আল্লাহ্*র পথে দৃঢ়তা
(ইবরাহীম আবু খালিদ)
হকের দিকে দাওয়াত কখনওই বাধাহীন ও বিরোধহীন ছিলো না। রাসূলগণকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে, মুমিনদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা করা হয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি এমনও হয়ে গিয়েছিলো যে রাসূলগণ পর্যন্ত আর্তনাদ করেছিলেন, কখন আসবে আল্লাহ্*র সাহায্য!
কিন্তু আজ আমরা পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই যে, মুমিনরা যখন নিজেদের নিয়্যাত ও কাজে ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন এবং নিজেদের সর্বস্ব কুরবানি করেছেন, তখন আল্লাহ্*র সাহায্য ঠিকই এসেছে। জালুতের উপর তালুতের (আলাইহিসসালাম) বিজয় সম্পর্কে আমরা জানি। অথচ তালুতের সৈন্যসংখ্যা ছিলো কম। এমনকি যুদ্ধ শুরুর আগেই অনেকে দল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। আমরা ইবরাহীমের (আলাইহিসসালাম) সাফল্য ও রেখে যাওয়া পদচিহ্ন সম্পর্কে অবগত। অথচ যুবক বয়সে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে নেওয়া হয়েছিলো। আর বৃদ্ধ ব্বয়সে তাঁর একমাত্র বংশধরকে কুরবানি করার আদেশ করা হয়েছিলো।
আজ এই সংশয়, মতভেদ ও নির্যাতনের তুফানের ভেতর থেকেও আমাদের সামনে আমাদের পূর্বসূরিদের ইতিহাস বিদ্যমান। আমরা জানি তাঁরা কীভাবে কুফরের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তারপরও আমরা আজ নিজেদের আসনগুলোতে গেড়ে বসে বলি, “বর্তমানে অনেক ফিতনা, অনেক ভেদাভেদ। আমি ঘরে বসেই যতটুকু পারা যায় ইসলাম পালন করবো। এতটুকুই যথেষ্ট।” আর ঠিক এই জিনিসটাই শয়তান ও কুফফাররা চায়।
ইসলামের প্রাণ
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ছেড়ে দিয়ে নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকা মুসলিমকে দেখে আল্লাহ্*র শত্রুরা যত খুশি হয়, অন্য কোনোকিছুতেই এর খুশি হয় না। মুসলিম যখন এমনটা করে, শয়তান তখন বিনা বাধায় মন্দ ছড়িয়ে দেয়, মানুষের অন্তরে ভুল ধারণা প্রবেশ করায় এবং পরিবার ধ্বংস করে দেয়। আর কাফিররা নির্ভয়ে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে এগিয়ে যায়। দ্বীন বিকৃত হয়ে যায়, এর অনুসারীরা অধিকার বঞ্চিত হয়, আর কুফরের আদর্শ ছড়িয়ে যেতে থাকে।
কিন্তু ইসলাম এসেছে মন্দের অগ্রাসনের এই পথকে রুদ্ধ করে দিতে, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন। নির্যাতিত মুসলিমকে সাহায্য করা ওপর মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। আর ফিতনার প্রসার থেমে যায় দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে।
সমাজে বিদ্যমান যলুম অপসারণ করার মাধ্যম হিসেবে নবীগণ যুদ্ধ করেছেন। এ ধরনের যুদ্ধকে কখনওই মর্যাদাহানিকর বা অন্যায় কাজ হিসেবে দেখা হয়নি। আল্লাহ্*র কালিমা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ একটি কার্যকর মাধ্যম। কারণ এ পথে সর্বোচ্চ কুরবানি করা হয়, তা হলো মানুষের নিজের জীবন।
এই লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে আমাদের কখনও সাহস হারানো উচিৎ নয়, তা কুফফাররা এই মর্যাদাপূর্ণ কাজের গায়ে যতই অপবাদের কালিমা লেপন করুক না কেন। ঈমানের সুরক্ষাকারীকে সন্ত্রাসী বলে ডাকা হতে পারে। ইতিহাসের পাতাগুলোকে বিকৃত করে গৌরবময় অতীতকে অপরাধময় করে দেখানো যেতে পারে। কিন্তু মুসলিম হিসেবে আমরা জানি এই পথে কত সম্মান ও চিরন্তন পুরষ্কার রয়েছে। আল্লাহ্*র খোলা তরবারি খালিদ বিন ওয়ালিদের বীরত্ব সম্পর্কে আমরা জানি। আর তাঁর আদর্শ নিশ্চয় অনুকরণযোগ্য।
আজকের আলেম ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর দুর্বলচিত্তের লোকেরা নিজেদের অলসতা ও ভীরুতাকে জায়েয করার জন্য ঈমানের যোদ্ধাদের উপর আবর্জনা ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করে। তাদেরকে নানারকম অপবাদ দেয়। কিন্তু কথা ও অস্ত্রের মাধ্যমে নিজের উপর আসা এসব আক্রমণ দেখে মুসলিম কখনও পিছু হটে না অথবা জিহাদ ছেড়ে দেয় না। রাসূলুল্লাহর ﷺ মৃত্যুর পর প্রায় পুরো আরব উপদ্বীপ ইসলাম পরিত্যাগ করলেও সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) যুদ্ধ থামাননি। আর তাঁরা যদি এইরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে এরকম অবিচলতা না দেখাতেন, তাহলে ইসলাম এভাবে প্রসার লাভ করতে সক্ষম হতো না।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া মুসলিমদের দায়িত্ব। তাদের উচিৎ জিহাদের শক্তিকে অস্বীকার না করে শত্রুদের মনে মুসলিমদের প্রতাপের ব্যাপারে ভয় সৃষ্টি করা। মুসলিমদের সম্মান ও সম্পদের হেফাজত করা। আমাদেরকে দৃঢ়পায়ে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত স্বরে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করতে হবে। আফগানের বর্তমান অবস্থা দেখে নাক না সিঁটকে, আলজেরিয়ার যুদ্ধের তিকে আঙুল না তুলে, আমাদের বরং উচিৎ অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। তিরস্কারযোগ্য নীরব দর্শক না হয়ে আমাদের ভাইদের সাহায্য করা।
অতএব, মুসলিম কখনও অতীতের ভুলের ব্যাপারে আফসোস করতে করতে মুষড়ে পড়বে না। বরং সেসব ভুল সংশোধন করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। মানুষ যত বিদ্রূপ করে করুক। কিন্তু আল্লাহ্*র দ্বীনকে সুউচ্চে তুলে ধরার বাসনা নিয়ে সে ধৈর্য ধরে ইসলামের দিকে আহ্বান জারি রাখবে। নিজের পরিবার, আত্মীয় ও সমগ্র মানবজাতিকে ইসলামের দিকে ডাকতে থাকবে।
আর নিশ্চয় এটি নবীগণের পথ, যদিও অনাহার ও নির্যাতন ছিলো তাঁদের নিয়তি। এভাবেই আল্লাহ্*র তাঁদের জন্য নিজের অনুগ্রহের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাঁদের মর্যাদা উন্নীত করেছেন, আর তাঁদেরকে বানিয়েছেন আমাদের দৃষ্টান্তস্বরূপ।
মূল : kalamullah.com/manhaj16.html
(ইবরাহীম আবু খালিদ)
হকের দিকে দাওয়াত কখনওই বাধাহীন ও বিরোধহীন ছিলো না। রাসূলগণকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়েছে, মুমিনদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা করা হয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি এমনও হয়ে গিয়েছিলো যে রাসূলগণ পর্যন্ত আর্তনাদ করেছিলেন, কখন আসবে আল্লাহ্*র সাহায্য!
কিন্তু আজ আমরা পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই যে, মুমিনরা যখন নিজেদের নিয়্যাত ও কাজে ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন এবং নিজেদের সর্বস্ব কুরবানি করেছেন, তখন আল্লাহ্*র সাহায্য ঠিকই এসেছে। জালুতের উপর তালুতের (আলাইহিসসালাম) বিজয় সম্পর্কে আমরা জানি। অথচ তালুতের সৈন্যসংখ্যা ছিলো কম। এমনকি যুদ্ধ শুরুর আগেই অনেকে দল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। আমরা ইবরাহীমের (আলাইহিসসালাম) সাফল্য ও রেখে যাওয়া পদচিহ্ন সম্পর্কে অবগত। অথচ যুবক বয়সে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে নেওয়া হয়েছিলো। আর বৃদ্ধ ব্বয়সে তাঁর একমাত্র বংশধরকে কুরবানি করার আদেশ করা হয়েছিলো।
আজ এই সংশয়, মতভেদ ও নির্যাতনের তুফানের ভেতর থেকেও আমাদের সামনে আমাদের পূর্বসূরিদের ইতিহাস বিদ্যমান। আমরা জানি তাঁরা কীভাবে কুফরের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তারপরও আমরা আজ নিজেদের আসনগুলোতে গেড়ে বসে বলি, “বর্তমানে অনেক ফিতনা, অনেক ভেদাভেদ। আমি ঘরে বসেই যতটুকু পারা যায় ইসলাম পালন করবো। এতটুকুই যথেষ্ট।” আর ঠিক এই জিনিসটাই শয়তান ও কুফফাররা চায়।
ইসলামের প্রাণ
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ছেড়ে দিয়ে নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকা মুসলিমকে দেখে আল্লাহ্*র শত্রুরা যত খুশি হয়, অন্য কোনোকিছুতেই এর খুশি হয় না। মুসলিম যখন এমনটা করে, শয়তান তখন বিনা বাধায় মন্দ ছড়িয়ে দেয়, মানুষের অন্তরে ভুল ধারণা প্রবেশ করায় এবং পরিবার ধ্বংস করে দেয়। আর কাফিররা নির্ভয়ে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে এগিয়ে যায়। দ্বীন বিকৃত হয়ে যায়, এর অনুসারীরা অধিকার বঞ্চিত হয়, আর কুফরের আদর্শ ছড়িয়ে যেতে থাকে।
কিন্তু ইসলাম এসেছে মন্দের অগ্রাসনের এই পথকে রুদ্ধ করে দিতে, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন। নির্যাতিত মুসলিমকে সাহায্য করা ওপর মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। আর ফিতনার প্রসার থেমে যায় দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে।
সমাজে বিদ্যমান যলুম অপসারণ করার মাধ্যম হিসেবে নবীগণ যুদ্ধ করেছেন। এ ধরনের যুদ্ধকে কখনওই মর্যাদাহানিকর বা অন্যায় কাজ হিসেবে দেখা হয়নি। আল্লাহ্*র কালিমা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ একটি কার্যকর মাধ্যম। কারণ এ পথে সর্বোচ্চ কুরবানি করা হয়, তা হলো মানুষের নিজের জীবন।
এই লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে আমাদের কখনও সাহস হারানো উচিৎ নয়, তা কুফফাররা এই মর্যাদাপূর্ণ কাজের গায়ে যতই অপবাদের কালিমা লেপন করুক না কেন। ঈমানের সুরক্ষাকারীকে সন্ত্রাসী বলে ডাকা হতে পারে। ইতিহাসের পাতাগুলোকে বিকৃত করে গৌরবময় অতীতকে অপরাধময় করে দেখানো যেতে পারে। কিন্তু মুসলিম হিসেবে আমরা জানি এই পথে কত সম্মান ও চিরন্তন পুরষ্কার রয়েছে। আল্লাহ্*র খোলা তরবারি খালিদ বিন ওয়ালিদের বীরত্ব সম্পর্কে আমরা জানি। আর তাঁর আদর্শ নিশ্চয় অনুকরণযোগ্য।
আজকের আলেম ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর দুর্বলচিত্তের লোকেরা নিজেদের অলসতা ও ভীরুতাকে জায়েয করার জন্য ঈমানের যোদ্ধাদের উপর আবর্জনা ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করে। তাদেরকে নানারকম অপবাদ দেয়। কিন্তু কথা ও অস্ত্রের মাধ্যমে নিজের উপর আসা এসব আক্রমণ দেখে মুসলিম কখনও পিছু হটে না অথবা জিহাদ ছেড়ে দেয় না। রাসূলুল্লাহর ﷺ মৃত্যুর পর প্রায় পুরো আরব উপদ্বীপ ইসলাম পরিত্যাগ করলেও সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) যুদ্ধ থামাননি। আর তাঁরা যদি এইরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে এরকম অবিচলতা না দেখাতেন, তাহলে ইসলাম এভাবে প্রসার লাভ করতে সক্ষম হতো না।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া মুসলিমদের দায়িত্ব। তাদের উচিৎ জিহাদের শক্তিকে অস্বীকার না করে শত্রুদের মনে মুসলিমদের প্রতাপের ব্যাপারে ভয় সৃষ্টি করা। মুসলিমদের সম্মান ও সম্পদের হেফাজত করা। আমাদেরকে দৃঢ়পায়ে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত স্বরে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করতে হবে। আফগানের বর্তমান অবস্থা দেখে নাক না সিঁটকে, আলজেরিয়ার যুদ্ধের তিকে আঙুল না তুলে, আমাদের বরং উচিৎ অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। তিরস্কারযোগ্য নীরব দর্শক না হয়ে আমাদের ভাইদের সাহায্য করা।
অতএব, মুসলিম কখনও অতীতের ভুলের ব্যাপারে আফসোস করতে করতে মুষড়ে পড়বে না। বরং সেসব ভুল সংশোধন করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। মানুষ যত বিদ্রূপ করে করুক। কিন্তু আল্লাহ্*র দ্বীনকে সুউচ্চে তুলে ধরার বাসনা নিয়ে সে ধৈর্য ধরে ইসলামের দিকে আহ্বান জারি রাখবে। নিজের পরিবার, আত্মীয় ও সমগ্র মানবজাতিকে ইসলামের দিকে ডাকতে থাকবে।
আর নিশ্চয় এটি নবীগণের পথ, যদিও অনাহার ও নির্যাতন ছিলো তাঁদের নিয়তি। এভাবেই আল্লাহ্*র তাঁদের জন্য নিজের অনুগ্রহের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাঁদের মর্যাদা উন্নীত করেছেন, আর তাঁদেরকে বানিয়েছেন আমাদের দৃষ্টান্তস্বরূপ।
মূল : kalamullah.com/manhaj16.html
Comment