রমজানুল মোবারকে কিছু বিশেষ কাজ
হযরত সালমান ফারসী রাযি: থেকে বর্ণিত "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: শাবানের শেষের দিকে আমাদের ওয়াজ করতে গিয়ে বলেন:
"হে লোক সকল তোমাদের সামনে মহিমান্বিত এবং বরকতময় মাস আগমন করছে।যার মাঝে এমন এক মূল্যবান রাত্রি রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম।তাই তোমরা সে মাসে দিনের বেলা আবশ্যকীয় ভাবে রোজা রাখবে।আর রাতের বেলায় বেশি বেশি নফল নামায আদায় করবে।সে মাসের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য।আর একটি ফরজ আদায় অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান। সেটি এমন মাস যার প্রথমভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত, আর শেষ ভাগে নাজাত তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তি।( আত্ তারগিব ওয়াত তারহিব)
রমজানুল মোবারকে নিজেদের সংশোধন করার লক্ষে কিছু বিষয় তুলে ধরছি আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন
01. নিয়তকে নবায়ন করা
আমাদের নিয়তকে শুদ্ধ করা। যা করতেছি সবকিছু একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য করা। দৃঢ়ভাবে এ প্রতিজ্ঞা করা শুধু রমজান মাসেই নয় বরং সারা জীবন আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করব। রমজান শুরু হয়ে গেছে এখনো নিয়ত করেননি সমস্যা নাই এখন থেকেই আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও জবাবদিহিতাকে সামনে রেখে বাকী দিনগুলো অতিবাহিত করার নিয়ত করে নেন। আর আত্মশুদ্ধির সঠিক পন্থাতো সেটাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক হয়। কেননা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, সকল কামিয়াবী আর সফলতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মাঝেই রাখা হয়েছে। তাই আত্মশুদ্ধির নিজের মাঝে বাস্তবায়নের উত্তম পন্থা হল আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করা।
02 –নিজের নফসের জবাবদিহিতা
حاسبواانفسکم قبل ان تحاسبوا
তোমাদের থেকে হিসাব গ্রহণের পূর্বেই নফসের হিসাব গ্রহণ কর.
শয়নকালে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সারা দিনের কাজকর্মের হিসাব গ্রহণ করেন।
আর আল্লাহ তায়ালাতো প্রকাশ্য, গোপন সবকিছুই জানেনও দেখেন"। এছাড়া দুনিয়াতে মানুষ নিজেই তার ব্যাপারে সবচে ভাল জানে।
بل الانسان علی نفسہ بصیرۃ
যা আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে ব্যক্ত করেছেন। তাই সারা দিনের ভুলভ্রান্তি গুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের চেষ্টা করুন। এই রমজান মাসেই অন্যায় গুলোকে পরিত্যাগ করুন। ইনশাআল্লাহ..
কেননা মানুষ গুনাহের প্রতি ধাবিত হয় দু কারণে:
প্রথমত: নফসে আম্মারাহ
দ্বিতীয়ত: বিতাড়িত শয়তান
আর হাদিস শরিফে সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে রমজান মাসে শয়তানগুলোকে শিকলে আটকে করে রাখা হয়।
তাহলে শুধু মাত্র নফসের বিষয়টা বাকী থাকে আর এটা সারা দিন রোজা রাখার কারণে দুর্বল হয়ে প্রায় কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়।তাই গুনাহ ছাড়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। সুতরাং যারা রমজান মাসেও গুনাহ ছাড়তে না পারবে তারা পরেও ছাড়তে পারবে না। তবে আল্লাহ তায়ালা যদি করো সহায় হোন তাহলে ভিন্ন কথা। তাই সকল ধরণের গুনাহ থেকেই বেঁচে থাকুন, বিশেষ করে যাদের গীবত করার মন্দ অভ্যাস আছে। তারা রোযার উসিলায় জবানকে পুরাপুরি কন্টোল করুন। আর স্মরণ করুন গীবতকে মৃত ভায়ের গোসত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এটা ব্যভিচারের চেয়েও খারাপ। তাই মৃত ভায়ের গোসত খাওয়ার কথা কল্পনা করুন এবং এটাকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
আমরা গীবত কেন করি?
শুধু মাত্র রসনার তৃপ্তির জন্য। সুতরাং গীবতটা জিহ্বার কামনা বাসনার পূরণের জন্য অনর্থক , অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার অভ্যাসের কারণে হয়। তাই রমজান মাসে নিজেদের আদত বানিয়ে নেন., বেফায়দা কোন কথা জবান থেকে বের করবেন না। স্বল্পবাসী হয়ে হয়ে উঠুন।।
এটি এমন একটি বিষয়, যে কেউ গীবতকৃত ব্যক্তির উপস্থিতিতে তা উল্লেখ করতে পারবে না।
সুতরাং গীবত বলা হয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতিতে তার এমন বিষয়ের আলোচনা করা যা শুনলে সে কষ্ট পায়। গীবত থেকে বাঁচার আরেকটি পদ্ধতি এইও হয় যে, অনুপস্থিত ব্যক্তির আলোচনাই না করা। আসলে এটা অনেক বড় গুনাহ। জবানের অন্যতম বিপদ। তাই এটা থেকে নিজেকে আবশ্যকীয় ভাবে বাঁচাতে হবে। কমছে কম রমজান মাসে যেন শুধু এমন কথাই হয় যা মিযানে নেকের পাল্লায় উঠানো হবে না।
এমনিভাবে গীবতের মত আরেকটি মারাত্মক গুনাহ হল বদনজর- কুদৃষ্টি ...
যে রোগের প্রতি বর্তমানে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে এই বদ নজরের বিপদ থেকে হেফাজত করুক। আমীন।
জেনে কিংবা না জেনে বদ নজর হয়ে যায়। শরীয়ত সম্পর্কেও জ্ঞানী
এমন অনেক নেক বান্দারাও এ রোগে শিকার হয়ে যায়।
এ গুনাহ থেকে বাঁচার সবচে বাস্তব সম্যত উপায় তো এতটুকুই যথেষ্ট যে, বান্দা এ চিন্তা করবে যদি আমি বদ নজরের মাধ্যমে চোখকে গান্দা করে ফেলি তাহলে এ চোখ দিয়ে দিদারে এলাহি তথা আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করতে পারব না। সুবহানাল্লাহ!!কোথায় ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চাকচিক্য আর কোথায় জামালে এলাহি তথা মাওলা পাকের সৌন্দর্য।
একথা নিশ্চয়ই আপনারাও জানেন যে, যাদের দেখা হারাম তাদের থেকে দৃষ্টি সংযত রাখলে ইবাদতের মিষ্টতা পাওয়া যায়। যারা চুরি করে দেখে তারা কি তাদের পিতা মাতার সামনে এমনটা করতে পারবে? বস্তুত কোন লজ্জাশীল মানু্ষই এমনটা করতে পারে না। তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সামনে কেন লজ্জা করবে না?
তাই বদ নজর থেকে বাচঁতে চেষ্টা করুন, যেখানে গেলে বদ নজর হয় সেখানে যাওয়া থেকে বিরত থাকবে। বাজারে কম যাতায়াত করবে, গায়রে মাহরাম তথা যাদের সাথে দেখা দেওয়া যায়েজ নাই তাদের সাথে সর্ব প্রকার কথাবার্তা উঠা বসা পরিত্যাগ করবে। এমাসে চেষ্টা করবে বেশি বেশি মসজিদে অবস্থান করতে কিংবা আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গ, নেককার বান্দাদের সান্নিধ্য লাভ করতে।
রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস তাই এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে সময় ব্যয় করা উচিত।
আরেকটি কথা ভালভাবে স্মরণ রাখবে, বর্তমান পৃথিবীতে সহিহ দ্বীনের উপর সঠিক ভাবে আমলকারীদের সংখ্যা অনেক কম। বলতে গেলে প্রকৃত দ্বীনের উপর আমলকারীরা গুরাবার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।( তথা অপরিচিত)
আর তাদের মাঝে সবচেয়ে অধিক গুরাবা হল যারা সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বেরিয়ে গেছে। আমাদের মনেরও একান্ত আশা আল্লাহ যেন আমাদের কে তায়েফায়ে মানসূরাহ’ তথা সাহায্য প্রাপ্তদের দলভুক্ত করে নেন। তাই উচিত দিনে রাতে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করা। মুসলমানদের জীবনের এক একটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। তাই রমজানুল মোবারকে নিজেদের রুটিনকে ইবাদতের মাধ্যমে উত্তম ভাবে সাজিয়ে নিবে।
আর স্মরণ করবে, এটা এমন এক মাস যে মাসে নফলকে ফরজের সওয়াব দেওয়া হবে, আর একটি ফরজের সওয়াবকে ৭০গুন পযন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। (আল্লাহু আকবার) তাহলে কোন কপালপোড়া রহমতের এমন বারিধারা থেকে বঞ্চিত থাকবে। এ সৌভাগ্য আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে।
সাজিয়ে নেওয়া ইবাদতের রুটিনকে দিনে রাতে ধারাবাহিকভাবে মাধ্যমে উত্তমরূপে পালন করতে থাকুন।আমলের বিষয়টা হল প্রত্যেক ভাই বোন তার সামর্থ্য হিসেবে করবে তবু কিছু বিষয় পেশ করছি:
03 –কিয়ামুল লাইল- রাতের নামাজ
রমজানুল মোবারকে কিয়ামুল লায়ল রাতে নামাজ গড়া সাধারণ মানুষের জন্যও অনেক সহজ হয়ে যায়। আর বিষয়টি খুবই ফজিলতপূর্ণ। যদি কেউ একটু হিম্মত করে তাহলেই রাতের শেষ তৃতীয়াংশে উত্তম সময়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারে। কেননা সেহরী খাওয়ার জন্যতো উঠবেই, একটু আগে আগে উঠে নফল আদায় করে নেওয়া যায়।কিয়ামুল লাইলে কুরআন তেলাওয়াতের স্বাদ ঐব্যক্তিই আস্বাদন করতে পারে আল্লাহ তায়ালা যাকে এ সৌভাগ্য দান করেছেন। যতটুকু মুখস্থ আছে পড়তে থাকুন,যা পড়তেছেন তার প্রতি চিন্তা ফিকির করুন। আর এটা অনুভব করুন আপনি আল্লাহ তায়ালার কালাম আল্লাহ তায়ালার সামনে পাঠ করছেন। সুতরাং কেন আমরা এ সৌভাগ্য এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হব না?? আল্লাহ তায়ালার বাণী: ’وبالاسحارھم یستغفرون
: তারা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সেহরির সময়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে’”
কিয়ামুল লাইলের উপর আমল করার জন্য আবশ্যক হল রাতে তারাবীর পর অনতিবিলম্বে শুয়ে পড়া। যদিও আমাদের বদ অভ্যাস অন্য মাসে এশারের পর পর সুন্নাহ মোতাবেক ঘুমিয়ে যেতে পারি না, আপাদত রমজান মাসে এই খেলাফে সুন্নাহকে পরিত্যাগ করা উচিত। এমনিভাবে ফজরের পরে ঘুমের বদ অভ্যাসকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আরাম যদি করতেই হয় তাহলে ইশরাক পড়ে কিছু সময় আরাম করে নেওয়া যেতে পারে।
04 - আযকারে মাসনুনাহ: দৈনন্দিনে যিকির সমূহ
ফজর নামাযের পর তৎক্ষণাৎ না উঠে নামাযের স্থানে বসে বসে সকালবেলার মাসনুন আযকার গুলো আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে হিসনুল মুসলিম এবং আলাইকুম বিসুন্নাতি; কিতাবের ধারাবাহিকতা খুব উপকারী। এমনিভাবে মুনাজাতে মাকবুল’প্রতিদিন আমলে রাখতে পারলে সোনায় সোহাগা। সকালবেলার আযকারের সময় সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আর সন্ধ্যাবেলার আযকার আছর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আযকারের মাসনুন সময়, তাই এ সময়টাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করে নেন। আর রমজান যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস তাই কমছে কম এক পারা আবশ্যকীয় ভাবে তেলাওয়াত করেন। যদি কোনদিন কষ্টকর মনে হয় তাহলে এ কথা স্মরণ করুন, ;আজ না হলে কখনো হবে না; আমাদের আকাবির সালাফরা রমজান মাসে অধিক পরিমাণে তেলাওয়াত করতেন। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে ক্যাসেট থেকে ভাল কোন ক্বারী কিংবা আল্লাহওয়ালাদের বয়ান শুনতে পারেন।
05 কিছু সুন্নাহ:
সূর্য উদয়ের পর কমপক্ষে ২রাকায়াত ইশরাকের নফল নামায আদায় করে করেন। এমনিভাবে চেষ্টা করুন যে সুন্নাতগুলো প্রায় কমে গেছে সেগুলো জিন্দা করুন: যেমন তাহিয়্যাতুল উযু , তাহিয়্যাতুল মসজিদ, এবং আছরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত আদায় করা।
বি:দ্র; আছরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত আদায় করার ব্যাপারে অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি হাদিস নজরে এসেছে। যে হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: রহমত বর্ষিত হোক ঐব্যক্তির উপর যে আছরের আগে চার রাকায়াত সুন্নাহ আদায় করে। আর এ রেওয়াতটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী শরীফে হাসান মানের বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐব্যক্তির জন্য রহমতের দোয়া করেছেন যে আছরের আগে চার রাকায়াত সুন্নাহ আদায় করে।একবার চিন্তা করুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া কিভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে।!!
06 -:নিয়মতান্ত্রিক আযকার আদায় করা
আমাদের বিগত দিনের দেওয়া শিক্ষা দীক্ষায়, একজন ব্যক্তির আত্মসম্মান তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছে, ফলে বিশ্বজগতের বিষয়গুলোর বাপারে আমরা একেবারে আলাদাভাবে কথা বলার বলার ব্যাপারে প্রভাবিত হয়েছি। স্বল্পবাসী হওয়ার মাধ্যমেই সে জিনিস অর্জন করা যায়। কম কথা বলার দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, মুখে একেবারে তালা লাগিয়ে বসে থাকবে। বরং এমন হওয়া উচিত যেন জিহ্বা আল্লাহ তায়ালার জিকরে তরুতাজা থাকে। যে সমস্ত মাসনুন দোয়াগুলো আছে উঠতে বসতে গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। প্রথম প্রথম শয়তানে অসওসা আসতে পারে তা ঝেড়ে ফেলে নিজের আমল চালিয়ে যান। ইনশাআল্লাহ এমনিতেই তা দূর হয়ে যাবে। আর জেনে রাখবে, উচ্চস্বরে যিকর করার চেয়ে নিচুস্বরে যিকর করা অনেক উত্তম।
07 - সূরা কাহফ তেলাওয়াত
পবিত্র জুমআর দিন সূরা কাহফ তেলাওয়াত করাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন। আর জুমআর দিন আসরের পরে দোয়া কবুলের সময়। এজন্য এসময়টিকে গনিমত মনে করে দো করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসময়ে অনেক বেশি দোয়া করতেন।
08 - নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী মোতায়ালা করা:
তাযকিয়ায়ে নফস তথা আত্মশুদ্ধির জন্য সমস্ত কাজ রাসূলের আদর্শ মোতাবেক হওয়া জরুরী। তাই তা জানতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন শুরু করুন। উদাহরণ স্বরুপ: যাদুল মায়াদ, সিরাতে মুস্তফা, মোতায়ালা করুন।
09 – হযরত ছাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে উপকার লাভ করা।
হযরত ছাহাবায়ে কেরাম এমন জামাত যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালিম তারবিয়্যাত দিয়েছেন। তাই তাদের জিন্দিগীর মত নিজেদের জিন্দিগী সাজানোর নিয়তে হায়াতুস ছাবাবা মোতালা করুন। যা আমলী জীবনে খুব প্রভাব সৃষ্টি করে।
10 – অধিক পরিমাণে দোয়া করা
সমস্ত আমলই বিশুদ্ধ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল তাই বেশি বেশি ইখলাসে নিয়্যাতের জন্য দোয়া করা। নিজেদের সকল প্রয়োজনীয় বিষয়ে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়া।
রমজান মাসে দুয়া কবুল হবার অনেক সময় আছে। প্রতিদিন ইফতারের আগে হোক, সেহরির সময় তাহাজ্জুদের নামাজে হোক, রোজাদার অবস্থায় নির্জনে আল্লাহর কাছে দুয়া করা।
নিচে দোয়ার মাঝে চাওয়ার কিছু বিষয় দেওয়া হল:
১."ইলম অর্জন - এর মধ্যে রয়েছে কুরআন হিফজ, ভাল মানের আরবি শিক্ষা এবং মুজাহিদ শায়খদের মতো সুষম ইলম অর্জন করা।
২.আখলাক ও আমল - এমন ইখলাস ওয়ালা আমল যা অন্তরকে পরিতৃপ্ত করে, এমন জিকির যা জিহ্বাকে সিক্ত করে, এমন তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ যা চোখের শীতলতা। কুরআন যেন আমার মনে, মগজে, জিহ্বায় বসে যায়। বেশী বেশী নফল আমল যেন লাভ হয়। সকল মুসলিমদের প্রতি সর্বোত্তম আচরণের তাউফিক যেন হয়। আমার নফসের উত্তম মানের তাযকিয়া যেন অর্জিত হয়।
৩।জিহাদী কার্যক্রম - এমন কাজ যা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য সবচেয়ে উপযোগী, সবচেয়ে বেশী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, কুফফারদের জন্য সবচেয়ে বেশী পীড়াদায়ক, মুমিনদের অন্তরকে সবচেয়ে বেশী প্রশান্তকারী কাজ এর তাওফিক হয়।
৪।শাহাদাত - আল্লাহর পছন্দনীয় সময়ে জীবন শেষে যেন, বন্দিত্ব বিহীন অবস্থায়, এমন সম্মানজনক শাহদাত লাভ হয় যা মুমিনদের পরম আকাঙ্ক্ষিত - যাতে হাকিকী শাহাদাতের ছোয়া থাকে অর্থাৎ সারিয়ার মধ্যে শাহাদাত অর্জন। সেটি এদেশে কিংবা ভিন্ন কোন দেশে ফিদায়ী অভিযানে হোক কিংবা কোন সম্মুখ যুদ্ধের ময়দানে হোক।
৫। জান্নাতুল ফেরদাউস চাওয়া।
৬। পরবর্তী প্রজন্ম - আমার পরে আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে, আমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে, আমার সাথী ভাইদের মধ্যে যাতে উপরুক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রজন্ম যেন থাকে। এবং এই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ যেন সেই পরবর্তী প্রজন্ম আরও উত্তমভাবে এগিয়ে নিয়ে যান।
৭।পুরো উম্মাহর জন্য- আমার সকল দ্বীনী ভাই যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে, আমার আত্মীয়স্বজন, আমার কাছে বিভিন্ন সময় যারা দুয়া চেয়েছেন, আমাদের তানজিমের সকল মুজাহিদীন ভাইরা, দুনিয়ার সকল মুজাহিদীন, সকল নেককার-মুখলেছ মূসলমানদেরকেও যেন উপরের এই ৬টি বিষয় আল্লাহ দান করেন।
11 – আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা
বেশি বেশি করে মুজাহিদ্বীনদের নুসরাতে দান করা। তার সহজ একটি পদ্ধতি হতে পারে নিজের ঘরে কৌটা বা ডিব্বা রাখুন তাতে প্রতিদিন কিছু কিছু জমা করুন। এমনিভাবে, অন্যান্যদেরকেও এব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
1২ – বিলাসিতা পরিহার করুন:
কেননা জিহাদের পথ বিলসিতার বিপরীত।
দুটি হাদিস বেশি বেশ স্মরণ করবেন।
کن فی الدنیا کانک غریب وعابرسبیل
’’دنیا میں اس طرح رہو گویا تم پردیسی ہو یا مسافر‘
দুনিয়াতে এমন ভাবে থাক যেন তুমি বিনদেশী কিংবা মুসাফির। ‘
اور الدنیا سجن المؤمن وجنۃ الکافر ۔
’’دنیا مومن کے لیے قید خانہ اور کافر کے لیے جنت‘‘۔
দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেলখানা আর কাফিরদের জন্য জান্নাত।
13 – রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ ।
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার চেষ্টা করবে।কমপক্ষে শেষ দশকে কিয়ামুল লাইল করবে।
14 –নির্দিষ্ট পরিমাণ হিফজ করা
কুরআন মাজিদের কিছু সূরা যেগুলো মুখস্থের পর আবার ভুলে যাওয়ার মত হয়ে গেছে, সেগুলো নতুন করে মুখস্থ করুন। মোটকথা সময়কে গনিমত মনে করে আল্লাহর ইবাদতে লেগে থাকুন।
ইফতারির সময় বেশি খাওয়া বর্জন করুন। নফস তো এটাই চায় যে সারাদিন ক্ষুধা পিপাসায় থাকার পর নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠতে। যেন সে অবাধ্যতার কাজে লাগিয়ে দিতে পারে। সুতরাং আপনি যদি অতিভোজন ছেড়ে দেন তাহলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।অন্যথায় সে আপনাকে কাবু করে ফেলবে।
ইফতারির সময় নানাবিধ খাদ্যসামগ্রীর নেয়ামতকে সামনে রেখে গুয়ান্তানামো এবং অন্যান্য কারাগারের কুঠরিতে বন্দি ভাইদের কথা আবশ্যকীয় ভাবে স্মরণ করুন। তাদের কথা স্মরণ করে যদি চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয় তাহলে আশা করা যায় জিহাদের পথে চলা আমাদের জন্য সহজ হবে।ইনশাআল্লাহ..
٭٭٭٭٭
(এক মুহাজির ভায়ের লেখা ...উর্দু থেকে অনুবাদ করা...ভুলত্রুটি হলে অনুবাদকের অক্ষমতার দিকে লক্ষ্য করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
আপনাদেরই এক ভাই
রমজানুল মুবারক ১৪৩৯ হিজরী
হযরত সালমান ফারসী রাযি: থেকে বর্ণিত "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: শাবানের শেষের দিকে আমাদের ওয়াজ করতে গিয়ে বলেন:
"হে লোক সকল তোমাদের সামনে মহিমান্বিত এবং বরকতময় মাস আগমন করছে।যার মাঝে এমন এক মূল্যবান রাত্রি রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম।তাই তোমরা সে মাসে দিনের বেলা আবশ্যকীয় ভাবে রোজা রাখবে।আর রাতের বেলায় বেশি বেশি নফল নামায আদায় করবে।সে মাসের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য।আর একটি ফরজ আদায় অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান। সেটি এমন মাস যার প্রথমভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত, আর শেষ ভাগে নাজাত তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তি।( আত্ তারগিব ওয়াত তারহিব)
রমজানুল মোবারকে নিজেদের সংশোধন করার লক্ষে কিছু বিষয় তুলে ধরছি আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন
01. নিয়তকে নবায়ন করা
আমাদের নিয়তকে শুদ্ধ করা। যা করতেছি সবকিছু একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য করা। দৃঢ়ভাবে এ প্রতিজ্ঞা করা শুধু রমজান মাসেই নয় বরং সারা জীবন আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করব। রমজান শুরু হয়ে গেছে এখনো নিয়ত করেননি সমস্যা নাই এখন থেকেই আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও জবাবদিহিতাকে সামনে রেখে বাকী দিনগুলো অতিবাহিত করার নিয়ত করে নেন। আর আত্মশুদ্ধির সঠিক পন্থাতো সেটাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক হয়। কেননা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, সকল কামিয়াবী আর সফলতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের মাঝেই রাখা হয়েছে। তাই আত্মশুদ্ধির নিজের মাঝে বাস্তবায়নের উত্তম পন্থা হল আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করা।
02 –নিজের নফসের জবাবদিহিতা
حاسبواانفسکم قبل ان تحاسبوا
তোমাদের থেকে হিসাব গ্রহণের পূর্বেই নফসের হিসাব গ্রহণ কর.
শয়নকালে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সারা দিনের কাজকর্মের হিসাব গ্রহণ করেন।
আর আল্লাহ তায়ালাতো প্রকাশ্য, গোপন সবকিছুই জানেনও দেখেন"। এছাড়া দুনিয়াতে মানুষ নিজেই তার ব্যাপারে সবচে ভাল জানে।
بل الانسان علی نفسہ بصیرۃ
যা আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে ব্যক্ত করেছেন। তাই সারা দিনের ভুলভ্রান্তি গুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের চেষ্টা করুন। এই রমজান মাসেই অন্যায় গুলোকে পরিত্যাগ করুন। ইনশাআল্লাহ..
কেননা মানুষ গুনাহের প্রতি ধাবিত হয় দু কারণে:
প্রথমত: নফসে আম্মারাহ
দ্বিতীয়ত: বিতাড়িত শয়তান
আর হাদিস শরিফে সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে রমজান মাসে শয়তানগুলোকে শিকলে আটকে করে রাখা হয়।
তাহলে শুধু মাত্র নফসের বিষয়টা বাকী থাকে আর এটা সারা দিন রোজা রাখার কারণে দুর্বল হয়ে প্রায় কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়।তাই গুনাহ ছাড়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। সুতরাং যারা রমজান মাসেও গুনাহ ছাড়তে না পারবে তারা পরেও ছাড়তে পারবে না। তবে আল্লাহ তায়ালা যদি করো সহায় হোন তাহলে ভিন্ন কথা। তাই সকল ধরণের গুনাহ থেকেই বেঁচে থাকুন, বিশেষ করে যাদের গীবত করার মন্দ অভ্যাস আছে। তারা রোযার উসিলায় জবানকে পুরাপুরি কন্টোল করুন। আর স্মরণ করুন গীবতকে মৃত ভায়ের গোসত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এটা ব্যভিচারের চেয়েও খারাপ। তাই মৃত ভায়ের গোসত খাওয়ার কথা কল্পনা করুন এবং এটাকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
আমরা গীবত কেন করি?
শুধু মাত্র রসনার তৃপ্তির জন্য। সুতরাং গীবতটা জিহ্বার কামনা বাসনার পূরণের জন্য অনর্থক , অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার অভ্যাসের কারণে হয়। তাই রমজান মাসে নিজেদের আদত বানিয়ে নেন., বেফায়দা কোন কথা জবান থেকে বের করবেন না। স্বল্পবাসী হয়ে হয়ে উঠুন।।
এটি এমন একটি বিষয়, যে কেউ গীবতকৃত ব্যক্তির উপস্থিতিতে তা উল্লেখ করতে পারবে না।
সুতরাং গীবত বলা হয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতিতে তার এমন বিষয়ের আলোচনা করা যা শুনলে সে কষ্ট পায়। গীবত থেকে বাঁচার আরেকটি পদ্ধতি এইও হয় যে, অনুপস্থিত ব্যক্তির আলোচনাই না করা। আসলে এটা অনেক বড় গুনাহ। জবানের অন্যতম বিপদ। তাই এটা থেকে নিজেকে আবশ্যকীয় ভাবে বাঁচাতে হবে। কমছে কম রমজান মাসে যেন শুধু এমন কথাই হয় যা মিযানে নেকের পাল্লায় উঠানো হবে না।
এমনিভাবে গীবতের মত আরেকটি মারাত্মক গুনাহ হল বদনজর- কুদৃষ্টি ...
যে রোগের প্রতি বর্তমানে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানকে এই বদ নজরের বিপদ থেকে হেফাজত করুক। আমীন।
জেনে কিংবা না জেনে বদ নজর হয়ে যায়। শরীয়ত সম্পর্কেও জ্ঞানী
এমন অনেক নেক বান্দারাও এ রোগে শিকার হয়ে যায়।
এ গুনাহ থেকে বাঁচার সবচে বাস্তব সম্যত উপায় তো এতটুকুই যথেষ্ট যে, বান্দা এ চিন্তা করবে যদি আমি বদ নজরের মাধ্যমে চোখকে গান্দা করে ফেলি তাহলে এ চোখ দিয়ে দিদারে এলাহি তথা আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করতে পারব না। সুবহানাল্লাহ!!কোথায় ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চাকচিক্য আর কোথায় জামালে এলাহি তথা মাওলা পাকের সৌন্দর্য।
একথা নিশ্চয়ই আপনারাও জানেন যে, যাদের দেখা হারাম তাদের থেকে দৃষ্টি সংযত রাখলে ইবাদতের মিষ্টতা পাওয়া যায়। যারা চুরি করে দেখে তারা কি তাদের পিতা মাতার সামনে এমনটা করতে পারবে? বস্তুত কোন লজ্জাশীল মানু্ষই এমনটা করতে পারে না। তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সামনে কেন লজ্জা করবে না?
তাই বদ নজর থেকে বাচঁতে চেষ্টা করুন, যেখানে গেলে বদ নজর হয় সেখানে যাওয়া থেকে বিরত থাকবে। বাজারে কম যাতায়াত করবে, গায়রে মাহরাম তথা যাদের সাথে দেখা দেওয়া যায়েজ নাই তাদের সাথে সর্ব প্রকার কথাবার্তা উঠা বসা পরিত্যাগ করবে। এমাসে চেষ্টা করবে বেশি বেশি মসজিদে অবস্থান করতে কিংবা আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গ, নেককার বান্দাদের সান্নিধ্য লাভ করতে।
রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস তাই এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে সময় ব্যয় করা উচিত।
আরেকটি কথা ভালভাবে স্মরণ রাখবে, বর্তমান পৃথিবীতে সহিহ দ্বীনের উপর সঠিক ভাবে আমলকারীদের সংখ্যা অনেক কম। বলতে গেলে প্রকৃত দ্বীনের উপর আমলকারীরা গুরাবার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।( তথা অপরিচিত)
আর তাদের মাঝে সবচেয়ে অধিক গুরাবা হল যারা সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বেরিয়ে গেছে। আমাদের মনেরও একান্ত আশা আল্লাহ যেন আমাদের কে তায়েফায়ে মানসূরাহ’ তথা সাহায্য প্রাপ্তদের দলভুক্ত করে নেন। তাই উচিত দিনে রাতে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করা। মুসলমানদের জীবনের এক একটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। তাই রমজানুল মোবারকে নিজেদের রুটিনকে ইবাদতের মাধ্যমে উত্তম ভাবে সাজিয়ে নিবে।
আর স্মরণ করবে, এটা এমন এক মাস যে মাসে নফলকে ফরজের সওয়াব দেওয়া হবে, আর একটি ফরজের সওয়াবকে ৭০গুন পযন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। (আল্লাহু আকবার) তাহলে কোন কপালপোড়া রহমতের এমন বারিধারা থেকে বঞ্চিত থাকবে। এ সৌভাগ্য আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে।
সাজিয়ে নেওয়া ইবাদতের রুটিনকে দিনে রাতে ধারাবাহিকভাবে মাধ্যমে উত্তমরূপে পালন করতে থাকুন।আমলের বিষয়টা হল প্রত্যেক ভাই বোন তার সামর্থ্য হিসেবে করবে তবু কিছু বিষয় পেশ করছি:
03 –কিয়ামুল লাইল- রাতের নামাজ
রমজানুল মোবারকে কিয়ামুল লায়ল রাতে নামাজ গড়া সাধারণ মানুষের জন্যও অনেক সহজ হয়ে যায়। আর বিষয়টি খুবই ফজিলতপূর্ণ। যদি কেউ একটু হিম্মত করে তাহলেই রাতের শেষ তৃতীয়াংশে উত্তম সময়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারে। কেননা সেহরী খাওয়ার জন্যতো উঠবেই, একটু আগে আগে উঠে নফল আদায় করে নেওয়া যায়।কিয়ামুল লাইলে কুরআন তেলাওয়াতের স্বাদ ঐব্যক্তিই আস্বাদন করতে পারে আল্লাহ তায়ালা যাকে এ সৌভাগ্য দান করেছেন। যতটুকু মুখস্থ আছে পড়তে থাকুন,যা পড়তেছেন তার প্রতি চিন্তা ফিকির করুন। আর এটা অনুভব করুন আপনি আল্লাহ তায়ালার কালাম আল্লাহ তায়ালার সামনে পাঠ করছেন। সুতরাং কেন আমরা এ সৌভাগ্য এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হব না?? আল্লাহ তায়ালার বাণী: ’وبالاسحارھم یستغفرون
: তারা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সেহরির সময়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে’”
কিয়ামুল লাইলের উপর আমল করার জন্য আবশ্যক হল রাতে তারাবীর পর অনতিবিলম্বে শুয়ে পড়া। যদিও আমাদের বদ অভ্যাস অন্য মাসে এশারের পর পর সুন্নাহ মোতাবেক ঘুমিয়ে যেতে পারি না, আপাদত রমজান মাসে এই খেলাফে সুন্নাহকে পরিত্যাগ করা উচিত। এমনিভাবে ফজরের পরে ঘুমের বদ অভ্যাসকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আরাম যদি করতেই হয় তাহলে ইশরাক পড়ে কিছু সময় আরাম করে নেওয়া যেতে পারে।
04 - আযকারে মাসনুনাহ: দৈনন্দিনে যিকির সমূহ
ফজর নামাযের পর তৎক্ষণাৎ না উঠে নামাযের স্থানে বসে বসে সকালবেলার মাসনুন আযকার গুলো আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে হিসনুল মুসলিম এবং আলাইকুম বিসুন্নাতি; কিতাবের ধারাবাহিকতা খুব উপকারী। এমনিভাবে মুনাজাতে মাকবুল’প্রতিদিন আমলে রাখতে পারলে সোনায় সোহাগা। সকালবেলার আযকারের সময় সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আর সন্ধ্যাবেলার আযকার আছর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আযকারের মাসনুন সময়, তাই এ সময়টাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করে নেন। আর রমজান যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস তাই কমছে কম এক পারা আবশ্যকীয় ভাবে তেলাওয়াত করেন। যদি কোনদিন কষ্টকর মনে হয় তাহলে এ কথা স্মরণ করুন, ;আজ না হলে কখনো হবে না; আমাদের আকাবির সালাফরা রমজান মাসে অধিক পরিমাণে তেলাওয়াত করতেন। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে ক্যাসেট থেকে ভাল কোন ক্বারী কিংবা আল্লাহওয়ালাদের বয়ান শুনতে পারেন।
05 কিছু সুন্নাহ:
সূর্য উদয়ের পর কমপক্ষে ২রাকায়াত ইশরাকের নফল নামায আদায় করে করেন। এমনিভাবে চেষ্টা করুন যে সুন্নাতগুলো প্রায় কমে গেছে সেগুলো জিন্দা করুন: যেমন তাহিয়্যাতুল উযু , তাহিয়্যাতুল মসজিদ, এবং আছরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত আদায় করা।
বি:দ্র; আছরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত আদায় করার ব্যাপারে অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি হাদিস নজরে এসেছে। যে হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: রহমত বর্ষিত হোক ঐব্যক্তির উপর যে আছরের আগে চার রাকায়াত সুন্নাহ আদায় করে। আর এ রেওয়াতটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী শরীফে হাসান মানের বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐব্যক্তির জন্য রহমতের দোয়া করেছেন যে আছরের আগে চার রাকায়াত সুন্নাহ আদায় করে।একবার চিন্তা করুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া কিভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে।!!
06 -:নিয়মতান্ত্রিক আযকার আদায় করা
আমাদের বিগত দিনের দেওয়া শিক্ষা দীক্ষায়, একজন ব্যক্তির আত্মসম্মান তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছে, ফলে বিশ্বজগতের বিষয়গুলোর বাপারে আমরা একেবারে আলাদাভাবে কথা বলার বলার ব্যাপারে প্রভাবিত হয়েছি। স্বল্পবাসী হওয়ার মাধ্যমেই সে জিনিস অর্জন করা যায়। কম কথা বলার দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, মুখে একেবারে তালা লাগিয়ে বসে থাকবে। বরং এমন হওয়া উচিত যেন জিহ্বা আল্লাহ তায়ালার জিকরে তরুতাজা থাকে। যে সমস্ত মাসনুন দোয়াগুলো আছে উঠতে বসতে গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। প্রথম প্রথম শয়তানে অসওসা আসতে পারে তা ঝেড়ে ফেলে নিজের আমল চালিয়ে যান। ইনশাআল্লাহ এমনিতেই তা দূর হয়ে যাবে। আর জেনে রাখবে, উচ্চস্বরে যিকর করার চেয়ে নিচুস্বরে যিকর করা অনেক উত্তম।
07 - সূরা কাহফ তেলাওয়াত
পবিত্র জুমআর দিন সূরা কাহফ তেলাওয়াত করাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন। আর জুমআর দিন আসরের পরে দোয়া কবুলের সময়। এজন্য এসময়টিকে গনিমত মনে করে দো করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসময়ে অনেক বেশি দোয়া করতেন।
08 - নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী মোতায়ালা করা:
তাযকিয়ায়ে নফস তথা আত্মশুদ্ধির জন্য সমস্ত কাজ রাসূলের আদর্শ মোতাবেক হওয়া জরুরী। তাই তা জানতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন শুরু করুন। উদাহরণ স্বরুপ: যাদুল মায়াদ, সিরাতে মুস্তফা, মোতায়ালা করুন।
09 – হযরত ছাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে উপকার লাভ করা।
হযরত ছাহাবায়ে কেরাম এমন জামাত যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালিম তারবিয়্যাত দিয়েছেন। তাই তাদের জিন্দিগীর মত নিজেদের জিন্দিগী সাজানোর নিয়তে হায়াতুস ছাবাবা মোতালা করুন। যা আমলী জীবনে খুব প্রভাব সৃষ্টি করে।
10 – অধিক পরিমাণে দোয়া করা
সমস্ত আমলই বিশুদ্ধ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল তাই বেশি বেশি ইখলাসে নিয়্যাতের জন্য দোয়া করা। নিজেদের সকল প্রয়োজনীয় বিষয়ে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়া।
রমজান মাসে দুয়া কবুল হবার অনেক সময় আছে। প্রতিদিন ইফতারের আগে হোক, সেহরির সময় তাহাজ্জুদের নামাজে হোক, রোজাদার অবস্থায় নির্জনে আল্লাহর কাছে দুয়া করা।
নিচে দোয়ার মাঝে চাওয়ার কিছু বিষয় দেওয়া হল:
১."ইলম অর্জন - এর মধ্যে রয়েছে কুরআন হিফজ, ভাল মানের আরবি শিক্ষা এবং মুজাহিদ শায়খদের মতো সুষম ইলম অর্জন করা।
২.আখলাক ও আমল - এমন ইখলাস ওয়ালা আমল যা অন্তরকে পরিতৃপ্ত করে, এমন জিকির যা জিহ্বাকে সিক্ত করে, এমন তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ যা চোখের শীতলতা। কুরআন যেন আমার মনে, মগজে, জিহ্বায় বসে যায়। বেশী বেশী নফল আমল যেন লাভ হয়। সকল মুসলিমদের প্রতি সর্বোত্তম আচরণের তাউফিক যেন হয়। আমার নফসের উত্তম মানের তাযকিয়া যেন অর্জিত হয়।
৩।জিহাদী কার্যক্রম - এমন কাজ যা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য সবচেয়ে উপযোগী, সবচেয়ে বেশী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, কুফফারদের জন্য সবচেয়ে বেশী পীড়াদায়ক, মুমিনদের অন্তরকে সবচেয়ে বেশী প্রশান্তকারী কাজ এর তাওফিক হয়।
৪।শাহাদাত - আল্লাহর পছন্দনীয় সময়ে জীবন শেষে যেন, বন্দিত্ব বিহীন অবস্থায়, এমন সম্মানজনক শাহদাত লাভ হয় যা মুমিনদের পরম আকাঙ্ক্ষিত - যাতে হাকিকী শাহাদাতের ছোয়া থাকে অর্থাৎ সারিয়ার মধ্যে শাহাদাত অর্জন। সেটি এদেশে কিংবা ভিন্ন কোন দেশে ফিদায়ী অভিযানে হোক কিংবা কোন সম্মুখ যুদ্ধের ময়দানে হোক।
৫। জান্নাতুল ফেরদাউস চাওয়া।
৬। পরবর্তী প্রজন্ম - আমার পরে আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে, আমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে, আমার সাথী ভাইদের মধ্যে যাতে উপরুক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রজন্ম যেন থাকে। এবং এই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ যেন সেই পরবর্তী প্রজন্ম আরও উত্তমভাবে এগিয়ে নিয়ে যান।
৭।পুরো উম্মাহর জন্য- আমার সকল দ্বীনী ভাই যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে, আমার আত্মীয়স্বজন, আমার কাছে বিভিন্ন সময় যারা দুয়া চেয়েছেন, আমাদের তানজিমের সকল মুজাহিদীন ভাইরা, দুনিয়ার সকল মুজাহিদীন, সকল নেককার-মুখলেছ মূসলমানদেরকেও যেন উপরের এই ৬টি বিষয় আল্লাহ দান করেন।
11 – আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা
বেশি বেশি করে মুজাহিদ্বীনদের নুসরাতে দান করা। তার সহজ একটি পদ্ধতি হতে পারে নিজের ঘরে কৌটা বা ডিব্বা রাখুন তাতে প্রতিদিন কিছু কিছু জমা করুন। এমনিভাবে, অন্যান্যদেরকেও এব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
1২ – বিলাসিতা পরিহার করুন:
কেননা জিহাদের পথ বিলসিতার বিপরীত।
দুটি হাদিস বেশি বেশ স্মরণ করবেন।
کن فی الدنیا کانک غریب وعابرسبیل
’’دنیا میں اس طرح رہو گویا تم پردیسی ہو یا مسافر‘
দুনিয়াতে এমন ভাবে থাক যেন তুমি বিনদেশী কিংবা মুসাফির। ‘
اور الدنیا سجن المؤمن وجنۃ الکافر ۔
’’دنیا مومن کے لیے قید خانہ اور کافر کے لیے جنت‘‘۔
দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেলখানা আর কাফিরদের জন্য জান্নাত।
13 – রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ ।
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার চেষ্টা করবে।কমপক্ষে শেষ দশকে কিয়ামুল লাইল করবে।
14 –নির্দিষ্ট পরিমাণ হিফজ করা
কুরআন মাজিদের কিছু সূরা যেগুলো মুখস্থের পর আবার ভুলে যাওয়ার মত হয়ে গেছে, সেগুলো নতুন করে মুখস্থ করুন। মোটকথা সময়কে গনিমত মনে করে আল্লাহর ইবাদতে লেগে থাকুন।
ইফতারির সময় বেশি খাওয়া বর্জন করুন। নফস তো এটাই চায় যে সারাদিন ক্ষুধা পিপাসায় থাকার পর নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠতে। যেন সে অবাধ্যতার কাজে লাগিয়ে দিতে পারে। সুতরাং আপনি যদি অতিভোজন ছেড়ে দেন তাহলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।অন্যথায় সে আপনাকে কাবু করে ফেলবে।
ইফতারির সময় নানাবিধ খাদ্যসামগ্রীর নেয়ামতকে সামনে রেখে গুয়ান্তানামো এবং অন্যান্য কারাগারের কুঠরিতে বন্দি ভাইদের কথা আবশ্যকীয় ভাবে স্মরণ করুন। তাদের কথা স্মরণ করে যদি চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয় তাহলে আশা করা যায় জিহাদের পথে চলা আমাদের জন্য সহজ হবে।ইনশাআল্লাহ..
٭٭٭٭٭
(এক মুহাজির ভায়ের লেখা ...উর্দু থেকে অনুবাদ করা...ভুলত্রুটি হলে অনুবাদকের অক্ষমতার দিকে লক্ষ্য করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
আপনাদেরই এক ভাই
রমজানুল মুবারক ১৪৩৯ হিজরী
Comment