বিশ্বব্যাপী জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে চলমান অস্থিরতাঃ কিছু মতামত ও কিছু প্রস্তাবনা!
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন। আম্মা বাদ-
এক
২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাক সিরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে খিলাফত ঘোষণা করে আইএস, ২০১৭ সালে এসে পতনের মুখে তাদের খিলাফত। আর খিলাফত ঘোষণারও আগ থেকে জাবহাতুন নুসরাহর সাথে বিরোধের সুত্র ধরে ইরাক ও শামে এক মরুঝড় বইয়ে গেছে, যা মুসলিম উম্মাহকে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করার বিষয়টিকে আরও ঘোলাতে করে দিয়ে গেছে। ইরাকের সাথে জাবহাতুন নুসরাহর সুত্র ধরে সেই যে বিরোধ শুরু হয়েছে, তা কমেনি বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রুপ নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে তা বিস্তৃত হয়েছে। জিহাদের দাবীদারদের মাঝে পরস্পর যে পরিমাণ লড়াই হয়েছে, তার সিকিভাগও যদি প্রকাশ্য শত্রুদের বিরুদ্ধে হত, তাহলে বিশ্বের ইতিহাস এখন একটু অন্যরকম হত। যদি জিহাদের ফ্রন্টগুলো আলাদা আলাদা নেতৃত্বে ভাগ না হয়ে ইমারতে ইসলামীর অধিনে চলে আসতো, তাহলে পৃথিবীর চিত্র ভিন্ন রকম হত।
যদি শামের তানজিমগুলো "লাওমাতা লা-ইম" এর পরওয়া না করতো, তাহলে আকসার পথে কালোপতাকাবাহী দলের অগ্রযাত্রা আরও এগিয়ে যেতো! যদি আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়ার তানজিমগুলো একটু ভেবে চিন্তে আগাত, তাহলে আজকের জিহাদি ফ্রন্টগুলোর চিত্র ভিন্ন রকম হত।
দুই
সম্মানিত পাঠক! পুরনো এই গল্পগুলো বারবার সামনে আনা স্রেফ উদ্দেশ্য নয়, আপনি যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন, জানতে পারবেন জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে এই অস্থিরতার মুল কারণ কি?
আপনি চিন্তা করুন! হাজার হাজার যুবক ইরাক সিরিয়ায় হিজরত করেছে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের ভালোবাসা ত্যাগ করে "সাহারা মরুভুমি" পাড়ি দেওয়ার সাহস করেছে, সে কি নিজের জানা মতে একটি ভুলের উপর আঁকরে থাকবে?
একজন যুবক শাহাদাতের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বের হয়েছে, মুসলিম উম্মাহর ওয়া ইসলামাহ ডাকে সাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সে কিভাবে অপর একজন মুসলিম ভাইকেই হত্যা করতে চাইতে পারে?
শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত গ্রুপগুলোর বর্তমান অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রত্যেকটা গ্রুপে দুটি ভাগ হয়ে গেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, রাশিয়া, ইয়েমেন, আফ্রিকা, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া সহ অনেক ফ্রন্টে খিলাফত ইস্যুতে মুজাহিদিন দুই ভাগ হয়ে গেছে!
পাঠক! আপনি-ই বলুন! ইসলামে খিলাফত ব্যবস্থার স্বরূপ কি শাখাগত বিভিন্ন মাসায়েলের ন্যায় অস্পষ্ট যে, তাতে ফুকাহায়ে কেরাম বিরোধ করেছেন? খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে ফুকাহায়ে কেরাম ইখতেলাফ করেছেন? তাহলে কেন জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে খিলাফত ইস্যুতে দুই ভাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে?
কেন বাগদাদি ও আদনানি আমীরের আনুগত্য অস্বীকার করেছেন, কেন বাইয়াত ও অঙ্গীকারকে ওয়াজিব থেকে মুস্তাহাবে নিয়ে এসেছেন? কেন তার পরবর্তীরা একই পথে হেঁটেছেন? কেন টিটিপি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন? কেন আবু বকর শিকাউ পূর্বসূরিদের তিলে তিলে গড়ে তোলা জিহাদি আন্দোলনকে খোদ নাইজেরিয়ার মুসলমানদের জন্য আতঙ্কের বিষয়ে বানিয়ে তুললেন? কেন শক্তি কম হওয়া সত্ত্বেও আনসার বাইতুল মাকদিস ও জামাআত জুনদুল ইসলাম মিসর ও সিনাই উপত্যকায় ভাগ হয়ে পড়েছে? কেন আহরার আশ শাম কালো পতাকা, সর্বশেষ সাদা পতাকা ছেড়ে দিয়ে জাতীয়তাবাদের ছাপযুক্ত রঙ্গিন পতাকা গ্রহণ করেছে? জিহাদ, খিলাফত, ইমামত, ইমারত, বাইয়াত, আনুগত্য ইত্যাদি কি শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানসমূহের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর বিবাধে, বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন?
কেন যারা বিচ্ছিন্ন হতে চান, চাইছেন বা হয়ে গেছেন, তারা জানেন না যে আমীরের প্রতি আনুগত্যের শপধ নেওয়ার পর থেকে কুফুরি প্রকাশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আনুগত্য জরুরী? আমীরের বৈধ নির্দেশের অবাধ্যতা করে কোন সংগঠন ও ব্যক্তি কি সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছে? আমাদের রব যিনি আমীরের আনুগত্য ফরজ করেছেন, তিনি তাঁর অবাধ্যতায় কোন সংগঠনকে সফলতা দান করবেন?
পাঠক একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন এমনটি কেন হচ্ছে বা হয়েছে?
তিন
ফেসবুকে যারা জিহাদ নিয়ে লেখালেখি করেন, অথবা যারা স্রেফ জিহাদি দাবীদারদের পোস্টে নজর রাখেন, তারা নিশ্চই অবগত আছেন জিহাদি সংগঠনের সাথীরা একে অপরকে কিভাবে গালি দেয়! আমি সবার কথা বলছি না, শুধু আইএসের সমর্থকদের কথা বলছি না, কায়েদাতুল জিহাদের অনেক সমর্থক এর হালত ও মুখের জবান বখাটেদের মত। ইল্লা মাশা আল্লাহ অনেকেই সুস্থ তবিয়ত ও মেজাজের আছেন।
পাঠক! এমনটি কেন হয় যে, যাকে তাকে যখন যেভাবে পারে তাকফিরের আওতায় নিয়ে আসা হয়? কেন বিশেষত আলিমদের ক্ষেত্রে অমুক কাফের, তমুক মুরতাদ কোন বাছবিচার করা হয়না? কেন একজন ভাই অপরেকজন ভাইকে কোন চিন্তা ছাড়া-ই কাফের বা মুরতাদ বলে দেওয়া হয়? কেন বারবার একাধিক বার্তায় জিহাদের মাশায়েখগণ প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে তাকফিরের বিষয়টি আলিমদের হাতে সোপর্দ করার দায়িত্ব দেওয়ার পর-ও মুজাহিদিন অনেকে এটাতেই আনন্দ পান? কেন মুজাহিদিন জিহাদের মৌলিক বিষয়গুলো রেখে শরীয়তের শাখাগত বিষয়গুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক করতে ভালোবাসেন?
এই ধরনের আরও অনেক কেন আছে, যা আপনি জেনে থাকবেন!
আমি কয়েকজন ভাইয়ের ব্যাপারে জানি, যারা মাসুলের নির্দেশনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করেন না! আবার অনেক মাসুলের ব্যাপারে ধারণা, যারা অধিনস্ত ভাইদের প্রতি যথাযথ নজর রাখেন না! তারা জানেন না এগুলো হচ্ছে সালাত ও সিয়ামের মত-ই ফরজ দায়িত্ব?
চার
সম্মানিত পাঠক! উপরে অনেকগুলো কেন নিয়ে আপনি চিন্তা করেছেন! ভেবেছেন এমন কেন হয়? আমিও ভেবেছিলাম এমন কেন হয়? সমাধান বের করার চেষ্টা করেছি, অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি, আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, ফোরামে অনেক বিজ্ঞজন আছেন, ভুল হলে তারা শুধরে দিবেন ইনশা আল্লাহ!
পাঠক আমি শুধু জিহাদি ফ্রন্টগুলোর দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছি, আপনাদের সেদিকে রাখার চেষ্টা করেছি, কারণ সাধারণ পরিবেশগুলো আজকে যে এতো ফিতনাময়, তাতো হওয়ার- ই কথা, কিন্তু কেন জিহাদের ফ্রন্টগুলোতে ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে, নিশ্চই তা একজন দরদে দিলের ক্ষোভ ও দুঃখের কারণ হবে।
মুজাহিদিনের মাঝে সমস্যাগুলো দেখা দেয় কোন স্বার্থের কারণে অথবা কোন স্বার্থের কারণ ছাড়া-ই, যেটাই হোক এর মুলে রয়েছে মুজাহিদিনের ইলম অর্জনের কমতি, তাওহিদ ও জিহাদ শিখার ক্ষেত্রে কমতি, ইলম অর্জনকে ধারাবাহিকভাবে জারি না রাখার কমতি। অনেকের ক্ষেত্রে তাকওয়া না থাকার সমস্যা বলতে পারেন, ফলে সে আমীরের অবাধ্য হয়েছে, ফিতনা সৃষ্টি করেছে, এক্ষেত্রেও আমি বলবো ইলমের কমতি, কারণ ইলম তো ওই জ্ঞানকে বলা হবে, যা বান্দার মাঝে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে, তাকওয়া সৃষ্টি করে। মালুমাত অর্জনের পাশাপাশি সমানভাবে ইলম অর্জন করা উচিত। এই পর্যায়ে এসে আমি পাঠকদের বলবো ইলম কাকে বলে, ইলমের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব নিয়ে প্রদান করা শহীদ উস্তাদ আহমাদ ফারুক রহঃ এর ৩ পর্বের দরসটি শুনে নিবেন!
সম্মানিত পাঠক পুরো আলোচনায় আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, ইলম অর্জন ও তা প্রয়োগ করার কমতির কারণেই জিহাদি ময়দানগুলোতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, আমরা ফিতনায় জড়িয়ে যাচ্ছি, তাই এখন থেকেই ইলম অর্জন করার দিকে মনোনিবেশ করুন! ইন্টারনেটে বাংলা, আরবি, উর্দু ও ইংরেজিতে প্রচুর উপাদান রয়েছে, তা কাজে লাগান! ইনশা আল্লাহ সামনের কোন আলোচনায় আমরা জিহাদি রিলিজগুলো থেকে কিভাবে ইলম অর্জন করতে পাড়ি, সে ব্যাপারে অধমের কিছু ধারণা/পরিকল্পনা শেয়ার করবো।
পরিশেষে এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতকারে বলা একটি গল্প বলে শেষ করছি-
"এক ভাই ইলম অর্জন শেষ না করেই জিহাদের ময়দানে নেমে যাওয়ার আব্দার করেছেন, মাসুল তাকে বললেন, ভাই! যে ভাইয়ের যত বেশি ইলম থাকবে, সে তত বেশি জিহাদের খেদমত করতে পারবে!" সুতরাং পাঠক আমিও বলবো-সম্ভাব্য সকল পন্থায় ইলম অর্জন করুন! সময়গুলোকে কাজে লাগান! কারণ যার যত বেশি ইলম আছে, সে ততবেশি উত্তমভাবে জিহাদের ফরজ দায়িত্ব আদায় করতে পারবে।
ওয়া সাল্লাল্লাহু তাআলা আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন। ওয়ালহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন। আম্মা বাদ-
এক
২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাক সিরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে খিলাফত ঘোষণা করে আইএস, ২০১৭ সালে এসে পতনের মুখে তাদের খিলাফত। আর খিলাফত ঘোষণারও আগ থেকে জাবহাতুন নুসরাহর সাথে বিরোধের সুত্র ধরে ইরাক ও শামে এক মরুঝড় বইয়ে গেছে, যা মুসলিম উম্মাহকে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করার বিষয়টিকে আরও ঘোলাতে করে দিয়ে গেছে। ইরাকের সাথে জাবহাতুন নুসরাহর সুত্র ধরে সেই যে বিরোধ শুরু হয়েছে, তা কমেনি বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রুপ নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে তা বিস্তৃত হয়েছে। জিহাদের দাবীদারদের মাঝে পরস্পর যে পরিমাণ লড়াই হয়েছে, তার সিকিভাগও যদি প্রকাশ্য শত্রুদের বিরুদ্ধে হত, তাহলে বিশ্বের ইতিহাস এখন একটু অন্যরকম হত। যদি জিহাদের ফ্রন্টগুলো আলাদা আলাদা নেতৃত্বে ভাগ না হয়ে ইমারতে ইসলামীর অধিনে চলে আসতো, তাহলে পৃথিবীর চিত্র ভিন্ন রকম হত।
যদি শামের তানজিমগুলো "লাওমাতা লা-ইম" এর পরওয়া না করতো, তাহলে আকসার পথে কালোপতাকাবাহী দলের অগ্রযাত্রা আরও এগিয়ে যেতো! যদি আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়ার তানজিমগুলো একটু ভেবে চিন্তে আগাত, তাহলে আজকের জিহাদি ফ্রন্টগুলোর চিত্র ভিন্ন রকম হত।
দুই
সম্মানিত পাঠক! পুরনো এই গল্পগুলো বারবার সামনে আনা স্রেফ উদ্দেশ্য নয়, আপনি যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন, জানতে পারবেন জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে এই অস্থিরতার মুল কারণ কি?
আপনি চিন্তা করুন! হাজার হাজার যুবক ইরাক সিরিয়ায় হিজরত করেছে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের ভালোবাসা ত্যাগ করে "সাহারা মরুভুমি" পাড়ি দেওয়ার সাহস করেছে, সে কি নিজের জানা মতে একটি ভুলের উপর আঁকরে থাকবে?
একজন যুবক শাহাদাতের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বের হয়েছে, মুসলিম উম্মাহর ওয়া ইসলামাহ ডাকে সাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সে কিভাবে অপর একজন মুসলিম ভাইকেই হত্যা করতে চাইতে পারে?
শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত গ্রুপগুলোর বর্তমান অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রত্যেকটা গ্রুপে দুটি ভাগ হয়ে গেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, রাশিয়া, ইয়েমেন, আফ্রিকা, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া সহ অনেক ফ্রন্টে খিলাফত ইস্যুতে মুজাহিদিন দুই ভাগ হয়ে গেছে!
পাঠক! আপনি-ই বলুন! ইসলামে খিলাফত ব্যবস্থার স্বরূপ কি শাখাগত বিভিন্ন মাসায়েলের ন্যায় অস্পষ্ট যে, তাতে ফুকাহায়ে কেরাম বিরোধ করেছেন? খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে ফুকাহায়ে কেরাম ইখতেলাফ করেছেন? তাহলে কেন জিহাদি ফ্রন্টগুলোতে খিলাফত ইস্যুতে দুই ভাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে?
কেন বাগদাদি ও আদনানি আমীরের আনুগত্য অস্বীকার করেছেন, কেন বাইয়াত ও অঙ্গীকারকে ওয়াজিব থেকে মুস্তাহাবে নিয়ে এসেছেন? কেন তার পরবর্তীরা একই পথে হেঁটেছেন? কেন টিটিপি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন? কেন আবু বকর শিকাউ পূর্বসূরিদের তিলে তিলে গড়ে তোলা জিহাদি আন্দোলনকে খোদ নাইজেরিয়ার মুসলমানদের জন্য আতঙ্কের বিষয়ে বানিয়ে তুললেন? কেন শক্তি কম হওয়া সত্ত্বেও আনসার বাইতুল মাকদিস ও জামাআত জুনদুল ইসলাম মিসর ও সিনাই উপত্যকায় ভাগ হয়ে পড়েছে? কেন আহরার আশ শাম কালো পতাকা, সর্বশেষ সাদা পতাকা ছেড়ে দিয়ে জাতীয়তাবাদের ছাপযুক্ত রঙ্গিন পতাকা গ্রহণ করেছে? জিহাদ, খিলাফত, ইমামত, ইমারত, বাইয়াত, আনুগত্য ইত্যাদি কি শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানসমূহের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর বিবাধে, বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন?
কেন যারা বিচ্ছিন্ন হতে চান, চাইছেন বা হয়ে গেছেন, তারা জানেন না যে আমীরের প্রতি আনুগত্যের শপধ নেওয়ার পর থেকে কুফুরি প্রকাশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আনুগত্য জরুরী? আমীরের বৈধ নির্দেশের অবাধ্যতা করে কোন সংগঠন ও ব্যক্তি কি সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছে? আমাদের রব যিনি আমীরের আনুগত্য ফরজ করেছেন, তিনি তাঁর অবাধ্যতায় কোন সংগঠনকে সফলতা দান করবেন?
পাঠক একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন এমনটি কেন হচ্ছে বা হয়েছে?
তিন
ফেসবুকে যারা জিহাদ নিয়ে লেখালেখি করেন, অথবা যারা স্রেফ জিহাদি দাবীদারদের পোস্টে নজর রাখেন, তারা নিশ্চই অবগত আছেন জিহাদি সংগঠনের সাথীরা একে অপরকে কিভাবে গালি দেয়! আমি সবার কথা বলছি না, শুধু আইএসের সমর্থকদের কথা বলছি না, কায়েদাতুল জিহাদের অনেক সমর্থক এর হালত ও মুখের জবান বখাটেদের মত। ইল্লা মাশা আল্লাহ অনেকেই সুস্থ তবিয়ত ও মেজাজের আছেন।
পাঠক! এমনটি কেন হয় যে, যাকে তাকে যখন যেভাবে পারে তাকফিরের আওতায় নিয়ে আসা হয়? কেন বিশেষত আলিমদের ক্ষেত্রে অমুক কাফের, তমুক মুরতাদ কোন বাছবিচার করা হয়না? কেন একজন ভাই অপরেকজন ভাইকে কোন চিন্তা ছাড়া-ই কাফের বা মুরতাদ বলে দেওয়া হয়? কেন বারবার একাধিক বার্তায় জিহাদের মাশায়েখগণ প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে তাকফিরের বিষয়টি আলিমদের হাতে সোপর্দ করার দায়িত্ব দেওয়ার পর-ও মুজাহিদিন অনেকে এটাতেই আনন্দ পান? কেন মুজাহিদিন জিহাদের মৌলিক বিষয়গুলো রেখে শরীয়তের শাখাগত বিষয়গুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক করতে ভালোবাসেন?
এই ধরনের আরও অনেক কেন আছে, যা আপনি জেনে থাকবেন!
আমি কয়েকজন ভাইয়ের ব্যাপারে জানি, যারা মাসুলের নির্দেশনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করেন না! আবার অনেক মাসুলের ব্যাপারে ধারণা, যারা অধিনস্ত ভাইদের প্রতি যথাযথ নজর রাখেন না! তারা জানেন না এগুলো হচ্ছে সালাত ও সিয়ামের মত-ই ফরজ দায়িত্ব?
চার
সম্মানিত পাঠক! উপরে অনেকগুলো কেন নিয়ে আপনি চিন্তা করেছেন! ভেবেছেন এমন কেন হয়? আমিও ভেবেছিলাম এমন কেন হয়? সমাধান বের করার চেষ্টা করেছি, অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি, আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, ফোরামে অনেক বিজ্ঞজন আছেন, ভুল হলে তারা শুধরে দিবেন ইনশা আল্লাহ!
পাঠক আমি শুধু জিহাদি ফ্রন্টগুলোর দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছি, আপনাদের সেদিকে রাখার চেষ্টা করেছি, কারণ সাধারণ পরিবেশগুলো আজকে যে এতো ফিতনাময়, তাতো হওয়ার- ই কথা, কিন্তু কেন জিহাদের ফ্রন্টগুলোতে ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে, নিশ্চই তা একজন দরদে দিলের ক্ষোভ ও দুঃখের কারণ হবে।
মুজাহিদিনের মাঝে সমস্যাগুলো দেখা দেয় কোন স্বার্থের কারণে অথবা কোন স্বার্থের কারণ ছাড়া-ই, যেটাই হোক এর মুলে রয়েছে মুজাহিদিনের ইলম অর্জনের কমতি, তাওহিদ ও জিহাদ শিখার ক্ষেত্রে কমতি, ইলম অর্জনকে ধারাবাহিকভাবে জারি না রাখার কমতি। অনেকের ক্ষেত্রে তাকওয়া না থাকার সমস্যা বলতে পারেন, ফলে সে আমীরের অবাধ্য হয়েছে, ফিতনা সৃষ্টি করেছে, এক্ষেত্রেও আমি বলবো ইলমের কমতি, কারণ ইলম তো ওই জ্ঞানকে বলা হবে, যা বান্দার মাঝে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে, তাকওয়া সৃষ্টি করে। মালুমাত অর্জনের পাশাপাশি সমানভাবে ইলম অর্জন করা উচিত। এই পর্যায়ে এসে আমি পাঠকদের বলবো ইলম কাকে বলে, ইলমের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব নিয়ে প্রদান করা শহীদ উস্তাদ আহমাদ ফারুক রহঃ এর ৩ পর্বের দরসটি শুনে নিবেন!
সম্মানিত পাঠক পুরো আলোচনায় আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, ইলম অর্জন ও তা প্রয়োগ করার কমতির কারণেই জিহাদি ময়দানগুলোতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, আমরা ফিতনায় জড়িয়ে যাচ্ছি, তাই এখন থেকেই ইলম অর্জন করার দিকে মনোনিবেশ করুন! ইন্টারনেটে বাংলা, আরবি, উর্দু ও ইংরেজিতে প্রচুর উপাদান রয়েছে, তা কাজে লাগান! ইনশা আল্লাহ সামনের কোন আলোচনায় আমরা জিহাদি রিলিজগুলো থেকে কিভাবে ইলম অর্জন করতে পাড়ি, সে ব্যাপারে অধমের কিছু ধারণা/পরিকল্পনা শেয়ার করবো।
পরিশেষে এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতকারে বলা একটি গল্প বলে শেষ করছি-
"এক ভাই ইলম অর্জন শেষ না করেই জিহাদের ময়দানে নেমে যাওয়ার আব্দার করেছেন, মাসুল তাকে বললেন, ভাই! যে ভাইয়ের যত বেশি ইলম থাকবে, সে তত বেশি জিহাদের খেদমত করতে পারবে!" সুতরাং পাঠক আমিও বলবো-সম্ভাব্য সকল পন্থায় ইলম অর্জন করুন! সময়গুলোকে কাজে লাগান! কারণ যার যত বেশি ইলম আছে, সে ততবেশি উত্তমভাবে জিহাদের ফরজ দায়িত্ব আদায় করতে পারবে।
ওয়া সাল্লাল্লাহু তাআলা আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন। ওয়ালহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
Comment