেরকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা যায়ঃ
১। প্রথম গ্রুপে থাকবে তারা, যারা আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
২। দ্বিতীয় গ্রুপে থাকবে যারা আইসিস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং এটা থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে।
৩। এবং তৃতীয় গ্রুপটা হল যারা আইসিসের বিভিন্ন পদে আছে এবং এর ভিতরে নিজেদের চিন্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
২। দ্বিতীয় গ্রুপে থাকবে যারা আইসিস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং এটা থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে।
৩। এবং তৃতীয় গ্রুপটা হল যারা আইসিসের বিভিন্ন পদে আছে এবং এর ভিতরে নিজেদের চিন্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এই লোকেদের নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্বে আইসিস এদের নেতাদের সরিয়ে দেয়ার একটা কৌশল নিয়েছিল।৪৫ কিন্তু এটা এখন আর তাদের হাতের নাগালে নেই এবং বাড়তে বাড়তে আধিরের উপর তাকফিরকারি লোকের সংখ্যাই এখন বেশি এবং এদেরকে এখন আর পূর্বের (যখন তারা সংখ্যায় কম ছিল) সেই একই কৌশল ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
এখন আমরা শেষ পয়েন্টটা নিয়ে আলোচনা করবো, যেমনটা আইসিস ‘আধিরের’ (অজুহাতকারি) উপর তাকফিরের ইস্যুতে তাদের বিবৃতিতে বলেছে। ৪৬
বাস্তবতা হল এই বিবৃতিটি আধিরের উপর তাকফির করার তাদের মূলনীতির সাথেই খাপ খায় না। এদের মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
১। প্রথম পৃষ্ঠায় আধিরের উপর তাকফিরের মাসাআলায় কি কি ভুল আছে তা দেখানো হয়েছে। যারা আধিরের উপর তাকফির করে তারা বলে যে, যে শিরকী কাজ করে তার উপর তাকফির না করায় আধির নিজেও একজন মুশরিকে পরিণত হয়। বিবৃতিটিতে এই যুক্তিটি ভুল বলা হয়েছে, কারণ যে শিরকী কাজ করে এবং যে করে না তারা পরস্পর সমান নয়, ফলে এভাবে যুক্তি উপস্থাপনে চেইন তাকফির অবশ্যম্ভাবী।
২। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় আইসিস কিছু নির্দিষ্ট পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। যেমন ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’ এর পরিবর্তে ‘the foundation’ এর ব্যবহার এবং ‘কুফর বিত তাগুত’ এর পরিবর্তে ‘necessary implications’ এর ব্যবহার এবং ‘আধিরের উপর তাকফির’ পরিভাষা। কারণ এই পরিভাষাগুলো আধিরের উপর তাকফিরের প্রচারণায় কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩। এবং তৃতীয় পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, আধিরের উপর তাকফিরের ইস্যু একটি পরিবর্তনশীল ইস্যু যা বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় এবং মাসাআলাটি সবসময় একই থাকে না। কখনো কোনও ব্যাক্তি মুশরিকের উপর তাকফির না করার পরও কাফির হয় না, কারণ হতে পারে বিষয়টা অস্পষ্ট এবং অজ্ঞতা ব্যাপক, সত্যের প্রচারণা দুর্বল এবং সন্দেহও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। তাই এখানে বিষয়টা স্পষ্ট করতে হবে (হুজ্জাহ দিতে হবে), আর এরপর বিষয়টা স্পষ্ট করে দেয়ার পরও যদি ঐ ব্যাক্তি এই বিষয়ে তাকফির করা থেকে বিরত থাকে, তখন সে কাফিরে পরিণত হবে। এটা তাদের বিশ্বাস থেকে ভিন্ন যারা আধিরের উপর তাকফির করে, তারা এমন কোন অজুহাত গ্রহণ করে না, যা তাদেরকে অন্যের উপর তাকফির করা থেকে বিরত করবে। এমনকি যখন অজ্ঞতা ব্যাপক, সত্যের প্রচারণা দুর্বল এবং সন্দেহ একটা সাধারণ ব্যাপার এমন পরিস্থিতিতেও এরা আধিরের উপর তাকফির করা থেকে বিরত হয় না।
৪। তৃতীয় পৃষ্ঠায় তারা আরও বলেছে যে, যখন একটা ইসলামিক স্টেট থাকবে, আর তারা তাওহীদের প্রচার করবে এবং শিরকের বর্জন করবে, “যেমন আমাদের রাষ্ট্র করে থাকে” (তাদের দাবী অনুযায়ী) তখন একটা ব্যাতিক্রমী পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। তাই যেখানে ইসলামিক স্টেট থাকবে সেখানে বিষয়গুলো এমনিতেই পরিষ্কার থাকবে। একারণে সেখানে যে মুশরিকদের উপর তাকফির করে না, তাকে তাকফির করাকে প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোন অজুহাতও অবশিষ্ট থাকবে না। যদিও দুটি গ্রুপই এখানে একই উপসংহারে এসেছে, কিন্তু এজন্য তারা শারিয়াহর যে মাসাআলা ব্যবহার করেছে তা ভিন্ন। আইসিস এই বিধিনির্দেশগুলো শুধুমাত্র তাদের সীমানাতেই প্রয়োগ করে, যার মানে হল এগুলো আইসিসের সীমানার বাইরে প্রয়োগযোগ্য নয়। কারণ ইসলামের কণ্ঠ সেখানে তেমন শক্তিশালী নয় অথবা (তাদের দাবী অনুযায়ী) সেখানে এমন কোন ইসলামিক স্টেট নেই যা শিরককে বর্জন এবং তাওহীদের দিকে মানুষকে ডাকতে পারে। তাই এই যুক্তিসমূহের উপর ভিত্তি করে এই বিধিসমুহ তারা শুধুমাত্র তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাতেই প্রয়োগ করে এবং অন্য এলাকায় এই নীতিগুলো সম্প্রসারণ করে না। আর এটা হচ্ছে যারা আধিরের উপর তাকফির করে তাদের কিয়াস থেকে ভিন্ন, উপরের পয়েন্টে আমরা যা আলোচনা করেছি, তারা এরকম বিশেষ পরিস্থিতির জন্য কোন ছাড় দেয় না।
৫। চতুর্থ পৃষ্ঠায় তারা এমন কিছু পরিভাষার ব্যবহার করেছে, যেগুলোর বহু অর্থ হওয়া সম্ভব। এখানে তারা বলেছে যে, ইসলামিক স্টেটের একজন দা’য়ীর জন্য এটা আবশ্যক যে মুশরিকদের উপর তাকফির করার ক্ষেত্রে যে সকল সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তা অপসারণে সচেষ্ট হওয়া। অথচ এর আগের পৃষ্ঠায় তারা বলেছে যে, ইসলামিক স্টেটে এটা একটা স্পষ্ট বিষয়। তাই আমি জানি না কিভাবে এ বিষয়টা লোকজনের কাছে স্পষ্ট করা হবে, যখন তা ইতিমধ্যেই একটা স্পষ্ট বিষয়। যেন তারা এখনও একটা অস্পষ্ট বিষয়ের সমাধানের চেষ্টায় আছে।
তাই আইসিসের কাছে এখন দুটো সমাধান আছে। আর দুটো সমাধানই একই রকম কঠিন।
আনুষ্ঠানিকভাবে আধিরের উপর তাকফির করার নীতি গ্রহণ করা যেমনটা এখনকার আধিরের উপর তাকফিরকারিরা করে থাকে। এবং এটা করার দ্বারা তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য ইসলামিক গ্রুপ, যেমন আল কায়দাকে এই দলিলই প্রদান করবে যে, তারা আসলেই চরমপন্থি এবং তাদের সাথে সত্যিকারের জিহাদি কার্যকলাপের কোন সম্পর্ক নাই এবং তাদের আগের শাইখদের সম্পর্কেও আরও পরিষ্কার ধারণা দিবে। আর এই কাজ বিদেশে তাদের সমর্থকদের মধ্যে প্রোপাগান্ডাকে দুর্বল করে দেবে।
চুপ থাকলে কিংবা এই চিন্তাধারার বিরোধীতা করা হলে, তাদের সারিগুলোতে ধীরে ধীরে নতুন সদস্য কিংবা এই চিন্তাধারায় কনভিন্স হওয়া সদস্য বাড়তে থাকবে। যারা পরবর্তীতে তাদের জন্য প্রতিবন্ধক হবে, তাদেরকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেবে, আর এই দৃষ্টিভঙ্গি নেয়ার জন্য, তাদের লড়াই থেকেও বিরত করা যাবে না ।
টোরে হ্যামিং কর্তৃক এই উত্তরের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
এমনকি জিহাদি পরিমণ্ডলেও তাকফিরের ইস্যু একটা উপাদেয় বিষয়। আলেমরা এবং জিহাদি নেতারাও, যার মধ্যে উসামা বিন লাদেন এবং আবু ইয়াহিয়া আল লিবি রয়েছেন, বারবার জোর দিয়েছেন যে, তাকফির খুবই সতর্কতার সাথে করতে হবে কারণ এটা খুবই জটিল একটা বিষয় যা শুধুমাত্র এ বিষয়ে জ্ঞানী মানুষদের সিদ্ধান্তের উপরই ছেড়ে দিতে হবে।
এখন এবং পূর্বের দশকগুলোতে, সুন্নি জিহাদি গ্রুপগুলোর মধ্যে ভাঙ্গনের পেছনে তাকফিরের ব্যবহারই সম্ভবত প্রধান কারণ। ১৯৮৯ সালের জালালাবাদ পতনের পর পরই খুব বেশি তাকফির করার প্রবক্তাদের আবির্ভাব হয়, বিশেষ করে আলজেরিয়ান অঞ্চলে। এবং একারণে ক্রমান্বয়ে ১৯৯০ দশকের মধ্যে আলজেরিয়ার ‘Groupe Islamique Arme’ বা GIA এর অভ্যন্তরের জিহাদি গ্রুপগুলো এবং বিভিন্ন ব্যাক্তির মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষের সূত্রপাত করে।
আমি ইসলামিক স্টেটের অভ্যন্তরে যে মতবিরোধ চলছে সে বিষয়ে জিহাদিকায় একটা পোস্ট দিয়েছি, কিন্তু এ বিষয়ের জটিলতার কারণে আমি প্রায়ই বিভ্রান্ত হতাম যে, তাকফিরের (এবং অজুহাতকারির উপর তাকফিরের) ব্যাপারে আইএসের অবস্থান আসলে কি। আহমেদ আল হামদান খুব ভালভাবে এই সমস্যার ব্যখ্যা করেছেন যে, ইসলামিক স্টেট কিভাবে একটি পরস্পর বিপরীতমুখী সমস্যার মোকাবেলা করছে, একদিকে তাকফিরের ব্যাপারে চরমপন্থা এড়িয়ে চলতে গিয়ে আবার একইসময় অন্যদিকে এর অনুসারীদের চরমপন্থি তাকফির সামাল দিতে গিয়ে। এই চরমপন্থিদের কাছে যদি তারা হার মেনে এর সারিসমুহ তাদের কাছে হস্তান্তর করে তাহলে নেলী লাহুদের ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী তাদের আত্ন-ধ্বংস অত্যাসন্ন।
Comment