Announcement

Collapse
No announcement yet.

তাওহীদ ও জিহাদ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তাওহীদ ও জিহাদ

    যেসব ভাই এটি মনে করেন যে, যারা দ্বীন ক্বায়েমের কথা বলে, "এরা তাওহীদের কথা বলেন না। অথচ, তাওহীদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।" এটি আসলে এইসব ভাইদের ব্যপারে আপনাদের নিজস্ব মতামত, যা থেকে তারা সম্পূর্ণ মুক্ত।

    সমাজে দ্বীন ক্বায়েম বেশ কয়েকটি কারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাওহীদের প্রতিষ্ঠা ও শিরকের মুলোৎপাটন, এবং মুসলিমদের রক্ত, মাল ও ইজ্জতের রক্ষা, সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর করে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা।

    একজন মুসলিমের জন্য নি:সন্দেহে দ্বীন ক্বায়েমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এটিই ছিলো নবীদের পথ। 'তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না।' - সুরা শুরা:১৩

    প্রথমত, সমাজে দ্বীন প্রতিষ্ঠা বলতে সমাজে তাওহীদের প্রতিষ্ঠা এবং শিরকের মুলোৎপাটন'ই বুঝায়। তাওহীদ কেবল অন্তরে বিশ্বাস আর মুখে স্বীকার করে নেয়া নয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে তা প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে এর মুল দাবী। তাই, দ্বীন ক্বায়েম শব্দটির মধ্যেই ওইসব ভাইদের দাবীর অসারতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

    দ্বিতীয়ত, দ্বীন ক্বায়েমের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মুসলিমদের জান, মাল ও ইজ্জতের রক্ষা। যখন দ্বীন ক্বায়েম ছিলো তখন জিহাদ আত তালাব তথা আক্রমনাত্মক জিহাদ (যা ফারদ্বুল কিফায়া) পরিচালিত হতো। যা মৌলিকভাবে রাষ্ট্রীয় তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং শিরকের মুলোৎপাটনের জন্য পরিচালিত হয় এব নতুন নতুন ভূমি তাওহীদী শাসন ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসাই এর উদ্দেশ্য।

    কিন্তু বর্তমানে উম্মাহকে জিহাদ আদ দিফা অর্থাৎ প্রতিরক্ষামুলক জিহাদ (যা ফারদ্বুল আইন) করতে হচ্ছে। আমরা সালাত বন্ধ রেখে বলি না আগে আক্বিদা 'সহীহ' করুন, পরে সালাত। বিশুদ্ধ তাওহীদের দাওয়াতের ফারদ্বিয়াতের পাশাপাশি বাকি ফারদ্বগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এটিই হচ্ছে সরল পথ।

    এর মৌলিক উদ্দেশ্য কেবল রাষ্ট্রীয় তাওহীদের রক্ষা নয়, পাশাপাশি মুসলিমদের জান, মাল ও ইজ্জতের রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা। সুতরাং, এই অবস্থায় দ্বীন ক্বায়েমের মৌলিক উদ্দেশ্য কেবল রাষ্ট্রীয় তাওহীদ প্রতিষ্ঠা নয়। পাশাপাশি মুসলিমদের জান, মাল ও ইজ্জত রক্ষা। তাই, এখন যারাই দ্বীন ক্বায়েমের দাওয়াত দিবে তারা তাওহীদের পাশাপশি উম্মাতের রক্ষার স্লোগানও তুলবে যা কোনভাবে তাওহীদ বিরোধী নয়। বরং, এটি তাওহীদের দাবী।

    শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ তার রিসালাহ আছলু দ্বীনিল ইসলাম ওয়া ক্বায়িদতুহ -তে উল্লেখ করেন যে, তাওহীদের দাবী দুই ধরণের। একটি হলো তাওহীদ সংক্রান্ত, অপরটি আহলে তাওহীদ তথা তাওহীদের অনুসারী সংক্রান্ত। আর যারাই তাওহীদের অনুসারী তাদের প্রতি ওয়ালা (বন্ধুত্ব) হলো তাওহীদের দাবী। তাই মুসলিমদের রক্ষা প্রকৃত অর্থে আমাদের তাওহীদের'ই দাবী এবং এটি তাওহীদ প্রতিষ্ঠার'ই নামান্তর।

    এখন আমাদের জন্য নিখাদ তাওহীদের দাওয়াত দেয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নিজের তাওহীদের দাবী পূরণে মুসলিম ভাইবোনদের রক্ষা করতে ছুটে যাওয়াও কর্তব্য। এসব বিষয় সাংঘর্ষিক নয়। সালাতের প্রতি উৎসাহ যাকাতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তেমনি কেউ মুসলিম রক্ষার দাওয়াত দেয়া মানে এই না যে তারা তাওহীদের দাওয়াত দেন না। এটি আসলে আপনাদের মনগড়া কথা।


    এখন পর্যন্ত যা আলোচনা করলাম এসব আসলে মুল সমস্যা নয়। মুল সমস্যা হলো,

    প্রথমত, তারা আসলে দ্বীন ক্বায়েমের দাওয়াতের ব্যপারে সঠিক জ্ঞাণ রাখেন না। তারা এদিক-সেদিক থেকে বিক্ষিপ্তভাবে যা শুনেছেন তার উপর ভিত্তি করেই এমন মন্তব্য করেন। এ দাওয়াত মুলত তাওহীদের'ই দাওয়াত। পার্থক্য এতোটুকু যে, মুখ দিয়ে কেবল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলায় এ দাওয়াত সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বাস্তব প্রয়োগে এ দাওয়াত বিশ্বাসী।

    দ্বিতীয়ত, ওইসব ভাইদের অনেকের সাথ যারা দ্বীন ক্বায়েমের দাওয়াত দেন তাদের তাওহীদের বুঝের পার্থক্য রয়েছে। ওইসব ভাইদের অনেকে এমন কিছু বিষয়কে তাওহীদের মৌলিক অংশ মনে করেন যেসব বিষয়ে উম্মাহর পূর্বসুরী আলীমগণ পর্যন্ত মতবিরোধ করেন। এমনকি তারাও অনুসরণ করেন, এমন কিছু আলীমরাও সেসব ক্ষেত্রে মতপার্থক্য করেছেন।

    অবশ্যই এসব বিষয় একেবারে মামুলি নয়। তবে নিশ্চিতভাবে এসব বিষয় সাধারণ মানুষের আলোচনার বাইরে কেবল আলীমদের জন্য রেখে দেয়া উচিত, যেমনটি শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী রাহিমাহুল্লুলাহু তা'লা বলেছেন।


    তারা যেসকল পূর্বসুরীদের বক্তব্য দিয়ে এসব আক্বিদা প্রচার করতে চান, যেমন শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহু তা'লা তার রিসালাহ আছলু দ্বীনিল ইসলাম ওয়া ক্বায়িদাতুহ -তে দ্বীনের মূল ভিত্তি সম্পর্কে যেসকল বিষয় এনেছেন সেসকল বিষয়কেই দ্বীনের মুল ভিত্তি হিসেব দ্বীন ক্বায়েমের দাওয়াতে মানা হয়। এবার অতি সংক্ষেপে দেখা যাক দ্বীনের মুল ভিত্তির সাথে এ দাওয়াতের কতটুকু সামঞ্জস্য রয়েছে।

    তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ দ্বীনের মূল ভিত্তি হচ্ছে, 'তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন'। অর্থাৎ, 'এক আল্লাহর ইবাদাত করা' এবং, 'শিরক না করা'।

    দ্বীন ক্বায়েমের দাওয়াত যারা দেন তাদের চেয়ে বেশি দূরে থাক, আর কেউ বিস্তারিতভাবে তাগুত নিয়ে কথা বলে এমন দল বা ব্যক্তি খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর।

    তিনি রাহিমাহুল্লাহ তাওহীদের ব্যাপারে বলেন, 'তাওহীদের প্রতি উৎসাহ' এবং, তাওহীদের আদেশ প্রদান।'

    'তাওহীদের প্রতি উৎসাহ' অর্থাৎ তাওহীদের দাওয়াত দেয়া। বিশুদ্ধ তাওহীদ তথা ইবাদাতের ক্ষেত্রে কেবল আল্লাহর এককত্ব নিশ্চিত করার দাওয়াত।

    আর 'তাওহীদের আদেশ প্রদান' অর্থাৎ, তাওহীদকে মেনে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। আহলে তাওহীদরা কোনভাবেই তাওহীদ ত্যাগ করতে পারবে না। অবশ্যই দ্বীন গ্রহন করতে কাফিরদের জোর বা বাধ্য করা হবে না। আর, আমরা জানি আদেশ কখনো শক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। শক্তি কখনো দ্বীন ক্বায়েম ব্যতিত সম্ভব নয়।

    তিনি রাহিমাহুল্লাহ তাওহীদের ব্যাপারে আরো বলেন, 'বন্ধুত্ব ও তাকফির।'

    তাওহীদের অনুসারীদের সাথে 'ওয়ালা' বা বন্ধুত্ব। এ ব্যাপারে আগেই আলোচনা হয়েছে।

    আর, তাওহীদের অস্বীকারকারীদের 'তাকফির'। এ ব্যাপারে আসলে জটিলতার কোন অবকাশ নেই, যারা সরাসরি তাওহীদকে অস্বীকার করে এদের তাকফির করা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, আহলে তাওহীদের যারা অজ্ঞতার কারণে তাওহীদ ছেড়ে শিরকে লিপ্ত হয় তাদের ব্যাপারে শায়খ বলেন, 'আমরা তাদের কাফির বলি না যারা অজ্ঞতাবশত এবং কোন সতর্ককারী না থাকার কারণে আব্দুল কাদির জিলানী, আহমাদ আল বাদাওয়ি এবং অন্যান্যদের কবরের উপর অবস্থিত সমাধি উপাসনা করে।' - ফাতওয়া ও মাসায়েল ৪/১১
    তাকফিরের মাসআলাগুলো আলীমদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে।

    অত:পর তিনি রাহিমাহুল্লাহ শিরকের ব্যাপারে বলেন, 'শিরকের বিরুদ্ধে সতর্ক করা' ও 'শিরকের ব্যাপারে কঠোরতা'।

    'শিরকের বিরুদ্ধে সতর্ক করা' অর্থাৎ, শিরকের বিরুদ্ধে দাওয়াত দেয়া। অর্থাৎ, সকল প্রকার তাগুতের উপাসনা থেকে বেচে থাকতে হবে এই দাওয়াত।

    'শিরকের ব্যাপারে কঠোরতা' অর্থাৎ, শিরকের মুলোৎপাটন। শিরককে নিশ্চিহ্ন করা। যা যুদ্ধ ব্যতিত কোনভাবেই সম্ভব নয়।

    অত:পর তিনি রাহিমাহুল্লাহ শিরকের ব্যাপারে আরো বলেন, 'শিরকের অনুসারীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।' অর্থাৎ মিল্লাতু ইব্রাহীম, আল্লাহর শত্রুদের সাথে আপোষহীন শত্রুতা। আর, এই মিল্লাতে ইব্রাহীমের দাওয়াত যে খুব কম মানুষ দিয়ে থাকে এরা তাদের অন্যতম।

    'শিরকের অনুসারীদের তাকফির' অর্থাৎ, কাফির-মুশরিকদের তাকফির করা। এটি উম্মাতের ইজমা, যারা আছলি কাফিরদের কাফির মনে করে না বা এদের কুফর নিয়ে সন্দেহ করে বা এরা জান্নাতে যেতে পারে এমন ধারণা রাখে এরাও কুফরে আকবার পতিত হয়। এটি ঈমান ভঙ্গের অন্যতম কারণ। এক্সট্রিম মোডারেট আর ভ্রান্ত সুফি ছাড়া বাকি কারো এমন সমস্যা নেই।


    দ্বীন ক্বায়েম তথা দাওয়াত এবং জিহাদ তাওহীদের মুল ভিত্তি তথা তাওহীদের সাথে অতপ্রতোভাবে জড়িত। এতোটুকু আলোচনাই একজন হক্ব সন্ধানীর জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা। ওয়ামা 'আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

  • #2
    যারা দ্বীন কায়েম করতে চাই তারা তাওহিদ শিখে এসে ই কাজ করে।
    ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدة ولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القاعدة
    سورة توبة ٤٦

    Comment


    • #3
      তাওহীদ ও জিহাদের আলোচনা আরো আশা করছি আপনার কাছ থেকে
      ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহু আহসানাল জাযা মুহতারাম ভাই!

        Comment


        • #5
          খুব সুন্দর পোস্ট। পড়ে *উপকৃত হলাম। জাযাকাল্লাহ
          ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

          Comment

          Working...
          X