بسم الله الرحمن الرحيم
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين
أما بعد...
আল্লাহ তাআলা অপরাধের বিপরীতে শাস্তির বিধান দিয়েছেন। যেন মানুষ শাস্তির ভয়ে অপরাধ থেকে বিরত থাকে। কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় কেউ অপরাধে লিপ্ত হলে তার উপর যথার্থ শাস্তি কায়েম করার আদেশ দিয়েছেন। যাতে অপরাধী দ্বিতীয়বার অপরাধে লিপ্ত হতে সাহস না পায়। জনগণ যেন তার শাস্তি দেখে শিক্ষা নেয়। এভাবে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল হবে। সমাজের স্বাভাবিক ভারসাম্যতা বজায় থাকবে। সমাজে শান্তি ও সুশৃংখলতা প্রতিষ্ঠিত হবে। وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين
أما بعد...
তবে এই শাস্তি সবক্ষেত্রে এক রকম নয়। অপরাধের ধরণ ও পরিমাণ, অপরাধীর অবস্থা, যার হক নষ্ট করা হয়েছে বা যার অনিষ্ট সাধন করা হয়েছে তার অবস্থা- ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ভিন্নতায় শাস্তির ধরণ-প্রকৃতি ও পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে।
এক. অপরাধের ভিন্নতায় শাস্তির ভিন্নতা
যেমন:
- যিনার শাস্তি: বিবাহিত হলে রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা আর অবিবাহিত হলে একশো দোররা।
- কোন পূত-পবিত্র স্বাধীন মুসলমানকে যিনার অপবাদ দিলে আশি দোররা।
- মদপানে আশি দোররা।
- চুরি করলে হাত কাটা।
- রাহাজানি করলে অবস্থাভেদে হত্যা, শূলিতে চড়ানো, কিংবা বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেয়া, কিংবা জেলে ভরা বা নির্বাসন দেয়া।
- হত্যার বদলে হত্যা বা দিয়াত (রক্ত-মূল্য)।
- মুরতাদ হয়ে গেলে হত্যা।
দুই. অপরাধীর অবস্থাভেদে শাস্তির ভিন্নতা
যেসব অপরাধের শাস্তি শরীয়তে সুনির্ধারিত নয় (যেমন- পর নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত, কাউকে গালি দেয়া), সেসব অপরাধের শাস্তি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- কোন দ্বীনদার ব্যক্তি যদি জীবনের প্রথম কাউকে গালি দেয়, তাহলে তাকে মাফ করে দেয়া যেতে পারে। যেমনটা হাদিসে এসেছে- أقيلوا ذوي الهيئات عثراتهم إلا الحدود “বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হদ ব্যতীত অন্যান্য ভুল-বিচ্যুতি মাফ করে দাও।” কিংবা তাকে যদি কাযি সাহেব লোক মারফত জানান যে, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে: আপনি অমুককে গালি দিয়েছেন- তাহলে এতটুকুই তার এ অপরাধের শাস্তির জন্য যথেষ্ট। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি যদি গালি-গালাজ এবং মারামারিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, লোকজন তার যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে যায়- তাহলে এমন ব্যক্তিকে মাফ করা হবে না। তাকে শুধু মৌখিক জানানোও যথেষ্ট নয়। বরং তাকে গ্রেফতার করে কাযির দরবারে হাজির করতে হবে। প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে। জেলে আটকে রাখতে হবে, যত দিন না তাওবা করে সংশোধন হয়। তদ্রূপ কোন দ্বীনদার ব্যক্তি যদি কোন নিরপরাধ মুসলমানকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে, তাহলে জীবনের প্রথমবার করলেও তার এ অপরাধ ক্ষামাযোগ্য নয়। তাকে শুধু জানানোও যথেষ্ট নয়। বরং তাকে প্রয়োজন পরিমাণ বেত্রাঘাত করাই এখন তার যোগ্য শাস্তি। কেননা, তার এ অপরাধ আর ভুল-বিচ্যুতির পর্যায়ে থাকেনি (হাদিসে যা ক্ষমা করে দেয়ার কথা এসেছে) বরং তা মাত্রা অতিক্রম করে সীমালংঘন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
তিন. যার হক নষ্ট করা হয়েছে বা যার অনিষ্ট সাধন করা হয়েছে, তার অবস্থাভেদে শাস্তির ভিন্নতা
কোন সাধারণ লোক যদি অন্য কোন সাধারণ লোককে গালি দেয়, তাহলে তার শাস্তি হবে এক রকম। পক্ষান্তরে এমন ব্যক্তি কোন বিশিষ্ট আলেমকে গালি দিলে তার শাস্তি হবে আরও শক্ত। তদ্রূপ কোন নষ্টা মেয়ের সাথে ইভটিজিং করার শাস্তির তুলনায় কোন সম্ভ্রান্ত, দ্বীনদার ও পর্দানশীল নারীর সাথে এ ধরণের কর্মের শাস্তি আরও গুরুতর হবে। এভাবে অপরাধ ও অপরাধী এক হওয়া সত্ত্বেও যার হক নষ্ট করা হয়েছে বা যার অনিষ্ট সাধন করা হয়েছে, তার অবস্থাভেদে শাস্তি ভিন্ন হয়।
Comment