মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভী সাহেব গত (০৯.০৪.২০১৮ ইং) তারিখে দৈনিক ইনকিলাবে "ইসলামের রূপ কেউ বদলাতে পারবেনা" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে, পড়ার সময় প্রবন্ধটির বেশকিছু স্থানে তথ্যগত ও তথ্য-উপস্থাপনাশৈলির কারণে আমার আপত্তি জাগে, লেখার আপত্তিকর অংশগুলো আমার মন্তব্যসহ পাঠকের বিবেচনার স্বার্থে প্রকাশ করা গেল।
.
নদভী সাহেব লিখেছেন-
ক’জন হিন্দু নারী নৌ ডাকাতদের কবলে পরে আর্তনাদ করে বলেছিল, মুসলমানের খলিফা আপনি আমাদের বাঁচান। সিন্ধুর উপকূলের এ আওয়াজ মানুষের মুখে মুখে পৌঁছে গিয়েছিল সুদূর বাগদাদে খলিফার প্রাসাদে। শাসক হাজ্জাজ তখন তার ভাতিজা ও জামাতা ১৮ বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন কাসিমকে দস্যু দমনের জন্য প্রেরণ করেন দেবল বন্দর পর্যন্ত। নৌ দস্যুদের কোনো শাস্তি না দেওয়ায় হামলা করা হয় রাজা দাহিরের ওপর।
মন্তব্য: আমরা তো এ ইতিহাস ভিন্নভাবে জানি, যেখানে ক’জন হিন্দু নারী নৌ ডাকাতদের কবলে পড়ে আর্তনাদ করার কোন কথা নেই। আমরা জানি, রাজা দাহিরের কারাগারে বন্দি এক মুসলিম বোনের কথা, তাহলে কি আমরা এতদিন খণ্ডিত ইতিহাস শুনে আসছি? পড়েআসছি? নাকি অন্যকিছু আছে এখানে?
.
তিনি লিখেছেন-
শাসকরা যা পারেন নি, এরচেয়ে শতগুণ দীনের খেদমত করেছেন ওলী আউলিয়ারা। শুধু হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী রহ. এর হাতে ৮০ লাখ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। আল্লাহর কি কুদরত বাংলায় হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহ. এর হাতে প্রায় ৭০০ বছর পর সেই ৮০ লাখ মানুষই ইসলাম গ্রহণ করে । বর্তমানে এসব ওলীর বরকতে তাদের তৈরী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হিন্দুকুশ থেকে আরাকান পর্যন্ত মুসলমানের সংখ্যাও ৮০ কোটি।
মন্তব্য: এখানে শাসকরা বলতে কারা উদ্দেশ্য? রাসূল সা. থেকে আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী, মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সকলেই তোশাসক ছিলেন। যাদের শাসনামলেই ইসলাম অর্ধজাহানে প্রসার লাভ করেছিল, ইসলামী শাসন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শাসকরা বলতে যদি সাহাবা, তাবেয়ীএবং তাবেতাবেয়ী যুগের শাসকবর্গ উদ্দেশ্য হয় তাহলে তো তখন অর্ধবিশ্বে খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়্যাহর জারি ছিল, যার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে শতভাগ নির্ভেজাল বিশুদ্ধ ইসলাম প্রসারিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাছাড়া উপমহাদেশের ইসলাম প্রসার ও প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মুজাহিদীন সালাতীন দাঈ'দের অবদানকে কেন এড়িয়ে যাওয়া হল? সুলতান মাহমুদ গজনবী, আহমাদ শাহ আব্দালী, ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজী রহিমাহুমুল্লাহদের মত তলোয়ারওয়ালা দাঈ'দের কথা কেন ভুলে যাওয়া হল? শাহ জালাল ইয়েমেনী রহ. ও তার তিনশ' ষাট বুযুর্গ সহচর, বাবা আদম শহীদ রহ., সায়্যেদ আহমদ শহীদ বেরেলভী, শাহ ইসমাঈল শহীদ, তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ রহিমাহুমুল্লাহদের মত তলোয়ারওয়ালা পীর-মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দীনের গৌরবোজ্জ্বল ঈমানদীপ্ত ইতিহাস ও অবদানের কথা তো আমাদের চেয়ে ভাল জানেন তিনি তারপরও কোন অজানা রহস্যজনক কারণে তাদের দাওয়াতের ইতিহাসকে পাশ কেটে যাওয়া হল?
.
তিনি লিখেছেন-
যারা বলে ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে তারা হয়তো জানে না, স্বার্থপরদের অপপ্রচারে ভুল জানে অথবা তারা ইসলাম বিদ্বেষী মিথ্যাচারী।
মন্তব্য: নাহ, এই ব্যাপারে আর লিখতে মন চায় না, ক্লান্ত হয়ে গেছি লিখে ও বলে। আসলে যারা 'ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে' এ কথা শুনে বিব্রত বোধ করে তারা হয়তো জানে না নবী করীম সা. নিজের ব্যাপারে বলেছেন, 'আনা নাবিয়্যুস সাইফ' (আমি তলোয়ারের নবী) বলেছেন, 'আনা নাবিয়্যুল মালহামা' (আমি যুদ্ধের নবী) যেভাবে বলেছেন, 'আনা নাবিয়্যুর রহমাহ' (আমি দয়ার নবী)।
মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. এ প্রসঙ্গে বলেন, ''আল্লাহ একদিকে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় রাসূল সা.কে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ ও লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার আদেশ করেছেন আবার বিভিন্ন জায়গায় সেই নবী সা. এর ব্যাপারে রহমাতুল লিল আলামীন বলেছেন, 'ইন্নাকা লা'আলা খুলুকিন আযীম' (নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের উপর অধিকারী) বলেছেন, এর দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ব্যবহার করাটাও নবীর পরম দয়া ওসুমহান আখলাকের দাবি।
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম হাফেয ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন : ”আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই দীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একদিকে দলীল প্রমাণ সাক্ষ্য সহকারে, এবং অপরদিকে তরবারী ও বর্শা দিয়ে, উভয়ে এমনভাবে একত্রিত আছে যার একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যায় না।”
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচারিত হয়েছে? এ প্রশ্ন উল্লেখ করে ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. বলেন- রাসূল সা. বলেন, "আমাকে (শত্রুর অন্তরে) ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে।"রাসূল সা. বলেছেন, "আমি কেয়ামতের পূর্বে তোমাদের নিকট তরবারিসহ প্রেরিত হয়েছি।" ক্বিতাল ব্যতীত কোন দ্বীন নেই। কিন্তু তা এই জন্য নয় যে, তরবারির জোরে কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হবে। বরং এই তরবারির উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাগুতের মসনদকে গুড়িয়ে দেয়া। এবং তাগুতের মস্তক অবনত করার পর আমরা আমাদের দ্বীনকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিব।
মূলত "ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচারিত হয়েছে?" এ এক চরম চতুরতাপূর্ণ ও প্রতারণাপূর্ণ বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন। যা সর্বপ্রথম ইসলামবিদ্বেষী, স্বার্থান্বেষী প্রাচ্যবিদরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়েছিল। উদ্দেশ্য, মুসলমানদেরকে রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জিহাদের পথ থেকে কৌশলে বিচ্যুত করা, যা তারা অন্য কোনভাবে পারছিলনা। কারণ ইসলামের প্রসারের দুটি দিক রয়েছে – একটি সাম্রাজ্যের প্রসার, অপরটি ব্যক্তি জীবনে ইসলামের বিস্তার। ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে আমরা বলতে পারি, ইসলামি সাম্রাজ্য তথা রাষ্ট্রের প্রসার হয়েছে শক্তি অর্থাৎ তরবারির জোরেই। যা রাসূল সা. সহ খুলাফায়ে রাশেদীন ও তৎপরবর্তী ইসলামী শাসকবর্গ ও দিগ্বিজয়ী বীর মুজাহিদীনের বিজয়াভিযানের ইতিহাসগুলি অধ্যয়ন করলেই পরিষ্কার বুঝে আসে।
.
নদভীসাহেব লিখেছেন-
ইতিহাস বলে নবী করিম সা. তার নবুওয়তের প্রথম ১৩ বছর শত জুলুমের কোনো জবাব দেন নি। শুধু ধৈর্যই ধরেছেন। ভালো ব্যবহার করেছেন। প্রাণের শত্রুর বিপদেও ত্রাণকর্তার ভূমিকা নিয়েছেন। ইট পাথর ও কাঁটার জবাব দিয়েছেন দোয়া মহব্বত ও ফুলের দ্বারা। সাহাবীদের জীবন হরণ শুরু হলে, নিজের জীবন হুমকির মুখে পড়লে বাপদাদার ভিটা ও আল্লাহর ঘর ক্বাবা ছেড়ে তারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। মক্কার মুশরিকরা সেখানে গিয়েও আক্রমন চালায়। তাদের ফিরিয়ে এনে হত্যার জন্য মদীনাবাসীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন আল্লাহ জিহাদের হুকুম জারি করেন। সশ্রদ্ধ যুদ্ধের অনুমতি দেন। মুসলমানদের জন্য মজলুম হওয়ার শর্তে জিহাদ ফরজ হয়।
.
মন্তব্য: নবী করীম সা. এবং তার সাহাবাদের জীবনে সেযুগের কাফেরদের পক্ষ থেকে যে দুঃসহ পরিস্থিতিগুলো এসেছিল তার অনুরূপ বা ক্ষেত্রবিশেষ তার চেয়েও করুণ পরিস্থিতি কি বর্তমানের কাফেরদের পক্ষ থেকে আরাকান, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন ওচীনের ঝিংঝিয়াংয়ের মুসলমানদের উপর আসছেনা? আর এসব কি একমাত্র ইসলামের কারণে না? তাহলে সেযুগের মুসলমানদের সমস্যার সমাধান ও মুক্তির একমাত্র যে পথ ছিল এ যুগের দুর্দশাগ্রস্ত মুসলমানদের মুক্তি ও সমস্যার সমাধানের জন্য কি ভিন্ন কোন পথ ও মতের কথা ইসলামে বলা আছে? আর মজলুম হওয়ার শর্তে কিন্তু জিহাদ ফরজ হয়। সুন্নত বা নফল-মুস্তাহাব কিন্তু হয়নি, তাহলে সেই একই শর্তের উপস্থিতিতে বর্তমানে মুসলমানদের উপর জিহাদ কি? তাছাড়া জিহাদ কি কেবল মজলুম হওয়ার শর্তেই ফরজ হয়? তাহলে মক্কা বিজয়ের পরও কি সাহাবায়ে কেরাম মজলুম ছিলেন? মক্কা বিজয়ের পরও রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় তার স্বশরীরে উপস্থিতিতে তায়েফ অবরোধ ও বিজয়, হুনায়ন যুদ্ধ এবং তাবুকের যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং তার ওফাতের পরও আবু বকর রা. মুরতাদদের বিরুদ্ধে, ওমর রা. তৎকালীন সুপার পাওয়ার রোমের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে এবং পরাশক্তি পারস্যের অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধে, এভাবে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবেতাবেয়ীন যুদ্ধ-জিহাদের যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন সেইসব যুদ্ধ কি তারা জিহাদ সুন্নত বা মুস্তাহাব হওয়ার কারণে করেছিলেন? নাকি সে আমলেও মুসলমানরা মজলুম ছিলেন? নাকি কাফেরদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধগুলি সেইসব অঞ্চলে শিরক-কুফরের প্রভাব-প্রতিপত্তি চূর্ণকরে একমাত্র ইসলামের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া ভিন্ন কোন উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল?
.
তিনি লিখেছেন-
কিছুদিন আগে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রভাব একচেটিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার পথে বাঁধা দেওয়ার জন্য আমেরিকা ওয়াহাবী মতবাদ প্রচারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে।’
.
মন্তব্য: "আমেরিকা ওয়াহাবী মতবাদ প্রচারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে"এমন একটা গুরুতর তথ্য আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুহাম্মাদ বিন সালমান অভিযোগের সুরে খোদ আমেরিকার মুখপত্রতুল্য পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টকে প্রদান করার হেতু কী? আবার ওয়াহাবী মতবাদের বিরুদ্ধে এমন তথ্য জাতীয় গাদ্দার বিন সালমানের বরাতে প্রচার করার মাজেজা কী? মজার ব্যাপার হল, ওয়াহাবী মতবাদের প্রচারের কারণে মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রভাব 'একচেটিয়া' বৃদ্ধি পাওয়ার পথে কিন্তু বাঁধাগ্রস্ত হয়নি, বরং এর ফলে ইসলামের প্রভাব 'একচেটিয়া' বৃদ্ধিই পেয়েছে এবং পাচ্ছে!এই প্রবন্ধের একদম শেষাংশে নদভী সাহেব লিখেছেন, তাও আবার এই বিন সালমানের সাক্ষাতকারের বরাতেই! তিনি বলেন,"যুবরাজ বিন সালমানের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হাজার উদ্বেগ মুহূর্তেই পানি হয়ে গেছে। শত বাঁধার মুখেও বিশ্বব্যাপী ইসলামের জনপ্রিয়তা কমেনি। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে তরুণ তরুণীরা ইসলাম গ্রহণ করছে। আল কোরআনে খুঁত ধরতে গিয়ে মুসলমান হচ্ছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী।"
তাহলে এই দ্বিমুখী তথ্য-উপস্থাপনায় কী প্রমাণ করা গেল? তাও আবার যখন হয় একই ব্যক্তির সূত্রে?
.
তিনি লিখেছেন-
ওলামায়ে কেরাম নতুন এই সালাফিস্টদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কথা বলতেন। বলতেন, হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত মুসলিম ঐক্য, প্রতিষ্ঠিত ৪ মাযহাব ও সমাজের শান্তি শৃংখলার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে আত্মঘাতী। কিন্তু উগ্র একটি দলের কারণে এসব কথা মানুষকে বোঝানো কঠিন হয়ে পড়ে।
.
মন্তব্য: আরবের সালাফিস্টরা কি প্রতিষ্ঠিত চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসরণের বিরুদ্ধে কথা বলেন? আমরা তো জানি, সালাফিস্টরা প্রধানত শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. ও হাফেয ইবনুল কাইয়িম রহ. এর অনুসারী, যে দু'জন আবার চার মাযহাবের একটি হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফক্বীহ ইমাম। যেভাবে ইমাম তহাবী রহ. ও আল্লামা ইবনে হুমাম রহ. হানাফী মাযহাবের ফক্বীহ ইমাম। এ হিসেবে তো সালাফিস্টরা প্রকারান্তরে হাম্বলী মাযহাবের বা ইবনে তাইমিয়া রহ. সূত্রে হাম্বলী ফিক্বহের অনুসারী বলে বিবেচিত হতে পারে। তাছাড়া আমরা আরবের বিভিন্ন সালাফী শাইখের রচিত কিতাবাদীওপ্রদত্ত লেকচারে চার মাযহাবের ইমামদের মতামত উল্লেখ করার সময় তাদের প্রতি যথেষ্ট আদব ও শ্রদ্ধা বজায় রেখেই তাদের নাম উচ্চারণ করতে দেখি। এমনকি এদেশের সালাফিস্ট মহলের অনেককেই মাঝেমাঝে অনলাইনে দেখেছি, তারা হাম্বলী মাযহাবের ইংরেজি কোন ফিক্বহের বই খুঁজছেন। এ সময় কিছু হানাফি কওমী ভাইকেই বরং দেখেছি তাদের নিয়ে বিদ্রূপ করতে। সত্য উচ্চারণ করলে হয়ত অনেকেরই কষ্ট হবে, ছাত্র যামানায় ফিক্বহে মুক্বারান ও উসূলে ফিক্বহের দরসে বিভিন্ন উস্তাদকে দেখেছি তারা হানাফী মাযহাবের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার সময় কিভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে অন্যান্য মাযহাবের ইমামদের নাম ও তাদের মতামত উল্লেখ করেন। আমার ধারনা, সালাফিস্টরা হয়ত মাযহাবকেন্দ্রিক এই ধরনের আসাবিয়্যাত ও গোঁড়ামির বিরোধিতা করে। আরেকটা বিষয়, আহলে হাদীস আর সালাফিস্টরা কিন্তু এক মতাদর্শের না, উভয় মানহাজের মাঝে বিস্তর ফারাক ও তফাৎ আছে। আহলে হাদীসরা হল গাইরে মুকাল্লিদ এবং তারা এককভাবে কোন ইমামের ফিক্বহ অনুসরণকে সোজা শিরক বলে দেয়। ফিক্বহ অনুসরণ তো দূরে থাক, এরা ফিক্বহই মানেনা। সরাসরি হাদীসের মনগড়া অনুসরণ। সুতরাং ফিক্বহের সম্মানীত ইমামগণের ব্যাপারেও এরা আজেবাজে মন্তব্য করে। তবে সব দেশে সব ইমামের নয়, যে দেশে যেই ফিক্বহ বেশি প্রচলিত সে দেশে সেই ইমামের। কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যায় মুজতাহিদীন ফুক্বাহায়ে কেরামের ইজতিহাদকৃত মতামত ও সিদ্ধান্তকে তারা তাদের মনগড়া কেয়াস বলে উপেক্ষা করে। এরা অধিকাংশ যালিম, তাগুত সরকার-প্রশাসনের গোলামি করে চলতে অভ্যস্ত। জিহাদ-কিতালের ধারকাছ দিয়েও এরা নেই। তালেবান-আলকায়েদাকে এরা সন্ত্রাসী ও ভ্রান্ত দল আখ্যা দেয়। আরবে এদেরকে বলে মাদখালী আহলে হাদীস অথবা মাদখালী সালাফী। সৌদীর শাসকগোষ্ঠী মূলত এই ঘরানার অনুসারী। অথচ সালাফিস্টরা এই সকল ক্ষেত্রে মানহাজ ও মতাদর্শগতভাবে আহলে হাদীসদের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। বাকি এই বিষয়ক গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা ভাল বলতে পারবেন।
.
নদভীসাহেব লিখেছেন-
ইলম ও আমলের ধারক বাহক রূহানিয়্যতে বিশ্বাসী আলেমগণ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তরীকতপন্থীরা মনে হয় পেট্রোডলারওয়ালাদের দাপটে টিকতেই পারছিলেন না। হাজার বছর ধরে হানাফি মাযহাব মেনে আসা মানুষগুলো যেন সালাফিস্টদের আক্রমনে অপরাধী হয়ে গিয়েছিলেন। নব্য সালাফি গোষ্ঠির ধামাধরা উগ্র একটি শ্রেণী সূর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশি আকার ধারণ করে দেশে অশান্তি শুরু করে দেয়। মসজিদে মসজিদে দ্বিমত, স্বামী-স্ত্রীতে দ্বিমত, পিতা পুত্রে দ্বিমত এমনকি তা ঈমান ও কুফুরের বিরোধের মতো রূপ নেয়। বিশেষ করে রাষ্ট্র ও সমাজের উচ্চস্তরে এ নতুন বিতর্ক গিয়ে পৌঁছে। কারণ, পেট্রোডলার যখন কথা বলে সত্য তখন নিরব হয়ে যায়।
মন্তব্য:তার মানে কি?সালাফীআলেমগণইলম, আমল ওরূহানিয়্যাতে বিশ্বাসীনয়?মনে হচ্ছে নদভীসাহেব এখানে আহলে হাদীস আর সালাফিস্টদের গুলিয়ে একাকার ফেলেছেন। তবে কথা হল, এখানে 'তরীকতপন্থীরা' বলে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন?এর দ্বারা যদি তিনি ইনকিলাব কর্তৃপক্ষের মত তরীকতপন্থীদের উদ্দেশ্য করে থাকেন তাহলে তোপোয়া বারোটা!যারা কিনা সরাসরি মাজারপুজারীমুশরিক। যারা কথা-কাজে, চিন্তা-চেতনায় আউলিয়াদেরকে সাহাবাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ওঊর্ধ্বে জ্ঞান করে। যারা এদেশের প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহর অনুসারীকওমীউলামায়ে কেরামের প্রতি ঘৃণ্য মানসিকতা ওচরম বিদ্বেষ পোষণকরে। এরা তোক'দিন আগে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফি. এর বিরুদ্ধেওকঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণকরেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল যখন তিনি এদেশের সকল মাজার গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। মূলত সালাফিস্টরা এ ধরনের তরীকতপন্থীদের ব্যাপারে এবং যারা এদের মত শরীয়তের চেয়ে তথাকথিত তরীকতকেই সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়, শরীয়তের সুস্পস্টফায়সালার মুকাবেলায় যারা পীরের মতামত ওসিদ্ধান্তকে বেশীগুরত্ব দেয় এমনতরীকতপন্থীদের ব্যাপারেই সালাফিস্টরা খুবই কঠোর। এক বড়সমস্যা হল, এই সকল শিরকি ওকুফরি আকীদা ধারণকারীবেদ'আতি ভণ্ডরা নিজেদেরকে হানাফীমাযহাবের অনুসারীবলে দাবি করে। খালি এরা না, এদেশের এবং উপমহাদেশের যত বেদ'আতি ফেরকা আছে, চাই সেগুলোআমলগত বেদ'আতি ফেরকা হোক বা আকীদাগত সবাই নিজেদেরকে হানাফীমুসলমান বলে দাবি করে। এই এক মহা সমস্যা। উপমহাদেশের আহলে হক উলামায়ে কেরাম যুগযুগ ধরে বরং শতাব্দির পর শতাব্দিকাল ধরে জীবন-মরণবাজি রেখে তাদের মুকাবেলা করে যাচ্ছেন। তাদের সকল প্রকারের বাতিল আকীদা ওবাতিল কর্মকাণ্ডসম্পর্কে উম্মাহকে সজাগ, সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু এরপরেও এদের দাবি, এরা নাকি হানাফী!আর আহলে হক উলামায়ে কেরাম হলেন 'ওয়াহাবী', ইসলামের চির দুশমন, নবীর দুশমন!এখন এদের মত বাতিলপন্থীদের বিরোধিতাকরাকে যদি মাযহাবের বিরোধিতা, তরীকতপন্থীদের বিরোধিতা বলে চালিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা হবে সীমাহীন দুঃখজনক। আর এদের মত তরীকতপন্থীরা যদি এই সালাফিস্টদের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পারে তাহলে আমি মনে করি, এজন্য আমাদের দেশের আহলে হক উলামাদের উচিত এই সালাফিস্টদের স্বাগত জানানো, তাদের উচিত, মাশাআল্লাহ বলে এদের পিঠ চাপড়েদেয়া। আদতে যদি এই সালাফিস্টরা মাযহাব বিরোধীওতরীকত তথা হকপন্থীপীর-মাশায়েখের পথ ওমতের বিরোধীহত তাহলে তোএতদিনে আফগানিস্তানে আলকায়েদাপন্থী আরব মুজাহিদদের সাথে স্থানীয় তালেবান মুজাহিদদের অন্তর্ঘাত যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। কারণআলকায়েদাপন্থীমুজাহিদরা অধিকাংশই সালাফিস্ট আর স্থানীয় তালেবান মুজাহিদরা শুধু হানাফিই নন, পাক্কা হানাফি। পাক্কা এইজন্য বললাম, আমরা তোকেবল ইবাদাত ওমু'আমালাতে হানাফীফিক্বহের অনুসারী, আর তারা ইবাদত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিচার-প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে তারা পরিপূর্ণহানাফীফিক্বহের অনুসারী। হ্যাঁ, তাদের মধ্যে তাযকিয়া-আত্মশুদ্ধি, তালীম-তরবিয়ত এবং এর জন্য পীর-মাশায়েখ সবই আছে।
আর এই যে বলা হল, "মসজিদে মসজিদে দ্বিমত, স্বামী-স্ত্রীতে দ্বিমত, পিতা পুত্রে দ্বিমত এমনকি তা ঈমান ও কুফুরের বিরোধের মতো রূপ নেয়।"আসলে এর একটা রূপ তোআছে যা ওই আহলে হাদীস নামধারীফেতনাবাজদের থেকে সৃষ্ট। অপর আরেকটি রূপ হল ঈমান-আকীদাগত দ্বিমত-সংঘাত। হ্যাঁ, সরাসরি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহর নির্ভেজাল শতসিদ্ধ আকীদার কারণে সংঘাত। যা আমাদের অনেক কওমীমাদরাসায় পড়ুয়া তালিবে ইলমের সাথে তার পরিবারের লোকজন বা পাড়াপ্রতিবেশীর হয়ে থাকে। এ হক-বাতিলের দ্বিমত-সংঘাত। এ সংঘাত কাম্য। এই সংঘাত ইসলামে ওয়াজিব, ফরয। এসব তাদের মনগড়াকোন আকীদার কারণে সৃষ্ট নয়। আর এ হতেই পারে, কারণকারোবাবা-মা অথবা পিতা-পুত্র যখন ওই শিরক-কুফর বা জঘন্য বিদ'আতি আকীদার নামধারীহানাফীহয় তখন এই দ্বিমত-সংঘাত অনিবার্য। এ দ্বিমত-সংঘাত শত, সহস্রাব্দি কাল ধরে চলমান।
আর ঐযে বলা হল, 'পেট্রোডলার', তোএই পেট্রোডলার বিগত বিশ-ত্রিশবছর ধরে কারা সৌদী আর আমেরিকার মিত্র আরব দেশগুলি থেকে পেয়ে আসছে তা তোবর্তমানে সৌদির রাজদরবার আর সৌদি সহ মিসর, জর্দান, আমিরাতের কারাগারগুলোর দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
.
নদভীসাহেব লিখেছেন-
এমনকি নাউযুবিল্লাহ, এক সালাফিস্ট প্রফেসর কর্তৃপক্ষের প্রণোদনায় এক থিসিস তৈরি করে। যেখানে বলা হয় ভক্ত উম্মতের ভীড় সামাল দিতে নবী করিম সা. এর পবিত্র রওজা মোবারক কারফিউ দিয়ে রাতের অন্ধকারে বর্তমান জায়গা থেকে তুলে নিয়ে বকী গোরস্তানের বিশাল ময়দানের অজ্ঞাত কোনে স্থানে স্থাপন করা হবে। যেন কোনো উম্মত সেটা চিনতে না পারে। হজ্জ ও ওমরা যাত্রীরা জিয়ারতে গিয়ে নবী সা. এর রওজা খুঁজে না পায়। এ প্রস্তাবের পর বিশ্বব্যাপী আশেকে রাসুলরা রীতিমতো মৃত্যু যন্ত্রণায় পড়ে যান। আল্লাহর রহমত বাদশাহ সালমান এ বিষয়টি বুদ্ধির সাথে শেষ করে দেন। তিনি নিজে দীর্ঘসময় রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। দাঁড়িয়ে থেকে দরুদ সালাম পেশ করে দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে লম্বা দোয়া মুনাজাত করেন। সরকারী তত্তাবধানে তা বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রচারেরও ব্যবস্থা করেন। কিছুদিন পর তিনি আবার পাক মদীনায় ছুটে যান। একইভাবে জিয়ারত করেন। একই বছর কাবা সংলগ্ন সাফা প্রাসাদে রমজানের শেষভাগ অবস্থান করেন। বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্র ওয়াহাবী মতবাদ ও বিদ্বেষী সালাফিজম দমনে তার সরকার উদ্যত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা বিশ্বব্যাপী কঠোর বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
মন্তব্য:
হাস্যকর!পড়েই সচেতন পাঠকমাত্র ধরতে পারবেন, কাহিনীর আগাগোড়াসম্পূর্ণসাজানোনাটক। যেখানে সৌদীর নামকরা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আহলে হক উলামা মহলে শ্রদ্ধাভাজন, বরেণ্যপ্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম যালিম-তাগূতের কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হচ্ছেন, দেশের প্রভাবশালীবিভিন্ন মন্ত্রী-আমলারাসহ বেশকিছু আমীর-উমারা পর্যন্ত যেখানে এই কুখ্যাত বাপ-বেটার দমন-পীড়নেনিষ্পেষিত, সেখানে কোথাকার কোন অখ্যাত অজ্ঞাত নাদান প্রফেসরের থিসিসের ঠ্যালা সামলাতে আমেরিকার কেনা গোলাম সালমান নাজেহাল, পেরেশান!!এইসব গাঁজাখুরি গপ্পোকোন সদ্য গাঁজাখোরকেও কি বিশ্বাস করানোযাবে??আসলে ঘটনা এই হয়েছে যে, তিনশতাধিক আহলে হক্ব উলামায়ে কেরামকে জেলে নিক্ষেপ করে সৌদিসহ গোটাআরব জাহান এমনকি সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সৌদীর শাসকবর্গ তথা সালমান ওবিন সালমান প্রশাসনের যে ইমেজ-সংকটতৈরি হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতেই যে মূলত এই জাতীয় ইমোশনাল ড্রামার আয়োজন তা আর কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। অবশ্য অন্ধরা তোসর্বাবস্থায়ই অন্ধ।
শেষদিকে বলা হয়েছে "বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্র ওয়াহাবী মতবাদ ও বিদ্বেষী সালাফিজম দমনে তার সরকার উদ্যত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা বিশ্বব্যাপী কঠোর বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।" প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, এদেরকে যে উগ্র, বিদ্বেষী বলা হচ্ছে তা এরা কাদের ব্যাপারে উগ্র? কাদের ব্যাপারে বিদ্ধেষী?দীনদার, পহেযগার, সুন্নাতের অনুসারীমুসলমানদের ব্যাপারে?নাকি নবী-সাহাবার পূন্যভূমিতে শিরক-বিদ'আতের প্রসারকারীএবং ইয়াহুদ-নাসারার দালাল আমেরিকা-ইসরাইলের পা-চাটা গোলামদের বিরূদ্ধে উগ্র? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, এ সিদ্ধান্ত এতদিনে কেন? এতদিন কেন এদের দমনে উদ্যত হলনা সৌদি সরকার?আন্তর্জাতিকভাবে মুসলমানদের কাছে, উলামায়ে কেরামের কাছে ইমেজ সংকটের আশঙ্কা ছিল? নিজেদের 'ভালমানুষি'র গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছিল? যাক, এখন এতদিনে তো আমেরিকার দালালী করতে করতে মান-সম্মান, দীনীগাইরত ও আত্মমর্যাদাবোধ যা হারানোর হারিয়ে গেছেই, এখন আর নতুন করে হারানোর কিছুই নাই, তাই এভাবে নির্লজ্জের মত, বেহায়া-কমীনা-ইতরের মত স্বজাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পথে নামতে এতটুকুও দ্বিধা-সংকোচ হচ্ছেনা। নাকি ইদানিং কাতার-জেরুসালেম-ইয়েমেন-সিরিয়া ইস্যুতে এই উগ্র সালাফিস্টরা অতিমাত্রায় মারমুখীহয়ে উঠায় প্রভু আমেরিকা-ইসরাইলের চাপটা একটু বেশিই যাচ্ছে?এ মুহূর্তে তাদের থেকে প্রাপ্তির আশাটাও একটু বড়? সুতরাং এখন জীবন-মরণ দিয়ে, খেয়ে-না খেয়ে পাকিস্তানের মত তাদের খুশি করার কসরত করে যেতে হবে? দেইখো বিন সালমান! পরে যেন আবার সাবেক মার্কিন-পতিতা পাকিস্তানের মত বলা না লাগে "আমেরিকাকে অন্ধভাবে ভালবেসে ভুল করেছি"!তবে এখানে পাঠকের আবারোকলামের মাঝামাঝি অংশের সেই হাস্যকর বক্তব্য মনে পড়েযাচ্ছে "কিছুদিন আগে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রভাব একচেটিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার পথে বাঁধা দেওয়ার জন্য আমেরিকা ওয়াহাবী মতবাদ প্রচারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে।’"
এখানে এসে পাঠকের মনে স্বভাবতই একটা চিন্তা বারবারই উঁকি দিচ্ছে যে, সৌদিআরবের বর্তমানের এই পরিস্থিতিতে যখন সারা মুসলিম জাহানের আরব-আজম তামাম আহলে হক্ব উলামায়ে কেরাম এই জঘন্য মার্কিন-ইসরাইলের প্রকাশ্য দালাল, জাতীয় গাদ্দার সালমান ওবিন সালমানের সমালোচনা ওনিন্দায় ফুঁসে উঠছেন, এমন এক সঙ্গীন সময়ে কেন, কোন অজানা রহস্যঘেরা কারণে নদভীসাহেবের মত সজাগ, সচেতন, আস্থাভাজন ওবরেণ্য আলেমে দীন ইনিয়ে বিনিয়ে এই কুখ্যাত বাপ-বেটার প্রশংসা ওবন্দনা গেয়ে যাচ্ছেন?! এ এক মহা জট। এই জটখোলার দায়ভার পাঠকের কাঁধে ন্যস্ত করলাম।
পাঠকদের অনেকের হয়ত মনে থাকবে, এর আগেও তিনি আওয়ার ইসলামে মুহাম্মদ বিন সালমানের তথাকথিত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন।
.
নদভী সাহেব লিখেছেন-
ইউরোপের নানা দেশে বিশেষ করে জার্মানি ও ফ্রান্সে গত ২০ বছর তথাকথিত সালাফিদেরই রাজত্ব ছিল। যত মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার সবখানে তাদের উগ্রভাব ও আচরণ। দুনিয়ার উগ্র গোষ্ঠিগুলো সেখানে আশ্রয় পেত। সারা দুনিয়ায় ইসলাম প্রচারক আলেম ও ওলী দরবেশগণ যে আধ্যাত্মিক শক্তি বলে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। নতুন মিশনে এসব ছিল না। ছিল পেট্রোডলার আর শরীয়ত বিরোধী উগ্রতা। যার ফলে স্বয়ং সৌদি আরব ও ইউরোপের সালাফিরা র্যাডিকেল হতে শুরু করে। নানা জঙ্গী প্রেরণায় সন্তান তার পিতাকে হত্যা করে। তরুনেরা তাদের বাবা চাচা মা ও ভাইবোনকে হত্যা করে। এ চিত্র তো ইসলামের নয়।
.
মন্তব্য: তাদের উগ্রভাব ও আচরণ গুলোকি কি ছিল প্রেক্ষাপটের উল্লেখসহ তার একটা ফিরিস্তি ও বিবরণ আসতে পারত, কিন্তু তা দেয়া হয়নি, কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়িয়ে যাওয়া গুলোই রহস্যজনক। আমরা জানি বিগত বিশ বছরে জার্মানি ও ফ্রান্সে অধিকাংশ মুহাজির আরব মুসলমানদেরই বসবাস ছিল। তারা সেখানে আরো কয়েক দশক আগ থেকেই বসবাস করে আসছে। সেখানকার স্থানীয়রা এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর বিগত বিশ বছর যাবত সমগ্র বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ বিশেষত আরব মুসলমানদের উপরে এই বর্বর পশ্চিমা ইউরোপিয়ানদের পক্ষ থেকে কী ধরনের অমানবিক ও পাশবিক নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে তা তো সবার সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। ইউরোপের বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার কথা তো সেখানকার মুসলমানরা ভুলে যায়নি, সার্বিয়ানদের পাশবিক বর্বরতার কথা কি ইউরোপের মুসলমানরা কখনো ভুলতে পারবে? ভুলা সম্ভব? ইরাক-আফগান-সিরিয়ায় এই পশ্চিমা হায়েনাদের বর্বরতার কথা না হয় বাদই দিলাম, যেই সিরিয়ার বহু মুসলমান নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে এই ফ্রান্স ও জার্মানিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এ ভূমিতে আশ্রয় নিলেও তো এটা শত্রুভূমি, যে ভূমির হায়েনারা তাদের স্বজাতিদের উপর আগ্রাসন চালিয়ে তাদের সব ছারখার করে দিচ্ছে। সুতরাং এখানে এসে কি তারা তাদের শত্রু বা শত্রুপক্ষের দালালদের সাথে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলবে? নাকি সর্বদা রক্ষণশীল, সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে তাদের? আর আমরা জানি, পশ্চিমারা মুসলমানদের এই রক্ষণশীল ধর্মীয় অবস্থানকেই র্যাডিকেল বা চরমপন্থীও উগ্রপন্থী ইসলাম বলে অভিহিত করে। তারা মূলত ট্র্যাডিশনাল বা মূলধারার ইসলামকেই কখনো ফ্যান্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ বলে আবার কখনো একে র্যাডিকেল বা উগ্রপন্থী ইসলাম বলে। এসব বলে কয়ে তারা মূলত মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চায়। আসলে ইসলাম তো সেটাই যা মূলানুগ, মূলধারার। তাদের এইসব বলা-কওয়াও খুবই স্বাভাবিক। কারণ ইসলাম-কুফরের সংঘাত চিরন্তন। তাই তারা এই মূলধারার ইসলামটাকে বরদাশত করতে পারেনা।
শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে ওরা সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে। এবং তারা আমাদেরকে মৌলবাদি বলে। 'মৌলবাদি'?! মৌলবাদি মানে তো ওই ব্যক্তি যে ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোকে আঁকড়ে ধরে। আজকে কোন বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর অনুগামী হলেই তাকে সন্ত্রাস বলা হচ্ছে। তারা আসলে যা চায়, তা হচ্ছে ইসলামের মোডারেট ভার্সন! এমন ইসলাম, যা কিনা আমেরিকার ধ্যানধারণার অনুসরণ করে। তারা চায় মুক্তমনা! এমন অন্তর, যা জগতের যত ধরনের কুকর্ম ও শয়তানী আছে, সবকিছুর প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করবে। তারা কোন সংকীর্ণমনাকে চায় না, যাদের অন্তরে কেবলমাত্র আল্লাহ তাআ'লার বাণী ব্যতীত অন্য কোন কিছু প্রবেশ করেনা। যারা একমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণে চলে, এরাই হচ্ছে 'সংকীর্ণমনা', চরমপন্থি, গোঁড়া!
ওরা আফগানীদের 'গুহামানব' বলে। ওরা বলে, "একমাত্র এই গুহামানবরা আর আরব মরুভূমির কিছু বেদুঈন ছাড়া সবাই আমাদের সভ্যতার সাথে একাত্ম হয়েছে।"
বলা হয়েছে, 'উগ্রগোষ্ঠী', "দুনিয়ার উগ্র গোষ্ঠিগুলো সেখানে আশ্রয় পেত।" আল্লাহই ভাল জানেন, এই উগ্রগোষ্ঠী বলে তিনি কাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এই যে অস্পস্টতা ও ধোঁয়াশা রেখে গেলেন, এখান থেকেই তো বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পাঠকদের অনেকের হয়ত মনে আছে, মাস কয়েক আগে তিনি আওয়ার ইসলামে প্রদত্ত এক সাক্ষাতকারে সৌদির বিন সালমামানের বন্দনা গাইতে গিয়ে আলকায়েদার মত মুখলিস জিহাদী তানযীমের সমালোচনা করে তাদেরকে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। অথচ আলকায়েদা সরাসরি আফগানিস্তানের তালেবানপ্রধানের কাছে বাই'আতবদ্ধ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর প্রতিষ্ঠিত নিরেট জিহাদি একটি দল। আজও ইমারতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তানের আমীরুল মু'মিনীনের প্রতি তাদের আনুগত্যের বাই'আত বহাল আছে। পার্থক্য এই, তালিবান সাধারণত আফগান ইস্যুতে কাজ করে আর আলকায়েদা তাদের পক্ষেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে। এসব কথা তিনিও ভাল করেই জানেন। এমনকি এক সময় তিনি এ বিষয়ে তাদের পক্ষে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে বেশ কয়েকটি কিতাবও লিখেছিলেন। আফসোস লাগে, হতাশা জাগে এই জন্যই যে, এমন একজন গুণী মানুষের আজ কী হল? আশঙ্কা হয়, না-মালুম তিনি কোন মারাত্মক চাপে পড়ে প্রাণনাশের ভয়ে এভাবে লিখছেন না তো?
এরপরে তিনি লিখেছেন, "জঙ্গী প্রেরণায় সন্তান তার পিতাকে হত্যা করে। তরুনেরা তাদের বাবা চাচা মা ও ভাইবোনকে হত্যা করে।" এখানেও একই কথা, 'জঙ্গি প্রেরণা' বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? সেটা তো তিনি খোলাসা করেন নি। পশ্চিমারা তো জঙ্গিপ্রেরণা বলতে একমাত্র জিহাদীপ্রেরণাই বুঝায়। তিনি কোন প্রেরণা বুঝিয়েছেন? তিনি তো আমাদেরকে কেবল সূফিবাদের দিকেই আহ্বান করে গেলেন। আর সন্তান তার পিতাকে জঙ্গিপ্রেরণায় কেন হত্যা করে? তরুনেরা তাদের বাবা চাচা মা ও ভাইবোনকে কেন হত্যা করে? তার কারণও কিন্তু খুলে বলেন তিনি। পিতা, চাচা, ভাইবোন যদি ইসলাম বিদ্বেষী, নবী-রাসূল বিদ্বেষী কোন কিছু করে থাকে তাহলে এমন পিতা, চাচা, ভাইবোনকে হত্যা করতে চাওয়ার নজির তো খোদ সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকেই অহরহ পাওয়া যায়। তাহলে যে তিনি বললেন, "এ চিত্র তো ইসলামের না" এর কী হবে?
.
নদভী সাহেব লিখেছেন-
নিয়মিত রণাঙ্গন ছাড়া ইসলামে শত্রুকেও কিছু বলার বিধান নেই। জিম্মিরা যেন মুসলিমদের চেয়েও বড় আমানত। সংখ্যালঘু অমুসলিমরা আপন ভাইয়ের মতো। তাদের সম্মান ও সম্পদ মুসলমানের মতোই নিরাপদ। নিয়মিত যুদ্ধছাড়া মুসলিম সমাজে কোনোদিনই কোনো খুন, গুপ্ত হত্যা, বোমা হামলা, আতংক ছিল না।
.
এই কথাগুলি তো হুবহু ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের বক্তব্যের কপিপেস্টের মত হয়ে গেল! অবশেষে তিনি কি তাহলে -আল্লাহ না করুন- তার পথই ধরলেন?! এখানের প্রত্যেকটা কথা হাদীস ও ফিক্বহ ও সিয়ারে সাহাবার কিতাবের দলীলের আলোকে বিবেচনা করা উচিত। পাঠকদের সমীপে এর বিনীত অনুরোধ থাকলো। সংক্ষেপে শুধু কয়েকটি প্রশ্ন আরজ করছি, সাহাবী হযরত আবু জান্দাল ও হযরত আবু বাসীর রা. যখন হুদাইবিয়্যাহর সন্ধির মেয়াদ চলাকালে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে ঘাঁটি পেতে মক্কার সওদাগর কাফেরদের ধরে ধরে খুন করে তাদের বাণিজ্যিক ধনসম্পদ লুট করে নিচ্ছিলেন, সেটা কি নিয়মিত রণাঙ্গনের কোন কারবার ছিল? ফিক্বহের কোন কিতাবে কি তাদের এই আচরণগুলিকে নাজাযায়েয বলা হয়েছে? এভাবে কা'ব বিন আশরাফ ও আবু রাফে'র মত কাফেরদের ব্যাপারে পরিচালিত 'ইগতিয়াল' বা গুপ্তহত্যা কি নিয়মিত রণাঙ্গনের বিষয় ছিল? আর এই যে 'নিয়মিত রণাঙ্গনের' কথা বলা হচ্ছে, এখানে মোটাদাগের প্রশ্ন হল, আমরা কিভাবে এবং কখন এ কথা বুঝব যে, বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কাফের-মুশরিক চক্রের সর্বাত্মক, সর্বব্যাপী যুদ্ধ চলছে?! এটা কি আজো, এখনো চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে? বলা হল, "জিম্মিরা যেন মুসলিমদের চেয়েও বড় আমানত।" ভাল কথা! কিন্তু জিম্মি বলে তিনি কাদের বুঝালেন? 'জিম্মি' কাকে বলে? আগে তো এটা সাফ হওয়া দরকার। মুসলিমদের মাঝে বসবাসকারী কাফেরমাত্রই কি সে জিম্মি? কোন কাফের কখন, কোন শর্তের ভিত্তিতে 'জিম্মি' বলে কখন গণ্য হয়? কোন অঞ্চলের কাফেরদের ব্যাপারে 'জিম্মি' শব্দটি প্রয়োগ করার আগে একটিবারের জন্য হলেও তো কষ্ট করে কিতাব খুলে এই সংক্রান্ত আহকাম দেখে নেয়া চাই। তারপরে না হয় আসবে মুসলিমদের চেয়েও জিম্মি বড়আমানত কিভাবে হল সেটা প্রমাণ করার পালা। আর "সংখ্যালঘু অমুসলিমরা আপন ভাইয়ের মতো। তাদের সম্মান ও সম্পদ মুসলমানের মতোই নিরাপদ।"এই কথাটা ফিক্বহ ও ফতওয়ার কোন কিতাবে আছে?কেউ সন্ধান দিলে নিজেও পড়তাম, ছাত্রদেরকেও এহতেমামের সাথে পড়াতাম!আসলে 'জিম্মি' আর 'সংখ্যালঘু অমুসলিম' শব্দ দু'টি কি সমার্থক? বুইঝেন কিন্তু 'সংখ্যালঘু অমুসলিম' মানে 'আক্বাল্লিয়্যাহ মিনাল কুফফার' এইভাবে! অন্যকোন শর্ত বা বিধান কিন্তু যোগ করতে পারবেননা এখানে। আর নিয়মিত রণাঙ্গন ছাড়াই খুন, গুম, গুপ্তহত্যার কথা তো বললামই একটু আগে।
.
তিনি লিখেছেন-
উগ্ররা শত্রুদের প্ররোচণায় গত কয়েক বছরে সারা দুনিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানের যে পরিমাণ বদনাম করেছে। যে সংখ্যায় মানুষের ইসলামে প্রবেশ তারা নিরুৎসাহিত করেছে। ইসলামের শত্রুদের যেভাবে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির ভিডিও তৈরি করে মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে, এসব নিয়ে প্রকৃত আল্লাহওয়ালারা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তারা মসজিদ মাদরাসা ও খানাকায় বসে কেবলই আল্লাহকে ডেকেছেন।
.
মন্তব্য: এই 'উগ্ররা' বলতে মূলত কারা উদ্দেশ্য? লেখার একদম শেষ পর্যায়ে এসেও এখন পর্যন্ত খোলাসা হলনা! যদি আমরা এখানে আপাতত ধরেও নেই আইএস উদ্দেশ্য, তারপরও কিন্তু কথা থেকে যায়, ইসলাম ও মুসলমানের বদনাম উগ্ররা কাদের কাছে করেছে? ইসলাম ও মুসলমানদের প্রাণের দুশমন ইয়াহুদ-নাসারা, কাফের-মুশরিকদের কাছে? যদি তাই হয় তাহলে ওদের কাছে ইসলাম ও মুসলমানদের সুনাম করার উপায় ও পদ্ধতিগুলো কি কি? পারভেজ মুশাররফ বা সালমান ও বিন সালমানের মত আমেরিকা-ইসরাইলের স্বার্থে ব্যাপক অবদান রাখা? পাক-সরকারের মত করে লক্ষাধিক মুসলমানের লাশ কাফেরদের উদ্দেশ্যে 'নজরানা' দেয়া? তাদের গুয়ান্তানামাবো, আবু গারীব আর বাগরাম জেলগুলো পরিপূর্ণকরতে তাদের সহযোগিতা করা? আর কি কি উপায় আছে, আমাদের জানা নেই। আর উগ্রদের এসব কর্মকাণ্ড শত্রুদের প্ররোচনায় সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি অবশ্য নির্ভরযোগ্য প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার। আর "যে সংখ্যায় মানুষের ইসলামে প্রবেশ তারা নিরুৎসাহিত করেছে।"এ বাক্যটির সাথে কলামের শেষাংশের বক্তব্যটি যোগ করে পড়ুন- "শত বাঁধার মুখেও বিশ্বব্যাপী ইসলামের জনপ্রিয়তা কমেনি। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে তরুণ তরুণীরা ইসলামগ্রহণ করছে। আল কোরআনে খুঁত ধরতে গিয়ে মুসলমান হচ্ছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী।" কী বুঝলেন?!!
এরপরে তিনি যে কথাটা লিখলেন, "ইসলামের শত্রুদের যেভাবে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির ভিডিও তৈরি করে মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে, এসব নিয়ে প্রকৃত আল্লাহওয়ালারা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন।"এভাবে লিখলে তো বলতে ইচ্ছে করে এই তথাকথিত প্রকৃত(!?)আল্লাহওয়ালারা খালি এসব ব্যাপার নিয়েই খুবই দুশ্চিন্তায় থাকেন? কেন, ইসলামের এই শত্রুরা যে বিগত কয়েক দশক ধরে ইরাকে, ফিলিস্তিনে, সিরিয়ায়, আফগানে, পাকিস্তানে, ভারতে, কাশ্মীরে আর আরাকানে বেপরোয়া লাখ লাখ নিরীহ, নিরপরাধ মুসলমানদের নির্মমভাবে হত্যা, লুণ্ঠন আর ধর্ষণ করছে, বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দিচ্ছে এসব নিয়ে প্রকৃত আল্লাহওয়ালারা কোন দুশ্চিন্তায় থাকেন না? নাকি এইসব প্রকৃত(?)আল্লাহওয়ালা(!)দের দৃষ্টিতে এই গণহত্যার শিকার মুসলমানদের 'মানুষ' মনে হয়না যেমনটা কাফেরদেরকে মনে হয়?নাকি মুসলিম নারীদের গণহারে ধর্ষণ করা হলে সেটাকে আর নারী নির্যাতন বলা চলেনা?নাকি এইসব বিষয় ভিডিওতে কখনোই প্রচার হয়না?? কোনটা???
আজকের মুসলিম মুজাহিদদের (যাদেরকে কাফের ও তাদের দোসররা বলে জঙ্গি) হাতে কাফের 'মানুষ' হত্যা ও তাদের নারীদের বন্দি হওয়ার দৃশ্য দেখে যদি কেউ বিব্রত ও কুণ্ঠিত বোধ করে এবং দুশ্চিন্তায় থাকে যে এসবের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম হবে তাহলে এ রকম মুসলমানদের জন্য তো জিহাদের আয়াত ও হাদীসগুলো দেখে, ইসলামের যুদ্ধের ঘটনাগুলি শুনেও বিব্রতবোধ করার কথা। বিশেষ করে বনু তায়েফ অবরোধের ঘটনা যেখানে মিনজানিক্ব (বড়পাথর পুড়িয়ে অঙ্গার বানিয়ে কামানের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের অবস্থানে নিক্ষেপ করা ) ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে নিশানায় নারী-শিশু কিছুই পৃথক করা সম্ভব হয়না, এভাবে বনু কুরাইযার ঘটনাতেও এদের বিব্রতবোধ করার কথা, যেদিন প্রায় ছয়শ থেকে নয়শ ইহুদী পুরুষকে গর্দান উড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল আর তাদের নারীদের দাসী বানানো হয়েছিল। এমনকি এদের তো রাসূল সা.সহ সাহাবায়ে কেরামের দাসী-বাঁদীদের সাথে কৃত যৌন আচরণের কারণে এবং ইসলামে এর বৈধতার বিধানের কারণেও কুণ্ঠিত, লজ্জিত এবং বিব্রতবোধ করার কথা, এবং দুশ্চিন্তায় থাকার কথা যে, এসবের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম হবে। নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিক! মূলত খোদ কুরআন-হাদীস ও সীরাতে উল্লেখিত জিহাদের বিধান ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলিতে যা আলোচিত হয়েছে তার ভিত্তিতেই শতাব্দীর পর শতাব্দি যাবত ইসলামের শত্রুপক্ষ ইসলামকে মানুষের সামনে একটি বর্বর, নিষ্ঠুর ওহিংস্র ধর্ম হিসেবে প্রচার করে আসছে এবং এ রকম তারা করতেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এখন বর্তমানে যারা বিশ্বব্যাপী জিহাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন ধরে নেয়া যাক তাদের পদ্ধতিগত কিছু ভুল, ইখলাসের দুর্বলতা, নেতৃত্বের কিছু দুর্বলতা ইত্যাদি আছে, কিন্তু এসবের কারণে অতিরিক্ত এমন আর কি কি ঘটছে, যার কারণে ইসলাম ও মুসলমানদের আবার নতুন করে বদনাম হবে?
আল্লাহ আমাদেরকে এই ধরনের আদর্শগত হীনম্মন্যতার সংকট থেকে রক্ষা করুন।
.
নদভী সাহেব লিখেছেন-
ক’জন হিন্দু নারী নৌ ডাকাতদের কবলে পরে আর্তনাদ করে বলেছিল, মুসলমানের খলিফা আপনি আমাদের বাঁচান। সিন্ধুর উপকূলের এ আওয়াজ মানুষের মুখে মুখে পৌঁছে গিয়েছিল সুদূর বাগদাদে খলিফার প্রাসাদে। শাসক হাজ্জাজ তখন তার ভাতিজা ও জামাতা ১৮ বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন কাসিমকে দস্যু দমনের জন্য প্রেরণ করেন দেবল বন্দর পর্যন্ত। নৌ দস্যুদের কোনো শাস্তি না দেওয়ায় হামলা করা হয় রাজা দাহিরের ওপর।
মন্তব্য: আমরা তো এ ইতিহাস ভিন্নভাবে জানি, যেখানে ক’জন হিন্দু নারী নৌ ডাকাতদের কবলে পড়ে আর্তনাদ করার কোন কথা নেই। আমরা জানি, রাজা দাহিরের কারাগারে বন্দি এক মুসলিম বোনের কথা, তাহলে কি আমরা এতদিন খণ্ডিত ইতিহাস শুনে আসছি? পড়েআসছি? নাকি অন্যকিছু আছে এখানে?
.
তিনি লিখেছেন-
শাসকরা যা পারেন নি, এরচেয়ে শতগুণ দীনের খেদমত করেছেন ওলী আউলিয়ারা। শুধু হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী রহ. এর হাতে ৮০ লাখ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। আল্লাহর কি কুদরত বাংলায় হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহ. এর হাতে প্রায় ৭০০ বছর পর সেই ৮০ লাখ মানুষই ইসলাম গ্রহণ করে । বর্তমানে এসব ওলীর বরকতে তাদের তৈরী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হিন্দুকুশ থেকে আরাকান পর্যন্ত মুসলমানের সংখ্যাও ৮০ কোটি।
মন্তব্য: এখানে শাসকরা বলতে কারা উদ্দেশ্য? রাসূল সা. থেকে আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী, মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সকলেই তোশাসক ছিলেন। যাদের শাসনামলেই ইসলাম অর্ধজাহানে প্রসার লাভ করেছিল, ইসলামী শাসন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শাসকরা বলতে যদি সাহাবা, তাবেয়ীএবং তাবেতাবেয়ী যুগের শাসকবর্গ উদ্দেশ্য হয় তাহলে তো তখন অর্ধবিশ্বে খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়্যাহর জারি ছিল, যার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে শতভাগ নির্ভেজাল বিশুদ্ধ ইসলাম প্রসারিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাছাড়া উপমহাদেশের ইসলাম প্রসার ও প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মুজাহিদীন সালাতীন দাঈ'দের অবদানকে কেন এড়িয়ে যাওয়া হল? সুলতান মাহমুদ গজনবী, আহমাদ শাহ আব্দালী, ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজী রহিমাহুমুল্লাহদের মত তলোয়ারওয়ালা দাঈ'দের কথা কেন ভুলে যাওয়া হল? শাহ জালাল ইয়েমেনী রহ. ও তার তিনশ' ষাট বুযুর্গ সহচর, বাবা আদম শহীদ রহ., সায়্যেদ আহমদ শহীদ বেরেলভী, শাহ ইসমাঈল শহীদ, তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ রহিমাহুমুল্লাহদের মত তলোয়ারওয়ালা পীর-মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দীনের গৌরবোজ্জ্বল ঈমানদীপ্ত ইতিহাস ও অবদানের কথা তো আমাদের চেয়ে ভাল জানেন তিনি তারপরও কোন অজানা রহস্যজনক কারণে তাদের দাওয়াতের ইতিহাসকে পাশ কেটে যাওয়া হল?
.
তিনি লিখেছেন-
যারা বলে ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে তারা হয়তো জানে না, স্বার্থপরদের অপপ্রচারে ভুল জানে অথবা তারা ইসলাম বিদ্বেষী মিথ্যাচারী।
মন্তব্য: নাহ, এই ব্যাপারে আর লিখতে মন চায় না, ক্লান্ত হয়ে গেছি লিখে ও বলে। আসলে যারা 'ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়েছে' এ কথা শুনে বিব্রত বোধ করে তারা হয়তো জানে না নবী করীম সা. নিজের ব্যাপারে বলেছেন, 'আনা নাবিয়্যুস সাইফ' (আমি তলোয়ারের নবী) বলেছেন, 'আনা নাবিয়্যুল মালহামা' (আমি যুদ্ধের নবী) যেভাবে বলেছেন, 'আনা নাবিয়্যুর রহমাহ' (আমি দয়ার নবী)।
মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. এ প্রসঙ্গে বলেন, ''আল্লাহ একদিকে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় রাসূল সা.কে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ ও লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার আদেশ করেছেন আবার বিভিন্ন জায়গায় সেই নবী সা. এর ব্যাপারে রহমাতুল লিল আলামীন বলেছেন, 'ইন্নাকা লা'আলা খুলুকিন আযীম' (নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের উপর অধিকারী) বলেছেন, এর দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ব্যবহার করাটাও নবীর পরম দয়া ওসুমহান আখলাকের দাবি।
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম হাফেয ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন : ”আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই দীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একদিকে দলীল প্রমাণ সাক্ষ্য সহকারে, এবং অপরদিকে তরবারী ও বর্শা দিয়ে, উভয়ে এমনভাবে একত্রিত আছে যার একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যায় না।”
ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচারিত হয়েছে? এ প্রশ্ন উল্লেখ করে ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. বলেন- রাসূল সা. বলেন, "আমাকে (শত্রুর অন্তরে) ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে।"রাসূল সা. বলেছেন, "আমি কেয়ামতের পূর্বে তোমাদের নিকট তরবারিসহ প্রেরিত হয়েছি।" ক্বিতাল ব্যতীত কোন দ্বীন নেই। কিন্তু তা এই জন্য নয় যে, তরবারির জোরে কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হবে। বরং এই তরবারির উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাগুতের মসনদকে গুড়িয়ে দেয়া। এবং তাগুতের মস্তক অবনত করার পর আমরা আমাদের দ্বীনকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিব।
মূলত "ইসলাম কি তলোয়ারের জোরে প্রচারিত হয়েছে?" এ এক চরম চতুরতাপূর্ণ ও প্রতারণাপূর্ণ বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন। যা সর্বপ্রথম ইসলামবিদ্বেষী, স্বার্থান্বেষী প্রাচ্যবিদরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়েছিল। উদ্দেশ্য, মুসলমানদেরকে রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জিহাদের পথ থেকে কৌশলে বিচ্যুত করা, যা তারা অন্য কোনভাবে পারছিলনা। কারণ ইসলামের প্রসারের দুটি দিক রয়েছে – একটি সাম্রাজ্যের প্রসার, অপরটি ব্যক্তি জীবনে ইসলামের বিস্তার। ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে আমরা বলতে পারি, ইসলামি সাম্রাজ্য তথা রাষ্ট্রের প্রসার হয়েছে শক্তি অর্থাৎ তরবারির জোরেই। যা রাসূল সা. সহ খুলাফায়ে রাশেদীন ও তৎপরবর্তী ইসলামী শাসকবর্গ ও দিগ্বিজয়ী বীর মুজাহিদীনের বিজয়াভিযানের ইতিহাসগুলি অধ্যয়ন করলেই পরিষ্কার বুঝে আসে।
.
নদভীসাহেব লিখেছেন-
ইতিহাস বলে নবী করিম সা. তার নবুওয়তের প্রথম ১৩ বছর শত জুলুমের কোনো জবাব দেন নি। শুধু ধৈর্যই ধরেছেন। ভালো ব্যবহার করেছেন। প্রাণের শত্রুর বিপদেও ত্রাণকর্তার ভূমিকা নিয়েছেন। ইট পাথর ও কাঁটার জবাব দিয়েছেন দোয়া মহব্বত ও ফুলের দ্বারা। সাহাবীদের জীবন হরণ শুরু হলে, নিজের জীবন হুমকির মুখে পড়লে বাপদাদার ভিটা ও আল্লাহর ঘর ক্বাবা ছেড়ে তারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। মক্কার মুশরিকরা সেখানে গিয়েও আক্রমন চালায়। তাদের ফিরিয়ে এনে হত্যার জন্য মদীনাবাসীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন আল্লাহ জিহাদের হুকুম জারি করেন। সশ্রদ্ধ যুদ্ধের অনুমতি দেন। মুসলমানদের জন্য মজলুম হওয়ার শর্তে জিহাদ ফরজ হয়।
.
মন্তব্য: নবী করীম সা. এবং তার সাহাবাদের জীবনে সেযুগের কাফেরদের পক্ষ থেকে যে দুঃসহ পরিস্থিতিগুলো এসেছিল তার অনুরূপ বা ক্ষেত্রবিশেষ তার চেয়েও করুণ পরিস্থিতি কি বর্তমানের কাফেরদের পক্ষ থেকে আরাকান, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন ওচীনের ঝিংঝিয়াংয়ের মুসলমানদের উপর আসছেনা? আর এসব কি একমাত্র ইসলামের কারণে না? তাহলে সেযুগের মুসলমানদের সমস্যার সমাধান ও মুক্তির একমাত্র যে পথ ছিল এ যুগের দুর্দশাগ্রস্ত মুসলমানদের মুক্তি ও সমস্যার সমাধানের জন্য কি ভিন্ন কোন পথ ও মতের কথা ইসলামে বলা আছে? আর মজলুম হওয়ার শর্তে কিন্তু জিহাদ ফরজ হয়। সুন্নত বা নফল-মুস্তাহাব কিন্তু হয়নি, তাহলে সেই একই শর্তের উপস্থিতিতে বর্তমানে মুসলমানদের উপর জিহাদ কি? তাছাড়া জিহাদ কি কেবল মজলুম হওয়ার শর্তেই ফরজ হয়? তাহলে মক্কা বিজয়ের পরও কি সাহাবায়ে কেরাম মজলুম ছিলেন? মক্কা বিজয়ের পরও রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় তার স্বশরীরে উপস্থিতিতে তায়েফ অবরোধ ও বিজয়, হুনায়ন যুদ্ধ এবং তাবুকের যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং তার ওফাতের পরও আবু বকর রা. মুরতাদদের বিরুদ্ধে, ওমর রা. তৎকালীন সুপার পাওয়ার রোমের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে এবং পরাশক্তি পারস্যের অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধে, এভাবে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবেতাবেয়ীন যুদ্ধ-জিহাদের যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন সেইসব যুদ্ধ কি তারা জিহাদ সুন্নত বা মুস্তাহাব হওয়ার কারণে করেছিলেন? নাকি সে আমলেও মুসলমানরা মজলুম ছিলেন? নাকি কাফেরদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধগুলি সেইসব অঞ্চলে শিরক-কুফরের প্রভাব-প্রতিপত্তি চূর্ণকরে একমাত্র ইসলামের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া ভিন্ন কোন উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল?
.
তিনি লিখেছেন-
কিছুদিন আগে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রভাব একচেটিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার পথে বাঁধা দেওয়ার জন্য আমেরিকা ওয়াহাবী মতবাদ প্রচারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে।’
.
মন্তব্য: "আমেরিকা ওয়াহাবী মতবাদ প্রচারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে"এমন একটা গুরুতর তথ্য আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুহাম্মাদ বিন সালমান অভিযোগের সুরে খোদ আমেরিকার মুখপত্রতুল্য পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টকে প্রদান করার হেতু কী? আবার ওয়াহাবী মতবাদের বিরুদ্ধে এমন তথ্য জাতীয় গাদ্দার বিন সালমানের বরাতে প্রচার করার মাজেজা কী? মজার ব্যাপার হল, ওয়াহাবী মতবাদের প্রচারের কারণে মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রভাব 'একচেটিয়া' বৃদ্ধি পাওয়ার পথে কিন্তু বাঁধাগ্রস্ত হয়নি, বরং এর ফলে ইসলামের প্রভাব 'একচেটিয়া' বৃদ্ধিই পেয়েছে এবং পাচ্ছে!এই প্রবন্ধের একদম শেষাংশে নদভী সাহেব লিখেছেন, তাও আবার এই বিন সালমানের সাক্ষাতকারের বরাতেই! তিনি বলেন,"যুবরাজ বিন সালমানের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হাজার উদ্বেগ মুহূর্তেই পানি হয়ে গেছে। শত বাঁধার মুখেও বিশ্বব্যাপী ইসলামের জনপ্রিয়তা কমেনি। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে তরুণ তরুণীরা ইসলাম গ্রহণ করছে। আল কোরআনে খুঁত ধরতে গিয়ে মুসলমান হচ্ছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী।"
তাহলে এই দ্বিমুখী তথ্য-উপস্থাপনায় কী প্রমাণ করা গেল? তাও আবার যখন হয় একই ব্যক্তির সূত্রে?
.
তিনি লিখেছেন-
ওলামায়ে কেরাম নতুন এই সালাফিস্টদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কথা বলতেন। বলতেন, হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত মুসলিম ঐক্য, প্রতিষ্ঠিত ৪ মাযহাব ও সমাজের শান্তি শৃংখলার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে আত্মঘাতী। কিন্তু উগ্র একটি দলের কারণে এসব কথা মানুষকে বোঝানো কঠিন হয়ে পড়ে।
.
মন্তব্য: আরবের সালাফিস্টরা কি প্রতিষ্ঠিত চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসরণের বিরুদ্ধে কথা বলেন? আমরা তো জানি, সালাফিস্টরা প্রধানত শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. ও হাফেয ইবনুল কাইয়িম রহ. এর অনুসারী, যে দু'জন আবার চার মাযহাবের একটি হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত ফক্বীহ ইমাম। যেভাবে ইমাম তহাবী রহ. ও আল্লামা ইবনে হুমাম রহ. হানাফী মাযহাবের ফক্বীহ ইমাম। এ হিসেবে তো সালাফিস্টরা প্রকারান্তরে হাম্বলী মাযহাবের বা ইবনে তাইমিয়া রহ. সূত্রে হাম্বলী ফিক্বহের অনুসারী বলে বিবেচিত হতে পারে। তাছাড়া আমরা আরবের বিভিন্ন সালাফী শাইখের রচিত কিতাবাদীওপ্রদত্ত লেকচারে চার মাযহাবের ইমামদের মতামত উল্লেখ করার সময় তাদের প্রতি যথেষ্ট আদব ও শ্রদ্ধা বজায় রেখেই তাদের নাম উচ্চারণ করতে দেখি। এমনকি এদেশের সালাফিস্ট মহলের অনেককেই মাঝেমাঝে অনলাইনে দেখেছি, তারা হাম্বলী মাযহাবের ইংরেজি কোন ফিক্বহের বই খুঁজছেন। এ সময় কিছু হানাফি কওমী ভাইকেই বরং দেখেছি তাদের নিয়ে বিদ্রূপ করতে। সত্য উচ্চারণ করলে হয়ত অনেকেরই কষ্ট হবে, ছাত্র যামানায় ফিক্বহে মুক্বারান ও উসূলে ফিক্বহের দরসে বিভিন্ন উস্তাদকে দেখেছি তারা হানাফী মাযহাবের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার সময় কিভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে অন্যান্য মাযহাবের ইমামদের নাম ও তাদের মতামত উল্লেখ করেন। আমার ধারনা, সালাফিস্টরা হয়ত মাযহাবকেন্দ্রিক এই ধরনের আসাবিয়্যাত ও গোঁড়ামির বিরোধিতা করে। আরেকটা বিষয়, আহলে হাদীস আর সালাফিস্টরা কিন্তু এক মতাদর্শের না, উভয় মানহাজের মাঝে বিস্তর ফারাক ও তফাৎ আছে। আহলে হাদীসরা হল গাইরে মুকাল্লিদ এবং তারা এককভাবে কোন ইমামের ফিক্বহ অনুসরণকে সোজা শিরক বলে দেয়। ফিক্বহ অনুসরণ তো দূরে থাক, এরা ফিক্বহই মানেনা। সরাসরি হাদীসের মনগড়া অনুসরণ। সুতরাং ফিক্বহের সম্মানীত ইমামগণের ব্যাপারেও এরা আজেবাজে মন্তব্য করে। তবে সব দেশে সব ইমামের নয়, যে দেশে যেই ফিক্বহ বেশি প্রচলিত সে দেশে সেই ইমামের। কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যায় মুজতাহিদীন ফুক্বাহায়ে কেরামের ইজতিহাদকৃত মতামত ও সিদ্ধান্তকে তারা তাদের মনগড়া কেয়াস বলে উপেক্ষা করে। এরা অধিকাংশ যালিম, তাগুত সরকার-প্রশাসনের গোলামি করে চলতে অভ্যস্ত। জিহাদ-কিতালের ধারকাছ দিয়েও এরা নেই। তালেবান-আলকায়েদাকে এরা সন্ত্রাসী ও ভ্রান্ত দল আখ্যা দেয়। আরবে এদেরকে বলে মাদখালী আহলে হাদীস অথবা মাদখালী সালাফী। সৌদীর শাসকগোষ্ঠী মূলত এই ঘরানার অনুসারী। অথচ সালাফিস্টরা এই সকল ক্ষেত্রে মানহাজ ও মতাদর্শগতভাবে আহলে হাদীসদের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। বাকি এই বিষয়ক গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা ভাল বলতে পারবেন।
.
নদভীসাহেব লিখেছেন-
ইলম ও আমলের ধারক বাহক রূহানিয়্যতে বিশ্বাসী আলেমগণ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তরীকতপন্থীরা মনে হয় পেট্রোডলারওয়ালাদের দাপটে টিকতেই পারছিলেন না। হাজার বছর ধরে হানাফি মাযহাব মেনে আসা মানুষগুলো যেন সালাফিস্টদের আক্রমনে অপরাধী হয়ে গিয়েছিলেন। নব্য সালাফি গোষ্ঠির ধামাধরা উগ্র একটি শ্রেণী সূর্যের চেয়ে বালির উত্তাপ বেশি আকার ধারণ করে দেশে অশান্তি শুরু করে দেয়। মসজিদে মসজিদে দ্বিমত, স্বামী-স্ত্রীতে দ্বিমত, পিতা পুত্রে দ্বিমত এমনকি তা ঈমান ও কুফুরের বিরোধের মতো রূপ নেয়। বিশেষ করে রাষ্ট্র ও সমাজের উচ্চস্তরে এ নতুন বিতর্ক গিয়ে পৌঁছে। কারণ, পেট্রোডলার যখন কথা বলে সত্য তখন নিরব হয়ে যায়।
মন্তব্য:তার মানে কি?সালাফীআলেমগণইলম, আমল ওরূহানিয়্যাতে বিশ্বাসীনয়?মনে হচ্ছে নদভীসাহেব এখানে আহলে হাদীস আর সালাফিস্টদের গুলিয়ে একাকার ফেলেছেন। তবে কথা হল, এখানে 'তরীকতপন্থীরা' বলে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন?এর দ্বারা যদি তিনি ইনকিলাব কর্তৃপক্ষের মত তরীকতপন্থীদের উদ্দেশ্য করে থাকেন তাহলে তোপোয়া বারোটা!যারা কিনা সরাসরি মাজারপুজারীমুশরিক। যারা কথা-কাজে, চিন্তা-চেতনায় আউলিয়াদেরকে সাহাবাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ওঊর্ধ্বে জ্ঞান করে। যারা এদেশের প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহর অনুসারীকওমীউলামায়ে কেরামের প্রতি ঘৃণ্য মানসিকতা ওচরম বিদ্বেষ পোষণকরে। এরা তোক'দিন আগে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফি. এর বিরুদ্ধেওকঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণকরেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল যখন তিনি এদেশের সকল মাজার গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। মূলত সালাফিস্টরা এ ধরনের তরীকতপন্থীদের ব্যাপারে এবং যারা এদের মত শরীয়তের চেয়ে তথাকথিত তরীকতকেই সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়, শরীয়তের সুস্পস্টফায়সালার মুকাবেলায় যারা পীরের মতামত ওসিদ্ধান্তকে বেশীগুরত্ব দেয় এমনতরীকতপন্থীদের ব্যাপারেই সালাফিস্টরা খুবই কঠোর। এক বড়সমস্যা হল, এই সকল শিরকি ওকুফরি আকীদা ধারণকারীবেদ'আতি ভণ্ডরা নিজেদেরকে হানাফীমাযহাবের অনুসারীবলে দাবি করে। খালি এরা না, এদেশের এবং উপমহাদেশের যত বেদ'আতি ফেরকা আছে, চাই সেগুলোআমলগত বেদ'আতি ফেরকা হোক বা আকীদাগত সবাই নিজেদেরকে হানাফীমুসলমান বলে দাবি করে। এই এক মহা সমস্যা। উপমহাদেশের আহলে হক উলামায়ে কেরাম যুগযুগ ধরে বরং শতাব্দির পর শতাব্দিকাল ধরে জীবন-মরণবাজি রেখে তাদের মুকাবেলা করে যাচ্ছেন। তাদের সকল প্রকারের বাতিল আকীদা ওবাতিল কর্মকাণ্ডসম্পর্কে উম্মাহকে সজাগ, সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু এরপরেও এদের দাবি, এরা নাকি হানাফী!আর আহলে হক উলামায়ে কেরাম হলেন 'ওয়াহাবী', ইসলামের চির দুশমন, নবীর দুশমন!এখন এদের মত বাতিলপন্থীদের বিরোধিতাকরাকে যদি মাযহাবের বিরোধিতা, তরীকতপন্থীদের বিরোধিতা বলে চালিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা হবে সীমাহীন দুঃখজনক। আর এদের মত তরীকতপন্থীরা যদি এই সালাফিস্টদের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পারে তাহলে আমি মনে করি, এজন্য আমাদের দেশের আহলে হক উলামাদের উচিত এই সালাফিস্টদের স্বাগত জানানো, তাদের উচিত, মাশাআল্লাহ বলে এদের পিঠ চাপড়েদেয়া। আদতে যদি এই সালাফিস্টরা মাযহাব বিরোধীওতরীকত তথা হকপন্থীপীর-মাশায়েখের পথ ওমতের বিরোধীহত তাহলে তোএতদিনে আফগানিস্তানে আলকায়েদাপন্থী আরব মুজাহিদদের সাথে স্থানীয় তালেবান মুজাহিদদের অন্তর্ঘাত যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। কারণআলকায়েদাপন্থীমুজাহিদরা অধিকাংশই সালাফিস্ট আর স্থানীয় তালেবান মুজাহিদরা শুধু হানাফিই নন, পাক্কা হানাফি। পাক্কা এইজন্য বললাম, আমরা তোকেবল ইবাদাত ওমু'আমালাতে হানাফীফিক্বহের অনুসারী, আর তারা ইবাদত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিচার-প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে তারা পরিপূর্ণহানাফীফিক্বহের অনুসারী। হ্যাঁ, তাদের মধ্যে তাযকিয়া-আত্মশুদ্ধি, তালীম-তরবিয়ত এবং এর জন্য পীর-মাশায়েখ সবই আছে।
আর এই যে বলা হল, "মসজিদে মসজিদে দ্বিমত, স্বামী-স্ত্রীতে দ্বিমত, পিতা পুত্রে দ্বিমত এমনকি তা ঈমান ও কুফুরের বিরোধের মতো রূপ নেয়।"আসলে এর একটা রূপ তোআছে যা ওই আহলে হাদীস নামধারীফেতনাবাজদের থেকে সৃষ্ট। অপর আরেকটি রূপ হল ঈমান-আকীদাগত দ্বিমত-সংঘাত। হ্যাঁ, সরাসরি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহর নির্ভেজাল শতসিদ্ধ আকীদার কারণে সংঘাত। যা আমাদের অনেক কওমীমাদরাসায় পড়ুয়া তালিবে ইলমের সাথে তার পরিবারের লোকজন বা পাড়াপ্রতিবেশীর হয়ে থাকে। এ হক-বাতিলের দ্বিমত-সংঘাত। এ সংঘাত কাম্য। এই সংঘাত ইসলামে ওয়াজিব, ফরয। এসব তাদের মনগড়াকোন আকীদার কারণে সৃষ্ট নয়। আর এ হতেই পারে, কারণকারোবাবা-মা অথবা পিতা-পুত্র যখন ওই শিরক-কুফর বা জঘন্য বিদ'আতি আকীদার নামধারীহানাফীহয় তখন এই দ্বিমত-সংঘাত অনিবার্য। এ দ্বিমত-সংঘাত শত, সহস্রাব্দি কাল ধরে চলমান।
আর ঐযে বলা হল, 'পেট্রোডলার', তোএই পেট্রোডলার বিগত বিশ-ত্রিশবছর ধরে কারা সৌদী আর আমেরিকার মিত্র আরব দেশগুলি থেকে পেয়ে আসছে তা তোবর্তমানে সৌদির রাজদরবার আর সৌদি সহ মিসর, জর্দান, আমিরাতের কারাগারগুলোর দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
.
নদভীসাহেব লিখেছেন-
এমনকি নাউযুবিল্লাহ, এক সালাফিস্ট প্রফেসর কর্তৃপক্ষের প্রণোদনায় এক থিসিস তৈরি করে। যেখানে বলা হয় ভক্ত উম্মতের ভীড় সামাল দিতে নবী করিম সা. এর পবিত্র রওজা মোবারক কারফিউ দিয়ে রাতের অন্ধকারে বর্তমান জায়গা থেকে তুলে নিয়ে বকী গোরস্তানের বিশাল ময়দানের অজ্ঞাত কোনে স্থানে স্থাপন করা হবে। যেন কোনো উম্মত সেটা চিনতে না পারে। হজ্জ ও ওমরা যাত্রীরা জিয়ারতে গিয়ে নবী সা. এর রওজা খুঁজে না পায়। এ প্রস্তাবের পর বিশ্বব্যাপী আশেকে রাসুলরা রীতিমতো মৃত্যু যন্ত্রণায় পড়ে যান। আল্লাহর রহমত বাদশাহ সালমান এ বিষয়টি বুদ্ধির সাথে শেষ করে দেন। তিনি নিজে দীর্ঘসময় রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। দাঁড়িয়ে থেকে দরুদ সালাম পেশ করে দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে লম্বা দোয়া মুনাজাত করেন। সরকারী তত্তাবধানে তা বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রচারেরও ব্যবস্থা করেন। কিছুদিন পর তিনি আবার পাক মদীনায় ছুটে যান। একইভাবে জিয়ারত করেন। একই বছর কাবা সংলগ্ন সাফা প্রাসাদে রমজানের শেষভাগ অবস্থান করেন। বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্র ওয়াহাবী মতবাদ ও বিদ্বেষী সালাফিজম দমনে তার সরকার উদ্যত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা বিশ্বব্যাপী কঠোর বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
মন্তব্য:
হাস্যকর!পড়েই সচেতন পাঠকমাত্র ধরতে পারবেন, কাহিনীর আগাগোড়াসম্পূর্ণসাজানোনাটক। যেখানে সৌদীর নামকরা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আহলে হক উলামা মহলে শ্রদ্ধাভাজন, বরেণ্যপ্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম যালিম-তাগূতের কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হচ্ছেন, দেশের প্রভাবশালীবিভিন্ন মন্ত্রী-আমলারাসহ বেশকিছু আমীর-উমারা পর্যন্ত যেখানে এই কুখ্যাত বাপ-বেটার দমন-পীড়নেনিষ্পেষিত, সেখানে কোথাকার কোন অখ্যাত অজ্ঞাত নাদান প্রফেসরের থিসিসের ঠ্যালা সামলাতে আমেরিকার কেনা গোলাম সালমান নাজেহাল, পেরেশান!!এইসব গাঁজাখুরি গপ্পোকোন সদ্য গাঁজাখোরকেও কি বিশ্বাস করানোযাবে??আসলে ঘটনা এই হয়েছে যে, তিনশতাধিক আহলে হক্ব উলামায়ে কেরামকে জেলে নিক্ষেপ করে সৌদিসহ গোটাআরব জাহান এমনকি সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সৌদীর শাসকবর্গ তথা সালমান ওবিন সালমান প্রশাসনের যে ইমেজ-সংকটতৈরি হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতেই যে মূলত এই জাতীয় ইমোশনাল ড্রামার আয়োজন তা আর কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। অবশ্য অন্ধরা তোসর্বাবস্থায়ই অন্ধ।
শেষদিকে বলা হয়েছে "বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্র ওয়াহাবী মতবাদ ও বিদ্বেষী সালাফিজম দমনে তার সরকার উদ্যত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা বিশ্বব্যাপী কঠোর বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।" প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, এদেরকে যে উগ্র, বিদ্বেষী বলা হচ্ছে তা এরা কাদের ব্যাপারে উগ্র? কাদের ব্যাপারে বিদ্ধেষী?দীনদার, পহেযগার, সুন্নাতের অনুসারীমুসলমানদের ব্যাপারে?নাকি নবী-সাহাবার পূন্যভূমিতে শিরক-বিদ'আতের প্রসারকারীএবং ইয়াহুদ-নাসারার দালাল আমেরিকা-ইসরাইলের পা-চাটা গোলামদের বিরূদ্ধে উগ্র? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, এ সিদ্ধান্ত এতদিনে কেন? এতদিন কেন এদের দমনে উদ্যত হলনা সৌদি সরকার?আন্তর্জাতিকভাবে মুসলমানদের কাছে, উলামায়ে কেরামের কাছে ইমেজ সংকটের আশঙ্কা ছিল? নিজেদের 'ভালমানুষি'র গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছিল? যাক, এখন এতদিনে তো আমেরিকার দালালী করতে করতে মান-সম্মান, দীনীগাইরত ও আত্মমর্যাদাবোধ যা হারানোর হারিয়ে গেছেই, এখন আর নতুন করে হারানোর কিছুই নাই, তাই এভাবে নির্লজ্জের মত, বেহায়া-কমীনা-ইতরের মত স্বজাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পথে নামতে এতটুকুও দ্বিধা-সংকোচ হচ্ছেনা। নাকি ইদানিং কাতার-জেরুসালেম-ইয়েমেন-সিরিয়া ইস্যুতে এই উগ্র সালাফিস্টরা অতিমাত্রায় মারমুখীহয়ে উঠায় প্রভু আমেরিকা-ইসরাইলের চাপটা একটু বেশিই যাচ্ছে?এ মুহূর্তে তাদের থেকে প্রাপ্তির আশাটাও একটু বড়? সুতরাং এখন জীবন-মরণ দিয়ে, খেয়ে-না খেয়ে পাকিস্তানের মত তাদের খুশি করার কসরত করে যেতে হবে? দেইখো বিন সালমান! পরে যেন আবার সাবেক মার্কিন-পতিতা পাকিস্তানের মত বলা না লাগে "আমেরিকাকে অন্ধভাবে ভালবেসে ভুল করেছি"!তবে এখানে পাঠকের আবারোকলামের মাঝামাঝি অংশের সেই হাস্যকর বক্তব্য মনে পড়েযাচ্ছে "কিছুদিন আগে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম বিশ্বে ইসলামের প্রভাব একচেটিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার পথে বাঁধা দেওয়ার জন্য আমেরিকা ওয়াহাবী মতবাদ প্রচারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে।’"
এখানে এসে পাঠকের মনে স্বভাবতই একটা চিন্তা বারবারই উঁকি দিচ্ছে যে, সৌদিআরবের বর্তমানের এই পরিস্থিতিতে যখন সারা মুসলিম জাহানের আরব-আজম তামাম আহলে হক্ব উলামায়ে কেরাম এই জঘন্য মার্কিন-ইসরাইলের প্রকাশ্য দালাল, জাতীয় গাদ্দার সালমান ওবিন সালমানের সমালোচনা ওনিন্দায় ফুঁসে উঠছেন, এমন এক সঙ্গীন সময়ে কেন, কোন অজানা রহস্যঘেরা কারণে নদভীসাহেবের মত সজাগ, সচেতন, আস্থাভাজন ওবরেণ্য আলেমে দীন ইনিয়ে বিনিয়ে এই কুখ্যাত বাপ-বেটার প্রশংসা ওবন্দনা গেয়ে যাচ্ছেন?! এ এক মহা জট। এই জটখোলার দায়ভার পাঠকের কাঁধে ন্যস্ত করলাম।
পাঠকদের অনেকের হয়ত মনে থাকবে, এর আগেও তিনি আওয়ার ইসলামে মুহাম্মদ বিন সালমানের তথাকথিত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন।
.
নদভী সাহেব লিখেছেন-
ইউরোপের নানা দেশে বিশেষ করে জার্মানি ও ফ্রান্সে গত ২০ বছর তথাকথিত সালাফিদেরই রাজত্ব ছিল। যত মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার সবখানে তাদের উগ্রভাব ও আচরণ। দুনিয়ার উগ্র গোষ্ঠিগুলো সেখানে আশ্রয় পেত। সারা দুনিয়ায় ইসলাম প্রচারক আলেম ও ওলী দরবেশগণ যে আধ্যাত্মিক শক্তি বলে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। নতুন মিশনে এসব ছিল না। ছিল পেট্রোডলার আর শরীয়ত বিরোধী উগ্রতা। যার ফলে স্বয়ং সৌদি আরব ও ইউরোপের সালাফিরা র্যাডিকেল হতে শুরু করে। নানা জঙ্গী প্রেরণায় সন্তান তার পিতাকে হত্যা করে। তরুনেরা তাদের বাবা চাচা মা ও ভাইবোনকে হত্যা করে। এ চিত্র তো ইসলামের নয়।
.
মন্তব্য: তাদের উগ্রভাব ও আচরণ গুলোকি কি ছিল প্রেক্ষাপটের উল্লেখসহ তার একটা ফিরিস্তি ও বিবরণ আসতে পারত, কিন্তু তা দেয়া হয়নি, কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়িয়ে যাওয়া গুলোই রহস্যজনক। আমরা জানি বিগত বিশ বছরে জার্মানি ও ফ্রান্সে অধিকাংশ মুহাজির আরব মুসলমানদেরই বসবাস ছিল। তারা সেখানে আরো কয়েক দশক আগ থেকেই বসবাস করে আসছে। সেখানকার স্থানীয়রা এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর বিগত বিশ বছর যাবত সমগ্র বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ বিশেষত আরব মুসলমানদের উপরে এই বর্বর পশ্চিমা ইউরোপিয়ানদের পক্ষ থেকে কী ধরনের অমানবিক ও পাশবিক নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে তা তো সবার সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। ইউরোপের বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার কথা তো সেখানকার মুসলমানরা ভুলে যায়নি, সার্বিয়ানদের পাশবিক বর্বরতার কথা কি ইউরোপের মুসলমানরা কখনো ভুলতে পারবে? ভুলা সম্ভব? ইরাক-আফগান-সিরিয়ায় এই পশ্চিমা হায়েনাদের বর্বরতার কথা না হয় বাদই দিলাম, যেই সিরিয়ার বহু মুসলমান নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে এই ফ্রান্স ও জার্মানিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এ ভূমিতে আশ্রয় নিলেও তো এটা শত্রুভূমি, যে ভূমির হায়েনারা তাদের স্বজাতিদের উপর আগ্রাসন চালিয়ে তাদের সব ছারখার করে দিচ্ছে। সুতরাং এখানে এসে কি তারা তাদের শত্রু বা শত্রুপক্ষের দালালদের সাথে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলবে? নাকি সর্বদা রক্ষণশীল, সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে তাদের? আর আমরা জানি, পশ্চিমারা মুসলমানদের এই রক্ষণশীল ধর্মীয় অবস্থানকেই র্যাডিকেল বা চরমপন্থীও উগ্রপন্থী ইসলাম বলে অভিহিত করে। তারা মূলত ট্র্যাডিশনাল বা মূলধারার ইসলামকেই কখনো ফ্যান্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ বলে আবার কখনো একে র্যাডিকেল বা উগ্রপন্থী ইসলাম বলে। এসব বলে কয়ে তারা মূলত মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চায়। আসলে ইসলাম তো সেটাই যা মূলানুগ, মূলধারার। তাদের এইসব বলা-কওয়াও খুবই স্বাভাবিক। কারণ ইসলাম-কুফরের সংঘাত চিরন্তন। তাই তারা এই মূলধারার ইসলামটাকে বরদাশত করতে পারেনা।
শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে ওরা সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে। এবং তারা আমাদেরকে মৌলবাদি বলে। 'মৌলবাদি'?! মৌলবাদি মানে তো ওই ব্যক্তি যে ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোকে আঁকড়ে ধরে। আজকে কোন বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর অনুগামী হলেই তাকে সন্ত্রাস বলা হচ্ছে। তারা আসলে যা চায়, তা হচ্ছে ইসলামের মোডারেট ভার্সন! এমন ইসলাম, যা কিনা আমেরিকার ধ্যানধারণার অনুসরণ করে। তারা চায় মুক্তমনা! এমন অন্তর, যা জগতের যত ধরনের কুকর্ম ও শয়তানী আছে, সবকিছুর প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করবে। তারা কোন সংকীর্ণমনাকে চায় না, যাদের অন্তরে কেবলমাত্র আল্লাহ তাআ'লার বাণী ব্যতীত অন্য কোন কিছু প্রবেশ করেনা। যারা একমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণে চলে, এরাই হচ্ছে 'সংকীর্ণমনা', চরমপন্থি, গোঁড়া!
ওরা আফগানীদের 'গুহামানব' বলে। ওরা বলে, "একমাত্র এই গুহামানবরা আর আরব মরুভূমির কিছু বেদুঈন ছাড়া সবাই আমাদের সভ্যতার সাথে একাত্ম হয়েছে।"
বলা হয়েছে, 'উগ্রগোষ্ঠী', "দুনিয়ার উগ্র গোষ্ঠিগুলো সেখানে আশ্রয় পেত।" আল্লাহই ভাল জানেন, এই উগ্রগোষ্ঠী বলে তিনি কাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এই যে অস্পস্টতা ও ধোঁয়াশা রেখে গেলেন, এখান থেকেই তো বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পাঠকদের অনেকের হয়ত মনে আছে, মাস কয়েক আগে তিনি আওয়ার ইসলামে প্রদত্ত এক সাক্ষাতকারে সৌদির বিন সালমামানের বন্দনা গাইতে গিয়ে আলকায়েদার মত মুখলিস জিহাদী তানযীমের সমালোচনা করে তাদেরকে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। অথচ আলকায়েদা সরাসরি আফগানিস্তানের তালেবানপ্রধানের কাছে বাই'আতবদ্ধ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর প্রতিষ্ঠিত নিরেট জিহাদি একটি দল। আজও ইমারতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তানের আমীরুল মু'মিনীনের প্রতি তাদের আনুগত্যের বাই'আত বহাল আছে। পার্থক্য এই, তালিবান সাধারণত আফগান ইস্যুতে কাজ করে আর আলকায়েদা তাদের পক্ষেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে। এসব কথা তিনিও ভাল করেই জানেন। এমনকি এক সময় তিনি এ বিষয়ে তাদের পক্ষে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে বেশ কয়েকটি কিতাবও লিখেছিলেন। আফসোস লাগে, হতাশা জাগে এই জন্যই যে, এমন একজন গুণী মানুষের আজ কী হল? আশঙ্কা হয়, না-মালুম তিনি কোন মারাত্মক চাপে পড়ে প্রাণনাশের ভয়ে এভাবে লিখছেন না তো?
এরপরে তিনি লিখেছেন, "জঙ্গী প্রেরণায় সন্তান তার পিতাকে হত্যা করে। তরুনেরা তাদের বাবা চাচা মা ও ভাইবোনকে হত্যা করে।" এখানেও একই কথা, 'জঙ্গি প্রেরণা' বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? সেটা তো তিনি খোলাসা করেন নি। পশ্চিমারা তো জঙ্গিপ্রেরণা বলতে একমাত্র জিহাদীপ্রেরণাই বুঝায়। তিনি কোন প্রেরণা বুঝিয়েছেন? তিনি তো আমাদেরকে কেবল সূফিবাদের দিকেই আহ্বান করে গেলেন। আর সন্তান তার পিতাকে জঙ্গিপ্রেরণায় কেন হত্যা করে? তরুনেরা তাদের বাবা চাচা মা ও ভাইবোনকে কেন হত্যা করে? তার কারণও কিন্তু খুলে বলেন তিনি। পিতা, চাচা, ভাইবোন যদি ইসলাম বিদ্বেষী, নবী-রাসূল বিদ্বেষী কোন কিছু করে থাকে তাহলে এমন পিতা, চাচা, ভাইবোনকে হত্যা করতে চাওয়ার নজির তো খোদ সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকেই অহরহ পাওয়া যায়। তাহলে যে তিনি বললেন, "এ চিত্র তো ইসলামের না" এর কী হবে?
.
নদভী সাহেব লিখেছেন-
নিয়মিত রণাঙ্গন ছাড়া ইসলামে শত্রুকেও কিছু বলার বিধান নেই। জিম্মিরা যেন মুসলিমদের চেয়েও বড় আমানত। সংখ্যালঘু অমুসলিমরা আপন ভাইয়ের মতো। তাদের সম্মান ও সম্পদ মুসলমানের মতোই নিরাপদ। নিয়মিত যুদ্ধছাড়া মুসলিম সমাজে কোনোদিনই কোনো খুন, গুপ্ত হত্যা, বোমা হামলা, আতংক ছিল না।
.
এই কথাগুলি তো হুবহু ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের বক্তব্যের কপিপেস্টের মত হয়ে গেল! অবশেষে তিনি কি তাহলে -আল্লাহ না করুন- তার পথই ধরলেন?! এখানের প্রত্যেকটা কথা হাদীস ও ফিক্বহ ও সিয়ারে সাহাবার কিতাবের দলীলের আলোকে বিবেচনা করা উচিত। পাঠকদের সমীপে এর বিনীত অনুরোধ থাকলো। সংক্ষেপে শুধু কয়েকটি প্রশ্ন আরজ করছি, সাহাবী হযরত আবু জান্দাল ও হযরত আবু বাসীর রা. যখন হুদাইবিয়্যাহর সন্ধির মেয়াদ চলাকালে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে ঘাঁটি পেতে মক্কার সওদাগর কাফেরদের ধরে ধরে খুন করে তাদের বাণিজ্যিক ধনসম্পদ লুট করে নিচ্ছিলেন, সেটা কি নিয়মিত রণাঙ্গনের কোন কারবার ছিল? ফিক্বহের কোন কিতাবে কি তাদের এই আচরণগুলিকে নাজাযায়েয বলা হয়েছে? এভাবে কা'ব বিন আশরাফ ও আবু রাফে'র মত কাফেরদের ব্যাপারে পরিচালিত 'ইগতিয়াল' বা গুপ্তহত্যা কি নিয়মিত রণাঙ্গনের বিষয় ছিল? আর এই যে 'নিয়মিত রণাঙ্গনের' কথা বলা হচ্ছে, এখানে মোটাদাগের প্রশ্ন হল, আমরা কিভাবে এবং কখন এ কথা বুঝব যে, বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কাফের-মুশরিক চক্রের সর্বাত্মক, সর্বব্যাপী যুদ্ধ চলছে?! এটা কি আজো, এখনো চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে? বলা হল, "জিম্মিরা যেন মুসলিমদের চেয়েও বড় আমানত।" ভাল কথা! কিন্তু জিম্মি বলে তিনি কাদের বুঝালেন? 'জিম্মি' কাকে বলে? আগে তো এটা সাফ হওয়া দরকার। মুসলিমদের মাঝে বসবাসকারী কাফেরমাত্রই কি সে জিম্মি? কোন কাফের কখন, কোন শর্তের ভিত্তিতে 'জিম্মি' বলে কখন গণ্য হয়? কোন অঞ্চলের কাফেরদের ব্যাপারে 'জিম্মি' শব্দটি প্রয়োগ করার আগে একটিবারের জন্য হলেও তো কষ্ট করে কিতাব খুলে এই সংক্রান্ত আহকাম দেখে নেয়া চাই। তারপরে না হয় আসবে মুসলিমদের চেয়েও জিম্মি বড়আমানত কিভাবে হল সেটা প্রমাণ করার পালা। আর "সংখ্যালঘু অমুসলিমরা আপন ভাইয়ের মতো। তাদের সম্মান ও সম্পদ মুসলমানের মতোই নিরাপদ।"এই কথাটা ফিক্বহ ও ফতওয়ার কোন কিতাবে আছে?কেউ সন্ধান দিলে নিজেও পড়তাম, ছাত্রদেরকেও এহতেমামের সাথে পড়াতাম!আসলে 'জিম্মি' আর 'সংখ্যালঘু অমুসলিম' শব্দ দু'টি কি সমার্থক? বুইঝেন কিন্তু 'সংখ্যালঘু অমুসলিম' মানে 'আক্বাল্লিয়্যাহ মিনাল কুফফার' এইভাবে! অন্যকোন শর্ত বা বিধান কিন্তু যোগ করতে পারবেননা এখানে। আর নিয়মিত রণাঙ্গন ছাড়াই খুন, গুম, গুপ্তহত্যার কথা তো বললামই একটু আগে।
.
তিনি লিখেছেন-
উগ্ররা শত্রুদের প্ররোচণায় গত কয়েক বছরে সারা দুনিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানের যে পরিমাণ বদনাম করেছে। যে সংখ্যায় মানুষের ইসলামে প্রবেশ তারা নিরুৎসাহিত করেছে। ইসলামের শত্রুদের যেভাবে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির ভিডিও তৈরি করে মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে, এসব নিয়ে প্রকৃত আল্লাহওয়ালারা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তারা মসজিদ মাদরাসা ও খানাকায় বসে কেবলই আল্লাহকে ডেকেছেন।
.
মন্তব্য: এই 'উগ্ররা' বলতে মূলত কারা উদ্দেশ্য? লেখার একদম শেষ পর্যায়ে এসেও এখন পর্যন্ত খোলাসা হলনা! যদি আমরা এখানে আপাতত ধরেও নেই আইএস উদ্দেশ্য, তারপরও কিন্তু কথা থেকে যায়, ইসলাম ও মুসলমানের বদনাম উগ্ররা কাদের কাছে করেছে? ইসলাম ও মুসলমানদের প্রাণের দুশমন ইয়াহুদ-নাসারা, কাফের-মুশরিকদের কাছে? যদি তাই হয় তাহলে ওদের কাছে ইসলাম ও মুসলমানদের সুনাম করার উপায় ও পদ্ধতিগুলো কি কি? পারভেজ মুশাররফ বা সালমান ও বিন সালমানের মত আমেরিকা-ইসরাইলের স্বার্থে ব্যাপক অবদান রাখা? পাক-সরকারের মত করে লক্ষাধিক মুসলমানের লাশ কাফেরদের উদ্দেশ্যে 'নজরানা' দেয়া? তাদের গুয়ান্তানামাবো, আবু গারীব আর বাগরাম জেলগুলো পরিপূর্ণকরতে তাদের সহযোগিতা করা? আর কি কি উপায় আছে, আমাদের জানা নেই। আর উগ্রদের এসব কর্মকাণ্ড শত্রুদের প্ররোচনায় সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি অবশ্য নির্ভরযোগ্য প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার। আর "যে সংখ্যায় মানুষের ইসলামে প্রবেশ তারা নিরুৎসাহিত করেছে।"এ বাক্যটির সাথে কলামের শেষাংশের বক্তব্যটি যোগ করে পড়ুন- "শত বাঁধার মুখেও বিশ্বব্যাপী ইসলামের জনপ্রিয়তা কমেনি। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে তরুণ তরুণীরা ইসলামগ্রহণ করছে। আল কোরআনে খুঁত ধরতে গিয়ে মুসলমান হচ্ছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী।" কী বুঝলেন?!!
এরপরে তিনি যে কথাটা লিখলেন, "ইসলামের শত্রুদের যেভাবে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির ভিডিও তৈরি করে মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে, এসব নিয়ে প্রকৃত আল্লাহওয়ালারা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন।"এভাবে লিখলে তো বলতে ইচ্ছে করে এই তথাকথিত প্রকৃত(!?)আল্লাহওয়ালারা খালি এসব ব্যাপার নিয়েই খুবই দুশ্চিন্তায় থাকেন? কেন, ইসলামের এই শত্রুরা যে বিগত কয়েক দশক ধরে ইরাকে, ফিলিস্তিনে, সিরিয়ায়, আফগানে, পাকিস্তানে, ভারতে, কাশ্মীরে আর আরাকানে বেপরোয়া লাখ লাখ নিরীহ, নিরপরাধ মুসলমানদের নির্মমভাবে হত্যা, লুণ্ঠন আর ধর্ষণ করছে, বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দিচ্ছে এসব নিয়ে প্রকৃত আল্লাহওয়ালারা কোন দুশ্চিন্তায় থাকেন না? নাকি এইসব প্রকৃত(?)আল্লাহওয়ালা(!)দের দৃষ্টিতে এই গণহত্যার শিকার মুসলমানদের 'মানুষ' মনে হয়না যেমনটা কাফেরদেরকে মনে হয়?নাকি মুসলিম নারীদের গণহারে ধর্ষণ করা হলে সেটাকে আর নারী নির্যাতন বলা চলেনা?নাকি এইসব বিষয় ভিডিওতে কখনোই প্রচার হয়না?? কোনটা???
আজকের মুসলিম মুজাহিদদের (যাদেরকে কাফের ও তাদের দোসররা বলে জঙ্গি) হাতে কাফের 'মানুষ' হত্যা ও তাদের নারীদের বন্দি হওয়ার দৃশ্য দেখে যদি কেউ বিব্রত ও কুণ্ঠিত বোধ করে এবং দুশ্চিন্তায় থাকে যে এসবের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম হবে তাহলে এ রকম মুসলমানদের জন্য তো জিহাদের আয়াত ও হাদীসগুলো দেখে, ইসলামের যুদ্ধের ঘটনাগুলি শুনেও বিব্রতবোধ করার কথা। বিশেষ করে বনু তায়েফ অবরোধের ঘটনা যেখানে মিনজানিক্ব (বড়পাথর পুড়িয়ে অঙ্গার বানিয়ে কামানের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের অবস্থানে নিক্ষেপ করা ) ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে নিশানায় নারী-শিশু কিছুই পৃথক করা সম্ভব হয়না, এভাবে বনু কুরাইযার ঘটনাতেও এদের বিব্রতবোধ করার কথা, যেদিন প্রায় ছয়শ থেকে নয়শ ইহুদী পুরুষকে গর্দান উড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল আর তাদের নারীদের দাসী বানানো হয়েছিল। এমনকি এদের তো রাসূল সা.সহ সাহাবায়ে কেরামের দাসী-বাঁদীদের সাথে কৃত যৌন আচরণের কারণে এবং ইসলামে এর বৈধতার বিধানের কারণেও কুণ্ঠিত, লজ্জিত এবং বিব্রতবোধ করার কথা, এবং দুশ্চিন্তায় থাকার কথা যে, এসবের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম হবে। নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিক! মূলত খোদ কুরআন-হাদীস ও সীরাতে উল্লেখিত জিহাদের বিধান ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলিতে যা আলোচিত হয়েছে তার ভিত্তিতেই শতাব্দীর পর শতাব্দি যাবত ইসলামের শত্রুপক্ষ ইসলামকে মানুষের সামনে একটি বর্বর, নিষ্ঠুর ওহিংস্র ধর্ম হিসেবে প্রচার করে আসছে এবং এ রকম তারা করতেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এখন বর্তমানে যারা বিশ্বব্যাপী জিহাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন ধরে নেয়া যাক তাদের পদ্ধতিগত কিছু ভুল, ইখলাসের দুর্বলতা, নেতৃত্বের কিছু দুর্বলতা ইত্যাদি আছে, কিন্তু এসবের কারণে অতিরিক্ত এমন আর কি কি ঘটছে, যার কারণে ইসলাম ও মুসলমানদের আবার নতুন করে বদনাম হবে?
আল্লাহ আমাদেরকে এই ধরনের আদর্শগত হীনম্মন্যতার সংকট থেকে রক্ষা করুন।
Comment