আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিহিল আমিন। আম্মা বাদ-
অতিসম্প্রতি গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়াহর মুখপত্র মাসিক আল কাউসার’এর নভেম্বর ২০১৭ সংখ্যা বাজারে এসেছে। আহলে ইলমদের কাছে আলকাউসারের নতুন করে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আল্লাহ আলকাউসার ও তাঁর কর্তৃপক্ষকে বরকত দ্বারা ভরপুর করে দিন! আমিন।
এই সংখ্যায় পত্রিকাটির সম্মানিত সহ-সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেব হাফিজাহুল্লাহ গত পহেলা অক্টোবরে ঘটে যাওয়া লাস ভেগাস হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তাছাড়া অতিসম্প্রতি টেক্সাসের একটি গির্জায় আরেকটি হামলায় ২৬ জন পশ্চিমা নাগরিক নিহত হয়েছে। এই ঘটনাটিও মাওলানা হাফিজাহুল্লাহর উক্ত প্রবন্ধের আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত। মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ লিখিত এই প্রবন্ধের কিছু কিছু অংশ থেকে আল কাউসারের পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন, সে আশঙ্কায় অধম কিছু কথা আরজ করার ইচ্ছা করেছি, আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাওফিক দানকারী।
গত ১লা অক্টোবর ২০১৭ ইংরেজি রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি করা হয়। লাস ভেগাসে কনসার্টস্থলের পাশে থাকা মান্দালাই বে হোটেলের ৩২ তলা থেকে বন্দুকধারী স্টিফেন প্যাডক ওই উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি ছোড়েন। এতে কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক আমেরিকান।
উল্লেখ্য আমেরিকা তার দেশে বরকতময় ৯/১১ হামলার পর থেকে প্রতিনিয়ত এই ধরণের হামলার শিকার হচ্ছে। ইদানিং এই ধরণের হামলার পরিমান বেড়ে গেছে। শাইখ হাফিজাহুল্লাহ নিজেই নয়া দিগন্তের সুত্রে উল্লেখ করেছেন যে, গত জুনের অরলান্ডো হামলার পর থেকে এই পর্যন্ত ৫৮৫ পশ্চিমা নাগরিক এবং ২১৫৬ জন।
পাঠক এখানে কিছু কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে-
• মাওলানা হাফিজাহুল্লাহর এই প্রবন্ধ থেকে প্যাডক কর্তৃক এই হামলা ও অন্যান্য হামলার ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা করে বসবে।
• প্যাডক এর এই হামলাটি ভালো হল নাকি মন্দ হল, এই ব্যাপারে আমি আপনাদের কোন সিদ্ধান্ত দিবো না, প্রবন্ধের শেষে আপনি একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন ইনশা আল্লাহ
• এই হামলার দায় আইএস স্বীকার করেছে, এবং প্যাডক ১ মাস আগে মুসলমান হয়েছে বলে বার্তায় দাবী করেছে, অধম নিজেও আমাক বার্তা সংস্থার সে বার্তা দেখেছিলাম।
এবার আসুন আমরা আলোচনার মুল পয়েন্টে আসি-
পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষত ৯/১১ হামলার পর থেকে প্রতিনিয়ত লোন উলফ হামলার শিকার হচ্ছে। এবং মুসলিম বিশ্বের সাধারণ ও শিক্ষিত সমাজের মাঝে এই ধরণের হামলার ব্যাপারে মারাত্মক নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে, এবং এই কাজটি ইহুদী-খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া সফলভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। পাঠক আপনি যদি এই প্যাডকের এই হামলাকে নিন্দা করেন, তাহলে ৯/১১ সহ ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া সকল হামলাকে নিন্দা করতে হবে, অথচ এই ধরণের হামলা বৈধ নাকি অবৈধ এই আলোচনার আগে আপনার মনে রাখা উচিত ৯/১১ হামলাটি আল কায়েদার মুজাহিদিন করেছিলেন, এবং পরবর্তী অনেক হামলার দায় আল কায়েদা স্বীকার করেছিলেন। এমনকি সাম্প্রতিক অরলান্ডো হামলা, নিস হামলা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের সম্মুখে হামলার ব্যাপারে আইএস দায় স্বীকার করলেও আল কায়েদা এই সকল হামলা উপলক্ষে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিল।
৯/১১ হামলা ও সাম্প্রতিক অরলান্ডো ও নিস হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দেখুন-
পশ্চিমা দেশসমূহে শহীদি হামলাকারীর প্রতি অসিয়ত – শায়খ হামজা উসামা বিন লাদিন (হাফিজাহুল্লাহ)
ভিডিও ডাউনলোড: (১২০ মেগাবাইট)
পিডিএফ ডাউনলোড: (১.৩৮ মেগাবাইট)
ইন্সপায়ার গাইড – নিস অপারেশন, ফ্রান্স
পিডিএফ ডাউনলোড
https://archive.org/download/Inspire...eration_BN.pdf
সম্মানিত পাঠক! আসলেই কি পশ্চিমা বিশ্বে এই ধরণের লোন উলফ হামলা পরিচালনা করা বৈধ নয়? ফিকহি আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে সম্ভব নয়, অল্প কিছু আলোচনা করে আপনাদেরকে কিছু উপকারী সোর্স দিবো ইনশা আল্লাহ-
কেন বারবার পশ্চিমাদের উপর জিহাদিরা হামলা চালায়, তা জানা যায় আল কায়েদার বর্তমান প্রধান শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি সহ প্রতিষ্ঠাতা শাইখ উসামা বিন লাদেনের সন্তান শাইখ হামযা বিন লাদেন সহ অন্যান্য গেরিলা যোদ্ধাদের ভাষ্য থেকে-
শাইখ আইমান বলেন-
“শরিয়াহতে সৈনিক ও সাধারণ নাগরিকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। বরং শরিয়াহ মানুষকে ২ ভাগে ভাগ করে- যোদ্ধা ও অযোদ্ধা। এবং যোদ্ধা হল তারা যারা সরাসরি যুদ্ধ করে কিংবা তাদের সম্পদ ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে যুদ্ধে সহায়তা করে।
এ মূলনীতির আলোকে পশ্চিমের জনগণ হল যোদ্ধা কেননা তারা তাদের নেতা ও পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের নিজ ইচ্ছায় ভোট দিয়ে নির্বাচন করে এবং এ নেতারাই আমাদের শিশুদের হত্যা করার, মুসলিমদের দেশ দখল ও তাঁদের সম্পদ লুন্ঠনের পলিসি তৈরি করে।
এ জনগণই তাদের সরকারকে ট্যাক্স দেয় যা দিয়ে এসব পলিসির বাস্তবায়ন হয়, এরাই তাদের সেনাবাহিনীতে সৈন্যের যোগান দেয় এবং মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে। আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের শহরগুলোতে ৭ টনের বোমা নিক্ষেপ করে, কার্পেট বম্বিং করে ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহার করে; এরপর তারা চায় আমরা হালকা অস্ত্র দিয়ে তাদের মোকাবেলা করি, এটা কখনই হতে পারে না! আমাদের জন্য এটা ওয়াজিব যে আমরা আমাদের দ্বীন, শিশু এবং সম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলব। তারা যেভাবে আমাদের উপর বোমা ফেলে আমরাও একইভাবে তাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করব, তারা যেভাবে আমাদের হত্যা করে আমরাও একইভাবে তাদের হত্যা করব। আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন-
الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ ۚ فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
“সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা তাদের উপর সীমালঙ্ঘন কর যেমন সীমালঙ্ঘন তারা করেছে তোমাদের উপর।”সুরা বাকারা (১৯৪)
আর এটা সারা বিশ্ব জানে আমারিকান সেনাবাহিনীর কাছে বিপুল বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার পরও তারা সম্মুখ যুদ্ধে খুবই দুর্বল।
আর এদের যুদ্ধের কৌশল হল বোম্বিং করে সবকিছু ধ্বংস করা এবং সবাইকে হত্যা করে ফেলা এবং শত্রুপক্ষকে আত্মসমর্পণ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। আর এ সব কিছুর পর তারা আমাদের থেকে আশা করে আমরা যাতে তাদের দেশে আক্রমণ না করি!”
পূর্ণ ফিকহি মাসআলা জানতে ইয়েমেনের সম্মানিত আলিম শায়খুল মুজাহিদ হামুদ আত তামিমি হাফিজাহুল্লাহ কর্তৃক লিখিত ‘একাকী জিহাদের বিধিবিধান!’ নামক যুগান্তকারী বইটি পড়তে পারেন-
https://www.pdf-archive.com/2017/08/09/3-ruling-of-lone-jihad-from-inspire-16-bangla/
শাইখের এই বইটি প্রবন্ধ আকারে ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনের ১৭ তম ইস্যুতেও এসেছে।
এছাড়াও ভাই হানিন ইয়ালদরম কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধটিও পাঠকের উপকারে আসবে ইনশা আল্লাহ- https://justpaste.it/911bn
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ইসলামী শরিয়াহতে লোন উলফ হামলার বৈধতা আছে। পাঠক! প্যাডক মুসলিম হয়েছিল কিনা, তা আমার আলোচনার উদ্দেশ্য নয়, সে কোন উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে, তা আমার জানাও নেই এবং আলোচনার উদ্দেশ্যও না, এবং কোন মিডিয়া এই হামলার যৌক্তিক কোন কারণ বর্ণনা করতে সক্ষম হয়নি, যদি আমরা আইএসের দাবীকে সত্য হিসেবে ধরে নেই, তবেই এই রহস্যের একটি কিনারা করা সম্ভব, যদিও এফবিআই অস্বীকার করেছে, আর জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ছাড়াও সাধারণ মানুষও অবগত এফবিআই/ সিআইএ আইএসের চাইতেও বড় মিথ্যাবাদী, এবং কাফেরদের তুলনায় আইএসকে বিশ্বাস করাই অধিক যুক্তিযুক্ত ও শরিয়াহর দাবী।
মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ আলোচনা প্রসঙ্গে আইএসের শক্তি ও অর্থের যোগানদাতা কারা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, এখানে মনে রাখতে হবে আইএস আন্তর্জাতিক জিহাদি সংগঠন আল কায়েদার একটি শাখা ছিল, পরবর্তীতে আইএসের মাঝে বিচ্যুতি দেখা দিলে আল কায়েদা আইএসের সাথে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দেয়। সুতরাং আইএসের পদস্খলন ইত্যাদি সম্পর্কে জিহাদের উলামারাও একমত, তবে আইএসের শক্তি বা অর্থের যোগানদাতা নিয়ে সন্দেহ করলে অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর উপর কেউ সন্দেহ করে বসতে পারে, এবং কুফফার ও তাদের সহযোগীরা সকল জিহাদি গোষ্ঠীর ব্যাপারে এই ধরণের সংশয় ছড়িয়ে থাকে, সুতরাং শাইখ হাফিজাহুল্লাহর প্রবন্ধের পাঠকদের এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ইহুদী –খ্রিস্টান কর্তৃক প্রচারিত তথ্যে বিশ্বাস করবেন না! এই সকল তথ্য ইহুদী- খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া কর্তৃক পরিবেশিত তা মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ নিজেও উল্লেখ করেছেন।
আইএসের ব্যাপারে জানতে নিচের সংকলনটিতে অবশ্যই আপনার নজর বুলানো উচিত- https://baghdadirblog.wordpress.com/
পাঠক! মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ হাফিজাহুল্লার কোন প্রবন্ধ/রচনার বিরোধিতা তো ‘দূর কি বাত হায়’, পর্যালোচনা বা মন্তব্য করাটাকেও নিজের জন্য বেআদবি ও দুঃসাহস মনে করি, কিন্তু বিশেষত আমাদের ইলমি সমাজে আধুনিক বিশ্বের চলমান জিহাদ নিয়ে অনেক অস্পষ্টতা বিরাজ করছে, এই পরিস্থিতিতে আল কাউসারের একটি লেখাও অসংখ্য দ্বীনদার মুসলমানের অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে, তাই এই বকলমের কলম ধরা। আল্লাহর কোন যোগ্য বান্দা এই বিষয়ে কলম ধরলে আমি কখনোই দুঃসাহস করতাম না। হে আল্লাহ লেখককে তার লেখার জন্য উত্তম প্রতিদান দিন, তাসামুহগুলো থেকে উম্মাহকে হেফাজত করুন! আমাদেরকে ইখলাস দান করুন। আমিন।
বিশেষ কিছু চিঠি ও বার্তা, যা না পড়লেই নয়-
“আসন্ন বিজয়ের ঊষা লগ্ন”
(৯/১১ এর দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরির বাংলায় অনূদিত বার্তা)
বিজয়ী উম্মাহ এবং বিপর্যস্ত ক্রুসেড যুদ্ধ
(ক্রুসেডারদের যুদ্ধ শুরু করার নয় বছর পরে শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরির বাংলায় অনূদিত বার্তা)
ভিডিও
অত্যাচার মানব না (পিডিএফ)
(৯/১১ হামলার ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা)
ভিডিও
পিডিএফ
অতিসম্প্রতি গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়াহর মুখপত্র মাসিক আল কাউসার’এর নভেম্বর ২০১৭ সংখ্যা বাজারে এসেছে। আহলে ইলমদের কাছে আলকাউসারের নতুন করে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আল্লাহ আলকাউসার ও তাঁর কর্তৃপক্ষকে বরকত দ্বারা ভরপুর করে দিন! আমিন।
এই সংখ্যায় পত্রিকাটির সম্মানিত সহ-সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেব হাফিজাহুল্লাহ গত পহেলা অক্টোবরে ঘটে যাওয়া লাস ভেগাস হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তাছাড়া অতিসম্প্রতি টেক্সাসের একটি গির্জায় আরেকটি হামলায় ২৬ জন পশ্চিমা নাগরিক নিহত হয়েছে। এই ঘটনাটিও মাওলানা হাফিজাহুল্লাহর উক্ত প্রবন্ধের আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত। মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ লিখিত এই প্রবন্ধের কিছু কিছু অংশ থেকে আল কাউসারের পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন, সে আশঙ্কায় অধম কিছু কথা আরজ করার ইচ্ছা করেছি, আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাওফিক দানকারী।
গত ১লা অক্টোবর ২০১৭ ইংরেজি রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি করা হয়। লাস ভেগাসে কনসার্টস্থলের পাশে থাকা মান্দালাই বে হোটেলের ৩২ তলা থেকে বন্দুকধারী স্টিফেন প্যাডক ওই উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি ছোড়েন। এতে কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক আমেরিকান।
উল্লেখ্য আমেরিকা তার দেশে বরকতময় ৯/১১ হামলার পর থেকে প্রতিনিয়ত এই ধরণের হামলার শিকার হচ্ছে। ইদানিং এই ধরণের হামলার পরিমান বেড়ে গেছে। শাইখ হাফিজাহুল্লাহ নিজেই নয়া দিগন্তের সুত্রে উল্লেখ করেছেন যে, গত জুনের অরলান্ডো হামলার পর থেকে এই পর্যন্ত ৫৮৫ পশ্চিমা নাগরিক এবং ২১৫৬ জন।
পাঠক এখানে কিছু কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে-
• মাওলানা হাফিজাহুল্লাহর এই প্রবন্ধ থেকে প্যাডক কর্তৃক এই হামলা ও অন্যান্য হামলার ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা করে বসবে।
• প্যাডক এর এই হামলাটি ভালো হল নাকি মন্দ হল, এই ব্যাপারে আমি আপনাদের কোন সিদ্ধান্ত দিবো না, প্রবন্ধের শেষে আপনি একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন ইনশা আল্লাহ
• এই হামলার দায় আইএস স্বীকার করেছে, এবং প্যাডক ১ মাস আগে মুসলমান হয়েছে বলে বার্তায় দাবী করেছে, অধম নিজেও আমাক বার্তা সংস্থার সে বার্তা দেখেছিলাম।
এবার আসুন আমরা আলোচনার মুল পয়েন্টে আসি-
পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষত ৯/১১ হামলার পর থেকে প্রতিনিয়ত লোন উলফ হামলার শিকার হচ্ছে। এবং মুসলিম বিশ্বের সাধারণ ও শিক্ষিত সমাজের মাঝে এই ধরণের হামলার ব্যাপারে মারাত্মক নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে, এবং এই কাজটি ইহুদী-খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া সফলভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। পাঠক আপনি যদি এই প্যাডকের এই হামলাকে নিন্দা করেন, তাহলে ৯/১১ সহ ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া সকল হামলাকে নিন্দা করতে হবে, অথচ এই ধরণের হামলা বৈধ নাকি অবৈধ এই আলোচনার আগে আপনার মনে রাখা উচিত ৯/১১ হামলাটি আল কায়েদার মুজাহিদিন করেছিলেন, এবং পরবর্তী অনেক হামলার দায় আল কায়েদা স্বীকার করেছিলেন। এমনকি সাম্প্রতিক অরলান্ডো হামলা, নিস হামলা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের সম্মুখে হামলার ব্যাপারে আইএস দায় স্বীকার করলেও আল কায়েদা এই সকল হামলা উপলক্ষে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিল।
৯/১১ হামলা ও সাম্প্রতিক অরলান্ডো ও নিস হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দেখুন-
পশ্চিমা দেশসমূহে শহীদি হামলাকারীর প্রতি অসিয়ত – শায়খ হামজা উসামা বিন লাদিন (হাফিজাহুল্লাহ)
ভিডিও ডাউনলোড: (১২০ মেগাবাইট)
পিডিএফ ডাউনলোড: (১.৩৮ মেগাবাইট)
ইন্সপায়ার গাইড – নিস অপারেশন, ফ্রান্স
পিডিএফ ডাউনলোড
https://archive.org/download/Inspire...eration_BN.pdf
সম্মানিত পাঠক! আসলেই কি পশ্চিমা বিশ্বে এই ধরণের লোন উলফ হামলা পরিচালনা করা বৈধ নয়? ফিকহি আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে সম্ভব নয়, অল্প কিছু আলোচনা করে আপনাদেরকে কিছু উপকারী সোর্স দিবো ইনশা আল্লাহ-
কেন বারবার পশ্চিমাদের উপর জিহাদিরা হামলা চালায়, তা জানা যায় আল কায়েদার বর্তমান প্রধান শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি সহ প্রতিষ্ঠাতা শাইখ উসামা বিন লাদেনের সন্তান শাইখ হামযা বিন লাদেন সহ অন্যান্য গেরিলা যোদ্ধাদের ভাষ্য থেকে-
শাইখ আইমান বলেন-
“শরিয়াহতে সৈনিক ও সাধারণ নাগরিকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। বরং শরিয়াহ মানুষকে ২ ভাগে ভাগ করে- যোদ্ধা ও অযোদ্ধা। এবং যোদ্ধা হল তারা যারা সরাসরি যুদ্ধ করে কিংবা তাদের সম্পদ ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে যুদ্ধে সহায়তা করে।
এ মূলনীতির আলোকে পশ্চিমের জনগণ হল যোদ্ধা কেননা তারা তাদের নেতা ও পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের নিজ ইচ্ছায় ভোট দিয়ে নির্বাচন করে এবং এ নেতারাই আমাদের শিশুদের হত্যা করার, মুসলিমদের দেশ দখল ও তাঁদের সম্পদ লুন্ঠনের পলিসি তৈরি করে।
এ জনগণই তাদের সরকারকে ট্যাক্স দেয় যা দিয়ে এসব পলিসির বাস্তবায়ন হয়, এরাই তাদের সেনাবাহিনীতে সৈন্যের যোগান দেয় এবং মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে। আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের শহরগুলোতে ৭ টনের বোমা নিক্ষেপ করে, কার্পেট বম্বিং করে ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যাবহার করে; এরপর তারা চায় আমরা হালকা অস্ত্র দিয়ে তাদের মোকাবেলা করি, এটা কখনই হতে পারে না! আমাদের জন্য এটা ওয়াজিব যে আমরা আমাদের দ্বীন, শিশু এবং সম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলব। তারা যেভাবে আমাদের উপর বোমা ফেলে আমরাও একইভাবে তাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করব, তারা যেভাবে আমাদের হত্যা করে আমরাও একইভাবে তাদের হত্যা করব। আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন-
الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ ۚ فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
“সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা তাদের উপর সীমালঙ্ঘন কর যেমন সীমালঙ্ঘন তারা করেছে তোমাদের উপর।”সুরা বাকারা (১৯৪)
আর এটা সারা বিশ্ব জানে আমারিকান সেনাবাহিনীর কাছে বিপুল বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার পরও তারা সম্মুখ যুদ্ধে খুবই দুর্বল।
আর এদের যুদ্ধের কৌশল হল বোম্বিং করে সবকিছু ধ্বংস করা এবং সবাইকে হত্যা করে ফেলা এবং শত্রুপক্ষকে আত্মসমর্পণ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। আর এ সব কিছুর পর তারা আমাদের থেকে আশা করে আমরা যাতে তাদের দেশে আক্রমণ না করি!”
পূর্ণ ফিকহি মাসআলা জানতে ইয়েমেনের সম্মানিত আলিম শায়খুল মুজাহিদ হামুদ আত তামিমি হাফিজাহুল্লাহ কর্তৃক লিখিত ‘একাকী জিহাদের বিধিবিধান!’ নামক যুগান্তকারী বইটি পড়তে পারেন-
https://www.pdf-archive.com/2017/08/09/3-ruling-of-lone-jihad-from-inspire-16-bangla/
শাইখের এই বইটি প্রবন্ধ আকারে ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনের ১৭ তম ইস্যুতেও এসেছে।
এছাড়াও ভাই হানিন ইয়ালদরম কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধটিও পাঠকের উপকারে আসবে ইনশা আল্লাহ- https://justpaste.it/911bn
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ইসলামী শরিয়াহতে লোন উলফ হামলার বৈধতা আছে। পাঠক! প্যাডক মুসলিম হয়েছিল কিনা, তা আমার আলোচনার উদ্দেশ্য নয়, সে কোন উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে, তা আমার জানাও নেই এবং আলোচনার উদ্দেশ্যও না, এবং কোন মিডিয়া এই হামলার যৌক্তিক কোন কারণ বর্ণনা করতে সক্ষম হয়নি, যদি আমরা আইএসের দাবীকে সত্য হিসেবে ধরে নেই, তবেই এই রহস্যের একটি কিনারা করা সম্ভব, যদিও এফবিআই অস্বীকার করেছে, আর জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ছাড়াও সাধারণ মানুষও অবগত এফবিআই/ সিআইএ আইএসের চাইতেও বড় মিথ্যাবাদী, এবং কাফেরদের তুলনায় আইএসকে বিশ্বাস করাই অধিক যুক্তিযুক্ত ও শরিয়াহর দাবী।
মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ আলোচনা প্রসঙ্গে আইএসের শক্তি ও অর্থের যোগানদাতা কারা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, এখানে মনে রাখতে হবে আইএস আন্তর্জাতিক জিহাদি সংগঠন আল কায়েদার একটি শাখা ছিল, পরবর্তীতে আইএসের মাঝে বিচ্যুতি দেখা দিলে আল কায়েদা আইএসের সাথে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দেয়। সুতরাং আইএসের পদস্খলন ইত্যাদি সম্পর্কে জিহাদের উলামারাও একমত, তবে আইএসের শক্তি বা অর্থের যোগানদাতা নিয়ে সন্দেহ করলে অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর উপর কেউ সন্দেহ করে বসতে পারে, এবং কুফফার ও তাদের সহযোগীরা সকল জিহাদি গোষ্ঠীর ব্যাপারে এই ধরণের সংশয় ছড়িয়ে থাকে, সুতরাং শাইখ হাফিজাহুল্লাহর প্রবন্ধের পাঠকদের এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ইহুদী –খ্রিস্টান কর্তৃক প্রচারিত তথ্যে বিশ্বাস করবেন না! এই সকল তথ্য ইহুদী- খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া কর্তৃক পরিবেশিত তা মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ নিজেও উল্লেখ করেছেন।
আইএসের ব্যাপারে জানতে নিচের সংকলনটিতে অবশ্যই আপনার নজর বুলানো উচিত- https://baghdadirblog.wordpress.com/
পাঠক! মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ হাফিজাহুল্লার কোন প্রবন্ধ/রচনার বিরোধিতা তো ‘দূর কি বাত হায়’, পর্যালোচনা বা মন্তব্য করাটাকেও নিজের জন্য বেআদবি ও দুঃসাহস মনে করি, কিন্তু বিশেষত আমাদের ইলমি সমাজে আধুনিক বিশ্বের চলমান জিহাদ নিয়ে অনেক অস্পষ্টতা বিরাজ করছে, এই পরিস্থিতিতে আল কাউসারের একটি লেখাও অসংখ্য দ্বীনদার মুসলমানের অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে, তাই এই বকলমের কলম ধরা। আল্লাহর কোন যোগ্য বান্দা এই বিষয়ে কলম ধরলে আমি কখনোই দুঃসাহস করতাম না। হে আল্লাহ লেখককে তার লেখার জন্য উত্তম প্রতিদান দিন, তাসামুহগুলো থেকে উম্মাহকে হেফাজত করুন! আমাদেরকে ইখলাস দান করুন। আমিন।
বিশেষ কিছু চিঠি ও বার্তা, যা না পড়লেই নয়-
“আসন্ন বিজয়ের ঊষা লগ্ন”
(৯/১১ এর দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরির বাংলায় অনূদিত বার্তা)
বিজয়ী উম্মাহ এবং বিপর্যস্ত ক্রুসেড যুদ্ধ
(ক্রুসেডারদের যুদ্ধ শুরু করার নয় বছর পরে শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরির বাংলায় অনূদিত বার্তা)
ভিডিও
অত্যাচার মানব না (পিডিএফ)
(৯/১১ হামলার ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা)
ভিডিও
পিডিএফ
Comment